ইজরায়েল ও মরক্কো

মরক্কোতে প্রাচীনকাল থেকে ইহুদিদের বসবাস ছিল এবং ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণাকালে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের মধ্যে মরক্কোয় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইহুদি বসবাস করতো (৩,৫০,০০০)। জায়নবাদীরা মরক্কোসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিদের ইসরায়েলে অভিবাসনের জন্য উৎসাহিত করছিল। বিশেষত মরক্কোর ইহুদিদের মধ্যকার দরিদ্রতর অংশকে জায়নবাদীরা ইসরায়েলে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছিলো, কারণ এরা ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য সস্তা শ্রমের উৎস হয়ে উঠতে পারতো। ১৯৪৮ সালের ২৩ মে মরক্কোর আলাউয়ি রাজবংশের রাজা পঞ্চম মোহাম্মেদ জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে মরোক্কান ইহুদিদের জায়নবাদী কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান এবং ঐতিহাসিকভাবে মরক্কোর ইহুদিদের রাষ্ট্র সুরক্ষা দিয়ে এসেছে দাবি করে মরোক্কান মুসলিমদের ইহুদিবিরোধী সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। একজন মরোক্কান ইহুদি বিস্ফোরকসহ ইসরায়েলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সীমান্ত অতিক্রম করে আলজেরিয়ায় প্রবেশকালে ধরা পড়লে ১৯৪৮ সালের ৭-৮ জুন ফরাসি নিয়ন্ত্রিত মরক্কোর ওয়েজদা ও জেরেদা শহরে ইহুদিবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়। এই দাঙ্গায় ৪৩ জন ইহুদি ও ১ জন ফরাসি নিহত হয়। ১৯৪৮-১৯৪৯ সালে প্রায় ১৮,০০০ ইহুদি মরক্কো ত্যাগ করে ইসরায়েলে চলে যায়। ১৯৫৬ সালে মরক্কো স্বাধীনতা লাভ করে এবং তখন থেকে আলাউয়ি রাজবংশ মরক্কোর শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে। স্বাধীন মরক্কোতে সরকারিভাবে কোনো ইহুদিবিরোধী নীতি গ্রহণ করা হয়নি। রাজা পঞ্চম মোহাম্মেদ ইহুদি বিদ্বেষী ছিলেন না এবং মরক্কো স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রটির আইনসভায় ৩ জন ইহুদি সদস্য ছিল। ১৯৫৬-১৯৬১ সাল পর্যন্ত মরোক্কান ইহুদিদের দেশত্যাগ নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু বেআইনিভাবে মরোক্কান ইহুদিদের দেশত্যাগ অব্যাহত থাকে। ১৯৬১ সালে মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক চুক্তি হয় এবং চুক্তি অনুযায়ী মরক্কোর সরকার দেশটির ইহুদিদের ইসরায়েলে গমনের অনুমতি প্রদান করে। বিনিময়ে দেশত্যাগকারী প্রত্যেক ইহুদির জন্য ইসরায়েল মরক্কোকে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ প্রদান করতে সম্মত হয়। ১৯৬১ সালে রাজা মোহাম্মেদের মৃত্যু হলে তার শোকানুষ্ঠানে ইহুদিরাও যোগদান করেছিল। পরবর্তী তিন বছরে আরো প্রায় ৮০,০০০ ইহুদি মরক্কো ত্যাগ করে। ১৯৬১ সালে রাজা মোহাম্মেদের মৃত্যুর পর তার ছেলে দ্বিতীয় হাসান মরক্কোর রাজা হন। তার শাসনামলে মরক্কোয় শত শত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিনা বিচারে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়, অনেককে গুম করা হয় এবং মরক্কো পশ্চিম সাহারা দখল করে নেয়। হাসান আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানালেও গোপনে ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মরক্কো ও ইসরায়েল উভয়েই স্নায়ুযুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষাবলম্বন করেছিল এবং উভয়েই কমিউনিজম ও আরব জাতীয়তাবাদের বিরোধী ছিল। ইসরায়েল আরব ও মুসলিম বিশ্ব এবং আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তারের অংশ হিসেবে মরক্কোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী ছিল, অন্যদিকে রাজা হাসান মরক্কোর অভ্যন্তরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও রাজতন্ত্র বিরোধী হুমকি প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ইসরায়েলি সহায়তা লাভের উদ্দেশ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক বজায় রাখতে ইচ্ছুক ছিলেন।

https://www.timesofisrael.com/morocco-tipped-off-israeli-intelligence-helped-israel-win-six-day-war/

