স্তালিনের শুদ্ধি অভিযান

 

 


 


১৯৩০ এর দশকে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির শুদ্ধি অভিযান বুর্জোয়াদের কাছে অতি প্রিয় বিষয়। বুর্জোয়া গণমাধ্যমগুলোতে এই ইস্যুটি বার বার উত্থাপিত হয়েছে যা জনগণকে এই রাজনৈতিক বিচার এবং সেই সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে পুরোপুরি ভুল এবং মিথ্যা বিবরণ সরবরাহ করেছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো কুৎসা রটনার মাধ্যমে সমাজতন্ত্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে কলুষিত করা যাতে লোকেরা পুঁজিবাদকে চিরন্তন ব্যবস্থা হিসাবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। ১৯৩০ এর দশকে প্রথম এবং দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছিল এবং কৃষিকাজের সমবায়করণ হয়েছিল। ১৯২৯ সালের জাতীয় আয় ২৯ মিলিয়ন রুবল থেকে বেড়ে ১৯৩৮ সালের মধ্যে ১০৫ মিলিয়নে পৌঁছে গিয়েছিল। ১৯৩০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে উৎপাদন অভূতপূর্ব হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৩০ এর শুরুতে শিল্প উৎপাদনের মোট মূল্যমান ছিল ২১ মিলিয়ন রুবল। আট বছর পর এটি বেড়েছে দাঁড়ায় ১০০ মিলিয়ন রুবলে (উভয় পরিসংখ্যান ১৯২৬-২৭ সালের মুদ্রামানের ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে)। আট বছরে দেশের শিল্প উৎপাদন প্রায় পাঁচগুণ বেড়েছিল। ১৯৩০ এর শুরুতে ১১৮ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরণের ফসল বপন করা হয়েছিল। ১৯৩৮ সালের মধ্যে যা দাঁড়ায় ১৩৬.৯ মিলিয়ন হেক্টরে। ১৯৩০ এর শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ৩৪,৯০০টি ট্রাক্টর ছিল। আর ১৯৩৮ সালের মধ্যে এটি পৌঁছে যায় ৪,৪৩,৫০০টি ট্রাক্টরের বিশাল সংখ্যায়। আট বছরে ট্রাক্টরের সংখ্যা প্রায় চৌদ্দগুণ বেড়েছিল। একই সময়ে সমবায়ী কৃষকদের সংখ্যা ১,৭০০ থেকে ১,৫৩,৫০০ এবং সকল ধরনের কৃষকদের সংখ্যা ৪,৩০০ থেকে বেড়ে ১৩০,৮০০ হয়। ১৯৩০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে  সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে অভূতপূর্ব পরিমাণে। ১৯২৯ সালে সমগ্র সোভিয়েত ইউনিয়নে স্কুল শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ মিলিয়ন। ১৯৩৮ সালের মধ্যে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৪ মিলিয়নে। আর অন্যান্য পর্যায়ের শিক্ষার্থী মিলিয়ে সংখ্যাটা ছিল ৩৭ মিলিয়নের চেয়ে বেশি। ১৯৩০ এর দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরক্ষরতার হার ছিল ৩৩% (১৯১৩ সালে এই হার ছিল ৬৭%)। আর ১৯৩৮ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নে নিরক্ষরতা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা হয়েছিল। এই সময়কালে উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়ে ২,০৭,০০০ থেকে ৬,০১,০০০ এ পৌঁছে যায়। ১৯৩৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে লাইব্রেরির সংখ্যা ছিল ৪০,০০০ এবং ১৯৩৮ সালের মধ্যে এই সংখ্যা পৌঁছে যায় ৭০,০০০ এ। এই লাইব্রেরিগুলোতে ১৯৩৩ সালে বইয়ের সংখ্যা ছিল ৮৬ মিলিয়ন, ১৯৩৮ সালের মধ্যে এই সংখ্যা পৌঁছে যায় ১২৬ মিলিয়নে। ১৯৩০ দশক জুড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমস্ত নাগরিকের মধ্যে সমতা স্থাপনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিল অনেকগুলো অসাধারণ পদক্ষেপ নিয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সোভিয়েতের সকল জাতির নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রচুর পরিমাণে পাঠ্যপুস্তক এবং অন্যান্য শিক্ষামূলক উপকরণের মাধ্যমে সোভিয়েতের প্রতিটা জাতির কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়া হয়েছিল, এগুলোর মধ্যে এমনও অনেক ভাষা ছিল যেগুলোর লিখিত রূপ ছিল না। এসময় অসংখ্য সাহিত্যিক কর্ম প্রথমবারের মতো সোভিয়েতের এসব জাতিগুলোর নিজস্ব ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৩০ এর দশকে কয়েক মিলিয়ন নতুন সদস্য সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টিতে প্রবেশ করেছিল এবং উৎপাদন ও সামাজিক বিকাশের সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। প্রচুর সংখ্যক সদস্যের আগমনের খারাপ দিকও ছিল। পুরানো ও নতুন সদস্যদের সামাজিক কাজের রেকর্ডগুলো মূল্যায়ন করা এবং যাদের পারফরম্যান্স কমিউনিস্টদের প্রয়োজনের সাথে মেলে না তাদের বহিষ্কার করা এজন্য পার্টির জন্য জরুরী ছিল। এই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে বাহির থেকে হুমকি বৃদ্ধি পেয়েছিল। অবরোধ, নাশকতা এবং পুঁজিবাদী দেশগুলোর আগ্রাসনের হুমকির পাশাপাশি এক নতুন শত্রূ উদ্ভূত হয়েছিল যার লক্ষ্য ছিল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধ্বংস করা। ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে কমিউনিজমকে ধ্বংস করা, প্রাচ্যে নতুন উপনিবেশ বানানো এবং সেখানকার মানুষকে জার্মান অর্থনীতিতে ক্রীতদাস হিসাবে ব্যবহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাৎসীরা জার্মানিতে ক্ষমতায় এসেছিল। ১৯৩০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির উপর সোভিয়েত ইউনিয়নের জয়ের ভিত্তি ছিল। উৎপাদনে সাফল্য অর্জনের জন্য এবং দেশের প্রতিরক্ষা মজবুত করতে কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে শুদ্ধাচার অপরিহার্য ছিল। বুর্জোয়া ইতিহাসবিদরা খুব কমই ব্যাপারটি উল্লেখ করেছে। বুর্জোয়াদের কাহিনী অনুসারে, এই শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে নাকি যারা এই শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করেছিল তাদের নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল! এর মাধ্যমে নাকি ক্ষমতালোভী আমলাতন্ত্র প্রগতিশীল বিরোধীদের হত্যা করেছিল! এসব বুর্জোয়া ইতিহাসবিদদের মতে এরাই নাকি ছিল আসল কমিউনিস্ট! বুর্জোয়াদের মতে, স্তালিনের ক্ষমতা সুরক্ষিত করতে সমস্ত প্রতিপক্ষ এবং পুরানো বলশেভিকদের হত্যা করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছিল! গর্বাচেভ সোভিয়েত আর্কাইভগুলো জনসম্মুখে নিয়ে আসার অনেক আগেই ১৯৪৫ সালে ইউরোপ ও আমেরিকার হাতে বিশাল আর্কাইভ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন নাৎসি জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেছিল, তখন তারা মস্কো এবং লেনিনগ্রাদের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। ১৯৪১ সালের প্রথমদিকে জার্মান সেনারা স্মোলেনস্ক শহর দখল করে নিয়েছিল। স্মোলেনস্ক শহরে জার্মানরা পশ্চিমাঞ্চলের আর্কাইভগুলো খুঁজে পেলো, যেগুলো সোভিয়েত সেনারা পশ্চাদপসরণ করার সময় ধ্বংস করেনি।

https://en.wikipedia.org/wiki/Smolensk_Archive

আর্কাইভগুলো ঐ বছরই জার্মানিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধের শেষে স্মোলেনস্ক আর্কাইভ মার্কিনীদের দখলে থাকা জার্মানির একটি অঞ্চলে পৌঁছে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন মিত্রশক্তিতে থাকার পরও মার্কিন জেনারেলরা পুঁজিবাদীদের স্বার্থে আর্কাইভগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিয়েছিল। স্মোলেনস্ক আর্কাইভগুলো এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আর্কাইভগুলোতে পাওয়া যাবে।

https://www.archives.gov/

স্মোলেনস্ক আর্কাইভগুলো বিশাল আকারের। পশ্চিমাঞ্চলের কমিউনিস্ট পার্টির প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম সেখানে লিপিবদ্ধ ছিল- সদস্যপদ রেজিস্টার, সকল স্তরের রাজনৈতিক নির্দেশনা, বিভিন্ন বৈঠকের আলোচনা ও বিতর্ক, কৃষি নীতি, শিল্প কৌশল, শ্রমিকদের বার্ষিক ছুটির পরিকল্পনা প্রভৃতি আরও অনেক কিছু। পশ্চিমাঞ্চলে পার্টির শুদ্ধি অভিযান সম্পর্কিত নথিগুলোও সেখানে ছিল।

https://www.amazon.com/Records-Smolensk-Oblast-All-Union-Communist/dp/B0000E9ZDH

১৯৮৫ সাল অবধি কোনও বই প্রকাশিত হয়নি যা স্মোলেনস্ক আর্কাইভ সঠিকভাবে যাচাইয়ের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। বইটির নাম ছিল "Origins of the Great Purges - The Soviet Communist Party Reconsidered” এবং বইটি লিখেছিলেন আমেরিকান ইতিহাসের অধ্যাপক জে. আর্চ গেটি।

https://theirishmarxistleninist.files.wordpress.com/2018/05/origins-of-the-great-purges1.pdf

সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস অধ্যয়নের জন্য পরিসংখ্যান এবং কিছু ডকুমেন্টের সমন্বয়ে লিখিত এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। গেটি নিজেই একজন বুর্জোয়া লেখক হওয়ার কারণে তার সোভিয়েত ইউনিয়নে শ্রেণি সংগ্রামের পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা ছিল সীমিত। পরবর্তী বই “The Road to Terror” এ তার অপরিপক্কতার প্রমাণ মেলে যেখানে দেখানোর চেষ্টা করা হয় যে, ১৯৩০ এর দশকের লড়াই ছিল বলশেভিকদের নিজেদের মধ্যকার ক্ষমতা নিয়ে কামড়াকামড়ি!! অথচ ১৯৩০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে সম্পাদিত মানব জাতির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপারে একটা শব্দও লেখা হয়নি বইটিতে।

https://theirishmarxistleninist.files.wordpress.com/2018/05/the-road-to-terror-stalin-and-the-self-destruction-of-the-bolsheviks-1932-19391.pdf

তিরিশের দশকের বেশিরভাগ সময় জুড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন নাৎসি জার্মানিআক্রমণের হুমকির মুখে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত করতে লড়াই করে যাচ্ছিলো। যদি কেউ এই ফ্যাক্টরটিকে যথাযথ গুরুত্ব না দেয়, তবে অনিবার্যভাবেই ভুল উপসংহারে পৌঁছাবে। বলশেভিকরা যতটা সম্ভব দেশকে উন্নত করা এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত করার পরিবর্তে যদি আসলেই একে অপরকে নির্মূল করার কাজে ব্যস্ত থাকতো তাহলে নাৎসিরা যুদ্ধে জয়ী হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং স্লাভ জনগণকে গায়েব করে দিতো দুনিয়ার বুক থেকে। আর্চ গেটি অন্ততপক্ষে তার এক সহকর্মী আমেরিকান তিহাসিক মার্লে ফেইনসডের বিরোধিতা করেছেন, যিনি স্মোলেনস্ক আর্কাইভ নিয়ে গবেষণা করার পরও তার বইয়ে দাবী করেছিলেন-

“The assassination of Kirov in December 1934 touched off a new round of almost continuous purges which spread out in ever-widening circles and rose to a smashing crescendo in the virtual destruction of the oblast Party leadership in 1937”

https://en.wikipedia.org/wiki/Merle_Fainsod

বিপ্লবের পর যখন কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতাসীন হয়, তখন পার্টি নেতৃত্ব এবং লেনিন উপলব্ধি করেন যে অনেক অবাঞ্ছিত সদস্য পার্টি এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করেছিল। এই বদমাইশরা পার্টির সদস্যপদ ব্যবহার করে উঁচু ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিল। ১৯১৯ সালের ডিসেম্বরে অষ্টম পার্টি সম্মেলনে লেনিন এই সমস্যাটি সামনে নিয়ে আসেন। দলের সদস্যদের কর্মকান্ড মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেসময়। লেনিনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পার্টি দলের সমস্ত সদস্যদের পুন: নিবন্ধনের ব্যবস্থা করেছিল। পুন:নিবন্ধনকৃত প্রতিটি সদস্যকে তার কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হয়েছিল, যারা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে বিবেচিত হয়েছিল তাদের ছাটাই করা হয়েছিল। এটি ছিল পার্টির প্রথম অভ্যন্তরীণ সংশোধন পদক্ষেপ। এই পদ্ধতিতে সুবিধাবাদীদের বের করে দিয়ে পার্টিকে শক্তিশালী করা হয়েছিল। এসব বদমাইশদের ছাটাই করার কারণ ছিল দুর্নীতি, নিষ্ক্রিয়তা, পার্টির শৃঙ্খলা লঙ্ঘন, অধিক মদ্যপান, নানা ধরনের অপরাধ এবং ইহুদিবাদ বিরোধীতা।

https://en.wikipedia.org/wiki/Antisemitism

বুর্জোয়া এবং কুলাক যারা নিজেদের ব্যাকগ্রাউন্ড লুকিয়েছিল তাদের জন্য বহিষ্কার নিশ্চিত ছিল, কিন্তু যারা পার্টিতে যোগ দেয়ার পর তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড স্বীকার করেছিল তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সেসময়। জার এর প্রাক্তন অফিসার যারা তাদের অতীত লুকিয়েছিল, তাদেরও বহিষ্কার করা হয়েছিল। যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল তারা যেন সবাই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনে পাল্টা আপিল করতে পারে সেই ব্যবস্থা পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে রাখা হয়েছিল এবং তাদের কেইসগুলো পরে উচ্চতর স্তরে পর্যালোচনা করা হতো।

https://en.wikipedia.org/wiki/Central_Control_Commission_of_the_Communist_Party_of_the_Soviet_Union

