অতি সংক্ষেপে মার্ক্স
কার্ল মার্ক্স পুঁজিবাদের উপরে প্রচুর বই এবং প্রবন্ধ লিখেছেন।
https://www.britannica.com/biography/Karl-Marx
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
#ক্রিটিক অব হেগেল’স ফিলসফি অব রাইট (১৮৪৩)
#ইকোনমিক অ্যান্ড ফিলসফিক ম্যানাসক্রিপ্টস (১৮৪৪)
#দ্য হলি ফ্যামিলি (১৮৪৫)
#থিসিস অন ফয়েরবাক (১৮৪৫)
#দ্য জার্মান ইডিওলজি (১৮৪৫)
#দ্য কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো (১৮৪৮)
#ক্রিটিক অব দ্য গোথা প্রোগ্রাম (১৮৭৫)
#দ্য ভেরি লং ক্যাপিটাল (১৮৬৭-৯৪)
https://www.biography.com/scholar/karl-marx
লেখালিখির ক্ষেত্রে তিনি বন্ধুপ্রতিম ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস এর সাথে বেশ কিছু কাজ করেছেন। পশ্চিমা পুঁজিবাদ নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।
https://www.marxists.org/archive/marx/works/date/index.htm
তার লেখায় ‘পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা’ নিয়ে বেশ কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা উঠে এসেছে।
https://www.theguardian.com/commentisfree/2013/jan/25/karl-marx-relevant-21st-century
সেগুলোর মধ্যে মাত্র কয়েকটি নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
#আধুনিক উৎপাদনমুখী যান্ত্রিক কর্মজীবন বিষয়ে তিনি লিখেছেন-
"শ্রমিকদের কাজ বা শ্রমের মধ্যে সৃজনশীলতার বিষয়টি থাকা আবশ্যক। যিনি যে কাজটি করছেন, সেই কাজের মধ্যে তার ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন থাকা উচিত।"
https://www.theschooloflife.com/thebookoflife/the-great-philosophers-karl-marx/
বিষয়টির ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন-
"শ্রম আমাদের মনন, যুক্তি, সৃজনশীলতা, কাঠিন্যের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে আমাদের নিজস্ব সত্তা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক এক ‘স্বাধীন এবং সহজাত’ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পণ্য অথবা সেবার ক্ষেত্র তৈরি করে। এক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতার দিকটা কাজে আসে বলেই আমরা প্রতিনিয়ত সেই বিশেষ জায়গাটিতে উন্নতি করি।"
উদাহরণস্বরূপ তিনি কাঠমিস্ত্রির চেয়ার তৈরি করার কথা বলেছেন।
https://www.investopedia.com/terms/k/karl-marx.asp
সাধারণত চেয়ার হচ্ছে শক্ত, মজবুত এবং কাঠের তৈরি বসার স্থান। এক্ষেত্রে চেয়ারের বৈশিষ্ট্য কাঠমিস্ত্রির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাঠমিস্ত্রিটি হতে পারে নরম স্বভাবের অথবা বদমেজাজি কোনো ব্যক্তি। এক্ষেত্রে চেয়ারটি ঐ ব্যক্তির ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং ব্যক্তির বিশেষ পারঙ্গমতার ফলাফল হিসেবে তৈরি হচ্ছে। তিনি তার বিভিন্ন লেখায় তুলে ধরেছেন কিভাবে আধুনিক উৎপাদনমুখী কর্ম ব্যবস্থা মানুষের প্রতিভাকে কাজে না লাগিয়ে বরং দিনকে দিন শেষ করে দিচ্ছে। আধুনিক শ্রম ব্যবস্থা খুব বেশি শাখায় বিভক্ত। এ ব্যবস্থায় বিভিন্ন উদ্ভট সব কাজের শ্রেণী রয়েছে। যেমন- বেভারেজ প্রচারণা বিষয়ক কোনো অফিসার কিংবা কোনো প্যাকেজিং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।
https://www.thersa.org/blog/2017/12/introducing...-7-portraits-of-modern-work
মার্ক্স বলেন-
"এই ধরনের শ্রম বিভাজন সাধারণত প্রচুর সময় এবং টাকা নষ্ট করে। যে যে কাজে পারদর্শী নয় তাকে সেই কাজের জন্য প্রস্তুত করতে অনেকটা সময় লেগে যায়। মানুষের প্রতিভার বিষয়টি অস্বীকার করা হয় এবং এভাবে প্রতিভার অপমৃত্যু ঘটানো হয়।"
#রক্ষণশীল পুঁজিবাদ মানুষের কর্মক্ষেত্রকে দিন দিন সংকুচিত করছে। নিত্যনতুন প্রযুক্তি আসার ফলে আমাদের কাজের ক্ষেত্র এবং সৃজনশীলতার পরিধি অনেকাংশে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে। যান্ত্রিক কর্মক্ষমতার কারণে শ্রমিকের থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় কম হচ্ছে, ফলশ্রুতিতে শ্রমিককে কাজ থেকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় ‘চাকরি সুরক্ষা‘ বলে কোনো শব্দ নেই। মার্ক্স ভালোভাবেই জানতেন মানুষের যেহেতু কাজে এবং একটি সুশৃঙ্খল জীবনের প্রতি ভালোবাসা কাজ করে, সেই সূত্রে আমরা সবাই একটি নিরাপদ কর্মজীবন প্রত্যাশা করি।
