তথাকথিত কাতিন গণহত্যা

 

https://drive.google.com/file/d/1FNO611PBr-hE57Oo17oBzBt_LXi4GKs_/view?usp=sharing

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে রাশিয়া এবং পোল্যান্ডের সীমানাটি একটি রেখার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছিল যা কার্জন লাইন হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল, ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ লর্ড কার্জন এটি প্রস্তাব করেছিলেন। সীমানা রেখাটি পোলিশদের পছন্দ মতো ছিল না, যারা শীঘ্রই তাদের সীমানা আরও পূর্ব দিকে বৃদ্ধির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল। সোভিয়েতরা পাল্টা আক্রমণ করেছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক কর্মকর্তা নিজেদের রক্ষা করা ছাড়াও স্তালিনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে পুরো পোল্যান্ডকে দখল করতে চেয়েছিল। স্তালিন এই জাতীয় সিদ্ধান্তকে ব্যর্থ প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পোলিশ জাতীয়তাবাদ এখনও শেষ হয়ে হয়নি। পোলিশরা নিজেরাই স্বাধীনতা চায়নি, তাই পোল্যান্ড আক্রমণ এর কোন মানেই হয়না। একারণেই পোলিশরা সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। শেষ পর্যন্ত সোভিয়েতরা পিছু হটে পোল্যান্ড অংশের কার্জন লাইনের পূর্ব দিকে ছেড়ে চলে যায়। বিতর্কিত অঞ্চলগুলো পড়েছিল মূলত পশ্চিম বেলারুশিয়া এবং পশ্চিম ইউক্রেনে, যেখানে পোলিশদের চেয়ে বেশি বাস করতো বেলারুশিয়ান এবং ইউক্রেনীয়ানরা।

https://en.wikipedia.org/wiki/Western_Belorussia

https://en.wikipedia.org/wiki/Western_Ukraine

পুরো ঘটনাটি পোলিশ আর রাশিয়ানদের পরস্পরকে অপছন্দ আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর নাৎসি জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে। ১৭ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন পোল্যান্ডের কার্জন লাইনের পূর্বে অবস্থিত অঞ্চলগুলোকে পুনর্দখল করতে অগ্রসর হয়। এই অঞ্চলগুলি দখলে আসার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন দরিদ্র কৃষকদের মাঝে জমিগুলো বিতরণ করে দেয় এবং ঐ অঞ্চলগুলোতে যে গণতান্ত্রিক সংস্কার নিয়ে আসে তা সেখানকার অধিবাসীদের কাছে জনপ্রিয় হয় ও শোষকদের অসন্তুষ্টির উদ্রেক করে। কার্জন লাইনের পূর্বাঞ্চলগুলো পুনর্দখল করার সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রায় ১০,০০০ পোলিশ অফিসারকে বন্দি করেছিল। এই যুদ্ধবন্দিদের ক্যাম্পে রেখে সোভিয়েত লালফৌজ ঐ অঞ্চলগুলোর রাস্তা নির্মাণসহ আরও কিছু উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করেছিল। এর দু'বছর পর ১৯৪১ সালের ২২ জুন নাৎসি জার্মানি হঠাৎ সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে। লালফৌজ পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং জার্মানরা ইউক্রেন দখল করে নেয়। এত তাড়াহুড়োর মধ্যে পিছু হটার সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরে পোলিশ যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ১ নম্বর ক্যাম্প এর প্রধান মেজর ভেটোশনিকভ প্রমাণ দিয়েছেন যে, তিনি পোলিশ বন্দীদের সরিয়ে নেয়ার জন্য রেলওয়ের গাড়ি সরবরাহ করতে পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের স্মোলেনস্ক সেকশনের ট্রাফিক প্রধানের কাছে আবেদন করেছিলেন। এই অঞ্চলের ট্রাফিক প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ইভানভ নিশ্চিত করেছিলেন যে, এই কাজে ব্যবহারের জন্য কোনও রেলওয়ের গাড়ি অবশিষ্ট নেই। তিনি বলেছিলেন, “আমরা গুসিনো লাইনে গাড়ি পাঠাতে পারিনি, যেখানে বেশিরভাগ পোলিশ বন্দি ছিল, যেহেতু সেই লাইনে ইতিমধ্যে আগুন ছিল”। ফলস্বরূপ অঞ্চল থেকে সোভিয়েতদের পিছু হটার পর পোলিশ বন্দীরা জার্মানদের আওতায় চলে আসে। ১৯৪৩ সালের এপ্রিলে হিটলারের সাঙ্গপাঙ্গরা ঘোষণা দেয় যে, জার্মানরা স্মোলেনস্কের কাছাকাছি কাাতিন জঙ্গলে বেশ কয়েকটি গণকবর পেয়েছে, যেখানে রাশিয়ানরা হত্যা করেছিল এমন হাজার হাজার পোলিশ কর্মকর্তার মৃতদেহ রয়েছে। এই ঘোষণাটি জার্মানদের পরাজিত করার জন্য পোলিশ এবং সোভিয়েতদের যৌথ প্রচেষ্টাকে আরও দুর্বল করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। রুশ-পোলিশ জোট গঠন সর্বদাই ছিল, কারণ লন্ডনে অবস্থিত নির্বাসিত পোলিশ সরকার স্পষ্টতই শোষক শ্রেণীর সরকার ছিল। কিন্ত হিটলার এর হাত থেকে পোল্যান্ডকে বাঁচাতে তারা জার্মানদের বিরোধিতা করতে বাধ্য হয়েছিল।

https://en.wikipedia.org/wiki/Lebensraum

সোভিয়েতরা ইচ্ছে করলে কার্জন লাইনের পূর্বাঞ্চল দখল করে রাখতে পারতো, এমনকি পোল্যান্ডে বুর্জোয়া সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তাদের কোনও সমস্যা ছিল না।

https://en.wikipedia.org/wiki/W%C5%82adys%C5%82aw_Sikorski

কিন্ত সোভিয়েত আর পোলিশদের জোটটি সমস্যায় পড়ে যায়, কারণ লন্ডনে অবস্থান করা জেনারেল সিকোরস্কির নেতৃত্বে নির্বাসনে থাকা পোলিশ সরকার সেই বিতর্কিত অঞ্চলে আসতে রাজি হয়নি। তা সত্ত্বেও ১৯৪১ সালে হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং নির্বাসনে থাকা পোলিশ সরকার কেবল কূটনৈতিক সম্পর্কই প্রতিষ্ঠা করেনি; এই বিষয়ে একমত হয়েছিল যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থায়নে পোলিশ সেনাবাহিনী গঠন করা হবে। এই বাহিনী পরিচালিত হবে নির্বাসিত পোলিশ সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন প্রধানের আদেশে এবং সোভিয়েত সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে। পোলিশ সেনাবাহিনীর প্রধান বানানো হয় উগ্র সোভিয়েত বিরোধী জেনারেল অ্যান্ডার্সকে, যিনি ১৯৩৯ সাল থেকে সোভিয়েতদের হাতে বন্দি ছিলেন।

https://en.wikipedia.org/wiki/W%C5%82adys%C5%82aw_Anders

১৯৪১ সালের ২৫ অক্টোবরের মধ্যে পোলিশ সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৬৩০ জন অফিসারসহ ৪১,০০০। জেনারেল অ্যান্ডার্স অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পোল্যান্ডের সীমান্ত বিরোধের কারণে পূর্বাঞ্চলীয় রণাঙ্গনে সোভিয়েতদের সাথে জার্মানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অস্বীকার করেছিলেন এবং পোলিশ সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য ইরান পাঠানো হয়েছিল।  

https://en.wikipedia.org/wiki/Anglo-Soviet_invasion_of_Iran

নির্বাসনে থাকা পোলিশ সরকারের বৈরিতা সত্ত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়নে পোলিশ বাসিন্দাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সোভিয়েতবিরোধী ছিল না এবং কার্জন লাইনের পূর্বাঞ্চলগুলোতে সোভিয়েতদের দাবি মেনে নিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল ইহুদি। এরাই পোলিশ প্যাট্রিয়টস ইউনিয়ন গঠন করেছিল যা নির্বাসনে থাকা বিকল্প পোলিশ সরকারের মেরুদন্ডস্বরূপ কাজ করেছিল। কাতিন গণহত্যার সাথে সম্পর্কিত নাৎসি অপপ্রচার সোভিয়েতদের সাথে পোলিশদের কোনো প্রকার চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া অসম্ভব করে দেয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল। জেনারেল সিকোরস্কি প্রতিহিংসাবশত নাৎসিদের প্রচারে যোগ দিয়ে চার্চিলের কাছে দাবি করেছিলেন যে তার কাছে এই ব্যাপারে প্রমাণের পাহাড় রয়েছে! জার্মানদের ঘোষণার সাথে সাথেই তিনি কীভাবে তথাকথিত সোভিয়েত নৃশংসতার এই প্রমাণ পেয়েছিলেন তা পরিষ্কার নয়, যদিও এগুলো সিকোরস্কি আর নাৎসিদের মধ্যে গোপন সহযোগিতার কারণে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল। ১৩ এপ্রিল জার্মানরা তাদের অভিযোগ প্রকাশ্যে প্রচার করা শুরু করেছিল। ১৬ এপ্রিল সোভিয়েত সরকার একটি অফিসিয়াল প্রেস রিলিজ দেয়, যেখানে তারা ১৯৪০ সালের বসন্তে স্মোলেনস্ক এলাকায় সোভিয়েতদের দ্বারা গণহত্যা চালানোর মিথ্যাচার অস্বীকার করে।