এদের বহিষ্কারের পর পুনরায় অনেক সদস্যকে ভর্তি করা হয়েছিল। শত শত সদস্যের সাধারণ সভাগুলোয় নেয়া সিদ্ধান্তগুলো পার্টির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তগুলোর চেয়েও কঠোর ছিল। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি তৃণমূল স্তরের সদস্যদের দুর্নীতিবাজ কর্মী এবং তাদের সহযোগীদের দমন করার লক্ষ্যে কথা বলতে উৎসাহ দিতো। এটি ছিল অসম্ভব কঠিন একটি কাজ। দুর্নীতিবাজ আমলারা সমালোচনা এবং বেগতিক পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য কয়েক হাজার কৌশল জানতো। প্রথম পর্যায়ে বহিষ্কৃত বেশিরভাগই ছিল সাধারণ সদস্য যাদের অধিকাংশই পার্টি সচিবদের আনা নিষ্ক্রিয়তা, রাজনৈতিক অজ্ঞতা কিংবা অধিক মদ্যপানের অভিযোগের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। ১৯১৯ সালের পুন: নিবন্ধনের পর লেনিন এবং পার্টির নেতৃত্ব দেখলো যে পার্টিতে এখনও যথেষ্ট ত্রূটি রয়ে গেছে। পুনরায় নিবন্ধনকরণের পরও মূল লক্ষ্য তখনো অর্জিত হয়নি। শুধুমাত্র শ্রমিক এবং নির্ভরযোগ্য অন্যান্য শ্রেণী থেকে সদস্য নেয়ার কথা থাকলেও বিপুল সংখ্যক নতুন সদস্য পার্টিতে ঢুকে পড়ে। ১৯২১, ১৯২৮ এবং ১৯২৯ সালে পুনরায় পার্টির অভ্যন্তরে শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়েছিল। ১৯২৯ সালে পার্টির ১.৫৩ মিলিয়ন সদস্য শুদ্ধি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। এদের মধ্যে প্রায় ১,৭০,০০০ বা ১১% সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তারা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনে আবেদন করলে ৩৭,০০০ সদস্যকে পুনরায় ভর্তি করা হয়েছিল (বহিষ্কারকারীদের মধ্যে ২২%)। স্মোলেনস্ক থেকে বহিষ্কৃতদের মধ্যে প্রায় ৪৩% সদস্যকে পুনরায় ভর্তি করা হয়েছিল। বিস্তারিত অনুসন্ধানে দেখা যায় বহিষ্কৃতদের বেশিরভাগই ছিল সাধারণ শ্রমিক শ্রেণির সদস্য, যারা দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে বহিষ্কৃত হয়েছিল। সেসময় তাদের জীবনমান উন্নয়নের ফ্যাক্টরটি বিবেচনা করা হয়নি দেখেই এই সদস্যদের দলীয় কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। বুর্জোয়ারা সবসময় অভিযোগ করে যে বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা পরবর্তীতে গুলাগ শ্রমিক শিবিরে হয় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে নয়তো পুরোপুরি নিখোঁজ হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা আমাদের অন্য কথা বলে। বহিষ্কৃতদের মধ্যে যারা কেবল চুরি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাত, ব্ল্যাকমেইল, নাশকতা কিংবা অনুরূপ ঘৃণ্য অপরাধ করেছে তাদের আদালতে বিচার হয়েছিল। অন্যদিকে বিভিন্ন অভিযোগে বহিষ্কৃত বাকিদের জীবন সোভিয়েত ইউনিয়নে যথারীতি চলতে থাকে স্বাভাবিকভাবেই। রবার্ট কনকুয়েস্ট যুদ্ধোত্তরকাল জুড়ে সমাজতন্ত্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কনকুয়েস্ট হলো ব্রিটিশদের সিক্রেট সার্ভিসে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বদমাইশ, যা কিনা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহত্তম গোয়েন্দা সংস্থা। কনকুয়েস্টকে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিষয়ে সর্বপ্রধান প্রোপাগান্ডা বিশেষজ্ঞে পরিণত করে এরা। ৫০ এর দশকের শেষের দিকে কনকুয়েস্ট হঠাৎ করে ব্রিটিশদের সিক্রেট সার্ভিসের কাজটা ছেড়ে দেয়। পরে আমরা শুনি সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে সিআইএ তার বই এবং লেখাগুলো প্রকাশ করছে! যেকেউ অনুমান করতে পারবে যে ব্রিটিশদের তুলনায় সিআইএ ভাল বেতনের প্রস্তাব দিয়েছিল এবং এজন্য সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসে। এছাড়া সিআইএ তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হিসেবে একটি শালীন ছদ্মবেশ সরবরাহ করেছিল। কনকুয়েস্টের বানানো গল্পগুলো সিআইএ কর্তৃক কয়েক দশক ধরে সারা বিশ্ব জুড়ে পুঁজিবাদী গণমাধ্যমের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং বহু লোক এগুলো সত্য বলে ধরে নিয়েছিল। কনকুয়েস্টের সর্বাধিক পরিচিত বই দ্য ”গ্রেট টেরর” ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয়, যা ত্রিশ এর দশক জুড়ে স্তালিনের শুদ্ধি অভিযান নিয়ে লেখা হয়েছিল এবং সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বুর্জোয়াদের অন্যতম প্রধান অস্ত্র ছিল বইটি। কনকুয়েস্টের ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসে কাজ করার সময়ে তৈরি আংশিক কিছু তথ্যও বইটিতে সংযুক্ত হয় এবং সোর্স হিসেবে দেখানো হয় নাৎসী সহযোগী, সোভিয়েত রাজাকার ও মার্কামারা সন্ত্রাসীদের!  


১৯৩০ এর দশকে পার্টির অভ্যন্তরে তিনটি শুদ্ধি কার্যক্রম চালানো হয়েছিল (১৯৩৩ সালে, ১৯৩৫ সালে এবং ১৯৩৭-৩৮ সালে)। ১৯৩৩ সালের প্রথম শুদ্ধি অভিযান সংঘটিত হয়েছিল যেসময় সমবায়ী কৃষকরা বিস্ময়কর গতিতে সমগ্র সোভিয়েত ইউনিয়ন জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং শিল্প উৎপাদনে সোভিয়েতরা অভূতপূর্ব ফলাফল অর্জন করেছিল। যারা সমাজতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে চেয়েছিল পার্টি তাদের সকলের জন্য দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল এবং ১৯৩০ এর দশকের প্রথম তিন বছরে হাজার হাজার নতুন সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। এই প্রচন্ড স্রোত দেখে পার্টি নেতৃত্ব দলের সকল নতুন সদস্যের মূল্যায়ন করা অপরিহার্য বলে মনে করে। তারা সুবিধাবাদী, দুর্নীতিবাজ আমলা, অপরাধী, ইহুদীবিরোধী, মদ্যপ এবং পার্টির শৃঙ্খলা লঙ্ঘনকারী সদস্যদের খুঁজে বের করেছিল। পার্টি নেতৃত্ব স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিল যে শুদ্ধি অভিযানটি বন্ধুসুলভ পরিবেশে কার্যকর করতে হবে এবং মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে অতি মাত্রায় নাক গলানো যাবে না। তদুপরি দলীয় নেতৃত্ব সাধারণ সদস্যদের স্থানীয় আমলাদের সমালোচনা করতে প্রকাশ্যে উৎসাহিত করেছিল এবং স্থানীয় নেতাদের তুলনামূলকভাবে কম সক্রিয় থাকা কিংবা রাজনৈতিক অজ্ঞতার কারণে এই সদস্যদের বহিষ্কার করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিল। এবার আর ১৯২৯ সালের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি পার্টি দেখতে চায়নি। সদস্যদের জীবনযাত্রার উন্নতির প্রতি মনোযোগ দেয়া হয়েছিল এবং পার্টির সদস্যদের রাজনৈতিক চিন্তাধারা পর্যাপ্ত পরিমাণে বিকাশ না হওয়া পর্যন্ত বা পার্টির কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ যথেষ্ট বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত তাদের পদমর্যাদা কমিয়ে প্রার্থী বা সহানুভূতিশীলদের কাতারে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সম্পূর্ণভাবে বহিষ্কার করার পদক্ষেপ যতদূর সম্ভব এড়িয়ে যাওয়া হতো। এই নির্দেশাবলী সত্ত্বেও ১৯৩৩ এর শুদ্ধি কার্যক্রম কেন্দ্রীয় কমিটির প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল নিয়ে আসতে পারেনি। সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো বিশাল দেশে স্থানীয় পার্টি সচিবদের প্রচুর ক্ষমতা ছিল এবং এটি কখনও কখনও বিপর্যয়কর হিসেব প্রমাণিত হয়। দেখা গেছে স্থানীয় পার্টি সচিবরা নিজেদের এবং তাদের কাছের লোকেদের ব্যাপারে উত্থিত সমালোচনাগুলো এড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। শুদ্ধি কার্যক্রমের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রমাণ করার জন্য কিছু স্থানীয় সচিব অনেক সাধারণ সদস্য, শ্রমিক এবং কৃষককে বহিষ্কার করেছিলেন; যদিও এরা ছিল পার্টির অনুগত সদস্য এবং যাদের বহিষ্কার করা একেবারেই উচিত হয়নি। বহিষ্কার হওয়াদের বেশিরভাগই ১৯৩০ থেকে ১৯৩৩ সালের মধ্যে পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন, যাদের পার্টির বিভিন্ন ইস্যু সংক্রান্ত ব্যাপারে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জনের সময় ছিল না। অনেকেই পার্টির কর্মসূচী এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে পারেননি এই স্বল্প সময়ের মধ্যে এবং তাই পার্টির সচিবরা তাদের অজ্ঞ হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। অন্যরা হলেন এমন ব্যক্তি যাদের কর্মস্থলে বা পারিবারিক সমস্যার কারণে পার্টি জীবনে পুরোপুরি অংশ নিতে অসুবিধা হয়েছিল। ১৯৩৩ সালে পার্টির সদস্য ও প্রার্থীদের মধ্যে ১৮.৫% বহিষ্কার করা হয়েছিল (প্রায় ৭,৯২,০০০)। ১৯৩৩ সালের শুদ্ধি কার্যক্রম যা ১৯৩৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়েছিল, পার্টির মধ্যে মারাত্মক অসঙ্গতি তৈরি করেছিল। কেন্দ্রীয় কমিটি চোর এবং দুর্নীতিবাজ আমলাদের বহিষ্কার করার পরিকল্পনা করেছিল, অথচ বহিষ্কার হওয়া একটা বড় অংশকে (প্রায় এক-চতুর্থাংশ) নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিল। যদিও বহিষ্কারের মাপদণ্ড হিসাবে নিষ্ক্রিয়তা পার্টির নির্দেশনাগুলোতে স্থান পায়নি সেসময়। পূর্বের যোগ্যতার ফলস্বরূপ আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এবং কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে স্থানীয় পার্টি নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনার দিকে নজর না দিয়ে যা খুশি তাই করেছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক স্থানীয় পার্টি নেতৃবৃন্দের এই দলীয় নির্দেশনা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী ছিল, কিন্তু কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। এই শুদ্ধি অভিযান পরবর্তী বছরগুলোতে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিকূল বিশ্ব পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বাড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা করছিল। গেটির দ্বারা প্রকাশিত পরিসংখ্যানগুলো কনকুয়েস্ট এবং অন্যান্য দক্ষিণপন্থী বদমাইশদের এই অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণিত করে যে, ১৯৩৩ সালের শুদ্ধি অভিযান লেনিনের সময়ের পুরানো বলশেভিকদের এবং পুরোনো পার্টি ক্যাডারদের বের করে দেয়ার জন্য সংগঠিত হয়েছিল যারা স্তালিনের বিরোধিতা করেছিল। গেটির মতে, বুর্জোয়াদের আনা অভিযোগগুলো অসত্য। বহিষ্কৃতদের দুই-তৃতীয়াংশই ১৯২৮ সালের পর পার্টিতে পুনরায় প্রবেশ করেছিল। বহিষ্কার হওয়া ব্যক্তিদের ২৩% কৃষি শ্রমিক/কৃষক, ১৪.৬% বেসামরিক কর্মচারী এবং প্রায় ৬২% শ্রমিক। মোটামুটি ৮৫% ছিল সাধারণ কর্মজীবী, লেনিনের সময়ের পার্টি ক্যাডার নয়। অথচ “দ্য গ্রেট টেরর” বইয়ে রবার্ট কনকুয়েস্ট দাবী করেছিল ১৯৩৩ এর শুদ্ধি অভিযানে নাকি দশ লক্ষেরও বেশি সদস্যকে রাজনৈতিক কারণে বহিষ্কার করা হয়েছিল! শুদ্ধি অভিযান সংক্রান্ত ইতিহাস সম্পর্কে যে কেউ সামান্য জ্ঞান রাখলেও বলে দিতে পারবে যে কনকুয়েস্টের অভিযোগ মিথ্যা। ১৯৩৩ এর শুদ্ধি কার্যক্রম প্রমাণ করেছিল যে সারা দেশেই পার্টির অভ্যন্তরে মারাত্মক সমস্যা ছিল। সদস্যদের তালিকার সাথে বাস্তবের কোনও সামঞ্জস্য ছিল না। দেশের অনেক জায়গায় সদস্য সংখ্যার সাথে তালিকার মিল ছিল না। অনেক সদস্য পার্টি ত্যাগ করেছিল, বহিষ্কৃত হয়েছিল কিংবা মারা গিয়েছিল; যাদের ব্যাপারে তালিকায় সংশোধন আনা হয়নি। স্থানীয় পার্টি সচিবরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং সমবায়ীকরণ নিয়েই ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। অবহেলা কিংবা আগ্রহের অভাবে সদস্যপদের তালিকাগুলো আপডেট করা হয়নি। এর প্রভাব পরে পার্টির আর্থিক রেকর্ডগুলোর উপরও। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রেকর্ডের ক্ষেত্রে এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পেরে সিদ্ধান্ত নেয় যে পার্টির সমস্ত নথি যাচাই করা অপরিহার্য। ১৯৩৪ সালের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে পুরো পার্টিকে সদস্যপদ পুন:নিবন্ধনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি সমস্ত দলীয় অঞ্চলে প্রতিনিধি প্রেরণ করেছিল রেকর্ডগুলো পরীক্ষা করতে এবং পুনরায় নিবন্ধনের কাজে সহায়তা করতে। কমরেড অস্ট্রোভস্কিকে স্মোলেনস্কের সিটি কমিটিতে প্রেরণ করা হয়েছিল। তিনি পার্টির স্থানীয় রেকর্ড রাখার দায়িত্ব নেয়ার জন্য যোগ্য কোন সদস্যকে নিয়োগ করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্য যেন পার্টির ডকুমেন্টগুলো কোনও সুরক্ষিত জায়গায় সংরক্ষণ করে এই ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি সুপারিশ করেছিলেন যে, সতর্কতার সাথে তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত বহিষ্কৃত সদস্যরা যেন পার্টির কার্ড না পায়। অস্ট্রোভস্কি আরও সুপারিশ করেছিলেন যে, ১৯৩৫ সালের জানুয়ারী মাস থেকে সদস্যদের একটি নতুন তালিকা কার্যকর করা উচিত এবং সিটি কমিটির অধীনে থাকা সমস্ত দলীয় কমিটি যেন এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যত সময় পার হতে লাগলো সমস্যাগুলো অস্ট্রোভস্কির পক্ষে সামলানো কঠিন হয়ে যেতে লাগলো। দেশের অনেক জায়গায় কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধিদেরও একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ১৯৩৫ সালের এপ্রিলের শেষ দিক নাগাদ পুনরায় নিবন্ধনকরণ কার্যক্রমের খুব কমই অগ্রগতি হয়েছিল। স্মোলেনস্কের সিটি কমিটির একটি প্রতিবেদনে লেখা ছিল-

