আমরা আমরাই তো

https://www.google.com/amp/s/www.mensxp.com/amp/special-features/longform/39854-operation-hat-how-cia-lost-a-nuclear-device-in-india-while-spying-on-china-and-almost-polluted-ganga.html

ষাটের দশকের শুরুতে আমেরিকা বিভিন্ন গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে জানতে পারে চীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় পারমাণবিক বোমা বানানোর ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। সিআইএ'র একটি তার বার্তায় জানা যায় ১৯৫৯ সালের অক্টোবরে চীন লোপ নরে (সীমান্তবর্তী বিরান এলাকা) নিউক্লিয়ার ডিভাইসের পরীক্ষা চালানোর উদ্দেশ্যে নিউক্লিয়ার টেস্ট বেস স্থাপন করে। নজরদারি চালানোর জন্য চীনের উপর দিয়ে ইউ-টু বিমানের ফ্লাইট বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। তাই তারা চিন্তা করে যদি হিমালয় পর্বতমালার কোনো একটার উপর নজরদারি চালানোর যন্ত্র স্থাপন করা যায়, তাহলে অনেক তথ্য পাওয়া সম্ভব। কোন পাহাড়ে যন্ত্র স্থাপিত হবে, তা নির্ভর করবে পাহাড়ের উচ্চতার উপর।

https://www.google.com/amp/s/www.wired.com/2013/04/cia-himalayan-spies/amp

চীনের পারমাণবিক পরীক্ষা নজরদারির মধ্যে আনার লক্ষ্যে আমেরিকা ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন সিআইএ'কে গোপন মিশন চালানোর অনুমতি দেন। চীনের উপর নজরদারির আরেকটি উপায় ছিল স্যাটেলাইট। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের সেসময়ে আমেরিকার প্রায় সব উন্নত স্যাটেলাইট সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর মোতায়েন করা ছিল। যেসব স্যাটেলাইট বাকি ছিল আমেরিকার হাতে, সেসব দিয়ে চীনের উপর পূর্ণ নজরদারি চালানো সম্ভব হতো না। তাই নজরদারি চালানোর মতো যন্ত্র পর্বতে স্থাপন করার পক্ষে ছিল মার্কিনিরা। নন্দ দেবী পর্বতের চূড়াকে নির্ধারণ করা হয় এই উদ্দেশ্যে, যেখান থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি ঘটেছে। নন্দ দেবী পাহাড়ের উত্তরে চীন, দক্ষিণে ভারত এবং পশ্চিমে পাকিস্তান। এখান থেকে চীনের পারমাণবিক মিসাইল পরীক্ষার ঘাঁটি খুব বেশি দূরে নয়। এখান থেকে নজরদারি চালালে বেগ পেতে হবে না। চীনা গোয়েন্দারা এত দুর্গম অঞ্চল থেকে তাদের উপর কেউ নজরদারি চালাতে পারে- এটি মাথায়ও আনবে না। সবদিক বিবেচনা করে নন্দ দেবী ছিল নজরদারি চালানোর ডিভাইস স্থাপনের যুতসই জায়গা। এ পর্বত ভারতের সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলোর মধ্যে একটি। এখানে তাপমাত্রা খুবই কম। আর তুষার-ঝড়ের ভয় তো আছেই। চূড়ায় উঠা বেশ কষ্টকর। ভারতের তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এবং আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-কে দায়িত্ব দেয়া হয় মিশন বাস্তবায়নের জন্য। ভারতের চার জন ও আমেরিকার নয় জন- মোট তেরো জন অভিজ্ঞ পর্বতারোহী নিয়ে নজরদারির ডিভাইস স্থাপনের জন্য টিম গঠন করা হয়। অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় ক্যাপ্টেন মনমোহন সিং কোহলিকে। ক্যাপ্টেন কোহলি বাদে বাকি সদস্যদের পরিচয় গোপন রাখা হয়। দুই দেশের সদস্যদের নিয়ে গড়া এই টিমকে প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় আলাস্কায়। ম্যাককিনলি পাহাড়ে তাদের চূড়ান্ত মিশনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। নজরদারি চালানোর যে ডিভাইস, সেটির ভর ছিল ৫৬ কেজি। ৮-১০ ফুট উচ্চতার একটি এন্টেনা ছিল এর সাথে। আরো ছিল দু'টি ট্রান্সিভার সেট। পুরো ডিভাইসটি আদতে একটি সেন্সর ছিল, যেগুলো পারমাণবিক মিসাইল পরীক্ষার পর ভেসে আসা ওয়েভগুলো ধরতে পারবে। সেন্সরটিতে নিরবচ্ছিন্ন শক্তি সরবরাহের জন্য নিউক্লিয়ার জেনারেটর (SNAP) তৈরি করে রাখা হয়েছিল। জেনারেটরে প্লুটোনিয়াম-২৩৮ এর নিউক্লিয়ার ক্যাপসুল ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদনের ব্যবস্থা ছিল। পারমাণবিক পরীক্ষার ফলে উদ্ভূত 'রেডিও টেলিমেট্রি সিগন্যাল' ধরার সক্ষমতা ছিল ডিভাইসটির। ১৯৬৫ সালের ১৮ অক্টোবর মিশন শুরু হয়। প্রায় ১,৫০০ ফুট বাকি থাকতে ক্যাপ্টেন কোহলির টিম যেখানে ক্যাম্প করেছিল, সেখানে তুষাড়ঝড় শুরু হয় এবং অক্সিজেনের স্তর নিচে নেমে যায়। কোহলি পুরো টিমকে নিয়ে বেস ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফিরে আসার সময় নিউক্লিয়ার জেনারেটর ও সেন্সর সমেত পুরো ডিভাইসটি পাথরের আড়ালে লুকিয়ে রাখেন। তাদের প্রত্যাশা ছিল ঝড়ো আবহাওয়া শেষ হওয়ার পর পুনরায় আরোহণের পর সেন্সর ও স্ন্যাপ জেনারেটর খুঁজে কাজ শুরু করবেন। ১৯৬৬ সালের বসন্তে পুনরায় মিশন শুরু করা হয়। এবার তারা সেন্সর ও নিউক্লিয়ার জেনারেটর খুঁজে পাচ্ছিলো না। বরফের স্তরের নিচে কোথায় সেই সেন্সর ও জেনারেটর আছে তা পাওয়া যায়নি। তেজস্ক্রিয় প্লুটোনিয়াম-২৩৮ সমৃদ্ধ জেনারেটর ও সেন্সর খোঁজার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও অভিযান চালানো হলেও কোনো কুল-কিনারা পাওয়া যায়নি। ১৯৬৮ সালে নন্দ দেবী পর্বতের পাশে নন্দ কোট পর্বতে আবার মিশন পরিচালনা করা হয়েছিল আমেরিকা-ভারত যৌথ উদ্যোগে।

https://secretscotland.wordpress.com/2019/06/02/the-atomic-secret-of-nanda-devi/amp/

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]