সেখানে বলা হয়েছিল:

“জার্মানরা বিবৃতিতে পোল্যান্ডের প্রাক্তন যুদ্ধবন্দীদের দুঃখজনক পরিণতি সম্পর্কে কোন সন্দেহই রাখেনি, যারা ১৯৪১ সালে স্মোলেনস্কের পশ্চিমাঞ্চলে নির্মাণ কাজে নিযুক্ত ছিল এবং যারা সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর অনেক সোভিয়েতবাসীর সাথে একইসঙ্গে জার্মান জল্লাদদের হাতে পড়েছিল"।

জার্মানরা তাদের বানোয়াট গল্পটি আরও রঙচঙে বানাতে হত্যাযজ্ঞের দায়িত্বে থাকা সোভিয়েত কর্মকর্তাদের নাম জানার দাবি করে এটিকে সেমিটিক বিরোধী মোড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, অথচ এদের প্রত্যেকেরই নাম ছিল ইহুদিদের।

১৯ এপ্রিল ’প্রাভদা’ পত্রিকা জবাব দিয়েছিল:

“শান্তিপ্রিয় নাগরিক এবং বিশেষত ইহুদীদের উপর গণহত্যার জন্য সকল প্রগতিশীল মানবতার ক্রোধ অনুভব করে জার্মানরা এখন ইহুদিদের বিরুদ্ধেই সরল লোকেদের ক্রোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করছে। এ কারণেই তারা ‘ইহুদি কমিসারদের’ পুরো এক দল আবিষ্কার করেছে, তারা বলেছিল যারা ১০,০০০ পোলিশ অফিসার হত্যায় অংশ নিয়েছিল। এ জাতীয় অভিজ্ঞ জালিয়াতদের ক্ষেত্রে এমন কিছু লোকের নাম উদ্ভাবন করা খুব কঠিন ছিল না যাদের কোন অস্তিত্বই ছিল না- লেভ রাইবাক, আভ্রাম ব্রডনিনস্কি, চেইম ফাইনবার্গ। এ ধরনের কোনও ব্যক্তির ‘ওজিপিইউর স্মোলেনস্ক বিভাগে’ বা এনকেভিডি-র অন্য কোনও বিভাগে অস্তিত্ব নেই...”

https://en.wikipedia.org/wiki/Chronology_of_Soviet_secret_police_agencies

জার্মান মিথ্যাচারকে সমর্থন দেয়ার সিকোরস্কির জেদ নির্বাসনে থাকা লন্ডনের পোলিশ সরকার এবং সোভিয়েত সরকারের মধ্যে সম্পর্কের পুরোপুরি বিচ্ছেদ ঘটায় যেটি সম্পর্কে গোয়েবলস তার ডায়েরিতে মন্তব্য করেছিল:

"এই বিচ্ছেদ জার্মান মিথ্যাচার এবং বিশেষত ব্যক্তিগতভাবে আমার পক্ষে একশ ভাগ জয়ের প্রতিনিধিত্ব করে...আমরা কাতিনের ঘটনাকে একটি গুরুতর রাজনৈতিক প্রশ্নে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছি।”

https://en.wikipedia.org/wiki/Goebbels_Diaries

সেসময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সিকোরস্কিকে তার গোয়ার্তুমির জন্য নিন্দা জানিয়েছিল। ১৯৪৩ সালের ২৮ এপ্রিলের ’টাইমস’ পত্রিকা লিখেছিল:

"তারা আশ্চর্য হবে এবং আফসোস করবে যারা গোয়েবলস এর বিশ্বাসঘাতকতা এবং চতুরতার প্রোপাগান্ডার মেশিনকে বোঝার এত কারণ থাকার পরও নিজেরাই এটির ফাঁদে পড়েছিল। পোলিশরা যুদ্ধের প্রথম শীতে প্রচুর পরিমাণে প্রচারিত একটি ভলিউম তেমন একটা ভুলে যায়নি যা ফটোগ্রাফির মতো পরিস্থিতি প্রমাণের সমস্ত বিবরণ দিয়ে পোল্যান্ডের শান্তিপূর্ণ জার্মান বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে পোলিশ অত্যাচারের অভিযোগসহ বর্ণনা করেছিল।”

জার্মানদের পরিবর্তে সোভিয়েতরা এই গণহত্যা চালিয়েছিল- সিকোরস্কির এই জেদের ভিত্তি হিসেবে যে বিষয়টি কাজ করেছিল তা হচ্ছে কার্জন লাইনের পূর্বাঞ্চল নিয়ে বিরোধ। সিকোরস্কি মূলত পোল্যান্ডের এই অঞ্চলটির উপর দাবির অযুহাতে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদকে শক্তিশালী করার জন্য জার্মান প্রচারণাকে ব্যবহার করেছিল এই সীমান্ত বিবাদের ইস্যুতে সোভিয়েতদের সেখান থেকে সরানোর উদ্দেশ্যে। আজ যদি কেউ বুর্জোয়া উৎসগুলো পড়ে তবে তারা সকলেই দাবি করবে যে কাতিন গণহত্যার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন দায়ী ছিল এবং তারা এমন নিশ্চয়তা ও দৃঢ়তার সাথে এটি করে যে এর বিপরীতে যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে যেকেউ নিজেকে কোন নাৎসি সংশোধনবাদী হিসেবে অনুভব করতে পারে যে কিনা হিটলার কর্তৃক ইহুদীদের হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করার চেষ্টা করছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর এমনকি গর্বাচভও এই মিথ্যাচারের প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিলেন এবং সোভিয়েত আর্কাইভ থেকে এমন সব উপাদান তৈরি করেছিলেন যাতে প্রমাণিত হয় সোভিয়েতরা এই নৃশংসতা করেছিল এবং অবশ্যই স্তালিনের আদেশে তারা তা করেছিল! আমরা সকলেই জানি যে স্তালিনকে নিচু দেখাতে এই বিশ্বের অগণিত গর্বাচভরা আগ্রহী। তাদের লক্ষ্য স্তালিনের সমাজতন্ত্র ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য হলো সমাজতন্ত্রকে তুচ্ছ করে পুঁজিবাদ পুনরুদ্ধার করা এবং সোভিয়েত জনগণের ভোগান্তির বিনিময়ে নিজেদের এবং তাদের দালালদের মাঝে বিলাসবহুল পরজীবী জীবন ফিরিয়ে আনা। তাদের এসব প্রহসন জার্মান নাৎসিদের সাথে মিলে যায় এবং এদের একই স্তবক পত্র থেকে ঘ্যানঘ্যান করা তেমন একটা অবাক হওয়ার মতো বিষয় না। বুর্জোয়া সূত্র নির্দ্বিধায় দাবি করে যে, নৃশংসতার জন্য জার্মানদের দোষারোপ করার পক্ষে সোভিয়েত প্রমাণগুলো পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিল কিংবা এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জনশ্রুতির ভিত্তিতে ছিল। অথচ তারা এক টুকরো প্রমাণেরও উল্লেখ করেনি যা এমনকি গোয়েবলস পর্যন্ত স্বীকার করেছে যে এগুলো তাকে ঝাঁকুনি দিয়েছিল।

১৯৪৩ সালের ৮ ই মে সে তার ডায়েরিতে লিখেছিল:

“দুর্ভাগ্যক্রমে, কাতিনের কবরগুলোতে জার্মান গোলাবারুদ পাওয়া গেছে...ঘটনাটি একটি সর্বোচ্চ গোপনীয় বিষয় হিসাবে থাকা আবশ্যক। এটি যদি শত্রুরা জেনে যেতো তবে কাতিনের পুরো ব্যাপারটা বাদ দিতে হতো।”

