মুস্তারেবিন

 

https://youtu.be/teqp5KQCBl0

https://youtu.be/_ZTPXIvfiys

https://youtu.be/Rbw3umql82E

ইসরায়েলের সবচেয়ে কুখ্যাত গোয়েন্দা বাহিনী হচ্ছে মোসাদ। এছাড়াও আছে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আমান এবং অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত বা শাবাক।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mossad

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Military_Intelligence_Directorate_(Israel)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Shin_Bet

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গোপন তথ্য সংগ্রহ করা, সেসব দেশে জটিল অভিযান পরিচালনা করা, তাদের সামরিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন নস্যাৎ করে দেয়া, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা করা প্রভৃতি দায়িত্ব সাধারণত মোসাদের উপর বর্তায়। এসব কাজ করতে গিয়ে তাদের মাঝে মাঝে ছদ্মবেশী গোয়েন্দা নিয়োগ করতে হয়। ইসরায়েলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা আছে, যাদের কাজ শুধু ফিলিস্তিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফিলিস্তিনিদের কাছে এরা মুস্তারেবিন নামে পরিচিত। মুস্তারেবিন অর্থ যারা দেখতে আরবদের মতো অথবা যারা আরবদের মতো জীবন যাপন করে। হিব্রুতে এদের পরিচয় মুস্তারেভিম নামে। এরা আইডিএফ, ইসরায়েলি বর্ডার পুলিশ এবং ইসরায়েলি পুলিশের অধীনে কর্মরত বিশেষ সন্ত্রাসবাদ বিরোধী(!) ইউনিট, যাদের মূল কাজ ফিলিস্তিনি সেজে ফিলিস্তিনিদের সাথে মিশে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা। বিভিন্ন সময় সাবেক গোয়েন্দাদের এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে তাদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। মুস্তারেবিনরা ছদ্মবেশে ফিলিস্তিনিদের সাথে মিশে যায় এবং তাদের বিভিন্ন আন্দোলন, মিছিলে অংশ নিয়ে সেগুলোর গতিপ্রকৃতি, পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে অবহিত করে। মুস্তারেবিনরা আন্দোলনকারীদের ছদ্মবেশে মিছিলে অনুপ্রবেশ করে। অনেক ফিলিস্তিনি যুবকের মতো তাদের মুখ থাকে কালো কাপড় অথবা সাদাকালো চৌকোনা নকশা বিশিষ্ট কেফায়া দ্বারা পেঁচানো।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Palestinian_keffiyeh

তারা মিছিল থেকে ইসরায়েল বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে, মাঝে মাঝে ইসরায়েলি সেনাদের উপর পাথর নিক্ষেপ করে। মিছিল যখন যথেষ্ট বড় আকার ধারণ করে এবং কিছু মিছিলকারী যখন পাথর নিক্ষেপ করার জন্য ইসরায়েলি সেনাদের কাছাকাছি এগিয়ে যায়, ঠিক তখন মুস্তারেবিনদের আসল রূপ প্রকাশিত হয়। তারা দল বেঁধে মিছিলকারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পকেটে লুকিয়ে রাখা পিস্তল বের করে আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়ে অন্য মিছিলকারীদের দূরে সরিয়ে দেয়, প্রয়োজনে তাদের উপর গুলি করে। মুস্তারেবিনদের পিস্তল থেকে গুলির আওয়াজ আসামাত্র ইসরায়েলি সেনারা আক্রমণ শুরু করে। তারা এগিয়ে এসে মুস্তারেবিনদের হাতে আটক হওয়া ফিলিস্তিনিদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।ফিলিস্তিনিদের চোখকে ধোঁকা দিয়ে, তাদের সন্দেহের উদ্রেক না করে, তাদের সাথে পরিপূর্ণভাবে মিশে যাওয়ার জন্য মুস্তারেবিনদের বেশ কঠোর ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে অপারেশন চালানোর জন্য তাদের ফিলিস্তিনিদের মতো আচরণ করতে, তাদের মতো করে চিন্তা করতে শেখানো হয়। বিভিন্ন আরব দেশে ব্যবহৃত আরবি ভাষার টান এবং শব্দের মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। আবার একই দেশের বিভিন্ন শহরে ভাষার ভিন্নতা আছে। মুস্তারেবিন এজেন্টদের এমনভাবে ট্রেনিং দেয়া হয় যেন তারা ফিলিস্তিনের নির্দিষ্ট এলাকার আঞ্চলিক আরবি নিজেদের মাতৃভাষার মতো করে সাবলীলভাবে আয়ত্ত করতে পারে। একজন মুস্তারেবিন এজেন্টকে ১৩-১৫ মাসের ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যার মধ্যে ৪ মাস থাকে ভাষা এবং আচার-আচরণগত ট্রেনিং এর জন্য বরাদ্দ। প্রথম মাড়ে ৬ মাসের ট্রেনিং মূলত পদাতিক বাহিনীর ট্রেনিং, যা সব ধরনের সেনা কর্মকর্তার জন্য বাধ্যতামূলক। এই ট্রেনিং প্রদান করা হয় আইডিএফের স্পেশাল ট্রেনিং সেন্টারের মিটকান অ্যাডাম আর্মি বেজে।

