নাভালনি সমাচার



আলেক্সেই আনাতোলিয়েভিচ নাভালনি ২০০০ সালে ইউরোপমুখী রাজনৈতিক দল ইয়াব্লোকো'য় যোগদান করেন এবং ২০০১ সালে দলটিতে আনুষ্ঠানিক সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Yabloko

২০০২ সালে তিনি ইয়াব্লোকোর মস্কো শাখার আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আইনসভা নির্বাচনের আগে তিনি ইয়াব্লোকোর নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রমের মস্কো উপবিভাগের প্রধান ছিলেন, এই নির্বাচনে ইয়াব্লোকো স্টেট দুমা'র ৪৫০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৪টি আসন লাভ করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/State_Duma

২০০৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ইয়াব্লোকোর মস্কো শাখার চিফ অফ স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একই সঙ্গে ২০০৪ সালে তিনি দলটির মস্কো শাখার উপপ্রধান নিযুক্ত হন। ২০০৫ সালের আগস্টে নাভালনি মস্কোর কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক জেলার সামাজিক পরিষদের সদস্য হন এবং নভেম্বরে 'ইয়ুথ পাবলিক চেম্বার' প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Youth_Public_Chamber_of_Russia

একই বছরের ডিসেম্বরে মস্কো নগর দুমা নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। একই বছর তিনি 'গণতান্ত্রিক বিকল্প (DA)' আন্দোলন শুরু করেন। নাভালনি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত 'টিভি সেন্টার' চ্যানেলে টেলিভিশন বিতর্কেরও আয়োজন করেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/TV_Centre_(Russia)

২০০৬ সালে নাভালনি ইয়াব্লোকোর কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন এবং ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি মস্কো নগর হলে 'রুশ মার্চ' আয়োজনের অনুমতি প্রার্থনা করেন এবং সে বছর আয়োজিত রুশ মার্চের তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Russian_march

রুশ মার্চ হচ্ছে রাশিয়ায় আয়োজিত বার্ষিক রাজনৈতিক সমাবেশ যেটিতে রুশ উগ্র জাতীয়তাবাদী, বর্ণবাদী, অভিবাসনবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদী, ইহুদিবিদ্বেষী, মুসলিমবিদ্বেষী, ফ্যাসিবাদী ও নাৎসিবাদী রাজনৈতিক সংগঠনগুলো অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে রুশ সরকার রুশ মার্চ এর আয়োজন নিষিদ্ধ করে। ২০০৭ সালের ২৩ জুন নাভালনি 'জনতা' নামক নতুন রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করেন। ইয়াব্লোকো ছিল জাতিবিদ্বেষ, বর্ণবাদ, ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের বিরোধী; আর রুশ মার্চ ও 'জনতা' দলের সঙ্গে নাভালনির সংশ্লিষ্টতা ছিল ইয়াব্লোকোর দলীয় আদর্শের পরিপন্থী। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে তিনি ইয়াব্লোকোর মস্কো শাখার উপপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরের দলীয় অধিবেশনে নাভালনি ইয়াব্লোকোর সভাপতি গ্রিগরি ইয়াভলিনস্কির পদত্যাগের দাবি জানান।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Grigory_Yavlinsky

নাভালনিকে উগ্র জাতীয়তাবাদী কার্যক্রম ও দলের ক্ষতি সাধনের দায়ে ইয়াব্লোকো থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০০৮ সালের জুনে নাভালনির 'জনতা' দল 'অবৈধ অভিবাসনবিরোধী আন্দোলন' এবং 'বৃহৎ রাশিয়া' দলের সঙ্গে মিলে 'রুশ জাতীয় আন্দোলন' নামক জোট গঠন করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Great_Russia_(political_party)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Movement_Against_Illegal_Immigration

'অবৈধ অভিবাসনবিরোধী আন্দোলন' হচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবাদী, অভিবাসনবিরোধী, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ও মুসলিমবিদ্বেষী দল এবং 'বৃহৎ রাশিয়া' হচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দল। ২০০৮ সালের আগস্টে দক্ষিণ ওসেতিয়ার ওপর জর্জিয়া আক্রমণ করে এবং দক্ষিণ ওসেতিয়ায় মোতায়েনকৃত কিছু রুশ শান্তিরক্ষী নিহত হয়।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Russo-Georgian_War

এর প্রতিক্রিয়ায় রুশ-জর্জীয় যুদ্ধ শুরু হয় এবং রুশ সৈন্যরা পশ্চিমা সমর্থিত জর্জিয়াকে পরাজিত করে। নাভালনি জর্জিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি জর্জীয়দের 'ইঁদুর' হিসেবে অভিহিত করে মত প্রকাশ করেন যে, রাশিয়ার উচিত জর্জিয়ার ওপর ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করা ও রাশিয়া থেকে জর্জীয়দের বহিষ্কার করা। ২০১৩ সালে নাভালনিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জর্জীয়দের 'ইঁদুর' হিসেবে অভিহিত করার বিষয়ে দুঃখপ্রকাশ করলেও এই বিষয়ে তিনি এখনো আগের মনোভাব পোষণ করেন বলে জানান। ২০০৮ সালে নাভালনি ৫টি রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস কোম্পানিতে ৩ লক্ষ রুবল বিনিয়োগ করে কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডারে পরিণত হন। কোম্পানিগুলো হচ্ছে - রসনেফৎ, গাজপ্রম, গাজপ্রম নেফৎ, লুকওয়েল এবং সুরগুৎনেফতেগাজ।

https://www.rosneft.com/

https://www.gazprom.com/

https://www.gazprom-neft.com/

https://www.lukoil.com/

https://www.surgutneftegas.ru/en/

২০১০ সালের নভেম্বরে নাভালনি রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি 'ট্রান্সনেফৎ' এর অডিটিং সংক্রান্ত গোপন নথিপত্র প্রকাশ করে তার ব্লগে দাবি করেন 'পূর্ব সাইবেরিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর তেল পাইপলাইন' নির্মাণের সময় কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার চুরি করে।

https://en.transneft.ru/

২০১০ সালের ডিসেম্বরে নাভালনি 'রোসপিল' প্রকল্প সৃষ্টি করেন।

https://fbk.info/

২০১১ সালের মে মাসে নাভালনি 'রোসইয়ামা' প্রকল্প চালু করেন।

https://rosyama.ru/

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাভালনি এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার ক্ষমতাসীন দল সংযুক্ত রাশিয়া'কে 'ঠগ ও চোরের দল' হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/United_Russia

২০১১ সালের আগস্টে নাভালনি রুশ ও হাঙ্গেরীয়ান সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত রিয়েল এস্টেট চুক্তি সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস করেন। তার ফাঁসকৃত নথিপত্র অনুযায়ী, হাঙ্গেরীর সরকার রুশ ধনকুবের ভিক্তর ভেক্সেলবের্গ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বিদেশে অবস্থিত একটি কোম্পানির কাছে ২ কোটি ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার মূল্যে মস্কোয় অবস্থিত একটি প্রাক্তন দূতাবাস ভবন বিক্রি করে এবং কোম্পানিটি ১১ কোটি ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার মূল্যে ভবনটি রুশ সরকারের কাছে বিক্রি করে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাঙ্গেরিতে এই চুক্তি সম্পাদনের সঙ্গে জড়িত ৩ সরকারি কর্মকর্তাকে পরে গ্রেপ্তার করা হয়।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Viktor_Vekselberg

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে নাভালনি 'দুর্নীতিবিরোধী ফান্ড' স্থাপন করেন।

https://youtube.com/c/%D0%90%D0%BB%D0%B5%D0%BA%D1%81%D0%B5%D0%B9%D0%9D%D0%B0%D0%B2%D0%B0%D0%BB%D1%8C%D0%BD%D1%8B%D0%B9

২০১১ সালে নাভালনি নিজেকে 'জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রী' হিসেবে বর্ণনা করে রুশ নৃগোষ্ঠীগত জাতীয়তাবাদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Russian_nationalism

তিনি 'ককেশাসকে খাওয়ানো বন্ধ করো' নামক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এই আন্দোলনটির উদ্দেশ্য হচ্ছে উত্তর ককেশাসের মুসলিম অধ্যুষিত ও তুলনামূলকভাবে দরিদ্র প্রজাতন্ত্রগুলোকে রুশ কেন্দ্রীয় সরকার যে বার্ষিক ভর্তুকি প্রদান করে সেটি বন্ধ করা। একই বছর বিবিসিকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে তিনি উগ্র জাতীয়তাবাদী রুশ মার্চে তার অংশগ্রহণকে সমর্থন করেন। একই বছর প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তিনি উত্তর ককেশাসের মানুষদের 'কালো চামড়াবিশিষ্ট' ও 'আরশোলা' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত রুশ আইনসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল 'সংযুক্ত রাশিয়া' বিজয়ী হয়, বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনয়ন করে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য মস্কোয় প্রায় ৬,০০০ মানুষ জড়ো হয় এবং এদের মধ্যে নাভালনি ছিলেন একজন। সমাবেশটি থেকে নাভালনিসহ প্রায় ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং নাভালনিকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। লাতভিয়া ভিত্তিক রুশ বেতারকেন্দ্র মস্কোর প্রতিধ্বনি'র প্রধান সম্পাদক আলেক্সেই ভেনেদিক্তভের মতে, নাভালনিকে কারারুদ্ধ করা ছিল রুশ সরকারের রাজনৈতিক ভুল পদক্ষেপ, কারণ এটি তাকে অনলাইন নেতা থেকে অফলাইন নেতায় রূপান্তরিত করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Alexei_Venediktov

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Echo_of_Moscow

২০ ডিসেম্বর মুক্তি লাভের পর নাভালনি রুশ জনসাধারণকে ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। ২৪ ডিসেম্বর তার নেতৃত্বে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ মস্কোয় বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং নাভালনি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন-

"এই মুহূর্তে আমি ক্রেমলিন দখল করে নেয়ার মতো পর্যাপ্ত সংখ্যক লোককে দেখতে পাচ্ছি!"

২০১২ সালের প্রথমদিকে নাভালনি একটি ইউক্রেনীয় টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে মত প্রকাশ করেন যে, রুশ পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ইউক্রেন ও বেলারুশের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে যাওয়া এবং রুশ, ইউক্রেনীয় ও বেলারুশীয়রা প্রকৃতপক্ষে একই জাতি। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাভালনির 'দুর্নীতিবিরোধী ফান্ড' চেচেন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি রমজান কাদিরভকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করে এবং চেচেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি গাড়িবহর ক্রয়ের ক্ষেত্রে বেআইনি পন্থা অবলম্বন করেছে বলে উল্লেখ করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ramzan_Kadyrov

নাভালনি চেচেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রুসলান আলখানভ, উপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোমান এদিলভ এবং চেচেন নিলাম কমিশনের উপপ্রধান আলবের্ত গাইসুলতানভকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করেন। কাদিরভ নাভালনিকে 'রাশিয়ার শত্রুদের প্রতিনিধি' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ২০১২ সালের মার্চে ভ্লাদিমির পুতিন তৃতীয় বারের মতো রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং নাভালনি মস্কোর পুশকিনস্কায়া স্কয়্যারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ আয়োজন করতে সহযোগিতা করেন। ১৪,০০০-২০,০০০ মানুষ এই বিক্ষোভে যোগদান করে। বিক্ষোভের পর পুলিশ নাভালনিকে গ্রেপ্তার করে, কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ৮ মে পুতিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং এইদিন নাভালনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। এসময় তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১৫ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ২০১২ সালের মে মাসে নাভালনি রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী ইগর শুভালভকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Igor_Shuvalov

তিনি দাবি করেন রুশ ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ ও আলিশের উসমানভ শুভালভের কোম্পানিকে লক্ষ লক্ষ ডলার উৎকোচ প্রদান করেছে এবং তিনি এই অর্থ সরবরাহ সংক্রান্ত নথিপত্রের স্ক্যানকৃত কপি তার ব্লগে প্রকাশ করেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Roman_Abramovich

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Alisher_Usmanov

উসমানভ ও শুভালভ উভয়ে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করলেও তাদের মতে এই অর্থ লেনদেন 'উৎকোচ' ছিল না এবং এটি রুশ আইনকে কোনোভাবে লঙ্ঘন করেনি।
২০১২ সালের জুনে নাভালনির সহকর্মীরা 'জনমৈত্রী' দল গঠন করে। নাভালনি দলটির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। একই বছরের জুলাইয়ে তিনি তার ব্লগে কিছু নথিপত্র প্রকাশ করেন এবং এর মধ্য দিয়ে দাবি করেন রুশ তদন্ত কমিটির প্রধান আলেক্সান্দর বাস্ত্রিখিনের চেক প্রজাতন্ত্রে একটি ব্যবসা রয়েছে যেটি তিনি গোপন রেখেছেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Alexander_Bastrykin

