সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে প্রক্সি ওয়ার
https://en.m.wikipedia.org/wiki/The_Great_Game#:~:text=%22The%20Great%20Game%22%20was%20a,in%20Central%20and%20South%20Asia.&text=Russia%20proposed%20Afghanistan%20as%20the%20neutral%20zone.
ব্রিটেনে এই প্রতিযোগিতা পরিচিত ছিল 'গ্রেট গেম' নামে, আর রাশিয়ায় এটি পরিচিত হয়েছিল 'টুর্নামেন্ট অফ শ্যাডোজ' নামে। রুশ বিশ্ব বলতে রুশ ('বৃহৎ রুশ'), ইউক্রেনীয় ('ক্ষুদ্র রুশ') ও বেলারুশীয় ('শ্বেত রুশ') জাতিত্রয় এবং তৎসংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোকে বোঝানো হয়। জার চতুর্থ ইভানের সময় থেকে বৃহৎ এই রাষ্ট্রটির খোলা সমুদ্রে সরাসরি প্রবেশাধিকার ছিল না এবং উল্লেখযোগ্য কোনো উষ্ণ জলীয় বন্দর ছিল না।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ivan_the_Terrible
ফলে রুশ বিশ্বের জন্য সামুদ্রিক বাণিজ্য পরিচালনা ও বৃহৎ নৌবাহিনী গঠন ছিল কঠিন কাজ এবং সাম্রাজ্যবাদের সেই যুগে নৌশক্তি ছাড়া প্রথম শ্রেণীর শক্তিতে পরিণত হওয়া ছিল অসম্ভব। এজন্য রাশিয়া উষ্ণ জলীয় বন্দরের (যেসব বন্দর বছরের ১২ মাস ব্যবহারোপযোগী থাকে এবং কখনো বরফে জমে যায় না) খোঁজে পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে শুরু করে। রাশিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত ওসমানীয় সাম্রাজ্য, ইরান ও আফগানিস্তান রুশ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। ব্রিটেন এই অঞ্চলগুলোতে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে আগ্রহী ছিল, রাশিয়ার একটি বৃহৎ নৌশক্তি ও শিল্পায়িত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখে তাদের আশঙ্কা ছিল, অঞ্চলগুলো দখলের পর রাশিয়া ভারতবর্ষের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। এজন্য ব্রিটেন প্রাচ্য ও দক্ষিণ গোলার্ধে রুশ সম্প্রসারণ প্রতিহত করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। রুশ সম্প্রসারণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করে এবং প্রাচ্য ও দক্ষিণ গোলার্ধের বিভিন্ন রাষ্ট্রকে রুশবিরোধী প্রতিবন্ধক হিসেবে গড়ে তোলে। নেপোলিয়নীয় যুদ্ধসমূহের পর ব্রিটেন কেবল একবার রুশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল এবং সেটি হচ্ছে ক্রিমিয়ান যুদ্ধ (১৮৫৩-১৮৫৬)।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Crimean_War
এই যুদ্ধে ব্রিটেন ফ্রান্স, ওসমানীয় সাম্রাজ্য ও সার্ডিনিয়ার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে এবং অস্ট্রিয়া, প্রুশিয়া ও সুইডেনের সঙ্গে আঁতাত করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করলেও রাশিয়াকে ধ্বংস করা বা গুরুতরভাবে দুর্বল করে ফেলা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এজন্য ব্রিটেন ইউরোপ, প্রাচ্য ও দক্ষিণ গোলার্ধের বিভিন্ন রাষ্ট্রকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করে। ব্রিটিশরা রাশিয়াকে আক্রমণ করার জন্য ইরানকে উৎসাহিত করে, রুশ সম্প্রসারণ প্রতিরোধের জন্য ওসমানীয় সাম্রাজ্যের রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়, রুশরা যাতে মধ্য এশিয়ায় অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য বুখারা ও খিভার ওপর আক্রমণ চালাতে আফগানিস্তানকে প্ররোচিত করে এবং রুশ রাষ্ট্রদূত গ্রহণ করায় আফগানিস্তানের ওপর আক্রমণ চালায়। ব্রিটেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে পোলিশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগিতা করে, বলকান অঞ্চলে রুশ প্রভাব হ্রাসের উদ্দেশ্যে বুলগেরিয়াকে দ্বিখণ্ডিত করে এবং রুশ সাম্রাজ্যকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে রুশ সরকার বিরোধীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে ব্রিটেন পূর্ব এশিয়ায় রুশ সম্প্রসারণ প্রতিহত করার জন্য জাপানকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধের (১৮৫৬-৬০) পর থেকে রাশিয়া দূরপ্রাচ্যে ব্যাপক হারে প্রভাব বিস্তার করতে আরম্ভ করে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Second_Opium_War#:~:text=The%20Second%20Opium%20War%20(Chinese,lasted%20from%201856%20to%201860.