https://www.gettyimages.com/photos/mitkan-adam-army-base

https://en.m.wikipedia.org/wiki/List_of_Israel_Defense_Forces_bases

তারপর দুই মাসের ট্রেনিং হয় কাউন্টার টেরোরিজম সংক্রান্ত। এসময় তাদের ফিলিস্তিনের বিভিন্ন এলাকার প্রাকৃতিক গঠন এবং সেগুলোতে বিচরণের পদ্ধতি শেখানো হয়। এরপর শুরু হয় মুস্তারেবিন ট্রেনিং। এ পর্যায়ে আরবি ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি থেকে শুরু করে আরবদের মানসিকতা, পোশাক, চুলের স্টাইল সব কিছুর উপর ট্রেনিং দেয়া হয়। সঠিকভাবে ছদ্মবেশ নেয়ার জন্য তাদের পরচুলা এবং কন্টাক্ট লেন্স সরবরাহ করা হয়। ফিলিস্তিনিদের চোখকে নির্ভুলভাবে ফাঁকি দিতে সক্ষম হওয়ার জন্য এসময় তাদের মুসলমানদের মতো নামায-রোযার পদ্ধতি শেখানো হয়। সর্বশেষ এক মাসের ট্রেনিং হয় বিভিন্ন ধরনের জটিল অস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি চালানোর উপর। ইসরায়েল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও গবেষক অ্যান্টয়েন শালহাতের মতে, মুস্তারেবিনদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা এবং তাদের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত ফিলিস্তিনিদের গ্রেপ্তার করা। 

https://www.middleeastmonitor.com/6-author/antoine-shalhat/

তাদের অনেকগুলো ইউনিট আছে। সর্বপ্রথম মুস্তারেবিন ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪২ সালে। এই ইউনিটটি ছিল ফিলিস্তিনে বসবাসরত তৎকালীন ইহুদী সম্প্রদায়ের মিলিশিয়া বাহিনী হাগানা, যা প্রধান বিভাগ পালমাকের অংশ।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Haganah

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Palmach

হাগানা মিলিশিয়া থেকে পরবর্তীতে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের সৃষ্টি হয়েছিল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কিছুদিন পরপর; বিশেষ করে যখন এই গোপন অপারেশনগুলো সম্পর্কিত কোনো সংবাদ প্রকাশ হয়ে পড়ে, তখন এই ইউনিটগুলোকে বিলুপ্ত করে দেয় এবং পরবর্তীতে ভিন্ন নামে নতুন কোনো ইউনিট চালু করে। শালহাতের মতে, মুস্তারেবিনদের সবচেয়ে পরিচিত ইউনিটগুলোর একটি হচ্ছে রিমন ইউনিট যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। এরা প্রধানত গাজা উপত্যকায় কার্যক্রম পরিচালনা করতো। ৮০-৯০ এর দশকে শিমশন (ইউনিট ৩৬৭) নামে আরেকটি ইউনিট সক্রিয় ছিল, তবে ১৯৯৪ সালে অসলো শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পর ইসরায়েল তাদের বিলুপ্ত করে। রিমন ইউনিট ২০০৫ সাল পর্যন্ত গাজায় সক্রিয় ছিল। মুস্তারেবিনরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল প্রথম ইন্তিফাদার সময় গাজা উপত্যকায়।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/First_Intifada

পরবর্তীতে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়ার পর এই এজেন্টদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয় এবং দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে নিযুক্ত করা হয়। পশ্চিম তীরে সক্রিয় ইউনিটগুলোর মধ্যে অন্যতম দুভদেভান (ইউনিট ২১৭)।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Duvdevan_Unit

সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইহুদ বারাক ১৯৮০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এটি এখনও সক্রিয় আছে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ehud_Barak

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]