
হিন্দুপ্রধান একটা দেশ থেকে ঘুরে আসা যাক আগে। নেপালে বসবাসরত নারীদের প্রতি মাসে অন্তত পাঁচদিন নিজেদের ঘরের বাইরে অবস্থান করতে হয়। প্রতি মাসে ঋতুস্রাবের পাঁচদিন তারা নিজেদের বাসা থেকে দূরবর্তী একটি কুঁড়েঘরে বাস করে, যেখানে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার ও পানি ব্যবহার করার সুযোগ থাকে না। মাসিক চলাকালীন সময়ে প্রত্যেক নারীকে বিবেচনা করা হয় অশুচি এবং দূষিত হিসেবে। এই সময়টাতে সূর্যের দিকে তাকানো এবং বাড়ির পুরুষ, গবাদি পশু ও যেকোনো ধর্মীয় প্রতীক স্পর্শ করা থেকে তাদের সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হয়। মাসের এই কয়টি নির্দিষ্ট দিনে তাদের খাবার হিসেবে বরাদ্দ থাকে শুধু ভাত, লবণ এবং শুকনো খাবার। তাদের অন্যান্য স্বাভাবিক খাদ্যগ্রহণ করতে দেয়া হয় না এই বিশ্বাস থেকে যে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে তাদের সংস্পর্শে শাকসবজি, ফলমূল, দুধ ইত্যাদি বিনষ্ট হয়ে যাবে। যেসব নারী এই প্রথার বিরোধিতা করবে তাদেরকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গবাদি পশুর আকস্মিক মৃত্যু ও শস্যের কম ফলনের জন্য দায়ী করা হয়। হিন্দু ধর্মের প্রাচীন নিয়মানুযায়ী ঋতুবতী নারীদের বাধ্যতামূলকভাবে দিনযাপন করতে হবে নিজ বাসস্থান থেকে দূরবর্তী একটি ঘরে। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছুদিন এ ধরনের কুঁড়েঘরে বসবাস করার রীতিকে বলা হয় ‘চৌপদী’। আইনত এক দশকের বেশি সময় ধরে যদিও এই প্রথাটি ন্যায়সঙ্গত নয়, তবুও ঋতুবতী নারীদের জোরপূর্বক এখনও এই নিয়ম পালনে বাধ্য করা হয়। নেপালে প্রচলিত একটি বদ্ধমূল ধারণা হলো, ঋতুবতী হওয়ার আগেই কোনো মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলে তার অব্যবহিত পরিবার স্বর্গবাসী হবে। বাল্যবিবাহ ও চৌপদী পরস্পর সম্পর্কিত, কারণ তারা যথাক্রমে মাসিক পূর্ব ও পরবর্তী পবিত্রতার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত দু'টি ধারণা। ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে অনেক নারী সঠিক দেখাশোনার অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের এই অসুস্থতার কারণ হিসেবে ভাবা হয় তাদের উপর অপদেবতা ভর করেছে এবং এর সমাধান হিসেবে তাদের তীব্র অত্যাচার করা হয়। অনেক নারীকেই সুস্থ করার দোহাই দিয়ে তীব্র মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করা হয়। নেপালে স্বামীর মৃত্যু হলে বিধবা নারীদের একঘরে করে দেয়া হয়। স্বামীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়, তার স্ত্রীর অতীত জীবন অবশ্যই পাপে পরিপূর্ণ ছিল! সন্তানের জন্ম দেয়ার সময়ের রক্তপাতও এখানে পাপের প্রতীক। প্রসবোত্তর রক্তপাত শুরু হলে নারীদের সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতকসহ চৌপদীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রাচীন এই নিয়ম ১৯ বছরের এক কিশোরীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তুলাশি শাহি এর আগেও বহুবার চৌপদীতে অবস্থান করেছিল। শেষবার সে যখন যায় তখন তাকে থাকতে হয়েছিল এক আত্মীয়ের গোয়ালঘরের মেঝেতে। সাপের কামড় হয়েছিল তার মৃত্যুর কারণ। পায়ে আর মাথায় দু'বার তাকে সাপ কামড়ায়। প্রাথমিকভাবে তার পরিবার ঘরোয়া দ্রব্যাদি দিয়ে চিকিৎসা করার চেষ্টা করে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের দরুন পাহাড়ি এলাকায় তখন বন্যা চলছে। রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে নিকটস্থ হাসপাতালে তিন ঘণ্টার যাত্রা শেষে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও তুলাশির চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টি ভেনোম সেই মুহূর্তে হাসপাতালে ছিল না। দীর্ঘ সাত ঘণ্টা পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তুলাশি। সাম্প্রতিক সরকারী তথ্যমতে, নেপালের দৈলেখ জেলায় রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের বাস। নেপালের মধ্য পশ্চিমাঞ্চলের এই এলাকায় রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক চৌপদী। মানবাধিকার কর্মীদের দাবী, সরকারের এই তথ্য প্রকৃত অবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরতে ব্যর্থ। চৌপদী ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তারা নতুন ঘর তৈরি না করলেও এখনো বহু পুরোনো-অব্যবহৃত ঘর অথবা গোয়ালঘরের নির্জন কোনা চৌপদীর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে। ঋতুস্রাব অধিকার নিয়ে প্রচলিত আইনগুলো বাস্তবিকপক্ষে চরমভাবে অকার্যকর এবং উপেক্ষিত। চৌপদীতে থাকতে গিয়ে আরও এক তরুণী না ফেরার দেশে চলে গেছে। গৌরী কুমারী নামের এই তরুণী ছিল অত্যন্ত মেধাবী। নিজের পড়ালেখা শেষ করে সে নেপালের অক্ষর-জ্ঞানহীন নারীদের মাঝে শিক্ষার আলো বিলিয়ে দেয়ার ব্রত নিয়েছিল আর পাশাপাশি সেলাই কাজে ব্যস্ত থাকতো। চৌপদীতে থাকার সময় প্রচণ্ড নিম্ন তাপমাত্রায় আগুল জ্বালানোর চেষ্টা করেছিল। শেষাবধি তাকে সকালবেলা মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নেপালের রাষ্ট্রপতি নারী, সংসদের স্পিকার নারী, এমনকি সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি হিসেবেও একজন নারীকে ছিল। কিন্তু নেপালের শাসন ব্যবস্থার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা নারী হয়েও এসব ঘটনার বিষয়ে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি! ধর্মের বিধিবিধান অনুসরণ করতে গিয়ে একের পর এক নারীর মৃত্যু প্রহসন ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। ঋতুস্রাব অস্বাভাবিক বিষয় নয়। প্রকৃতিপ্রদত্ত এই নিয়মেই মেয়েরা মা হওয়ার পথে প্রথম পদচিহ্ন এঁকে দেয়।

এবার যাওয়া যাক মুসলিম প্রধান আরেক দেশে। ব্যস্ত সড়কে শত শত যানবাহন, পাশাপাশি হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর। এমন রাস্তায় দ্রুতপদে গন্তব্যপানে হেঁটে চলেছে ট্রাউজার আর গাউনের পোশাক পরিহিত এক নারী। হঠাৎ আবির্ভূত হলো একদল হিংস্র মাঝবয়সী পুরুষ। অন্তত ৫০ জন পুরুষ মুহুর্তেই চারদিক থেকে ঘিরে ফেললো তাকে। শুরু হলো অমানবিক যৌন অত্যাচার। কেউ গাল টিপে দিচ্ছে, কেউ ট্রাউজার টেনে নীচে নামিয়ে নিচ্ছে, কেউ পিঠের দিক থেকে গাউন ছিড়ে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে। বাকিটুকু ভাষায় বর্ণনার অনুপযোগী। পুলিশ এসে ঐ নারীকে উদ্ধার করতে করতে হিংস্র, কামান্ধ পশুর দলের অত্যাচার চললো প্রায় মিনিট বিশেক। এটি মিশরের কায়রো শহরের ঘটনা। তার মতো আরো হাজারো মিশরীয় নারীর সাথে এরূপ ঘটনা অহরহই ঘটতো। ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে আবার ফিরে আসবে কিনা, এই নিশ্চয়তা ছিল না তাদের। তখন মিশর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ‘তাহাররুশ’ নামক এক দানব, যে কিনা দিনে-দুপুরে ব্যস্ত রাস্তায় পুলিশ-প্রশাসনের সামনে মানুষকে রক্তাক্ত করতে পারতো। ‘মানুষ’ শব্দটি এখানে প্রয়োগ করলে ভুল হতো, তাহাররুশ দানবের ভয়াল থাবার শিকার ছিল সাত থেকে সত্তর- যেকোনো বয়সের নারীরা! তাহাররুশ শব্দটি মিশরীয় নারীদের নিকট এক বিভীষিকার নাম। তাহাররুশ একটি আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ হামলা বা অত্যাচার। তাহাররুশ যখন মিশরে সবচেয়ে