উইঘুর সমাচার

 

ক্রমাগত উত্থানে আতঙ্কিত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো চীনের অভ্যন্তরীণ অবস্থাকে অস্থিতিশীল ও দুর্বল করতে এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনকে হ্রাস করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে যাচ্ছে। চিনের উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কে বুর্জোয়া মিডিয়াগুলোতে নিয়মিতই কুমিরের অশ্রু ফেলে ভাঙা রেকর্ড বাজানো হয়। সারা বিশ্বের বহু বেকুবকে তাদের প্রোপাগান্ডাগুলোর মাধ্যমে বিশ্বাস করতে বলা হয় যে, চীনের মুসলমানদের নিজেদের সাংস্কৃতিক তিহ্য ত্যাগ করার জন্য তাদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন করা হয় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে ধরে এনে! জিনজিয়াং প্রদেশটির সাথে বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সীমান্ত থাকায় সেসব দেশের জঙ্গীদের পক্ষে (পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান) অনুপ্রবেশ করার সম্ভাবনা অতি প্রবল, যেমনটা ঘটেছিল সোভিয়েত তাজিকিস্তানের ক্ষেত্রে। ইতিহাস সাক্ষী এই জঙ্গীদের মার্কিনী আর তাদের পা চাটা সৌদিরা প্রশিক্ষণ দিয়ে সমাজতান্ত্রিক আফগানিস্তানের কি অবস্থা করেছিল। মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে ব্যবহার করে এই সাম্রাজ্যবাদী জোঁকেরা চীনে বাল্কানাইজেশন ঘটানোর পায়তারা করছে।

https://en.wikipedia.org/wiki/Balkanization

এই পদ্ধতিতে স্থানীয় অভিযোগগুলোকে প্রথমে খুঁজে বের করা হয় (অথচ বিশ্বের সকল প্রান্তের জনগোষ্ঠীর মধ্যেই ছোটখাটো সমস্যা পাওয়া যায়), এরপর লক্ষ্যবস্তু বানানো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে নির্যাতিত হওয়ার ধারণা ছড়িয়ে দেয়া হয় এবং শেষে নির্দিষ্ট একটা অংশকে বাছাই করা হয় অভ্যন্তরীণ নাশকতা সৃষ্টির কাজে ব্যবহারের জন্য। সাম্রাজ্যবাদীরা এভাবে এই অঞ্চলে বসবাসরত অমুসলিমদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে প্ররোচিত করে মুসলমানদের। নব্বইয়ের দশক থেকে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং বিস্ফোরক ব্যবহার করে শপিংয়ের ব্যস্ততম জায়গাগুলোতে এবং জনাকীর্ণ ট্রেন ও বাস স্টেশনগুলোতে কয়েক শতাধিক নাগরিককে হত্যা করা হয়।

https://en.wikipedia.org/wiki/Terrorism_in_China

নিজেদের মাটিতে জিহাদি সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে এমনকি আমেরিকা ও ব্রিটেন সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার পরিকল্পনা করছে এমন ব্যক্তিদের কারাগারে ঢুকিয়েছে, যারা জিহাদি মতবাদ ছড়ানোর কেন্দ্রগুলো চালাতো।

https://foreignpolicy.com/2020/01/15/radical-islamists-are-still-a-threat-behind-bars/

https://www.dailymail.co.uk/news/article-7820353/Extremists-holding-Sharia-law-trials-prisoners-inside-British-jails-former-inmate-claims.html

https://journals.sagepub.com/doi/full/10.1177/1477370819828946

https://ctc.usma.edu/the-danger-of-prison-radicalization-in-the-west/

‘দ্য টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ব্রিটেনের কারাগারগুলোর মোট বন্দীদের ১৬% মুসলমানরা, যদিও তারা মূল জনসংখ্যার মাত্র ৫%। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কারাগারগুলোর বন্দীদের ৯% মুসলমানরা, যদিও তারা মার্কিন জনসংখ্যার মাত্র ১%।

https://www.npr.org/2019/07/25/745226402/muslims-over-represented-in-state-prisons-report-finds

https://onlinelibrary.wiley.com/doi/pdf/10.1111/j.1745-9133.2009.00574.x

https://poseidon01.ssrn.com/delivery.php?ID=537100100007025094084025106030077000103051006034026016025071107086085015000004070074121007006025119120053086113001088079110065112050061043086007080113080122078084104049034023095031006019019065026072123068112064113086104089024102003096121102029119006119&EXT=pdf&INDEX=TRUE

আমেরিকা বা ব্রিটেনের নিজেদের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যকার জিহাদি উগ্রতাকে মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চীনের প্রতি আঙুল তোলার সামান্যতম অধিকারও নেই। অন্যদিকে চীনের সরকার পশ্চিমাদের মতো জঙ্গী সমস্যা মেটাতে লোকেদের আটক করে রাখার পদ্ধতি অবলম্বন করেনি। যদি এক মিলিয়ন চীনা মুসলিমকেও (কুমিরের কান্না দেখানোদের দাবী অনুযায়ী) কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে নিয়ে যাওয়া হতো, তাহলেও চীনের মোট মুসলমানদের সংখ্যার অনুপাতে তাদের সংখ্যা তুচ্ছ হতো এবং ব্রিটেন কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী মুসলমানদের তুলনায় এই ফিগার অনেক কম। এক মিলিয়ন মানুষ ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার চীনের মাত্র ০.১% এবং মুসলমানরা চীনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩% (প্রায় ৪৫ মিলিয়ন)। চীনের এসব কেন্দ্রগুলো ব্রিটিশ কারাগারগুলোর মতো একই উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি, চীনা সরকার মূলত আটককৃতদের সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করে যাতে মুক্তি পেলে তারা স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারে। শিবিরগুলোর উদ্দেশ্য কেবলমাত্র কারিগরি এবং আধুনিক জীবনপ্রণালী সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে জিহাদি কার্যক্রমের দিকে চীনের মুসলমান অধিবাসীদের আকর্ষণ কমানো। চীন সরকার নাগরিকদের সুবিধার্থে জিনজিয়াংয়ের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে।

