বাংলাদেশী মুসলমান ও কন্যা ভ্রূণ হত্যা
ধার্মিকদের মধ্যে, বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে এক মুখে দুই কথা বলা অতি সাধারণ একটা ব্যাপার। এই ব্লগের অনেক লেখাই বাংলাদেশকে নিয়ে দেখেই মুসলমান সম্প্রদায়কে গুরুত্ব দেয়া হয়, কারণ এদেশের নব্বই ভাগ অধিবাসী মুসলমান। ব্লগটার লেখা যদি ভারতের অধিবাসীদের ব্যাপারে হতো, তাহলে হিন্দু সম্প্রদায়কে গুরুত্ব দেয়া হতো; ঠিক একইভাবে পশ্চিমা কোনো দেশকে নিয়ে লেখা হলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে গুরুত্ব দেয়া হতো। এতো কথা এজন্যই বলা, কারণ বাংলাদেশের মুসলমানরা প্রায়সময় এই অভিযোগটা তুলে যে শুধু নাকি তাদের আক্রমণ করে লেখালেখি করা হয়! আবার এই এরাই যখন দেখে অমুসলিম সম্প্রদায়ের নানা সামাজিক আর ধর্মীয় অসঙ্গতি নিয়ে কোনো লেখা, তখন এরাই আঙ্গুল তুলে নির্লজ্জের মতো বলে বেড়ায় যে অমুসলিমরা এমনই। ঠিক যেমন ইতিহাসে উল্লেখিত কোনো অমুসলিম শাসক কর্তৃক কোনো মুসলিম প্রধান অঞ্চল দখল করে নিলে সেটা হয় 'আক্রমণ' (সেগুলো নিয়ে আবার ইনিয়ে বিনিয়ে গাদা গাদা বই লেখা হয় সত্য-মিথ্যা মিক্স করে, এসব বই আবার এদেশের ফুটপাথ থেকে শুরু করে বড়ো বড়ো প্রকাশনীর ওয়েবসাইট থেকে কেনা যায়) আর কোনো মুসলিম শাসক কর্তৃক কোনো অমুসলিম প্রধান অঞ্চল দখল করলে সেটা হয়ে যায় 'দীনের প্রচার', 'ইসলামের আলো পৌঁছে দেয়া', 'অমুসলিম শাসকদের অত্যাচার থেকে সেই অঞ্চলের অধিবাসীদের রক্ষা' ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি۔۔۔۔ এই লেখাটাতে মূলত গুরুত্ব দেয়া হবে এদেশের মুসলমানদের একটা বিশেষ দ্বিচারী আচরণের (ভ্রূণ হত্যা) উপর। হাদীসে আছে ডেলিভারির সময় কোনো মহিলা মারা গেলে সে শহীদের মর্যাদা পায়!
https://islamqa.info/en/answers/8800/his-wife-died-following-childbirth-is-she-a-shaheedah-martyr
কিন্তু এদেশে নারী নির্যাতনের পরিমাণ ভয়াবহ দেখেই অধিকাংশ গর্ভপাত কিংবা এই কারণে মৃত্যুটা হয় মূলত স্বামী বা শশুর বাড়ির লোকজনদের দ্বারা নির্যাতনের সময়। ইসলাম অনুযায়ী কি এই ধরণের শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে কোনো নারী মারা গেলেও সে শহীদ? ধর্মগুলো বায়বীয় শান্তনার বাণী ছাড়া যে আর কিছুই না সেটা বুঝতে হলে এই একটা দিকই তুলে ধরা যথেষ্ট। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী এদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লক্ষ এবং পুরুষের তুলনায় নারী শর্ট আছে ২ লক্ষের মতো।
https://dbcnews.tv/news/15d00ec9666671
