মুসলমানদের ভণ্ডামি
![]() |
করোনার কারণে দেশের মসজিদগুলোতে ২০ জনের অধিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও বাইরে ভীড় করে নামাজ আদায়ের মতো উগ্রতা |
মামুনুল হক এর বিষয়ে হেফাজত এর বক্তব্য হচ্ছে এটা নাকি এই লোকের ব্যক্তিগত ব্যাপার! এমনকি মসজিদে কন্যা শিশুদের ধর্ষণ কিংবা মাদ্রাসায় সমকামী আচরণের দায়ে অভিযুক্ত মোল্লারাও এদেশে জনগণের সহানুভূতি অর্জন করে এটা বলে যে ইবলিশ নাকি তাকে প্ররোচিত করেছে! এমনকি ধর্ষক হুজুরকে মাদ্রাসা বা মসজিদ থেকে পুলিশরা নিয়ে যাওয়ার সময় দলবেঁধে পুলিশদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে এদেশে। ফেসবুকের পোস্টকে কেন্দ্র করে যেই মোল্লারা ভয়াবহ আগ্রাসন চালাতেও দ্বিধা করেনা, আবার তারাই মাদ্রাসার বিভিন্ন পরীক্ষায় কোরান-হাদিসের বইয়ের পাতা জুতার তলায় নিয়ে যায় নকল করার উদ্দেশ্যে, যেটা কিনা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায়ও এসেছে! বিএনপি'র সময়ে মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম প্রধান দেশগুলো থেকে এরা প্রচুর অর্থ নিয়ে এসেছিলো মসজিদ, মাদ্রাসা বানানোর নাম করে; অথচ বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্বই নেই এবং অর্থ গিয়েছে এদের পেটেই। আজ থেকে তো রোজা শুরু, এজন্যই একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা আসলেই মুসলমানদের নৈতিকতায় প্রভাব রাখতে পেরেছে কিনা সেটা উপলব্ধি করতে।
https://mobile.twitter.com/hashtag/MosqueMeToo?src=hash&ref_src=twsrc%5Etfw
২০১৩ সালে হজ্ব করতে গিয়ে যৌন হেনস্থার শিকার হন মিসরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখিকা এবং সাংবাদিক মোনা এলতাহাউই। তিনিই প্রথম সোশ্যাল মিডিয়াতে তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান। তার উদ্যোগে মস্ক-মি-টু আন্দোলন শুরু হয়। এতে সাড়া দেয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীরা যারা একই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে। ‘মস্ক মি টু’ তুলে ধরেছে নারীদের হজে যাওয়ার পরের তিক্ততা। মক্কা নগরীতে ভিড়ের মাঝে কিভাবে নারীদের শরীরে হাত দেয়া হতো, ইচ্ছাকৃতভাবে ঘষাঘষি করা হতো, কিভাবে সুযোগসন্ধানীরা খামচে ধরতো সেসবের বর্ণনা তুলে ধরা হয় এই আন্দোলনের মাধ্যমে। ইসলামে নারীকে পর্দা মেনে চলতে বলা হয়। প্রকাশ্যে চলাফেরার সময় মাথা এবং শরীর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে বলা হয়। অথচ ইসলামের বিধান মেনে পোশাক পরার পরও তারা যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা পায় না বলে অভিযোগ করে ইরান, সৌদি আরব, মিশর এবং আফগানিস্তানের মতো রক্ষণশীল মুসলিম দেশের নারীরা। ইরানে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। ইরানের অনেক শহরে এমন পোস্টারও সাঁটা আছে যেখানে পর্দাবিহীন নারীকে মোড়ক খোলা ক্যান্ডি বা ললিপপের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা মাছি আকর্ষণ করছে!! ইরানের প্রায় সব সরকারি অফিসে লেখা আছে-
"হিজাব কোন বিধিনিষেধের সীমা নয়, এটি আপনার সুরক্ষা।"
ইরানে বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ শুরু হয়, তাতে অংশ নেয়ায় ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তেহরানে এক নারী প্রকাশ্যে তার মাথার হিজাব খুলে ফেলে এই প্রতিবাদ শুরু করে। এটির নাম দেয়া হয়েছে 'দ্য গার্লস অব রেভ্যুলেশন স্ট্রীট'।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/2017%E2%80%932019_Iranian_protests_against_compulsory_hijab
নয়া দিল্লির জামে মসজিদের যৌন হয়রানির কথা পর্যন্ত উঠে এসেছে সারা বিশ্ব থেকে সাহসী মুসলিম নারীরা মুখ খোলায়। হজ্বের সময়ও যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা না পাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে সর্বপ্রথম ২০১৮ সালে ফেসবুকে মুখ খুলেছিল পাকিস্তানের এক নারী। ২০১১ সালের হজ্বে ২০ নারীর গর্ভপাত হয়, আর ২০১৮ সালে হজ্বের সময় গর্ভপাতের সংখ্যাটা রীতিমতো উদ্বেগজনক। অন্যদিকে 'Save Madina Foundation' এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সালে ৩২১ জন হাজ্বী পকেটমারদের দ্বারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে হজ্ব এর সময়, যেখানে খোদ পুলিশরাই জড়িত!