১৯৭১ সালে টাইমস পত্রিকায় চিঠি ছাপা হয়েছিল যেখানে বলা হয়েছিল কাতিন গণহত্যা জার্মানদের দ্বারা ঘটেনি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল তারা মেশিনগান ও গ্যাস চেম্বার ব্যবহার করতো, কিন্ত কাতিনের ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের হত্যার ধরন ছিল আলাদা। যেমন- মাথার পিছনে গুলি করে হত্যা।

https://en.wikipedia.org/wiki/Godalming

সারে-র গোডালমিংয়ে বসবাসকারী এক প্রাক্তন জার্মান সৈন্য এই চিঠির জবাবে লিখেছিল:

“একজন জার্মান সৈনিক হিসাবে, আমাদের পক্ষে ন্যায়পরায়ণতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে আমি রুশ অভিযানের সময় অনেক যুদ্ধ ও লড়াইয়ে অংশ নিয়েছি। আমি কাতিন কিংবা আশেপাশের বনেও যাইনি। তবে আমার খুব ভাল মনে আছে যে ১৯৪৩ সালে কাতিনের নিকটে ভয়াবহ গণকবর আবিষ্কারের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে হৈচৈ শুরু হয়, যে অঞ্চলটি তখন লাল ফৌজের দ্বারা হুমকির মুখে ছিল। তিহাসিক রেকর্ডগুলো দেখায় যে জোসেফ গোয়েবেলস অনেক লোককে বোকা বানিয়েছে। সর্বোপরি এটি ছিল তার কাজ এবং খুব কম লোকই এটি সম্পর্কে তার প্রায় পরিপূর্ণ দক্ষতার বিষয়ে বিতর্ক করবে। সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়টি হলো এটি এখনও ত্রিশ বছর পরে হঠাৎ টাইমসের পাতায় প্রমাণ দেখাচ্ছে। অভিজ্ঞতা থেকে লিখে আমি মনে করি না যে যুদ্ধের শেষের দিকে গোয়েবলস কাতিন ইস্যুতে রাশিয়ায় অনেক জার্মান সৈন্যকে বোকা বানাতে পেরেছিল… জার্মান সৈন্যরা মাথার পেছনে গুলির কথা ঠিকই জানতো...আমরা জার্মান সেনারা জানতাম যে পোলিশ অফিসাররা আমাদের নিজেদের লোক ছাড়া অন্য কারও দ্বারা খুন হয়নি।”

তদুপরি জার্মানরা এটি অধিগ্রহণের পরে এই অঞ্চলে পোলিশ বন্দীদের উপস্থিতির সত্যতা প্রমাণ করতে অনেক সাক্ষী এগিয়ে এসেছিল। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মারিয়া আলেকজান্দ্রোভনা সাশনেভা ১৯৪৩ সালের সেপ্টেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক এই অঞ্চলটি জার্মানদের কাছ থেকে মুক্ত করার পরপরই গঠিত একটি বিশেষ কমিশনের কাছে প্রমাণ দিয়েছিলেন যে ১৯৪১ সালের আগস্টে সোভিয়েত লাল ফৌজ ঐ অঞ্চল থেকে প্রত্যাহারের দু'মাস পর তিনি তার বাড়িতে এক পোলিশ যুদ্ধবন্দীকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তার নাম ছিল জোজেফ লক এবং তিনি জার্মানদের দ্বারা পোলিশ বন্দীদের সাথে খারাপ ব্যবহারের কথা বলেছিলেন:

“জার্মানরা পৌঁছানোর পর তারা পোলিশ শিবিরটি দখল করে এবং সেখানে কঠোর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। জার্মানরা পোলিশদের মানুষ হিসাবে বিবেচনা করতো না। তারা তাদের উপর সর্বপ্রকার নিপীড়ন ও জুলুম করেছিল। কোন কোন সময় তো পোলিশদের উপর বিনা কারণে গুলি চালানো হতো। সে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল...”

অন্যান্য বেশ কয়েকজন সাক্ষী প্রমাণ দিয়েছিলেন যে তারা ১৯৪১ সালের আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে পোলিশদের রাস্তাগুলোতে কাজ করতে দেখেছিলেন। তদুপরি সাক্ষীরা ১৯৪১ সালের শরৎকালে পোলিশ বন্দীদের জার্মানরা সারি বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে এমনটা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। স্থানীয় কৃষক দানিলেঙ্কো ছিলেন এই সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে অন্যতম।

“পালিয়ে যাওয়া পোলিশ যুদ্ধবন্দীদের ধরতে আমাদের এখানে বিশেষভাবে ধরপাকড় শুরু হয়েছিল। কিছু অনুসন্ধান আমার বাড়িতে ২ কিংবা ৩ বার হয়েছিল। এই জাতীয় এক অনুসন্ধানের পর আমি গ্রাম প্রধানকে জিজ্ঞাসা করলাম তারা আমাদের গ্রামে কাকে খুঁজছিল। [তিনি] বলেছিলেন যে জার্মান কমান্ডারের কাছ থেকে একটি আদেশ পেয়েছেন যা অনুসারে বাছবিচার ছাড়াই সমস্ত বাড়িতে তল্লাশী করা হবে, যেহেতু শিবির থেকে পালানো পোলিশ যুদ্ধবন্দিরা আমাদের গ্রামে লুকিয়ে ছিল।”

স্পষ্টতই জার্মানরা স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে পোলিশদের গুলি চালায়নি, কিন্ত স্থানীয় লোকজনের তরফ থেকে যা শোনা গেছে পরবর্তীতে সেগুলোর চেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ আর হতে পারেনা যে সেখানে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে। আরেকজন সাক্ষী আলেক্সিয়েভা যিনি তার গ্রাম প্রধান কর্তৃক কাতিন বনের ’কোজি গোরি’ নামে পরিচিত একটি অংশের এক গ্রামের বাড়িতে জার্মান সৈন্যদের সেবা দেয়ার জন্য নির্দেশ পেয়েছিলেন, যেটি অভ্যন্তরীণ ব্যাপার সম্পর্কিত পিপল’স কমিসারিয়েট এর স্মোলেনস্ক প্রশাসনের বিশ্রামাগার ছিল। এই বাড়িটি যেখানে গণকবরগুলো পাওয়া গিয়েছিল সেখান থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে ছিল।

আলেক্সিয়েভা বলেছিলেন:

“১৯৪১ সালের আগস্টের শেষের দিকে এবং সেপ্টেম্বরের বেশিরভাগ সময় বেশ কয়েকটি ট্রাক প্রতিদিন কোজি গোরির দেশের বাড়িটিতে আসতো। প্রথমদিকে আমি এতে মনোযোগ দেইনি, কিন্ত পরে আমি লক্ষ্য করেছি যে এই ট্রাকগুলো যখনই গ্রামের বাড়ির সামনে পৌঁছাতো এগুলো আধ ঘন্টা এবং কখনও কখনও পুরো এক ঘন্টা ধরে গ্রাম্য রাস্তার কোন এক স্থানে থামতো যা গ্রামের বাড়িটিকে প্রধান সড়কের সাথে সংযুক্ত করেছিল। আমি এই উপসংহারটি টেনেছিলাম, কারণ এই ট্রাকগুলো গ্রামের বাড়ির সামনে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর সেগুলোর আওয়াজ বন্ধ হয়ে যেতো। শব্দ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই একবার করে গুলির আওয়াজ শোনা যেতো। গুলির আওয়াজগুলো খুব কম সময়ের ব্যবধানে একটি অপরটিকে অনুসরণ করতো, তবে বিরতি দিয়েও চলতো। তারপর গুলি চালানো বন্ধ হতো আর ট্রাকগুলো ঠিক গ্রামের বাড়িটার দিকে চলে যেতো। জার্মান সৈন্যরা আর এনসিও-রা ট্রাক থেকে বেরিয়ে আসতো। শোরগোল করে তারা গোসলখানায় গোসল করতে যেতো, যেখানে তারা মাতলামিতে মেতে উঠতো। যেদিন ট্রাকগুলো আসতো কিছু জার্মান সামরিক ইউনিট থেকে আরও সৈন্য গ্রামের বাড়িটিতে পৌঁছাতো। তাদের জন্য বিশেষ বিছানা রাখা হয়েছিল। ট্রাকগুলো গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর অল্প আগেই সশস্ত্র সৈন্যরা স্বশরীরে বনে চলে যেতো যেখানে ট্রাকগুলো থামতো, কারণ আধ ঘন্টা পরেই তারা এই ট্রাকগুলোতে ফিরে আসতো ঐ সৈন্যদের সাথে যারা স্থায়ীভাবে গ্রামের বাড়িটিতে বসবাস করতো। বেশ কয়েকবার আমি দু’জন ল্যান্স কর্পোরালের পোশাকের উপর তাজা রক্তের দাগ লক্ষ্য করেছিলাম। এই সমস্ত কিছু থেকে আমি অনুমান করেছিলাম যে জার্মানরা ট্রাকে করে লোকদের গ্রামের বাড়িটিতে নিয়ে এসে গুলি করতো।”

