মাও সে তুং এর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার
বিগত বছরগুলোতে মাও সে তুং এর খ্যাতি গুরুতরভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে বুর্জোয়াদের ছড়ানো মিথ্যা প্রোপাগান্ডাগুলোর কারণে। মাও সে তুং তার জীবদ্দশায় চীনা জনগণের কল্যাণ, চীনে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার মাত্রা হ্রাস এবং বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা প্রদানের সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতির জন্য অত্যন্ত সম্মানিত ছিলেন। মাও এর তত্ত্বগুলো বিশ্বজুড়ে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ব্যক্তিদেরও দুর্দান্ত অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। এই ফ্যাক্টরটি ডানপন্থীদের তরফ থেকে তার প্রতি শত্রূতার একটি বড় অংশ ব্যাখ্যা করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত ও নেপালে মাওবাদী আন্দোলনের শক্তি বৃদ্ধি এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে মাওবাদী আন্দোলনের ক্রমাগত প্রভাবের সাথে সাথে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর গতি আরও তীব্রতর হচ্ছে। মাও এর খ্যাতিকে দুর্বল করার বেশিরভাগ প্রচেষ্টা ১৯৫৮ সালে শুরু হওয়া গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডকে কেন্দ্র করে দেখা যায়। কৃষকরা ইতিমধ্যে ১৯৫০ এর দশকে সমবায় পদ্ধতিতে জমিচাষ শুরু করেছিল। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় তারা হাজার হাজার লোকের সমন্বয়ে গঠিত বৃহৎ কমিউনগুলোতে যোগ দেয়।
কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে বৃহৎ পরিসরে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। মাও এর পরিকল্পনা ছিল কৃষি ও শিল্প উৎপাদন উভয়ই ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা। বুর্জোয়ারা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর সময় বলে যে এই নীতিগুলি ১৯৫৯-৬১ সালের দুর্ভিক্ষের দিকে পরিচালিত করেছিল (যদিও কেউ কেউ বলে যে দুর্ভিক্ষ ১৯৫৮ সালে শুরু হয়েছিল)। দুর্ভিক্ষের জন্য বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে তারা। উদাহরণস্বরূপ, রাষ্ট্র দ্বারা অতিরিক্ত শস্য সংগ্রহ কিংবা কমিউন রান্নাঘরগুলোতে বিনামূল্যে বিতরণের কারণে খাদ্যের অপচয়। এটাও দাবি করা হয় যে, কৃষকরা সেচ প্রকল্পে এবং ইস্পাতের চুল্লিতে কাজ করতে আগ্রহী ছিল না।
মাও স্বীকার করেছেন যে ঐসময়ের মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে তিনি বেশিরভাগ অসুবিধাগুলোর জন্য খারাপ আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগকে দায়ী করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে নীতিগত ত্রূটিও ছিল, যেগুলোর দায় তিনি নিয়েছিলেন। মাও এর মৃত্যুর পর প্রকাশিত চীনের সরকারী চীনা সূত্র থেকে জানা যায় যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে ১৬.৫ মিলিয়ন লোক মারা গেছে। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উত্তরাধিকারের বিরুদ্ধে দেং জিয়াওপিং সরকারের একটি আদর্শগত প্রচারণার সময় এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছিল।
অথচ জনগণের কাছে প্রকাশ করার আগে কীভাবে এই ফিগার একত্রিত করা হয়েছিল এবং বিশ বছর ধরে সংরক্ষণ করা হয়েছিল সে সম্পর্কে দেং জিয়াওপিং সরকার ব্যাখ্যা দেয়নি। অন্যদিকে আমেরিকান গবেষকরা ১৯৫৩ এবং ১৯৬৪ সালের চীনের আদমশুমারির সাথে তাদের মনগড়া ফিগার যোগ করে সংখ্যাটি প্রায় ৩০ মিলিয়নে উন্নীত করে! জাং চ্যাং এবং জন হ্যালিডে তাদের বই “Mao: the Unknown Story”-তে মাও এর কারণে ৭০ মিলিয়ন মানুষ নিহত হওয়ার দাবী করেছে, যার মধ্যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে নাকি মারা গেছে ৩৮ মিলিয়ন!
https://drive.google.com/file/d/1HmsBYGqmo3LRO6aF1d5-zI9XobGFPGJ9/view?usp=sharing
এই বিষয়ে পশ্চিমা লেখকরা সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন, সন্দেহজনক উৎস থেকে ব্যাপক মৃতের সংখ্যার ফিগার মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গ্রহণ করেছেন। তারা কেবল নীতিমালা বাস্তবায়নের বাড়াবাড়িগুলোর দিকে মনোনিবেশ করে এবং এই সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তাদের মতামত অত্যন্ত অতিরঞ্জিত। প্রাথমিক বিঘ্ন দূর হয়ে গেলে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের নীতিগুলো কীভাবে চীনের জনগণকে উপকৃত করেছিল তা বুঝতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডার জোয়ারে গা ভাসিয়েছে। মার্কিনীদের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো যুদ্ধোত্তর সময়জুড়ে মাওবাদের (সার্বিভাবে সাম্যবাদের) প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণকারীদের সহায়তা প্রদান করেছে। উদাহরণস্বরূপ, মাওবাদের প্রবীণ ইতিহাসবিদ রডরিক ম্যাকফারকুহার ১৯৬০ এর দশকে ত্রৈমাসিক ‘দ্য চায়না’ সম্পাদনা করেন। ম্যাগাজিনটি ব্যাপক দুর্ভিক্ষে অকল্পনীয় সব মৃত্যুর ফিগার প্রকাশ করতো।
Roderick MacFarquhar - Wikipedia
The China Quarterly - Wikipedia
পরে প্রকাশ হয়ে যায় যে জার্নালটি সিআইএ নিয়ন্ত্রিত একটি সংস্থার কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ পেতো। ম্যাকফারকুহার ‘দ্য লন্ডন রিভিউ অফ বুকস’-কে লেখা একটি চিঠিতে স্বীকার করেছেন বিষয়টি।
Front organization - Wikipedia
CIA funded anti-Mao scholarship (prisoncensorship.info)
অন্যদিকে জ্যাসপার বেকার তার ‘Hungry Ghosts’ বইটিতে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ উল্লেখ করলেও সেগুলো যাচাই করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়।
Amazon.com: Hungry Ghosts: Mao’s Secret Famine eBook: Becker, Jasper: Kindle Store
আর গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড সম্পর্কিত চ্যাং এবং হ্যালিডে দ্বারা উদ্ধৃত তথ্যচিত্রগুলোও বিভ্রান্তিকর উপায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। দেং জিয়াওপিং সরকারের সরবরাহকৃত মাও এর দ্বারা গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাওয়ার তথ্য মোটেও নির্ভরযোগ্য নয়। কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া প্রমাণ এই দাবির বিরোধিতা করে যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড সময়কালে ঘটে যাওয়া মৃত্যুর জন্য মাও মূলত দায়ী ছিল। মার্কিন ডেমোগ্রাফাররা চীনের সরকারী উৎস থেকে মৃত্যুর হারের প্রমাণ এবং অন্যান্য জনসংখ্যাগত প্রমাণ ব্যবহার করে দেখানোর চেষ্টা করেছে যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে মৃত্যুর সংখ্যা ব্যাপক ছিল।
কিন্তু প্রমাণে অসঙ্গতি এবং উৎস সম্পর্কে সামগ্রিক সন্দেহ এই "বিশাল মৃত্যুর সংখ্যা" সংক্রান্ত প্রোপাগান্ডার দাবীকে দুর্বল করে দেয়। "মাও গণহত্যার জন্য দায়ী ছিলেন" এই ধারণাটি মাওয়ের শাসনকালে চীনা জনগণ যা অর্জন করেছিল তা নষ্ট করার জন্য একটি স্প্রিংবোর্ড হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এমনকি "বিশাল মৃত্যুর সংখ্যা" প্রোপাগান্ডার অন্যতম বিশিষ্ট কারিগর (!) ডেমোগ্রাফার জুডিথ ব্যানিস্টারের মতো ব্যক্তিদেরও মাও যুগের সাফল্য স্বীকার করতে হয়েছে। তিনি তার বই ‘China’s Changing Population’ এ উল্লেখ করেন কীভাবে ১৯৭৩-৭৫ সালে চীনের অধিবাসীদের গড় আয়ু আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার অনেক দেশের তুলনায় বেশি ছিল।
https://www.amazon.com/Chinas-Changing-Population-Judith-Banister/dp/0804718873
১৯৮১ সালে তিনি একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন যেখানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে ‘বিশাল অর্জনকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেন ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট শাসন শুরুর পর থেকে মৃত্যু হার হ্রাস এবং জনগণের আয়ু প্রতিবছর প্রায় ১.৫ বছর হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল দেখে।
https://drive.google.com/file/d/1xgmp1FRCa4a88CIKP72AcnxQvQPr6skg/view?usp=sharing
মাওয়ের শাসনামলে ১৯৪৯ সালের ৩৫ বছরের গড় আয়ু ১৯৭০ এর দশকে পৌঁছে যায় ৬৫ বছরে।
https://www.amazon.com/Deng-Xiaoping-Era-Socialism-1978-1994/dp/0809078155
বহু আধুনিক ভাষ্যকারের লেখা পড়ার পর আপনাদের এই ধারণা জন্মাবে যে মাওয়ের কৃষি ও শিল্প সংক্রান্ত নীতিগুলো চীনকে চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে পরিচালিত করেছিল (Hungry Ghosts: China's Secret Famine)। অর্থনীতিবিদ পিটার নোলান এর মতো রক্ষণশীল ভাষ্যকার দাবি করেছেন যে বিপ্লব পরবর্তী সময়ে চীনে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়নি, যতক্ষণ না দেং জিয়াওপিং ক্ষমতায় আসেন!
