সন্ত্রাসীদের দেশ

 

হাগানা যথেষ্ট উগ্রপন্থী সংগঠন ছিল, যারা বিভিন্ন সময় প্রচুর গুপ্তহত্যা এবং সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটিয়েছিল, তারপরও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যপন্থী হিসেবে অভিযোগ করে বেশ কিছু চরমপন্থী সদস্য বেরিয়ে গিয়ে গঠন করেছিল ইরগুন ও লেহি নামে দু'টি অধিকতর সন্ত্রাসবাদী সংগঠন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Haganah

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Lehi_(militant_group)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Irgun

তাদের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশদের উপর একের পর এক আক্রমণ করে তাদের যত দ্রুত সম্ভব ফিলিস্তিন ছাড়তে বাধ্য করা, যেন ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত হয়। সেসময় লেহির কমান্ডার ছিল ইৎজাক শামির।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Yitzhak_Shamir

লেহি আগে থেকেই ব্রিটিশ ম্যান্ডেট প্রশাসনের সিআইডি অফিসারদের হত্যা করে আসছিল। ব্রিটিশ পুলিশের সাধারণ অফিসার ছাড়াও লেহির সদস্যরা জেরুজালেমের পুলিশ প্রধান মাইকেল জোসেফ ম্যাককনেল এবং ফিলিস্তিনে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্যার হ্যারল্ড ম্যাকমাইকেলকে হত্যা করার চেষ্টা চালিয়েছিল একাধিকবার।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Harold_MacMichael

তারা অন্যান্য দেশে অবস্থিত ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের হত্যার জন্য গুপ্তঘাতক নিয়োগ করে। কায়রোতে অবস্থিত ব্রিটিশ রেসিডেন্ট মিনিস্টার ছিলেন ওয়াল্টার এডওয়ার্ড গিনেস, যিনি লর্ড মোয়েন নামে বেশি পরিচিত। তিনি ফিলিস্তিনের জনসংখ্যার আনুপাতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ইহুদীদের গণহারে ফিলিস্তিনে অভিবাসনের উপর কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন। তিনি ফিলিস্তিনের বিভিন্ন এলাকায় ইহুদী অভিবাসনের জন্য একটি বার্ষিক কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, যা ছিল ইহুদীদের প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। তার এ সিদ্ধান্তের কারণে ফিলিস্তিনের ইহুদীরা তাকে ইহুদী বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ইৎজাক শামির তাকে হত্যার নির্দেশ জারি করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Walter_Guinness,_1st_Baron_Moyne

শামিরের নির্দেশে লর্ড মোয়েনকে হত্যার জন্য নিয়োগ করা হয় লেহি'র এলিয়াহু হাকিম এবং এলিয়াহু বেত-জুরিকে। হাকিম এবং বেত-জুরি কায়রোতে গিয়ে কয়েকদিন নজরদারি করার পর ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর লর্ড মোয়েনের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। লর্ড মোয়েন যখন সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য তার গাড়িতে ওঠেন, তখন পেছন থেকে ছুটে আসে হাকিম এবং বেত-জুরি।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Eliyahu_Hakim

তাদের একজন জানালা দিয়ে পিস্তল ঢুকিয়ে লর্ড মোয়েনের মাথা লক্ষ্য করে পরপর ৩টি গুলি করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Eliyahu_Bet-Zuri

লর্ড মোয়েন গলা চেপে ধরে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্ত বন্ধ করতে চেষ্টা করলেও পরমুহূর্তে ঢলে পড়েন সামনের দিকে। শামিরের নির্দেশ ছিলো লর্ড মোয়েনকে হত্যার পর হত্যাকারীরা যেন গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। কিন্তু গাড়ির জোগাড় না হওয়ায় হাকিম এবং বেত-জুরি সাইকেলে করে পালানোর চেষ্টা করে। কায়রোর ব্রিটিশ পুলিশ কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের ধরে ফেলতে সক্ষম হয়। বিচার শেষে আদালতে তাদের মৃত্যুদন্ড ঘোষিত হয় এবং ছয় মাস পর তা কার্যকর হয়। উইনস্টন চার্চিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার জন্য তার মন্ত্রীসভাকে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি লর্ড মোয়েনসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তার পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য অনুরোধ করে যাচ্ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছিলো যে, আসন্ন ইয়াল্টা সম্মেলনে চার্চিল যখন রুজভেল্ট ও স্তালিনের সাথে একত্রিত হবেন, তখন তিনি ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা উত্থাপন করবেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Yalta_Conference#:~:text=The%20Yalta%20Conference%2C%20also%20known,reorganization%20of%20Germany%20and%20Europe.

