সুবহানাল্লাহ না বলে যাবেন না!
মুসলমানদের জন্য 'সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হওয়া'
প্রবাদটা সম্পূর্ণ প্রযোজ্য। ইউরোপে আশ্রয় পেয়ে ইউরোপে শরিয়া আইনের দাবী করা, পশ্চিমা দেশে বছরের পর বছর থেকেও প্রাচীনপন্থী গোঁড়ামি অনুসরণ করা, সুযোগ পেলে জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়া, পশ্চিমা দেশের মসজিদে বসে অমুসলিমদের গালি দেয়া, পশ্চিমা দেশে আশ্রয় পেয়ে নববর্ষের দিনে তাহারুশ এর মতো নোংরামি ঘটানো, সত্যিটা সহ্য করতে না পেরে যাকে তাকে খুন করা ইত্যাদি খবর প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে আসছেই। এরাই আবার অমুসলিমদের বিপদে উল্লাস প্রকাশ করে সেটাকে 'গজব' হিসেবে প্রচার করে। কোনো মসজিদে কখনো অমুসলিমদের উপর মুসলিমদের বর্বরতার নিন্দা করা হয় না। সবসময় সত্য-মিথ্যা মিক্স করে নিজেদের বর্বরতা ঢাকার চেষ্টা করা হয় এবং নিজেদের বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত সম্প্রদায় হিসেবে প্রদর্শনের চেষ্টা চালানো হয়। অথচ মুসলমান প্রধান দেশে অমুসলিমদের জীবন কিভাবে চলে সেটা সচেতন মানুষ মাত্রই জানে। সব ব্যাপারে পশ্চিমাদের দোষ দেয়া মানে প্রকৃত সত্যকেই অস্বীকার করা। মুসলমানরা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে দেখেই পশ্চিমারা শোষণের সুযোগ পেয়েছে। প্রোপাগান্ডা চালিয়ে মানুষকে ধর্মান্ধতার দিকে ঠেলে দেয়ার একটা উদাহরণ নিচে দেয়া হলো।
২০১৭ সালের ২১শে জুলাই ইন্দোনেশিয়ান যুবক Sahrie Stoner ফেসবুকে দু'টি ভিডিও ক্লিপ এবং তিনটি ছবি প্রকাশ করে লিখে যে ইসরায়েল আল-আক্বসা মসজিদ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ২৭টি জঙ্গী বিমান পাঠিয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ্র বিশেষ কুদরতে বিশেষ ধরনের পাখি এসে সেগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে! মাত্র ৯ দিনে তার পোস্টে ১ লাখের উপরে রিঅ্যাকশন পড়ে। পোস্টটি শেয়ার হয় দেড় লাখের বেশি এবং কমেন্ট করে অর্ধ লক্ষের বেশি মানুষ! ভিডিও দু'টোর একটি দেখা হয় ১ কোটির বেশি বার ও অন্যটি ১২ লক্ষের বেশি!স্ট্যাটাসটিতে লেখা ছিল-
"সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। ২৭টি ইসরায়েলি জেট এবং মিসাইল ফাইটার ফিলিস্তিনের আল-আক্বসার দিকে যাচ্ছিলো, সেগুলো আকাশে কোনো কারণ ছাড়াই বিস্ফোরিত হয়েছে۔এবং দৃশ্যগুলোর কিছুক্ষণ আগে মানুষ ফিলিস্তিনের আকাশে মেঘের মধ্য দিয়ে পাখির মতো অদ্ভুত আকৃতির একটি প্রাণী দেখতে পেয়েছিল (সম্ভবত ফেরেশতা)। আল্লাহ যদি কিছু চান, তাহলে তিনি বলেন 'হও', আর তা হয়ে যায়।"
ইসরায়েল যতো অত্যাচারী রাষ্ট্রই হোক, রাষ্ট্রীয়ভাবে সে অতীতে কখনোই আল-আক্বসা মসজিদ ধ্বংসের চেষ্টা করেনি। ঐসময় সংকট চলাকালীন সময়ে নেতানিয়াহু বলেছিলেন যে, আল-আক্বসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত যে চুক্তি বা স্ট্যাটাস কু বিদ্যমান রয়েছে, তারা সেটা পরিবর্তন করতে চায় না। তাছাড়া ইসরায়েল চাইলে দূর থেকে দুই-তিনটি মিসাইল দিয়ে সেটা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে পারে। সেটি না করে যদি যুদ্ধবিমান পাঠাতে চায়, তাহলেও একটি বিমান থেকে দুই-তিনটি বোমা ফেলা যথেষ্ট। মাত্র একটি মসজিদ ধ্বংসের জন্য ২৭টি বিমান পাঠানোর কোনো যুক্তি