Posts

ধর্মরাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম - আনিসুজ্জামান

Image
  ....যে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল, অনেকে সে তত্ত্বের উদ্গাতা বলে জানেন স্যার সৈয়দ আহমদ খানকে (১৮১৭-৯৮)। তাঁর বহু বক্তব্য এ ধারণা সমর্থন করে, তবে উল্টো কথাও তিনি বলেছিলেন। ১৮৮৪ সালে স্যার সৈয়দ দু'টি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দেন। জানুয়ারি মাসে গুরদাসপুরে তিনি বলেন: Remember that the words Hindu and Mahomedan are only meant for religious distinction-otherwise all persons, whether Hindu or Mahomedan or even Christians who reside in this country, are all in this particular respect belonging to one and the same nation. ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে তিনি বলেন: With me it is not so much worth considering that their religious rights but that we inhabit the same land and are subject to the rule of the same government. These are the grounds upon which I call both the races which inhabit India by the word 'Hindu' by which I mean that they are the inhabitants of Hindustan. স্বধর্ম ও স্বদেশের মধ্যে যে পার্থক্য এখানে করা হয়েছে, তা বিশেষ ভাবে বিবেচনার যোগ্য। ধর্ম সম্পর্কে স্যা...

প্রবীর ঘোষের চোখে যৌনতা [পর্ব-চার]

Image
  যৌনতার পিছনে সহজ প্রবৃত্তির তাগিদ নিশ্চয়ই থাকতে পারে। কিন্তু সে তাগিদ যখন কোনও ব্যক্তিকে দাসে পরিণত করে, তখন তা মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে বাধ্য। সামগ্রিকভাবে ব্যক্তিগত যৌন মুক্তি এই সমাজ কাঠামোকে বজায় রেখে বাস্তবায়িত করার চিন্তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। এই সমাজ কাঠামোয় ব্যক্তিগত যৌন মুক্তি ধনী পুরুষ বা নারীর কামের কাছে দেহকে পণ্য করার গ্লানিতে পর্যবসিত অথবা বেলেল্লাপনার পাঁকে নিমজ্জিত। নারী-পুরুষের সাম্য বিনা, মানুষের সাম্য বিনা যৌন মুক্তি সম্ভব নয়। যতদিন অসাম্য থাকবে, ততদিনই থাকবে যৌন অবদমন। এই সত্যের সূত্র ধরেই বলা যায় - যৌন মুক্তির বা যৌন স্বাধীনতার দাবি যদিও ধনতান্ত্রিক সভ্যতারই দাবি, তবু এই দাবি প্রতিষ্ঠার মধ্যেই রয়েছে ধনতন্ত্রের ধ্বংসের বীজ। কারণ, যৌন স্বাধীনতার একান্ত অনিবার্য শর্ত সাম্য, নারী-পুরুষে সাম্য, মানুষে মানুষে সাম্য, মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। আর এই সাম্য ধনতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর ধ্বংস ছাড়া সম্ভব নয়। মুক্ত যৌন প্রণয়ের আবশ্যিক শর্ত হওয়া উচিত অবদমনহীন, শোষণহীন, বন্ধুত্ব ও বিশ্বাস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মানবীয় সম্পর্ক। যৌন প্রণয়ের সঙ্গে সঙ্গে নারী প্রগতি এবং ...

প্রবীর ঘোষের চোখে যৌনতা [পর্ব-তিন]

