চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
ধর্ম আর পুঁজিবাদ দু'টোই শোষণের হাতিয়ার হিসেবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে ধর্ষণের প্রবণতা অত্যধিক বেড়ে গেছে ইদানিংকালে। অনেকে এক্ষেত্রে 'মূল্যবোধের অবক্ষয়' টার্মটা ঘন ঘন ব্যবহার করে। যাদের জহির রায়হান এর 'হাজার বছর ধরে' উপন্যাসটা পড়া আছে তারা নিশ্চয়ই মিটিমিটি হাসছেন এই টার্মটা শুনে? ধর্ষণ ছাড়াও সমাজে প্রচলিত বহু নোংরামি এই ভূখণ্ডে প্রাচীনকাল থেকেই ছিল। শুধু ছিল না স্যাটেলাইট চ্যানেল, এতগুলো পত্রিকা কিংবা ইন্টারনেট এর উপস্থিতি। হুমায়ুনপ্রেমীদের নিশ্চয়ই 'ঘেটুপুত্র কমলা' ছবিটা দেখা আছে? ভাটি অঞ্চলের জমিদার আর অবস্থাপন্ন লোকেরা দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে কিশোর ছেলেদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিনে নিয়ে যৌন আকাঙ্খা মেটাতো। এখন যেসব ধর্মীয় গুরুরা সমকামিতার বিরোধিতা করেন তারা ঐসময় কি ভূমিকা পালন করেছিলেন ব্যাপারটা নিয়ে জানতে মন চায়। ভারতে ধর্ষক সাধুকে বাঁচাতে আর বাংলাদেশে ধর্ষক মোল্লাকে বাঁচাতে মানুষ পুলিশের উপর হামলা করে! এদেশে নোংরামিগুলো নীরবে ঘটে চলেছে যুগের পর যুগ ধরে, অথচ সত্যি কথা উচ্চারণকে এদেশে 'বোল্ড শব্দ' হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। তাছাড়া এদেশের অলিখিত নিয়ম হচ্ছে বোল্ড শব্দ উচ্চারণ করলেও সেটা একমাত্র ছেলেদের জন্য অনুমোদিত, কোনো মেয়ে উচ্চারণ করলেই সে অবধারিতভাবে বিভিন্ন আপত্তিকর উপাধি পাবে। সংস্কৃতিই যেখানে সত্য উচ্চারণকে 'সংস্কৃতির অবক্ষয়' নাম দিয়ে অন্যায় আর শোষণ বজায় রাখতে সহায়তা করে যাচ্ছে, সেখানে তথাকথিত মুক্তমনারা ধর্মের পিছনে কোন আক্কেলে পড়ে থাকে? সংস্কৃতি থেকেই ধর্মের উৎপত্তি, তাই সংস্কৃতি ছাড়া ধর্ম কল্পনা করা যায়না। সব ফ্যাক্টর এর সামগ্রিক বিশ্লেষণের বদলে এরা একটা মাত্র ফ্যাক্টর এর পিছনে ছুটে বেড়ায়। এদেশে টিভি দেখার সময় পিরিয়ডের প্যাড এর এড কিংবা ধর্ষণের নিউজ আসলে সাথে সাথে চ্যানেল পাল্টে দেয়া হয়। এদেশে এটাই সংস্কৃতি হিসেবে মানা হয় যে, ছোটদের সামনে এসব দেখা যাবে না। এরা চার বছরের একটা শিশু আর ক্লাস সেভেন এর একটা কিশোর কিংবা কিশোরীকে একই মাপকাঠিতে বিবেচনা করে! চার বছরের একটা শিশু যৌনতা বিষয়ক কিছু না বুঝলেও ক্লাস সেভেন এর একটা কিশোর কিংবা কিশোরী নিজেদের শরীরের স্বাভাবিক পরিবর্তন থেকে এই বিষয়ে আকৃষ্ট হবে। প্রথম পিরিয়ডের সময় আগে থেকে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা অনেক কিশোরী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তার উপর তাকে নানা বিধিনিষেধ এর লম্বা তালিকা ধরিয়ে দেয়া হয়। বলা হয় পুরুষ সদস্যদের সামনে না যেতে, দিনের বিভিন্ন সময়ে বাইরে না যেতে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাকে যখন বলা হয় ধর্মীয় কিতাব স্পর্শ না করতে, ধর্মের সাথে সম্পর্কিত কোনো শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ না করতে কিংবা পবিত্র কোনো বৃক্ষ স্পর্শ না করতে তখন স্বভাবতই তার মধ্যে হীনমন্যতা কাজ করতে শুরু করে, সে নিজেকে অশুচি ভাবতে শুরু করে, নিজের ভিতরে আরও গুটিয়ে যায়, ইমপোস্টার সিনড্রোম এর মতো বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়। এসব অঞ্চলে ক্লাসে পর্যন্ত শিক্ষকরা জীববিজ্ঞানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ টপিক সবার সামনে পড়ায় না, বাড়ি থেকে পড়ে আসতে বলা হয় শিক্ষার্থীদের। আগেই বলা হয়েছে যে, সংস্কৃতি থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা