কৃষক বনাম বলিউডের চাকচিক্য
ভারতের কৃষিতে বড় অংশীদার হলো রাজ্য সরকার। প্রতিটি রাজ্য সরকার সেই রাজ্যে উৎপাদিত পণ্যের বাজার মান্ডি’কে নিয়ন্ত্রণ করে। মান্ডিগুলোকে রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে APMC (Agricultural Produce Marketing Committee) এর মাধ্যমে, এই ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত কর সংগ্রহ করে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করে বিশাল আকারের বাজারগুলোতে কোন পণ্যের দাম কত হবে, সেই দামের উপর ভিত্তি করে সংগ্রাহকরা কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে আনে। আবার বড় কৃষকরা পণ্য নিজেরাই সেই বাজারে নিয়ে আসে। এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে পণ্য সরবরাহের কাজটিও হয়ে থাকে এই বাজারগুলোর মাধ্যমে। এই কৃষি ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য তিনটি বিল লোকসভায় ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাস হয়।
https://www.aljazeera.com/program/newsfeed/2020/12/24/why-are-indias-farmers-protesting-the-new-farm-lawsরাজ্যসভায় প্রবল বিরোধিতার মুখে ২০ এবং ২২ সেপ্টেম্বরের মাঝে তা পাস হয়। এই তিনটি বিল নিয়ে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় আন্দোলন আর বিক্ষোভ।
https://www.aljazeera.com/news/2020/12/12/indias-modi-says-government-committed-to-farmers-welfare
https://www.bbc.com/news/world-asia-india-54233080
এই বিল কার্যকর হলে মান্ডিগুলোর আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না, এই জায়গাটি পুরোটাই দখল করে নিবে অল্প কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। ভারতের খণ্ড খণ্ড কৃষিজমির চিত্রে দেখা যায় এখনো ৮৬% জমির মালিক দুই হেক্টরের কম জমি চাষ করে।
https://www.deccanherald.com/national/national-politics/now-farmers-will-be-back-to-serfdom-at-the-mercy-of-big-corporates-manish-tewari-891010.html
এককভাবে একজন কৃষককের কাছে পণ্যের পরিমাণ খুবই কম, এই পণ্য নিয়ে সে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে দরদামে কীভাবে যাবে?
https://zeenews.india.com/india/explained-why-are-punjab-haryana-farmers-protesting-in-delhi-and-what-are-their-demands-2327172.html
কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে দাম নির্ধারণে একক কর্তৃপক্ষ হয়ে উঠবে এবং এখানে যেহেতু সরাসরি বাজারের ব্যবস্থা থাকবে না কৃষককে, সেক্ষেত্রে ঠকানো সোজা হবে। এই অবস্থায় কৃষক যদি দীর্ঘমেয়াদে কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে লম্বা চুক্তিতে যায়, সেখানেও তার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। যদি কোনোভাবে আইনি ঝামেলা পর্যন্ত গড়ায়, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর যে আইনজীবী এবং ক্ষমতার কূটচাল আছে কৃষকদের কাছে তা নেই। এখানে কৃষক এবং প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিরোধ হলে তা নিরসনের জন্য তিনটি দ্বন্দ্ব নিরসনকারী কর্তৃপক্ষ রাখা হয়েছে; প্রথমত ‘কনসিলিয়েশন বোর্ড’, দ্বিতীয়ত ‘সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট’ এবং তৃতীয়ত ‘এপিলিয়েট অথোরিটি’।
https://www.hindustantimes.com/chandigarh/farmers-overpower-staff-at-toll-plazas-on-chandigarh-delhi-highway-allow-free-movement-of-vehicles/story-hxe6t1eqdUYD142XATlpPM.html
যদি কোনোক্ষেত্রে কৃষকের সাথে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান চুক্তি করে তা লঙ্ঘন করে তা নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই শুরু হবে। যেখানে ভারতের সিংহভাগ কৃষক এক মৌসুমের পণ্য বিক্রির অর্থ দিয়ে পরের মৌসুমে তার খরচ নির্ধারণ করে, সেখানে এই সমস্ত আইনি লড়াইয়ে কৃষককে তার পাওনা আদায়ে বরং নিঃস্ব হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
https://www.nationalheraldindia.com/india/does-it-not-stir-pm-modis-heart-15-protestors-including-two-women-have-lost-their-life-since-november-26
দীর্ঘমেয়াদে দাম নির্ধারণের ক্ষমতা যে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যাবে তার আরেকটি লক্ষণ হলো তিনটি আইনের একটি ‘এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট’ এর সংশোধনী। এই আইনটি আগেও ছিল, যেখানে সরকার কোনো পণ্যের কালোবাজারি এবং কৃত্রিম সংকট রুখতে পণ্যের তালিকা করে তার দাম নির্ধারণ করে দিতো। এই পণ্যের তালিকায় নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যগুলোর দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকতো। ২০২০ সালে এই আইনের সংশোধনীতে সরকার শুধুমাত্র জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া স্বাভাবিক সময়ে এই পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে না। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতেই শুধুমাত্র সরকার হস্তক্ষেপ করবে। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে মানদণ্ড ধরা হয়েছে পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে ১০০% এবং অপচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে ৫০% বৃদ্ধি। ধরা যাক অপচনশীল দ্রব্য ডালের দাম আজকে ১০০ টাকা কেজি, এটি যদি ৫০% বেড়ে ১৫০ টাকার উপরে যায় তবেই সরকার সেখানে হস্তক্ষেপ করবে। এখন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে ১০০ থেকে ১৫০ এর মাঝে দাম নির্ধারণের স্বাধীনতা থেকে যাবে। এতে ক্রেতার স্বার্থ তো বিনষ্ট হবেই, সেই সাথে বাজারের ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। অন্যদিকে কৃষকদের বঞ্চিত করবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো, যেখানে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের কোনো ব্যবস্থা নেই।
দীর্ঘমেয়াদে দাম নির্ধারণের ক্ষমতা যে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যাবে তার আরেকটি লক্ষণ হলো তিনটি আইনের একটি ‘এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট’ এর সংশোধনী। এই আইনটি আগেও ছিল, যেখানে সরকার কোনো পণ্যের কালোবাজারি এবং কৃত্রিম সংকট রুখতে পণ্যের তালিকা করে তার দাম নির্ধারণ করে দিতো। এই পণ্যের তালিকায় নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যগুলোর দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকতো। ২০২০ সালে এই আইনের সংশোধনীতে সরকার শুধুমাত্র জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া স্বাভাবিক সময়ে এই পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে না। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতেই শুধুমাত্র সরকার হস্তক্ষেপ করবে। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে মানদণ্ড ধরা হয়েছে পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে ১০০% এবং অপচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে ৫০% বৃদ্ধি। ধরা যাক অপচনশীল দ্রব্য ডালের দাম আজকে ১০০ টাকা কেজি, এটি যদি ৫০% বেড়ে ১৫০ টাকার উপরে যায় তবেই সরকার সেখানে হস্তক্ষেপ করবে। এখন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে ১০০ থেকে ১৫০ এর মাঝে দাম নির্ধারণের স্বাধীনতা থেকে যাবে। এতে ক্রেতার স্বার্থ তো বিনষ্ট হবেই, সেই সাথে বাজারের ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। অন্যদিকে কৃষকদের বঞ্চিত করবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো, যেখানে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের কোনো ব্যবস্থা নেই।
Comments