২০১২ সালের ৩০ জুলাই রুশ তদন্ত কমিটি নাভালনির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনে, যেখানে বলা হয় ২০০৯ সালে কিরভ প্রদেশের গভর্নর নিকিতা বেলিখের সহকারী হিসেবে কাজ করার সময় নাভালনি রাষ্ট্রায়ত্ত কাঠ কোম্পানি 'কিরভলেস' থেকে ১৬ মিলিয়ন রুবল তছরুপ করেছেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Nikita_Belykh

নাভালনিকে মস্কোর বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ২০১৩ সালের এপ্রিলে কিরভ শহরের একটি আদালতে নাভালনির বিচার আরম্ভ হয়। ১৮ জুলাই আদালতটি নাভালনিকে দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে। একই দিনে রুশ প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় রায়টি আপিল করে জানায় উচ্চ আদালতের রায় ছাড়া শাস্তিটি কার্যকর হবে না। ১৯ জুলাই নাভালনি মুক্তি লাভ করেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে নাভালনির নামে আরেকটি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয় এবং একটি ফরাসি কোম্পানি ও সংশ্লিষ্ট রুশ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তিনি ও তার ভাই ওলেগ নাভালনি অভিযুক্ত হন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাভালনিকে গৃহবন্দি করা হয়, একই বছরের আগস্টে এটি শিথিল করা হয়। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে 'জনমৈত্রী' দলটিতে যোগদান করেন এবং নভেম্বরে দলটির নেতা নির্বাচিত হন। রুশ আইন অনুযায়ী, একই নামের দু'টি রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকা অবৈধ এবং এজন্য দলটির নিবন্ধন করা সম্ভব হচ্ছিল না। ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দলটি নাম পরিবর্তন করে 'প্রগতি দল' নাম ধারণ করে। এরপর দলটি নিবন্ধন করতে সক্ষম হয়। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে মস্কোর মেয়র নির্বাচনে নাভালনি ছিলেন অন্যতম প্রার্থীদের। আরপিআর-পানরাস দলটি নাভালনিকে সমর্থন করে এবং নির্বাচনের জন্য নাভালনির দল প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/People's_Freedom_Party

নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন ৫১.৩৭% ভোট লাভ করে বিজয়ী হন এবং নাভালনি ২৭.২৪% ভোট লাভ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sergey_Sobyanin

নাভালনি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে এটিকে 'জাল' বলে অভিহিত করেন, কিন্তু অধিকাংশ পর্যবেক্ষক নির্বাচন স্বচ্ছ ছিল বলে মত প্রকাশ করেন। নাভালনি মস্কো নগর আদালত ও রুশ সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনের ফলাফল বিষয়ে অভিযোগ করলেও উভয় আদালত নির্বাচনের ফলাফলকে বৈধ হিসেবে রায় প্রদান করে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে মস্কোর বিরিউলিয়োভো জেলায় এক আজারবাইজানি অভিবাসীর হাতে এক রুশ নাগরিক খুন হয় এবং এই প্রেক্ষাপটে সেখানে রুশরা আজারবাইজানি ও অন্যান্য ককেশীয় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা শুরু করে। নাভালনি তার ব্লগে দাঙ্গাকারীদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে 'বৈধ ও অবৈধ অভিবাসী হোর্ডে'র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তাদের প্রশংসা করেন। তিনি আরো মন্তব্য করেন, অভিবাসীরা মস্কোয় অপরাধের হার বৃদ্ধির জন্য দায়ী। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। নাভালনি প্রথমদিকে এর বিরোধিতা করে পুতিন ও তার সাথের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পশ্চিমা বিশ্বকে আহ্বান জানান। ২০১৪ সালের অক্টোবরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেন, রাশিয়া কর্তৃক ক্রিমিয়া দখল অবৈধ ছিল, কিন্তু এখন বাস্তবতা হচ্ছে ক্রিমিয়া রাশিয়ার অংশে পরিণত হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করবেন কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে মন্তব্য করেন-

