জ্ঞানের রবিনহুড
সেই রবিনহুডকে জানার আগে বই নিয়ে ব্যবসার ব্যাপারে একটু ধারণা নেয়া যাক। সেমিস্টার শেষে পড়া বই বিক্রি করে দেয়ার প্রচলন বিশ্বের অনেক জায়গার মতো যুক্তরাষ্ট্রেও আছে। সেখানে ব্যবহৃত বইয়ের বাজার এতটাই বড় যে, বই প্রকাশকরা এটিকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করে। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইন্ডাস্ট্রি হয়ে গেছে সেখানে। এছাড়াও আছে বই ভাড়া দেয়ার ব্যবসা। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাসের পাঠ্যবই ভাড়া পাওয়া যায়, এই ধরণের দোকানগুলোকে বলা হয় ‘বুক রেন্টাল স্টোর’। যে সেমিস্টারে যা যা বই লাগে, সেগুলো ভাড়া নেয়া এবং সেমিস্টার শেষে ফেরত দিয়ে দেয়া হয় এসব দোকানে। এই দু'টি ব্যবসা মডেল প্রকাশকদের জন্যে মারাত্নক সমস্যা। এতে মূল বই প্রকাশকদের কাছে কোনো মুনাফা পৌঁছায় না। সারা বিশ্বে অনেক নামকরা বই প্রকাশক আছে; যেমন- পিয়ারসন, ম্যাকগ্রিউ হিলস ইত্যাদি। এদের প্রকাশিত অনেক বই বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ানো হয়ে থাকে। প্রথাগত বই ব্যবসায় প্রকাশক এক বা একাধিক সম্পাদক নিয়োগ করেন।
https://www.biblio.com/International_Edition_Textbooks
সম্পাদকরা কী বিষয়ে পাঠ্যবই বাজারে ছাড়বেন, সেটিতে কী কী বিষয়বস্তু রাখা হবে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন লেখক বা অধ্যাপক বইটি লিখবেন, সেটার বাজারে সম্ভাব্য চাহিদা কেমন হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করেন। সম্পাদকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। এই শিক্ষক বা লেখকগণ পাণ্ডুলিপি লিখে সম্পাদকদের দেন, তারা এসব পাণ্ডুলিপিকে যথাযথ সম্পাদনাপূর্বক পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যবইয়ে পরিণত করেন।
https://edition.cnn.com/2008/TECH/12/03/kindle.electronic.reader/
এরপর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে গিয়ে তাদের সংশ্লিষ্ট বইটি ছাত্রদের পড়াতে উৎসাহিত করেন যাতে ছাত্ররা বইটি কেনে। পদ্ধতিটি ব্যয়বহুল, এতে বিক্রয় প্রতিনিধিদের যাওয়া-আসার খরচ, শিক্ষক ও লেখকদের বিনোদিত করা সহ (উপহারসামগ্রী, বইয়ের সৌজন্য সংখ্যা দেয়া) বিভিন্ন খরচ থাকে। এরপর পুরনো বই ভাড়ার দেয়ার ব্যবসাকে টেক্কা দিতে প্রকাশকরা ঘন ঘন বইয়ের নতুন সংস্করণ বের করা শুরু করলেন; যেমন- কোনো বইয়ের গড়ে প্রতি বছরে একটি করে নতুন সংস্করণ বের করে বলা হলো প্রতিটি নতুন সংস্করণ হালনাগাদকৃত তথ্য সমৃদ্ধ। কিন্তু ছাত্ররা যদি দেখে যে নতুন সংস্করণে এমন আহামরি কোনো নতুনত্ব নেই, তখন এই সংস্করণ প্রকাশের পদক্ষেপ বাজারকে তেমন প্রভাবিত করতে পারে না।প্রকাশকরা বইয়ের আন্তর্জাতিক সংস্করণ বের করার কৌশল বের করলেন। বড় প্রকাশক প্রতিষ্ঠানের সব বইয়েরই একটি করে এশীয় সংস্করণ থাকে, যেটি মূল কপি থেকে বেশ সস্তা হয়। এসব বই ছাপানো হয় সাদা-কালোতে, অপেক্ষাকৃত কম দামি কাগজে। এতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ছাত্ররাও ওই বইগুলো কিনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্ররা দেখলো, তারা চাইলেই কম দামি আন্তর্জাতিক সংস্করণের বই অনলাইনে অর্ডার করে পেয়ে যেতে পারে। তারা কম দামি এশীয় সংস্করণের বই অনলাইন মারফত কেনা শুরু করলো! প্রকাশকরা তখন মূল বইয়ের বিষয়বস্তু আর আন্তর্জাতিক সংস্করণের বিষয়বস্তু আলাদা করে ফেললেন। ইন্টারনেট চালুর পর প্রকাশনা সংস্থাগুলো মূল বইয়ের ই-বুক সংস্করণ বের করলো। কিন্তু এটি তেমন জনপ্রিয়তা পেলো না। কম্পিউটারে পাঠ্যবই পড়া খুব একটা আরামপ্রদ ছিল না। তখন আমাজন কিন্ডল বা আইপ্যাডও বের হয়নি। ছাত্ররা পিডিএফ বইয়ে কাগুজে বইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ লাইন দাগাতে বা লেখার পাশে দরকারি নোট লিখতে পারতো না। প্রকাশকরা তখন তাদের বইগুলোর জন্যে অনলাইন প্লাটফর্ম, ফোরাম ইত্যাদি বানাতে শুরু করেন। বইয়ের সাথে সিডির ভেতরে দরকারি সফটওয়ার ও লার্নিং টুলস, গাণিতিক সমস্যা সম্পর্কিত হোমওয়ার্ক ইত্যাদি সরবরাহ করতে শুরু করেন। ছাত্র এবং শিক্ষক সবাই পদ্ধতিটি পছন্দ করলো। প্রকাশকরা এরপর থেকে শিক্ষকদের কাছে তাদের বইয়ের বিজ্ঞাপন দেয়ার বদলে, কার অনলাইন প্লাটফর্ম কত ভালো সেটি নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এর ফলে ই-বুক ধারণাটি জনপ্রিয়তা পায়, পরবর্তীতে ২০০৭ সালে আমাজন কিন্ডল ও ২০১০ সালে আইপ্যাডের মতো ডিভাইসগুলো বাজারে আসে। সমস্ত বই বিক্রি করে যে আয় হবে তার ১০% বইগুলো ছাপাতে খরচ হয়, সেটি হার্ডকভার বা পেপারব্যাক যে আকারেই হোক না কেন। যেমন- কোনো বইয়ের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা হলে, ২.৫০ টাকা খরচ হয়েছে বইটি প্রিন্ট করতে। খুচরা বিক্রেতারা বইয়ের কভারে লিখিত মূল্যের অর্ধেক প্রকাশককে দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে প্রকাশক পাবেন ১২.৫০ টাকা। প্রকাশক আবার ২.৫০ টাকা আগেই খরচ করেছেন বই ছাপাতে। বইয়ের লেখক রয়্যালটি হিসেবে বইটির মূল দামের ১৫% টাকা পান, অর্থাৎ ২৫ টাকার একটি বই থেকে লেখক পাবেন ৩.৭৫ টাকা। কিন্তু ই-বুকের ক্ষেত্রে বই ছাপানোর কোনো ব্যাপার নেই। পাঠক একই দাম দিয়ে ই-বুক কিনতে চাইবে না, কারণ ছাপানোর খরচ বেঁচে যাচ্ছে। ফলে ২৫ টাকার বইয়ের দাম হবে প্রায় অর্ধেক, ধরা যাক ১৩ টাকা। ই-বুকে প্রকাশক পান ৭০%, অর্থাৎ ৯.১০ টাকা। লেখক পাবেন ২৫%, অর্থাৎ ২.২৮ টাকা। ছাপানো বইয়ের থেকে ই-বুকে লেখকের রয়ালটির শতকরা পরিমাণ বেশি হলেও ই-বুকের দাম কম হওয়ায় লেখক এক্ষেত্রে কম টাকা পান। ই-বুকে ছাপানোর খরচ নেই- এমন যুক্তিতে পাঠক এখানে হার্ডকভার বইয়ের সমান দাম দিতে চাইবে না কখনোই, যদিও ছাপানো বইয়ের দামের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশই ব্যয় হয় ছাপানোর পুরো প্রক্রিয়ায়।
আলেকজান্দ্রা আসানোভনা এলবাকিয়ান ১৯৮৮ সালের ৬ নভেম্বর কাজাখ সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবারটি আর্মেনীয়, স্লাভিক ও মধ্য এশীয় মিশ্র বংশোদ্ভূত। তার বাসায় বিজ্ঞান সংক্রান্ত কয়েকটি বিশ্বকোষ এবং প্রচুর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই ছিল, যেগুলো পড়ে তার প্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। স্কুলজীবনে এক শিক্ষক তাকে সোভিয়েত শিশু সাহিত্যিক নিকোলাই নোসোভের 'দুন্নোর অভিযানসমগ্র' উপহার দিয়েছিলেন এবং বইটি পড়ে তার মধ্যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতি বিতৃষ্ণার সৃষ্টি হয়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Nikolay_Nosov
স্কুলে থাকা অবস্থাতেই তিনি ইংরেজি ভাষা রপ্ত করেন। তাদের বাসায় একটি ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও প্রোগ্রামিং সংক্রান্ত বই ছিল। তার বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না; যখন তার মা তাকে সঙ্গে করে নিজের কর্মস্থলে নিয়ে যেতেন, তখনই কেবল এলবাকিয়ান ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পেতেন। ২০০৫ সালে এলবাকিয়ান কে. আই. সাতবায়েভ কাজাখ ন্যাশনাল রিসার্চ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি'তে ভর্তি হন এবং তথ্য নিরাপত্তা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। এসময় তিনি একটি নিউরোকম্পিউটার ইন্টারফেস তৈরিতে জড়িত ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি 'বিজ্ঞানের ইতিহাস' বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে এলবাকিয়ান ইন্টারনেট ব্যবহারে সমস্যার