ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর
জর্ডান এবং ফিলিস্তিনের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে মৃত সাগর এবং গ্যালিলি সাগরকে সংযুক্ত করা জর্ডান রিভার। জর্ডান রাষ্ট্রটির অবস্থান নদীর পূর্ব পাশে আর ফিলিস্তিনের অবস্থান এর পশ্চিম পাশে। ফিলিস্তিনের এই অংশটি 'পশ্চিম তীর' নামে পরিচিত। জেরুজালেম নগরী এবং আল-আকসা মসজিদ এই পশ্চিম তীরে অবস্থিত। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল যখন ফিলিস্তিনি ভূমিতে নিজেদের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোতে আক্রমণ এবং এর অধিবাসীদের উচ্ছেদ করতে শুরু করে, তখন অন্যান্য আরব দেশগুলোর পাশাপাশি জর্ডান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। ইসরায়েল জাতিসংঘের মানচিত্রে বরাদ্দকৃত নিজেদের অংশ ছাড়াও ফিলিস্তিনের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমির অর্ধেকের বেশি দখল করে নেয়।
https://www.aljazeera.com/news/2003/12/09/the-arab-israeli-wars/
জাতিসংঘের প্রস্তাবিত মানচিত্রে জেরুজালেমের আশেপাশের এলাকাগুলোসহ সমগ্র পশ্চিম তীর ছিল ফিলিস্তিনের জন্য বরাদ্দকৃত। কিন্তু যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম জেরুজালেমসহ বিশাল এলাকা দখল করে নেয়। পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরের বাকি এলাকাগুলোও হয়তো তারা দখল করে নিতো, কিন্তু জর্ডানীয় সেনাবাহিনী তাদের সেসব এলাকায় পরাজিত করে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও জর্ডানী সেনাবাহিনী সেখানে নিজেদের উপস্থিতি বজায় রাখে। ১৯৫০ সালে জর্ডান এই পশ্চিম তীরের এলাকাগুলোকে নিজেদের ভূমি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।
https://www.historytoday.com/archive/jordan-formally-annexes-west-bank
১৯৪৮ সালের যুদ্ধের সময় বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী জর্ডান নদী পেরিয়ে জর্ডানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। ১৯৫০ সালে যখন পশ্চিম তীরকে জর্ডানের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন দেখা যায় নতুন এই এলাকাসহ সমগ্র জর্ডানের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি এবং মূল জর্ডানীয় নাগরিকরা সেখানে সংখ্যালঘু। বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন হুসেইন অবশ্য ফিলিস্তিনিদের নাগরিকত্ব প্রদান, তাদের জন্য সংসদের অর্ধেক আসন বরাদ্দসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেন।
https://books.google.com.ly/books?id=C9TkD3ugwEUC&pg=PA211lpg%3DPA211&redir_esc=y#v=onepage&q&f=false
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে জর্ডানের রাজতন্ত্র ছিল ব্রিটিশপন্থী। 'হাশেমাইট কিংডম অফ জর্ডান' এর প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন হুসেইন ছিলেন মক্কার গভর্নর শেরিফ হুসেইন বিন আলির পুত্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হুসেইন বিন আলি ছিলেন আরব উপদ্বীপে ব্রিটিশদের প্রধান মিত্র। ব্রিটিশদের জোগসাজশে লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া'র সহায়তায় তিনি ওসমানীয় খিলাফতের পতন ঘটানোর জন্য আরব বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন এই আশায় যে, যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশরা তাকে সমগ্র আরবের বাদশাহী দেবে! ব্রিটিশরা হুসেইনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তবে তারা হুসেইনের পুত্রদের ইরাক, সিরিয়া এবং হেজাজে রাজত্ব করার সুযোগ করে দেয়। আব্দুল্লাহ অনেকটা নিজের চেষ্টায় জর্ডানে গিয়ে হাশেমী রাজতন্ত্রের গোড়াপত্তন করলেও পরবর্তীতে তিনি ব্রিটিশদের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যখন ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, তখন বাদশাহ আব্দুল্লাহ গোপনে জিউইশ এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করছিলেন। অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলো যেখানে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল, সেখানে আব্দুল্লাহর তাতে আপত্তি ছিল না। তিনি চাইছিলেন ইহুদীদের জন্য বরাদ্দকৃত অংশে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ফিলিস্তিনের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমির পুরোটুকু দখল করে তার অধীনে নিয়ে নেবেন এবং তার ভাইদের সাথে মিলে ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান এবং ফিলিস্তিনকে একত্রিত করে বৃহত্তর সিরিয়া প্রতিষ্ঠিত করবেন।
https://israeled.org/golda-meir-secret-meeting-king-abdullah-amman/
কিন্তু জায়নিস্ট নেতাদের প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ এবং পার্শ্ববর্তী আরব রাষ্ট্রগুলোর চাপে শেষ পর্যন্ত তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হন। ইসরায়েলের প্রতি তার এই নমনীয় মনোভাব এবং গোপনে ইসরায়েলের সাথে যোগাযোগ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তার প্রতি অবিশ্বাসের জন্ম দেয়। ১৯৫১ সালে আল-আকসা মসজিদে নামাজ পড়ার সময় এক ফিলিস্তিনি আততায়ীর গুলিতে তিনি প্রাণ হারান। তার পাশে সেসময় অবস্থান করছিলেন দৌহিত্র প্রিন্স হুসেইন বিন তালাল। হুসেইনের বুকেও সেদিন গুলি লেগেছিল, কিন্তু তার জামার উপর ধাতব মেডেল থাকায় গুলি শরীরে প্রবেশ করতে পারেনি। আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর প্রথমে তার পুত্র তালাল ক্ষমতায় বসেছিলেন, কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় পরের বছর তালালের পুত্র হুসেইনকে রাজা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেসময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর।
https://drive.google.com/file/d/1-1zHxGYj1ZmwR20m1ec2IrtUlZlabxHk/view?usp=drivesdk
ষাটের দশকে জর্ডানসহ বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বড় হওয়া ফিলিস্তিনি যুবকদের অধিকাংশের কোনো চাকরি-বাকরি ছিল না। তাদের সময় কাটতো শরণার্থী শিবিরগুলোতে পত্রিকা পড়ে, রেডিওর সংবাদ শুনে আর মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসেরের বিপ্লবী ভাষণ শুনে।
https://adst.org/2015/07/jordans-black-september-1970/
দীর্ঘদিন পরও ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান না হওয়ায় এই যুবকরা আরব রাষ্ট্রগুলোর উপর থেকে আস্থা হারিয়ে নিজেরাই ফিলিস্তিনের ভাগ্য গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বিভিন্ন দেশে এসব যুবকরা বিভিন্নভাবে সংগঠিত হতে শুরু করে। ১৯৬৪ সালে এরকম কয়েকটি নতুন সংগঠন একত্রিত হয়ে গঠন করে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন।
https://www.aljazeera.com/program/episode/2009/7/13/plo-history-of-a-revolution-masters-of-their-own-destiny/
পিএলওর ভেতরে বিভিন্ন সংগঠন ছিল। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দলটি ছিল ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন সেক্যুলার এবং বাম ধারার জাতীয়তাবাদী সংগঠন ফাতাহ। ছিল আরও দুটি মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট সংগঠন পিএফএলপি এবং ডিএফএলপি। এদের সবার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জন করা, কিন্তু তা করতে গিয়ে আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে যে ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন ছিল, সে ব্যাপারে এদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। পিএলও এবং এর অন্তর্ভুক্ত দলগুলো আরব রাষ্ট্রগুলোর ভেতর থেকে ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করতে শুরু করে। মিশর, সিরিয়া, ইরাকসহ আরব রাষ্ট্রগুলো তাদের অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে থাকে। এই দেশগুলোতে তখন ছিল শক্তিশালী সামরিক সরকার। এজন্য ফিলিস্তিনি গেরিলাদের নিয়ন্ত্রণ করার মতো সক্ষমতা তাদের ছিল। তারা ফেদাঈনদের সাহায্য করলেও এটা নিশ্চিত করতে পেরেছিল যে, তাদের অনুমতি ছাড়া বা তাদের সাথে যোগাযোগ করা ছাড়া ফিলিস্তিনিরা নিজেরাই ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করে তাদের উপর বিপদ ডেকে আনবে না। কিন্তু জর্ডানের সেনাবাহিনী ছিল তুলনামূলকভাবে দুর্বল। জর্ডানে ফিলিস্তিনি গেরিলাদের সংখ্যার অনুপাতও ছিল অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। এত বিশাল সংখ্যক গেরিলার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা জর্ডানের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
https://www.aljazeera.com/program/episode/2009/7/20/black-september/
এই গেরিলারা জর্ডানীয় সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ না করে নিজেরা সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করতে শুরু করে। প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ করতে শুরু করে জর্ডানীয় সেনাবাহিনীর উপর। ১৯৬৭ সালে যখন মিশর এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তাতে জর্ডান জড়িয়ে পড়ে। বাদশাহ হুসেইনের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তিনি ইসরায়েলের সাথে সমঝোতার রাজনীতিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। তিনি গোপনে ইসরায়েলকে আশ্বস্ত করছিলেন ফিলিস্তিনি গেরিলাদের নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। নাসেরের তুমুল জনপ্রিয়তার প্রভাবে হুসেইন তখন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ভয়ে ছিলেন। তার উপর ফিলিস্তিনি বামপন্থী গেরিলারা ক্রমেই তার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছিল। এমতাবস্থায় তিনি যদি ফিলিস্তিনিদের কার্যক্রমে বাধা দিতে যেতেন, তাহলে তার ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হতো না। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য হুসেইন নাসেরের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। তিনি মিশরের সাথে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করেন। এরপর যখন '৬৭ সালের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তখন চুক্তি অনুযায়ী জর্ডানে নিযুক্ত মিশরীয় জেনারেলদের নির্দেশে জর্ডান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
https://www.aljazeera.com/program/episode/2017/2/22/king-hussein-of-jordan-survival-of-a-dynasty/
যুদ্ধে মিশর হারায় গাজা উপত্যকাসহ সমগ্র সিনাই উপদ্বীপ, সিরিয়া হারায় গোলান মালভূমি, আর জর্ডান হারায় জেরুজালেমসহ সমগ্র পশ্চিম উপকূল। প্রায় ৩ লাখ নতুন ফিলিস্তিনি শরণার্থী পশ্চিম তীর থেকে জর্ডানে প্রবেশ করে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে আরবদের পরাজয়ের পর ফিলিস্তিনিরা বুঝতে পারে যে আরবদের আশায় বসে থাকলে চলবে না। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পিএলও পশ্চিম তীরের সীমান্ত সংলগ্ন শহর কারামাতে তাদের হেডকোয়ার্টার স্থাপন করে এবং সেখান থেকে ইসরায়েলের উপর আক্রমণ করতে শুরু করে। একইসাথে ফাতাহ ইসরায়েলের সীমান্তের ভেতরে গিয়ে গেরিলা আক্রমণ করতে শুরু করে। ১৯৬৮ সালের মার্চে এরকম এক আক্রমণের পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিশাল একটি দল জর্ডানের কারামা শহরে প্রবেশ করে। ইসরায়েলের এই অপারেশনের লক্ষ্য ছিল পিএলও'র ঘাঁটি গুড়িয়ে দেয়া এবং ইয়াসির আরাফাতকে আটক বা হত্যা করা।
https://www.wrmea.org/1998-march/middle-east-history-it-happened-in-march.html