"ক্রিমিয়া কি কোনো ধরনের সসেজ যেটা বারবার হাতবদল করা হবে? আমার সেটা মনে হয় না।"

তার মতে, ক্রিমিয়া আর কখনো ইউক্রেনের অংশ হবে না। একই সাক্ষাৎকারে তিনি মত ব্যক্ত করেন রুশ ও ইউক্রেনীয়রা কার্যত 'একই জাতি'। তিনি এটিও উল্লেখ করেন যে, তিনি জানেন তার এই মতামত ইউক্রেনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু এটিই বাস্তবতা। তার মতে, রুশ সরকারের উচিত পূর্ব ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন প্রদান থেকে বিরত থাকা। তিনি মত প্রকাশ করেন রাশিয়ার জন্য ইউক্রেনের তুলনায় অভিবাসনের ইস্যুটি ১০০ গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য এশীয় রাষ্ট্রগুলো থেকে আগত অভিবাসীরা ভিসা ছাড়া রাশিয়ায় প্রবেশ করার সুযোগ পায়। নাভালনি এর তীব্র বিরোধিতা করে মন্তব্য করেন যে, রাশিয়ার উচিত এই সুযোগ বন্ধ করে দেয়া। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নাভালনির 'প্রগতি দল' অন্যান্য উদারপন্থী (!) দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করে। একই বছরের ডিসেম্বরে নাভালনি ও তার ভাই ওলেগ মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে সাড়ে ৩ বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত হলেও নাভালনির শাস্তি স্থগিত রাখা হয়। ২০১৫ সালের প্রথমদিকে নাভালনির 'প্রগতি দল' অন্য ৪টি দলের সঙ্গে জোট গঠন করে। একই বছরে রাশিয়ার কস্ত্রোমা প্রদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জোটটি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং জোট গঠনের মাধ্যমে নাভালনির ক্ষমতা অর্জনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মস্কোয় রাশিয়ার বৃহত্তম মসজিদ 'মস্কো ক্যাথেড্রাল মসজিদ' উদ্বোধন করা হলে নাভালনি এর বিরোধিতা করে মন্তব্য করেন যে, যেখানে ব্রিটেনে মসজিদ নির্মাণের অনুমতি প্রদান স্থগিত রাখা হচ্ছে এবং সুইজারল্যান্ডে মিনার নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে, সেখানে রাশিয়ার এরকম 'মুসলিম তোষণ' নীতি দু:খজনক। একই বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সিরীয় গৃহযুদ্ধে সিরীয় সরকারের পক্ষে সামরিক হস্তক্ষেপ করলে নাভালনি এটির বিরোধিতা করেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে ২০১৩ সালে আনীত মানি লন্ডারিংয়ের মামলার প্রেক্ষাপটে আদালত নাভালনিকে ৪.৪ মিলিয়ন রুবল জরিমানা প্রদানের নির্দেশ দিলেও নাভালনি কেবল ২৯ লক্ষ রুবল জরিমানা প্রদান করেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে রুশ সুপ্রিম কোর্ট কিরভলেস দুর্নীতি মামলায় কিরভ জেলা আদালত নাভালনিকে যে শাস্তি প্রদান করেছিল সেটি বাতিল করে দেয় এবং মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে দেখার জন্য আদালতটিকে নির্দেশ দেয়। একই বছরের ডিসেম্বরে নাভালনি ঘোষণা করেন তিনি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য রুশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কিরভ জেলা আদালত কিরভলেস দুর্নীতি মামলায় নাভালনিকে প্রদত্ত শাস্তি বহাল রাখলেও শাস্তি স্থগিত রাখা হয়। ২০১৭ সালের মার্চে নাভালনি "He Is Not Dimon to You" নামক প্রামাণ্যচিত্রে অভিযোগ করেন রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে হস্তগত করেছেন। ২৬ মার্চ নাভালনি রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজন করেন। কিছু কিছু শহরে বিক্ষোভের অনুমতি দেয়া হলেও মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গসহ অন্যান্য শহরে অনুমতি দেয়া হয়নি। মস্কোয় নাভালনিসহ ৫০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৭ মার্চ অবৈধ বিক্ষোভ আয়োজনের কারণে নাভালনিকে ২০,০০০ রুবল জরিমানা করা হয় এবং গ্রেপ্তারের সময় পুলিশকে বাধা প্রদানের জন্য ১৫ দিনের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল একদল ব্যক্তি নাভালনির মুখে অ্যান্টিসেপ্টিক রং ছিটিয়ে দেয়ায় নাভালনি রুশ সরকারকে দায়ী করেন। একই বছরের জুনে অবৈধভাবে বিক্ষোভ আয়োজনের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ৩০ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। একই বছর নাভালনির চিফ অফ স্টাফ লিওনিদ ভলকভ জানান নাভালনির দল রাশিয়ায় সমকামী বিয়ের বৈধতা প্রদানের পক্ষে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রুশ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন নাভালনির পূর্ববর্তী অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করে। নাভালনি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রুশ সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে আপিল করলে তা খারিজ করে দেয়া হয়। নাভালনি রুশ জনসাধারণকে নির্বাচন বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে ২৮ জানুয়ারি বিক্ষোভের আয়োজন করেন। বিক্ষোভকালে নাভালনিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, সেই দিনই তাকে মুক্তি প্রদান করা হয়। রুশ জনসাধারণ নাভালনির নির্বাচন বর্জনের ডাকে খুব বেশি সাড়া দেয়নি। ২০১৮ সালের মার্চে রুশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৬৭.৫৪% ভোটার ভোট প্রদান করে এবং ভ্লাদিমির পুতিন বিজয়ী হন। পুতিনের শপথ গ্রহণের দুই দিন আগে ৫ মে নাভালনি পুতিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আয়োজন করেন। বিক্ষোভ চলাকালে নাভালনিসহ ১,৬০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১৫ মে অবৈধ বিক্ষোভ আয়োজনের জন্য নাভালনিকে ৩০ দিনের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। ১৯ মে নাভালনির 'প্রগতি দল' এর নতুন নামকরণ করা হয় 'ভবিষ্যতের রাশিয়া'।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Russia_of_the_Future