আলেক্সিয়েভা আরও আবিষ্কার করেছিলেন যে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিরা ছিলেন পোলিশ বন্দী।

“একবার আমি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা দেরিতে গ্রামের বাড়িটিতে ছিলাম…যে কাজটির জন্য আমাকে সেখানে থাকতে হয়েছিল সেটা শেষ করার আগেই একজন সৈনিক হঠাৎ ঢুকে আমাকে বলেছিল যে আমি যেতে পারি…সে আমার সাথে মহাসড়ক পর্যন্ত এসেছিল। রাস্তার শাখাগুলো যেখান থেকে গ্রামের বাড়ির দিকে যায় সেখান থেকে ১৫০ বা ২০০ মিটার দূরে হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে আমি দেখলাম প্রায় ৩০ জন পোলিশ যুদ্ধবন্দিদের একটি দল শক্তিশালী জার্মান সৈন্যদের অধীনে মহাসড়ক বরাবর যাত্রা করছে...আমি রাস্তার পাশে কাছাকাছি থামলাম তাদের কোথায় নেয়া হচ্ছে তা দেখতে এবং আমি দেখলাম যে তারা কোজি গোরীতে আমাদের গ্রামের বাড়িটির দিকে মোড় নিয়েছে। যেসময় থেকে আমি গ্রামের বাড়িটিতে যা চলছে তা খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করেছিলাম, তখন থেকেই আমি আগ্রহী হয়ে উঠি। আমি মহাসড়ক ধরে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলাম, রাস্তার পাশের ঝোপের মধ্যে লুকিয়েছিলাম এবং অপেক্ষা করছিলাম। প্রায় ২০ বা ৩০ মিনিটের মধ্যে আমি সেই পরিচিত একবার করে গুলির আওয়াজ শুনেছিলাম।”

গ্রামের বাড়িটির অন্য দুই গৃহকর্মী মিখাইলোভা এবং কোনাখোভস্কায়া পরবর্তীতে আলেক্সিয়েভার উপরের বক্তব্যের সমর্থনে প্রমাণ দিয়েছিলেন। এলাকার অন্যান্য বাসিন্দারাও একই রকম প্রমাণ দিয়েছিলেন।

স্মোলেনস্ক অবজারভেটরির পরিচালক বাসিলিভস্কিকে নাৎসিদের সহযোগী মেনশাগিনের কাছে ডেপুটি বুরগোমাইস্টার হিসেবে পাঠানো হয়।

https://en.wikipedia.org/wiki/Burgomaster

বাসিলিভস্কি জার্মানদের জিম্মা থেকে জিগলিনস্কি নামের একজন শিক্ষককে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন এবং মেনশাগিনকে এই অঞ্চলের জার্মান কমান্ডার ভন শয়েটজের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে রাজি করেছিলেন। মেনশাগিন তা রেছিলেন, কিন্ত এটাও জানিয়েছিলেন যে এই মুক্তি নিশ্চিত করা অসম্ভব। কারণ কঠোর শাসন ব্যবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে বার্লিন থেকে নির্দেশনা আসতো।

বাসিলিভস্কি পরবর্তীতে মেনশাগিনের সাথে তার কথোপকথনের বর্ণনা দিয়েছিলেন:

“আমি অনিচ্ছাকৃতভাবে জবাব দিয়েছিলাম ’শিবিরে উপস্থিত শাসন ব্যবস্থার চেয়ে কোন কিছু কি আরও কঠোর হতে পারে?’ মেনশাগিন আমার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার কানের দিকে ঝুঁকে নিচু গলায় উত্তর দিয়েছিলেন: ’হ্যাঁ, থাকতে পারে! রুশদের অন্তত মরে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া যেতে পারে, কিন্ত পোলিশ যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে আদেশগুলো বলে যে তাদের স্রেফ নির্মূল করতে হবে।”

স্বাধীনতার পর মেনশাগিনের নোটবইটি তার নিজের হাতের লেখাসহ পাওয়া গিয়েছিল, যা অভিজ্ঞ গ্রাফোলজিস্টগণ কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে।

https://en.wikipedia.org/wiki/Graphology

ঐ নোটবইয়ের ১০ নাম্বার পৃষ্ঠায়, ১৯৪১ সালের ১৫ আগস্টের তারিখসহ লেখা ছিল:

“সমস্ত পলাতক যুদ্ধবন্দীদের আটক করে কমান্ড্যান্টের অফিসে পৌঁছে দিতে হবে।”

এই একটা লাইন থেকেই প্রমাণ হয়ে যায় যে পোলিশ বন্দীরা তখনও বেঁচে ছিল।

১৫ পৃষ্ঠায়, যাতে কোনও তারিখ উল্লেখ করা হয়নি, সেখানে লেখা ছিল:

"কোজি গোরিতে (উমনোভের জন্য) পোলিশ যুদ্ধবন্দীদের গুলি করার বিষয়ে জনগণের মধ্যে কোনও গুঞ্জন রয়েছে কি না?"

উল্লেখ্য, উমনোভ ছিলেন সোভিয়েত রাশিয়ার পুলিশ প্রধান। বেশিরভাগ সাক্ষী পরবর্তীতে প্রমাণ দিয়েছেন যে রুশরা যে পোলিশদের উপর গুলি চালিয়েছে সেই বিষয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ১৯৪২-৪৩ সালে জার্মানরা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল।

কোজি গোরির নিকটতম গ্রামের বাসিন্দা পারফেম গ্যাভরিলোভিচ কিসেলেভ সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে ১৯৪২ সালের শরৎকালে তাকে গেস্টাপোতে ডেকে আনা হয়েছিল, যেখানে এক জার্মান অফিসার তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন:

“অফিসারটি বলেছিল যে ১৯৪০ সালে গেস্টাপোর নিষ্পত্তি সম্পর্কিত তথ্য অনুসারে, কাতিন বনের কোজি গোরি অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ বিষয়ক পিপল’স কমিসারিয়েটের স্টাফ মেম্বাররা পোলিশ কর্মকর্তাদের গুলি করে এবং তিনি আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন যে আমি এই সম্পর্কিত কি সাক্ষ্য দিতে পারবো। আমি জবাব দিয়েছিলাম যে আমি কোজি গোরীতে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম বিষয়ক পিপল’স কমিসারিয়েট কর্তৃক লোকেদের গুলি করার কথা কখনও শুনিনি, আর যে কোনওভাবেই এটা অসম্ভব বলে আমি অফিসারকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, যেহেতু কোজি গোরী একেবারে উন্মুক্ত এবং প্রায়শই এই জায়গায় লোকসমাগম হয়, আর যদি গুলি চালানো হতো তাহলে সেখানকার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর সমস্ত জনগণ জানতে পারতো। দোভাষী আমার কথা শোনেননি, কিন্তু ডেস্ক থেকে হাতে লেখা একটি ডকুমেন্ট নিয়ে সেটা আমাকে পড়ে শোনায়। এতে বলা হয়েছিল যে আমি, কিসেলেভ, কোজি গোরি এলাকার এক গ্রামের বাসিন্দা, ১৯৪০ সালে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম বিষয়ক পিপল’স কমিসারিয়েটের স্টাফ মেম্বারদের দ্বারা পোলিশ অফিসারদের ব্যক্তিগতভাবে গুলি করতে দেখেছি। ডকুমেন্টটি পড়ে দোভাষী আমাকে স্বাক্ষর করতে বলেছিল। আমি তা করতে অস্বীকার করলাম...অবশেষে তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন ‘হয় তুমি এটা এখনই স্বাক্ষর করবে নতুবা আমরা তোমাকে ধ্বংস করে দেবো। তোমার রাস্তা বেছে নাও।' এই হুমকিতে ভীত হয়ে আমি ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করেছিলাম এবং ভেবেছিলাম যে বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে গেছে।”