“In the process of investigation of Party documents, there was revealed a series of massive deficiencies, demanding especially careful analysis and verification”.

১৯৩০ এর দশকের শুরুতে অনেক স্থানীয় পার্টি সচিবরা উৎপাদনের কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত থাকার কারণে এবং উৎপাদনের অবিশ্বাস্য সাফল্যে বিভোর হয়ে পার্টির অন্যান্য বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করেছিলেন। তারা বর্ধিত উৎপাদনকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন এবং মনে করতেন এটিই সমস্ত সমস্যা সমাধানে সক্ষম। যে কোনও দলের জন্য এবং বিশেষত ক্ষমতায় থাকা একটি দলের জন্য কেবল দলের সদস্যদের পার্টি কার্ড থাকা উচিত, কিন্তু অনেকেই এটি কম গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। পার্টির কার্ডগুলো সাধারণ রাইটিং ডেস্ক কিংবা সহজেই খোলা যায় এমন আলমারিতে অবহেলায় রাখা হয়েছিল এবং সারা দেশ জুড়ে সেগুলো হাজারে হাজারে অদৃশ্য হয়ে যায়। একই দায়িত্বজ্ঞানহীন পদ্ধতিতে পার্টি কার্ড সকলকে দেয়া হয়েছিল যারা বলেছিল যে তারা তাদেরটা হারিয়ে ফেলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়া কার্ডগুলোর কী হয়েছে তা খুঁজে বের করতে কোনও তদন্ত করা হয়নি। এমনকি বহিষ্কৃত সদস্যদের থেকেও পার্টির কার্ডগুলো ফেরত নেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, মৃত সদস্যদের কার্ডগুলো তাদের পরিবার ফেরত না দেয়ার কারণে প্রায়শই মৃত ব্যক্তির কার্ডের অপব্যবহার হতো। উৎপাদন এত বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল যে স্থানীয় পার্টি নেতারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে শিগগিরই উদ্বৃত্ত অংশ সকল ধরনের সমস্যা দূর করে দেবে। ১৯৩৫ সালের শুরুতে কেন্দ্রীয় কমিটি এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হয় যে ২,০০,০০০ পার্টি কার্ডের অপব্যবহার হয়েছে! বেশিরভাগ লোককে কার্ড দেয়া হয়েছিল যারা তাদের পার্টি কার্ড হারিয়েছে বা চুরি করেছে। পার্টি অফিস থেকে এক হাজারেরও বেশি নতুন, অব্যবহৃত কার্ড চুরি করা হয়েছিল এবং ৪৭,০০০ পার্টি কার্ড এমন ব্যক্তিদের দেয়া হয়েছিল যাদের পার্টির সদস্য হিসাবে নিবন্ধনের জন্য সময় ছিল না। পার্টি কার্ড হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। পার্টি কার্ডধারী ব্যক্তি দেশের যে কোনও জায়গায়  পার্টির সমস্ত অফিসে প্রবেশ করতে পারে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো রাখা হয়েছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ সভা বসতো। যে কারণে শত্রূ, গুপ্তচর এবং বিদেশী এজেন্টদের কাছে পার্টি কার্ডগুলো অনেক বেশি কাঙ্খিত ছিল। ১৯৩৫ সালে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যে, কেউ নিশ্চিত হতে পারতো না পার্টি কার্ডের ধারক প্রকৃতপক্ষে পার্টির প্রতি বিশ্বস্ত ও অনুগত সদস্য কিনা। এদের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল গুপ্তচর এবং নাশকতাকারীরা। ১৯৩৫ সালের ১৩ই মে কেন্দ্রীয় কমিটি পার্টি ডকুমেন্টগুলো দেশব্যাপী যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি নতুন সিদ্ধান্ত নেয় (проверка) পার্টির ডকুমেন্টগুলো যাচাইকরণ কার্যক্রমটি কেন্দ্রীয় কমিটির সচিবালয়ের একটি কমিশন কর্তৃক ইজভ এবং তার ডেপুটি মালেনকভের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল।

https://en.wikipedia.org/wiki/Nikolay_Yezhov

https://en.wikipedia.org/wiki/Georgy_Malenkov

যাচাইকরণের অংশ হিসেবে প্রত্যেক পার্টি সদস্যকে স্থানীয় পার্টি সচিব দ্বারা তাদের এলাকা ও কর্মক্ষেত্রে তাদের ইতিহাস, কর্মকান্ড এবং অন্যান্য বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই তথ্যগুলোর সাহায্যে পার্টি রেকর্ডগুলো আপডেট করা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গভীরভাবে যাচাই-বাছাই করার পর পার্টি কার্ড বাতিল করা হয়। পার্টির গঠনতন্ত্র অনুসারে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদের সকলেরই উচ্চতর সংস্থার কাছে আবেদন করার অধিকার ছিল, এরপর নতুন করে তদন্ত চালানো হতো এবং দু'সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হতো। দেখা গেলো স্থানীয় পার্টি সচিব যারা এই কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন তাদের অনেকেই কাজটিকে গুরুত্ব সহকারে নেননি। কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরী নির্দেশ থাকার পরও তারা পর্যাপ্ত গুরুত্ব সহকারে কাজ করেনি। কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আসা রিপোর্টগুলো থেকে জানা যায় যে, স্থানীয় পার্টি সচিবদের মধ্যে দায়সারা গোছের কাজ করার প্রবণতা ছিল। প্রায়শই স্থানীয় পার্টি সচিবদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা কার্যত ছিল শূন্য। বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের সমস্যাগুলো ছিল একদম স্পষ্ট। অঞ্চলটির দলীয় উপ-সেক্রেটারি এ.এল. শিলম্যান এবং নিয়ন্ত্রণ কমিশনের স্থানীয় প্রধান কিসেলেভকে কেন্দ্রীয় কমিটি দ্বারা জনসমক্ষে তীব্রভাবে সমালোচনা করা হয়েছিল এবং কার্ড নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করা উচিত নয় তার উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল। পার্টির সচিব এবং পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলার নেতা স্টেপানভকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। যাচাইকরণের সময় তিনি সদস্য প্রতি গড়ে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছিলেন! কেন্দ্রীয় কমিটি এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে ব্যক্তিগত আন্তরিকতা দেখতে চাইলেও এই সচিব কেবলমাত্র পার্টিকে বিশাল একটা ফিগার দেখাতে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটি এই ধরনের আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আপত্তি জানায়। তারা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চেয়েছিল যাতে তারা নিশ্চিত হতে পারে যে তালিকাভুক্তরা প্রকৃত অনুগত পার্টি সদস্য। কেন্দ্রীয় কমিটি এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হয়েছিল যে পার্টির ডকুমেন্ট যাচাইয়ের কার্যক্রম ব্যর্থতার ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৯৩৫ সালের ২৭শে জুন কেন্দ্রীয় কমিটি দ্বিতীয় দফায় সদস্যপদ যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা কিনা সাধারণ সদস্য মিটিংয়ে এবার অনুষ্ঠিত হবে। পার্টির সদস্য হিসাবে যোগ্য মনে করেননি এমন সদস্যদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার জন্য সকল সদস্যকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটি দলীয় সচিবদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করে। এভাবে সভাগুলো সমালোচনা এবং আত্ম-সমালোচনা করতে সদস্যদের উৎসাহিত করেছিল, যা বিতর্কের বিশাল অঙ্গনে পরিণত হয়েছিল। দলীয় সচিব যাদের গোপন করার মতো কিছু ছিল তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, কারণ এ জাতীয় চলমান নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় পার্টি নেতৃত্বের ত্রূটিগুলি প্রকাশ করে দিতো। গেটিরOrigins of the Great Purges” বইটি  ১৯৩৫ সালের জুলাই মাসে স্মোলেনস্ক টাউন কমিটির সদস্যপদ সভায় যে অভিযোগ আনা হয়েছিল তার একটি আকর্ষণীয় দিক তুলে ধরে। ঐ সভায় ৬১৬টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল।