প্রকট আকারে বিরাজমান, বিশেষত ২০১১-১২ সালের রাজনৈতিক টালমাটাল সময়ে, তখন এর লাগামহীন প্রসারণের জন্য এর নাম হয়ে যায় ‘তাহাররুশ জামাই’ বা ‘গণ যৌন হয়রানি’! মিশরে এর বীজ প্রোথিত হয়েছিল ২০০৫ সালে। এই পাশবিক বর্বরতার বীজ ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে একসময় বৃক্ষে পরিণত হয়, যার ডালপালা ২০১১ সালের দিকে কায়রোর বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৫-১৬ সালে আরবের তাহাররুশ ইউরোপেও সংক্রমিত হয়েছিল খানিকটা! ২০০৫ সালের ২৫ মে মিশরে সংবিধানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিষয়ক একটি ধারা পরিবর্তনের জন্য সরাসরি গণভোট চলছিল। গণভোটে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিয়ে সর্বসাধারণের মধ্যে ছিল একপ্রকার গুঞ্জন এবং আশঙ্কা। সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণ করে সেদিনই ঘটে প্রথম ব্যাপক আকারে তাহাররুশের ঘটনা। কায়রোতে গণভোটে অংশগ্রহণ করতে উপস্থিত হওয়া লাখো মানুষের মাঝে শতাধিক নারী শিকার হয় যৌন অত্যাচারের। সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হঠাৎ করে একের পর এক বাস এসে থামতে থাকে সমাবেশের নিকট এবং বাস থেকে নেমে আসে শতাধিক মধ্যবয়সী যুবক। তারা সমাবেশস্থলে প্রবেশ করে পৃথক পৃথক স্থানে নারীদের ঘিরে যৌন নির্যাতন চালায়। অথচ আশেপাশে উপস্থিত ছিল হাজারো নিষ্ক্রিয় পুলিশ! এই দিনটি পরবর্তীতে ‘ব্ল্যাক ওয়েনসডে’ বলে পরিচিতি লাভ করে। তাহাররুশ আরো আগে থেকেই মিশরে ঘটতো। তবে ২০০৫ সালের আগে তা ছিল প্রায় বিরল। ২০০৫ সালেই প্রথমবারের মতো এই অমানবিক ঘটনাটি প্রকাশ্যে ব্যাপকতা লাভ করে। এর পরের বছর ২০০৬ সালের ঈদুল ফিতরের দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে তাহাররুশ জামাই। সেদিন কায়রোর তালাত হার্ব স্ট্রিটে প্রায় ৫ ঘন্টা যাবত একদল যুবক নারীদের উপর যত্রতত্র হামলা চালায়। সেই হামলার শিকার হয় ৭ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধাও! ভুক্তভোগীদের মুখে পাওয়া ঘটনার বিবরণ গা শিউরে ওঠার মতো। প্রতিটি আক্রমণে সাধারণত ২০-৩০ জন হামলাকারী যোগ দেয়, যাদের বয়সও ২০-৩০ এর মধ্যে। আক্রমণের স্থায়িত্ব কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে ঘণ্টাও হয়ে থাকে, নির্ভর করে উদ্ধারকারীর তৎপরতার উপর! হামলাকারীরা প্রথমেই তাদের শিকারকে সঙ্গীর নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয় এবং একযোগে ঘিরে ফেলে। এরপর চারদিক থেকে আক্রমণে কোণঠাসা নারীদেহের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলো অনবরত খুঁজে বেড়ায় শত শত হাত! ভীত, হতবিহ্বল সেই নারীর চোখ যখন চারদিকে অজানা-অচেনা মুখগুলোর মাঝে একটু সাহায্য খুঁজে বেড়ায়, তখন তার কানে আসতে থাকে অসংখ্য আশ্বাসবাণী! “তোমার কোনো চিন্তা নেই”, “তুমি আমার বোন, আমি তোমাকে বাঁচাবো”, “এদিকে চলো, আমার সাথে চলো”, “সবাই সরে যাও, রাস্তা করে দাও আমার বোনকে”- আক্রমণকারীরা এরকম নানান বাক্য ছুঁড়ে দিতে থাকে সেই নারীর দিকে। এই আশ্বাসবাণীগুলোও যৌন নিপীড়কদের একটি কৌশল! একসাথে একাধিক কণ্ঠ একদিকে তার জামা ছিড়ে নিচ্ছে আর অন্যদিকে সাহায্যের কথাও বলছে! আক্রমণকারীদের সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপারটি হলো ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার। ছুরি, চাকু, ব্লেডসহ নানা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে তারা ঘেরাও এর মধ্যে থাকা নারীর পোশাক কেটে ফেলার চেষ্টা করে! ভুক্তভোগী আহত নারীদের হাসপাতালে ভর্তির পর দেখা যায় অনেক নারীর যোনি এবং