https://www.amazon.com/Problems-Planned-Economy-John-Eatwell/dp/0333495497
অবশ্যই আয়ু বৃদ্ধির একমাত্র কারণ জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি নয়। এটি দাবি করা হাস্যকর যে মাও যুগে জীবনযাত্রার মান না বাড়িয়ে আয়ু এতটা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মাওয়ের মৃত্যুর পর দেং জিয়াওপিংয়ের প্রকাশিত পরিসংখ্যান নিয়ে গবেষণা করেছেন যারা এমন অনেকে দাবি করেছেন যে মাও আমলে মাথাপিছু শস্য উৎপাদন মোটেও বাড়েনি। কিন্তু একই লেখকদের গড় আয়ু সংক্রান্ত পরিসংখ্যানের সাথে এই দাবীকে মেলানো কীভাবে সম্ভব? তাছাড়া এই পরিসংখ্যানগুলো অন্যান্য পরিসংখ্যানগুলোর সাথেও সাংঘর্ষিক। মাও পরবর্তী যুগে চীনের কৃষি মন্ত্রনালয়ের নীতি ও আইন বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক গুও শুতিয়ান, দেং এর সংস্কার এর আগের সময়কালের চীনের সামগ্রিক কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ে একদম আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি দেখান। এটা সত্য যে তিনি বলেছেন ১৯৪৯-৭৮ সালের মধ্যবর্তী পাঁচ বছরে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কাজের ক্ষেত্রে ভুলের কারণে। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন যে ১৯৪৯-১৯৭৮ সালের মধ্যে খাদ্য শস্য বপন করা প্রতি হেক্টর জমির পরিমাণ বেড়েছিল ১৪৫.৯% এবং মোট খাদ্য উৎপাদন বেড়েছিল ১৬৯.৬%। এসময় চীনের জনসংখ্যা ৭৭.৭% বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে চীনের মাথাপিছু খাদ্য উৎপাদন মাও এর সময়কালে ২০৪ কিলোগ্রাম থেকে ৩২৮ কিলোগ্রামে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এমনকি দেং জিয়াওপিং এর শাসনামলে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৫২-১৯৭৬ সালের মধ্যে (সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলাকালীন কথিত বিপর্যয়ের সময়) শিল্প উৎপাদন প্রতি বছর ১১.২% হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৫২ সালে চীনের মোট জাতীয় আয়ের ৩৬% আসতো শিল্প খাত থেকে। ১৯৭৫ সালের মধ্যে শিল্প খাতের অবদান ৭২% এবং কৃষি খাতের অবদান ২৮% এ দাঁড়ায়। এটা একেবারেই সুস্পষ্ট যে মাওয়ের তথাকথিত বিপর্যয়কর সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক নীতিগুলোই মাও পরবর্তী যুগের দ্রুত (তবে বৈষম্যযুক্ত ও ভারসাম্যহীন) অর্থনৈতিক বিকাশের পথ সুগম করেছে। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের নীতিগুলো বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা দেখা দেয়ার প্রাথমিক সময়কালের পর চীনের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে অনেক অবদান রেখেছিল। ১৯৫০ এর দশকের শেষে এটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে চীনের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান আমদানি না করেই উন্নতি করতে হবে। ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়। স্তালিনের মৃত্যুর পর সোভিয়েত নেতৃত্বের আদর্শিক পতন ছিল এই বিবাদের সূত্রপাতের আংশিক কারণ। মাও ভাবতেন যে স্তালিন কৃষকদের আস্থা রাখতে পারেননি এবং ভারী শিল্পের বিকাশের উপর অতিরিক্ত জোর দিয়েছিলেন। অধিকন্তু মাও মনে করতেন যে ক্রূশ্চেভ সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ ও অনুশীলনের অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে তার ব্যর্থতা ঢাকতে স্তালিনের নিন্দাকে পর্দা হিসাবে ব্যবহার করছিলেন। এছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের বন্ধুপ্রতিম সহযোগীদের উপর ক্রূশ্চেভের নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতার কারণে এই বিভাজন হয়েছিল। ক্রূশ্চেভ সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিকতার চেতনায় নয়, বরং অর্থনৈতিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সাথে আশ্রিত রাষ্ট্রের মতো আচরণ করতেন। চীনাদের কাছে, যাদের ইতিহাস বিদেশী আধিপত্য থেকে মুক্তির জন্য অসংখ্য বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে সমৃদ্ধ, এরকম সম্পর্ক কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারতো না। ১৯৬০ সালে দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। সোভিয়েতরা চীনের শিল্পায়ন কর্মসূচির জন্য প্রচুর পরিমাণে সহায়তা দিয়ে আসছিল। ১৯৬০ সালে সকল সোভিয়েত প্রযুক্তি উপদেষ্টা চীন ত্যাগ করেন। তারা যে বিভিন্ন শিল্প প্ল্যান্ট তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন সেসবের ব্লুপ্রিন্টগুলোও সাথে নিয়ে যান। মাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, শুরু থেকেই গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের নীতিগুলো ছিল চীনের আরও স্বাধীন অর্থনৈতিক নীতি বিকাশ সংক্রান্ত। চিনের সোভিয়েতদের উপর নির্ভরতার বিকল্প ছিল শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি কৃষির বিকাশের কর্মসূচি। এজন্য মাও প্রচুর শ্রমশক্তি এবং জনগণের উদ্দীপনাকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। এই সংস্থানগুলোর ব্যবহার মূলধন এবং উন্নত প্রযুক্তির ঘাটতি পূরণ করবে। যদিও গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে সমস্যা ও বিপর্যয় ঘটেছিল, কিন্তু এটি বলা মোটেও ভুল হবে না যে কৃষির চলমান বিকাশে এই কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। জল সংরক্ষণ এবং সেচের মতো ব্যবস্থাগুলো খারাপ ফলনের সময় শেষ হওয়ার পর কৃষিক্ষেত্রে টেকসই বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছিল। এগুলো খরার সমস্যা মোকাবেলায় গ্রামাঞ্চলে সহায়তা করেছিল। বন্যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত করা হয়েছিল। সোপান পদ্ধতিতে চাষাবাদ আবাদকৃত জমির পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করেছিল।
https://en.wikipedia.org/wiki/Terrace_(earthworks)
“দুই পায়ে হেঁটে” স্লোগানের আওতায় শিল্প উন্নয়ন করা হয়েছিল। এর অর্থ ছিল ভারী শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্তরের গ্রামীণ শিল্পের বিকাশ। স্টিলের চুল্লিগুলোর পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে আরও অনেক ওয়ার্কশপ এবং কারখানা খোলা হয়েছিল। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রামীণ শিল্প স্থানীয় জনগণের চাহিদা মেটাবে। গ্রামীণ কর্মশালাগুলো কৃষিক্ষেত্রের পদ্ধতিগুলোকে আধুনিকীকরণের জন্য কমিউনগুলো থেকে সহায়তা পেয়েছিল। গ্রামীণ কর্মশালাগুলো কমিউনে সার, সরঞ্জামাদি, অন্যান্য কৃষি সরঞ্জাম এবং সিমেন্ট (জল সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয়) সরবরাহের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর ছিল। সিমেন্ট এবং সার গ্রামীণ অঞ্চলগুলো থেকে দূরে শহুরে অঞ্চলে বড় কারখানায় উৎপাদিত হতো। একটি দরিদ্র দেশে সর্বাধিক আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে এ জাতীয় শিল্প উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন এবং যন্ত্রপাতি অর্জনে সমস্যা ছিল। এ জাতীয় পণ্যগুলো তৈরি হওয়ার পর তা পরিবহণের প্রয়োজনে শহরগুলোকে মফস্বলগুলোর সাথে সংযুক্ত করতে যে অবকাঠামোর দরকার হতো তার সাথে বিশাল ব্যয় জড়িত ছিল। এ জাতীয় সমস্যার ফলস্বরূপ, অনেক দরিদ্র দেশে এখনও উন্নয়ন খুব ধীর গতিতে হয়। