আম্বানি হতে চাইলে তোদের সমস্যা কোথায়?
আগে মানুষ কোনো পণ্যের গুণগতমান কতটা তা বিবেচনা করতো। এখন তারা পণ্যটির বাহ্যিক চাকচিক্যকে প্রাধান্য দেয় এবং কোনো নামকরা ব্র্যান্ডের সিল বাহ্যিক চাকচিক্যের অংশ। তারা প্রয়োজনের তুলনায় বহুগুণ বেশি অর্থ খরচ করে হলেও ব্র্যান্ডের জিনিসটির পেছনে ছোটে। আর বাজার ব্যবস্থায় অসাম্যের সৃষ্টি হয়। উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রায় সমান খরচ করেও একটি সাধারণ ব্র্যান্ড যে পরিমাণ লাভ করে, একটি নামকরা ব্র্যান্ড তার থেকে অনেক বেশি লাভ করে। সাধারণ ব্র্যান্ডটি ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকে এবং একসময় সে প্রতিযোগিতা থেকে হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এভাবে নামকরা ব্র্যান্ডের আধিপত্যের কারণে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনা সাধারণ ব্র্যান্ডগুলো। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ থরস্টেইন এর তত্ত্ব হলো-
ধনীদের হাতে অঢেল টাকা আছে দেখে তারা তাদের "স্ট্যাটাস" প্রদর্শনের জন্য দুই হাতে টাকা উড়ায়! কিন্তু যাদের সামর্থ্য নেই, তারাও চায় টাকা খরচ করে কোনো নামকরা ব্র্যান্ডের বিলাসদ্রব্য কিনে নিজেদের "স্ট্যাটাস" জাহির করতে! যে মানুষটি ঈদ উপলক্ষ্যে তার ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী নিউ মার্কেট থেকে খুব ভালো ভালো জামাকাপড় কিনতে পারতো, "স্ট্যাটাস" এর সন্ধানে সে চলে যায় বড় ব্র্যান্ডের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শো-রুমে আর সেখানে মূল দামের কয়েকগুণ বেশি দিয়ে জামাকাপড় কিনে। ধনাঢ্য ব্যক্তিদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষও যখন নামকরা ব্র্যান্ডগুলোর ক্রেতা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে নামকরা ব্র্যান্ডগুলোর তাদের পণ্যের দাম কমানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ আর এইচ টনি তার "The Acquisitive Society" নামক বইয়ে সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে গেছেন।
যতদিন সমাজের গুটিকতক মানুষের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকবে এবং তারা তুচ্ছাতিতুচ্ছ দ্রব্যাদি কিনতে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করবে, ততদিন এই অসাম্য দূর হবে না। পুঁজিবাদের শোষণে পিষ্ট তথাকথিত ছদ্ম গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো এমন যে, আগামী কয়েক দশকে বাজারে মামুলি বিলাসদ্রব্যও মূল দামের দশ-পনেরো-বিশ এমনকি একশো গুণ বেশি দামে বিক্রি হওয়া বন্ধের কোনো সম্ভাবনা নেই।
Comments