যায়না। হিন্দু ধর্মের নানা বিধিবিধান হচ্ছে প্রাচীন ভারতের বহু মতবাদের মিশ্রণ, অপরদিকে ইসলাম এসেছে ইহুদিদের নিয়ম আর ইহুদিদের নিয়ম এসেছে ব্যাবিলোনিয়ানদের থেকে; যার প্রমাণ হাম্বুরাবির কোডগুলো কিংবা গিলগামেশের মহাকাব্য। সুদূর অস্ট্রেলিয়ার এবোরিজিন কিংবা ল্যাটিন আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের উপকথার সাথেও কিছু না কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যাবেই পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তের অন্য কোনো সম্প্রদায়ের লোকগাঁথার সাথে। আমাদের পূর্বপুরুষদের আফ্রিকা থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এবং পরবর্তীতে সাম্রাজ্যবাদীদের কল্যাণে সাংস্কৃতিক উপাদানের এমন আদান-প্রদান ঘটেছে। আধুনিক পৃথিবীতে ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা বিভিন্ন দেশ গঠিত হলেও সাংস্কৃতিক মিল এখনো বহু পৃথক অঞ্চলে দেখা যায়। যেমন- পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের কিংবা ইরানের সাথে তাজিকিস্তানের। উপমহাদেশের সংস্কৃতির ছাপ ছেলে-মেয়ে-তৃতীয় লিঙ্গ সবার উপরই প্রভাব ফেলে। ধর্ষণ এর ব্যাপারটা সবার ক্ষেত্রেই ঘটে, অথচ অধিকাংশ মানুষের ধারণা ব্যাপারটা শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই ঘটে। এখন যদি কোনো পতিতাকে ধর্ষণ করা হয় তখন নিরানব্বই ভাগ মানুষই বলবে যে, পতিতা কিভাবে ধর্ষিত হয়! তৃতীয় লিঙ্গের বেলায়ও একই প্রতিক্রিয়া হবে! ছেলেরা তথাকথিত মেয়েলি ব্যাপারে আগ্রহ দেখালে মা কিংবা বোন কর্তৃক ধমক দেয়া হয় এদেশে; এমনকি বড়ো ভাই, বাবা, বন্ধু কিংবা অন্য কোনো পুরুষ সদস্যদের মাঝেও একই আচরণ পরিলক্ষিত হয়। অথচ একটা ভাই কিংবা ছেলে সন্তান পারতো বোনের জন্য প্যাড এর প্যাকেট কিনে এনে অস্বাস্থ্যকর কাপড় পড়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে কিংবা রান্নায় মাকে সাহায্য করতে। হস্তমৈথুন এর মতো স্বাভাবিক যৌন আচরণকে 'পাপ' হিসেবে গণ্য করা হয়, অথচ শিশুদের যৌন নির্যাতন করার সময় এই কাজটাই করা হয় আর পরবর্তীতে অভিভাবকরা ছেলেদের সম্মানের ভয়ে চুপ থাকতে উপদেশ দেয়। যৌন নিপীড়ন এর শিকার ছেলে-মেয়েদের মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া হয় নিপীড়কদের ছেড়ে দিয়ে, পরবর্তীতে দেখা দেখা দেয় জেনোফোবিয়ার মতো ভয়াবহ মানসিক সমস্যা। এক্ষেত্রে সংস্কৃতিই 'সম্মান', 'বোল্ডনেস' ইত্যাদি নানা নামে শোষণ বজায় রাখতে সহায়তা করছে। 'বাপজানের বায়োস্কোপ' নামে বাংলাদেশে একটা অসাধারণ ফিল্ম বানানো হয়েছে, যেখানে রাজাকার এর ভাগ্নে রাজাকার মামার ইতিহাস গোপন করতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেখানো বায়োস্কোপওয়ালাকে ইসলাম বিরোধী হিসেবে ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রে ধর্ম শুধুমাত্র অজুহাত, আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে সচেতন হতে না দিয়ে আধিপত্য বজায় রাখা। পাকিস্তানিরাও একই অজুহাত দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় ইরান কিংবা সৌদি আরবের কাছে। যেসব তথাকথিত মুক্তমনারা শুধু ধর্মের পিছনে লাগে তাদের কি একটুও মাথায় আসে না যে সহশিক্ষার অন্তর্গত ছেলে সহপাঠীদের চেয়ে মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছেলে শিক্ষার্থীরা কেন অধিক পরিমাণে নারী বিদ্বেষী? একই দেশে কেন কেউ পড়বে আরবি মিডিয়ামে, কেউ বাংলা কিংবা কেউ ইংরেজি মিডিয়ামে? এদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট দেখেই মানুষ ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার অধীনে পড়াশোনা করতে বাধ্য হয়। সকলের জন্য সাম্যের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছাড়া মৌলিক অধিকারের প্রতিটা ক্ষেত্রে সাম্য আনার কল্পনা করা আর চাঁদে সাঈদীর মুখের অস্তিত্ব প্রমাণিত হওয়া একই কথা। সংস্কৃতি কিংবা ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষকে শোষণের আরও কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। ভারতীয় সিরিয়ালগুলোতে শরীর ভর্তি গয়না কিংবা দামী দামী পোশাক পড়ে অভিনেত্রীরা ঘরের ভিতরেও অবস্থান করে, এর থেকে অনেক নারীর মধ্যে ধারণা জন্মায় যে, এটাই বুঝি সংস্কৃতি। শুরু হয়ে যায় ভোগবাদী আচরণ; কে কাকে কত দামী গয়না, কাপড় কিংবা আসবাবপত্র শো অফ করবে মাছি মারা আড্ডার সময় সেই প্রতিযোগিতা চলে। এই সিরিয়ালের অভিনেত্রীরা কি আদৌ উপমহাদেশের প্রকৃত চিত্র ধারণ করে, যেখানে লক্ষ লক্ষ গার্মেন্টস এর নারীরা শখ করে ত্রিশ টাকার রিস্ট ব্যান্ড কেনার আগেও আরেকবার চিন্তা করে গ্রামের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কথা? কুরবানি এলেই দেশের ইলেকট্রনিক্স শোরুমগুলোতে রেফ্রিজারেটর কেনার হিড়িক পড়ে। এই যে লোকে প্রতিযোগিতা করে কুরবানির পশু কেনে, এসব পশু কেনার টাকাগুলো কি বৈধ উপার্জন থেকে আসে? বাংলাদেশের সমাজে বিত্তবৈভবের মালিকগণ একাধিক পশু কোরবানি দেয়ার জনপ্রিয় রীতি চালু করেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও এরূপ একটি শ্রেণি রয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা ইত্যাদির মাধ্যমে তারা অনেক টাকার মালিক হয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে সম্পদ সঞ্চিত করার উপায় নেই বলে তারা বিভিন্ন পূজা-পার্বণে মুক্ত হস্তে অর্থ খরচ করে। তাদের নিজ নিজ এলাকায় তারা রীতিমতো দানবীর, সমাজসেবক ও জনদরদী। কোরবানির পশু ক্রয়ে কিছু বাড়তি অর্থ খরচ তাদের সম্পদ গোপন করার একটি প্রক্রিয়ার অংশ। শিক্ষা অফিসের কেরানি, ভূমি অফিসের কানুনগো, সচিবালয়ের দফতরি, কাস্টমস অফিসের পিওন কিংবা পুলিশের কনস্টেবল থেকে শুরু করে অফিসের কর্ণধার পর্যন্ত একাধিক পশু কোরবানির প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আবার কতিপয় সর্বভূক রয়েছে যারা নিজ অর্থে বা ঘুষের অর্থে নয়, বরং কোরবানির পশুটিই মক্কেলের কাছ থেকে সরাসরি ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করে! কোরবানির পশু ঘুষ হিসেবে পেয়ে তারা সেগুলো ঘটা করে কোরবানি দিয়ে নিজ এলাকার গরিব-মিসকিনদের খাইয়ে নিজেদের জন্য আখেরাতের পথ প্রশস্ত করে। প্রজাতন্ত্রের সকল শ্রেণির সরকারি অফিসে এই শ্রেণির জীব মহা দাপটে জনসেবা করে। বহুল বিতর্কিত হলমার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির হোতা তারুয়া গ্রামের তানভির সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের গাড়ি-বাড়ি-ইজ্জত উপহার দেয়ার পাশাপাশি কোরবানির পশুও উপহার দিতো। সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মন রক্ষা করতে ২০১১ সালে কোরবানির ঈদে গড়ে ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের ৮৫টি গরু কিনে হলমার্ক গ্রুপের মালিক তানভীর। এসব গরুর ৩০টি তানভীরের নিজস্ব কোরবানির জন্য রাখা হয়। বাকী গরুগুলো উপহার হিসেবে পাঠানো হয় তানভীরের অবৈধ কাজে সহাযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন মহলের কাছে। কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা আছে, যারা সরাসরি ঘুষ হিসেবে গরু গ্রহণ করে না। এক্ষেত্রে একজন সরকারি কর্মকর্তা তার কর্মস্থলে কোরবানির মাস খানিক আগে একটি গরু