অভিযুক্তদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ছিল কুলাক এবং অন্যান্যরা যারা নতুন অর্থনীতি নীতি বাস্তবায়নের সময় নিজেদের পকেট ভর্তি করেছিল।

https://en.wikipedia.org/wiki/New_Economic_Policy

আরও এক-তৃতীয়াংশের মতো লোককে অভিযুক্ত করা হয় যারা মারাত্মক নৈতিক ও অর্থনৈতিক অপরাধ করেছে। মাত্র পাঁচ শতাংশের মতো রাজনৈতিক কারণে অভিযুক্ত হয়েছিল। সেই সাথে প্রায় ১৭% নেতৃস্থানীয় ক্যাডার এবং রাজনৈতিক বেসামরিক কর্মচারীকে অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপের কারণে অভিযুক্ত করা হয়। জাতীয় পর্যায়ে পার্টি কার্ড নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ফলে তদন্তের আওতাধীন ১.৮ মিলিয়ন সদস্যের মধ্যে ১,৭০,০০০ সদস্যকে (৯.১%)বহিষ্কার করা হয়েছিল। ১৯৩৫ সালের জুলাই মাসের পার্টি বৈঠকগুলো গোঁয়ার পার্টি কর্মী এবং অন্যান্য সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে প্রচারণার আখড়া হয়ে ওঠে। সমালোচনা এবং আত্ম-সমালোচনা দলীয় নীতি হওয়া সত্ত্বেও এটি তখনও তৃণমূল স্তরে পুরোপুরি প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। স্তালিন নিজেকে এই সমালোচনা এবং আত্ম-সমালোচনার চর্চার সংস্কৃতিতে সম্পৃক্ত করেছিলেন  এবং উল্লেখ করেছিলেন যে সমালোচনার অভাব একটি মারাত্মক ভুল ছিল যা ক্যাডারদের ধ্বংস করেছে। ১৯৩৫ সালের পার্টির ডকুমেন্ট যাচাইয়ের মহড়াটি এই সত্য তুলে ধরেছিল যে, পার্টি কার্ডগুলো জালিয়াতি করা সহজ ছিল এবং সেজন্য সদস্যতা যাচাইয়ের জন্য নির্ভরযোগ্য নীতিমালা ছিল না। এজন্য নতুন পার্টি কার্ডের ব্যবস্থা করার জন্য দ্রুত গতিতে কার্যক্রম শুরু করা জরুরী ছিল। আমরা স্মোলেনস্ক সদস্যপদ সভার উদাহরণ থেকে দেখতে পাচ্ছি যে মুক্ত বিতর্কগুলো পার্টির ভেতর লুকিয়ে থাকা বুর্জোয়াদের কঠোর আঘাত করেছিল, যারা চেয়েছিল বাড়তি অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধা নিতে। এদের মধ্যে কুলাক এবং বণিক, চোর, প্রাক্তন সাদা সেনা কর্মকর্তা এবং জারের পুলিশ সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

https://simple.wikipedia.org/wiki/Russian_Civil_War

https://en.wikipedia.org/wiki/Okhrana

তারা যে সমাজ থেকে এসেছিল সেখানে তারা বিশেষ অধিকার পেতে অভ্যস্থ ছিল এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকদের শৃঙ্খলিত করে রাখা হতো। তাদের মাথায় বাজ পড়েছিল যখন তারা পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিকশ্রেণীকে দেখতে পেলো। পশ্চিমাদের ছড়ানো আরেকটি মিথ্যা হলো পার্টির কার্ড যাচাইয়ের কার্যক্রমটি স্তালিন দ্বারা কিরভ হত্যার প্রতিশোধের অংশ হিসাবে সংঘটিত হয়েছিল।

https://en.wikipedia.org/wiki/Sergei_Kirov

কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও লেনিনগ্রাদের পার্টি চেয়ারম্যান কিরভকে ১৯৩৪ সালের ১লা ডিসেম্বর নগরীর পার্টি সদর দফতরে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যাকারী নিকোলায়েভ একটি পুরানো পার্টি কার্ড ব্যবহার করে পার্টি সদর দফতরে প্রবেশ করেছিলেন।

https://en.wikipedia.org/wiki/Leonid_Nikolaev

বিপুল সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে প্রতিশোধ নেয়ার এই অভিযোগের উদ্ভব ঘটেছে মূলত কনকুয়েস্ট বদমাইশটার মাধ্যমে। ১৯৩৫ সালের পার্টির কার্ড যাচাইকরণ কার্যক্রমটি কেবল ১৯৩৪ সালের অক্টোবরে সদস্যপদ পুন: নিবন্ধনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের বর্ধিত রূপ ছিল। খোদ কিরভ এই সিদ্ধান্তে অংশ নিয়েছিলেন হত্যার দুই মাস আগে! কেউ কি বিশ্বাস করবে যে কিরভ তার নিজের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্তে অংশ নিয়েছিল, যা দু'মাস পরে নেয়া হয়? ১৯৩৫ সালে পার্টির ডকুমেন্ট যাচাই কার্যক্রমের পর কেন্দ্রীয় কমিটি দলের সমস্ত ডকুমেন্ট প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পার্টির কার্ড কেবল সত্যিকারের সদস্যদের, নিবেদিত কমিউনিস্টদের যারা তাদের সদস্যপদকে প্রকৃতই সম্মান দিয়েছিল তাদের মধ্যে যতটা সম্ভব বিতরণ করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশাবলী ছিল সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট যেগুলো ফাঁকি দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। প্রথমত, ১৯৩৫ এর যাচাই কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত পার্টির কোনও নতুন কার্ড কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় বিতরণ করা যায়নি। দ্বিতীয়ত, কেবলমাত্র পার্টি সচিবরা নতুন কার্ড দেয়ার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তদুপরি পুরানোগুলোর সাথে নতুন কার্ডের বিনিময় কেবলমাত্র সেই ভবনেই হতে পারতো যেখানে পার্টির সচিবের অফিস ছিল এবং সেখানে কেবলমাত্র সচিবের অধীনে সংশ্লিষ্ট সদস্যরা উপস্থিত থাকতো। সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হতো দু’টি একই ধরনের ফর্ম পূরণ করতে যেখানে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করতে হতো। তাদের পার্টি সচিব ও জেলা সচিবের সামনে নতুন পার্টি কার্ড এবং ফর্ম দু’টিতে স্বাক্ষর করতে হতো; তারপর তারা কার্ডগুলোতে ‍সিল মারতেন। প্রতিটি কার্ডে সদস্যদের ছবি সংযুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক ছিল, অন্যথায় এটি অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হতো। নতুন কার্ডগুলো কেবলমাত্র আঞ্চলিক পার্টি সচিবদের কাছে এনকেভিডি’র মাধ্যমে প্রেরণ করা হতো এবং সেগুলো শুধু কেন্দ্রীয় কমিটির পাঠানো বিশেষ ধরনের কালি দিয়ে পূরণ করা হতো। সকল দলীয় সচিবের স্বাক্ষর (যাদের পার্টি কার্ড ইস্যু করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল) পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি বিশেষ সংরক্ষণাগারে রাখা হয়েছিল। কয়েক লক্ষ সদস্যের পার্টি কার্ডের আদান-প্রদানের বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় অঙ্গ সংগঠনের একটি প্রধান কার্যক্রম ছিল, যেটির উদ্দেশ্য ছিল সদস্যপদ প্রমাণের জন্য কার্যকর ডকুমেন্ট তৈরী করা যা জাল করা খুব কঠিন হবে। ১৯৩৬ সালের ফেব্রূয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পার্টির ডকুমেন্ট আদান-প্রদানের কথা ছিল, তবে কিছু জায়গায় এটি ১৯৩৬ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে সমাপ্ত হয়েছিল। সেসময়ের বহিষ্কৃত সদস্য সংখ্যা সম্পর্কে কোনও জাতীয় পরিসংখ্যান নেই, তবে স্মোলেনস্কের পরিসংখ্যান নির্দেশ করে যে এটি তুলনামূলকভাবে কম ছিল। পার্টির স্মোলেনস্ক শাখায় ৪,৩৪৮টি পার্টি কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল এবং ৯৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল (২.১%)। প্রায় একই পরিমাণ ফিগার পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য জেলায় দেখা যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে বহিষ্কৃত হওয়া সাধারণ শ্রমজীবী। ১৯৩৬ সালের পার্টি ডকুমেন্টের আদান-প্রদানের বিষয়টি রবার্ট কনকুয়েস্ট এবং ইতিহাসের অন্যান্য মিথ্যাবাদীরাও সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে নোংরা যুদ্ধে ব্যবহার করেছে। কনকুয়েস্ট দাবি করে ডকুমেন্ট আদান-প্রদানের সময় প্রচুর পরিমাণে শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়েছিল এবং পূর্বের সকল শুদ্ধি কার্যক্রমের তুলনায় এসময় অধিক সংখ্যক সদস্যের উপর বলশেভিকদের খড়গ নেমে আসে। কনকুয়েস্ট এর দাবী অনুসারে, এই সমস্ত কিছুর মাধ্যমে নাকি ১৯৩৬ সালের ১৯-২৪ আগস্ট এর বিচারের অপেক্ষায় থাকা বিরোধীদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে স্তালিন উস্কে দিয়েছিল! বিচারটি ছিল ট্রটস্কির নেতৃত্বে বিদেশ থেকে সোভিয়েত সরকারের নেতাদের হত্যা এবং ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়া জিনোভিয়েভ, কামেনেভ, স্মিরনোভ প্রমুখের বিরুদ্ধে।

https://en.wikipedia.org/wiki/Grigory_Zinoviev

https://en.wikipedia.org/wiki/Lev_Kamenev

১৯৩৬ সালের গণ বহিষ্কার সম্পর্কে কনকুয়েস্টের অভিযোগ বহু বছর ধরে প্রশ্নাতিত ছিল। কিন্তু স্মোলেনস্ক আর্কাইভ সংক্রান্ত গেটির গবেষণার মাধ্যমে যে পরিসংখ্যানগুলো প্রকাশিত হয়েছিল তা প্রমাণ করে এই ক্রিমিনালের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে ১৯৩৬ সালের শুদ্ধি অভিযানের সময়কার ফিগারগুলো ছিল পার্টির ইতিহাসে সর্বনিম্ন, যেটি সীমাবদ্ধ ছিল ২%-৩% এর মধ্যে। রাজনৈতিক বিচার এবং কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি কার্যক্রম দু’টি পৃথক বিষয় ছিল এবং একটির সাথে অপরটির সরাসরি কোনও সম্পর্ক ছিল না। যেসব দলীয় সদস্যদের প্রতিবিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে আদালতে বিচার করা হয়েছিল তারা ছিল বহিষ্কৃতদের মধ্যে একটা ক্ষুদ্র অংশ। ১৯৩৭ সালেই এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে দু’টি বড় সমস্যার সমাধান করা না হলে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র এগিয়ে নেয়া সম্ভব না। এগুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যাটি ছিল জিনোভিয়েভ-কামেনেভ এবং পিয়াতাকভ-রাদেককে নিয়ে যেটি তাদের রাষ্ট্রদ্রোহ সংক্রান্ত বিচারের মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছিল।

https://en.wikipedia.org/wiki/Georgy_Pyatakov

https://en.wikipedia.org/wiki/Karl_Radek

এটি প্রমাণ করে দেয় যে পুরানো বিরোধীরা ষড়যন্ত্রে খান্ত হয়নি। বিরোধীদের গোপন কার্যক্রম ১৯৩০ এর দশকের শুরু থেকেই অব্যাহত ছিল এবং জড়িতদের প্রকৃত সংখ্যা অজানা ছিল। অন্য সমস্যাটি ছিল পার্টির মধ্যকার আমলাতন্ত্র, দুর্নীতি ও সুযোগসন্ধানীদের বিরুদ্ধে লড়াই। এটি বিশেষত স্থানীয় এবং আঞ্চলিক শক্তির সাথে সম্পর্কিত ছিল, যাদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সদস্যরা নিন্দা করতে সাহস করেনি এবং এজন্য এরা স্থানীয় এবং আঞ্চলিক নেতৃত্বের পদে সুরক্ষিত ছিল। এই দু’টি সমস্যা মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ১৯৩৭ সালের ফেব্রূয়ারিতে এক সভার আয়োজন করে। বৈঠকটির মাধ্যমে ১৯৩৭-১৯৩৮ সালের পার্টি সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল। সভার শুরুতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বুখারিন ও রায়কভ উপস্থিত ছিলেন।

https://en.wikipedia.org/wiki/Nikolai_Bukharin

https://en.wikipedia.org/wiki/Alexei_Rykov

তাদের বিরুদ্ধে পার্টির শত্রূদের সাথে হাত মেলানো এবং ট্রটস্কির সাথে মিলে প্রতিবিপ্লবী সংগঠনের হয়ে কাজ করার অভিযোগ আনা হয় যাদের উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। সদ্য সমাপ্ত পিয়াতাকভ-রাদেকের বিচারের তদন্ত চলাকালীন যেসব তথ্য বের হয়ে এসেছিল, সেটার ভিত্তিতে এই অভিযোগ আনা হয়েছিল। বুখারিন এবং রায়কভের ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে মুখ খুলেছিল স্বয়ং পিয়াতাকভ এবং রাদেক। বুখারিন এবং রায়কভকে কেন্দ্রীয় কমিটি পার্টি থেকে বহিষ্কার করে। তাদের মামলা তদন্ত এবং বিচারের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠককালে স্তালিন ত্রূটিপূর্ণ দলীয় কার্যক্রম এবং ট্রটস্কির সাঙ্গপাঙ্গ ও অন্যান্য বেঈমানদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা শীর্ষক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দেন। স্তালিন তার বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য কমরেডদের নাশকতা, গুপ্তচরবৃত্তি ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার ‌উদ্দেশ্যে বিদেশী এজেন্ট, ট্রটস্কিবাদী এবং তাদের রাজনৈতিক মিত্রদের সোভিয়েত রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি পার্টির সংগঠনগুলোতে প্রবেশ করা কীভাবে সম্ভব হয়েছিল তা জিজ্ঞাসা করেন। তদুপরি স্তালিন জিজ্ঞাসা করলেন কীভাবে এরা দায়িত্বশীল পদ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল এবং এমনকি এই পদগুলোকে সুরক্ষিত করতে কিছু শীর্ষস্থানীয় কমরেডদের সহায়তাও পেয়েছিল। স্তালিন পূর্ববর্তী বছরগুলোতে নাশকতা ও গুপ্তচরবৃত্তির কাজগুলোর একটি তালিকা উপস্থাপন করেন এবং পার্টি সংগঠনগুলোতে কেন্দ্রীয় কমিটির সতর্কতামূলক চিঠির উল্লেখ করে বলেন-