কিন্ত বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যায়নি, কারণ জার্মানরা চেয়েছিল সোভিয়েত নৃশংসতার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য এই অঞ্চলে আসা জার্মানদের দ্বারা আমন্ত্রিত প্রতিনিধি দলগুলোকে কিসেলেভ যা দেখেছে (!) সেগুলোর সাক্ষ্য দেবে।

১৯৪৩ সালের এপ্রিল মাসে জার্মান কর্তৃপক্ষ সারা বিশ্বের সামনে গণকবরের অস্তিত্বের ঘোষণা দিয়েছিল

কিসেলেভ বলেন:

গেস্টাপো দোভাষী আমার বাড়িতে এসে কোজি গোরী এলাকার বনে আমাকে নিয়ে গেলো। যখন আমরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেলাম এবং দু’জনে একা হলাম, দোভাষী আমাকে হুঁশিয়ার করেছিল যে আমি যেন অবশ্যই গেস্টাপোর কাছে যে ডকুমেন্টে লিখে স্বাক্ষর করেছিলাম ঠিক তেমনভাবে বনে উপস্থিত লোকদের বলি। আমি বনে এসে খোলা কবর এবং অপরিচিত একদল লোক দেখি। দোভাষী আমাকে বলেছিল যে এরা পোলিশ প্রতিনিধি যারা কবরগুলো পরিদর্শন করতে এসেছিল। আমরা যখন কবরের কাছে পৌঁছালাম প্রতিনিধিরা পোলিশদের গুলি করার ব্যাপারে রাশিয়ান ভাষায় আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, কিন্তু গেস্টাপোতে তলব করার পরে এক মাসেরও বেশি সময় কেটে গেছে বিধায় আমি যে ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করেছি সেখানে থাকা সবই ভুলে গিয়েছিলাম, জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলেছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত বলেছিলাম যে আমি পোলিশ অফিসারদের গুলি করার ব্যাপারে কিছুই জানিনা। জার্মান অফিসার খুব রেগে গেলেন। দোভাষী আমাকে ‘প্রতিনিধিদল’ থেকে বাজেভাবে দূরে টেনে নিয়ে গিয়ে তাড়িয়ে দিলো। পরের দিন সকালে গেস্টাপো অফিসারসহ একটি গাড়ি আমার বাসায় আসলো। তিনি আমাকে আঙ্গিনায় খুঁজে পেয়েছিলেন, আমাকে বলেছিলেন যে আমি গ্রেপ্তার হয়েছি, আমাকে গাড়িতে তুলে স্মোলেনস্ক কারাগারে নিয়ে গেলেন। গ্রেপ্তারের পর আমাকে অনেকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, কিন্ত তারা জিজ্ঞাসাবাদ করার চেয়ে আমাকে মারধর বেশি করেছে। প্রথমবার তারা আমাকে ডেকে এনে প্রচন্ড মারধর করে এবং আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে এই অভিযোগে যে, আমি তাদের নিচু করে দিয়েছি এবং আমাকে আবার সেলে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তী তলবগুলোতে তারা আমাকে বলেছিল যে আমি যেন অবশ্যই প্রকাশ্যে জানাই যে বলশেভিকরা যে পোলিশ অফিসারদের গুলি চালিয়েছে আমি সেটার সাক্ষী এবং গেস্টাপো সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি এই কাজটি সরল বিশ্বাসে করে যাবো, নাহলে আমি জেল থেকে মুক্তি পাবো না। আমি অফিসারকে বলেছিলাম যে লোকদের মুখের উপর মিথ্যা বলার চেয়ে আমি কারাগারে বসে থাকবো। এরপরে আমাকে বাজেভাবে মারধর করা হয়েছিল। মারধরসহ এ জাতীয় বেশ কয়েকটি জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছিল এবং ফলস্বরূপ আমি আমার সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম, আমার শ্রবণশক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিল আর আমি আমার ডান বাহুটি নাড়াতে পারছিলাম না। আমার গ্রেফতারের প্রায় এক মাস পর এক জার্মান অফিসার আমাকে ডেকে বললেন ‘তুমি নিজের জেদের পরিণতি দেখো, কিসেলেভ। আমরা তোমাকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সকালে আমরা তোমাকে কাতিন বনে নিয়ে যাবো এবং তোমাকে ফাঁসি দেবো।' আমি অফিসারকে এটি না করতে বলেছিলাম এবং তাদের কাছে মিনতি করতে শুরু করি যে আমি গুলি করার 'প্রত্যক্ষদর্শী' অংশটার জন্য উপযুক্ত নই, কারণ আমি জানি না কিভাবে মিথ্যা বলতে হয় এবং একারণে আমি আবার সবকিছু গুলিয়ে ফেলবো। অফিসার জেদ করতে থাকে। কয়েক মিনিট পর সৈন্যরা রুমে এসে আমাকে রাবার ক্লাব দিয়ে মারতে শুরু করে। মারধর ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পেরে আমি বলশেভিকদের দ্বারা পোলিশদের গুলি করার বিষয়ে একটা মিথ্যা কাহিনী প্রকাশ্যে প্রকাশ করতে রাজি হয়েছিলাম। এরপর আমাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল এই শর্তে যে জার্মানদের প্রথম দাবিতে আমি কাতিন বনে ‘প্রতিনিধিদের’ সামনে কথা বলবো…প্রতিবারে আমাকে বনের কবরগুলোতে নিয়ে যাওয়ার আগে দোভাষী আমার বাড়িতে আসতো, আমাকে উঠোনে ডাকতো, কেউ যেন শুনতে না পায় তা নিশ্চিত করার জন্য আমাকে একপাশে নিয়ে যেতো এবং আধ ঘন্টা ধরে আমাকে তৈরি করতো ১৯৪০ সালে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম বিষয়ক পিপল’স কমিসারিয়েট কর্তৃক পোলিশ অফিসারদের কথিত গুলি করার বিষয়ে আমার যা বলতে হবে তা হৃদয় দিয়ে মুখস্থ করাতে। আমার মনে আছে যে দোভাষী আমাকে এরকম কিছু বলেছিল: ‘আমি কোজি গোরী অঞ্চলের একটি কটেজে থাকি যা অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম বিষয়ক পিপল’স কমিসারিয়েটের গ্রামের বাড়িটি থেকে খুব দূরে নয়। ১৯৪০ এর বসন্তে আমি দেখলাম বিভিন্ন রাতে পোলিশদের বনে নিয়ে গিয়ে সেখানে গুলি করা হয়’ এবং তখন এটি বাধ্যতামূলক ছিল যে আমি যেন আক্ষরিকভাবে অবশ্যই বলি এটি অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম বিষয়ক পিপল’স কমিসারিয়েটের কাজ ছিল। দোভাষী আমাকে যা বলেছিল তা মুখস্থ করার পর সে আমাকে বনের খোলা কবরগুলোতে নিয়ে যায় এবং সেখানে উপস্থিত 'প্রতিনিধিদের' উপস্থিতিতে আমাকে এই সমস্ত কিছু পুনরাবৃত্তি করতে বাধ্য করে। আমার বক্তব্য কঠোরভাবে তদারকি ও গেস্টাপো দোভাষী দ্বারা পরিচালিত ছিল। একবার যখন আমি কিছু প্রতিনিধিদলের সামনে কথা বলেছিলাম তখন আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: 'বলশেভিকরা গুলি চালানোর আগে তুমি কি এই পোলিশদের ব্যক্তিগতভাবে দেখেছিলে?' আমি এ জাতীয় একটা প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না এবং বাস্তব যা ছিল তাই উত্তর দিয়েছিলামযেমন- আমি যুদ্ধের আগে পোলিশ যুদ্ধবন্দীদের দেখেছি, তারা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। তারপর দোভাষী আমাকে বাজেভাবে একপাশে টেনে এনে বাড়িতে নিয়ে যায়। দয়া করে আমাকে বিশ্বাস করুন। আমি এগুলো যখনই বলি সেসময় আমি বিবেকের দংশন অনুভব করি, কারণ আমি জানতাম যে বাস্তবে পোলিশ অফিসারদের ১৯৪১ সালে জার্মানরা গুলি করে হত্যা করেছিল। আমার আর কোনও উপায় ছিল না, কারণ আমাকে প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার এবং বারবার নির্যাতনের হুমকি দেয়া হতো।”