অন্যান্যবারের মতো এবার ফিলিস্তিনিরা পিছিয়ে না গিয়ে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ইসরায়েলের বিশাল বাহিনী দেখে জর্দানের ধারণা হয় তারা হয়তো জর্ডানের আরো গভীরে প্রবেশ করবে। ফলে জর্ডানীয় সেনাবাহিনী পিএলও'র সাথে যুদ্ধে যোগ দেয়। ব্যাটেল অফ কারামা নামে পরিচিতি ১৯৬৮ সালের ২১ মার্চের যুদ্ধটি ১৫ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। ইসরায়েল ৩০ জন সৈন্যের মৃত্যুর পর শতাধিক আহত সৈন্য নিয়ে কিছু ট্যাংক, সাঁজোয়া যান এবং অস্ত্রশস্ত্র ফেলে ইয়াসির আরাফাতকে আটক করার আশা ছেড়ে দিয়ে পিছু হটে। ফেদাঈনরা নিজেদের বিজয়ী বলে ঘোষণা করে। যুদ্ধের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৫,০০০ নতুন স্বেচ্ছাসেবী ফাতাহ-এ যোগ দেয়ার জন্য আবেদন করে। অন্যান্য আরব দেশ থেকে পিএলও'র প্রতি অর্থ এবং অস্ত্র সাহায্য আসতে থাকে। ১৯৬৮ সালের মার্চে ব্যাটেল অফ কারামায় বিজয়ের পর থেকে জর্ডানে ফিলিস্তিনি ফেদাঈনদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রথম দিকে তারা শুধু ট্রেনিং ক্যাম্পে এবং জনবহুল শহরগুলো থেকে দূরে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরগুলোর ভেতরে অবস্থান করতো। কিন্তু সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তারা রাজধানী আম্মানসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পিএলও'র ভেতরে থাকা বামপন্থী আদর্শে প্রভাবিত দলগুলো এসময় ধনী জর্ডানীয়দের ব্যক্তিগত সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে। জর্ডানীয়দের মধ্যে, বিশেষ করে জর্ডানীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে ফেদাঈনদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে। দুই পক্ষের মধ্যে ছোটখাট সংঘর্ষ নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। প্রমান আছে যে, ফিলিস্তিনিদের দেশছাড়া করার অজুহাত তৈরি করার জন্য এসময় জর্ডানীয় ডিপ স্টেট ফেদাঈনদের ভেতর নিজেদের অনুচর প্রবেশ করিয়ে বিভিন্ন নাশকতা চালিয়েছিল। তারা প্রকাশ্যে বাদশাহ হুসেইনকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিতে শুরু করে। সৌদি আরব থেকে আসা হাশেমী রাজপরিবারের বাদশাহ হুসেইন ছিল তাদের দৃষ্টিতে বহিরাগত, যাকে ইসরায়েলের স্বার্থে ব্রিটিশ এবং আমেরিকানরা ক্ষমতায় বসিয়ে রেখেছে। সেনাবাহিনীর এক বেদুইন ইউনিট পরিদর্শনকালে হুসেইন দেখতে পান, কমান্ডারের ট্যাঙ্কের উপর একটি অ্যান্টেনা থেকে মহিলাদের ব্রেসিয়ার ঝুলছে। হুসেইন যখন কারণ জিজ্ঞেস করেন, তখন কমান্ডার উত্তর দেন-
"আমরা যদি কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে মহিলাদের মতো বসে থাকি, তাহলে আমাদের জন্য মহিলাদের জামা পরাই উত্তম।"
হুসেইন বুঝতে পারেন, তিনি যদি শীঘ্রই কিছু না করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান ঘটার সম্ভাবনা আছে। অপরদিকে আরব বিশ্বে সাধারণ জনগণের মধ্যে ফেদাঈনদের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়া। জর্ডানের সাধারণ জনগণের বিশাল অংশ ফেদাঈনদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। এছাড়া সরকারের অনেক মন্ত্রী ছিল ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান চালাতে গেলে একদিকে আরব বিশ্বে হুসেইনের একঘরে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, অন্যদিকে জনরোষ বৃদ্ধি পেয়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা ছিল।
১৯৭০ সালের পুরো প্রথমার্ধ জুড়ে জর্ডানীয় সেনাবাহিনীর সাথে ফিলিস্তিনি গেরিলা ছোটোখাটো সংঘর্ষ হয়ে আসছিল। জুনের ৭ তারিখে ফেদাঈনরা জর্ডানীয় গোয়েন্দা সংস্থা মুখাবারাত এর হেডকোয়ার্টার লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
http://news.bbc.co.uk/onthisday/hi/dates/stories/june/9/newsid_4461000/4461735.stm