“ঘটনাগুলো দেখাচ্ছে যে আমাদের কমরেডরা এই সংকেত এবং সতর্কতাগুলোর প্রতি অত্যন্ত ধীর গতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। ডকুমেন্ট যাচাই ও আদান-প্রদানের প্রচারণার মাধ্যমে উঠে আসা সমস্ত জ্ঞাত তথ্যে স্পষ্টভাবে এটি দেখানো হয়েছে। এই সতর্কতা এবং সংকেতগুলোর প্রয়োজনীয় প্রভাব ছিল না তা আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করবো? সম্ভবত আমাদের পার্টির কমরেডদের কি অবনতি হয়েছে, শ্রেণী সচেতনতা হ্রাস পেয়েছে এবং শৃঙ্খলা কমে গেছে? না, অবশ্যই না! সম্ভবত তাদের কি অবক্ষয় শুরু হয়েছে? আবারও, অবশ্যই না! এরকম অনুমানের কোনও ভিত্তি নেই। তাহলে সমস্যাটা কী? এই অবহেলা, অসতর্কতা, আত্মতৃপ্তি, অন্ধত্ব কোথা থেকে এলো? বিষয়টি হলো আমাদের কমরেডরা অর্থনৈতিক প্রচারণা এবং অর্থনৈতিক নির্মাণকার্যের সামনের বিপুল সাফল্যে আত্মহারা হয়ে কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুলে গিয়েছিল যা বলশেভিকদের ভুলে যাওয়ার কোনও অধিকার নেই। তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক অবস্থানের মূল সত্যটি ভুলে গিয়েছিল। তারা ভুলে গিয়েছিল যে সোভিয়েত শক্তি কেবল বিশ্বের এক-ষষ্ঠাংশ অংশে বিজয়ী হয়েছে। এছাড়া আরও অনেক দেশ, বুর্জোয়া দেশ রয়েছে যারা পুঁজিবাদী জীবন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং যারা সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঘিরে রেখেছে; এর উপর আক্রমণ করতে, একে পিষে ফেলতে কিংবা সকল ক্ষেত্রে এর শক্তিকে ধ্বংস ও দুর্বল করার সুযোগের অপেক্ষায় আছে।“

স্তালিন এরপর পুঁজিবাদী দেশগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছিলেন-

দু’য়ে দু’য়ে চার এর মতো এটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে বুর্জোয়া দেশগুলো একে অপরকে গুপ্তচর, নাশকতাকারী, বিপথে চালনাকারী এবং কখনও কখনও ঘাতকদের প্রেরণ করে এই দেশগুলোর প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসাক্ষেত্রে প্রবেশের নির্দেশ দেয়, তাদের সংস্থাগুলো স্থাপন করে এবং প্রয়োজনের সময় পিছে ছুরি মারে যাতে তাদের দুর্বল করা যায় এবং তাদের শক্তি ধ্বংস করে দেয়া যায়। আজ ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড জার্মান গুপ্তচর এবং বিপথে চালনাকারীদের সাথে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং অন্যদিকে অ্যাংলো-ফরাসী গুপ্তচর এবং বিপথে চালনাকারীরা জার্মানিতে ব্যস্ত; আমেরিকা জাপানি গুপ্তচর এবং বিপথে চালনাকারীদের সাথে জোট বেঁধেছে এবং জাপান আমেরিকান গুপ্তচর এবং বিপথে চালনাকারীদের সাথে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বুর্জোয়া দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কের স্বরূপ এটাই। প্রশ্ন উঠে বুর্জোয়া রাষ্ট্রগুলো কেন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সাথে অধিকতর কোমল ও প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করবে অন্য বুর্জোয়া রাষ্ট্রগুলোর সাথে তাদের নিজস্ব ধরণের আচরণের তুলনায়? কেন তারা সোভিয়েত ইউনিয়নে তাদের স্বজাতীয় বুর্জোয়া দেশগুলোর তুলনায় কম গুপ্তচর, নাশকতাকারী, বিপথে চালনাকারী এবং ঘাতক পাঠাবে? কেন আপনারা এমনটা চিন্তা করছেন? মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কি এই ধারণাটি আরও সঠিক হবে না যে বুর্জোয়া দেশগুলো কোনও বুর্জোয়া দেশের তুলনায় সোভিয়েত ইউনিয়নে দ্বিগুণ এবং তিনগুণ নাশকতাকারী, গুপ্তচর, বিপথে চালনাকারী এবং ঘাতক পাঠাবে? এটা কি পরিষ্কার নয় যে যতদিন পর্যন্ত পুঁজিবাদী বেষ্টনী থাকবে, ততদিন আমরা বিদেশী রাষ্ট্রের দালালদের দ্বারা আমাদের কাছে পাঠানো নাশকতাকারী, গুপ্তচর, বিপথে চালনাকারী এবং ঘাতক পেতে থাকবো?”

এগুলো স্তালিনের মতে ছিল গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি যা নেতৃস্থানীয় কমরেডরা ভুলে গিয়েছিল এবং এই কারণেই নাশকতা এবং গুপ্তচরবৃত্তি তাদের অনেকের জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। অর্থনৈতিক সাফল্যই শিথিলতা এবং অসাবধানতার ব্যাখ্যা দেয়। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে দুর্দান্ত সাফল্যগুলোর কারণে গর্ব করার ঝোঁক এবং নিজেদের অতিমাত্রায় মূল্যায়ন করার প্রবণতাই কমরেডদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এসব কারণে অসতর্কতা এবং আত্মতৃপ্তির জন্ম হয়, চটকদার সাফল্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয় যা রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টিকে ভোঁতা করে দেয়। স্তালিন স্থানীয় পার্টি কর্মকর্তাদের বিষয়ে উপহাসের করে বলেন-

পুঁজিবাদী বেষ্টনী? ওহ, সেটা কোন ব্যাপার না! আমরা যদি আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলো সম্পন্ন কিংবা অতি মাত্রায় সম্পন্ন করি তবে পুঁজিবাদী বেষ্টনী কোন ব্যাপার কি? ধ্বংসের নতুন রূপ, ট্রটস্কিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই? একেবারেই তুচ্ছ! আমরা যদি আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলো সম্পন্ন কিংবা অতি মাত্রায় সম্পন্ন করি তবে এই ছোটখাটো বিষয়গুলোর কোন মূল্য আছে কি? পার্টির বিধিবিধান, পার্টির সদস্য নির্বাচন, দলীয় নেতাদের দলের সদস্যদের কাছে জবাবদিহিতা? আসলেই এসবের কোন দরকার আছে? আমাদের অর্থনীতি যখন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শ্রমিক ও কৃষকদের জাগতিক পরিস্থিতি আরও উন্নত থেকে উন্নততর হয়ে উঠছে, তখন এই সমস্ত তুচ্ছ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কি দরকার? একেবারেই তুচ্ছ! পরিকল্পনাগুলো অতি মাত্রায় সম্পন্ন হচ্ছে, আমাদের পার্টিটা খারাপ নয়, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিও খারাপ নয়- আমাদের আর কী দরকার? তারা মস্কোয় বসে থাকা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু মজাদার লোক, যারা সমস্ত ধরণের সমস্যা উদ্ভাবন করে, নাশকতার কথা বলে, নিজেরা ঘুমায় না এবং অন্যদেরও ঘুমাতে দেয় না।”

স্তালিন এরপর দলীয় কার্যক্রমে বেশ কয়েকটি ত্রূটি এবং উত্থিত ত্রূটিগুলি সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি নেতৃস্থানীয় পার্টি ক্যাডার থেকে শুরু করে সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের আঞ্চলিক পার্টি সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দকে সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে যাচাইয়ের জন্য প্রস্তাব পেশ করেন-

“দলীয় শিক্ষা এবং দলীয় সংগঠনের সচিবদের (তৃণমূল) পুন: প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে চার মাসের 'পার্টি কোর্স’ এর ব্যবস্থা হওয়া উচিত।”

"জেলা সংগঠনের প্রথম শ্রেণীর সচিবদের রাজনৈতিক পুন: প্রশিক্ষণের জন্য আট মাসের 'লেনিন কোর্স’ এর ব্যবস্থা হওয়া উচিত সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দশটি কেন্দ্রে।"

“সিটি সংগঠনের সচিবদের আদর্শিক পুন: প্রশিক্ষণ এবং রাজনৈতিক উন্নতির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে ছয় মাসের 'পার্টির ইতিহাস ও নীতি’ সংক্রান্ত কোর্সের ব্যবস্থা হওয়া উচিত।”

“সবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে ছয় মাসের 'অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতি’ সম্পর্কিত সম্মেলনের ব্যবস্থা হওয়া উচিত। আঞ্চলিক ও অঞ্চলভিত্তিক সংস্থাগুলোর প্রথম শ্রেণীর সচিব এবং জাতীয় কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিগুলোকে এখানে পাঠানো উচিত।"

১৯৩৪ সালের জানুয়ারিতে স্তালিন, কিরভ, ঝদানোভ প্রমুখ কমরেডরা পার্টির সমস্যা এবং দ্বন্দ্বগুলো সমাধান করার জন্য অধ্যয়নই সঠিক উপায় বলে মত দিয়েছিলেন।

https://en.wikipedia.org/wiki/Andrei_Zhdanov

বক্তৃতায় স্তালিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কিত বিষয়ের উল্লেখ করেছিলেন যা বিতর্কের সময় উঠে এসেছিল। অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে স্তালিন উল্লেখ করেছিলেন যে যারা একসময় ট্রটস্কিবাদী বা ট্রটস্কির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল কিন্তু পরিবর্তিতে নিজেদের ভুল বুঝতে পারে এবং পার্টির প্রতি অনুগত ছিল, তারা ট্রটস্কিবাদী অন্যায়কারী ও গুপ্তচরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লক্ষ্য হিসেবে ছিল না।

“অন্য সবকিছুর মতো এক্ষেত্রেও স্বতন্ত্র, ভিন্ন পদক্ষেপের প্রয়োজন। আপনি একই মাপকাঠি দিয়ে প্রত্যেককে পরিমাপ করতে পারবেন না।”     

তার পর্যালোচনায় স্তালিন তৃণমূলের সদস্যদের সাথে বিদ্যমান দলের কর্মীদের সম্পর্কের বিষয়ে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তিনি দলীয় কর্মীদের নির্বাচিত করার পদ্ধতির ব্যাপারে সমালোচনা করে বক্তব্য শুরু করেছিলেন।

“বেশিরভাগ ক্ষেত্রে (পার্টি) কর্মীদের উদ্দেশ্যমূলক কারণে নয়; নৈমিত্তিক, বিষয়গত, সঙ্কীর্ণ বুর্জোয়া কারণে বেছে নেয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তথাকথিত পরিচিতজন, বন্ধুবান্ধব, নিজেদের শহরবাসী, ব্যক্তিগতভাবে নিবেদিত ব্যক্তি, তাদের প্রধানদের প্রশংসা করার কলাতে পারদর্শীদের তাদের রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক যোগ্যতার কথা বিবেচনা না করেই বেছে নেয়া হয়। স্বভাবতই, দায়িত্বশীল কর্মীদের একটি শীর্ষস্থানীয় গোষ্ঠীর পরিবর্তে আমরা অন্তরঙ্গ লোকদের একটি ছোট্ট পরিবার পাই, একটি আর্টেল, যার সদস্যরা শান্তিতে বাস করার চেষ্টা করে, একে অপরকে অসন্তুষ্ট না করার চেষ্টা করে, জনসাধারণের কাছে ব্যক্তিগত কেলেঙ্কারি প্রকাশ যাতে না হয় সেজন্য একে অন্যকে প্রশংসা করে এবং সময়ে সময়ে সাফল্যগুলোর বিষয়ে কেন্দ্রে নীরস এবং বিরক্তিকর প্রতিবেদন পাঠায়। এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এই জাতীয় পারিবারিক পরিবেশে কাজের ক্ষেত্রে ত্রূটিগুলোর সমালোচনা করার জন্য বা কাজের নেতাদের দ্বারা আত্ম-সমালোচনার কোনও জায়গা থাকতে পারে না। অবশ্যই এই জাতীয় পারিবারিক পরিবেশ মোসাহেব চাষের পক্ষে অনুকূল মাধ্যম তৈরি করে, যাদের নিজেদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই এবং এজন্য বলশেভিকবাদের সাথে কোনো মিল নেই।"

https://en.wikipedia.org/wiki/Artel

পার্টির কর্মীরা কেবল তাদের উর্ধ্বতনদের দ্বারা নয়, বরং আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তৃণমূলের সদস্যদের দ্বারা উর্ধ্বতনদের নিয়ন্ত্রিত হওয়া প্রয়োজন বলে স্তালিন মন্তব্য করেছিলেন।

“কিছু কমরেড মনে করেন যে কেবল উপরের দিক থেকেই মানুষকে পরীক্ষা করা যেতে পারে, যখন নেতারা কাজের ফলাফলের ভিত্তিতে লোকেদের পরীক্ষা করেন। ব্যাপারটা সত্যি না। অবশ্যই লোকদের পরীক্ষা করা এবং সম্পাদিত কাজগুলো যাচাই করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপগুলোর অন্যতম হিসাবে উপর থেকে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। তবে উপর থেকে করা পরীক্ষাটি পরীক্ষার পুরো ব্যাপারটির নিষ্পত্তি থেকে বহু দূরে। অন্য ধরণের আরেকটি পরীক্ষা আছে, নীচ থেকে পরীক্ষা, যখন জনসাধারণ নেতৃত্বদানকারী নেতাদের পরীক্ষা করে, তাদের ভুলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করে যেগুলোর মাধ্যমে হয়তো ভুলগুলো সংশোধন করা সম্ভব। এই ধরনের বাছাই করার পদ্ধতি লোকদের পরীক্ষার অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি।”