অসংখ্য লোক কিসেলেভের সাক্ষ্যটিকে সমর্থন করেছিল এবং পরবর্তীতে একটি মেডিকেল পরীক্ষায় জার্মানদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়ে যায়।

https://en.wikipedia.org/wiki/Gnezdovo

মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য স্থানীয় রেলস্টেশনে (জেনজডোভো) নিযুক্ত ইভানভের উপরও চাপ দেয়া হয়েছিল:

“অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন আমি জানি কিনা যে ১৯৪০ সালের বসন্তে বন্দী পোলিশ অফিসারদের বিশাল দলগুলো বেশ কয়েকটি ট্রেনে জেনজডোভো স্টেশনে এসেছিল। আমি বলেছিলাম যে আমি এই সম্পর্কে জানতাম। অফিসারটি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আমি জানি কিনা যে ১৯৪০ সালের একই বসন্তে পোলিশ অফিসারদের আগমনের কিছু সময় পরে বলশেভিকরা তাদের সবাইকে কাতিন বনে গুলি করেছিল। আমি জবাব দিয়েছিলাম যে আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানি না এবং এটি এমনটা হতেও পারে না, যেহেতু জার্মানরা ১৯৪০-৪১ সালের মধ্যে স্মোলেনস্ক দখল পর্যন্ত আমি ১৯৪০ সালের বসন্তে আগত বন্দী পোলিশ কর্মকর্তাদের জেনজডোভো স্টেশনে দেখতে পেয়েছি এবং তারা রাস্তা নির্মাণ কাজে নিযুক্ত ছিল। অফিসারটা আমাকে বলেছিলেন যে যদি কোনও জার্মান অফিসার বলে যে বলশেভিকরা পোলিশদের গুলি করেছে, তার অর্থ এই যে ঐখানে একটা কিন্ত আছে। ‘সুতরাং’, অফিসার আরও বলেছিলেন, ‘তোমার কোনও কিছুরই ভয় পাওয়ার দরকার নেই এবং তুমি পরিষ্কার বিবেক নিয়ে একটি প্রোটোকলে স্বাক্ষর করতে পারো যেখানে বলা হবে বলশেভিকরা বন্দী পোলিশ অফিসারদের গুলি করেছিল এবং তুমি এটি প্রত্যক্ষ করেছো। আমি জবাব দিয়েছিলাম যে আমি ইতিমধ্যেই একজন বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আমি ৬১ বছর বয়সী এবং আমার বৃদ্ধ বয়সে একটা পাপ করতে চাই না। আমি কেবল সাক্ষ্য দিতে পারি যে ১৯৪০ সালের বসন্তে বন্দি পোলিশরা সত্যিই জেনজডোভো স্টেশনে এসেছিল। জার্মান কর্মকর্তাটি আমাকে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য প্ররোচিত করতে শুরু করলেন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে আমি যদি রাজি হই তবে সে আমাকে রেলওয়ে ক্রসিংয়ের চৌকিদার থেকে জেনজডোভো স্টেশনের স্টেশনমাস্টারের পদোন্নতি দিবে, যা আমি সোভিয়েত সরকারের অধীনে করতাম এবং আমার প্রয়োজনীয় সবকিছুই দেয়া হবে। দোভাষী জোর দিয়েছিল যে কাতিন বনের নিকটতম স্টেশন, জেনজডোভো স্টেশনের প্রাক্তন রেল কর্মকর্তা হিসাবে আমার সাক্ষ্যদান জার্মান কমান্ডের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং আমি যদি এই ধরনের সাক্ষ্য দিই তবে আমি তাতে আফসোস করবো না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি একটি অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছি এবং একটি দুঃখজনক পরিণতি আমার জন্য অপেক্ষা করেছিল। তবে আমি আবারও এই জার্মান অফিসারের কাছে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করেছিলাম। তিনি আমার সাথে চিৎকার করতে লাগলেন, আমাকে মারধর ও গুলি চালানোর হুমকি দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে আমার পক্ষে কোনটা ভালো হবে তা আমি বুঝতে পারছি না। যাইহোক, আমি আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলাম। দোভাষী তখন একটি পৃষ্ঠায় জার্মান ভাষায় একটি সংক্ষিপ্ত প্রোটোকল তৈরি করে এবং আমাকে এর বিষয়বস্তুগুলোর একটি অনুবাদ দেয় স্বেচ্ছায়। এই প্রোটোকলটি রেকর্ড করা হয়েছিল, যেমনটা দোভাষী আমাকে বলেছিল, কেবল জেনজডোভো স্টেশনে পোলিশ যুদ্ধ বন্দীদের আগমনের সত্যতাস্বরূপ। যখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে আমার সাক্ষ্য কেবল জার্মান ভাষায় নয়, রাশিয়ান ভাষায়ও লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে, অবশেষে অফিসারটা রাগের সাথে এক পাশে গেলেন, আমাকে একটি রাবার ক্লাব দিয়ে মারধর করলেন এবং আমাকে আঙিনা থেকে তাড়িয়ে দিলেন…“

সাভাতিয়েভ অন্যতম ব্যক্তি ছিলেন যাকে জার্মানরা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল। তিনি সোভিয়েত তদন্ত কমিশনকে বলেছেন:

“গেস্টাপোতে আমি সাক্ষ্য দিয়েছিলাম যে ১৯৪০ সালের বসন্তে পোলিশ যুদ্ধবন্দিরা বেশ কয়েকটি ট্রেনে জেনজডোভো স্টেশনে এসে পৌঁছেছিল এবং ট্রাকে করে আরও এগিয়ে গিয়েছিল, আর তারা কোথায় গেছে তা আমার জানা ছিল না। আমি আরও যোগ করেছিলাম যে পরে আমার বার বার মস্কো-মিনস্ক হাইওয়েতে এই পোলিশদের সাথে দেখা হয়েছে, যেখানে তারা ছোট ছোট দলে মেরামতের কাজ করছিল। অফিসারটি আমাকে বলেছিলেন যে আমি সব গুলিয়ে ফেলছি, কারণ হাইওয়েতে পোলিশদের সাথে আমার দেখা হওয়া সম্ভব না, যেহেতু বলশেভিকরা তাদের গুলি করে হত্যা করেছিল এবং দাবি করেছিল যে আমি এটাই যেন সাক্ষ্য দিই। আমি প্রত্যাখান করেছিলাম। আমাকে দীর্ঘসময় হুমকি ও তোষামোদ করার পর অফিসারটি জার্মান ভাষায় কোন বিষয়ে দোভাষীর সাথে পরামর্শ করেছিলেন এবং তারপর দোভাষী একটি সংক্ষিপ্ত প্রোটোকল লিখে আমাকে স্বাক্ষর করার জন্য দিয়েছিল। সে ব্যাখ্যা করেছিল যে এটি আমার সাক্ষ্যের একটি রেকর্ড। আমি দোভাষীকে আমাকে নিজে নিজে প্রোটোকলটি পড়তে দিতে বলি, কিন্ত সে আমাকে গালিগালাজ করে বাধা দিয়েছিল, আমাকে তৎক্ষণাৎ স্বাক্ষর করতে এবং বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছিল। আমি এক মিনিট ইতস্তত করলাম। দোভাষী দেয়ালে ঝুলন্ত একটি রাবার ক্লাব পাকড়াও করলো এবং আমাকে আঘাত করতে লাগলো। এরপর আমি আমার দিকে ঠেলে দেয়া প্রোটোকলটি সই করেছিলাম। দোভাষী আমাকে বাইরে যেতে ও বাড়িতে যেতে বলে এবং কারও সাথে কথা বলতে মানা করে; নতুবা আমাকে গুলি করা হবে…”

অন্যরাও একই রকম সাক্ষ্য দিয়েছিল। এমন আরও অনেক প্রমাণ আছে যেগুলো দেখায় যে জার্মানরা কীভাবে ভুক্তভোগীদের কবরকে তৈরি করে এটা প্রমাণের চেষ্টা করেছিল যে ১৯৪১ সালের শরৎকালে নয়, ১৯৪০ এর বসন্তে পোলিশরা প্রথম এই অঞ্চলে আসার পরপরই এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল।

আলেকজান্দ্রা মিখাইলোভনা একটি জার্মান সামরিক ইউনিটের রান্নাঘরে জার্মানদের এই অঞ্চল দখলের সময় কাজ করেছিলেন। ১৯৪৩ সালের মার্চ মাসে তিনি এক রুশ যুদ্ধবন্দিকে তার চালার নিচে লুকিয়ে থাকতে দেখেন:

