আফগানিস্তানে সমাজতন্ত্র

 

১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল নূর মোহাম্মদ তারাকির নেতৃত্বে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসে কমিউনিস্টরা। তারাকির নেতৃত্বাধীন পিপল’স ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আফগানিস্তান আবার দু’টি ভাগে ভাগ হয়। প্রথমটি হচ্ছে চরমপন্থী ‘খালক’, যার নেতৃত্বে ছিলেন হাফিজুল্লাহ আমিন। অপরটি মধ্যমপন্থী ‘পারশাম’, যার প্রধান ছিলেন তারাকি। তারাকির প্রচেষ্টায় এই দুই অংশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে চুক্তি সই করে। এরপর তারাকি আফগানিস্তানে ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা ও নানাবিধ সংস্কারের উদ্যোগ নেন। এতে সংস্কার পরিপন্থী শ্রেণীর মধ্যে ক্ষোভ জমতে থাকে। এরা পরবর্তীতে আফগান মুজাহিদিন হিসেবে পরিচিত হয়।

১৯৭৯ সালের এপ্রিলে খালকের প্রধান হাফিজুল্লাহ আমিন তারাকির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। সেপ্টেম্বরে তারাকিকে নামিয়ে ক্ষমতায় বসলেও আমিন দেশে শান্তি বজায় রাখতে পারলেন না। সোভিয়েত ইউনিয়ন আমিনকে "ক্ষমতালোভী কসাই" বলে আখ্যা দেয়। সোভিয়েতদের কাছে প্রমাণ ছিল আমিন সিআইএ’র পরিকল্পনার অংশ। ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করে আমিনকে ক্ষমতাচ্যুত করে পারশাম নেতা বাব্রাক কারমালকে ক্ষমতায় বসায়।

‘৭০ এর দশক থেকে পাকিস্তানি গোয়েন্দাবাহিনী আমেরিকাকে গোপনে লবিং করতে থাকে যেন আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে আফগানিস্তানে ইসলামিক বিদ্রোহীদের সহায়তা করে। তবে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কার্যক্রম এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোর ফাঁসিকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে চিড় ধরে। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর আফগানিস্তানের বিরোধকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার সিদ্ধান্ত নিলেন পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ভালো করার। সেই বছরের ৩০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এর জরুরী মিটিং বসে। মিটিংয়ে প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতিনিধি ওয়াল্টার সলোকম্ব প্রস্তাব দেন-

"আফগানিস্তানের চলমান মুসলিম বিদ্রোহ চালিয়ে নিতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র লাভবান হবে। এই বিদ্রোহই আফগানিস্তানে রাশিয়াকে ঢুকতে দেবে না!" 

মে মাস থেকে শুরু হলো আফগানিস্তানে মুজাহিদিন নেতাদের সাথে আমেরিকার গোপন বৈঠক। এই বৈঠকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল পাকিস্তান!

৬ এপ্রিল এবং ৩ জুলাই আরো দু’টি বৈঠকের পর জঙ্গিদের জন্য ৫ লক্ষ ডলার সহায়তা অনুমোদন করেন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। এই কার্যক্রমের নামকরণ করা হয় ‘অপারেশন সাইক্লোন’। তখনো সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করেনি। আমেরিকা কেবল আক্রমণ হতে পারে ধরে নিয়ে বিদ্রোহীদের অর্থায়ন শুরু করে! এই আশঙ্কার কথা পরবর্তীতে স্বীকার করেছিলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা বিগনিউ ব্রেজাজিনস্কি। ১৯৭৮-৭৯ সাল পর্যন্ত আমেরিকার ইন্টেলিজেন্সের সামগ্রিক পর্যবেক্ষণের ফলও ছিল সোভিয়েত রাশিয়া কোনোক্রমেই আফগানিস্তান আক্রমণ করবে না। শেষপর্যন্ত আফগানিস্তান আক্রমণ করলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশ্ববাসীর সামনে মেকী বিস্ময় প্রকাশ করলেন। পাশাপাশি রাশিয়াকে বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি আখ্যায়িত করে এই আক্রমণের সমুচিত জবাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন কার্টার! আক্রমণের কয়েক মাসের মধ্যে মার্কিন গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার নজর বেলুচিস্তানের দিকেও যেতে পারে এবং শেষপর্যন্ত বেলুচিস্তানকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করে নতুন রাষ্ট্র করার দিকেও এগোতে পারে রাশিয়া! এই পর্যবেক্ষণকে পরবর্তীতে অনেক বিশ্লেষক ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন, কিন্ত ঐ মুহূর্তে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তা অবশ্যম্ভাবী বলে ধরে নিয়েছিল! এর মাঝে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক বর্জন করে।