পায়ুপথে পিন, ছোট পেরেক বা পিন সদৃশ কোনো লৌহখণ্ড প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়েছে! ২০০৬-১১ সাল পর্যন্ত অন্তত শতাধিক তাহাররুশের ঘটনা ঘটে মিশরে। বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপারটি প্রথম গুরুত্ব পায় ২০১১ সালে। ঐ বছরের যে রাতে হোসেনি মোবারকের পতন ঘটে, সেই রাত থেকেই পুরো কায়রো জুড়ে তাহাররুশের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বাড়তে শুরু করে। শুরুটা হয় আফ্রিকান সাংবাদিক লারা লোগানের উপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে। আমেরিকান সিবিএস টিভি নেটওয়ার্কের সাংবাদিক লারা লোগান হোসেনি মোবারকের পতনের খবর সংগ্রহ করতে গেলে তার উপর হামলা হয়। পুলিশ এসে উদ্ধার করতে করতে অন্তত ২০০ মানুষ প্রায় ৩০ মিনিট যাবত তার উপর যৌন নিপীড়ন চালায়, যার একটি ভিডিও ইউটিউবে ভাইরাল হয়ে যায়। তাতেই আন্তর্জাতিক মিডিয়া সরব হয়ে ওঠে এই ঘৃণ্য যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে। শুধু সেই এক রাতেই নিপীড়কদের আক্রোশের শিকার হয় অন্তত ২০০ জন নারী; যাদের মধ্যে ফরাসি সাংবাদিক ক্যারোলিন শিনজ, ব্রিটিশ সাংবাদিক নাতাশা স্মিথ, মিশরীয় সাংবাদিক মোনা এলতাহাউ, হানিয়া মোহিবসহ ১৮ জন সাংবাদিক ছিলেন। ২০১২-১৪ সাল পর্যন্ত মিশরে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে তাহাররুশের ঘটনা ঘটে প্রায় ৫ শতাধিক! ২০১৪ সালের ৮ জুন প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কায়রোর তাহরির স্কয়ারে ঘটে যায় সবচেয়ে পৈশাচিক তাহাররুশের ঘটনা। ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শতাধিক মানুষ এক বিবস্ত্র নারীর উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। আক্রমণ শুরুর কয়েক মূহুর্তেই ঐ নারীর বোরকা ছিড়ে ফেলা হয়। চিৎকার করতে করতে মূর্ছা গেলেও সেই নারীর উপর আক্রমণ চালিয়ে যায় দুষ্কৃতিকারীরা! তাকে ভিড়ের মধ্য থেকে উদ্ধার করতে ২০ মিনিট লেগে যায় পুলিশের! গ্রেফতার করা হয় ৭ জনকে। আহত ঐ নারীকে দেখতে সেদিন রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ। পরে তার নির্দেশে ইউটিউব থেকে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়। এই ঘটনার পর থেকেই মিশরের নারীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। দিকে দিকে প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়লে গ্রেফতার হতে থাকে অনেক সক্রিয় হামলাকারী। ২০১৫-১৬ সালে তাহাররুশের আদলে যৌন হামলার ঘটনা ঘটে জার্মানিতে। ধারণা করা হচ্ছিল, তাহাররুশ ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু সেই দেশের সরকার তা শক্ত হাতে দমন করে। ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির ঘটনাটির সাথেও অনেকে তাহাররুশের সামঞ্জস্য খুঁজে পেয়েছে। নারীদের উপর যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণের কারণ হিসেবে এদেশে প্রায়শই একটি কথা শোনা যায় যে, এসবের পেছনে নারীর পোশাক দায়ী। কিন্তু মিশরে যে নারীরা বিকৃত কামলিপ্সার শিকার হয়েছে, তাদের অধিকাংশই তথাকথিত শালীন পোশাক পরিহিত ছিল। তারপরও তাদের উপর আক্রমণ স্পষ্টতই বলে দেয়, যৌন হয়রানি নারীর পোশাক নয়। তাহাররুশের মতো ঘটনার পেছনে প্রবল নারী বিদ্বেষী মনোভাবও কাজ করে। নারীরা যেন রাস্তায় বেরিয়ে আসতে ভয় পায় এবং নিজেদের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে, সেই উদ্দেশ্য পরোক্ষভাবে এই অপরাধে মদদ দেয়া হয়। এই উদ্দেশ্যে সফল হতে পারলে নারীদের উপর পুরুষের কর্তৃত্ব বজায় রাখাও সম্ভব! আর বিকৃত কামাসক্তি তো আছেই।
Comments