বাদশাহ হুসেইন যখন হেডকোয়ার্টার পরিদর্শন করতে যান, তখন তার গাড়িবহর লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। হুসেইন বেঁচে গেলেও তার এক দেহরক্ষী নিহত হয়। সেনাবাহিনীর বেদুঈন ইউনিট ফিলিস্তিনিদের দু'টি ক্যাম্পে অভিযান চালালে তা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে রূপ নেয়। সেনাবাহিনীর সাথে ফেদাঈনদের এই যুদ্ধ তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। জুলাই মাসে মিশরের প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসের আমেরিকার প্রস্তাবিত শান্তি প্রস্তাব মেনে নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে 'ওয়ার অফ অ্যাট্রিশন' বন্ধে সম্মত হলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
https://www.amazon.com/Lion-Jordan-Life-Hussein-Peace/dp/1400078288
ফিলিস্তিনিরা রাজধানী আম্মানে বিশাল সমাবেশ করে। তারা নাসেরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। নাসের ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বাদশাহ হুসেইনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার ইঙ্গিত দেন। সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ বাদশাহ হুসেইন যখন তার কায়রো ফেরত কন্যা আলিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে আম্মান এয়ারপোর্টে যাচ্ছিলেন, তখন তার গাড়িবহরের উপর আবারও হামলা হয়। এটি ছিল তিন মাসের মধ্যে তার উপর দ্বিতীয় হত্যাচেষ্টা। আবারও শুরু হয় সেনাবাহিনীর সাথে ফেদাঈনদের যুদ্ধ।
https://www.thoughtco.com/black-september-jordanian-plo-civil-war-2353168
পিএলওর অঙ্গ-সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপ্লবী চরিত্রের দলটি ছিল মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট আদর্শধারী পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন। সংগঠনটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ওয়াদি হাদ্দাদ এর পরিকল্পনায় ১৯৬৮-৬৯ সালে পিএফএলপি সদস্যরা একাধিক ইসরায়েলি এবং পশ্চিমা বিমান ছিনতাই করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।
https://alchetron.com/Dawson%27s-Field-hijackings
কিংবদন্তী গেরিলা লায়লা খালেদ ছিলেন পিএফএলপি-র একজন কর্মী। ১৯৭০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর লায়লা খালেদসহ পিএফএলপি'র সদস্যরা মোট তিনটি প্লেন হাইজ্যাক করে। লায়লা খালেদের এবারের অপারেশন ব্যর্থ হয়, তার সহকর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয় এবং তিনি ধরা পড়ে যান। কিন্তু অন্য দুটি প্লেন (একটি আমেরিকান, একটি সুইস) সফলভাবে হাইজ্যাক করে পিএফএলপি'র কর্মীরা জর্ডানের জারকা শহরের পরিত্যক্ত একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যায়। তিন দিন পর আরেকটি ব্রিটিশ বিমান হাইজ্যাক করে একই এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন শতাধিক জিম্মির মুক্তিপণ হিসেবে পিএফএলপি ইসরায়েলি এবং পশ্চিমা কারাগারগুলোতে বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দাবি করে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে জর্ডানীয় সেনাবাহিনী ডওসন’স ফিল্ড নামের বিমান বন্দরটি ঘিরে ফেলে।
https://www.amazon.com/What-We-Won-Americas-Afghanistan/dp/0815725957
ওয়াদি হাদ্দাদ জর্ডানীয় সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফকে হুমকি দেন, তার বাহিনী যদি পিছু না হটে তাহলে তিনি প্লেনগুলো বোমা মেরে উড়িয়ে দেবেন। জর্ডানীয় বাহিনী যখন পিছু হটতে অস্বীকার করে, তখন ১২ই সেপ্টেম্বর তিনি যাত্রীদের বের করে সাংবাদিকদের টিভি ক্যামেরার সামনে প্লেন তিনটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেন। বাদশাহ হুসেইন ১৬ই সেপ্টেম্বর দেশে সামরিক আইন জারি করেন, বেসামরিক সরকার ভেঙে দিয়ে সামরিক সরকার গঠন করেন।
https://www.history.com/this-day-in-history/massacre-begins-at-munich-olympics