https://rense.com//general31/cyc.htm

https://ipfs.io/ipfs/QmXoypizjW3WknFiJnKLwHCnL72vedxjQkDDP1mXWo6uco/wiki/Operation_Cyclone.html

ইরানে চলমান জিম্মি সংকট সমাধানকল্পে কার্টার প্রশাসনের উদ্ধার অভিযান অপারেশন ঈগল ক্লব্যর্থ হওয়ার প্রভাব পড়ে সেই বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। জিমি কার্টার হেরে যান রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে। রিগ্যান এসে কার্টার প্রশাসনের অপারেশন সাইক্লোন প্রোগ্রামকে আরো বিস্তৃত আকারে চালাতে শুরু করেন। রিগ্যানের যেকোনো সোভিয়েত বিরোধী পক্ষকে সহায়তার নীতি পরবর্তীতে ‘রিগ্যান ডক্ট্রিন’ নামে পরিচিত হয়। তিনি অর্থায়ন বাড়ানোর পাশাপাশি জঙ্গিদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন! সিআইএ’র প্যারামিলিটারি অফিসারদের নিযুক্ত করা হয় অস্ত্র সহায়তা, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রশিক্ষণের জন্য। এসব কাজে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে পাকিস্তানের ‘ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স’। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া অর্থ এবং অস্ত্র জঙ্গিদের মাঝে সরবরাহ করাসহ প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় গোপন স্থান নির্ধারণ এবং দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন, সবই করতো ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স।


এই গোপন অর্থায়নে সৌদি আরবকেও নিজেদের সমপরিমাণ অর্থ সহায়তা দিতে রাজি করে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬ এবং এসএএস যোগ দেয় সিআইএ’র
আফগান জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে! যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও আরো তিন বছর চলে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। ১৯৭৯-৯২ সাল পর্যন্ত সিআইএ প্রায় ১ লক্ষাধিক জঙ্গিকে প্রশিক্ষণ দেয়। এসময় তারা পাকিস্তান সরকারের সরাসরি সহায়তায় আরব দেশগুলো থেকে তরুণ যুবকদের আফগান মুজাহিদিনদের সাথে সোভিয়েত 'বর্বর' বাহিনীর বিরুদ্ধে 'জিহাদে' নামার অনুপ্রেরণা দেয়! এই অনুপ্রেরণা আরব দেশগুলোর যুবকদের চুম্বকের মতো আকৃষ্ট করে। সিআইএ ডিরেক্টর উইলিয়াম কেসি সহ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক হর্তাকর্তাকে তখন ঘন ঘন আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকাগুলোতে দেখা যেতো! জঙ্গিদের বড় নেতাদের, বিশেষভাবে গুলবুদিন হেকমাতিয়ারকে আমেরিকা প্রায়ই আমন্ত্রণ জানাতো হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের সাথে বৈঠকের জন্য। হেকমাতিয়ার নিজে না গিয়ে ইউনুস খালিসকে পাঠিয়ে দেয়। ইউনুসের সাথে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ইসলামের প্রতি আমেরিকার আন্তরিকতার (!) কথা ব্যক্ত করেন। স্বীয় ধর্মের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের আন্তরিকতা (!) দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে খালিস সর্বসমক্ষে রিগ্যানকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আমন্ত্রণ পর্যন্ত জানায়! খালিস ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সাথেও বৈঠক করে। ১৯৮৬ সালের শুরুর দিকে এয়ারক্রাফট মিসাইল এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বড় একটি চালান আফগানিস্তানে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। ৮৬ অস্ত্রের চালান জঙ্গিদের যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করে। সরবরাহকৃত মিসাইল এতই উন্নত ছিল যে, সেগুলো ব্যবহার করে রাশিয়ান অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারগুলো অনায়াসে ভূপাতিত করতে পারতো জঙ্গিরা। ১৯৮৭ সালের শেষ দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। সোভিয়েতদের হটানোর নেশায় বুঁদ হয়ে মার্কিনিরা অনেক বেশি মিসাইল সরবরাহ করেছিল আফগানিস্তানে। যুদ্ধ শেষে মার্কিন প্রশাসন এই চিন্তায় পড়ে যে, এই মিসাইল না আবার মার্কিন বিরোধী কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের হাতে চলে যায়! ১৯৯০ সালে সিআইএ একটি গোপন বাই-ব্যাক অভিযান চালায় এবং বিপুল পরিমাণ মিসাইল চড়া মূল্যে কিনে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন দু’টি প্যাকেজে বিভক্ত ছিল। ১৯৮১-৮৭ সালে প্রথম ছয় বছরের প্যাকেজে . বিলিয়ন ডলার অর্থ সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৮৭-৯৩ সালের দ্বিতীয় প্যাকেজে বরাদ্দ করা হয় . বিলিয়ন ডলার। এই অর্থের অর্ধেক অর্থনৈতিক খাতে এবং বাকি অর্ধেক সামরিক খাতে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়। পাকিস্তানের কাছে . বিলিয়ন ডলার মূল্যে বিক্রয় করা হয় ১৬ টি বিমান। পুরো সময় জুড়ে সিআইএ প্যারামিলিটারি নিজেদের অন্যান্য সামরিক এবং গোয়েন্দা বাহিনীর ব্যয় মিলিয়ে মোট ২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আমেরিকা!

