চেচেন সমাচার

 


চেচনিয়া রাশিয়ার ককেশাস অঞ্চলের অংশ।

https://www.bbc.com/news/world-europe-12274023

অতীতে তারা নাখ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

https://www.britannica.com/topic/Chechen-people

তেল সমৃদ্ধ ককেশাস নিয়ে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে লড়েছে পারস্য, রাশিয়া আর অটোমান তুরস্ক। চেচেনরা নিজেদের সুবিধামতো কোনো একটা পক্ষ নিয়ে লড়াই করেছে।

http://www.ossett.net/ossett_people.html

১৯১৭ এর বলশেভিক আন্দোলনের মধ্যে চেচেনরা প্রতিবেশী ইঙ্গুশ আর দাগেস্তানের অন্যান্য জাতিগুলোর সাথে মিলে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে, তাদের সহায়তা করেছিল জার আমলের সেনাদল। ১৯২১ সাল নাগাদ বলশেভিকেরা গোটা অঞ্চলটাকে রাশিয়ার সাথে জুড়ে নেয়। সোভিয়েত ইউনিয়নে চেচনিয়াকে স্বায়ত্ত্বশাসনের সুবিধা দেয়া হয়, এতে শিক্ষা-দীক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান বাড়ে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে বহু চেচেন আর ইঙ্গুশ যোদ্ধারা বীরত্ব দেখিয়েছিলেন সোভিয়েতদের পক্ষে। যুদ্ধের সময় কিছু চেচেন সোভিয়েতবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল। ১৯৪৪ সালে তাদের অনেককে পাঠানো হয় কাজাখস্তানে। ক্রুশ্চেভের আমলে অধিকাংশ চেচেন রাজাকার ফেরত আসে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে চেচেনরা তাদের নেতা প্রাক্তন সোভিয়েত জেনারেল ঝোখার দুদায়েভের নেতৃত্বে স্বাধীন অঞ্চল গঠন করে নাম দেয় চেচেন রিপাবলিক অব ইচকেরিয়া। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Dzhokhar_Dudayev

বরিস ইয়েলৎসিন তখন পার্লামেন্টে ক্ষমতা সংহত করা নিয়ে ব্যস্ত। স্বাধীন চেচনিয়াতে মানুষ দুদায়েভের শাসনে সন্তুষ্ট ছিল না। দুদায়েভের অত্যাচারে বহু রুশ আর চেচেন পালিয়ে যায়, এদের অনেকে রুশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে দুদায়েভকে হটানোর জন্য। দুদায়েভের শাসনামলে রাজধানী গ্রোজনী হয়ে ওঠে দাগী সন্ত্রাসী, জঙ্গী, অস্ত্র আর মাদক চোরাকারবারীদের আড্ডা। ইংগুশরা দুদায়েভের শাসনে বিরক্ত হয়ে ১৯৯২ সালে আলাদা প্রজাতন্ত্র গঠন করে। চেচনিয়া আর রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মধ্যে টুকটাক সংঘর্ষ লেগে ছিল। দুদায়েভের বাহিনী প্রায় সবগুলোতে রুশদের পরাস্ত করে। ১৯৯৪ সালের ১১ ডিসেম্বর রুশ বাহিনী গ্রোজনী অভিমুখে হামলা চালায়।

https://weaponsandwarfare.com/2016/05/14/street-ambush-grozny-19945/

শামিল বাসায়েভ আর সৌদি জঙ্গী ইবনে আল খতিবের নেতৃত্বে বহু তুর্কি, আফগান, চেচেন জঙ্গি রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে। দুদায়েভ আফগান যুদ্ধের সময় বিমান বাহিনীর পাইলট হিসেবে বহু বোমা ফেলেছেন। চেচেনদের একটা বড় অংশ তাকে পরিত্যাগ করে কট্টর মৌলবাদীদের সাথে হাত মেলাতে থাকে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর রুশ বাহিনীতে বিশৃংখলা দেখা দেয়। চেচনিয়ার মতো পার্বত্য অঞ্চলে যুদ্ধের জন্য রুশরা শুরুতে প্রস্তুত ছিল না। টি-৮০ ট্যাংক নিয়ে গ্রোজনীতে ঢুকতে গিয়ে রুশরা মরতে থাকে। উচ্ছৃঙ্খল রুশ সেনাদের হাতে বহু চেচেন নারী ধর্ষিত হয়। গ্রোজনীতে রুশরা আক্রমণের তীব্রতা বাড়াতে থাকে। বিমান আর গোলন্দাজ বাহিনী শহরটাকে মিশিয়ে দেয়। রুশরা অল্প কিছুকালের জন্য গ্রোজনী দখল করতে পারলেও ১৯৯৫ এর মার্চ-এপ্রিল নাগাদ আবার গ্রোজনী চেচেনদের হাতে চলে যায়। হাজার হাজার সৈন্যের মৃত্যু, রুশ ফেডারেশনের আর্থিক বিশৃংখলা, ইয়েলৎসিনের শাসনের প্রতি অনাস্থা- সব মিলিয়ে ক্রেমলিন বাধ্য হয় চেচেনদের সাথে বোঝাপড়া করতে। দুদায়েভ ইতোমধ্যে বিমান হামলায় মারা পড়েছেন। আসলান মাসখাদভ ছিলেন একজন সোভিয়েত কর্নেল।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Aslan_Maskhadov