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় প্রতিষ্ঠিত পল্লী শিল্পে পুঁজি নির্ভর পদ্ধতির পরিবর্তে শ্রম নির্ভর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। তারা স্থানীয় প্রয়োজনগুলো সমাধানে অধিক মনোযোগ দেয়ার কারণে পণ্য পরিবহনের জন্য রাস্তা এবং রেলের ব্যয়বহুল দেশব্যাপী অবকাঠামোগত উন্নয়নের উপর নজর দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের কথিত বিশৃঙ্খল নীতিগুলোর প্রথম কয়েক বছরের সমস্যার পর বেশ ভালভাবে সমন্বয় সাধন করা গিয়েছিল। স্থানীয় সিমেন্ট উৎপাদন জল সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগকে তরান্বিত করে। বিশাল পরিমাণে সেচের ব্যবস্থা করে আরও বেশি সার ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছিল। এই সার স্থানীয় কারখানাগুলো সরবরাহ করতো। বৃহত্তর কৃষি উৎপাদনশীলতা দেশের সার্বিক উন্নয়নের সুবিধার্থে শিল্প উৎপাদন খাতের জন্য আরও বেশি পরিমাণে কৃষি শ্রমের সৃষ্টি করবে। বুর্জোয়াদের দ্বারা এই দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রায়শই মাওয়ের অর্থনৈতিক অজ্ঞতার উদাহরণ হিসাবে দেখানো হয় (শ্রম বিভাজন এবং আঞ্চলিক বিশেষায়ন)। কিন্তু মানব কল্যাণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাওদের নীতিগুলো চীনের জন্য সম্পূর্ণ সঠিক ছিল। চীনের সমাজতান্ত্রিক আমলে কেবলমাত্র কৃষি এবং ক্ষুদ্র পল্লী শিল্পই বৃদ্ধি পায়নি। এই সময়কালে ভারী শিল্পও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড চলাকালীন টেচিং তেল ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার মতো উন্নয়নগুলো ভারী শিল্পের বিকাশের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হয়েছিল।
https://en.wikipedia.org/wiki/Daqing_Oil_Field
চিনে সেসময় একটি বিশাল তেলের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল।
১৯৬০ এর দশকের পর সোভিয়েত কিংবা পশ্চিমা কৌশলগুলোর পরিবর্তে দেশীয় কৌশল ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছিল। বিশেষত শ্রমিকরা তেল উত্তোলনে করার জন্য নীচ থেকে চাপ ব্যবহার করতো। তেলক্ষেত্রের সাধারণ রীতি অনুসারে তারা প্রচুর পরিমাণে ডেরিক এর উপর নির্ভর করেনি।
https://en.wikipedia.org/wiki/Derrick
উৎপাদন সংক্রান্ত পরিসংখ্যানগুলো সম্পর্কে যুক্তিগুলো এই সত্যকে বিশ্বাস করায় যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড শিল্প উৎপাদন সম্পর্কে চীনা জনগণের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনে। "পিছনের উঠোনে ইস্পাত চুল্লি" প্রকল্পে কৃষকরা পল্লী অঞ্চলের ছোট ছোট ঢালাইয়ের কারখানাগুলোতে ইস্পাত উৎপাদন করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাদের উৎপাদিত ইস্পাত ছিল নিম্নমানের। অন্ততপক্ষে তারা কৃষকদের শিল্প উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছিল যা চীনের শিল্পের জন্য ইস্পাত তৈরির সময় প্রয়োগ করা হতো। এটি মনে রাখা দরকার যে "সামনে অগ্রসর হওয়া" বলতে মাও শুধু উৎপাদিত পণের পরিমাণের কথা বোঝাতেন না, মানুষের চেতনা এবং বোধগম্যতার অগ্রসরতাও বোঝাতেন। ভুল করা হয়েছিল এবং যখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড এর কিছু ফলাফল হতাশাব্যঞ্জক তখন অনেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তবে আগত বছরগুলোতে চীনা অর্থনীতির সাফল্য দেখায় যে এর সমস্ত শিক্ষা বিফলে যায়নি। অবশ্যই এই ধরনের পয়েন্ট তৈরি করা মূলধারার পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে যাওয়া যে গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড ছিল বিশ্বের ইতিহাসের ঐতিহাসিক বিপর্যয়। "ব্যাপক মৃত্যুর সংখ্যা" বিষয়ক তাদের গবেষকরা (!) প্রত্যক্ষদর্শী বা প্রামাণ্যচিত্রের মতো বিশ্বাসযোগ্য গুণগত প্রমাণ হাজির করে নিজেদের দাবীর সত্যতা প্রমাণ করতে পারতো। অথচ তাদের সরবরাহকৃত তথাকথিত প্রমাণগুলো মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। চীনের ইতিহাসের পণ্ডিত কার্ল রিসকিন বিশ্বাস করেন যে একটি মারাত্মক দুর্ভিক্ষ ঘটেছিল।
কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন-
"সাধারণভাবে দেখা যাচ্ছে যে ক্ষুধা এবং দারিদ্রতার ইঙ্গিতগুলোর সাথে গণ দুর্ভিক্ষের গুণগত প্রমাণের সম্পর্ক নেই যেটি অন্যান্য দুর্ভিক্ষগুলোর অনুসরণ করেছিল উল্লেখযোগ্য মাত্রায় (সমান না হলেও), চীনে সংঘঠিত আগের দুর্ভিক্ষগুলো সহ।”
তিনি উল্লেখ করেন যে পাশ্চাত্যে উপস্থাপিত সমসাময়িক প্রমাণগুলোর বেশিরভাগই সেসময়ে ছাড় দেয়া হয়েছিল, কারণ এগুলো ডানপন্থী উৎস থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং খুব কমই অকাট্য ছিল। তিনি প্রথমে চীন সরকারের দমনমূলক নীতিগুলো দুর্ভিক্ষের তথ্য বেরিয়ে আসতে বাধা দিয়েছে কি না তা বিবেচনা করেন। কিন্তু পরে বলেছেন-
"এটি একটি পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা কিনা তা সন্দেহজনক। এখানে কিছু রহস্য রয়ে গেছে।”
Seven questions about the Chinese famine of 1959–1961 - ScienceDirect
রডরিক ম্যাকফারকুহার, জ্যাসপার বেকার এবং জুং চ্যাং এর মতো লেখকরা নিশ্চিতভাবে দাবি করেন যে তারা যেসব প্রমাণ দেখিয়েছেন তা তাদের ব্যাপক দুর্ভিক্ষের দাবীকে প্রমাণ করে।
Roderick MacFarquhar - Wikipedia
এটা সত্য যে এই বিষয়ে তাদের প্রধান কাজগুলোতে প্রমাণের জন্য বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্ত তারা এই বইগুলোতে এটি যথেষ্ট স্পষ্ট করেনি যে, কেন তারা বিশ্বাস করে যে এই উৎসগুলো খাঁটি।
এটি একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন হিসেবে রয়ে গেছে যে কেন এই লেখকদের দ্বারা উপস্থাপিত ফিগারগুলো পশ্চিমে ধ্রূব সত্য হিসাবে গণ্য করা হয়। ১৯৬৫ সালে তার বিখ্যাত বই ‘A Curtain of Ignorance’- এ ফেলিক্স গ্রীন বলেন যে তিনি ১৯৬০ সালে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেছিলেন যেখানে খাবারের রেশন অপর্যাপ্ত ছিল, কিন্তু তিনি গণ অনাহার দেখতে পাননি।