“তার সাথে হওয়া কথোপকথন থেকে আমি জানতে পারি তার নাম নিকোলাই ইয়েগোরভ, তিনি লেনিনগ্রাদের বাসিন্দা। ১৯৪১ এর শেষ থেকে তিনি স্মোলেনস্ক শহরে যুদ্ধবন্দীদের জন্য ১২৬ নং জার্মান শিবিরে ছিলেন। ১৯৪৩ সালের মার্চের শুরুতে তাকে শিবির থেকে কয়েকশ যুদ্ধ বন্দীদের সারির সাথে কাতিন বনে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে ইয়েগোরভসহ তাদের পোলিশ কর্মকর্তাদের ইউনিফর্ম সজ্জিত মৃতদেহগুলোর কবর খুঁড়তে, এই মৃতদেহগুলোকে কবর থেকে টেনে তুলতে এবং তাদের পকেটের ডকুমেন্ট, চিঠি, ছবি এবং অন্যান্য সমস্ত নিবন্ধ বের করতে বাধ্য করা হয়। জার্মানরা কঠোর আদেশ দিয়েছিল যে লাশগুলোর পকেটে যেন কিছুই না থাকে। দু'জন যুদ্ধবন্দীকে গুলি করা হয়েছিল, কারণ তারা কিছু লাশ অনুসন্ধান করার পর একজন জার্মান কর্মকর্তা এই মৃতদেহগুলোতে কয়েকটি কাগজপত্র আবিষ্কার করেছিলেন। লাশগুলোর পোশাকের উপর থেকে প্রাপ্ত আর্টিকেল, ডকুমেন্ট এবং চিঠিগুলো জার্মান অফিসাররা পরীক্ষা করেছিলেন, তারপর তারা বন্দীদের কাগজের কিছু অংশ মৃতদেহগুলোর পকেটে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেন এবং অবশিষ্ট বিক্ষিপ্ত আর্টিকেল এবং ডকুমেন্ট থেকে একটা স্তুপ তারা বাছাই করেছিল এবং পরে পুড়িয়ে ফেলেছিল। এগুলো ছাড়াও জার্মানরা নিজেদের সাথে নিয়ে আসা কেস বা স্যুটকেসগুলো (আমি ঠিকমতো মনে করতে পারছি না) থেকে কিছু কাগজপত্র পোলিশ অফিসারদের পকেটে রেখে দিতে কয়েদিদের বাধ্য করেছিল। সমস্ত যুদ্ধবন্দিরা খোলা আকাশের নীচে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কাতিন বনে থাকতো এবং অত্যন্ত কড়া নজরদারীতে ছিল...১৯৪৩ সালের এপ্রিলের শুরুতে জার্মানদের দ্বারা পরিকল্পিত সমস্ত কাজ আপাতদৃষ্টিতে শেষ হয়ে গিয়েছিল, কারণ তিন দিন পর্যন্ত যুদ্ধবন্দীদের একজনকেও কোন কাজ করতে হয়নি...হঠাৎ রাতের বেলা অস্বাভাবিকভাবে তাদের সবাইকে জাগিয়ে তুলে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়। পাহারা শক্তিশালী করা হয়েছিল। ইয়েগোরভ বুঝতে পেরেছিল যে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে এবং যা ঘটছে তা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে শুরু করে। তারা অজানা একদিকে তিন কিংবা চার ঘন্টা ধরে চলে। তারা বনের এক ফাঁকা জায়গায় একটি গর্তের সামনে থামলো। তিনি দেখলেন কীভাবে একদল যুদ্ধবন্দীকে অন্যদের থেকে আলাদা করে গর্তের দিকে চালিত করা হয়েছিল এবং তারপর তাদের গুলি করা হয়েছিল। যুদ্ধবন্দীরা উত্তেজিত, অস্থির কোলাহল করছিল। ইয়েগোরভ থেকে খুব বেশি দূরে নয় এমন বেশ কয়েকজন যুদ্ধবন্দি রক্ষীদের উপর আক্রমণ করেছিলেন। অন্যান্য গার্ডরা দৌড়ে জায়গাটি ছেড়ে চলে গেলো। ইয়েগোরোভ গন্ডগোলের সুযোগ নিয়ে চিৎকার গুলির আওয়াজ শুনতে শুনতে অন্ধকার জঙ্গলে ঢুকে গেলো। এই ভয়ঙ্কর গল্পটি শুনে, যা সারাজীবন আমার স্মৃতিতে খোদিত হয়ে গেছে, আমার ইয়েগোরভের জন্য খুব কষ্ট হয়েছিল এবং তাকে আমার ঘরে আসার জন্য, উষ্ণ হওয়ার জন্য এবং তার শক্তি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমার জায়গায় লুকিয়ে থাকতে বলেছিলাম। তবে ইয়েগোরভ প্রত্যাখ্যান করলেন...তিনি বলেছিলেন যা খুশি ঘটলেও সেদিনই সে চলে যাচ্ছিলো এবং লাল ফৌজের যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। সকালে আমি যখন ইয়েগোরোভ গেছে কিনা তা নিশ্চিত করতে গিয়েছিলাম, তখনও সে চালার নিচে ছিল। এটি স্পষ্ট যে সেই রাতে তিনি যাত্রা করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্ত প্রায় ৫০ কদম যাওয়ার পর তিনি এতটাই দুর্বল বোধ করছিলেন যে তিনি ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই ক্লান্তি শিবিরে দীর্ঘ কারাবাস এবং শেষ দিনগুলোতে অনাহারের কারণে হয়েছিল। আমরা স্থির করেছিলাম তার শক্তি ফিরে পেতে তাকে আরও কয়েক দিন আমার জায়গায় থাকা উচিত। ইয়েগোরোভকে খাওয়ানোর পর আমি কাজে গেলাম। সন্ধ্যার দিকে যখন আমি আমার বাড়িতে ফিরে আসলাম তখন প্রতিবেশী ব্রানোভা, মারিয়া ইভানোভনা, কাবানোভস্কায়া, ইয়েকাতেরিনা ভিক্টোরোভনা আমাকে বলেছিল যে, বিকেলে জার্মান পুলিশ কর্তৃক অনুসন্ধানের সময় লাল ফৌজের যুদ্ধবন্দীকে পাওয়া গেছে এবং নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

আরও প্রমাণ সুখাচেভ নামে একজন যান্ত্রিক প্রকৌশলী দিয়েছিলেন, যিনি জার্মানদের অধীনে স্মোলেনস্ক শহরের কারখানায় মেকানিক হিসাবে কাজ করেছিলেন:

