ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নারী শোষণ

বর্তমান পৃথিবীতে প্রতিটি দেশেই দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হলেও একুশ শতকে এসেও আরেক ধরণের দাসপ্রথার মৃত্যু এখনো ঘটেনি। আর এসব দাসরা হচ্ছে যৌনদাসী, যাদের শরীর বিক্রি হয় পৃথিবীর সর্বত্র। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাণিজ্যিক যৌন নিষ্পেষণের স্বীকার হয়েছে প্রায় ৪৮ লক্ষ নারী ও শিশু!

https://www.ilo.org/global/topics/forced-labour/lang--en/index.htm

শিশু পর্নোগ্রাফি, পতিতালয় কিংবা নাইট ক্লাবে জোরপূর্বক শরীর বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে এদের। শতকরা হিসেবে এই হার এশিয়া মহাদেশে ৭৩% ! অন্যদিকে এনলাইটেনমেন্ট এর নামে একসময় ঔপনিবেশিক দাসরাজ্য কায়েম করা আধুনিক ইউরোপিয়ান দেশগুলোও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই, নারী ও কন্যা শিশুর শরীর বিক্রির বাজারে তাদের অবদান ১৪% !


সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে দারিদ্র আর অর্থনৈতিক দুর্দশায় পতিত মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ এর দেশগুলো মূলত যৌন দাসপ্রথা চক্রের খপ্পরে পড়েছে। কাজ দেয়ার নাম করে মলদোভা, বসনিয়া, স্লোভেনিয়ার মতো দেশগুলো থেকে নারীদের পাচার করে বিক্রি করে দেয়া হয় উন্নত আর উদারনৈতিক হিসেবে নিজেদের দাবী করা যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে। এক্ষেত্রে মূল ভূমিকায় থাকে ভয়ঙ্কর মানব পাচাকারী চক্রগুলো। এই অসহায় নারী আর শিশুদের জীবন আমস্টারডাম কিংবা লন্ডনের কোনো অন্ধকার গলিতে শেষ হয়ে যায়। আর পৃথিবীর নানা দেশের আইনে সভ্যতার নামে প্রহসন চলতে থাকে নারীদের সাথে, যেমনটা হয়েছে নেদারল্যান্ডসে! ২০০০ সালে পতিতাবৃত্তি বৈধ করে দেয় ডাচ সরকার এবং এজন্য যুক্তি দেখায় যে, এর ফলে কমে আসবে নারী ও কন্যা শিশু পাচারের হার! বর্তমানে এই দেশটিতে ১২০০ এর বেশি যৌনপল্লী রয়েছে! অথচ যৌন ব্যবসা থেকে প্রতি বছর ৬৬ কোটি ইউরো আয় করে ডাচরা! এর বিপরীতে দেশটির যৌনপল্লীর বৈধতা দানের আসল বাস্তবতা নিচের নারীর মুখ!


এই নারীর নির্যাতনকারী শাবান বারান বান্ধবীকে নিয়ে নিশ্চিন্তে পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করে যায়!


দুই বছরে ১৩০ জনের বেশি নারীকে পাচার করে এই লোক, যাদের অধিকাংশই পূর্ব ইউরোপের অধিবাসী। অথচ গ্রেফতার এর একদিন পর তাকে ডাচ সরকার ছেড়ে দিলে সে তুরস্ক পালিয়ে যায়। আমস্টারডাম কিংবা হেগ এর নিয়ন আলোয় আলোকিত জানালার পিছনে গুমরে কাঁদে সেই হতভাগ্য নারীরা। আনন্দ উপভোগকারীরা কি জানে খরিদ্দারদের সামনে এসব নারীদের হাঁসির পেছনের ঘটনা? কিংবা সেসব তথাকথিত মুক্তমনা যারা স্বাধীনতার নামে শোষণকে বৈধতা দিতে গলা ফাটিয়ে যাচ্ছে?