তিনি অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীদেরও উদ্ধৃতি দেন যারা একই ধরনের কথা বলেছিলেন। কিছু এলাকায় সামান্য দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। কিন্ত গ্রিনের পর্যবেক্ষণগুলো প্রমাণ করে দেয় যে এটি জ্যাসপার বেকার এবং অন্যান্যদের দ্বারা প্রস্তাবিত দেশব্যাপী সংঘঠিত ভুতূরে ফিগারের মৃত্যুর ঘটনা ছিল না। বেকারের মতো লোকের ফিগার এত সহজে কেন বিশ্বাস করা হয় যখন ফেলিক্স গ্রীন এবং তার উল্লেখ করা অন্যদের প্রমাণ বিবেচনায় আনা হয়না? বেকার, ম্যাকফারকুহার এবং জুং চ্যাংয়ের এই ইস্যুতে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কেউ কি গুরুতরভাবে সন্দেহ করতে পারে যে এই লেখকরা কট্টর কমিউনিস্ট বিরোধী নয়? সাম্যবাদ এমন একটি আন্দোলন যা বিপুল পরিমাণে বিরোধী শক্তির সৃষ্টি করে। পশ্চিমা দেশগুলো কমিউনিজমের বিরুদ্ধে তীব্র প্রচারণা চালিয়েছিল। তাছাড়া ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিস্ট সরকার সম্পদ এবং জমি কেড়ে নিয়ে বিপুল সংখ্যক জোঁকেদের ক্ষমতাচ্যুত করে। এশিয়া এবং ইউরোপের বেশিরভাগ অঞ্চলে জমিদার এবং ব্যবসায়ী শ্রেণীর জোঁকেদের কাছ থেকে তাদের সামাজিক ক্ষমতা এবং মর্যাদা কেড়ে নিয়েছিল কমিউনিস্টরা। এই দেশগুলোর অভিজাত শ্রেণীতে জন্মগ্রহণকারী বিপুল সংখ্যক মানুষ কমিউনিজমকে বদনাম করার প্রেরণা পেয়েছিল এবং এখনও এদের বংশধররা কাজটা করে যাচ্ছে। উপরন্তু মার্কিন সরকার চীনা কমিউনিজম এবং সর্বোপরি সাম্যবাদ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা চালায় ব্যাপকভাবে। প্রায়শই এই বিষয়ের আলোচনাকে "ষড়যন্ত্র তত্ত্ব" বলে খারিজ করা হয় এবং যা প্রকৃতপক্ষে ঘটেছিল তার প্রমাণগুলো খুব বেশি আলোচিত হয়না। তাছাড়া কমিউনিজমের বদনাম করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন প্রচেষ্টা ধর্তব্যের বিষয়। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সেসকল লোকেদের টার্গেট করে যোগাযোগ করেছিল যারা কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতো। এটা ভাবা উচিত নয় যে, যাদের সাথে তারা এই সংযোগ রাখতো তাদের কেবল সস্তা চাঞ্চল্য সৃষ্টির জন্য অর্থ প্রদান করা হয়েছিল। সাম্রাজ্যবাদীদের উদ্দেশ্য ছিল আরও সুদূরপ্রসারী। উদাহরণস্বরূপ ‘The China Quarterly’-তে ১৯৬০ এর দশকে অনেকগুলো নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছিল যা এখনও প্রায়শই কমিউনিস্ট শাসনে চীনে জীবনযাত্রার কাল্পনিক ভয়াবহ অবস্থার প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ১৯৬২ সালে এটি জোসেফ আলসপের একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল যাতে অভিযোগ করা হয়েছিল যে মাও তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সুবিধার্থে অনাহারের মাধ্যমে তার জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করছেন!
https://drive.google.com/file/d/15utggr_3UP-gSzJnsuQxoTEIktTTWrd-/view?usp=sharing
এই নিবন্ধটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে উদ্ধৃত করা হয়েছে আরও অনেকের লেখায় "ব্যাপক মৃত্যুর সংখ্যা" সংক্রান্ত প্রোপাগান্ডগুলোতে তথাকথিত প্রমাণের অংশ হিসেবে। উদাহরণস্বরূপ “Famine in China” প্রবন্ধটির কথা বলা যায়। ‘The China Quarterly’ এর সম্পাদক ছিলেন রডরিক ম্যাকফারকুহার, যিনি চীনের কমিউনিস্ট সরকার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা লিখে যান। ম্যাকফারকুহার চীনের ‘Cambridge History of China এ র ১৪তম খণ্ড সম্পাদনা করেছেন যা ১৯৪৯-১৯৬৫ সময়কাল সম্পর্কিত।
https://www.cambridge.org/core/series/cambridge-history-of-china/A4D3D77A97EACA3F903136BBF64B9169
তিনি ’The Origins of the Cultural Revolution’ লিখেছেন যেখানে ১৯৫৬ এবং ১৯৫৭ সালের ঘটনা এবং গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের ব্যাপারে আলাদা আলাদা ভলিউম আছে, যা "ব্যাপক মৃত্যুর সংখ্যা" সংক্রান্ত প্রোপাগান্ডা তৈরিকারীদের সহায়তা করেছে ব্যাপক। তিনি ‘The Secret Speeches of Chairman Mao’ সম্পাদনা করেন।
https://www.amazon.com/Secret-Speeches-Chairman-Mao-CONTEMPORARY/dp/067479673X
`The China Quarterly’ পত্রিকায় মুদ্রিত একটি বিবৃতি কংগ্রেস ফর কালচারাল ফ্রিডমের পক্ষ থেকে ইনফরমেশন বুলেটিন লিমিটেড প্রকাশ করে।
https://en.wikipedia.org/wiki/Congress_for_Cultural_Freedom
https://powerbase.info/index.php/Information_Bulletin_Ltd
রেমপার্টস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯৬৭ সালের ১৩ মে কংগ্রেস ফর কালচারাল ফ্রিডম একটি প্রেস রিলিজ জারি করে স্বীকার করে যে এটি সিআইএ দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছিল।
Ramparts (magazine) - Wikipedia
https://cultureandhistory.files.wordpress.com/2013/09/the_cultural_cold_war.pdf
ম্যাকফারকুহার পরবর্তীতে বলেছিলেন-
“যখন আমাকে The China Quarterly এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হতে বলা হয়েছিল, তখন আমাকে বোঝানো হয়েছিল যে CCF এর লক্ষ্য ছিল পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীদের মতাদর্শের অবাধ বিনিময়ের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি সম্প্রদায় গঠনে উৎসাহিত করা। উদ্দেশ্য ছিল সম্মুখ সারির বিভিন্ন সংগঠনে পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীদের আকৃষ্ট করার জন্য সোভিয়েতদের প্রচেষ্টাকে এক ধরনের সাংগঠনিক পাল্টা বাধা প্রদান করা। অর্থায়ন সম্পর্কে আমাকে যা বলা হয়েছিল তা হলো সিসিএফ বিশেষত ফোর্ড সহ বিভিন্ন ধরনের ফাউন্ডেশনগুলোর সমর্থন পেতো এবং সত্যটা ছিল এর মধ্যে ফারফিল্ড ফাউন্ডেশন ছিল সিআইএ সমর্থিত যা প্রকাশ করা হয়নি।”
Farfield Foundation - SourceWatch
লন্ডন রিভিউ অফ বুকস এর ২০০৬ সালের ২৬ জানুয়ারীর সংস্করণে ম্যাকফারকুহার লিখেছিলেন-
"দ্য চায়না কোয়ার্টারলির 1960 এর প্রারম্ভিক বিষয়গুলোর তৎকালীন সম্পাদক ছিলাম আমি।"
London Review of Books (lrb.co.uk)
তিনি আরও লিখেছেন-
"সিআইএ থেকে গোপন অর্থ (কংগ্রেস ফর কালচারাল ফ্রিডম এর মাধ্যমে ফরফিল্ড ফাউন্ডেশন, যা কিনা চায়না কোয়ার্টারলি, এনকাউন্টার এবং অন্যান্য অনেক ম্যাগাজিনের অভিভাবক) চায়না কোয়ার্টারলির জন্য তহবিলের একটি অংশ প্রদান করা হয়েছিল- যা আমি ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে প্রকাশ্যে না আসা পর্যন্ত জানতাম না।”
Encounter (magazine) - Wikipedia
অভিযোগ আছে যে অন্যান্য ম্যাগাজিনগুলোও সিআইএ থেকে নিয়মিত তহবিল পেয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ ভিক্টর মারচেটি (যিনি সিআইএ এর ডিরেক্টর অফিসের প্রাক্তন স্টাফ অফিসার ছিলেন) লিখেছেন যে সিআইএ এশিয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে এবং কমিউনিস্ট বিরোধী শিক্ষাবিদদের কাজকে সমর্থন করার জন্য বছরে ৮ মিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিতো এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চীন, উত্তর ভিয়েতনাম এবং উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে দিতে।
https://drive.google.com/file/d/1gfoOZYUgx3nOrH0gza10298m2sRlsVM9/view?usp=sharing
ম্যাকফারকুহার আরও বলেছেন যে তিনি নাকি তার জার্নালে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক দিক নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে মতামত প্রচারের অনুমতি দিয়েছিলেন!! তিনি যুক্তি দেখান যে তিনি প্রত্যাখ্যান করার পরও আলসপের নিবন্ধটি অন্য কোথাও প্রকাশিত হতোই এবং তিনি নাকি এটির জবাব দিয়েছিলেন যা আলসপের নিবন্ধ সম্পর্কে নেতিবাচক ছিল!!