http://www.xinhuanet.com/english/2018-10/16/c_137535821.htm

https://news.cgtn.com/news/2019-12-09/China-holds-press-conference-on-Xinjiang-s-stability-and-development--MhbJs89TwI/index.html

https://www.globaltimes.cn/content/1172759.shtml

http://www.xinhuanet.com/english/2019-12/10/c_138618363.htm

বেশ কয়েকটি কারণে জিনজিয়াংয়ের উপর সাম্রাজ্যবাদীদের দৃষ্টি রয়েছে, যার মধ্যে প্রথমটি হলো চীনকে অস্থিতিশীল করা। তাছাড়া জিনজিয়াং অন্যান্য কারণেও সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে আকর্ষণীয়-

#এটি চীনের বৃহত্তম গ্যাস উৎপাদনকারী অঞ্চল এবং এখানে বিপুল পরিমাণে তেল ও অন্যান্য খনিজ মজুদ রয়েছে।

#এটি চীনের মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপীয় বাজারের প্রবেশদ্বার।

#এটি গত চার দশক ধরে সিআইএ এবং পাকিস্তানের আইএসআই দ্বারা চীনসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ভাড়াটে জঙ্গী নিয়োগের ভূমি ছিল। বহু ধর্মান্ধ উইঘুর ইসলামিক স্টেট এবং আল কায়েদার সাথে কাজ করেছে, সংগঠনগুলোর অনেক সদস্যই পচে মরেছে গুয়ান্তানামো কারাগারে, কারণ এরা নিজেদের প্রভুদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিল আফগানিস্তানের তালেবানদের মতো। ২০১৩ সালের শুরুতে হাজার হাজার উইঘুরকে চরমপন্থী উইঘুর গ্রূপ “তুর্কিস্তান ইসলামী দল” এর কাছে প্রশিক্ষণের জন্য সিরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং বেশ কয়েকটি যুদ্ধে এরা আল কায়েদা এবং আল নুসরা’র মতো সন্ত্রাসবাদী দলগুলোর পক্ষে লড়াই করেছিল।

https://en.wikipedia.org/wiki/Al-Nusra_Front

https://www.files.ethz.ch/isn/191076/353_Lin.pdf

https://newlinesinstitute.org/uyghurs/uighur-jihadists-in-syria/\

https://npasyria.com/en/54093/

https://en.wikipedia.org/wiki/Turkistan_Islamic_Party

জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যারা সাম্রাজ্যবাদীদের প্রোপাগান্ডাগুলো তোতাপাখির মতো আউড়ে যাচ্ছে চীন প্রতিনিয়ত তাদের এই অঞ্চলটি দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। অবশ্য ভাঙা রেকর্ড বাজানোদের বেশিরভাগই এসব প্রোপাগান্ডা ছড়ায় মূলত সাম্রাজ্যবাদীদের খুশি করার জন্য, কারণ এরা নিজেরাও জানে আসল সত্যিটা কি। প্রচুর সংখ্যক লোকও চীনের এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে এবং নিজের চোখে প্রকৃত অবস্থা দেখার জন্য এই অঞ্চল ভ্রমণ করে শেষে এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে সেখানে কোনও মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না।

https://www.workers.org/2019/12/44963/amp/

শীর্ষস্থানীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবতার বিশাল অংশের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য অপরাধ করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পরের দশকগুলোতে আমেরিকানরা কোরিয়া, ভিয়েতনাম, যুগোস্লাভিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক এবং লিবিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে। হত্যা করেছে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ, তাদের অবকাঠামো এবং অর্থনীতিও ধ্বংস করেছে সমান তালে। তাছাড়া তারা সিরিয়া, ইরান, ভেনিজুয়েলা, কিউবা ও নিকারাগুয়ার মতো দেশগুলোর বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে এবং তারা আর্থিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সেসব দেশকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যারা তাদের পা চাটতে অস্বীকার করে।

https://en.wikipedia.org/wiki/Proxy_war

মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কয়েদী অবস্থান করে মার্কিন কারাগারগুলোতে। এছাড়া দেশটি বিশ্বজুড়ে ১০০টি কারাগার চালু রেখেছে যেখানে অবৈধভাবে বন্দী রয়েছে অসংখ্য নিরীহ মানুষ। এটিই সেই দেশ যা আবু গারিব এবং গুয়ান্তানামো কারাগারের নির্যাতনের কক্ষগুলোর মাধ্যমে কুখ্যাতি অর্জন করেছে সারা বিশ্বে। অন্যান্য দেশের দিকে আঙুল তোলার পরিবর্তে এবং স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের রক্ষকের ভং ধরার আগে মার্কিনীদের লজ্জায় নিজেদের মুখ লুকিয়ে রাখা উচিত। যদিও সাম্রাজ্যবাদীদের মাঝে লজ্জা বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই

 

 
 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Comments

ভালো বিশ্লেষণ। ধন্যবাদ!

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]