এবার দেখা যাক ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে মার্কিনীদের অবস্থা।


২০১৮ সালের ২৪ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সড়কে একত্রিত হয়েছিলো দুই মিলিয়নের বেশি মানুষ।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/March_for_Our_Lives


প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ আগ্নেয়াস্ত্রের কারণে নিহত হয়। কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই নাগরিকদের কাছে রয়েছে ৩০০-৩৫০ মিলিয়ন বন্দুক! উচ্চ আয়ের অন্য যেকোনো দেশের সম্মিলিত হারের প্রায় ২৫ গুণ বেশি বন্দুক দ্বারা হত্যার ঘটনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে! ২০১২-২০১৬ সাল পর্যন্ত গড়ে এক লক্ষ ৭৫ হাজার ৭০০ জন আত্মহত্যা করেছে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ মানুষ আগ্নেয়াস্ত্রের সাহায্য নিয়েছে। কেবল ২০১৫ সালে ৪৪ হাজার আমেরিকান বন্দুকের সাহায্যে নিজেদের প্রাণনাশ করেছে। প্রতি বছর প্রায় ৮০ শতাংশ তরুণ বন্দুকের সাহায্যে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে! ১৯৯৬ সালে মার্টিন ব্র্যায়েন্ট তাসমানিয়ার পোর্ট আর্থার হিস্ট্রিক সাইটে জনসমুদ্রের উপর আকস্মিক গুলি চালানো শুরু করে। ঐ ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ২৩ জন আহত হয়। এরপর রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সেমি অটোমেটিক শটগান এবং রাইফেলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য একাট্টা হয়। কিছুদিনের মধ্যে সংবিধানে নতুন আইন জারি করা হয়। জনগণের কাছ থেকে বাজারমূল্যে সদ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপিত আগ্নেয়াস্ত্র কিনে তা ধ্বংস করে ফেলে সরকার, এই এক আইনে দেশটিতে আগ্নেয়াস্ত্রের পরিমাণ ৩০ শতাংশ কমে যায়। সেবছর অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকের গুলিতে নিহতের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমে যায়। আর বন্দুকের সাহায্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা ৮০ শতাংশ কমে যায়। বন্দুক সংক্রান্ত খুনের পরিমাণও সেবছর অর্ধেক কমে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। নারী নির্যাতনকারীদের মধ্যে এমন কিছু নির্যাতকের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা বন্দুকের সামনে দাঁড় করিয়ে মেয়েদের উপর নানাভাবে মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালাতো। অস্ত্র জমা দিতে বাধ্য হওয়ার কারণে এই অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পায় অনেক নারী। একটি বন্দুকের উপস্থিতি মানুষকে অনেক বেশি উগ্র ও আগ্রাসী করে তোলে, যা ‘গান এফেক্ট’ হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৫০ জন নারী তার স্বামী বা ছেলেবন্ধুর গুলিতে নিহত হয়। বিশ্বের উন্নত অনেক দেশের অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি অস্ত্র ব্যবসা। ইরাক, ইরান বা সিরিয়ায় আছে তেলের খনি আছে, আর কোরিয়া বা আফগানিস্তানের মতো রুক্ষ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দেশগুলোর যুদ্ধে আমেরিকার হস্তক্ষেপের অন্যতম প্রধান কারণ অস্ত্র বাণিজ্য। বন্দুক তৈরি করার সাথে জড়িত রাজনৈতিক-অর্থনীতি যেকোনো দেশের মানচিত্র পাল্টে দিতে পারে। ফায়ারআর্ম ইন্ডাস্ট্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন এর মতে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর বৈধ উপায়ে ২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র লেনদেন করে তারা। অবৈধ উপায়ে কালোবাজারে বিক্রি হয় আরও প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার, কাগজে-কলমে যার কোনো প্রমাণ থাকে না। প্রতি বছর অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও তাদের পুনর্বাসন মিলিয়ে খরচ হয় আরও প্রায় ১০.৭ বিলিয়ন ডলার। রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে ক্ষয়ক্ষতির জন্য সার্বিক ভর্তুকিতে যায় প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার!





Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]