The stolen history of the CIA and the Asian Foundation • MuckRock
গত কয়েক বছরে লেখকদের একটি নতুন প্রজন্ম তাদের কথিত প্রত্যক্ষদর্শী এবং "ব্যাপক মৃত্যুর সংখ্যা" তত্ত্বের জন্য প্রামাণ্য প্রমাণ প্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রে এই প্রমাণের সাথে সম্পর্কিত মূল আপত্তির বিষয়টা হলো উৎসের অকাট্যতা। এই লেখকরা তাদের নিবন্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেননি যাতে প্রমাণিত হয় যে উৎসগুলো খাঁটি। জ্যাসপার বেকার তার বই গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড, হাংরি গোস্টস -এ গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের সময় চীনে ব্যাপক ক্ষুধা এবং নরমাংস ভক্ষণের প্রমাণ পাওয়ার উল্লেখ করেছেন। এটি লক্ষণীয় যে এটি এমন প্রমাণ যা কেবল ১৯৯০ এর দশকেই আবির্ভূত হয়েছিল। অথচ নরমাংস ভক্ষণের এমন আরো অস্বাভাবিক কাহিনী গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের প্রকৃত সময়ে বা প্রকৃতপক্ষে অনেক বছর পরে উপস্থিত হওয়া কোনও উৎস দ্বারা প্রমাণিত হয়নি। বেকার যে গণ অনাহার এবং নরখাদক সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহার করেছেন তার অনেক বিবরণ এসেছে ৬০০ পৃষ্ঠার দলিল “থার্টি ইয়ার্স ইন দ্য কান্ট্রিসাইড” থেকে। বেকার বলেন এটি একটি গোপন সরকারি দলিল যা ১৯৮৯ সালে চীন থেকে পাচার করা হয়েছিল। বেকার লিখেছেন যে ‘হাংরি গোস্ট’ বইটির জন্য তার উৎসগুলো ১৯৮৯ সালে বুদ্ধিজীবীদের নির্বাসনে যাওয়ার সময় চীন থেকে পাচার করা নথির অন্তর্ভুক্ত। পাঠককে বলা দরকার যে, কঠোর নিয়ন্ত্রণ চলাকালীন দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আপাতদৃষ্টিতে ভিন্নমতাবলম্বী লোকেরা কীভাবে ত্রিশ বছর আগের ঘটনা সম্পর্কিত সরকারী নথিপত্র পাচার করতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়া বেকারের আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা উচিত ছিল কেন তিনি বিশ্বাস করেন “থার্টি ইয়ার্স ইন দ্য কান্ট্রিসাইড” এবং অন্যান্য উৎসগুলো খাঁটি। ২০০১ সালে বেকার লন্ডন রিভিউ অফ বুকস -এ তিয়ান আনমেন পেপারস পর্যালোচনা করেন।
https://drive.google.com/file/d/1o91uUKGHeqXK74fTd1qqTL1L7rQpeT4R/view?usp=sharing
তিয়ান আনমেন পেপারস কথিত অভ্যন্তরীণ দলিল যা একজন ভিন্নমতাবলম্বীর দ্বারা দেশ থেকে পাচার করা হয়েছিল।
https://en.wikipedia.org/wiki/The_Tiananmen_Papers
এটি তিয়ান আনমেন স্কয়ার হত্যাকাণ্ডের সময় পার্টি নেতৃত্বের চিন্তাধারার উপর আলোকপাত করেছিল। বেকার তার পর্যালোচনায় এই কাগজপত্র জালিয়াতি হতে পারে এমন সম্ভাবনা নিয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করেছেন। ‘হাংরি গোস্ট’ বইটিতে বেকারকে বলা দরকার ছিল যে কেন তিনি মনে করেছিলেন তিনি তার নিজের বইয়ে যে নথির উদ্ধৃতি দিচ্ছেন তা আসল, যদিও তিনি বিশ্বাস করেন যে অন্য চোরাচালানকৃত সরকারী নথিপত্রগুলো অসত্য হতে পারে। একইভাবে বেকার গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের সময় একটি বৃহৎ মানবিক বিপর্যয়ের প্রমাণ হিসেবে ১৯৬১ সাল থেকে একটি কথিত অভ্যন্তরীণ চীনা সেনা জার্নালের উদ্ধৃতি দেন। এই জার্নালের প্রতিবেদনগুলো আসলেই একটি উল্লেখযোগ্য বিপর্যয়কে নির্দেশ করে যা চীনা সৈন্যদের মনোবলকে প্রভাবিত করছে। যাইহোক, এই জার্নালটি কি প্রকৃত দলিল হিসেবে গণ্য করার উপযুক্ত? ১৯৬৩ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জার্নালটি প্রকাশ করে এবং ১৯৬৬ সালে ‘দ্য পলিটিক্স অব দ্য চাইনিজ আর্মি’ শিরোনামে হুভার ইনস্টিটিউশনের একটি সংগ্রহে প্রকাশিত হয়।
https://www.amazon.com/Politics-Chinese-Red-Army-Translation/dp/B000KR2XIU
ব্রিটিশ 'ডেইলি টেলিগ্রাফ’ সংবাদপত্রের ১৯৬৩ সালের ৬ই আগস্টের সংখ্যা অনুসারে-
"সেগুলো [জার্নাল] কিছু সময়ের জন্য আমেরিকানদের হাতে ছিল, যদিও তারা কীভাবে তা অর্জন করেছিল তা কেউ প্রকাশ করবে না।"
বেকার এবং গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের অন্যান্য অনেক লেখক যারা এই জার্নালগুলোর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তাদের বলা দরকার কেন তারা এগুলো খাঁটি হিসাবে বিবেচনা করে। বেকারের বইটিতে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় ক্ষুধার্ত প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ ব্যবহার করা হয়েছে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি চীনের মূল ভূখণ্ডের লোকদের পাশাপাশি হংকং এবং পশ্চিমে চীনা অভিবাসীদের সাক্ষাৎকার নেন। তিনি তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে চীনের মূল ভূখণ্ডে তিনি খুব কমই কৃষকদের সাথে স্বাধীনভাবে কথা বলার অনুমতি পেয়েছিলেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা নাকি সাক্ষাৎকারের আগে কৃষকদের "প্রশিক্ষণ" দিয়েছিলেন, তাদের সাথে বসে তাদের হয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। এই সুযোগে এই কর্মকর্তারা দেং জিয়াওপিং এর আদেশে গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের বিরুদ্ধে তৈরি প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করছিলেন। এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ যে পাঠককে বলা হবে বইয়ে উল্লেখিত কোন সাক্ষাৎকার এই অবস্থার অধীনে পরিচালিত হয়েছিল এবং কোন সাক্ষাৎকার পরিচালিত হয়নি। অথচ বেকার ‘হাংরি গোস্ট’ বইটিতে কাজটি করেননি। এই বইয়ের কোথাও তিনি পর্যাপ্ত বিশদ বিবরণের মাধ্যমে পাঠককে দেখাতে পারেননি যে তিনি তার বইতে যে বিবরণগুলো উল্লেখ করেছেন তা খাঁটি। বহু বছর ধরে ‘হাংরি গোস্ট’ ছিল মাও এর বিরুদ্ধে সমালোচকদের প্রধানতম পাঠ্য। ২০০৫ সালে ‘মাও: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ প্রকাশিত হয়েছিল এবং পশ্চিমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল। এই বইয়ের অভিযোগের মাত্রা বেকারের বইয়ের চেয়েও চরম। বইটিতে ৭০ মিলিয়ন মৃত্যুর মধ্যে ৩৮ মিলিয়ন মৃত্যু গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের সময় ঘটেছে বলে মাওকে এজন্য দায়ী করা হয়! বইটি মাও এর বক্তৃতা এবং বিবৃতিগুলোর একটি অনানুষ্ঠানিক সংগ্রহের উপর খুব বেশি নির্ভর করে রচিত যা অনুমান করা হয় তার অনুসারীরা সংগ্রহে রেখেছিল এবং সেগুলো পশ্চিমে কিভাবে গিয়েছে তা অস্পষ্ট। লেখকরা প্রায়ই এই সংগ্রহ থেকে উপকরণ নিয়ে মাও এর কথিত বর্বরতা দেখাতে ব্যবহার করলেও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতিতে তাঁর অবদানের কথা ভুলেও বলেন না। এগুলো হলো এমন কিছু লেখার সংগ্রহ যা ১৯৮০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর চাইনিজ রিসার্স মেটেরিয়ালস এর বদৌলতে নতুনভাবে সামনে আসে। এগুলোর মধ্যে কিছু লেখা আবার ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছিল এবং ‘The Secret Speeches of Chairman Mao’ এ প্রকাশিত হয়েছিল। এই খণ্ডে টিমোথি চিক লেখাগুলোর সত্যতা মূল্যায়ন করে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Timothy_Cheek
তিনি লিখেছেন-
"এই খণ্ডগুলোর সুনির্দিষ্ট প্রমাণ, যা বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে এসেছে, নথিভুক্ত করা যাবে না..."
