লুদমিলা পাভলিচেঙ্কো
১৯৪১ সালে জার্মানরা যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে আগ্রাসন শুরু করে, তখন কিয়েভ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়ছিলেন লুডমিলা।
https://www.businessinsider.com/lyudmila-pavlichenko-female-sniper
জার্মানদের আক্রমণে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেনাবাহিনীর ডাকে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলে সোভিয়েত তরুণরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে থাকে। লুডমিলা পাভলিচেঙ্কো যোগ দিতে আবেদন করলেন স্কুলজীবনে শার্প শুটিংয়ের সার্টিফিকেটসহ। সোভিয়েত মিলিটারির ২৫তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনে শুটার হিসেবে সাময়িক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয় তাকে। ট্রেনিং নেয়ার পর্যাপ্ত সময় ছিলো না। নিয়োগের পরই তাকে চলে যেতে যেতে হয় রণক্ষেত্রে। ১৯৪১ সালের আগস্ট মাসে তাকে এবং তার দলকে বেলায়েভকা নামক গ্রামের কাছে এক পাহাড়ে লুকিয়ে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। রণক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় লুডমিলার সাথে আরো একজন দক্ষ স্নাইপারকে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু সেই স্নাইপার ঠিকঠাক পজিশন নেয়ার আগেই জার্মান বুলেট কেড়ে নেয় তার প্রাণ।
https://www.smithsonianmag.com/history/eleanor-roosevelt-and-the-soviet-sniper-23585278/
এই ঘটনার প র তিনি প্রতিজ্ঞা করেন মাতৃভূমিকে শত্রূমুক্ত করার আগে ঘরে ফিরবেন না। ৩.৫ এক্স টেলিস্কোপিক লেন্স আর SVT-40 সেমি অটোমেটিক রাইফেলে প্রথম যাত্রায় কেড়ে নেন দুই জার্মান সেনার প্রাণ।
http://soviet-awards.com/digest/pavlichenko/pavlichenko1.htm
টেলিস্কোপিক লেন্সে চোখ লাগিয়ে একের পর এক জার্মান সেনা বধ করে তিনি হয়ে উঠেন সোভিয়েতের অন্যতম জাতীয় বীর। লুডমিলার পরবর্তী রণক্ষেত্র ছিলো ওডেসা শহর। যুদ্ধরত অবস্থায় প্রথম দুই মাসে ১৮৭ জন বিপক্ষ সেনাকে মেরে ফেলেন তিনি।
এরপর তাকে লাল ফৌজের ২৫ তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন থেকে সেকেন্ড কোম্পানি অফ স্নাইপার প্লাটুনের সিনিয়র সার্জেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সেকেন্ডে ২,৮০০ ফুট গতিতে বুলেট বের হওয়া Moisin-Nagant রাইফেল নিয়ে এই নারী নেতৃত্ব দিয়েছেন পুরো স্নাইপার বাহিনীকে।
https://en.wikipedia.org/wiki/Mosin%E2%80%93Nagant
এরপর লাল ফৌজে দলে দলে নারীরা স্নাইপার হিসেবে ট্রেনিং নেয়া শুরু করলো। পুরো দেশ জুড়ে প্রায় ২,০০০ নারী স্নাইপার তাকে দেখে যোগ দিয়েছিলো রেড আর্মিতে। শত্রূশিবিরের মাঝে কাঁপন বইয়ে দিতে ক্যাম্প থেকে ৬০০-১,০০০ ফুট এগিয়ে থাকতেন লুডমিলা। খাবার ফুরিয়ে গেলেও দিনের পর দিন নিশ্চূপ বসে থাকতেন শ্ত্রূর অপেক্ষায়। নির্ঘুম রাতে বন্দুকের সাথে থাকা টেলিস্কোপিক লেন্সে চোখ লাগিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন শত্রূপক্ষের সেনাদের উপর। ১৯৪২ সালের জুনে তার খুব কাছে মর্টার শেলের বিস্ফোরণ হয়। ক্যাম্প থেকে অনেক দূরে বন্ধুহীন অবস্থায় তিনি গুরুতর আহত হন। চতুর্থবারের মতো মৃত্যু হানা দিয়ে গেলো ৩০৯ জন জার্মান সেনার মৃত্যুদূতের কাছে। দল থেকে বিচ্ছিন্ন স্নাইপারকে খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হয়েছে তার সহযোদ্ধাদের। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হলো। সুস্থ হয়ে তিনি আবারও ফিরতে চাইলেন রণক্ষেত্রে। এরপর তাকে অর্ডার অফ লেনিনে ভূষিত করে রেড আর্মির মেজর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
https://en.wikipedia.org/wiki/Order_of_Lenin
তাকে লাল ফৌজের স্নাইপিং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। একদিকে যখন জার্মানরা রেডিও বার্তায় লুডমিলাকে ৩০৯ টুকরো করে কাটার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলো, লুডমিলা তখন মুচকি হেসে বলেছিলেন “তারা আমার স্কোরের হিসাব খুব ভালো করেই রেখেছে তাহলে”। যুদ্ধের পরে লুডমিলা কিয়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশোনা শেষ করতে যান। ইতিহাসে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষে লুডমিলা সোভিয়েত নৌবাহিনীতে গবেষক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি স্নাইপিং প্রশিক্ষক হিসেবে সেনাবাহিনীতে তার দায়িত্ব বহাল ছিলো। ১৯৪২ সালে প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন রুজভেল্টের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে প্রথম সোভিয়েত নাগরিক হিসেবে হোয়াইট হাউজে যান লুডমিলা।
http://soviet-awards.com/digest/pavlichenko/pavlichenko2.htm
তৎকালীন ফার্স্ট লেডি ইলিনর রুজভেল্ট তাকে সাথে নিয়ে আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশে ঘুরে সাধারণ আমেরিকান নারীদের মাঝে তার যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। লুডমিলা ফার্স্ট লেডির ডাকে সাড়া দিয়ে তার যাত্রা শুরু করেন। একবার তাকে এক সাংবাদিক তার ভারি ইউনিফর্ম আর তাতে ঝোলানো অনেক মেডেলের ব্যাপারে কটাক্ষ করে প্রশ্ন করেন। নারীদের পোশাকের প্রতি আমেরিকান সাধারণ মানুষ আর গণমাধ্যমের এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে টাইম ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন-
“I wear my uniform with honor. It has the Order of Lenin on it. It has been covered with blood in battle. It is plain to see that with American women what is important is whether they wear silk underwear under their uniforms. What the uniform stands for, they have yet to learn.”
Comments