কিন্তু জাকির নায়েক না তার এক ভাষণে ইসলামে বহুবিবাহের জায়েজ থাকার ব্যাপারটার সাফাই গাইতে গিয়ে বলেছিলো যে, নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি দেখে সব নারীদের গতি করতে বহুবিবাহ যৌক্তিক? তাছাড়া বাংলাদেশে তো আরবের জাহেলিয়াত যুগের মতো কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া হয়নি। তাহলে এই ২ লক্ষ শর্ট কিভাবে সৃষ্টি হলো? প্রশ্নটা তাদের প্রতি যারা ভারতের কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা নিয়ে টিটকারি দেয় এবং গর্ব করে বলে যে মুসলমানরা এটা করেনা, ইসলামে নারীদের মর্যাদা অনেক ইত্যাদি ইত্যাদি۔۔۔۔রাস্তাঘাটে, ডাস্টবিনে, ড্রেনে, নদীর পাড়ে কয়েকদিন পর পর অপরিণত মৃত ভ্রূণ পাওয়া যায়। এদেশের মুসলমানরা এসব দৃশ্যের ছবি পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখে যে, এগুলো নাকি নাস্তিক আর বিধর্মীদের কাজ কিংবা তাদের সঙ্গদোষে খারাপ মুসলিমরা এই ধরণের জঘন্য কাজ করেছে! ২০২১ সাল চলছে, ধরেই নেয়া যায় যে ২০১৯ সালের ১৬ কোটি জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটিতে পৌঁছে গেছে। কেউ যদি দাবী করে এই ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১ লক্ষ নাস্তিক, তাহলে সেটাও হবে শতাব্দীর সবচেয়ে বড়ো রসিকতা। আর ক্লিনিকগুলোতে গর্ভপাত করতে যাওয়া লোকেদের ব্যাকগ্রাউন্ড এই মুসলমানরা কি দেখেছে? যারা এসব ক্লিনিকের দ্বারস্থ হয় তাদের প্রায় সবাই মুসলমান। অন্য ধর্মের লোকেরা টিটকারি দেয় মোল্লাদের কিংবা আরও সাধারণীকরণ করলে মুসলমানদের অধিক সন্তান নিয়ে। কিন্তু আগের শতকগুলোতে পশ্চিমা বিশ্বের এবং উপমহাদেশের বড়ো বড়ো অমুসলমান পন্ডিতদের পরিবার ছিল বিশাল। কিন্তু ইসলাম মেনে যদি মুসলমানরা তাদের দাবী অনুযায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো আসলেই গ্রহণ না করতো, তাহলে আমরা এমনকি মোল্লাদের ঘরেও গড়ে তিনজনের বেশি সন্তান দেখি না কেন? একুশ শতকে বাংলাদেশের কোনো পরিবারে ১০-১২ জন ভাইবোন দেখা যায়না কেন? অথচ এই মোল্লারাই না প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তায় জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে এটা লিখে যে, ব্যাপারটা নাকি সুন্নত বিরোধী? ভারতের মতো কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা বাংলাদেশে ভয়াবহ না হলেও ক্লিনিকগুলোতে ঠিকই কাজটা করা হয় সেক্স ডিটার্মিনেশন টেস্ট এর মাধ্যমে। যারা কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থার বিরোধী তাদের বুর্জোয়া গণতন্ত্রের বাস্তবতা দেখানো যাক এবার। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেসরকারি ক্লিনিকগুলো এই সেক্স ডিটার্মিনেশন টেস্ট এবং এবরশন সংক্রান্ত কেইসগুলোর মাধ্যমে বিশাল মুনাফা অর্জন করে যাচ্ছে প্রতি বছর। মুসলমান পরিবারগুলোতে স্বামীরা তালাকের হুমকি দেয় কন্যা শিশুর ভ্রূণ এর গর্ভপাত না ঘটালে, আবার নিজে থেকে এক্সিডেন্টালি গর্ভপাত হয়ে গেলে ঐ নারীর উপর 'আল্লাহ'র আজাব' এর অভিযোগ নেমে আসে। এই লেখার একেবারে প্রথমদিকে গর্ভবতী নারীদের উপর শারীরিক নির্যাতনের একটা উদাহরণ দেয়া হয়েছিল। কোনো নারী স্বামী বা শশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ধরা যাক আত্মহত্যা করলো। এক্ষেত্রে ইসলাম অনুযায়ী ঐ নারীর লাশের জানাজা পড়ানো হবে না এবং কবরস্থানেও লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়না! ঐ নারী বেঁচে থেকেও বিচার পেতো কি? ইসলামেই তো স্ত্রী সেক্স করতে না চাইলে স্বামীকে মারার অধিকার দেয়া হয়েছে, স্বামীকে কাজের মেয়ের সাথে সেক্স করার অনুমতিও দেয়া হয়েছে, এমনকি কোনো নারী ধর্ষিত হওয়ার সময় চারজনকে দাঁড়িয়ে থেকে ঐ দৃশ্য দেখতে হবে আর চারজন না থাকলে ঐ নারীকেই মেরে ফেলার হুকুম দেয়া হয়েছে! এখন কেউ যদি বলে আমি ইসলামের অবমাননা করছি তাহলে ঐ ছাগলকে খোঁয়াড়ে বেঁধে রাখা উচিত। কারণ এগুলো কেউ বানায়নি, এগুলো কোরানেই সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে। মোটকথা বেঁচে থাকা অবস্থায় যেমন মুসলমান নারীদের বর্বরতা চুপচাপ মেনে নিতে হবে (মেনে না নেয়া নারীদের পদে পদে গজবের ভয় দেখানো হয়েছে কোরান-হাদিসে), ঠিক তেমনি আত্মহত্যার মাধ্যমে মুক্তির খোঁজ করা মুসলমান নারীদের মৃত্যুর পরও চরম অবমাননাকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। মুসলমানরা হিন্দুদের মতো তীব্র মাত্রায় কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা না করলেও তারা সেই ঝালটা মেটায় নিজেদের কন্যা শিশুদের বাল্য বিয়ের ব্যবস্থা করে, কারণ তাদের মতে কন্যা শিশুদের পিছনে অর্থ খরচ করলে সেটা রিটার্ন আসবে না (যেন মানুষ না, পণ্যের পিছনে বিনিয়োগ)। এই কারণেই মুসলমান সমাজে ফাইভ পাস বা এইট পাস ছেলে হলেও পাওয়া যায়, কিন্তু অধিকাংশ নারী অক্ষরজ্ঞান শূন্য অবস্থায় আজীবন অতিবাহিত করে। কোরানে কারণও বলে দেয়া হয়েছে কেন ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অর্ধেক সম্পত্তির অধিকারী হবে আর সূরা আন-নিসা অনুযায়ী কারণটা হচ্ছে পুরুষরা নাকি পরিবারের নারী সদস্যদের জন্য অর্থ ব্যয় করে! তাহলে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ স্বামী পরিত্যক্ত নারীদের ক্ষেত্রেও কি একই আইন প্রযোজ্য হবে যারা কৃষি জমিতে, গার্মেন্টসে, মানুষের বাড়িতে কাজ করে নিজেদের সন্তানদের বড়ো করছে এবং দেশের বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছে? কুষ্টিয়ায় তো এই নারীদের বিরুদ্ধেই মোল্লারা ফতোয়া দিয়েছিল যে, কৃষি খেতে নারী কাজ করলে নাকি ফসলের উৎপাদন কম হয়! গার্মেন্টসের নারীদেরই তো হেফাজতিরা আর তাদের গুরু শফি বলেছিলো বেশ্যা!
৩৭৬ ধারা দণ্ডবিধি অনুসারে ধর্ষণের শাস্তি-
"যদি কেউ ধর্ষণ করে, তার অবশ্যই শাস্তি হবে যা দশ বছরের কারাদণ্ডের সমান হতে পারে এবং জরিমানাও করা হবে যদি না ধর্ষিত নারী তার নিজের স্ত্রী হয় এবং তার বয়স ১২ বছরের বেশী হয়।"
এই হচ্ছে বাংলাদেশের আইন, যেখানে মেরিটাল রেপ বা বৈবাহিক ধর্ষণকে বৈধতা দেয়া হয়েছে! এমন আরও অসংখ্য প্রাচীনপন্থী ইসলামী আইন বাংলাদেশের সংবিধানে থাকার পরও একদল আছে যারা ১০০% শরিয়া আইন বাস্তবায়নের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
Comments