যারা শত্রূ দ্বারা দুর্বলতার লক্ষণ হিসাবে গ্রহণ করা হবে এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে, বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে ও পার্টি কাঠামো দুর্বল হয়ে যেতে পারে- এসব বিশ্বাসে নিজেদের সমালোচনা করতে রাজি ছিল না তাদের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন স্তালিন।

“এটা বোকামি, কমরেডগণ, নিছকই বোকামি। বিপরীতে আমাদের ভুলগুলোর খোলাখুলি স্বীকার এবং তাদের সততার সাথে সংশোধই কেবলমাত্র আমাদের পার্টিকে শক্তিশালী করতে পারে, আমাদের পার্টির মর্যাদাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাদের ভুলের উপর প্রলেপ লাগিয়ে ক্যাডারদের ছাড় দেয়া এবং যত্ন নেয়ার মানে হচ্ছে এই নির্দিষ্ট কর্মীদের নিশ্চিতভাবে হত্যা করা।"

পরিশেষে স্তালিন পার্টি সংগঠনের নেতাদের জনগণের কণ্ঠস্বর, যা ছিল সঠিক নেতৃত্বের অনুশীলনের একটি কার্যকর উপায়, শোনার আহ্বান জানান। পার্টির স্বতন্ত্র সদস্যদের ভাগ্যের ব্যাপারে, পার্টি থেকে সদস্যদের বহিষ্কার সংক্রান্ত প্রশ্নে, বহিষ্কৃত সদস্যদের পার্টিতে পুনর্বহাল সংক্রান্ত প্রশ্নে স্তালিন পার্টির কিছু কমরেডের আনুষ্ঠানিক ও হৃদয়হীন আমলাতান্ত্রিক মনোভাবের কঠোর সমালোচনা করেন। স্তালিনের মতে নেতাদের প্রত্যেকের প্রতি ন্যায্য এবং স্বতন্ত্র রায় দিতে সক্ষম হওয়ার জন্য সদস্যদের ব্যাপারে জানতে হবে, তাদের বিকাশ এবং জীবনযাত্রার ধরনও জানতে হবে।

তিনি বলেন-

"তারা সাধারণত এলোমেলোভাবে কাজ করে। হয় তারা পাইকারিভাবে তাদের প্রশংসা করে যাচাই না করে, নয়তো পাইকারিভাবে ও যাচাই করা ছাড়াই খোলাখুলি তাদের অপব্যবহার করে এবং কয়েক হাজার সদস্যকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করে।”

স্তালিন নিষ্ক্রিয়তার জন্য অভিযুক্ত কিংবা যে সদস্যরা পার্টির কর্মসূচি সঠিকভাবে বুঝতে পারেনি সেসমস্ত সদস্যদের বহিষ্কারের বিরোধিতা করেছিলেন। কেবল পরীক্ষিত এবং তাত্ত্বিকভাবে উন্নত মার্ক্সবাদীরা পার্টি প্রোগ্রাম পুরোপুরি বুঝতে পেরেছিল। স্তালিন পার্টির সদস্যদের পার্টির সদস্যপদের জন্য লেনিনবাদী সূত্রটি প্রয়োগ করার জন্য আবেদন করেছিলেন

সূত্রটি অনুসারে-

"পার্টির সদস্য এমন একজন যিনি পার্টির কর্মসূচি গ্রহণ করেন, সদস্যপদের পাওনা পরিশোধ করেন এবং এর যেকোনো একটি সংগঠনে কাজ করেন।"

পার্টি প্রোগ্রাম বা পার্টির নীতিমালা সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অভাবে দলের কোনও সদস্যকে বহিষ্কার করা উচিত নয়। স্তালিন একে একটি হৃদয়হীন নীতি এবং সাঙ্ঘাতিক আমলাতন্ত্র বলে অভিহিত করেন যার মাধ্যমে দলের সভাতে দেরি হওয়া কিংবা দলের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার মতো ছোট ত্রূটির জন্য কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়। বহিষ্কারের প্রশ্ন উত্থাপনের আগে সমালোচনা, সতর্কতা কিংবা একটি নির্দিষ্ট সময় দেয়ার মাধ্যমে ঐ ব্যক্তিকে উন্নতির সুযোগ দিতে হবে। দলের নেতাদের সদস্যদের প্রতি প্রকৃত ধারণা থাকা দরকার ছিল।

"আমাদের কিছু কমরেডের ঠিক এটার ঘাটতি ছিল” বলে স্তালিন তার বক্তব্য শেষ করেছিলেন।

স্তালিনের ভাষণ প্রকাশিত হলে তা মলতোভ, ঝদানভ এবং ইয়েজভের অন্যান্য বক্তৃতাগুলোর মতো জনসাধারণের বিতর্কের সূচনাকারী পয়েন্ট হয়ে ওঠে।

https://en.wikipedia.org/wiki/Vyacheslav_Molotov

https://en.wikipedia.org/wiki/Andrei_Zhdanov

https://en.wikipedia.org/wiki/Nikolay_Yezhov

মূল বিষয়গুলো ছিল বিতর্কের জবাবে স্তালিনের বক্তৃতা এবং পার্টির নির্বাচনে গোপন ভোটের জন্য ঝদানভের প্রস্তাব, যা কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল। যে প্রশ্নগুলো সর্বাধিক আগ্রহ জাগিয়েছিল সেগুলো ছিল পার্টি নেতাদের ক্ষমতা এবং তাদের কর্মের পাশাপাশি পার্টি গণতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। বুখারিন-রায়কোভের বিচার এবং গুপ্তচর ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছিল, পাশাপাশি সদস্যদের দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার ব্যাপারে সামনাসামনি সমালোচনা করা হয়। কিন্তু মূল প্রশ্নটি, অর্থাৎ স্থানীয় দলীয় নেতাদের দুর্নীতির সমাধান তখনো হয়নি। ১৯৩০ এর দশকজুড়ে কেন্দ্রীয় কমিটি পার্টির সদস্যগণকে নেতাদের সমালোচনা শুরু করার এবং দুর্নীতিবাজ ও দায়বদ্ধতাহীন দলের সচিবদের নিন্দা করার আহ্বান জানিয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটির ফেব্রূয়ারির বৈঠকের ফলাফলস্বরূপ সর্বত্র দলীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। কৌতুকপূর্ণ বেষ্টনীতে গৎবাঁধা এবং আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যেসব সভার আয়োজন করা হয়েছিল সেগুলো সদস্যপদের অভূতপূর্ব চাহিদার প্রতিক্রিয়ায় হঠাৎ করে আবার শুরু করতে হয়েছিল। স্মোলেনস্ক আর্কাইভগুলো সভাগুলোর প্রচুর উদাহরণ দেয় যেখানে স্থানীয় নেতাদের সদস্যদের সামনে নিজেকে সমালোচনা করতে বাধ্য করা হয়েছিল। জেলা কমিটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভায় এবং কর্মক্ষেত্র কিংবা স্থানীয় সেলগুলোতে পার্টি নেতাদের কেবল মুখোশই খুলে দেয়া হয়নি, সেই সাথে তাদের পদও কেড়ে নেয়া হয়েছিল, আর সদস্যদের আস্থা আছে এমন নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এই নির্বাচনগুলো নতুন গোপনীয় ব্যালটের মাধ্যমে দলীয় নেতৃত্বের নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির পরিকল্পনার অংশ ছিল না। এসময় পরিকল্পনাটি কেবল প্রস্তুতির পর্যায়ে ছিল। তবে কোনও কিছুই দুর্নীতিবাজ আমলাদের পরিবর্তনে সদস্যদের আটকাতে পারেনি। বেলি জেলায় পার্টির কার্যক্রম বিশ্লেষণ করার জন্য একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

https://en.wikipedia.org/wiki/Bely,_Tver_Oblast

এই সভা চার দিন স্থায়ী হয়েছিল। মিটিংয়ের প্রতি মিনিটের বিবরণ স্মোলেনস্ক আর্কাইভগুলোতে পাওয়া যায়। তৃণমূল সদস্যরা যারা সভাগুলোতে খুব কমই বক্তৃতা দিয়েছিলেন কিংবা যাদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার তকমা লাগানো হয়েছিল, তাদের এই উপলক্ষে সামনে নিয়ে আসা হয় এবং ব্যক্তি নির্বিশেষে তাদের কথা বলার সময় বাধার সৃষ্টি করা হয়নি। ২৪০ সদস্যের মধ্যে ২২০ জন বেলি জেলা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ৭০ জন সভায় বক্তব্য রাখেন এবং জেলা সচিব কোভালেভের কঠোর সমালোচনা করেন। সদস্যদের কথা বিবেচনা না করে তিনি আমলাতান্ত্রিক আচরণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি প্রয়োজন না থাকার অজুহাত দিয়ে শিক্ষার্থীদের হলগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং রাজনৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। তার পদ্ধতিগুলো ছিল স্বৈরাচারী, পক্ষপাতদুষ্ট এবং পাশবিক। যে কোনও কারণে জেলা কার্যালয়ে তলব করা সদস্যরা সর্বদা অস্বস্তি বোধ করতেন, তারা জানতেন যে তাদের দীর্ঘকাল ধরে অপেক্ষা করা লাগবে কিংবা সমাধান না নিয়েই ফিরে আসতে হবে। বেলি জেলার এনকেভিডি’র প্রধান ভিনোগ্রাদোভ কোভালেভকে সহায়তার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দলের সদস্যদের পার্টির কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা করতে মানা করেছিলেন। তার মতে, কেন্দ্রীয় কমিটির ফেব্রূয়ারী বৈঠক থেকে প্রাপ্ত নির্দেশের অর্থ ছিল সদস্যরা বসন্তকালীন ফসল বপন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে! কোভালেভ সমালোচনাটিকে দলের নিম্ন স্তরের পার্টি সেলগুলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তার মতে সেখানেই ত্রূটিগুলো অনুসন্ধান করতে হবে, জেলায় নয়! এমনকি ওবকমের প্রতিনিধি গোলোভাশেঙ্কো কোভালেভের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন।

https://en.wikipedia.org/wiki/Organization_of_the_Communist_Party_of_the_Soviet_Union

