জয়া কসমোদেমিয়ান্সকা

 

১৯২৩ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর জয়া আন্তোলিইয়েভনা কসমোদেমিয়ান্সকা টমবভ প্রদেশের কিরসানভোস্কি জেলার ওসিনো-গাই নামে ছোট্টো এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

https://russiapedia.rt.com/prominent-russians/history-and-mythology/zoya-kosmodemyanskaya/

ছাত্রজীবনে পুশকিন, গোগল, তলস্তয়, বেলিনস্কি, তুর্গেনেভ, চেরনশেভস্কী, হারজেন, নেক্রাশোভদের লেখা পড়ে ফেলেছিলেন। ভালোবাসতেন সংগীত, চাইকোভস্কি ও বেথোফেন ছিলো তার প্রিয়। স্কুলে পড়াকালীন ক্লাসের তরুণ কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক নির্বাচিত হন।

https://en.wikipedia.org/wiki/Komsomol

১৯৪১ সালে জয়ার দশম শ্রেণির পরীক্ষা শেষ হতে না হতে শুরু হয় সংকটময় পরিস্থিতি। নাৎসিদের অনুপ্রবেশে দখল হচ্ছে সোভিয়েতের বিভিন্ন অংশ। জয়া যোগ দিতে গেলেন লাল ফৌজে। সৈন্যদলের অধিনায়কের জয়াকে জিজ্ঞেস করা অনেকগুলো প্রশ্নের একটির উত্তর ছিলো এমন-

“যদি জার্মানরা তোমাকে ধরে ফেলে, অত্যাচার করে?”
“আমি আমার মুখ বন্ধ করে রাখবো।”

পরবর্তীতে শত্রূপক্ষের পাশবিক নির্যাতনে শুধুমাত্র ছদ্মনাম ‘তানিয়া’ ছাড়া আর কোনো তথ্য নাৎসিরা বের করতে পারেনি জয়ার কাছ থেকে। ১৯৪১ সালের ২২শে জুন নাৎসি বাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে, নভেম্বরের শেষের দিকে তারা লেনিনগ্রাদের দখল নিয়ে ফেলে। প্রতিরোধ কৌশল হিসেবে সেসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন বেছে নিচ্ছিল স্বেচ্ছাসেবী, যাদের কাজ থাকতো দখলকৃত মাটিতে অবস্থানরত নাৎসিদের চোরাগোপ্তা হামলা করে যতটা সম্ভব ক্ষয়-ক্ষতি করা। ১৯৪১ এর ৩১ অক্টোবর জয়া ও আরও ২ হাজার তরুণ কমিউনিস্ট স্বেচ্ছাসেবী যোগ দেয় ‘গেরিলা ট্রুপ অফ দ্য ৯৯০৩ স্টাফ অফ দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ এ। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে পাঠানো হয় ভলোকোলামস্কে, সেখানে জয়া ও তার দল রাস্তায় মাইন পুঁতে রাখতো। স্তালিনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরে বিভিন্ন শহর ও গ্রামে নাৎসি সৈন্যদের অবস্থানের বিঘ্ন ঘটাতে দলটি এক সপ্তাহের মধ্যে পেট্রিশ্চেভসহ দশটির মতো স্থানে অগ্নিসংযোগ ঘটাতে সক্ষম হয়। ২৭ শে নভেম্বর ক্রেইনেভ, ভ্যাসিলি ক্লুবকোভ এবং জয়া শত্রূদের অবস্থানরত তিনটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এরপর তাদের আবার যেখানে দেখা হওয়ার কথা সেখানে বাকিদের জন্য অপেক্ষা না করে ক্রেইনেভ পালিয়ে যায়, ক্লুবকোভ নাৎসি সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ে আর একা জয়া পেট্রিশ্চেভে গিয়ে অগ্নিসংযোগের সিদ্ধান্ত নেন। পরদিন সন্ধ্যায় গোলাঘরে আগুন দেয়ার সময় সেটির মালিক নাৎসিদের অনুগত রাজাকার সভিরিডভের হাতে ধরা পড়ে যান জয়া। নাৎসিরা এক বোতল ভদকা দিয়ে পুরষ্কৃত করে এই বিশ্বাসঘাতককে। পরবর্তীতে এই কৃতকার্যের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। নাৎসিরা এই ১৮ বছরের কিশোরীকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়, তারপর শুরু হয় বর্ণনাতীত নির্যাতন। তাকে বিবস্ত্র করে উপর্যুপরি চাবুক মারা হতে থাকে। এরপর জয়াকে তীব্র শীতে শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরিহিত অবস্থায় খালি পায়ে তুষারাবৃত রাস্তায় ঘোরানো হয়। শীতবস্ত্র পরিহিত হয়েও তার সাথের প্রহরী তীব্র শীতে টিকতে না পেরে তাকে এক অধিবাসীর ঘরে আটকে রাখে। পরদিন সকালে প্রস্তুত হয় ফাঁসির মঞ্চ। জয়ার বুকে বোর্ড ঝুলিয়ে লিখে দেয়া হয় ‘অগ্নিসংযোগকারী’। ফাঁসির দড়ি গলায় রেখে তিনি চিৎকার করে বলতে লাগলেন-