সম্মুখীন হন। সেখানে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস ছিল সীমিত এবং ইন্টারনেট থেকে বই, সঙ্গীত কিংবা চলচ্চিত্র সংগ্রহ করা ছিল ব্যয়বহুল। এসময় থেকে তিনি কম্পিউটার হ্যাকিংয়ে দক্ষতা অর্জন করেন এবং তার হ্যাকিংয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেটের বিভিন্ন কন্টেন্ট ডাউনলোডের ক্ষেত্রে যে পে-ওয়াল থাকে, সেগুলো অতিক্রম করে বিনামূল্যে কন্টেন্ট সংগ্রহ করা। ২০০৯ সালে তিনি রাশিয়ায় যান এবং মস্কোয় কম্পিউটার নিরাপত্তা বিষয়ে এক বছর কাজ করেন। এসময় তিনি রুশ শিক্ষাব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র ও স্বজনপ্রীতির প্রভাব লক্ষ্য করেন এবং বিরোধী দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যে রাষ্ট্রবিরোধী চিন্তাধারা লক্ষ্য করেন। তার এক রুশ অধ্যাপক খোলাখুলিভাবে ককেশাসকে রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলতেন। এলবাকিয়ান এই ধরনের চিন্তাধারার বিরোধী ছিলেন এবং তার রাজনৈতিক মতামতের জন্য তাকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করে দেয়া হয়। ২০১০ সালে জার্মানিতে চলে যান। জার্মানিতে তিনি আলবার্ট-লুদভিগ ফ্রেইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে'র একটি গবেষণাগারে মানব মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস নিয়ে কাজ করেন এবং ট্রান্সহিউম্যানিজম নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এসময় তিনি গবেষণার প্রয়োজনে ইন্টারনেট থেকে পেমেন্ট ছাড়া প্রচুর বই ও অ্যাকাডেমিক আর্টিকেল ডাউনলোড করতে শুরু করেন এবং তখন থেকে তিনি গবেষকদের বিনামূল্যে অ্যাকাডেমিক সামগ্রী সরবরাহের জন্য ওয়েবসাইট তৈরির চিন্তাভাবনা করতে থাকেন। জার্মানিতে তার কাজের জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় অবস্থিত জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি'তে নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড কনশাসনেস বিষয়ে অবৈতনিক ইন্টার্নশিপ লাভ করেন। আটলান্টা শহরে তিনি প্রচুর গৃহহীন ও ভিক্ষুককে দেখেছিলেন। তার মতে, 'আমেরিকান ড্রিম' এ যেরকমভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল, দেশটি তার উল্টোভাবে গড়ে উঠেছে। ২০১১ সালে এলবাকিয়ান কাজাখস্তানে ফিরে আসেন এবং একই বছরের ১৬ এপ্রিল 'সাই-হাব' ওয়েবসাইটটি চালু করেন। ইন্টারনেটে অ্যাকাডেমিক ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহের জন্য একটি নির্দিষ্ট মূল্য (গড়ে ৩৫ মার্কিন ডলার) প্রদান করতে হয় এবং অনেক শিক্ষার্থী কিংবা গবেষক ব্যক্তিগতভাবে এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে অক্ষম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদেরকে এই অ্যাক্সেস প্রদান করে থাকে, কিন্তু এগুলোর পক্ষেও এই ক্রমবর্ধমান ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে উঠছে। ৬টি প্রকাশনা সংস্থা রিড-এলসেভিয়ের, উইলি-ব্ল্যাকওয়েল, স্প্রিঙ্গার, টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস, আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি এবং সেইজ পাবলিশিং- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট প্রকাশিত অ্যাকাডেমিক ম্যাটেরিয়ালের অর্ধেকের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং এরা ক্রমশ এই মূল্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
https://www.relx.com/
https://www.wiley.com/en-us
https://www.springer.com/gp
https://www.tandfonline.com/
https://www.acs.org/content/acs/en.html
https://us.sagepub.com/en-us/nam/home