"আমি ১৯৪৩ সালের মার্চে দ্বিতীয় শিফটে কারখানায় কাজ করছিলাম। সেখানে আমি একজন জার্মান চালকের সাথে কথা বললাম, যিনি সামান্য রাশিয়ান ভাষায় কথা বলতে পারতো এবং যেহেতু তিনি সৈন্যদের জন্য সাভেনকি গ্রামে আটা নিয়ে গিয়েছিলেন আর পরের দিন স্মোলেনস্ক ফিরে আসছিলেন, আমি তাকে আমাকে সাথে নিতে বলি যাতে আমি কিছু চর্বি কিনে গ্রামে নিতে পারি। আমি ধারণা করেছিলাম যে একটা জার্মান ট্রাকে ভ্রমণ করলে কন্ট্রোল স্টেশনগুলোতে আটক হওয়ার ঝুঁকি এড়ানো যাবে। জার্মানটা আমাকে সামান্য বেশি দামে নিতে রাজি হয়েছিল। একই দিন রাত দশটায় আমরা স্মোলেনস্ক-ভিটেবস্ক হাইওয়েতে চলে এসেছিলাম, কেবল আমি আর জার্মান চালকটা ছিল মেশিনে। রাতটা ছিল পরিষ্কার, আর রাস্তার উপর কেবল সামান্য কিছু কুয়াশা দৃষ্টিসীমা হ্রাস করে দিচ্ছিলো। স্মোলেনস্ক থেকে প্রায় ২২ বা ২৩ কিলোমিটার দূরে হাইওয়ের একটি ভাঙা সেতুতে একটা গভীর উৎরাই ছিল বাইপাসে। আমরা হাইওয়ে থেকে নেমে যেতে শুরু করলাম, হঠাৎ একটা ট্রাক কুয়াশা থেকে বেরিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। হয় আমাদের ব্রেকগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, নতুবা ড্রাইভার অনভিজ্ঞ হওয়ার কারণে আমরা আমাদের ট্রাকটিকে থামাতে পারিনি এবং পথটি বেশ সরু হওয়ায় আমাদের দিকে আসা ট্রাকের সাথে আমরা ধাক্কা খাই। প্রভাবটা তেমন গুরুতর ছিল না, কারণ অন্য ট্রাকের চালক পাশের দিকে ঘুরে যায়, ফলস্বরূপ ট্রাকগুলো ধাক্কা মেরে একটা আরেকটা থেকে পিছলে চলে যায়। অন্য ট্রাকের ডান চাকাটি অবশ্য খাদে নেমে গিয়েছিল এবং ট্রাকটি ঢালের উপরে উঠে যায়। আমাদের ট্রাক খাড়া হয়ে রইলো। চালক আর আমি তৎক্ষণাৎ কেবিন থেকে লাফিয়ে উঠে পড়েছিলাম এবং পড়ে যাওয়া ট্রাকটির দিকে দৌড়ে গেলাম। পচা মাংসের বাজে দুর্গন্ধ পেলাম যা স্পষ্টতই ট্রাক থেকে আসছিলো। কাছাকাছি আসার সময় আমি দেখতে পেলাম যে ট্রাকটি তারপুলিন দিয়ে ঢাকা এবং দড়ি দিয়ে বাঁধা একটি বোঝা বহন করছিল। এর প্রভাবে দড়িগুলো আলগা হয়ে গিয়েছিল এবং বোঝার কিছু অংশ ঢালের উপর পড়ে গিয়েছিল। এটি ছিল একটি ভয়ঙ্কর বোঝা- মানবদেহগুলো সামরিক ইউনিফর্ম পরিহিত ছিল। যতদূর আমি মনে করতে পারি ট্রাকের কাছে ছয়-সাত জন লোক ছিল: একজন জার্মান চালক, দু'জন টমি বন্দুক নিয়ে সজ্জিত জার্মান, বাকিরা ছিলেন রুশ যুদ্ধবন্দি, কারণ তারা রাশিয়ান ভাষায় কথা বলছিল এবং সেই অনুযায়ী পোশাক পরা ছিল। জার্মানরা আমার চালককে গালি দিতে শুরু করে এবং তারপর ট্রাকটি ঠিক করার জন্য কিছুটা চেষ্টা করে। প্রায় দু'মিনিটের মধ্যে আরও দু’টি ট্রাক দুর্ঘটনার জায়গায় পৌঁছে যায় এবং টেনে নিয়ে যায়। প্রায় দশ জন পুরুষ, জার্মান এবং রাশিয়ান যুদ্ধবন্দীদের একটি দল এই ট্রাকগুলো থেকে নেমে আমাদের কাছে এসেছিল। যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা ট্রাকটি তুলতে শুরু করি। সুবিধাজনক মুহূর্তের সদ্ব্যবহার করে আমি রুশ যুদ্ধ বন্দীদের একজনকে নিচু কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলাম: ‘এগুলো কি?’ তিনি খুব শান্তভাবে উত্তর দিয়েছিলেন: ‘অনেক রাত ধরে ইতিমধ্যেই আমরা কাতিন বনে লাশ নিয়ে চলেছি’। উল্টানো ট্রাকটি ওঠার আগেই একজন জার্মান এনসিও আমার এবং আমার ড্রাইভারের কাছে এসে আমাদের তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়।

https://en.wikipedia.org/wiki/Ranks_of_the_German_Bundeswehr

আমাদের ট্রাকের কোনও গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ার কারণে চালকটি এটিকে একদিকে সামান্য ঝুঁকিয়ে মহাসড়কে উঠলেন এবং আমরা এগিয়ে গেলাম। পরে যেই দু’টি ঢেকে রাখা ট্রাক এসেছিল সেগুলো অতিক্রমের সময় আমি আবার মৃতদেহের ভয়াবহ দুর্গন্ধ পেয়েছিলাম।”

অন্যান্য বিভিন্ন ব্যক্তিরাও মৃতদেহ বোঝাই ট্রাকগুলো দেখে ফেলার সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

ঝুখোভ, একজন প্যাথলজিস্ট, যিনি ১৯৪৩ সালের এপ্রিলে জার্মানদের আমন্ত্রণে কবরগুলো দেখতে গিয়েছিলেনতিনিও প্রমাণ দিয়েছিলেন:

“মৃতদেহের পোশাকগুলো বিশেষত গ্রেটকোট, বুট এবং বেল্টগুলো ভাল অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল। পোশাকের ধাতব অংশগুলো- বেল্টের বকলসগুলো, বোতামের হুকগুলো এবং জুতার তলার স্পাইকগুলো ইত্যাদিতে বেশি জং ধরেনি এবং কিছু ক্ষেত্রে ধাতুগুলো তখনও এগুলোর চকচকে ভাব ধরে রেখেছিল। দেহের ত্বকের যে অংশগুলি দেখা যেতো- মুখ, ঘাড়, বাহু সেগুলো প্রধানত নোংরা এক ধরণে সবুজ বর্ণের হয়ে গিয়েছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে নোংরা বাদামী হয়ে গিয়েছিল, কিন্ত টিস্যুগুলো কোথাও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল না, কোথাও পচেও যায়নি। কিছু ক্ষেত্রে সাদা রঙের নগ্ন টেন্ডন এবং পেশীর কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিলো। আমি যখন খননের স্থানে ছিলাম তখন লোকেরা বড় গর্তের তলদেশে মৃতদেহ বাছাই ও আলাদা করছিল। এই উদ্দেশ্যে তারা কোদাল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করেছিল আর তাদের হাত দিয়ে মৃতদেহ ধরেছিল এবং বাহু, পা কিংবা পোশাক ধরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টেনে নিয়ে গিয়েছিল। আমি মৃতদেহগুলোর কোনটাই টুকরো হয়ে পড়ে যেতে বা কোনও শরীর ছিন্নভিন্ন অবস্থায় দেখিনি। উপরের সমস্ত বিষয় বিবেচনা করে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম যে মৃতদেহগুলো তিন বছর ধরে মাটিতে ছিল না যা জার্মানরা নিশ্চিত করেছিল, বরং এর চেয়েও অনেক কম সময় ধরে এগুলো ছিল। গণকবরগুলোতে এবং বিশেষত কফিন ছাড়াই একটা কবরের তুলনায় মৃতদেহের পচন আরও দ্রুতগতিতে হয়, এটা জেনে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম যে পোলিশদের গণহারে গুলি করার ব্যাপারটা প্রায় দেড় বছর আগে হয়েছিল এবং ১৯৪১ সালের শরৎকালে কিংবা ১৯৪২ সালের বসন্তে ঘটতে পারে। খনন স্থানে আমার পরিদর্শনের ফলে আমি দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে জার্মানদের দ্বারা একটি মারাত্মক অপরাধ সংঘঠিত হয়েছিল।”

সেসময় কবরগুলো দেখতে আসা আরও বেশ কয়েকজন একই ধরনের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। অধিকন্তু ১৯৪৩ সালে মৃতদেহগুলো পরীক্ষা করতে এসেছিলেন এমন প্যাথলজিস্টরা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে তারা দু'বছরের বেশি আগে মরেনি। পরবর্তীতে এমন কিছু ডকুমেন্টের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল যেগুলো জার্মানরা প্রমাণ সরানোর সময় দেখতে পায়নি। এগুলোর মধ্যে ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একটা চিঠি, ১৯৪০ সালের ১২ নভেম্বরের একটা পোস্টকার্ড, ১৯৪১ সালের ১৪ মার্চের একটা বন্ধকী টিকেট পাওয়া গিয়েছিল এবং অন্যটির তারিখ ছিল ১৯৪১ সালের ১৪ মার্চ। ১৯৪১ সালের ৬ এপ্রিল, ১৯৪১ সালের ৫ মে, ১৯৪১ সালের ১৫ মে তারিখের রসিদ এবং ২০ জুন তারিখের পোলিশ ভাষার একটি না পাঠানো পোস্টকার্ডও পাওয়া গিয়েছিল। যদিও এই সমস্ত তারিখগুলো সোভিয়েতরা চলে যাওয়ার পরের সময়ের, কিন্ত জার্মানরা এগুলো ১৯৪০ সালের বসন্তে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ দ্বারা বন্দীদের কথিত হত্যার সময়টিতে নিয়ে যায়, এভাবেই তারা সবাইকে বোকা বানাতে সক্ষম হয়েছিল।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 
 
 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 
 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 
 
 
 
 
 

 

 

 

 

 

 

 

 
 
 
 
 
 
 

 

 

 

 

 

 

 

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

 
 
 
 
 
 
 

 

 

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]