রোজা শানিনা
১৯২৪ সালে রোজা শানিনা সোভিয়েত ইউনিয়নের লেনিনগ্রাদ থেকে কয়েকশ' মাইল দূরের এক কমিউনে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর মাধ্যমিক শিক্ষার গ্রহণের জন্য তাকে বাড়ি থেকে প্রতিদিন আট মাইল দূরে যেতে হতো। বাবা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে না দেয়ায় মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন রোজা শানিনা। এরপর আরখানজেলোস্ক শহরে একটা মাধমিক স্কুলে ভর্তি হন তিনি। সেখানে তাকে একটি রুম বরাদ্দ দেয়া হয়, কর্তৃপক্ষ তাকে ছাত্রবৃত্তি প্রদান করে। ১৯৪১ জার্মানরা 'অনাক্রমণ চুক্তি' ভঙ্গ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে আক্রমণ করলে অর্থনীতিতে কিছুটা ধ্বস নামে এবং তার ছাত্রবৃত্তি বাতিল করে দেয়া হয়। টিউশন ফি জোগাতে তাকে একটি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নে যুদ্ধের পরিসর ক্রমশ বাড়তে থাকে। একসময় নাৎসিরা আরখানজেলোস্কে বোমাবর্ষণ করতে শুরু করে।
https://www.amazon.com/World-War-II-Desk-Reference/dp/B002DSJBT8
রোজার ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে রোজার ভাই মিখাইল নাৎসিদের বোমাবর্ষণে নিহত হয়। তিনি ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। হাজার হাজার সোভিয়েত নারীর পাশাপাশি রোজাও লাল ফৌজে যোগদানের জন্য আবেদন করেন। তাকে সেনাবাহিনীর নারী স্নাইপার অ্যাকাডেমিতে তালিকাভুক্ত করা হয়। ১৯৪৪ সালে রোজা সেখান থেকে সফলভাবে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তাকে সেনাবাহিনীর ১৮৪তম রাইফেল ডিভিশনের নারী স্নাইপার ডিভিশনের কমান্ডার বানানো হয়। পশ্চিম ফ্রন্টে যোগ দেয়ার তিন দিন পর রোজা তার প্রথম কিলিং সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি একটি পত্রিকায় তার প্রথম কিলিংয়ের অনূভূতি জানিয়েছিল এভাবে-
“অবশেষে ট্রেঞ্চের কোণায় এক জার্মানকে দেখা গেলো। আমি ধরে নিয়েছিলাম টার্গেট সর্বোচ্চ ৪০০ মিটার দুরত্বে আছে। এটি খুবই সাধারণ দুরত্ব। জার্মান সৈন্যটি যখন মাথা নিচু করে কাঠের স্তুপের দিকে যেতে শুরু করলো, আমি ফায়ার করলাম। কিন্তু সে যেভাবে পড়ে গেলো, তাতে নিশ্চিত ছিলাম সে মারা যায়নি। এক ঘন্টা ধরে ফ্যাসিস্টটা মাটিতে পরে থাকলো, এক চুলও নড়ার সাহস করলো না। এক ঘন্টা পর যখন সে মাটিতে হামাগুড়ি দেয়ার চেষ্টা করলো, আমিও আবার ফায়ার করলাম এবং এইবার আমি আর ভুল করিনি।”
তার কিলিংয়ের সংখ্যা যখন ৪৬, তখন যুদ্ধের সময় লেখা তার ডায়েরিতে পাওয়া যায়-
“ডিউটি শুরু হতো খুব ভোরে, যখন আবহাওয়া থাকতো কুয়াশাময়। প্রতিদিনের মতো আজও সকালে আমি শুয়ে আছি এমন একটা জায়গায়, যেখান থেকে জার্মান ক্যাম্প পরিষ্কার দেখা যায়। আমি মরার মতো শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকি, কখন জার্মান সৈন্য দেখতে পাবো। অবশেষে একটাকে দেখতে পেলাম। জার্মান মেশিনগান চালক পিলবক্সের গেটে এসে অপেক্ষা করতে লাগলো। সে যখন আমাদের অরক্ষিত ক্যাম্পের দিকে হামাগুড়ি দিতে শুরু করে, এসময় আমি ফায়ার করি। এক শটেই ঘায়েল করে ফেলি তাকে। তাকে বাঁচাতে আরও দু'জন জার্মান আসে, তাদেরও আমি পরপর দু'শটে কাবু করে ফেলি। এরপর আবার দু'জন আসে, আর তাদেরও একই পরিণতি বরণ করতে হয়।”
ডায়েরিতে ১৯৪৫ সালের ২৪ জানুয়ারির তারিখ উল্লেখ করা এক বর্ণনানুযায়ী, তিনি এক অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হন। রেজিমেন্টের প্রধান বিছানায় যাওয়ার জন্য তাকে জোরাজুরি শুরু করে। একই বর্ণনায় পরে তিনি লিখেছেন, কর্ণেলের মদ্যপ ছেলে তাকে খাটে ফেলে জোরপূর্বক চুমু দেয়। ঠিক যখন তিনি আরও কিলিংয়ের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল, তখন শত্রুর শেল তার প্রাণ কেড়ে নেয়। ১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি দু'জন সোভিয়েত সৈন্য যুদ্ধের মাঠে তার লাশ খুঁজে পায়। শেলের আঘাতে তার বুক ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাকে পূর্ব জার্মানিতে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। মাত্র দশ মাসে তার স্নাইপার কিলিংয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৫৯! তার ট্রেডমার্ক ছিল পরপর দু'বার খুব দ্রুত শট করা। সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবদন্তি এই বীরকে 'অর্ডার অফ গ্লোরি' পুরস্কারে ভূষিত করে।
https://en.wikipedia.org/wiki/Order_of_Glory




Comments