কিন্তু ব্রিটিশ মন্ত্রী হত্যার ঘটনায় তিনি লেহিকে ‘একটি নতুন গ্যাংস্টার গ্রুপ’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং ঘোষণা করেন ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করছেন। এই ঘটনার পরও লেহি গুপ্তহত্যার কর্মসূচী থেকে বিরত থাকেনি। একই সময়ে একই উদ্দেশ্যে একই রকম গুপ্তহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিলো ইরগুন। সেসময় ইরগুনের প্রধান ছিল মেনাখেম বেগিন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Menachem_Begin

১৯৪৬ সালের ২২ জুলাই বেগিনের নির্দেশে ইরগুনের সদস্যরা জেরুজালেমের কিং ডেভিড হোটেলে ৩৫০ কেজির বিস্ফোরক রেখে আসে। এই হোটেলের একাংশে ছিল ফিলিস্তিনের ব্রিটিশ ম্যান্ডেট প্রশাসনের হেডকোয়ার্টার এবং ব্রিটিশ সশস্ত্রবাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগের অফিসগুলো। প্রচন্ড বিস্ফোরণে হোটেলের একাংশ সম্পূর্ণ ধ্বসে পড়ে। নিহত হয় ৯১ জন, আহত হয় আরো অন্তত ৪৫ জন। নিহতদের অনেকেই ছিল বেসামরিক নাগরিক। আহতদের মধ্যে অনেক ইহুদীও ছিল।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/King_David_Hotel_bombing

এই হামলায় ফিলিস্তিনের ইহুদী সম্প্রদায় ইশুভের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তারপরও তারা একের পর এক গুপ্তহত্যা এবং সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর লেহির একটি দল ইতালির রোমে অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসে বোমা হামলা করে। এরপর লেহি লন্ডনে অবস্থিত ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার প্রত্যেক সদস্যের কাছে চিঠির খামে করে বোমা প্রেরণ করে। প্রায় একই সময় ইরগুনের ব্রিটেন শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারাও একই রকম অপারেশন শুরু করে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্নেস্ট বেভিন ছিলেন তাদের হত্যা তালিকায়। ব্রিটেনের এমআই৫ এর নথি থেকে জানা যায়, সেসময় জায়নবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় হুমকি বিবেচনা করা হতো।

https://www.haaretz.com/israel-news/.premium.MAGAZINE-british-intel-files-reveal-how-the-zionist-stern-gang-terrorized-london-1.5627474

https://www.nytimes.com/1972/12/02/archives/letterbombs-mailed-to-truman-in-1947-truman-was-sent-bombs-book.html

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বাস্তবতায় ব্রিটেন এমনিতেই বিভিন্ন দেশে অবস্থিত তাদের উপনিবেশগুলো ছেড়ে দেশগুলোকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হচ্ছিলো। ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রেও হয়তো তারা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতো, কিন্তু ইহুদী গুপ্ত সংগঠনগুলোর একের পর এক আক্রমণ তাদের সময়ের অনেক আগে সেই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিল। ১৯৪৭ সালের শেষদিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের নিকট জমা দেয়া এমআই৫ এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, এর পূর্ববর্তী দুই বছরে ইহুদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর হাতে নিহত হয়েছিল ফিলিস্তিনের ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের ১৭৬ জন অফিসার এবং বেসামরিক নাগরিক। জেরুজালেমের ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের ইহুদী বিভাগের কমান্ডার টম উইলকিনকে হত্যা করা লেহির সদস্য ডেভিড শমরনের ভাষায়, এই হত্যাকান্ডগুলো ব্রিটিশদের ফিলিস্তিন ত্যাগে বাধ্য করেছিল। তার মতে, আভ্রাহাম স্টার্ন যদি লেহি প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু না করতো, তাহলে হয়তো ইসরায়েলের সৃষ্টিই হতো না। এর কিছুদিন পরে যখন ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রধানদের ইসরায়েল পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। হাগানাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স। হাগানার প্রধান ডেভিড বেন গুরিয়ন হয় ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ইরগুনের প্রধান মেনাখেন বেগিন এবং লেহির প্রধান ইৎজাক শামির পরবর্তীতে হয় যথাক্রমে ইসরায়েলের ৬ষ্ঠ ও ৭ম প্রধানমন্ত্রী। তাদের নির্দেশে সরাসরি বিভিন্ন গুপ্ত হত্যা এবং সন্ত্রাসী হামলায় অংশগ্রহণকারী সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় মোসাদ, শিন বেত এবং আমানসহ ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mossad

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Shin_Bet

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Military_Intelligence_Directorate_(Israel)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Zionist_political_violence

































Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]