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের বিজয়ে মরক্কোর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আরব লীগভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর নেতারা কাসাব্লাঙ্কায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। রাজা হাসান এই সম্মেলনে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশের অনুমতি প্রদান করেছিলেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা 'শিন বেত' এবং 'মোসাদ' এর সদস্যরা এই সম্মেলনে অনুপ্রবেশ করেছিল, আরব নেতারা তাদের চিনে ফেলতে পারেন এই আশঙ্কায় হাসান তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। সম্মেলনটির উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর অভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ। সম্মেলন চলাকালে আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং মিসরীয় রাষ্ট্রপতি গামাল আব্দেল নাসের ও জর্দানীয় রাজা হুসেইনের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। এটিও স্পষ্ট হয় যে, আরব রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধের জন্য মোটেই প্রস্তুত নয়। রাজা হাসান অন্যান্য নেতাদের অগোচরে পুরো সম্মেলনের কথোপকথন রেকর্ড করে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেন। এর ফলে আরবদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ইসরায়েলিরা স্পষ্ট ধারণা লাভ করে এবং সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে, ফলে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলোকে তারা মাত্র ৬ দিনের যুদ্ধে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। মরক্কোয় এই অভিযানকে মোসাদের তৎকালীন পরিচালক মেয়ার আমিত সংস্থাটির ইতিহাসের অন্যতম 'গৌরবময় সাফল্য' হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। ইসরায়েলকে এই গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদানের বিনিময়ে মরক্কোর প্রখ্যাত বামপন্থী নেতা মেহদি বেন বারকাকে খুঁজে বের করে তাকে নির্মূল করার জন্য মরক্কোর সিনিয়র কর্মকর্তারা মোসাদকে অনুরোধ করেন। বেন বারকা ছিলেন Union Nationale des Forces Populaires এর নেতা। ১৯৬২ সালে মরক্কোর রাজা হাসানকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে তিনি জড়িত ছিলেন এবং ১৯৬৩ সালে সীমান্ত নিয়ে মরক্কো ও আলজেরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে বামপন্থী আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার জন্য তিনি মরোক্কান সৈন্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ১৯৬৩ সালে মরোক্কান সরকার তাকে নির্বাসিত করে এবং নানা দেশ ঘুরে ১৯৬৫ সালে তিনি প্যারিসে অবস্থান করছিলেন। দেশের বাইরে থাকলেও মরোক্কান গোয়েন্দা সংস্থা বেন বারকাকে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজা হাসান ইসরায়েলি সহায়তা প্রার্থনা করেন।

https://en.yabiladi.com/articles/details/58726/history-1965-when-mossad-helped.html

১৯৬৫ সালের অক্টোবরে মোসাদ সদস্যরা বেন বারকাকে খুঁজে বের করে এবং ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় তাকে অপহরণ করে। দুই দিন নির্যাতনের পর বেন বারকাকে খুন করা হয়।


