হায়দার আলিয়েভের কুলাঙ্গার পুত্র (পর্ব-এক)

https://m.jpost.com/opinion/israel-azerbaijan-strengthen-and-expand-strategic-partnership-578185

https://foreignpolicy.com/2012/03/28/israels-secret-staging-ground/

১৯৯১ সালে আজারবাইজান স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে রাষ্ট্রটির ঘনিষ্ঠ ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক বিদ্যমান। আজারবাইজানের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভের মতে আজারবাইজানি-ইসরায়েলি সম্পর্ক আইসবার্গের অনুরূপ, যার মাত্র এক-দশমাংশ দৃশ্যমান, বাকি নয়-দশমাংশই পানির নিচে লোকচক্ষুর অন্তরালে অবস্থিত! আজারবাইজানের মূল ভূখণ্ডের বাইরে রাষ্ট্রটির ছিটমহল নাখচিভান উত্তর ও পূর্বে আর্মেনিয়া, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ইরান এবং উত্তর-পশ্চিমে তুরস্ক দ্বারা পরিবেষ্টিত। রাষ্ট্রটির মূল ভূখণ্ডে ও কাস্পিয়ান সাগরে আজারবাইজানি জলসীমায় প্রচুর খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে। আজারবাইজানের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৯১% আজারবাইজানি, যারা বৃহত্তর তুর্কি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। রাষ্ট্রটির জনসংখ্যার প্রায় ৯৭% মুসলিম, যাদের মধ্যে প্রায় ৮৫% শিয়া এবং প্রায় ১৫% সুন্নি। আজারবাইজান বিশ্বের ৪টি শিয়াপ্রধান রাষ্ট্রের মধ্যে একটি (বাকি ৩টি শিয়াপ্রধান রাষ্ট্র হচ্ছে ইরান, ইরাক ও বাহরাইন)। বৃহত্তর তুর্কি জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত ৬টি রাষ্ট্রের সবগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে! বর্তমান আজারবাইজানের ভূখণ্ডটি ১৮১০ এর দশকে রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯২০-১৯৯১ সাল পর্যন্ত এটি 'আজারবাইজান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র' নামে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জার্মানির সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল আজারবাইজানের তেলখনিগুলো দখল করা। ইতিহাসবিদদের মতে, আজারবাইজানের তেলভাণ্ডার দখলের ক্ষেত্রে জার্মান সশস্ত্রবাহিনীর ব্যর্থতা ছিল বিশ্বযুদ্ধে জার্মান পরাজয়ের অন্যতম কারণ। ১৯৫০ এর দশক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ইসরায়েলের পশ্চিমাপন্থী পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বনের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে। সোভিয়েত আজারবাইজান মস্কোর নীতি অনুসরণ করে ইসরায়েলবিরোধী এবং ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান গ্রহণ করে।

https://www.azernews.az/business/143969.html

১৯৬৭-১৯৭০ সালে মিসরীয়-ইসরায়েলি 'অঘোষিত যুদ্ধ' চলাকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর আক্রমণ থেকে মিসরীয় ভূমিকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য ১৫,০০০ সৈন্যের যে বাহিনীকে মিসরে মোতায়েন করেছিল, তার সৈন্যদের একাংশ এসেছিল আজারবাইজান থেকে। ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত আজারবাইজান মিসর ও সিরিয়াকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিল। ১৯৯১ সালের অক্টোবরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর আজারবাইজান স্বাধীনতা লাভ করে এবং ২৫ ডিসেম্বর বিশ্বের দ্বিতীয় রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল আজারবাইজানকে স্বীকৃতি প্রদান করে (প্রথম রাষ্ট্র তুরস্ক)! ১৯৯২ সালের ৭ এপ্রিল রাষ্ট্র দু'টির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ইসরায়েলের দূতাবাস রয়েছে, কিন্তু ইসরায়েলে আজারবাইজানের কোনো কূটনৈতিক দপ্তর নেই!