১৭ তারিখে সেনাবাহিনী চারদিক থেকে রাজধানী আম্মানে প্রবেশ করে এবং ফেদাঈনদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি ওয়াহদাত ক্যাম্পে আক্রমণ শুরু করে। ভেতরে ফেদাঈনদের কাছেও ট্যাঙ্কসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ছিল। তারা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। একইসাথে অন্যান্য শহরের ফেদাঈনদের ক্যাম্পগুলোতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সিরিয়ান সেনাবাহিনী তিন শতাধিক ট্যাঙ্ক নিয়ে জর্ডানের দিকে অগ্রসর হয়। উপায়ান্তর না দেখে বাদশাহ হুসেইন আমেরিকা এবং ইসরায়েলের কাছে সাহায্য চান। আমেরিকা তাদের ষষ্ঠ নৌবহর নিয়ে জর্ডানের কাছাকাছি ইসরায়েলি উপকূলে গিয়ে উপস্থিত হয়। অন্যদিকে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী অগ্রসরমান সিরিয়ান বাহিনীর উপর দিয়ে মহড়া দেয়। জর্ডানীয় বিমান বাহিনী সিরিয়ান বাহিনীর উপর হামলা করলে সিরিয়ান বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। সিরিয়ানদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করার পর জর্ডানীয় সেনাবাহিনী ফেদাঈনদের ক্যাম্পগুলোতে গোলাবর্ষণ শুরু করে। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হতে থাকে। আলোচনা করার জন্য সুদানের প্রেসিডেন্ট জাফর নিমেরির নেতৃত্বে আরব লিগের প্রতিনিধি দল জর্ডানে আসে। প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন কুয়েতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ সাদ আব্দুল্লাহ আল-সাবাহ। তিনি ইয়াসির আরাফাতকে কুয়েতি শেখদের মতো আলখাল্লা পরিয়ে গোপনে তার সাথে করে নিয়ে যান। জর্ডানের অব্যাহত অভিযানের প্রতিবাদে আরব রাষ্ট্রগুলোতে নিন্দার ঝড় ওঠে। কায়রোতে আরব লিগের জরুরি অধিবেশন বসে। সেখানে মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির চাপে জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। অন্যদিকে জর্ডানীয় সেনাবাহিনীর প্রায় তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি সেনা সদস্য পদত্যাগ করে। বাদশাহ হুসেইন বাধ্য হন সমঝোতায় বসতে। ২৭ সেপ্টেম্বর জামাল আব্দুল নাসেরের উদ্যোগে ইয়াসির আরাফাত এবং বাদশাহ হুসেইন যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করেন। ২৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি হলেও সংঘর্ষ পুরোপুরি থামেনি। জর্ডানীয় বাহিনী ধীরে ধীরে অধিকাংশ ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১৩ অক্টোবর হুসেইন এবং আরাফাত আরেকটি চুক্তি করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী আরাফাত সম্মত হন যে পিএলও'র সদস্যরা জর্ডানের ভেতর নিজস্ব ইউনিফর্ম পরিধান করবে না এবং প্রকাশ্যে অস্ত্র বহন করবে না। আরাফাত চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও পিএলওর অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলো, বিশেষ করে পিএফএলপি এবং ডিএফএলপি এই শর্ত মানতে রাজি ছিল না। তারা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। হুসেইন পুনরায় পিএলওর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন এবং ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি নাগাদ ফেদাঈনদের জর্ডান থেকে পুরোপুরি উচ্ছেদ করেন। জুলাই মাসে সর্বশেষ ২,০০০ ফেদাঈন জর্ডানীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার পর তাদের সিরিয়া হয়ে লেবাননে চলে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। ফেদাঈনদের কাছে এটা এমনই অপমানজনক পরাজয় ছিল যে, অনেকে জর্ডানের কাছে আত্মসমর্পণ না করে নদী পেরিয়ে ইসরায়েলে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। বিপুল সংখ্যক ফেদাঈন জর্ডান থেকে বিতাড়িত হয়ে লেবাননে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে সেখানকার রাজনীতিকে আমূল পাল্টে দেয়। কয়েক বছর পর সেখানেও ফিলিস্তিনি গেরিলা, ডানপন্থী খ্রিস্টান বাহিনী, সিরিয়া এবং ইসরায়েলের মধ্যে বহুমুখী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের সময় সিরিয়ার ডিফ্যাক্টো প্রেসিডেন্ট ছিলেন বাথ পার্টির নেতা সালাহ জাদিদ। তার বিমানবাহিনীর প্রধান ছিলেন হাফেজ আল-আসাদ। সালাহ জাদিদের নির্দেশে সেনাবাহিনী ট্যাংক নিয়ে ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে অগ্রসর হলেও আমেরিকান এবং ইসরায়েলি আক্রমণের আশঙ্কায় হাফেজ আল-আসাদ তার নির্দেশ অমান্য করে বিমান বাহিনীকে কাজে লাগানো থেকে বিরত থাকেন। এর ফলে দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং এর কয়েক মাস পর এক অভ্যুত্থানে সালাহ জাদিদকে সরিয়ে হাফেজ আল-আসাদ ক্ষমতা দখল করেন। ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়তো আরো দীর্ঘদিন চলতে পারত, কিন্তু মিশরে আরব লিগের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট নাসের উভয় পক্ষকে চাপ দিয়ে সমঝোতায় আসতে বাধ্য করেন। সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখে হুসেইন এবং আরাফাতের মধ্যে চুক্তি করিয়ে দিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার পর সকালে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরায়েলের সাথে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে তা বাস্তবায়ন করেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক ছিলেন জর্ডানে নিযুক্ত পাকিস্তানের ডিফেন্স অ্যাটাশে। বাদশাহ হুসেইন তার নিজের সেনাবাহিনীর ফিলিস্তিনিদের প্রতি অনুগত কমান্ডারদের উপর ভরসা করতে পারছিলেন না। তিনি জিয়াউল হককে দায়িত্ব দেন অপারেশন পরিচালনা করার। জিয়াউল হকের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল সিরিয়ান বাহিনীর অগ্রযাত্রা রোধ করে দেয়া। সিরিয়ান বাহিনীর অগ্রসর হওয়ার সংবাদ শুনে হুসেইন জিয়াউল হককে প্রেরণ করেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য। জিয়াউল রিপোর্ট করেন যে পরিস্থিতি খুবই খারাপ এবং এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় জর্ডানীয় বিমান বাহিনী দিয়ে সিরিয়ানদের উপর আক্রমণ করা। হুসেইন তার পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং বিমান বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে সিরিয়ানদের পরাজিত করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপমানজনক পরাজয়ের পর জুলফিকার আলি ভুট্টোর একজন জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য সেনা কর্মকর্তা প্রয়োজন ছিল। এসময় বাদশাহ হুসেইনের পরামর্শে তিনি জিয়াউল হককে তার সাফল্যের জন্য পদোন্নতি দিয়ে সামনে নিয়ে আসেন। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি জিয়াউল হককে একের পর এক পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ পদে দায়িত্ব দেন। ১৯৭৭ সালে জিয়াউল হক নিজেই ভুট্টোকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। তার আমলে ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। যুদ্ধে পরাজয়ের পর ফাতাহ'র এক নেতা আবু আইয়্যাদ প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য নতুন একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটির নাম রাখা হয় ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর। তারা জর্ডান থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের জন্য জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী ওয়াসফি আল-তালকে প্রধান অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করে এবং ২৮ নভেম্বর কায়রোর একটি হোটেলের সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করে। পরের বছর জার্মানির মিউনিখে অলিম্পিক গেমস চলার সময় তারা ১১ জন ইসরায়েলি খেলোয়াড় এবং কোচকে জিম্মি করে মুক্তিপণ হিসেবে বিভিন্ন দেশে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দাবি করে। ইসরায়েল তাদের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি না হওয়ায় এবং জার্মান পুলিশের অদক্ষতায় শেষ পর্যন্ত জিম্মি নাটকের রক্তাক্ত অবসান ঘটে।
Comments