প্রথম চেচেন যুদ্ধের সময় তিনি দারুণ সামরিক দক্ষতা দেখান। ১৯৯৭ সালে তিনি চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ঐ বছর রুশ-চেচেন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী রুশরা চেচেন সরকারকে সাহায্য করতো।

https://www.rferl.org/a/1076426.html

মাসখাদভ সরকারের সাথে বিরোধীদের লড়াই লেগে থাকতো। তেল পাচার, অস্ত্র আর মাদকের ব্যবসা, যুদ্ধ আর দুর্নীতিতে ভরপুর ছিল এই সরকার। ১৯৯৯ এর শেষদিকে মাসখাদভের বিরোধীরা শরিয়া মোতাবেক রাষ্ট্র গড়ার কথা ঘোষণা করে। তাদের পরিকল্পনায় ছিল চেচনিয়ার সাথে প্রতিবেশী দাগেস্তান আর ইংগুশেতিয়াকে জুড়ে নেয়া। শামিল বাসায়েভ ছিল এদের অন্যতম নেতা।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Shamil_Basayev

দাগেস্তানে চেচেনরা মাঝে মাঝে হামলা চালাতো। ১৯৯৯ সালে এক রুশ জেনারেলকে অপহরণ আর খুন করা হলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। সামিল বাসায়েভ আর ইবনে আল খতিবের নেতৃত্বে একদল কট্টর জঙ্গী দাগেস্তানে হামলা চালালে দুই পক্ষে লড়াই শুরু হয়। রুশরা জিতলেও তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঐ বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার অনেক অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে চেচেনদের বোমা হামলায় ৩০০ জনের মতো বেসামরিক মানুষ মারা যায়। অক্টোবরে রুশ বাহিনী আবার চেচনিয়ায় প্রবেশ করে। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে গ্রোজনীর পতন হয়। রাশিয়া ২০০২ সাল পর্যন্ত সামরিক অভিযান চালিয়ে চেচেন জঙ্গিদের গুড়িয়ে দেয়। ২০০৩ সালে চেচনিয়ার ক্ষমতায় বসেন আখমাদ কাদিরভ। ২০০৫ সালে আসলান মাসখাদভকে হত্যা করে রুশ বাহিনী। মাসখাদভের প্রধানমন্ত্রী বাসায়েভ ২০০৬ সালে নিহত হয়। বাসায়েভ বেসলান স্কুল আর মস্কো থিয়েটারে হামলার নির্দেশ দিয়েছিল। ২০০৯ সাল নাগাদ চেচনিয়ায় জঙ্গী তৎপরতা একরকম বন্ধ হয়ে যায়। দুদায়েভের মৃত্যুর পরে চেচেনদের নেতৃত্ব গিয়ে পড়ে মৌলবাদী চেচেনদের হাতে। বাসায়েভ জর্জিয়া-আবখাজ যুদ্ধের সময় শ’খানেক জর্জীয় সৈন্যের মাথা কেটে সেগুলো দিয়ে ফুটবল খেলার আয়োজন করেছিল। রাশিয়া জুড়ে অনেকগুলো সন্ত্রাসী হামলা চেচেন মৌলবাদীদের প্রতি সাধারণ চেচেনদের বিতৃষ্ণ করে তোলে। বর্তমানে চেচনিয়ার ক্ষমতায় আছেন আখমাদ কাদিরভের ছেলে রমজান কাদিরভ।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ramzan_Kadyrov

    

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]