“কমরেডবৃন্দ! তোমরা এত বিমর্ষ কেন? মনোবল জাগিয়ে তোলো। রণক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ো। বিমর্ষতা তোমাদের জন্য নয়। জার্মানদের জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও, জার্মানদের মৃত্যুর মুখে নিক্ষেপ করো

সামনে থাকা এক নাৎসি সৈন্য এসে আঘাত করলো তাকে। ঝটকা দিয়ে তাকে সরিয়ে দিয়ে জোয়ে আরো বলে যেতে লাগলেন-

“কমরেডবৃন্দ! মরতে আমার ভয় নেই। তোমাদের জন্য প্রাণদান করা যে সুখের…”

নাৎসি বাহিনী ফাঁসির দড়ি পরিহিত অবস্থায় জয়ার ছবি তুললো কিছু।

“তোমরা এখন আমাকে ফাঁসি দিচ্ছো। কিন্তু আমরা বিশ কোটি মানুষ। সকলকে তোমরা ফাঁসিতে লটকাতে পারবে না। আমরা প্রতিশোধ নেবোই…”

http://reverent.org/zoya/martyrdom.html

এরপর তার পায়ের নিচের বাক্স সরিয়ে দেয়া হয়। নাৎসি বাহিনী তার মৃতদেহ ফাঁসিকাষ্ঠে একমাস ঝুলিয়ে রেখেছিলো, প্রতিদিন সেদিক দিয়ে নাৎসি বাহিনী চলাচলের সময় যতরকম অবজ্ঞা প্রকাশ করা সম্ভব তা করে যেতো। একদিন মদ্যপ অবস্থায় এক নাৎসি সৈন্য জোয়ের মরদেহের কাপড় ছিঁড়ে ছুরি দিয়ে বুক ছিন্নভিন্ন করে ফেলে।

https://ww2today.com/29th-november-1941-the-torture-and-death-of-zoya-kosmodemyanskaya

পরদিন জার্মানরা তার মরদেহ নামিয়ে গ্রামের পাশে কবর দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন মুক্ত হলে তাকে মস্কোর নভদিয়েভশ্চিয়ে সেমেট্রিতে সমাহিত করা হয়।

https://iconicphotos.wordpress.com/2010/12/05/zoya-kosmodemyanskaya/

পিইটর লিডভ ‘তানিয়া’ নামে প্রাভদা কাগজে আর্টিকেল প্রকাশ করলে তার কথা সমগ্র সোভিয়েত ইউনিয়নের মানুষ জানতে পারে। তার ১৭ বছর বয়সী ভাই আলেক্সান্ডার বোনের ব্যাপারে জেনে যোগ দেয় যুদ্ধে। ১৯৪২ সালের ফেব্রূয়ারিতে জয়াকে মরণোত্তর ভূষিত করা হয় ‘হিরো অফ দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন’ এ। অসংখ্য স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে তাকে নিয়ে। তার জন্মস্থান, পঠিত স্কুল, পেট্রিশ্চেভসহ বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে যাদুঘর। তার নামে নামকরণ হয়েছে অসংখ্য রাস্তা, গ্রাম, স্কুল, ইলেকট্রিক ট্রেন, জাহাজ, পর্বত-চূড়া এমনকি গ্রহাণু পর্যন্ত! তাকে নিয়ে সাহিত্য, গান, ছবির সংখ্যা অসংখ্য; তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র।

https://english.pravda.ru/history/109252-zoya_kosmodemyanskaya/

 

 

 

 

 

 

 

 

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]