তিনি বিতর্কটি বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন এবং কোভালেভের তীব্র সমালোচনা করা সদস্যদের আক্রমণ করেছিলেন। কিন্ত কোভালেভকে কেউই সাহায্য করতে পারেনি। সদস্যদের সমালোচনা পুরো সভা জুড়ে কোনও বাধা ছাড়াই অব্যাহত থাকে এবং অভিযোগের তালিকাটি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হয়ে ওঠে। সভাটি সদস্যদের দ্বারা সমাপ্ত হয় এবং সেখানে কোভালেভকে পদচ্যুত করে কার্পভস্কি’কে জেলার প্রথম শ্রেণীর সচিব হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। স্থানীয় এনকেভিডি প্রধান এবং আঞ্চলিক প্রতিনিধিও কোভালেভকে সহায়তা করার চেষ্টা করেছিলেন। আঞ্চলিক সচিবালয়ের একটি সিদ্ধান্ত জেলা সেক্রেটারি কারপোভস্কির নিয়োগ বাতিল করে তার পরিবর্তে অন্য একজন সদস্য বোরাদুলিনকে এই পদে রাখার প্রস্তাব দেয়। আরও একটি বৃহত্তর সদস্যপদ বৈঠক হয়েছিলযখন বোরাদুলিনকে কোভালেভের চেয়েও বেশি অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল এবং সদস্যরা আবার কারপোভস্কিকে জেলা সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। কারপোভস্কি নিজেই সদস্যদের আঞ্চলিক সচিবালয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও এটি ঘটেছে। কেন্দ্রীয় কমিটির ফেব্রূয়ারি সভার পর এই ধরনের পরিবেশই বিরাজ করছিল। বিতর্কের জবাবে স্তালিনের বক্তৃতা শোনার পর তৃণমূলের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা বিবেচনা না করে উচ্চাকাঙ্খী এবং দুর্নীতিবাজ আমলাদের ছুড়ে ফেলে যোগ্যতর নেতাদের নির্বাচন করা শুরু করে। এটি স্বত:স্ফূর্ত লড়াই ছিলযেমনটি স্মোলেনস্ক আর্কাইভে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে এবং খুব শীঘ্রই এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল দেখা গেছে। একই সময়ে ক্ষমতাসীন দুর্নীতিবাজ আমলারা একে অপরকে রক্ষা করতে থাকে। উদাহরণস্বরূপকোভালেভকে এই অঞ্চলের কর্মচারী বিষয়ক বিভাগে একটি ভাল পদে কাজ দেয়া হয়েছিল। এই সংগ্রাম সবে শুরু হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটির ফেব্রূয়ারির সভায় পাস হওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে একটি ছিল গোপন ব্যালটের ভিত্তিতে সাধারণ পার্টি নির্বাচন সম্পন্ন করা। কেন্দ্রীয় কমিটির সভার দু'সপ্তাহ পর ১৯৩৭ সালের ২০শে মার্চ কেন্দ্রীয় কমিটি দলীয় সংগঠনগুলোর নির্বাচন বিষয়ক একটি আদেশ জারি করে এবং আত্ম-সমালোচনাপার্টি গণতন্ত্র এবং শীর্ষস্থানীয় দলীয় নেতাদের নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়। দুর্নীতিবাজ দলীয় নেতাদের নির্বাচনী সভার কারসাজি রোধ করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। ১৯৩৭ সালের এপ্রিল মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনী সভা চলাকালীন স্থানীয় নেতৃত্বের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। পূর্বে দলীয় শৃঙ্খলার অভাব কিংবা দলীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে অযোগ্যতার অভিযোগে পার্টির সভাগুলোতে সর্বদা তৃণমূল সদস্যদের দিকে সমালোচনার আঙ্গুল তোলা হতো। এখন পরিস্থিতি হয়ে যায় সম্পূর্ণ বিপরীত। এবার স্থানীয় নেতৃত্বই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যায়। এই সভাগুলোতে অনেক সদস্যকে পার্টির কমিটিগুলোতে মনোনীত করা হয়েছিল। আলোচনাগুলো দীর্ঘ এবং সাবধানতার সাথে করা হয়েছিল। অবশেষে গোপন নির্বাচনটি হওয়ার সময় এসে গেলো। ব্যালট পেপারসহ পার্টির নির্বাচন সম্পর্কিত অনেক ডকুমেন্ট স্মোলেনস্ক আর্কাইভে রয়েছে। পরে পার্টি নির্বাচন সংক্রান্ত ফলাফল জাতীয় পর্যায়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৩৭ সালের মে মাসে যে ৫৪,০০০ দলীয় সংগঠনের নির্বাচনের ফলাফল জানা গিয়েছিলতাদের মধ্যে ৫৫% এর মতো পুরানো নেতৃত্বের অদলবদল হয়েছিল। এটি একটি অবিশ্বাস্য ফলাফল ছিল। প্রথমত, এতে প্রমাণিত হয়েছিল যে পুরানো নেতৃত্বের প্রতি আস্থার অভাব ব্যাপক পরিমাণে ছিল এবং দ্বিতীয়ত, তৃণমূলের সদস্যরা অযোগ্য বা ক্ষমতার অপব্যবহারকারী রাজনীতিবিদদের বের করে দেয়ার মতো সম্মিলিত শক্তির অধিকারী ছিল। দলীয় নির্বাচনের অবশ্য আরও একটি দিক ছিল। পার্টির বেশিরভাগ নেতাদের স্থানীয় স্তর (জেলা, সেল) থেকে অপসারণ করা হয়েছিলযেখানে সাধারণ সদস্যরা সহজেই কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল তা নির্ধারণ করতে পারে এবং দুর্নীতিক্ষমতার অপব্যবহার বা নাশকতা আবিষ্কার করতে পারে। কিন্ত পৌর ও আঞ্চলিক কমিটিগুলোতে পার্টির নির্বাচনগুলো একই ফলাফল দেয়নি। আঞ্চলিক পার্টি নেতৃত্ব সমালোচনা থেকে বাঁচার জন্য দুর্দান্ত সব উপায় খুঁজে বের করেছিল। আঞ্চলিক পর্যায়ে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের ব্যাপারে বেশ কিছু অভিযোগ সামনে এসেছিলযারা রাজাদের মতো আচরণ করতো; কিন্ত নিজেদের পক্ষে ভোট সুরক্ষিত করতে পেরেছিল। সাধারণ সদস্যদের দ্বারা স্থানীয় নেতাদের মতো এই নেতাদের মূল্যায়ন করার মতো সুযোগ ছিল না। সাধারণ সদস্যদের বিরুদ্ধে আরও একটি কারণ কাজ করছিল। আর সেটা হচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্থ ও অদক্ষ আঞ্চলিক ও পৌর সচিবদের সর্বদা এমন একটি নিজস্ব গোষ্ঠী ঘিরে রাখতোযা তাদের প্রতিটা কাজে সমর্থন দিতো। তবুও কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে আমলাতন্ত্র এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামকে উচ্চ পর্যায়ে পর্যন্ত অব্যাহত রাখা হয়েছিল। জুনের শুরুতে বার্ষিক আঞ্চলিক পার্টি সম্মেলন যথারীতি শুরু হয়েছিল। এই সম্মেলনগুলোতে কোনও বিশেষ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হতো না, সেখানে শুধু আঞ্চলিক নেতৃত্বের কর্মকান্ড সম্পর্কিত রিপোর্টগুলো নিয়ে আলোচনা করা হতো। এবার অবশ্য নতুন কিছু ঘটেছিল। এমনকি আঞ্চলিক সম্মেলনগুলোতেও দলীয় নেতাদের সমালোচনা করা হয়েছিল। পার্টি নেতৃত্ব জানতেন যে আঞ্চলিক স্তরে সাধারণ সদস্যদের তাদের অভিযোগ শোনাতে তুলনামূলকভাবে বেশি অসুবিধা হবে। কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে আঞ্চলিক সম্মেলনে প্রতিনিধি প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রতিনিধিরা কখনও কখনও আগে থেকে ঘোষণা না দিয়ে এসে বসেছেন এবং আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ২৫টি আঞ্চলিক সম্মেলনের মধ্যে চারটিতে নেতৃত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। তবুও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক নেতৃত্ব পার্টির নির্দেশনা বিবেচনা না করে ইচ্ছামতো তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল। ১১ই জুন১৯৩৭ সালে প্রাভদা পত্রিকা ঘোষণা করে যে মার্শাল তুখাচেভস্কি ও জেনারেল পুতনাজেনারেল ইয়াকিরজেনারেল উবোরেভিচজেনারেল ফেল্ডম্যানজেনারেল কর্ক, জেনারেল প্রিমাকভ এবং জেনারেল এদিমানিসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

https://en.wikipedia.org/wiki/Mikhail_Tukhachevsky

https://en.wikipedia.org/wiki/Vitovt_Putna

https://en.wikipedia.org/wiki/Iona_Yakir

https://en.wikipedia.org/wiki/Ieronim_Uborevich

https://en.wikipedia.org/wiki/Peter_Maximovich_Feldman

https://en.wikipedia.org/wiki/August_Kork

https://en.wikipedia.org/wiki/Vitaly_Primakov

https://en.wikipedia.org/wiki/Roberts_Eidemanis

এই জেনারেলদের ১৯৩৭ সালের ২৬শে মে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অনেকদিন ধরে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে সামরিক গোপনীয় বিষয় হস্তান্তর করার জন্য এবং শত্রূ দেশের গুপ্তচরদের সাথে হাত মিলিয়ে সোভিয়েত রাষ্ট্রের পতন ঘটিয়ে পুঁজিবাদ পুনরুদ্ধারের চেষ্টার অভিযোগে। জেনারেলদের ষড়যন্ত্র ছিল সোভিয়েত সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের সামরিক অংশ। পিয়াতাকোভ-রাদেকের রাষ্ট্রদ্রোহের বিচারটি বিরোধী পক্ষকে মারাত্মক আঘাত করেছিলকিন্তু জেনারেলরা তাদের অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাটি বাতিল করেনি। তারা বুঝতে পেরেছিল যে কোনও বিলম্বেই তাদের কাজে আরও অসুবিধার সৃষ্টি হবে। তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল এবং এটি কার্যকর করার সময় হয়েছিল। পিয়াতাকভের বিচার এবং বুখরিন-রায়কভ গ্রূপের গ্রেপ্তারের পর সামরিক ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের প্রচেষ্টা আরও বৃদ্ধি করেছিল। ১৯৩৭ সালের মার্চের শেষের দিকে তারা অভ্যুত্থানের সময় নির্ধারণ করেছিল। এটি ছয় সপ্তাহের মধ্যে, অর্থাৎ ১৫ই মার্চের মধ্যে সংঘটিত হওয়ার কথা ছিল। অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার বিষয়টি জানতে সক্ষম হওয়ার পর সোভিয়েত সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল। ৮ই মে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল যেটির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সকল স্তরে রাজনৈতিক কমিসারদের পুনর্বহাল করা হয়েছিল।

https://en.wikipedia.org/wiki/Political_commissar

অফিসার এবং সামরিক সিদ্ধান্তের তদারকিকারী রাজনৈতিক কমিসারদের ব্যবস্থা ১৯২৭ সালের ১৩ই মে ফ্রূঞ্জের নির্দেশে বাতিল করা হয়েছিল, যিনি ছিলেন একজন প্রবীণ বলশেভিক এবং উচ্চপদস্থ পার্টি ক্যাডার যিনি পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একজন হয়েছিলেন।

https://en.wikipedia.org/wiki/Mikhail_Frunze

তিনি রাজনৈতিক কমিসারদের বিলুপ্ত করে সামরিক কর্মকর্তাদের ক্ষমতা পুনর্বহাল করেন। ১৯৩৭ সালের ১১ই মে মার্শাল তুখাচেভস্কিকে উপ-যুদ্ধ কমিসার থেকে পদচ্যুত করে ভলগা অঞ্চলে ছোটোখাটো মিশনে প্রেরণ করা হয়। ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে অন্যতম (যিনি পরবর্তীকালে আত্মহত্যা করেন) উপ-যুদ্ধ কমিসার জেনারেল গামারনিককে একই দিনে পদচ্যুত করা হয়েছিল।

https://en.wikipedia.org/wiki/Yan_Gamarnik

জেনারেল ইয়াকির এবং উবোরেভিচকেও পদচ্যুত করা হয়েছিল এবং জেনারেল কর্ক এবং এদিমানিসকে নাৎসি জার্মানির পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল

ষড়যন্ত্রকারীরা এর মাধ্যমে সামরিক অভ্যুত্থান পরিচালনার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। সোভিয়েত সরকার দ্রুত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের প্রয়াসকে ঠেকিয়ে দিতে পেরেছিলকিন্তু নাগরিক সমাজ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের দখল কতটা বিস্তৃত ছিল তা জানা যায়নি। ১৯৩৭ সালের জুনে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। সামরিক ষড়যন্ত্রের আকারটি সঠিকভাবে কেউ জানতো নাতবে অনেকগুলো ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে এটি যে গোষ্ঠীটি আবিষ্কার হয়েছিল তার চেয়ে বড়। কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যাপক পরিসরে তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সামরিক ষড়যন্ত্র উঁচু পর্যায় থেকে এসেছিল এবং বেসামরিক সমাজে এর শিকড় খুঁজতে শীর্ষস্থানীয় পদের ব্যক্তিদের মধ্যে অনুসন্ধান করা জরুরী ছিল। আঞ্চলিক পার্টি নেতৃত্বের কাজের মূল্যায়ন করতে এবং ষড়যন্ত্রের আকার খুঁজে বের করার জন্য অঞ্চলগুলোতে বেশ কয়েকটি সদস্যপদ সভার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত পশ্চিমাঞ্চলের বৈঠকটি ১৯৩৭ সালের ১৯শে জুন থেকে ২১শে জুন পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কাগানোভিচ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধি হিসাবে সভায় অংশ নিয়েছিলেন।