তারা চীনের কাছ থেকে দূরপ্রাচ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয়, কোরিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে। উত্তর-পূর্ব চীন বা অভ্যন্তরীণ মাঞ্চুরিয়ায় রুশরা 'পোর্ট আর্থার' নৌঘাঁটি ও সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলে এবং এর মধ্য দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণজলীয় বন্দর লাভ করে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/L%C3%BCshunkou_District
এজন্য জাপানের আধুনিকায়ন ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে ব্রিটেন ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। ১৯০২ সালে ব্রিটেন ও জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে মৈত্রীচুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ১৯০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপান যুদ্ধ ঘোষণা ব্যতিরেকে পোর্ট আর্থারে রুশ নৌবহরের ওপর আক্রমণ চালায়। এর মধ্য দিয়ে রুশ-জাপানি যুদ্ধ (১৯০৪-০৫) আরম্ভ হয়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Russo-Japanese_War
রাশিয়ার মূল ভূমি থেকে সুদূর উত্তর-পূর্ব চীনে সৈন্য, অস্ত্রশস্ত্র ও রসদপত্র সরবরাহ ছিল রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত কঠিন, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ; জাপানি সামরিক কর্মকর্তাদের রণনৈপুণ্য ও সৃজনশীলতা ছিল রুশ সামরিক কর্মকর্তাদের তুলনায় বেশি এবং জাপানি সৈন্যদের অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধজাহাজগুলো ছিল রুশদের তুলনায় গুণগতভাবে উন্নততর। এর ফলে প্রতিটি খণ্ডযুদ্ধে রুশরা জাপানিদের কাছে পরাজিত হয়। জাপানিরা পোর্ট আর্থার ও রুশ নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়া দখল করে নেয় এবং ১৯০৫ সালের ২৭-২৮ মে সুশিমার নৌযুদ্ধে অ্যাডমিরাল তোগো হেইহাচিরোর নেতৃত্বাধীন জাপানি সম্মিলিত নৌবহর রুশ বাল্টিক নৌবহরকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/T%C5%8Dg%C5%8D_Heihachir%C5%8D
এরপর জাপানিরা শাখালিন দ্বীপ দখল করে নিলে রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং ১৯০৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পোর্টসমাউথের সন্ধির মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এই চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়া পোর্ট আর্থারসহ দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়া জাপানের নিকট হস্তান্তর করে, কোরিয়ায় জাপানি আধিপত্য স্বীকার করে নেয় এবং জাপানকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের পরিবর্তে দক্ষিণ শাখালিন জাপানের নিকট হস্তান্তর করে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sakhalin
রুশ-জাপানি যুদ্ধের ফলে পূর্ব এশিয়ায় রাশিয়ার একমাত্র উষ্ণ জলীয় বন্দরটি হাতছাড়া হয়ে যায় এবং বাল্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরদ্বয় ধ্বংস হয়ে যায়। এই পরাজয়কে রুশ জনগণ রোমানভ রাজবংশের অযোগ্যতা ও অকর্মণ্যতার ফল হিসেবে বিবেচনা করে। রাশিয়ার এই পরাজয়ে উৎসাহিত হয়ে পোলিশ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জাপানি সহায়তায় রুশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। রাশিয়ার এই শোচনীয় পরাজয় দেখে ইউরোপের জার্মানিক রাষ্ট্রগুলোকে (জার্মানি ও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি) দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপে রুশবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। জাপানের নিকট পরাজয়ের পর রাশিয়া ১৯০৭ সালে ব্রিটেনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছে ইরান ও মধ্য এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় সুনির্দিষ্ট করে নেয়। জাপানের সশস্ত্রবাহিনী, বিশেষত নৌবাহিনী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। রুশ-জাপানি যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা জাপানিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করে, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য জাপানকে মোটা অঙ্কের ঋণ প্রদান করে এবং রুশ বাল্টিক নৌবহরের প্রশান্ত মহাসাগরে পৌঁছানোর পথে যথাসম্ভব প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। রুশ-জাপানি যুদ্ধের পর ব্রিটেন জাপানি সম্মিলিত নৌবহরের কমান্ডার ইন চিফ মার্শাল অ্যাডমিরাল তোগো হেইহাচিরোকে ব্রিটিশ ভাইস অ্যাডমিরাল হোরেশিও নেলসনের একগুচ্ছ চুল উপহার হিসেবে প্রদান করে। (১৮০৫ সালে নেপোলিয়নের নেতৃত্বে ফ্রান্স ও স্পেনের যৌথ নৌবহর যখন ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ড আক্রমণের প্রক্রিয়ায় ছিল, সেসময় নেলসনের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ নৌবহর ট্রাফালগারের নৌযুদ্ধে সম্মিলিত ফরাসি ও স্পেনীয় নৌবহরকে পরাজিত করে।)
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Horatio_Nelson,_1st_Viscount_Nelson
সুশিমার নৌযুদ্ধ পশ্চিমা বিশ্বে ট্রাফালগারের নৌযুদ্ধের সমতুল্য হিসেবে বিবেচিত হয় এবং অ্যাডমিরাল তোগো 'প্রাচ্যের নেলসন' হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেন। রুশ বিপ্লবের ফলে রাশিয়ায় রোমানভ রাজবংশ ও পশ্চিমাপন্থী সমাজতন্ত্রী সরকারের পতন ঘটে এবং পশ্চিমাবিরোধী বলশেভিকরা রুশ সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের ওপর সোভিয়েত রাষ্ট্র গড়ে তোলে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/House_of_Romanov
রুশ গৃহযুদ্ধ (১৯১৭-১৯২৩) চলাকালে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র রাষ্ট্রগুলো বলশেভিকদের ক্ষমতাচ্যুত করা ও রাশিয়াকে স্থায়ীভাবে দুর্বল করে রাখার উদ্দেশ্যে রাশিয়া আক্রমণ করে এবং বলশেভিকবিরোধী 'শ্বেত ফৌজ' ও বিভিন্ন অ-রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Russian_Civil_War
ব্রিটিশরা মধ্য এশিয়ায় সোভিয়েতবিরোধী 'বাসমাখি' দলগুলোকে সহায়তা করে, কমিউনিস্ট আদর্শের সম্প্রসারণ রোধের জন্য বিভিন্ন এশীয় ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করে এবং ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিস্টদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ইউরোপে ফ্যাসিবাদের উত্থান ও এশিয়ায় জাপানি সম্প্রসারণবাদকে মৌন সমর্থন জানায়। নাৎসি জার্মানি, ফ্যাসিবাদী ইতালি ও উগ্র জাতীয়তাবাদী জাপানকে তারা সোভিয়েতবিরোধী প্রক্সি হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বিপুল বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে তাদের সামরিকায়নে সহায়তা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে অ্যাংলো স্যাক্সন বিশ্ব যাদের সোভিয়েতবিরোধী প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল সেই জার্মানি, ইতালি ও জাপান প্রথমে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ আরম্ভ করে। পরবর্তীতে জার্মানি ও ইতালি সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপরও আক্রমণ চালায় এবং এর ফলে অ্যাংলো স্যাক্সন বিশ্ব ও সোভিয়েতরা ক্ষণস্থায়ী মৈত্রীতে আবদ্ধ হয়। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ শেষে অ্যাংলো স্যাক্সন বিশ্ব ও সোভিয়েতদের মধ্যে খোলাখুলিভাবে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অ্যাংলো স্যাক্সন বিশ্বের কর্তৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকট হস্তান্তরিত হয় এবং ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জোটবদ্ধ রাষ্ট্রগুলোতে বিদ্যমান প্রায় প্রতিটি সরকারবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোকে সহায়তা করতে শুরু করে। মার্কিনিরা সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরে সরকারবিরোধী রাজনীতিবিদ এবং ইউক্রেনীয়, লাতভীয়, লিথুয়ানীয়, এস্তোনীয় ও অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহায্য করে; পোলিশ, হাঙ্গেরীয় ও চেকোস্লোভাক কমিউনিজম বিরোধী দলগুলোকে সহায়তা করে এবং সোভিয়েত সম্প্রসারণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রাষ্ট্রকে (তুরস্ক, ইরান, পশ্চিম জার্মানি, জাপান, চীন প্রভৃতি) প্রক্সি হিসেবে গড়ে তোলে। মার্কিন প্রক্সি ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধে সোভিয়েতদের মিত্র মিসর ও সিরিয়াকে পরাজিত করে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৩ সালে সোভিয়েতদের মিত্র গ্রানাডার ওপর আক্রমণ চালায়। ১৯৭৯ সালে আফগান গৃহযুদ্ধে সোভিয়েত সামরিক হস্তক্ষেপকে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা দেখেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক উষ্ণ জলীয় বন্দর লাভের প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে। তাদের মতে, আফগানিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তানের বালুচিস্তান ও সিন্ধু প্রদেশদ্বয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সোভিয়েত ইউনিয়ন আরব সাগরের উষ্ণ জলীয় বন্দরগুলো পেয়ে যেতো। অনুরূপভাবে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েতরা ইরানের দিকে অগ্রসর হলে পারস্য উপসাগরের উষ্ণ জলীয় বন্দরগুলো তাদের হস্তগত হতো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক উষ্ণ জলীয় বন্দর লাভের সম্ভাবনা ভীতির দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সোভিয়েত সম্প্রসারণ প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং আফগানিস্তানে সক্রিয় বিভিন্ন সোভিয়েতবিরোধী জঙ্গি গ্রুপকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করতে শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মিত্র রাষ্ট্র ব্রিটেন, ফ্রান্স, সৌদি আরব, মিসর, ইসরায়েল, তুরস্ক, চীন প্রভৃতি আফগান জঙ্গিদের সহায়তা করে। চীনের সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্ত খুবই কম এবং এসময় ইরানি সরকার ছিল তীব্রভাবে মার্কিনবিরোধী, ফলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের মাধ্যম ছিল পাকিস্তান। পাকিস্তান ছিল আফগান জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং সোভিয়েত ও আফগান সরকারি বাহিনীর ওপর আক্রমণ পরিচালনার পর জঙ্গিরা নিরাপদে পাকিস্তানে পালিয়ে আসতে পারতো। তারা পাকিস্তানের মাটিতে প্রশিক্ষণ লাভ করতো এবং সেখান থেকে আফগানিস্তানে আক্রমণ পরিচালনা করতো। কখনো কখনো পাকিস্তানি সেনা ও বিমানবাহিনী সরাসরি আফগান ও সোভিয়েত সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হতো। অন্যদিকে মিখাইল গর্বাচেভের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম দেশটির অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। সোভিয়েত রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রজাতন্ত্রে বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং জাতিগত সংঘাত দেখা দেয়। কিন্তু সোভিয়েত সরকার এগুলো দমনের জন্য সশস্ত্রবাহিনীকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে। পূর্ব ইউরোপের মিত্ররাষ্ট্রগুলোতে সোভিয়েতপন্থী সরকারগুলোর পতন ঘটলেও সরকারগুলোকে রক্ষার জন্য সোভিয়েতরা কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ করেনি। আফগান যুদ্ধে সোভিয়েতদের ব্যর্থতার পশ্চাতে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা 'ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স' এর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র আফগান জঙ্গিদের উদ্দেশ্যে যে সহায়তা প্রেরণ করেছিল, সেগুলো আইএসআই এর হাত হয়ে আফগান জঙ্গিদের কাছে পৌঁছাতো। আফগান জঙ্গিদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ প্রদান, বিভিন্ন আফগান জঙ্গি গ্রুপের মধ্যে মধ্যস্থতা ও সমন্বয় সাধন এবং আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা প্রভৃতি কাজ আইএসআই পরিচালনা করে। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের সময় আইএসআই এর মহাপরিচালক ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদ গুল। আফগানিস্তানে তার সংস্থার সাফল্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে বার্লিন প্রাচীরের একটি বড় টুকরো উপহার হিসেবে প্রদান করেছিল।

Comments