মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িরা
https://www.amrabondhu.com/subrata/6745
মানিকছড়ির মং প্রু সেইন (মং রাজা) ভারতে পাড়ি জমানো শরণার্থীদের আশ্রয়দানসহ নিজে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুজিবনগর সরকারকে অর্থ সহায়তা, মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০টির বেশি আগ্নেয়াস্ত্র প্রদানসহ কয়েকটি অপারেশনে সফলভাবে বীরত্বের সাথে তিনি যুদ্ধ করেন। উল্লেখ করতে হবে বীরবিক্রম উখ্য জিং মারমার নাম।
আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা চাকমা রাজপরিবারের সদস্য কে কে রায়, যিনি ছিলেন একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা। উল্লেখ করতে হবে মানবেন্দ্র লারমার নাম। তাছাড়া রাঙামাটি জেলা শহরে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে অন্যতম ছিলেন রাঙামাটি সরকারি কলেজের তৎকালীন ছাত্রনেতা গৌতম দেওয়ান। অন্যান্য চাকমা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন রসময় চাকমা, তাতিন্দ্রলাল চাকমা প্রমুখ। চাকমা ও মারমা জনগোষ্ঠী থেকে অনেকে ইপিআর এর সদস্য ছিলেন; ইপিআর সদর্স রমণী হেমরঞ্জন চাকমা, রঞ্জন চাকমা, খগেন্দ্র চাকমা, অ্যামি মারমা প্রমুখ যুদ্ধে শহীদ হন। এছাড়া বিমলেন্দু দেওয়ান, আনন্দ বাঁশি চাকমা, কৃপাসুখ চাকমাসহ ২০-২২ জন সরকারি কর্মকর্তা ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
https://www.amadershomoy.com/bn/2017/12/12/399661.htm
পার্বত্য চট্টগ্রামে ১ নং সেক্টরের আওতায় প্রথম যে মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয় (৫ মে ১৯৭১), তাতে সদস্যসংখ্যা ছিল ২৫ জন এবং এটির নেতৃত্বে ছিলেন হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা। এটি পরে একটি পূর্ণাঙ্গ দল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই দলের মধ্যে বরেন ত্রিপুরা ছিলেন অন্যতম।
নায়েক সুবাদার ইউ কে চিং, বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত রাখাইন সম্প্রদায়ের মুক্তিযোদ্ধা তিনি। জন্ম ১৯৩৩ সালে বান্দরবান মহকুমার উজানীপাড়ায়। ১৯৫২ সালে ইপিআর-এ যোগ দিয়ে ১৯৭১ সালে ৬ নং সেক্টর থেকে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ এর মাঝামাঝিতে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় পাকিস্তানিদের অ্যাম্বুশে পড়েও বেঁচে যান। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই। উল্লেখ করতে হবে মুক্তিযোদ্ধা উ-উসিতমং, উ-মংয়াইন, উ-ক্যহ্রাচিং প্রমুখের নামও।
শুধুমাত্র রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় ৬২ জন আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধার নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। দিনাজপুরে ওঁরাও ও সাঁওতালদের নিয়ে ১,০০০ জনের বিশাল মুক্তিবাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। গারো, হাজং ও কোঁচ জনগোষ্ঠী থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল প্রায় ১,৫০০ জন। গারোদের মধ্যে কোম্পানি কমান্ডার দীপক সাংমা, মুক্তিযোদ্ধা থিওফিল হাজং, পরিমল দ্রং, অনাথ নকরেক, সেকশন কমান্ডার ভদ্র মারাক, প্লাটুন কমান্ডার যতীন্দ্র সাংমা, কমান্ডার অরবিন্দ সাংমা ও নারী মুক্তিযোদ্ধা ভেরোনিকা সিমসাংয়ের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুরের মিঠাপুকুর, রানীপুকুর, শ্যামপুর, তারাগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা থেকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমবেত হয় বীরজনতা। তাদের হাতে ছিল লাঠি, খুন্তি, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। বেশিরভাগই ছিল সাঁওতাল সম্প্রদায়ভুক্ত। হানাদার বাহিনী সেদিন বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করেছিল, তাতে মারা যায় ২০০ জনের মতো সাঁওতাল। তাদের সম্মানে ঐ স্থানে ২০০০ সালে নির্মাণ করা হয় ‘রক্ত গৌরব’ স্মৃতিসৌধ। উত্তরবঙ্গ থেকে আরও আছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক সাগারাম মাঝি, শহিদ ফাদার মারান্ডি (দিনাজপুর), মুক্তিযোদ্ধা সুরেশচন্দ্র পাহান (নওগাঁ), বিশ্বনাথ মাঝি, বুদু লাকড়া (মিঠাপুকুর, রংপুর), ওঁরাওদের মধ্য থেকে মনাইচন্দ্র খালকো (দিনাজপুর), কশবা মিশন হতে যোগ দেয়া নারী মুক্তিযোদ্ধা জসপিন ঢপ্প (দশম শ্রেণী, দিনাজপুর) প্রমুখ।
মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ এলাকায় চা বাগানে কর্মরত জনগোষ্ঠী হতে মুক্তিযুদ্ধে ছয় শতাধিক মানুষ নিহত হয়। মণিপুরী জনগোষ্ঠীর গিরীন্দ্র সিংহ, নিমাই সিংহ, কৃষ্ণকুমার সিংহ, সাধন সিংহ, অনিতা সিংহ, বাণী সিনহা প্রমুখ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক। নীলমণি চ্যাটার্জী, নন্দেশ্বর সিংহ, বিজয় সিংহ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ শরণার্থী হতে যাওয়া অসংখ্য মানুষকে সংঘবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করতে উৎসাহিত করেন। নীলমণি চ্যাটার্জী গড়ে তুলেছিলেন ১,২০০ মুক্তিযোদ্ধার এক অকুতোভয় দল।
১৯৭১ সালের মে মাসে মহেশখালি ঠাকুরতলা বৌদ্ধবিহারে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল হানাদার বাহিনী, হত্যা করেছে অসংখ্য নিরীহ রাখাইনকে, লুট করেছে ৬২টি রৌপ্যমূর্তি ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
কাঁকন বিবির প্রকৃত নাম ’কাকাত হেনইঞ্চিতা’। জন্ম মেঘালয়ে, ১৯১৫ সালে। ছিলেন বীরযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও গুপ্তচর। তিনি ২০১৮ সালের ২১ মার্চ, সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে মারা যান।
Comments