টিমোথি চিক যুক্তি দেন যে দু’টি কারণে লেখাগুলো খাঁটি হতে পারে। প্রথমত, সিসিআরএম দ্বারা প্রাপ্ত কিছু লেখা পূর্বে অন্যান্য সংস্করণে চীনের মূল ভূখণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, সিসিআরএম দ্বারা প্রাপ্ত একটি ভলিউমে প্রদর্শিত লেখাগুলো সিসিআরএম দ্বারা প্রাপ্ত কমপক্ষে অন্য একটি ভলিউমেও উপস্থিত। কিন্তু কেন এই দু’টি ঘটনা লেখাগুলোর সাধারণ সত্যতার দৃঢ় প্রমাণ প্রদান করবে? আরও গুরুত্ব সহকারে চ্যাং এবং হ্যালিডে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড সংক্রান্ত তাদের অধ্যায়ে বিভ্রান্তিকর উপায়ে এই পাঠ্যগুলো থেকে উদ্ধৃত করেছেন। চ্যাং দাবি করেন যে ১৯৫৮ সালে মাও চড়াও হন, তার ভাষায় "গ্রামাঞ্চলে মানুষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘোরাঘুরি করছিল।" পরের বাক্যে লেখকদ্বয় দাবি করেন "যে স্থানে খাবার ছিল সেখানে পালিয়ে দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচার প্রচলিত সম্ভাবনা এখন বন্ধ হয়ে গেছে।" কিন্তু "গোপন" বক্তৃতার যে অংশে মাও অনুমান করেন যে লোকেরা "অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘোরাফেরা করছে" তার সাথে চীনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার কোন সম্পর্ক নেই। লেখকদ্বয় এখান থেকে একটু, ঐখান থেকে একটু নিয়ে উদ্ধৃতি দিলেও পূর্ণ অংশটি যখন পড়া হয়, তখন দেখা যায় যে লেখকগণ বিভ্রান্তি ছড়চ্ছেন। মাও আসলে যা বলতে চেয়েছেন তা নিম্নরূপ-
”[কেউ একজন] হ্যান্ডান [হেবেই] এর একটি এপিসি থেকে আনশান ইস্পাত [মিল] -এ একটি গাড়ি নিয়ে যান এবং কিছু লোহা না দেয়া পর্যন্ত তিনি চলে যাননি। প্রত্যেক জায়গায় [সেখানে] অনেক মানুষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে; এটা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। [আমাদের] স্তরগুলোর মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করতে হবে, প্রতিটি স্তর পরবর্তী উচ্চতর স্তরে রিপোর্ট করবে- এপিসিগুলো কাউন্টিতে, কাউন্টিগুলো জেলাতে, জেলাগুলো প্রদেশে- একে সমাজতান্ত্রিক শৃঙ্খলা বলা হয়।”
মাও এখানে যে বিষয়ে কথা বলছেন তা হলো ইস্পাত উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচারণা, আংশিকভাবে ছোট আকারের গ্রামীণ উৎপাদন ব্যবহারের মাধ্যমে। কর্তৃত্ববিহীন কেউ তাদের সহযোগীকে তাদের ইস্পাত উৎপাদন কোটা পূরণ করতে সাহায্য করার জন্য আনশানের কাছে লোহার দাবি করছিল। মাও বলছেন যে এই স্বতঃস্ফূর্ত পদ্ধতি ভুল। তিনি আরও অধিক শ্রেণিবদ্ধ সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনা ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলছেন যেখানে মানুষকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পেতে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। তিনি স্পষ্টতই এখানে সমস্ত চীনা জনগণকে সারা দেশে ভ্রমণের উপর সাধারণ নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সমর্থন করছেন না। দ্বিতীয় গুরুতর বিভ্রান্তিকর উদ্ধৃতি গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড সংক্রান্ত অধ্যায়ের শেষে আসে। প্রথমে চ্যাং এবং হ্যালিডে লিখেছেন "আমরা এখন নিশ্চিতভাবে বলতে পারি মাও কত লোককে সরিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন।" অনুচ্ছেদটিতে তখন মাও কর্তৃক কথিত উদ্ধৃতির কিছু উদাহরণ দিয়ে বলা হয় যে যুদ্ধের সময় কতজন চীনার মৃত্যুবরণ গ্রহণযোগ্য হবে। পরের অনুচ্ছেদটি শুরু হয় "কেবল মাও যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করছিলেন না।" তারা তখন উচাং সম্মেলনে মাওকে উদ্ধৃত করে বলেন "এই সমস্ত প্রকল্পের সাথে এইভাবে কাজ করলে অর্ধেক চীনাকে মরতে হবে।"
https://en.wikipedia.org/wiki/Wuchang_Uprising
এই উদ্ধৃতিটি গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের উপর চাং এবং হ্যালিডের অধ্যায়ের শিরোনামে প্রদর্শিত হয়। লেখকরা যেভাবে এই উদ্ধৃতিটি উপস্থাপন করেছেন তা দেখে মনে হচ্ছে যেন মাও বলছিলেন যে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রকৃত অর্থে চীনের জনগণের অর্ধেকের মৃত্যুর প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু বক্তৃতাটির প্রকৃত পাঠ থেকে এটা স্পষ্ট যে, মাও যা করছেন তা হলো গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে অতিরিক্ত কাজ এবং অতিরিক্ত উৎসাহের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা, যখন অতিমাত্রায় অতিশয়োক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। মাও স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে তিনি চান না তার শিল্পায়ন অভিযানের ফলে কেউ মারা যাক। আলোচনার এই অংশে মাও সমস্ত বড় শিল্প এবং কৃষিকে একসাথে বিকশিত করার ধারণা সম্পর্কে কথা বলেছেন। লেখকদ্বয়ের বেছে বেছে উদ্ধৃত করা অংশের সম্পূর্ণ পাঠ্য নিম্নরূপ।
”এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমি মনে করি যদি আমরা [এই সমস্ত কাজ একসাথে] করি তাহলে চীনের জনসংখ্যার অর্ধেক সন্দেহাতীতভাবে মারা যাবে; এবং যদি এটি অর্ধেক না হয় তবে এটি হবে তৃতীয় বা দশ শতাংশ, মৃত্যুর সংখ্যায় ৫০ মিলিয়ন। যখন গুয়াংজিতে মানুষ মারা যায়, তখন কি চেন ম্যানুয়ানকে বরখাস্ত করা হয়নি? যদি ৫০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়, তাহলে আপনারা আপনাদের চাকরি না হারালেও আমার অন্তত আমার চাকরি হারানো উচিত; [আমি হারাবো কিনা] মাথা প্রশ্নের জন্য খোলা থাকবে। আনহুই অনেক কিছু করতে চায়, অনেক কিছু করা একদম সঠিক, কিন্তু মৃত্যু না হওয়াকে একটি নীতি হিসেবে গড়ে তুলুন।”
https://en.wikipedia.org/wiki/Chen_Manyuan
তারপর কিছু বাক্য পরে মাও বলেন- ”৩০ মিলিয়ন টন ইস্পাত হিসাবে, আমাদের কি সত্যিই এত প্রয়োজন? আমরা কি [এতটা] উৎপাদন করতে সক্ষম? আমরা কত লোককে একত্রিত করতে পেরেছি? এটা কি মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারতো না?"