https://study.com/academy/lesson/karl-marxs-theories-class-differentiation-and-revolution-socialism-capitalism.html
কেউ চায় না হঠাৎ কর্মক্ষেত্র থেকে জোরপূর্বক অপসারিত হতে। কিন্তু আমাদের শ্রম ব্যবস্থাটাই এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে প্রত্যেকের কর্মজীবন সবসময় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। হিসাবটা শুধু উৎপাদন খরচ এবং উপযোগিতার। মার্ক্সের লেখায় শ্রমজীবী মানুষের চাকরি খোয়ানোর আশঙ্কা এবং হাহাকারের বিষয়টি প্রকট হয়ে উঠে এসেছে। এসব সমস্যা থেকে আধুনিক পৃথিবীতে কমিউনিজমের ধারণা এসেছে। কমিউনিজমে সবার স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ধরণের সামাজিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়, যেখানে সবার অধিকার সমুন্নত থাকবে।
#কার্ল মার্ক্সের দৃষ্টিভঙ্গিতে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার আরও একটি বেশ বড় সমস্যা হচ্ছে এই ব্যবস্থায় নামমাত্র মূল্যে শ্রমিকের শ্রম কেনা হয়। এক্ষেত্রে শ্রমিককে তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। অধিকতর মুনাফা লাভের আশায় মালিকপক্ষ থেকে সস্তায় শ্রম কেনার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তারা দরিদ্র এবং স্বল্পোন্নত দেশকে কারখানা স্থাপনের জন্য বেছে নেয়। নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পণ্য উৎপাদন করে লাভের অনুপাত বাড়ায় তারা। সমস্যাটিকে ‘Primitive accumulation‘ বলা হয়। এই প্রসঙ্গে কার্ল মার্ক্স বলেন-
"শ্রমিককে তার ন্যায্য অধিকার থেকে রহিত করা, তাদের কণ্ঠস্বর দাবিয়ে রাখা, তাদের যেকোনো অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে পণ্ড করে দেয়াসহ সামগ্রিকভাবে ইচ্ছাপূর্বক শুধুমাত্র স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাদের দারিদ্রচক্রের মধ্যে আবদ্ধ রাখা হয়। এভাবে শ্রমজীবী মানুষেরা চক্রান্তমূলকভাবে আজীবন নির্যাতনের শিকার হন।"
#বহু আগেই কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন-
"পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা কখনোই স্থির নয়।"
মার্ক্সের মৃত্যুর পরে অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আজ তার কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। আসলে পুঁজিবাদ কতগুলো ভ্রান্ত বা ভুল ধারণার উপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এখানে অনেকগুলো সংশয়ের ক্ষেত্র কাজ করে। পুঁজিপতি অধিক মুনাফা লাভের আশায় যেকোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করে না। এই ধরনের পদক্ষেপ পণ্য বা সেবার সঠিক মূল্য এবং কর্মসংস্থানের উপরে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। মার্ক্স এ সম্পর্কে বলেন-
"এক্ষেত্রে পুঁজিপতি হচ্ছেন এক পাগল জাদুকরের মতো, যার নিজের সৃষ্ট জাদুকরী দুনিয়ার উপরে একপর্যায়ে কোনো ধরণের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।"
#কার্ল মার্ক্স তার লেখায় পুঁজিপতি এবং বুর্জোয়াদের ‘ভ্যাম্পায়ার’ এবং ‘শত্রুপক্ষীয় ভাই’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার মতে-
"পুঁজিপতি এবং বুর্জোয়ারা মূলত একটি বিশেষ ধরনের সামাজিক অব্যবস্থাপনার শিকার।"
উদাহরণস্বরূপ তিনি এই সমাজের পারিবারিক অব্যবস্থাপনার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। সবসময় পুঁজি এবং মুনাফার পেছনে ছুটতে ছুটতে এসব পুঁজিপতি তাদের পত্নী, সন্তান এবং পরিবার থেকে অনেকটা দূরে সরে আসে। এক রকমের যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। ঠিকমতো পরিবারকে সময় দিতে পারে না, একধরনের মানসিক অশান্তি সবসময় কাজ করে তাদের মধ্যে। তাদের অর্থ আছে, সবকিছুই তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে, তারপরও তাদের কোনো মানসিক শান্তি নেই।
Comments