https://en.wikipedia.org/wiki/Lazar_Kaganovich

মূল প্রশ্নটি ছিল আঞ্চলিক পার্টি সচিব রুমিয়ান্তসেভ এবং তার ঘনিষ্ঠদের মূল্যায়ন। ইভান পেট্রোভিচ রুমিয়ান্তসেভ ছিলেন একজন পুরানো বলশেভিকযিনি ১৯০৫ এর প্রথম দিকে পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে স্মোলেনস্ক এর প্রথম শ্রেণীর সচিব হিসেবে প্রেরণ করে এবং রুমিয়ান্তসেভ বেশ কয়েকজন পুরানো কমরেডকে ঐ অঞ্চলের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পদে বসায়। কেন্দ্রীয় কমিটির ফেব্রূয়ারি বৈঠকে স্তালিন এই স্বজনপ্রীতিকে মার্কসবাদ বিরোধী কাজ হিসেবে চিহ্নিত করলেও এটি রুমিয়ান্তসেভকে বিচলিত করেনি। ১৯৩৭ সালের জুনে রুমিয়ান্তসেভ ৬১ বছর বয়সী ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে পশ্চিমাঞ্চলে তার শক্ত অবস্থান ছিলযেখানে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও কারখানার নামকরণ হয়েছিল তার নামে। বাস্তবে রুমিয়ান্তসেভ সমালোচনার হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন। রুমিয়ান্তসেভ বছরের পর বছর ধরে নিজের উন্নতি সাধনে আগ্রহী আত্মম্ভরী আমলায় পরিণত হয়েছিলেন। পশ্চিমাঞ্চলে রুমিয়ান্তসেভের প্রতি অসন্তুষ্টি ছিল সুস্পষ্টকিন্ত তাকে অপসারণের সুযোগ সামান্য ছিল। ১৯৩৭ সালের ১৯-২১ জুনের বৈঠকের পূর্বে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটে। এটি কেবল কাগানোভিচের উপস্থিতি এবং সমালোচকদের সমর্থন করার কারণে নয়, সদস্যদের মুখ খোলার আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণটি ছিল ষড়যন্ত্রকারী জেনারেলদের মধ্যে অন্যতম উবোরেভিচ ছিলেন আঞ্চলিক কমিটির সদস্য এবং রুমিয়ান্তসেভের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। সন্দেহ করা হচ্ছিলো যে রুমিয়ান্তসেভ ছিলেন সামরিক ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত পার্টির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা। রুমিয়ান্তসেভ এবং তার গ্রূপের দ্বারা সদস্যদের বিরুদ্ধে করা পুরানো অবিচারগুলো প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হয়। পশ্চিমাঞ্চলের নেতৃত্বের পরিস্থিতি ক্রমশ বিরূপ হয়ে ওঠে। অন্যান্য ইস্যুগুলোর মধ্যে পার্টি সচিব কোভালেভকে বরখাস্ত করার বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল। কোয়ালেভকে বেলি জেলা সদস্যপদ সভায় পার্টির সদস্যরা অপসারণ করেছিলেনকিন্ত রুমিয়ান্তসেভ তাকে অবসর নেয়ার জন্য আরামদায়ক চাকরি দিয়েছিলেন। সদস্যরা যা যা ঘটেছিল তা সামনে নিয়ে আসে এবং তারা মনে করেন যে রুমিয়ান্তসেভই ছিলেন সেই ব্যক্তি যার নির্দেশে কোভালেভ পার্টি সদস্যদের ইচ্ছার বিপরীতে কাজ করেছিল। তিনিই বেলি জেলায় সংঘটিত অপরাধ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের পিছনে ছিলেন। চাটুকার ও পৃষ্ঠপোষকদের অবলম্বন করে রুমিয়ান্তসেভ তার নিজের লোকেদের একটি বৃত্ত তৈরি করে সমালোচনা এবং আত্ম-সমালোচনা দমন করেছিলেন। পশ্চিমাঞ্চলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের তালিকা আরও দীর্ঘায়িত হয়েছিল। ফলাফলস্বরূপসভায় পুরো নেতৃত্বকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আরও তদন্ত করে রুমিয়ান্তসেভ এবং তার গ্রূপকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৯৩৭ সালের জুলাইয়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যাপ্ত প্রমাণ সংগ্রহ করেছিল যে অনেক উচ্চপদস্থ নেতাদের ছত্রছায়ায় সামরিক ষড়যন্ত্রটি সমন্বিত একটি পরিকল্পনার অংশ ছিল। পরিস্থিতি অত্যন্ত মারাত্মক ছিল। এমনকি কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত দুর্নীতিগ্রস্থ সদস্যরা ছিল। সমাজতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত কিছু বলশেভিক এবং নতুন উচ্চপদস্থ নেতারা গ্রহণ করতে পারেনি। ১৯১৭ সালের বিপ্লবের দিনগুলোতে শ্রমিকদের ক্ষমতার রোমান্টিক চিত্রটি এখন সোভিয়েত ইউনিয়নে বাস্তবে রূপ নিয়েছিল এবং এটি এখন শ্রমিকদের দ্বারা শাসিত হচ্ছিলো। এই বিকাশ কিছু লোকের জন্য ভীতির সৃষ্টি করে যারা ইতিপূর্বে বিশেষ সুবিধাদি ভোগ করে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছিল। এজন্য তারা প্রতিবিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিল। তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে সমাজতান্ত্রিক উন্নয়ন বন্ধ করার লড়াইয়ে তাদের মিত্রদের খুঁজে পেয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটি এই শ্বেত সন্ত্রাস ও বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার সাথে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্বাসঘাতকদের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার আলামত অনুসরণ করার কাজটি ‌ইয়েঝোভের নেতৃত্বে এনকেভিডি দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।

https://en.wikipedia.org/wiki/Nikolay_Yezhov

সারা দেশ জুড়ে যারা পিয়াতাকভ গ্রূপের ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে কিংবা জেনারেলদের সাথে সংযোগ রেখেছিল বলে জানা গিয়েছিল তাদের তদন্ত করা হয়েছিল। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অনিরাপদ এবং ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে বিদেশী সংযোগের ব্যাপারটি অস্পষ্ট ছিল। জেনারেলরা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা সম্পর্কে গোপন তথ্য পাচার করেছিল এবং এটি কতটুকু দেশের ক্ষতি করে ফেলেছে তা স্পষ্ট ছিল না। কেন্দ্রীয় কমিটি সমাজতন্ত্রের প্রতি আঞ্চলিক পার্টি নেতাদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর পার্টির শুদ্ধি অভিযান গতি লাভ করেছিল। পার্টির বৈঠকগুলোও এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল এবং সাধারণ সদস্যরা দুর্নীতিগ্রস্ত ও অদক্ষ কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও বেশি প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন।যারা নিজেদের সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত বলে মনে করেছিল তারা হঠাৎ আবিষ্কার করলো যে দলের সাধারণ সদস্যরা নেতৃত্বের পদ থেকে তাদের ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। কোনো কোনো নেতাকে তাদের অপরাধের জন্য সরাসরি বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। পশ্চিমা বুর্জোয়া ইতিহাস শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব এবং প্রতিষ্ঠানের প্রশাসকদের বিরুদ্ধেযারা সাধারণ মানুষের চেয়ে অধিকতর ধনী ছিল তাদের বিরুদ্ধে স্তালিনের দমননীতির কথা বলে। বুর্জোয়া ইতিহাসবিদরা এটাও বলে যে,

কেউ তাদের বিছানায় নিরাপদে ঘুমাতে পারেনি।”

কিন্তু কেন এমন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়যারা সরকারী সম্পত্তি দিয়ে টেবিলের নীচে ব্যবসা করেছেযারা তাদের নিজস্ব ব্যবসাতে অর্থায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল ব্যবহার করেছিল? যারা বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতদের উদার হস্তে উপহার এবং ঘুষ দিয়েছিলসাধারণ সদস্যদের উপর অত্যাচার ও দুর্ব্যবহারের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারকারী দলীয় নেতাদের কেন আলাদা করে বিবেচনা করতে হবেকেন জেনারেলদের এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিচার করা উচিত না, যারা দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে শত্রূদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলকেন তাদের ছেড়ে দেয়া হবে কিংবা অন্য অপরাধীদের তুলনায় ভালো আচরণ করতে হবেগবেষণা আরও দেখায় যে এসময় বহিষ্কৃত হওয়া বেশিরভাগই পার্টির শীর্ষস্থানীয় পদে ছিলেন। এক্ষেত্রে বেলি জেলার উদাহরণ দেয়া যায়। বেলি জেলার পার্টি সংগঠনের ২৪৪ সদস্য ও প্রার্থীর মধ্যে ৩৬ জনকে ১৯৩৭ সালে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কৃতদের মধ্যে ২৯ জন শীর্ষস্থানীয় পদে ছিলেন- জেলা কমিটির দু'জন প্রথম শ্রেণীর দলীয় সচিব এবং জেলা সোভিয়েত এক্সিকিউটিভ কমিটির দু’জন উপ-সভাপতিএকজন কমোসোল জেলা সচিবজেলা প্রসিকিউটরজেলা এনকেভিডি’র প্রধান এবং তার এক সহকারী কর্মকর্তাজেলার তিনটি বৃহৎ বিদ্যালয়ের পরিচালকজেলা ভূমি অফিসের প্রধানবেলি জেলার মেশিন এবং ট্র্যাক্টর স্টেশনের পরিচালক, শিল্প উদ্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট চারজন পরিচালকবাণিজ্য সংস্থার দু'জন প্রধানপাঁচজন সমবায়ী ফার্ম সভাপতি এবং পল্লী সোভিয়েতের পাঁচজন সভাপতি।

https://en.wikipedia.org/wiki/Komsomol

https://en.wikipedia.org/wiki/Selsoviet

বুর্জোয়ারা ১৯৩৭ সালের ভয়ঙ্কর বছরটি তৈরি করেছিল মনের মাধুরী মিশিয়ে রবার্ট কনকুয়েস্ট, সিআইএ এবং এমআই৫ এর দ্বারা তৈরি কল্পকাহিনীটি ১৯৩০ এর দশক জুড়ে চলা শুদ্ধি অভিযান সংক্রান্ত পরিসংখ্যানগুলোর মাধ্যমেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যায়। পরিসংখ্যানগুলো বিশ্লেষণ করে বুর্জোয়া মিথ্যাগুলোর বিশালতা যে কেউ উপলব্ধি করতে পারবে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৩৭ সাল এমন একটি বছর ছিল যেখানে সবচেয়ে কম সংখ্যক মানুষকে বহিষ্কার করা হয়েছিলঅর্থাৎ ৫% এর বেশি নয়। অথচ বুর্জোয়া শ্রেণি এবং এদের দালালরা ১৯৩৭ সালকে অজস্র মিথ্যায় মুড়িয়ে দিয়ে বলে যে স্তালিন নাকি মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে নির্বাসিত এবং হত্যা করেছে!! সুইডিশ লেখক পিটার এনগ্লান্ড একই ধরনের দাবী করেছিলেন।

https://en.wikipedia.org/wiki/Peter_Englund

যে কেউ বুঝতে পারবে যে লক্ষ লক্ষ লোকের সাথে জড়িত সমালোচনা এবং আত্ম-সমালোচনার এই ধরনের বিশাল আন্দোলনে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কিন্তু এ জাতীয় ঘটনা পূর্ববর্তী শুদ্ধি অভিযানগুলোতেও ঘটেছিল। হাজার হাজার পার্টি সদস্যকে ভুল কারণে বহিষ্কার করা হয়েছিল, কিন্তু পার্টির কেন্দ্রে আবেদন করার পরে তাদের পুনর্বহাল করা হয়েছিল। সাধারণ শ্রমিকদের প্রতি করা অবিচারগুলোর ব্যাপারে পশ্চিমারা মোটেও আগ্রহী নয়। ১৯৩৭ সালের বহিষ্কারের ব্যাপারেই তাদের যত আগ্রহ!! ১৯৩৭ সালের শুদ্ধি অভিযান ও অন্যান্য বছরগুলোর শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে মূল পার্থক্যটি হলো আগের শুদ্ধি অভিযানগুলোতে প্রধানত তৃণমূলের সদস্য এবং সাধারণ কর্মীদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, আর বহিষ্কৃত হওয়া ব্যক্তিদের ৮০% ছিল এরাই। ১৯৩৭ সালের পরিস্থিতি একেবারেই বিপরীত ছিল। সেসময় বহিষ্কৃতদের মধ্যে প্রায় ৮০% ছিল দুর্নীতিবাজ পার্টি নেতারা এবং উচ্চ পর্যায়ের সেনা অফিসার। এই ব্যক্তিরা নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধা অর্জন করার পরও নাৎসি জার্মানিকে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত ছিল। এরা এমন লোক ছিল যারা সাধারণ সদস্যদের পায়ের নিচে রাখতে আপত্তি করেনি এবং যারা তাদের সীমালঙ্ঘনকে অস্বীকার করেছে তাদের বহিষ্কার করেছিল। ১৯৩৭ সালে পশ্চিমাদের প্রতি অনুরক্ত ও বুর্জোয়া চিন্তাধারী পার্টি কর্মীরা এবং সামরিক কর্মকর্তাদের বের করে দিয়ে বিচারের আওতায় আনা হয়েছিল। এই শুদ্ধি অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল পার্টি ও সেনাবাহিনী থেকে দুর্নীতিবাজ আমলা এবং বিশ্বাসঘাতকদের বের করে দেয়া। লক্ষ লক্ষ পার্টি সদস্যদের মধ্যে চালানো এতো সুদূরপ্রসারী লড়াই সামান্য ভুল ছাড়া পরিচালিত হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ কিছু কিছু পার্টি সদস্যদের মধ্যে যারা বিভিন্ন প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নিয়োজিত ছিল এবং পার্টি জীবনে তেমন আগ্রহ দেখাননি, সমাজতন্ত্রের প্রতি তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে পূর্ণ আনুগত্য প্রমান করলেও তাদের বহিষ্কার করা। কেন্দ্রীয় কমিটি এটির বিরোধিতা করেছিল এবং এসব বহিষ্কৃত কর্মকর্তাদের আবেদন শুনে অন্যায় পদক্ষেপের সংশোধন করেছিল। ১৯৩৭ সালের অক্টোবরে দনবাস এর কারিগরি ক্যাডারদের সংবর্ধনার সময় যারা শীর্ষস্থানীয় ক্যাডারদের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিল তাদের স্তালিন ব্যক্তিগতভাবে সমালোচনা করেছিলেন   

https://en.wikipedia.org/wiki/Donbas

স্তালিনের মতে, সোভিয়েত ইউনিয়নের নতুন প্রযুক্তিবিদ ও অর্থনীতিবিদরা সর্বহারা শ্রেণী থেকে এসেছিলেন এবং জনগণের শ্রদ্ধার প্রাপ্য ছিলেন। উপরোক্ত সমস্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টতই প্রমানিত হয় যে এই শুদ্ধি অভিযানগুলো আমলাতন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অংশ ছিল এবং নেতৃস্থানীয় পার্টির ক্যাডার কিংবা পুরানো বলশেভিকদের বিরুদ্ধে ছিল না


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]