নেই। Sahrie Stoner এর পোস্টের সাথে মোট দু'টি ভিডিও এবং তিনটি ছবি ছিল। যে তিনটি ছবি দেয়া আছে, সেগুলো মূলত ভিডিওগুলো থেকে নেয়া স্ক্রীনশট। ১৪ সেকেন্ডের যে ভিডিওটি, সেটি ৫ মিনিটের ভিডিওর ভেতরেও আছে। ভিডিওটি মূলত কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ভিডিও ক্লিপের সমষ্টি। প্রথম ক্লিপে দেখা যায় বিশাল আকৃতির দু'টি পাখি আকাশে উড়ছে। ভিডিওর দ্বিতীয় অংশটির উপরের ডান কোণে একটি কালো পতাকার লোগো ব্যবহার করা হয়েছে যেটি সাধারণত আল-কায়েদা, আইএস বা এই জাতীয় জিহাদী সংগঠনগুলো ব্যবহার করে। এখানে দেখা যায়, একটি প্লেনে আগুন লেগে সেটা ভূপাতিত হচ্ছে। প্লেনটিতে আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগে খুব হালকাভাবে একটি পাখি বা পঙ্খিরাজ ঘোড়ার মতো কোনো প্রাণীকে পাশ দিয়ে উড়ে যেতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে পেছন থেকে মানুষের উল্লাস শোনা যেতে থাকে, যেখানে তারা সিরিয়ান আর্মির প্লেন ধ্বংস হচ্ছে বলে আরবিতে (সিরিয়ানদের টানে) উল্লাস করতে থাকে। তৃতীয় অংশটি ফ্রি সিরিয়ান আর্মির লোগো বিশিষ্ট ভিডিও। এখানে পূর্বের ক্লিপের মতো পাখি উড়ে যায়, প্লেন ধ্বংস হয়, মানুষের উল্লাস শোনা যায়। এরপর পরপর আরো কয়েকটি ভিডিও। কয়েকটিতে কোনো লোগো নেই, কয়েকটিতে থাকলেও স্পষ্ট না। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীরা সরকারি বাহিনীর অনেকগুলো প্লেন ধ্বংস করেছিল। কিন্তু স্ট্যাটাসে দাবিকৃত আল-আক্বসার ঘটনা এবং ভিডিওতে পাখি দেখিয়ে দাবি করা অলৌকিকভাবে পাখিগুলোর আক্রমণে প্লেনগুলোর বিধ্বস্ত হওয়া সম্পূর্ণ মিথ্যা। ভিডিওগুলো আল-আক্বসার আশেপাশের না, ঐগুলো সিরিয়ার ভিডিও। একটি ক্লিপে পেছন থেকে একজনের কণ্ঠে সেদিনের তারিখটা বলতে শোনা যায়-
“সাবা ওয়া আশরিন, তামানীয়া, আলফেন ওয়া এতনাশ”
অর্থাৎ ২৭-৮-২০১২। যা প্রমাণ করে যে এটি অনেক পুরানো ভিডিও। যেসব ভিডিওতে লোগো নেই সেগুলোতেও পেছনে অবিরত গোলাগুলির যে শব্দ পাওয়া যায়, তা সিরিয়া বা ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্রের সাথে বেশি মিলে। জেরুজালেমে পুলিশ নিরস্ত্র মুসল্লিদের উপর বর্বর আক্রমণ করলেও সেখানে ইরাক বা সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রের মতো অবিরত গোলাগুলি হয়েছে - এরকম কোনো রিপোর্ট নেই। আল-আক্বসার ভিডিও হলে সবগুলো একই দিনের ভিডিও হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লোগো নেই এমন ভিডিওগুলোর আকাশের রং দেখে বোঝা যায়, সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিনের অথবা ভিন্ন ভিন্ন স্থানের ভিডিও। কোনো ক্লিপে পেছনের মানুষদের মুখে পাখি দেখা নিয়ে উল্লাস করতে বা অবাক হতে শোনা যায় না, সবগুলো ক্লিপে শুধুমাত্র প্লেন ধ্বংস হওয়ার কারণে উল্লাস করতে শোনা যায়। সবগুলো ভিডিওতে পাখি বা পঙ্খিরাজ ঘোড়া যেটিই হোক, সেটি প্রতিবারই বাম দিকের উপরের কোনা থেকে উড়ে এসে ডান দিকের একটু নিচে দিয়ে চলে যায়। অর্থাৎ একটি উৎস থেকে পাওয়া পাখির ওড়ার দৃশ্য এডিট করে প্রতিটি ভিডিও ক্লিপে বসানো হয়েছে। যদি একইভাবেও আসে তাহলে একাধিক ভিডিও যেহেতু একাধিক ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে ধারণ করেছে; তাই ভিডিওতে সেটিকে কখনো ডান দিক, কখনো বাম দিক থেকে দেখা যাওয়ার কথা ছিল।
Comments