https://www.independent.co.uk/news/terror-blowback-burns-cia-1182087.html

মার্কিনিদের ফাঁদে পা দেয়ার পর আফগান জঙ্গিরা প্রথম ধাক্কাটা খায় সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের সাথে সাথে। লক্ষ্য পূরণের সাথে সাথে নিজেদের সামরিক সহায়তা কমাতে শুরু করে আমেরিকা। ১৯৯০ সালে পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে এবং কিছু অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দ্বিতীয় প্যাকেজের অর্থায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। অবশ্য দ্বিতীয় প্যাকেজের অধিকাংশ অর্থ ব্যয় করা হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যবহার করার ফলে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র জঙ্গিদের কাছে না গিয়ে পৌঁছে যায় করাচি। সেখানে স্থানীয় বাজারে চলে অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা। পাকিস্তান সরকারের বদমাইশির মাশুল দেয় করাচিবাসী। কয়েক বছরের মধ্যে করাচি হয়ে ওঠে বিশ্বের অন্যতম উগ্র সন্ত্রাসের শহর। পাকিস্তান নিজেদের মিত্র উগ্র ইসলামিক সংগঠনগুলোর মাঝে অর্থের সিংহভাগ বন্টন করে দেয়। তাদের এই অর্থ সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান আল কায়েদার মতো নৃশংস জঙ্গি গোষ্ঠীর সৃষ্টি করেছে। গুলবুদিন হেকমাতিয়ার লাদেনের একজন বন্ধু ছিল। শুধুমাত্র যুদ্ধকালীন সময়ে হেকমাতিয়ার ১০ হাজারের অধিক সাধারণ মানুষ হত্যা করে।

https://www.youtube.com/watch?v=fjf9ytq1Lz0

সোভিয়েত সৈন্যরা দেশ ছাড়লে সিআইএ দ্বারা প্রশিক্ষিত অধিকাংশ জঙ্গি লাদেনের সংগঠনে যোগ দেয়। এভাবেই গড়ে ওঠে আল কায়েদা।

.....................................................................

আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও অধিকাংশ আফগানদের মানসিকতা কেন পশ্চাৎপদ ছিল সেটা বুঝতে হলে আগে জানতে হবে তাদের কার্যক্রমের গন্ডি। আফগানিস্তানে বসবাসরত অসংখ্য জাতির মধ্যে ৭০% এর বসবাস গ্রামাঞ্চলে হলেও ক্ষমতাসীনরা শহরগুলো নিয়েই ব্যস্ত ছিল বেশি। ১৯৭৯ সালে কমিউনিস্টরা কাবুলে ক্ষমতা দখল করে হেলমন্দ প্রদেশে নারীদের স্বাক্ষরতা কর্মসূচি চালু করার চেষ্টা করলে গোত্রীয় প্রবীণ নেতারা এবং জমিদাররা তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলো সেসময়। কর্তৃপক্ষ যখন মেয়েদের ক্লাসে যেতে বাধ্য করে, তখন গ্রামগুলোতে বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায়। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয় নিজেদের 'মুজাহেদিন' বলে পরিচয় দেয়া একদল সশস্ত্র লোক। তাদের অপারেশনের সময় তারা উপত্যকার সকল স্কুল শিক্ষককে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং জবাই করে হত্যা করে। কমিউনিস্ট সরকারকে সাহায্য করার জন্য এবং নারীদের মুক্ত করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ট্যাঙ্কের বহর সীমান্ত অতিক্রম করে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। শীঘ্রই আফগানিস্তান কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রামাঞ্চলে যেখানে যুবকরা মেয়েদের স্কুল এবং ভূমি সংস্কারসহ নতুন পদ্ধতির জীবনযাত্রা আরোপ করার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে ইচ্ছুক ছিল, সেখানে মেয়েরা অদৃশ্যই থেকে যায়। অন্যদিকে শহরে সোভিয়েত সমর্থিত সরকার বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করে এবং মেয়েদের তাদের জীবনসঙ্গী বেছে নেয়ার অধিকার প্রদান করে। সেখানে মেয়েরা রেকর্ড সংখ্যায় স্কুলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং আশির দশকের শুরুর দিকে মহিলারা সংসদীয় আসনে, এমনকি উপ-রাষ্ট্রপতি পদেও নিজেদের স্থান করে নেয়।

কমিউনিস্টরা আসার আগে আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৯৫% নিরক্ষর ছিল। মোট জমির ৮৮% অনাবাদী অবস্থায় ছিল। গ্রামের দরিদ্র কৃষকের সকলেই মহাজনদের ঋণের জালে আটকে ছিল। ১৯৭৮ সালে আফগানিস্তানের কোনো গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। পুরো দেশে শিল্প শ্রমিকের সংখ্যা ছিল পঞ্চাশ হাজারের চেয়েও কম। জিডিপির মাত্র ১৭% আসতো শিল্প থেকে।

কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর-

#শিল্পের জাতীয়করণ করে লক্ষণীয় অগ্রগতি ঘটালো। ১৯৭৮ সালে জাতীয় আয়ের ৩% আসতো খনিজ শিল্প থেকে, ১৯৮৮ সালে সেটা বেড়ে হয় ১০%। কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যেই ১০০ এর বেশি শিল্প কারখানা তৈরী হয়েছিল আফগানিস্তানে।

#কৃষি জমির সিলিং নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল। উদ্ধৃত্ত জমিগুলো গরীব কৃষকদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়েছিল। কমিউনিস্ট সরকার প্রথম বছরেই আট লক্ষ একর জমি ১,৩২,০০০ পরিবারের মধ্যে বন্টন করে দিয়ে যৌথ চাষ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিল।

#গরীব কৃষকদের মহাজনদের ঋণের কবল থেকে মুক্ত করা হলো। কমিউনিস্ট সরকার ঘোষণা করলো কয়েক পুরুষ ধরে যে ঋণের বোঝা গরীব কৃষকদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল তারা তা পরিশোধ করবে না।

#নারীদের শিক্ষা, নিরক্ষরতা দূরীকরণ অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হলো। যৌতুক প্রথা নিষিদ্ধ হলো। সেচ ও পানীয় জলের দায়িত্ব নিলো রাষ্ট্র। হাসপাতালের বেড বাড়ানো হলো ৮৪%। ডাক্তার বাড়ানো হলো ৪৫%।

Comments

ভালো লাগলো।

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]