২০১৮ সালের আগস্টে নাভালনি অভিযোগ করেন রুশ ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান জেনারেল ভিক্তর জলোতভ তার বাহিনীর জন্য সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের ক্ষেত্রে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করেছেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Viktor_Zolotov

একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর আরেকটি অবৈধ বিক্ষোভ আয়োজনের দায়ে তাকে ২০ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালে ইউক্রেনীর সরকারের উদ্যোগে ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স ধর্মীয় নেতারা রুশ অর্থোডক্স চার্চ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্নতা ঘোষণা করেন এবং স্বতন্ত্র 'ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স চার্চ' প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় নাভালনি টুইট করেন-

"যেটা সৃষ্টি করতে কয়েক শতাব্দী লেগেছিল, পুতিন এবং তার গর্দভরা চার বছরে সেটি ধ্বংস করেছে....পুতিন রুশ বিশ্বের শত্রু!"

২০১৯ সালের মস্কো নগর দুমা নির্বাচনে নাভালনি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন করলেও অনেককে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার কারণে মস্কোয় তীব্র বিক্ষোভ দেখা দেয়। নাভালনি বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক ছিলেন, জুলাইয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১০ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এরপর তাকে পুনরায় ৩০ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সংযুক্ত রাশিয়া দল বিজয় অর্জন করে। ২০২০ সালের জুনে নাভালনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে চলমান 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Black_Lives_Matter

অথচ নিজের দেশ রাশিয়ায় তিনি ককেশীয় ও মধ্য এশীয়দের প্রতি বর্ণবাদকে সমর্থন করেন! ২০২০ সালের ২৫ জুন থেকে ১ জুলাই রুশ সংবিধান পরিবর্তনের জন্য রাশিয়ায় গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল পুতিনকে ২০২৪ সালের পর আরো দুইবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা, রাশিয়াকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করা, সমকামী বিয়ে নিষিদ্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক আইনের ওপর রুশ আইনের প্রাধান্য ঘোষণা করা। নাভালনি এটিকে 'অভ্যুত্থান' হিসেবে আখ্যায়িত করে গণভোট বয়কট করতে রুশ জনসাধারণকে আহ্বান জানান। অথচ ৬৭.৮৮% রুশ ভোটার এই গণভোটে ভোট প্রদান করে এবং তাদের মধ্যে ৭৮.৫৬% সংবিধান পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেয়। গণভোটের ফল প্রকাশের পর নাভালনি ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করে একে 'মিথ্যা' হিসেবে আখ্যা দেন। ২০২০ সালের জুলাইয়ে রাশিয়ার খাবারভস্ক সীমান্ত প্রদেশের গভর্নর সের্গেই ফুরগালকে খুনের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sergei_Furgal