ক্রয় করে। গরুটি সেখানে কেরানি-আর্দালিদের দ্বারা লালিত-পালিত হতে থাকে। এর মাঝে সেই কর্মকর্তা অন্যত্র বদলী হয়ে যায়। কিন্তু গরুটি তার পূর্বের কর্মস্থলে রয়ে যায়। কোরবানির পূর্ব মুহুর্তে সেই গরুটি ঢাকায় আনার প্রয়োজন হলে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে একটি ট্রাকে করে সেই গরুটি কোরবানির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এখানে হয়তো গরুটি নিজের টাকায় কেনা হয়েছিল। কিন্তু একটি ট্রাকের ভাড়া কিংবা সরকারি জ্বালানীর দাম যুক্ত হয়েছিল সেই গরুর দামের সাথে। যদি ঢাকা থেকে দূরবর্তী সেই কর্মস্থলে গরুটি ৪০ হাজার টাকায় কেনা হয়, তাহলে তা ঢাকায় পাঠাতে সরকারি অর্থ ও জনবলসহ তার দাম পড়েছিল ৭০ হাজার টাকা। এভাবে যেসব এলাকায় গরুর দাম কম, বিশেষ করে চরাঞ্চল রয়েছে এমন সব জেলাগুলোর স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে ঢাকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফরমায়েস পেয়ে কম দামে বড় গরু কিনে সরকারি অর্থে তা পরিবহন করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠায়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য নিম্নতম কর্মকর্তাদের সরকারি অর্থের এই শ্রাদ্ধ এক মহান ত্যাগ বৈকি! এক শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা তাদের নিম্নতম কর্মচারিদের দিয়ে কৌশলে বেশি দামের কোরবানির পশু কম দামে ক্রয় করে। কুরবানি উপলক্ষ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কুরবানির পশুকে বিষাক্ত খাদ্য খাইয়ে মোটাতাজা করে বেশি দামে বিক্রি হওয়ার আশায়। কিছু টাকা বেশি লাভের জন্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিষ পশুর শরীরে মেশাতে এদের হাত কাঁপে না।
https://www.prothomalo.com/opinion/column/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A7%81-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8
আবার কুরবানি উপলক্ষে পশু আনা-নেয়ায় নিয়োজিত যানবাহনগুলোতে চাঁদাবাজি শুরু হয়। এসব চাঁদাবাজির কারণে পশুর দাম বাড়তে থাকে এবং অনেক মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়।
অনেক পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীদের বাংলাদেশের বহু আঞ্চলিক শব্দে আরবি, ফার্সি কিংবা উর্দু শব্দের উপস্থিতি নিয়ে তাচ্ছিল্য করতে দেখা যায়। অথচ তাদের দেশের রাষ্ট্রভাষায় মূল সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বর্তমানে কত ভাগ তারা কি সেটা খতিয়ে দেখেছে? তসলিমা নাসরিন একবার এক কলামে শামসুর রহমানের আরবি-ফার্সি ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে সারিতা আহমেদ নামে একজন পাঠ্যবইতে 'আকাশী'কে 'আসমানি' আর 'রামধনু'কে 'রংধনু' করায় বাংলা ভাষাকে মুসলমানি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। 'আসমানি' ফার্সি শব্দ, কিন্তু 'রামধনু' শব্দের রাম হচ্ছে হিন্দুদের দেবতা বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। তাছাড়া 'রংধনু' সংস্কৃতজাত শব্দ; 'রং' শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'রঞ্জ' থেকে। পাকিস্তানী আর এদের সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায় এক্ষেত্রে? আরেকটা শব্দের উপর আলোকপাত করা যাক। 'গুরুচণ্ডালী' একটি বর্ণবিদ্বেষী শব্দ। বর্ণাশ্রম প্রথা অনুযায়ী শুধু ব্রাহ্মণরাই গুরু হতে পারে, আর চণ্ডাল হচ্ছে নিম্নশ্রেণীর হিন্দু সম্প্রদায়। তাদের শাস্ত্র অনুযায়ী মুসলমানদের চণ্ডালেরও অধম ধরা হয়! এজন্যই সংস্কৃতি=ধর্ম=পুঁজিবাদ, অপরিবর্তনীয় সূত্র।
Comments