সতীত্ব
ধারণা করা হয়, মেয়েদের যোনীতে থাকা সতীত্ব নির্ধারণকারী পাতলা পর্দা বা হাইমেন ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয় কেবলমাত্র তার প্রথম ভ্যাজাইনাল সেক্সের সময়। বিয়ের প্রথম রাতে বিছানার চাদরে মেয়েদের রক্তের দাগ না থাকলে তাকে ভার্জিন মেয়ে হিসেবে গণ্য করা হয় না! যেহেতু প্রথম ভ্যাজাইনাল সেক্সের সময় হাইমেন ছিঁড়ে যায় এবং রক্তপাত ঘটায়, তাই মানুষ মনে করে একবার ভ্যাজাইনাল সেক্সের পর মেয়েদের যোনীতে হাইমেনের আর কোনো অস্তিত্ব থাকে না। হাইমেন নিয়ে এই ভুল ধারণা পৃথিবীর অনেক জনপদের রীতি আর সংস্কৃতি, যা সেই জনপদের মেয়েদের শারীরিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এই রীতি মেয়েদের ধরে সমাজের সামনে অবিশ্বাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে, তাদের বোঝাচ্ছে যে বিয়ের রাতে রক্তপাত না হওয়া মানে তাদের জন্য লজ্জার বিষয়। শুধুমাত্র এই অজুহাতে মেয়েদের শারীরিক অত্যাচারের শিকার হতে হয়। ২০১৭ সালে তাজিকিস্তানে এক নববধুকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে ভার্জিনিটি টেস্ট করানো হলে সে আত্মহত্যা করে! দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত হওয়ার পরও সেখানকার গ্রাম্য অঞ্চলগুলোতে মেয়েদের সাইকেল চালাতে দেয়া হতো না সতীত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে, পরবর্তীতে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে পার্শ্ববর্তী মুসলিম প্রধান প্রজাতন্ত্রগুলোর মতো তাজিকিস্তানেও ধীরে ধীরে সতীত্ব সংক্রান্ত ট্যাবু ছাড়াও নানা কুপ্রথা হারিয়ে যায়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর প্রজাতন্ত্রগুলোর মধ্যে আবার ফিরে আসছে প্রাচীনপন্থী ধর্মীয় ও সামাজিক উগ্র প্রথাগুলো। একসময় ইন্দোনেশিয়াতে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দিতে গেলে মেয়েদের এই পরীক্ষায় পাশ করতে হতো। ২০১১ সালে মিশরে নারী বিপ্লবীদের ভার্জিনিটি পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিলো। ২০১৬ সালে সেদেশের মন্ত্রী এলহামী আগিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের তত্ত্বাবধানে ছাত্রীদের ভার্জিনিটির পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন! ইউরোপিয়ান নর্ডিক অঞ্চলেও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে মেয়েদের হাইমেন পরীক্ষা করানোর এই সংস্কৃতি বাড়ছে। ২০১৫ সালে Cold Facts নামে সুইডিশ টেলিভিশন অনুষ্ঠানে দেখা যায় অনৈতিকভাবে মেয়েদের ওপর এই পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ব্যাপারটা এতোটাই ভয়ঙ্করভাবে মেয়েদের মানসিক চাপে ফেলছে যে অনেকে হাইমেনোপ্লাস্টির মাধ্যমে হাইমেন জোড়া দেয়ার জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করছে। ভারতে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে প্রায় লাখখানেক রুপি খরচ করে রিভার্জিনেশানের এই প্রক্রিয়াতে যৌনাঙ্গকে সার্জারির ছুরি-কাঁচির নিচে ফেলছে শত শত মেয়ে। যারা নিজের ওপর অস্ত্রোপচার চালাচ্ছে না তারা নকল ভার্জিনিটি কিট কিনে নিচ্ছে, যেখানে থাকছে নকল হাইমেন আর রঙিন তরলের স্বয়ংক্রিয় ভঙ্গুর অ্যাম্পুল। এইটুকু খরচও যারা করছে না, তারা লাল তরল নিয়ে চাদর রাঙিয়ে ফেলছে। সামাজিক চাপে সাধারণত এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যেতে চায় না নারীরা। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাদী জোঁকেরা ভার্জিনিটি নকল করার এতোগুলো উপায় দিয়ে বাজার ভর্তি করে ফেলেছে! এজন্যই ধর্মীয় আর সামাজিক নানা কুপ্রথা বাঁচিয়ে রাখা তাদের জন্য অতি জরুরি। উপমহাদেশে প্রাপ্ত বয়স্ক একটা মেয়েকে উল্টো বাধ্য করা হয় খেলাধুলা, পিরিয়ড, শরীরচর্চা নিয়ে সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে যেন তার কোনো কাজের বিনিময়ে তার সতীত্ব নষ্ট না হয়! সেই সতীত্ব যেটা কিনা হাইমেন নামের একটা সামান্য ভঙ্গুর পাতলা পর্দা নির্ধারণ করে! আবার কিনা বিভিন্ন খেলায় মেডেলের স্বপ্ন দেখা হয়! আবার কিনা এসব ফালতু বাধা অতিক্রম করে খেলাধুলার জগতে আসা মেয়েদের টিটকারি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মোল্লাগিরি দেখানো হয়! এই একুশ শতকে এসে শুধুমাত্র হাতে হাতে স্মার্টফোন কিংবা ফেসবুকে একাউন্ট থাকলেই একটা দেশ আধুনিক হয়ে যায়না। আবার প্রাচীনপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে পশ্চিমা পোশাক পড়লেই কেউ আধুনিক হয়ে যায়না। প্রযুক্তি হচ্ছে বিজ্ঞানের প্রায়োগিক দিক এবং বিজ্ঞানকে চিন্তাচেতনায় ধারণ করা হচ্ছে বৈজ্ঞানিক মানসিকতা। নইলে ফতোয়া দিয়ে উল্টো ধর্ষিতাকেই দোররা মারার নির্দেশ দেয়া মোল্লাও ফ্যানের বাতাস খায়, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপকও বাতাস খায়!
হাইমেন একেকজনের ক্ষেত্রে দেখতে একেক রকম। কখনো চাকার রিমের মতো, কখনো ডোনাটের মতো, অর্ধেক চাঁদের মতো, কিছু কিছু আবার এলোমেলো পেঁচানো তারের মতো। কখনো কখনো হাইমেনের মাঝে কেবল একটাই ফাঁকা গোলক থাকে, কখনো আবার থাকে অসংখ্য। হাইমেনের বৈচিত্রময় আকারের কারণেই ভার্জিনিটি পরীক্ষা করার ব্যাপারটা এতটা সোজা নয়। ভার্জিনিটি নষ্ট হওয়া মানেই হাইমেন ছিঁড়ে একেবারে ধ্বংস হয়ে যাওয়া না। ইলাস্টিকের রাবার ব্যাণ্ড যেমন টানলে বড় হয়, হাইমেনও তাই। এই ইলাস্টিসিটির জন্যই একেবারে অক্ষত থেকেও এটা ভ্যাজাইনাল সেক্সকে সহ্য করে নিতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে হাইমেন কিছুটা ছিঁড়ে গিয়ে ভ্যাজাইনাল সেক্সের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা করে দেয়, কিন্তু এটা কখনোই যোনী থেকে একেবারে উধাও হয়ে যায় না। বড়জোর এর আকার কিছুটা পরিবর্তিত হয়। যেসব মেয়েদের হাইমেনের বৈশিষ্ট্য চুলের রাবার ব্যান্ডের মতো, সেসব মেয়ের কখনো সেক্সের সময় রক্তপাত ঘটবে না। কিছু মেয়ের প্রথমবার সেক্সের পর রক্তপাত হতে পারে, কিছু মেয়ের না-ও হতে পারে।
Comments