ফুরগাল উগ্র রুশ জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দল 'এলডিপিআর' এর সদস্য এবং তার সমর্থকরা গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করে। ক্রমশ সাইবেরিয়া ও দূরপ্রাচ্যের অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নাভালনি এই বিক্ষোভের প্রতি তার সমর্থন ঘোষণা করে মন্তব্য করেন-

"পুতিন ব্যক্তিগতভাবে এবং পুতিনের পুতুলরা যারা দূরপ্রাচ্য চালায় তারা খাবারভস্ক অঞ্চল ও এর অধিবাসীদের ঘৃণা করে, কারণ তারা বারবার সেখানে নির্বাচনে পরাজিত হয়।''

২০২০ সালের ২০ আগস্ট বিমানযোগে রাশিয়ার তমস্ক থেকে মস্কো যাওয়ার পথে নাভালনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বিমানটি জরুরি ভিত্তিতে ওমস্কে অবতরণ করে। তাকে ওমস্কের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি কোমায় আছেন বলে জানানো হয়। ২৪ আগস্ট তাকে সেখান থেকে জার্মানির বার্লিনে প্রেরণ করা হয় এবং সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২ সেপ্টেম্বর জার্মান সরকার দাবি করে নাভালনিকে 'নোভিচক' ব্যবহার করে খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Novichok_agent

৭ সেপ্টেম্বর নাভালনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। জার্মানি ও অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্র অভিযোগ করে নাভালনির বিষপ্রয়োগের সঙ্গে রুশ সরকার জড়িত। রুশ সরকার পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর কাছে প্রমাণ দাবি করে, কিন্তু জার্মানি এবং ফ্রান্স রাশিয়ার নিকট এই বিষয়ে তাদের প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণ হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে! নাভালনি ব্যক্তিগতভাবে বিষপ্রয়োগের জন্য পুতিন এবং এফএসবি'কে দায়ী করলে পুতিন মন্তব্য করেছেন যে, রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাউকে সরিয়ে দিতে চাইলে তারা সেই কাজটি সম্পন্ন করতে সক্ষম।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Federal_Security_Service

২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি মস্কোয় অবতরণের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৪ সালে নাভালনিকে মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় সাড়ে ৩ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হলেও শাস্তিটি স্থগিত রাখা হয়েছিল এবং নাভালনি জামিনে ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে বিদেশে গমন করে তিনি আইন ভঙ্গ করেছেন, এই অভিযোগে তাকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারাদন্ড প্রদান করা হয়। নাভালনি তার ইউটিউব চ্যানেলে 'পুতিনের প্রাসাদ' নামক তদন্তমূলক প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করেন। প্রামাণ্যচিত্রে অভিযোগ করা হয় ক্রাসনোদার প্রদেশের গেলেন্দঝিক শহরে অবস্থিত একটি প্রাসাদ পুতিনের মালিকানাধীন এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ১.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ তছরুপ করে পুতিন প্রাসাদটি ক্রয় করেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক কোটি মানুষ ভিডিওটি দেখলেও রুশ বেসরকারি গবেষণা সংস্থা 'লেভাদা কেন্দ্র' কর্তৃক পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী রুশ জনসাধারণের মাত্র ১৭% প্রামাণ্যচিত্রটিতে দাবিকৃত তথ্য বিশ্বাস করে।

