মোসাদ্দেক এর সরকার

 

মোহাম্মাদ মোসাদ্দেক ১৮৮২ সালের ১৬ জুন তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন ইরানের এক সরকারি কর্মকর্তা।

https://www.history.com/this-day-in-history/cia-assisted-coup-overthrows-government-of-iran

তিনি সুইজারল্যান্ডের লসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ল ডিগ্রি অর্জন করেন। মোসাদ্দেক ১৯১৪ সালে দেশে ফেরেন এবং একটি প্রদেশের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯২১ সালে রেজা খানের অধীনে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্জন করেন। স্বল্প সময়ের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯২৩ সালে ইরানের পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯২৫ সালে রেজা খান ইরানের শাহ হিসেবে নিযুক্ত হলে তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন। এরপর অবসর গ্রহণে বাধ্য হয়ে সাধারণ জীবনযাপন বেছে নেন। ১৯৪১ সালে রেজা খানের পতনের পর আবারও পার্লামেন্টে ফেরেন মোসাদ্দেক। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রিত তেলের খনিসমূহকে দখল মুক্ত করার উদ্যোগ হাতে নেন।

https://www.britannica.com/biography/Mohammad-Mosaddegh

ইরানে অবস্থিত ব্রিটিশ মালিকানাধীন অ্যাংলো-ইরানি তেল কোম্পানিগুলোকে জাতীয়করণের উদ্যোগ হাতে নেন মোসাদ্দেক। বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে পার্লামেন্টে তিনি তেলসম্পদ জাতীয়করণের গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হন।

https://www.theguardian.com/books/2012/feb/05/patriot-persia-bellaigue-mossadegh-review

১৯৫১ সালের মার্চ মাসে পার্লামেন্ট নতুন প্রস্তাবটি মেনে নেয় এবং ইরানের তেল সম্পদ জাতীয়করণের পক্ষে ভোট দেয়। প্রথমদিকে বিরোধিতা করলেও পার্লামেন্টের পূর্ণ সমর্থন মোসাদ্দেকের পক্ষে থাকায় ইরানের শাহ তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিতে বাধ্য হন।