Image
  ২৭ আগস্ট, ১৯৯২ 'আজকাল' পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল - কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসিস্ট)-এর এক নেতাকে প্রেম করার অপরাধে অভিযুক্ত হতে হয়েছে এবং দলের সদস্যপদ ত্যাগ করতে হয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সমিতির সদস্য পাচু রায়ের একটি চিঠি আজকালে প্রকাশিত হয় ৩০ আগস্ট। আলোচনার শুরুতেই চিঠিটি তুলে দেবার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। "যতই কমিউনিস্ট পার্টি করি, যতই মার্কসবাদের কথা বলি, যতই 'লেনিনবাদ লেনিনবাদ' বলে চেঁচাই, সংস্কার আমাদের চেতনার আণবিক স্তরে বদ্ধমূল। বৃদ্ধ-বিপত্নীক সিপিএম নেতাটি ভুল বা অন্যায় কী করলেন বুঝতে পারলাম না। তাঁর প্রেমিকা বিগত দশ বছর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্করহিত। তাহলে এখানে পরস্পরের বন্ধু হয়ে বসবাস করতে অসুবিধা কোথায়? সাংবিধানিক অসুবিধা? বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি বলে? নাকি বুড়ো বয়সে আবার প্রেম ভালোবাসা কী? ওসব তো যৌবনের ব্যাপার, শারীরিক সক্ষমতার ব্যাপার, সিপিএম-এর হাওড়া নেতৃত্ব কি এই লাইনে ভাবছেন? আসলে সংবিধানের প্রতি, বুর্জোয়া প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি, সামন্ততান্ত্রিক ধ্যানধারণার প্রতি এক দুরপনেয় আনুগত্য আমাদের মজ্জার আণবিক স্তরে প্রোথিত। মুখে কংগ্রে...

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-নয়]

Image
  ব্যবহার শেষ কামলাগিরির পরিণতি আগে ও পরে প্রকৃত সত্য তারা করবে 'সংস্কার'! কোটা না মেধা? তথ্য অধিকার আইন এর প্রয়োগ যখন কাগজে কলমে তাদের পেছনে যারা আছে লাল আপার আফসোস সাত খুন মাফ এদের এখন তাদের ঠেকায় কার সাধ্য? একের পর এক জঙ্গিকে মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর কোটা না মেধা? রাষ্ট্রের সম্পদ তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার উপমহাদেশের সবচেয়ে ক্রিমিনাল সংগঠন  অথচ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুমোদন, সংশোধন ইত্যাদি সংসদে পাশ করিয়ে নিতে হয়। ফাঁস হওয়ার পর ভণ্ডামির সীমা! উগ্র মোল্লাদের বাঁচাতে যখন তাহারা মরিয়া

প্রবীর ঘোষের চোখে যৌনতা [পর্ব-দুই]

Image
  পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছিলেন ফ্রয়েড। আর দশটা ইউরোপীয় ইহুদি পরিবারের মতই তাঁর পরিবারের পুরুষরা সর্বশক্তিমান জিহোভার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করতেন। "প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ, আমাকে নারী করে সৃষ্টি করনি বলে।" পরিবারের নারীরা প্রার্থনা করেছেন, "প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ, তোমার ইচ্ছেমতো সৃষ্টি করেছ বলে।" ইহুদি পরিবারগুলোতে তিনি দেখেছেন পুরুষদের শোষকের ও শাসকের ভূমিকায় এবং নারীদের শোষিতের ভূমিকায়। লাগাতারভাবে অবদমিত নারী আর অবদমনকারী পুরুষ দেখতে দেখতে ফ্রয়েডের মনে হয়েছে নারী-পুরুষের এই অবস্থান, এই সম্পর্ক বুঝি বা প্রাকৃতিক, জৈবিক সহজাত, শাশ্বত। সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশের চাপ কাটিয়ে তিনি প্রকৃত সত্যকে ধরতে পারেননি - পুরুষ ও নারীর যে সম্পর্ককে শাশ্বত বলে ধরে নেওয়া হয় তা বাস্তবে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রভাবেরই ফল। এই পরিবেশই 'পুরুষালি' ও 'মেয়েলি' স্বভাবের স্রষ্টা। ফলে ফ্রয়েডের সংস্কারাচ্ছন্ন ভ্রান্ত চিন্তা ও রক্ষণশীলতা থেকে উদ্ভূত লিবিডো তত্ত্ব হয়ে দাঁড়ায় সহজাত প্রবৃত্তির তত্ত্ব, শাশ্বত প্রবৃত্তির তত্ত্ব। লিবিডো তত্ত্বে ফ্রয়েড বলেছ...