১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ চলাকালে মরক্কো আরব রাষ্ট্রগুলোকে কূটনৈতিক সমর্থন প্রদান করে, কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিল। এই যুদ্ধের পর অবশিষ্ট মরোক্কান ইহুদিদের অধিকাংশই মরক্কো ত্যাগ করলেও এদের সিংহভাগ ইসরায়েলে না গিয়ে ইউরোপ কিংবা উত্তর আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোতে চলে যায়। পরবর্তীতে রাজা হাসান দেশত্যাগী ইহুদিদের মরক্কোয় প্রত্যাবর্তনের জন্য আহ্বান জানান, কিন্তু এতে কাজ হয়নি। ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে মরক্কো সক্রিয়ভাবে আরব জোটের পক্ষে অংশগ্রহণ করে। নিষ্ক্রিয় থাকলে মরক্কোর জনসাধারণ অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় এবং অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের চাপের কারণে মরক্কো এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যুদ্ধ চলাকালে মরক্কো মিসরে একটি পদাতিক ব্রিগেড এবং সিরিয়ায় একটি সাঁজোয়া রেজিমেন্ট প্রেরণ করে। মোট ৫,৫০০ জন মরোক্কান সৈন্য ৩০টি ট্যাঙ্ক এবং ৫২টি যুদ্ধবিমান নিয়ে এই যুদ্ধে অংশ নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফরাসি সশস্ত্র বাহিনীর অংশ হিসেবে উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের মাটিতে 'মরোক্কান অভিযাত্রী বাহিনী' হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেয়ার পর এটি ছিল মরোক্কানদের জন্য প্রথম যুদ্ধ। যুদ্ধ চলাকালে মরোক্কান বিমানবাহিনী ইসরায়েলের ওপর বোমাবর্ষণ করেছিল। এই যুদ্ধে একজন কর্নেলসহ বেশ কয়েকজন মরোক্কান সৈন্য নিহত হয় এবং ৬ জন সৈন্য ইসরায়েলিদের হাতে বন্দি হয়। যুদ্ধের পরও মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে গোপন সম্পর্ক বজায় ছিল। ১৯৭৫ সালে মরক্কোর সীমান্তবর্তী স্পেনীয় সাহারা'য় স্বাধীনতাকামী 'পোলিসারিও ফ্রন্ট' গেরিলাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে স্পেন এতদঞ্চল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মরক্কো ও মৌরিতানিয়া অঞ্চলটি দখলের জন্য সৈন্য প্রেরণ করে। পোলিসারিও ফ্রন্ট মরোক্কান ও মৌরিতানীয় দখলদারিত্বের তীব্র বিরোধিতা করে ১৯৭৬ সালে অঞ্চলটিতে 'সাহরাউয়ি আরব গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র' নামে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে এবং মরক্কো ও মৌরিতানিয়ার বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। গেরিলা আক্রমণে প্রায় ২,০০০ মৌরিতানীয় সৈন্য নিহত হওয়ার পর ১৯৭৯ সালে মৌরিতানিয়া অঞ্চলটি থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়, কিন্তু কয়েক হাজার সৈন্য নিহত ও প্রায় ২,৫০০ সৈন্য বন্দি হওয়ার পরও মরক্কো অঞ্চলটি দখল করতে বদ্ধপরিকর থাকে। পশ্চিম সাহারার ৮০% অঞ্চল বর্তমানে মরক্কোর নিয়ন্ত্রণাধীন এবং 'দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহ' নামে পরিচিত; বাকি ২০% পোলিসারিও ফ্রন্টের অধীন এবং 'মুক্তাঞ্চল' নামে পরিচিত। গেরিলা আক্রমণ রোধ করার জন্য মরক্কো অঞ্চলদ্বয়ের মধ্যে বালুর তৈরি ২,৭০০ কি. মি. দীর্ঘ দেয়াল নির্মাণ করেছে, যেটি 'মরোক্কান পশ্চিম সাহারা দেয়াল' নামে পরিচিত এবং ১,২০,০০০ মরোক্কান সৈন্য এটি পাহারা দেয়।