http://www.israelnationalnews.com/News/News.aspx/131627

আজারবাইজানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের প্রান্তিক অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার, এতদঞ্চলে সোভিয়েত প্রভাব বিলুপ্তির ফলে সৃষ্ট সামরিক-রাজনৈতিক শূন্যস্থান পূরণ, তেলসমৃদ্ধ আজারবাইজানে প্রভাব বিস্তারের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং ইরানের বিরুদ্ধে ভূকৌশলগত অবস্থানের উন্নয়ন- এসব উদ্দেশ্যে ইসরায়েল আজারবাইজানের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল। ১৯৮৮ সাল থেকে আর্মেনিয়ার সঙ্গে চলমান নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধে লিপ্ত ও ইরান থেকে ইসলামপন্থী ভাবাদর্শ আজারবাইজানে ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে ভীত আজারবাইজানের শাসকশ্রেণি উন্নত সমরপ্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা লাভ এবং আর্মেনীয় ও ইরানি প্রভাব রোধের উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনীয়-আজারবাইজানি দ্বন্দ্বে ইসরায়েল আজারবাইজানকে সামরিক সহায়তা প্রদান করে। এসময় ইসরায়েল ও তুরস্ক আজারবাইজানকে মার্কিন নির্মিত 'স্টিঙ্গার' ক্ষেপনাস্ত্র সরবরাহ করে। এই যুদ্ধে আজারবাইজান পরাজিত হয় এবং বিরোধপূর্ণ নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের ওপর আর্মেনিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আর্মেনিয়ার পাশাপাশি ইরানের সঙ্গেও বিভিন্ন কারণে আজারবাইজানের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বিদ্যমান। আজারবাইজান ভৌগোলিক অঞ্চলটি স্বাধীন আজারবাইজান ও ইরানের অন্তর্গত 'ইরানি আজারবাইজান'- এই দুই ভাগে বিভক্ত। 'ইরানি আজারবাইজান' অঞ্চলটি পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, আরদাবিল ও জাঞ্জান প্রদেশে বিভক্ত এবং ইরানি আজারবাইজানে বসবাসরত আজারবাইজানির সংখ্যা দেড় কোটি থেকে ১ কোটি ৮৫ লক্ষের কাছাকাছি। স্বাধীন আজারবাইজানের চেয়ে ইরানি আজারবাইজানে বেশি সংখ্যক আজারবাইজানি বসবাস করে। আজারবাইজানি জাতীয়তাবাদীদের মতে, স্বাধীন আজারবাইজান হচ্ছে 'উত্তর আজারবাইজান' আর ইরানি আজারবাইজান হচ্ছে 'দক্ষিণ আজারবাইজান'। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ও পরবর্তীতে ১৯৪১-১৯৪৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক উত্তর ইরান দখলের সময় আজারবাইজানি জাতীয়তাবাদীরা উভয় আজারবাইজানকে একত্রিত করে 'বৃহত্তর সমাজতান্ত্রিক আজারবাইজান' প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিল। ১৯৮০ এর দশকের শেষদিকে আজারবাইজানি জাতীয়তাবাদীরা পুনরায় এই দাবি উত্থাপন করে। ইরান আজারবাইজানের স্বাধীনতা লাভকে নিজের ভৌগোলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছিল। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরান ককেশাস, মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি ধাঁচের ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিল এবং সোভিয়েত আজারবাইজানের কমিউনিস্ট শাসকশ্রেণি এই প্রচেষ্টাকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতো। ১৯৯৩ সালে প্রজাতন্ত্রটির প্রাক্তন কমিউনিস্ট শাসক ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাক্তন প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী হায়দার আলিয়েভ রাষ্ট্রটির শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি আজারবাইজানে সোভিয়েত ধাঁচের ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন এবং ২০০৩ সালে তার মৃত্যুর পর থেকে ছেলে ইলহাম আলিয়েভ আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত। আজারবাইজানি শাসকশ্রেণি ইরানি ধাঁচের ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে আজারবাইজানের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধ পরবর্তী দ্বন্দ্বে ইরান আর্মেনিয়াকে সমর্থন করেছিল। বস্তুত আর্মেনিয়ার মাধ্যমে আজারবাইজানের ওপর চাপ বজায় রাখার মাধ্যমে ইরানি আজারবাইজান থেকে আজারবাইজানের দৃষ্টি সরিয়ে রাখার জন্যই ইরান এরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আজারবাইজান ও ইরান উভয়ের সঙ্গে কাস্পিয়ান সাগরের জলসীমা রয়েছে এবং এই জলসীমা নিয়ে রাষ্ট্র দু'টির মধ্যে বিরোধ রয়েছে। কাস্পিয়ান সাগরে বিপুল পরিমাণ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে এবং উভয় রাষ্ট্র এই সম্পদের ওপর নিজস্ব কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। আজারবাইজান বেশ কয়েকবার অভিযোগ তুলে ইরানি নৌবাহিনী আজারবাইজানি জলসীমায় প্রবেশ করেছে। ২০১৮ সালের আগস্টে কাস্পিয়ান সাগরের উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলো (রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আজারবাইজান ও ইরান) জলসীমা নিয়ে বিরোধ নিরসনের উদ্দেশ্যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও কাস্পিয়ান অঞ্চলে ইরানি-আজারবাইজানি দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত নিরসন হয়নি। ১৯৯০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ককেশাস অঞ্চলে রাশিয়া, ইরান ও আর্মেনিয়ার প্রভাবকে রোধ করার জন্য ইসরায়েল, আজারবাইজান, জর্জিয়া ও তুরস্কের সমন্বয়ে ভূকৌশলগত অক্ষ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। আজারবাইজান তার পররাষ্ট্রনীতি পুরোপুরিভাবে পশ্চিমামুখী করতে রাজি ছিল না এবং এজন্য রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রয়াসী হয়। ইরানি-আজারবাইজানি দ্বন্দ্ব এবং ইরানি-ইসরায়েলি দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল ও আজারবাইজানের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। আজারবাইজান ইসরায়েল থেকে প্রচুর পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে। জেন'স ডিফেন্স উইকলি'র তথ্য অনুসারে ইসরায়েল আজারবাইজানের কাছে ভারী কামান, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান রপ্তানি করে। আজারবাইজানি সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা ইসরায়েলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। আজারবাইজানের নিজস্ব যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইসরায়েল আজারবাইজানকে সহায়তা করছে। ২০১১ সালে ইসরায়েলের 'অ্যারোনটিক্স ডিফেন্স সিস্টেমস' কোম্পানি আজারবাইজানি সরকারের সঙ্গে যুগ্মভাবে আজারবাইজানের ভূমিতে 'আজাদ সিস্টেম' কোম্পানি স্থাপন করেছে, যেটি চালকবিহীন বিমান নির্মাণ করে। ২০১২ সালে আজারবাইজান ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ত ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি'র কাছ থেকে চালকবিহীন বিমান এবং বিমান বিধ্বংসী ও অন্যান্য ক্ষেপনাস্ত্র ক্রয় করে। ২০১৬ সালের মধ্যে আজারবাইজান ইসরায়েলের কাছ থেকে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করেছে। ২০১৯ সালে আজারবাইজান বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের 'এলবিত সিস্টেম' কোম্পানির কাছ থেকে 'স্কাই স্ট্রাইকার' আত্মঘাতী ড্রোন ক্রয় করেছে। ইসরায়েলি এবং আজারবাইজানি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৯০ এর দশকে হিজবুত তাহরীর সহ বিভিন্ন জঙ্গি গ্রুপ আজারবাইজানে সক্রিয় ছিল এবং এদের দমন করার জন্য আজারবাইজান ইসরায়েলি সহায়তা গ্রহণ করে। ২০০১ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল ও আজারবাইজান সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে একই অবস্থান গ্রহণের ব্যাপারে একমত হয়। ২০০৮ সালে আজারবাইজানি নিরাপত্তারক্ষীরা বাকুতে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাসের ওপর আক্রমণ চালানোর প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয় এবং ২০০৯ সালের মে মাসে হিজবুল্লাহ'র দুই সদস্যকে এই আক্রমণ প্রচেষ্টার জন্য আজারবাইজানের আদালত শাস্তি প্রদান করে। এই আক্রমণ প্রচেষ্টার পেছনে ইরানি হস্তক্ষেপ জড়িত ছিল বলে বাকু ও জেরুজালেম থেকে অভিযোগ করা হয়। আজারবাইজানে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের কার্যক্রম এত বিস্তৃত যে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানবিরোধী কার্যকলাপে ইসরায়েলকে সহায়তা করার দায়ে আজারবাইজানকে অভিযুক্ত করে। পরের মাসে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের তথ্য মোতাবেক আজারবাইজানি নিরাপত্তারক্ষীরা ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং এরা ইরানি ইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী'র নির্দেশে আজারবাইজানে অবস্থিত মার্কিন ও ইসরায়েলি দূতাবাসে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছিল বলে অভিযোগ করে। আজারবাইজান ইসরায়েলকে নিজ ভূমিতে সামরিক ও গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের জন্য অনুমতি প্রদান করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে! বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, ইরানের ওপর নজরদারি করার জন্য কাস্পিয়ান সাগরের তীরে এবং ইরানি-আজারবাইজানি সীমান্ত বরাবর মোসাদ বৈদ্যুতিক লিসনিং পোস্ট স্থাপন করেছে। আজারবাইজানের কয়েকটি সোভিয়েত নির্মিত বিমানঘাঁটি ব্যবহারের জন্য ইসরায়েলি বিমানবাহিনীকে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে বলে জানা যায়। কাস্পিয়ান সাগরের তীরে পূর্ব আজারবাইজানে অবস্থিত সোভিয়েত আমলে নির্মিত সিতালচায় সামরিক বিমানঘাঁটিতে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ঘাঁটি স্থাপন করেছে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করেন। এই বিমানঘাঁটি ইরান থেকে ৫০০ কি۔মি۔ দূরে অবস্থিত এবং বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুযায়ী ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে এতদঞ্চলে ইরানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলা হবে। ইরানি পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েল আজারবাইজানি বিমানঘাঁটিগুলো ব্যবহার করতে পারে। ইসরায়েলের আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের প্রায় ৪০% আসে আজারবাইজান থেকে। ইসরায়েলি ব্যবসায়ীরা আজারবাইজানে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে এবং আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেলফোন অপারেটর 'বাকসেল' ইসরায়েলি মালিকানাধীন। ২০১০ সালে আজারবাইজানে যে নতুন ভিসা আইন প্রবর্তন করা হয়েছে, সেটি থেকে ছাড় পাওয়া দু'টি রাষ্ট্রের একটি হচ্ছে ইসরায়েল এবং অপরটি তুরস্ক। ২০১৭ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্র দু'টির মধ্যে বাণিজ্যকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শুল্ক ব্যবস্থার সরলীকরণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আজারবাইজান ইসরায়েলের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদারগুলোর একটি এবং ২০১৯ সালে ইসরায়েল আজারবাইজান থেকে ১.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। ইউরেশিয়া অঞ্চলে ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদার হচ্ছে আজারবাইজান। আজারবাইজানের শাসকশ্রেণি ইসরায়েলের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি লবির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে, যার মূল উদ্দেশ্য তাদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আজারবাইজানের সম্পর্ক উন্নয়ন করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো আজারবাইজানের যে নিন্দা করে সেটি এড়ানো। একইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর্মেনীয় লবির যে প্রভাব রয়েছে (১৯৯০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্মেনিয়াকে এত বেশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিল যে আর্মেনিয়া 'ককেশাসের ইসরায়েল' নামে পরিচিতি অর্জন করেছিল), সেটির প্রভাব হ্রাস করার জন্য আজারবাইজান ইসরায়েল ও মার্কিন ইহুদি লবির সমর্থন লাভের প্রত্যাশী।






Comments

Arean Woahid said…
দারুণ বিশ্লেষণ ও তথ্যবহুল লেখা।পুরোটা শেষ করতে পারি নি। লিংক কপি করে নিয়ে রাখলাম, পরে পড়ে নিবো

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

চাড্ডিগণ [এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]