https://web.archive.org/web/20120321222542/http://www.savemadinafoundation.webstarts.com/
বাংলাদেশের বই বিক্রির এক নাম্বার সাইট রকমারি۔কম থেকে শুরু করে একেবারে ফুটপাথেও হারুন ইয়াহিয়ার বই পাওয়া যায় আর এই লোকটা জাকির নায়েকের মতো মুসলিম বিশ্বে অতি জনপ্রিয়। অথচ এই হারামজাদা, যার কিনা তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক ছিল তার নারী সংক্রান্ত কুকীর্তি বুঝি তুর্কি গোয়েন্দারা এতো বছর পর আবিষ্কার করলো! ব্যাপারটা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য না, নিজেদের মধ্যকার বিরোধের কারণেই যে হারুন ইয়াহিয়ার কুকীর্তি প্রকাশিত হয়ে পড়েছে সেটা একটা বাচ্চাও বুঝবে।
https://www.rokomari.com/book/author/14662/harun-yahya
সোনাগাজীর নুসরাত বুঝি উলঙ্গ হয়ে মাদ্রাসায় গিয়েছিলো? যেই আর্মিদের নিয়ে দেশের মানুষ গর্ব করে করে মুখে ফেনা তুলে ফেলে সেই আর্মিদের ক্যান্টনমেন্টের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তনু বুঝি উলঙ্গ ছিল? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণে সেঞ্চুরি করা জসিম উদ্দিন মানিক বুঝি অমুসলিম কিংবা নাস্তিক ছিল? পহেলা বৈশাখের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের যৌন হেনস্থাকারীরা বুঝি নাস্তিক বা অমুসলিম ছিল? এদেশে এখনো ওয়াজে ঢালাওভাবে বলা হয় যে যত ধরণের অপকর্ম সব অমুসলিমরা আর নাস্তিকরা করেছে অতীতে, আর এখনো এরাই নাকি করছে! এদেশে জনসংখ্যার নব্বই ভাগ হচ্ছে মুসলমান। তার মানে বাকি দশ ভাগ যারা রয়ে গেলো তারাই বুঝি রমজানের সময় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয়? খাবারে ফরমালিন দেয়? জীবনরক্ষাকারী ওষুধে পর্যন্ত ভেজাল দ্রব্য মিক্স করে? ঘুষ নিয়ে ব্যাংক এ টাকার পাহাড় বানায়? কোটি টাকার জমির প্লট কিনে? বেতনের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ দামি আসবাবপত্র দিয়ে ঘর ভর্তি করে ফেলে? একাত্তরের রাজাকাররা কি অমুসলিম বা নাস্তিক ছিল? নারীলোভী এরশাদ কি অমুসলিম বা নাস্তিক ছিল? ইসলাম অনুযায়ী আল্লাহ না শয়তান বেঁধে রাখে রমজানে? তাহলে প্রতিদিন এতো খুন আর ধর্ষণের খবর কেন আসে মিডিয়ায়? নব্বই ভাগ মুসলিমের দেশে করোনার রিপোর্ট নিয়েও টাকা কামায় কিভাবে রিজেন্ট বা অন্যান্য ক্লিনিকগুলো? বাস্তব সমস্যা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে অযৌক্তিক রিচ্যুয়াল নিয়ে পড়ে থাকলে খুব বেশিদিন নেই যে মুসলমান সম্প্রদায়কে বিশ্ব আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। কারণ গায়ের জোরে, জবাই করার হুমকি ধামকি দিয়ে, আগ্রাসী আচরণের মাধ্যমে ঘৃণা ছাড়া আর কিছু অর্জন করা যায়না।
![]() |
দেশে প্রায় দশ হাজারের মতো মানুষ মারা যাওয়ার পরও মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য গোঁয়ার্তুমি |
Comments