http://removethewall.org/the-wall/construction-of-the-moroccan-walls/

ইসরায়েল এই গেরিলাদের দমনের জন্য মরক্কোকে সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে, রাজকীয় মরোক্কান সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং দেয়ালটি তৈরি করতেও সহায়তা করেছে। মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলাকালেও মরক্কো মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। ১৯৭৬ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইৎঝাক রাবিন গোপনে মরক্কো সফর করেন। এসময় মিসরীয় রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত ইসরায়েল সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং এটি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোশে দায়ান ১৯৭৭ সালে দু'বার মরক্কো সফর করেন। মরোক্কান সরকার সবগুলো সফরের খবর গোপন রাখে, ইসরায়েলও এই ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করে। এভাবে ১৯৭৯ সালে স্বাক্ষরিত মিসর-ইসরায়েল শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে মরক্কো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৮০ এর দশকে রাজা দ্বিতীয় হাসান মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার স্থবিরতা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছিলেন এবং এই প্রক্রিয়াটিকে সচল করার জন্য মরক্কোয় তিনি যে সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন সেটি অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ মরক্কো সফর করেন এবং রাজা হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মরোক্কান সরকার সফরের বিষয়টি জনসাধারণের কাছ থেকে গোপন রাখার চেষ্টা করলেও ইসরায়েলি প্রচারমাধ্যমে তথ্যটি প্রকাশিত হয় এবং এর ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো মরক্কোর ওপর ক্ষিপ্ত হয়। সিরিয়া সাময়িকভাবে মরক্কোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ১৯৯০ এর দশকে জর্দান ও ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা'র সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রেও মরক্কো মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা গ্রহণ করে। ১৯৯৪ সালে পিএলও এবং ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৯৯ সালে রাজা দ্বিতীয় হাসানের মৃত্যুর পর ইসরায়েলি নেতৃবৃন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে শোক প্রকাশ করে। দ্বিতীয় হাসানের মৃত্যুর পর তার ছেলে ষষ্ঠ মোহাম্মেদ মরক্কোর নতুন রাজা হন। তিনি ক্ষমতায় আরোহণের কিছুদিনের মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা আরম্ভ হয় এবং জনরোষ এড়াতে মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে স্থাপিত কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করলেও রাষ্ট্র দু'টির মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকে। রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মেদের সিনিয়র উপদেষ্টা আন্দ্রে আজৌলায় একজন ইহুদি এবং তিনি মরক্কোর রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী। মরক্কোয় বর্তমানে ৩,০০০ ইহুদি বসবাস করে, কিন্তু দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যে এবং রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে তাদের প্রভাব অনেক বেশি। মরক্কো একমাত্র আরব রাষ্ট্র যেটিতে ইহুদি জাদুঘর বিদ্যমান।২০১৪-২০১৭ সালের মধ্যে মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে ১৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের বাণিজ্য সম্পাদিত হয়। ইসরায়েলি পাসপোর্ট নিয়ে মরক্কোয় প্রবেশ করা যায়। ২০১৯ সালে প্রায় ৪৫,০০০ ইসরায়েলি পর্যটক মরক্কো ভ্রমণ করেছে; অন্যদিকে প্রায় ৩,০০০ মরোক্কান পর্যটক ইসরায়েল ভ্রমণ করেছে। মরোক্কান সরকার ইরানকে মরক্কোর আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার দায়ে অভিযুক্ত করেছে এবং ২০১৮ সালের মে মাসে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের যে নীতি গ্রহণ করেছে, সেটি রাবাত ও জেরুজালেম উভয়ে সমর্থন করেছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পোল্যান্ডের ওয়ারশ'তে এবং ২০২০ সালের মার্চে মরক্কোর মারাক্কেশে মধ্যপ্রাচ্যে 'সন্ত্রাসবাদ' (বস্তুত ইরানি কার্যকলাপ) দমন নিয়ে যে বহুপাক্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে মরক্কো ও ইসরায়েল উভয়ে অংশ নিয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে মরক্কো ৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ৩টি ইসরায়েলি গোয়েন্দা ড্রোন ক্রয় করেছে।

https://nationalinterest.org/blog/middle-east-watch/morocco-and-israel-may-be-close-normalizing-relations-143832

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বৌরিতা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

https://www.moroccoworldnews.com/2019/02/266108/morocco-israel-normalization-secret-meeting/

ইসরায়েল প্রস্তাব দিয়েছিলো তারা পশ্চিম সাহারা'র ওপর মরক্কোর দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি আদায় করবে, বিনিময়ে মরক্কো ও ইসরায়েলের মধ্যে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে।

https://www.timesofisrael.com/morocco-said-likely-to-be-one-of-the-next-states-to-normalize-ties-with-israel/



Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]