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে চ্যাং এবং হ্যালিডে তাদের বইয়ের জন্য যে উৎসগুলো ব্যবহার করেছে তার সম্পূর্ণ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। নিকোলাস ডি ক্রিস্টফের দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে বইটির পর্যালোচনা কিছু আকর্ষণীয় প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে।
https://en.wikipedia.org/wiki/Nicholas_Kristof
ক্রিস্টফ মাও এর ইংরেজি শিক্ষক ঝাং হানঝি সম্পর্কে বলেছেন, যাকে চ্যাং এবং হ্যালিডে বইটির জন্য সাক্ষাৎকার নেয়া ব্যক্তিদের একজন বলে উল্লেখ করেছেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Zhang_Hanzhi https://drive.google.com/file/d/1il5DUXUspdZC0us-AYhlJ-R44uG7f-WU/view?usp=sharing
অথচ ঝ্যাং ক্রিস্টফকে (যিনি তার অন্যতম বন্ধু) বলেছিলেন যে যদিও তিনি দুইজন লেখকের সাথে দেখা করেছিলেন, কিন্তু তিনি সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকার করেছিলেন এবং তাদের কোন উল্লেখযোগ্য তথ্য প্রদান করেননি। এরপর ক্রিস্টফ লেখকদের ওয়েবে তাদের উৎস প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে সেগুলোর ন্যায্যতা মূল্যায়ন করা যায়। ১৯৬০ এর দশকে "ব্যাপক মৃত্যুর সংখ্যা" গল্পের কিছু প্রবক্তা ছিলেন। যেমন- ফেলিক্স গ্রীন ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে কমিউনিস্ট বিরোধী প্রোপাগান্ডা প্রতিবছর চালিয়ে গেছেন চীনে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অভিযোগ তুলে। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের বিশাল সংখ্যক কাল্পনিক মৃত্যুর গল্পটি ১৯৮০ এর দশকে গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয়েছিল যখন নতুন চীনা নেতৃত্ব এই ধারণাকে সমর্থন করতে শুরু করেছিল। এটিই পশ্চিমে বেকার এবং জং চ্যাংয়ের পাশাপাশি সত্যিকারের বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি করেছে। চীনের নেতৃত্ব গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের উপর তাদের আক্রমণ শুরু করে ১৯৭৯ সালে। দেং জিয়াওপিং মাও সমর্থকদের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য সরকারী প্রেসকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটি মাওবাদের বিরুদ্ধে একটি আদর্শিক প্রচারণার রূপ নিয়েছিল। দেং জিয়াওপিং যুগ সংক্রান্ত গবেষণায় মেসনার বলেছেন-
"গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের 'পেটি বুর্জোয়া' সামাজিক ও আদর্শগত শিকড়গুলো ব্যাখ্যা করার জন্য বহুসংখ্যক পণ্ডিত এবং তাত্ত্বিককে সামনে আনা হয়েছিল।"
গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের এই সমালোচনার কারণটি মাও পরবর্তী ক্ষমতার দ্বন্দ এবং ১৯৪৯-৭৬ এর নীতিগুলো ফিরিয়ে আনার সাথে অনেক বেশি জড়িত ছিল। ১৯৭৬ সালে মাওয়ের মৃত্যুর পর হুয়া গুওফেং "মাও কর্তৃক প্রণীত প্রতিটি কথা ও নীতি সমুন্নত রাখার" কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Hua_Guofeng
দেং জিয়াওপিংয়ের ১৯৭৮ সালে হুয়াকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল এবং নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য রাজনৈতিক ন্যায্যতার প্রয়োজন ছিল। মাংয়ের "৭০% সঠিক এবং ৩০% ভুল" সম্পর্কে দেং জিয়াওপিংয়ের ঘোষিত অবস্থানটি তার পূর্বসূরীদের থেকে ইতিহাস এবং মতাদর্শের প্রতি তার "আত্মাভিমানী” পদ্ধতির পার্থক্য তৈরি করার একটি উপায় ছিল। দেং বাস্তবায়িত বাজারপন্থী নীতিগুলো প্রমাণ করেছিল যে তিনি আসলে বিশ্বাস করতেন মাও ৮০% ভুল ছিল! গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড অতি-বামপন্থী নীতির কারণে সৃষ্ট একটি বিপর্যয় ছিল- এই ধারণা প্রসারে দেং জিয়াওপিং এর দালালরা সম্ভাব্য সবকিছুই করেছে। এর অংশ হিসেবে মার্শাল ইয়ে জিয়ানইং ১৯৭৯ সালে একটি বক্তৃতায় গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে বামপন্থী ত্রূটির কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ের কথা বলেছিলেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Ye_Jianying
১৯৮১ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির "Resolution on certain questions in the history of our party since the founding of the People’s Republic of China” তে বলা হয় "১৯৫৯ এবং ১৯৬১ সালের মধ্যে আমাদের দেশ এবং জনগণের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।”
https://digitalarchive.wilsoncenter.org/document/121344.pdf?v=d461ad5001da989b8f96cc1dfb3c8ce7
শিক্ষাবিদদেরও মাও বিরোধী প্রোপাগান্ডায় কাজে লাগায় দেং। ১৯৮১ সালে পিপলস ইউনিভার্সিটির পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক লিউ জেং ১৯৫৪-৭৮ এর মৃত্যুর হারের পরিসংখ্যান দিয়েছেন। এই পরিসংখ্যানগুলো একটি সর্বজনীন একাডেমিক সমাবেশে দেয়া হয়েছিল যা পশ্চিমাদের ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। ১৯৫৮-৬১ সালের জন্য তিনি যে পরিসংখ্যান দিয়েছিলেন তা দেখায় যে এই সময়ের মধ্যে ১৬.৫ মিলিয়ন অতিরিক্ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
https://drive.google.com/file/d/1FjMccMfLb3XnCAvmVGvt--sfPbucYBra/view?usp=sharing
একই সময়ে একজন বিশিষ্ট চীনা অর্থনীতিবিদ সান ইয়েফাং প্রকাশ্যে এই পরিসংখ্যানের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের ভুলের জন্য নাকি "রক্তের মাধ্যমে উচ্চ মূল্য দিতে হয়েছিল"!