https://www.levada.ru/en/

পরবর্তীতে রুশ ধনকুবের আর্কাদি রোতেনবের্গ জানিয়েছেন যে, প্রাসাদটি প্রকৃতপক্ষে তার। ২৩ জানুয়ারি নাভালনিকে গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে তার সমর্থকরা রাশিয়া জুড়ে বিক্ষোভ করে। ৩১ জানুয়ারি এবং ২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ২ ফেব্রুয়ারি আদালত নাভালনিকে মানি লন্ডারিং মামলায় পূর্বে প্রদত্ত তিন বছরের কারাদণ্ড কার্যকর করার রায় দেয়। কিন্তু ইতোমধ্যেই নাভালনি এই মামলার জন্য বছরখানেক গৃহবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন দেখে তাকে আড়াই বছর কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া তার রাজনৈতিক সহকর্মী এবং নাভালনিকে কারাদন্ড প্রদানের পর তিনি জার্মানিতে চলে যান। নাভালনির মেয়ে দারিয়া নাভালনায়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে এবং ছেলে জাখার নাভালনি মায়ের সঙ্গে জার্মানিতে অবস্থান করছে। নাভালনি প্রাথমিক পর্যায়ে রুশ জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলেও বর্তমানে তিনি রুশ উদারপন্থীদের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন এবং তার 'ভবিষ্যতের রাশিয়া' দলটির ইশতেহার পশ্চিমাপন্থী, ইউরোপমুখী ও উদারপন্থী। তাদের ইশতেহার অনুযায়ী, দলটি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটাবে এবং ইরান, সিরিয়া ও ভেনেজুয়েলার মতো 'উচ্ছৃঙ্খল' রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা প্রদান বন্ধ করবে। নাভালনির দলের ইশতেহারে যেসব প্রকল্পের উল্লেখ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান প্রকল্প হচ্ছে মধ্য এশিয়ার নাগরিকদের ভিসা ব্যতীত রাশিয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা। নাভালনি যে তীব্র বর্ণবাদী, অভিবাসনবিরোধী ও মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য অতীতে প্রদান করেছেন, সেগুলো হাঙ্গেরির 'ফিদেসজ' বা জার্মানির 'এএফডি'র মতো উগ্র ডানপন্থী দলগুলোর রাজনৈতিক প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Fidesz

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Alternative_for_Germany

পশ্চিমা বিশ্ব বরাবরই রুশ জাতীয়তাবাদকে ভীতির চোখে দেখে এসেছে, কারণ রুশ জাতীয়তাবাদীরা প্রাক্তন রুশ সাম্রাজ্যের হারানো সকল ভূমি পুনরুদ্ধারে বিশ্বাসী এবং তারা কট্টরভাবে পশ্চিমাবিরোধী। কিন্তু স্পষ্টভাবে জাতীয়তাবাদী ও বর্ণবাদী মনোভাব প্রকাশ করা নাভালনিকে পশ্চিমা বিশ্ব বরাবরই সমর্থন দিয়ে এসেছে। নাভালনিকে প্রতিবার গ্রেপ্তারের পর তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং নাভালনির বিষপ্রয়োগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্র নাভালনিকে নৈতিক ও প্রচারণামূলক সমর্থন যোগাচ্ছে এবং নাভালনিকে তারা আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। পশ্চিমা বিশ্ব প্রকৃতপক্ষে নাভালনিকে রাশিয়ার ক্ষমতায় দেখতে আগ্রহী নয়। তারা নাভালনিকে সমর্থন দিচ্ছে যাতে নাভালনি রাশিয়ার অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টি করে রুশ সরকারকে ব্যতিব্যস্ত রাখতে পারে এবং এর ফলে রুশ সরকার যেন পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার পরিবর্তে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হয়। রাশিয়া যদি ১৯৯০ এর দশকের মতো রাজনৈতিক অরাজকতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী একচ্ছত্র পশ্চিমা আধিপত্যের পুন:প্রতিষ্ঠা সহজতর হবে। রুশ রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ খোলাখুলিভাবে নাভালনিকে 'সিআইএ এজেন্ট' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Dmitry_Peskov

নাভালনি এক বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন, তার মেয়েও যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়ন করে এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তাকে প্রথম থেকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কোনো রকম আনুষ্ঠানিক পেশার সঙ্গে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও নাভালনির অর্থের কোনো অভাব নেই।
নাভালনির সমর্থকদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও এদের একটি বড় অংশ তরুণ এবং এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাভালনিকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি রাশিয়ায় যে বিক্ষোভ হয়েছে, তাতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও এদের মধ্যে কমিউনিস্ট দলীয় নেতা থেকে শুরু করে উগ্র জাতীয়তাবাদীরা যেমন রয়েছে, তেমনি সমকামী অধিকারকর্মী থেকে চেচেন জাতিভুক্ত মানুষও রয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]