https://www.tbsnews.net/analysis/how-us-uk-killed-iran-democracy-4-days-35093

শাহের সঙ্গে মোসাদ্দেকের দ্বন্দ্ব দিন দিন বাড়তে থাকে। ইরানে নিজেদের কর্তৃত্ব পুন:প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গোপনে মোহাম্মদ রেজা পাহলভীকে হাত করে ব্রিটেন এবং সিআইএ। ইরানে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থা এবং রাজনীতি প্রচলনের চেষ্টা করেন মোসাদ্দেক। বিরোধী পক্ষের লোকেরা ছিল সাম্প্রদায়িক এবং শাহের মদদপুষ্ট। সিআইএ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোসাদ্দেক বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের এক করতে অর্থ বিনিয়োগ শুরু করে। ব্রিটেন এবং সিআইএ গোপন মিশনটি পরিচালনা করেছিল তাদের পা চাটা রেজা শাহকে পুনরায় ইরানের সকল ক্ষমতার কেন্দ্রে নেয়ার জন্য। মোসাদ্দেক বিরোধী অভ্যুত্থানে সিআইএ'র নেতৃত্বে ছিলেন কেরমিট রুজভেল্ট (থিওডোর রুজভেল্টের নাতি)। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সিআইএ শাহের সমর্থকদের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের স্বল্প অর্থে অভ্যুত্থানে অংশ নিতে প্ররোচিত করে। ১৯৫৩ সালের আগস্টে চার দিনের মাথায় দুই দফায় অভ্যুত্থান পরিচালনা করে সিআইএ। মোসাদ্দেককে হটানোর এই ষড়যন্ত্রে তারা ইরানি প্রশাসনকে ব্যবহার করেছিল। সিআইএ'র এজেন্টরা সামরিক বাহিনীর বিশেষ কয়েকজন কর্মকর্তাকে খুঁজে বের করে নিজেদের পরিকল্পনা জানাতেন। সামরিক বাহিনীর লোকদের আকৃষ্ট করতে পুরো ঘটনার পেছনে রেজা শাহ রয়েছে বলে আশ্বস্ত করা হতো। ১৯৫৩ সালের মার্চে তেহরানে নিযুক্ত সিআইএ'র এজেন্টরা নিশ্চিত করে যে শাহ সমর্থিত একদল সেনাসদস্য সরকার বিরোধী অভ্যুত্থান পরিচালনা করতে সম্মত হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচের সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্দেশ্য ছিল যেকোনো মূল্যে মোসাদ্দেককে উৎখাত করা। এই কাজে সিআইএ'কে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তা জেনারেল ফাজলুল্লাহ জাহেদী। পরবর্তীকালে তিনি নিজেই রেজা শাহকে হটিয়ে ইরানের ক্ষমতা হাতে নিতে চেয়েছিলেন। শাহ এর বোন প্রিন্সেস আশরাফকে ফ্রান্স থেকে ইরানে নিয়ে আসে সিআইএ'র এজেন্টরা। ১৯৫৩ সালের জুন মাসে ব্রিটিশ এজেন্টরা সিআইএ'র সঙ্গে বৈরুতে সাক্ষাত শেষে অভ্যুত্থান সফল করার কাজে নেমে পড়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাধারণ মুসলিম কমিউনিটিতে মোসাদ্দেক বিরোধী মনোভাব তৈরিতে মনোযোগী হয় তারা। মসজিদ এবং ধর্মীয় নেতাদের বাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়। এর ফলে প্রায় সর্বস্তরে মোসাদ্দেক সরকারের বিরোধিতা স্পষ্ট হয়। জাতীয় পত্রিকাগুলোকে অর্থের বিনিময়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচারে বাধ্য করে সিআইএ। তেহরানের প্রায় বেশিরভাগ রাজনৈতিক কর্মী অর্থের বিনিময়ে শাহের সমর্থনে অভ্যুত্থানে যোগ দিয়েছিল। আগস্টের ১৫ তারিখ প্রথম অভ্যুত্থানের পর মোসাদ্দেক জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন। কিন্তু এর মধ্যে তার ইম্পেরিয়াল গার্ডদের ব্যারাকে ফেরার নির্দেশনা আসায় তিনি বুঝতে পারেন যে তার পতন সুস্পষ্ট। মোসাদ্দেকের সমর্থন দেয়া কর্মকর্তাগণ শাহ সমর্থিত সেনাদের হাতে আটক হন। যদিও পরদিন রেডিও তেহরান প্রচার করে যে সরকার বিরোধী অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। এই অভিযানে সিআইএ'র প্রধান হিসেবে নিযুক্ত কেরমিট রুজভেল্ট তেহরানে অবস্থিত মার্কিন অ্যাম্বাসি থেকে বের হয়ে জেনারেল ফাজলুল্লাহ জাহেদীকে গ্রেফতার করতে অভিযান পরিচালনা করেন। কারণ জেনারেল জাহেদী সিআইএ'র সঙ্গে প্রতারণা করে মোসাদ্দেকের জায়গায় বসতে চেয়েছিল। ১৭ আগস্ট রেজা শাহ বাগদাদে বসে মোসাদ্দেককে পদচ্যুত করার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন যে ঘোষণা পত্রটি সিআইএ'র এজেন্টদের তৈরি। এর সপক্ষে যথাযথ প্রমাণ রয়েছে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রেজা শাহ ইরানের সকল ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেন। দীর্ঘদিন জেল খেটে পরবর্তীকালে গৃহবন্দী অবস্থায় জীবনযাপন করেন মোসাদ্দেক। ২০১৩ সালে সিআইএ আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মধ্য দিয়ে মোসাদ্দেক বিরোধী অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে।















Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

চাড্ডিগণ [এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]