সাই-হাব এই প্রতিষ্ঠানগুলোর একচ্ছত্র কর্তৃত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলবাকিয়ানের মতে, বই বা নিবন্ধ শেয়ার করা অপরাধ হওয়া উচিত নয়। এলবাকিয়ান বিশ্বাস করেন, বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার থাকা উচিত। ২০১২-২০১৪ সাল পর্যন্ত এলবাকিয়ান মস্কোর হায়ার স্কুল অফ ইকোনমিক্সে'র লোকপ্রশাসন অনুষদে 'ম্যাজিস্ট্রেসি' নিয়ে অধ্যয়ন করেন। ২০১৭-২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি'র ভাষাতত্ত্ব অনুষদে বাইবেলের ভাষাসমূহ নিয়ে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এলবাকিয়ান একজন পলাতক আসামী। ২০১৫ সালে মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ের তার নামে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে এবং একটি মার্কিন আদালত এলসেভিয়েরকে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য এলবাকিয়ানকে নির্দেশ দেয়। ২০১৭ সালে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি এলবাকিয়ানের নামে আরেকটি মামলা দায়ের করে এবং মার্কিন আদালত তাদের ৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য এলবাকিয়ানকে নির্দেশ দেয়। এলবাকিয়ানের জন্মভূমি কাজাখস্তান বা কর্মক্ষেত্র রাশিয়া কেউই তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করতে আগ্রহী নয়। এলবাকিয়ানের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কমিউনিজম দ্বারা প্রভাবিত। তিনি প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোতে পশ্চিমা সমর্থিত গণআন্দোলনের বিরোধী। তার মতে, কোনো আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে কারা সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে সেটি বোঝা জরুরি। এলবাকিয়ান রাশিয়ায় উচ্চ প্রযুক্তির বিস্তারকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির অনুকরণে রাশিয়ায় 'স্কোলকোভো ইনোভেশন সেন্টার' গড়ে তোলার প্রকল্পের ব্যাপারে খুবই উৎসাহী ছিলেন। রুশ সরকারের প্রতি তার সমর্থন তাকে রুশ বিরোধী দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যে অজনপ্রিয় করে তুলে। রুশ বিরোধীদলীয় কর্মীরা এলবাকিয়ানের বিরুদ্ধে এত বেশি নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছিল যে, তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২০১৭ সালে রাশিয়ায় সাই-হাবের অ্যাক্সেস বন্ধ করে দিয়েছিলেন। রুশ অ্যাকাডেমিকদের বিশেষ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং কয়েক দিনের মধ্যে রুশ ব্যবহারকারীদের জন্য সাই-হাব উন্মুক্ত করে দেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন বিচার বিভাগ ঘোষণা দেয় যে, এলবাকিয়ানের সঙ্গে রুশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগ রয়েছে এবং রুশ গোয়েন্দারা সাই-হাবে'র অর্থায়ন করে। এলবাকিয়ান অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন রুশ বা অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তার কোনো সংশ্রব নেই। তিনি এমন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের পক্ষপাতী যেটি পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে এবং নিজস্ব উন্নয়নের পথ স্বাধীনভাবে অনুসরণ করবে। তিনি আরো বলেছেন তিনি চান না রাশিয়া এবং তার মাতৃভূমি কাজাখস্তানের বিজ্ঞানীরা ইরাক, লিবিয়া বা সিরিয়ার বিজ্ঞানীদের অনুরূপ পরিণতি বরণ করুক, যে রাষ্ট্রগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 'গণতান্ত্রিক' হতে 'সাহায্য' করেছে! ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৪ লক্ষ মানুষ সাই-হাব ব্যবহার করে এবং ২০২০ সালের এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী, সাই-হাবে ৮ কোটি ১০ লক্ষের বেশি অ্যাকাডেমিক ম্যাটেরিয়াল রয়েছে।
Comments