https://drive.google.com/file/d/1_H0UcFrlOUuGET976zuysgR6C1KYKj5I/view?usp=sharing
https://en.wikipedia.org/wiki/Sun_Yefang
অভ্যন্তরীণ দলীয় সংগ্রামের পাশাপাশি দেং পুঁজিবাদ বা "চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্র" প্রবর্তনের নামে মাও এর ইতিবাচক অর্জনের প্রায় সব উল্টে দিতে চেয়েছিলেন। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডকে আক্রমণ মাও এর বামপন্থী নীতিগুলো পাল্টে দেয়ার জন্য আদর্শগত যুক্তি প্রদান করতে সাহায্য করেছে তাকে। দেং ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে কৃষি কমিউনগুলোকে বিলুপ্ত করে দেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Agricultural_commune
গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের পরের বছরগুলোতে কমিউনগুলো বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো কল্যাণমূলক সেবা প্রদান শুরু করেছিল। কমিউনের বিলুপ্ত হওয়ার মাধ্যমে এগুলোও শেষ হয়ে গেছে। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড সম্পর্কে একটি নিবন্ধে ওয়ারেন উইলসন কলেজের সহকারী অধ্যাপক হান ডংপিং নিউইয়র্ক ভিত্তিক চীনা সংবাদপত্র ‘ওয়ার্ল্ড জার্নালে’ হেনান প্রদেশের একজন কৃষক সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন বর্ণনা করেছেন, যিনি তার সংক্রমিত অণ্ডকোষের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা বিল পরিশোধ করতে পারছিলেন না।
https://en.wikipedia.org/wiki/World_Journal
ব্যথা সহ্য করতে না পেরে তিনি সেগুলো ছুরি দিয়ে কেটে ফেলেন এবং প্রায় আত্মহত্যা করেন। এই ধরনের ঘটনা গ্রামাঞ্চলে দেং এর "সংস্কার" এর কারণেই ঘটেছে। এটা প্রায়ই প্রচার করা হয় যে, দেং এর কৃষি সংস্কার নাকি কৃষকদের কল্যাণ বৃদ্ধি করেছে। এটা সত্য যে কমিউন ভেঙে ত্বরিত কৃষি উৎপাদনের জন্য ৫ বছর সময় ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু এরপর মাথাপিছু খাদ্য উৎপাদন কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে কমে যায় (মাইসনারের বইয়ে দ্রষ্টব্য)। এই হ্রাস সত্ত্বেও পশ্চিমা ভাষ্যকাররা কমিউনের ভাঙ্গনকে অর্থনৈতিক সাফল্য হিসাবে বর্ণনা করে। প্রকৃতপক্ষে কৃষক কমিউনগুলো ভেঙে কৃষকদের জন্য প্রকৃত কষ্টের উৎস তৈরি করা হয়েছে। চীনা শাসক শ্রেণীকে গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডকে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা একটি দুর্যোগ হিসাবে বর্ণনা করার জন্য উৎসাহিত করে দেং একটি রাজনৈতিক দালাল শ্রেণী গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন যারা গ্রামাঞ্চলে তার প্রতিক্রিয়াশীল নীতিগুলোকে বৈধ বলে মনে করে। দেং এর নিজেকে সঠিক প্রমাণের জন্য তাকে কেবল প্রমাণ করতে হতো যে ১৯৫৯-৬১ সালের মধ্যে বিশাল পরিমাণে মৃত্যু ঘটেছে। শুধু তাই নয়, তাকে এটাও প্রমাণ করতে হতো যে এগুলো প্রধানত নীতিগত ত্রূটির ফল। গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের পর দুর্ভিক্ষের বিষয়ে চীনের সরকারী গবেষণার ফলাফল ছিল যে এটি ঘটার পিছনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ৭০% দায়ী এবং মানবসৃষ্ট ত্রূটি ৩০% দায়ী। এই গবেষণার ফলাফল দেং জিয়াওপিং এর শাসনের সময় সম্পূর্ণ উল্টে যায়। ১৯৮০ এর দশকে তারা দাবী করেছিল যে সমস্যাগুলোর জন্য ৭০% দায়ী মানবসৃষ্ট ত্রুটি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ৩০% দায়ী। যদি মাও এর কর্মকান্ডের ফলে লক্ষ লক্ষ কৃষকের মৃত্যু হতো, তাহলে নিশ্চয়ই কৃষকরা বুঝতে পারতো যে কি হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় ঘটে যাওয়া বেশিরভাগ সমস্যার জন্য তারা মাওকে দায়ী করেনি। মাওয়ের মৃত্যুর অনেক পরে অধ্যাপক হান ডংপিং শ্যান্ডং এবং হেনান ভ্রমণ করেন, যেখানে ১৯৫৯-৬১ সালে দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াল পরিস্থিতি দেখা দেয়। হান ডংপিং দেখতে পেলেন যে তিনি যেসব কৃষককে প্রশ্ন করেছিলেন তাদের অধিকাংশই দ্বিতীয়টির চেয়ে ঘটনাগুলের প্রথম ব্যাখ্যাকে সমর্থন করেন, অর্থাৎ তারা মনে করেন না যে গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের সময় তারা যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল তার জন্য মাও প্রধানত দায়ী। এর মানে এই নয় যে কোনো ত্রূটি ঘটেনি। ডংপিং গ্রামীণ কমিউনগুলোতে খাদ্য ভাগাভাগি করে খাওয়ার কথা লিখেছিলেন। শুরুতে এটি কৃষকদের মধ্যে একটি খুব জনপ্রিয় রীতি ছিল। প্রকৃতপক্ষে ১৯৫৮ সালে অনেক কৃষক রিপোর্ট করেছেন যে তারা আগে তাদের জীবনে এত ভাল খায়নি। সমস্যাটি ছিল যে এই নতুন, আপাতদৃষ্টিতে প্রাচুর্য ফসল কাটা এবং খাদ্য গ্রহণে অসাবধানতার দিকে পরিচালিত করেছিল। মানুষ মনে করতে শুরু করে যে সরকার খাদ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারে এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য তাদের নিজেদের কোনো দায়িত্ব নেই। ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে চীনের দারিদ্র্যের পরিপ্রেক্ষিতে এটি একটি বড়ো ত্রূটি ছিল যা গুরুতর সমস্যার দিকে নিয়ে গিয়েছিল। তিন বছরের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া অঞ্চলগুলোতে কমিউন সদস্যদের মধ্যে সংহতি ভেঙে যায়, কারণ অনেকে ফসল কাটার আগেই সেগুলো মজুদ করার চেষ্টা করে। এই অভ্যাস খারাপ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। কৃষকরা কখনোই হান ডংপিংকে বলেননি যে যৌথ খাদ্যের সংগঠনে ত্রূটিগুলো দুর্ভিক্ষের প্রধান কারণ ছিল। হান ডংপিং গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের সময় মাওকে তার তাড়াহুড়ো নীতির কারণে সৃষ্ট পরিণতির জন্য তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তবে তিনি লিখেছেন-
“আমি হেনানের শানডংয়ে অসংখ্য শ্রমিক ও কৃষকের সাক্ষাৎকার নিয়েছি এবং এমন কোনো কৃষক বা শ্রমিকের সাথে আমার দেখা হয়নি যে বলেছিল মাও খারাপ। আমি আনহুইতে একজন পণ্ডিতের সাথেও কথা বলেছিলাম [যেখানে দুর্ভিক্ষ সবচেয়ে গুরুতর বলে অভিযোগ করেছিলেন জোসেফ বল] যিনি গ্রামাঞ্চলে বড় হয়েছিলেন এবং আনহুইতে গবেষণা করছিলেন, তিনি কখনোই এমন কোনো কৃষকের দেখা পাননি যে বলেছিল মাও খারাপ কিংবা দেং [জিয়াওপিং] ভালো ছিল।”
অনেকেই বলতে পারেন যে হান ডংপিং আংশিকভাবে মাওয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল বিধায় তিনি কৃষকদের কাছ থেকে যা শুনেছেন তা অতিরন্জিত করতে পারেন। কিন্তু এটাও লক্ষ করতে হবে যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় তার দুই আত্নীয় ক্ষুধাজনিত রোগে মারা গিয়েছিলেন এবং হান ডংপিং এসময়ে যে কৃষকদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাদের চেয়ে বেশি মাওয়ের নীতির সমালোচনাকারী ছিলেন। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডকে স্মরণ করার সময় মাওয়ের জন্য কৃষকদের আপেক্ষিক সহানুভূতির ব্যাপারে কথা বলতে গেলে অবশ্যই জনসংখ্যাতাত্ত্বিক প্রমাণকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে যেগুলো প্রচার করে যে এই সময়ে তাদের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে মারা গেছে। আর পশ্চিমা শিক্ষাবিদগণ তো এই প্রমাণের বৈধতার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকেন সর্বদা। এমনকি কার্ল রিসকিনের মতো যারা এটির ব্যাপারে অনুসন্ধান করেন, তারাও সর্বদা গায়ের জোরে বলেন যে সমস্ত "লভ্য প্রমাণ" ইঙ্গিত দেয় এই সময়ে বিপুল অনুপাতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বেশ কয়েকটি উৎস থেকে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ পাওয়া যায় যে এই সময়কালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। কিন্তু মূল প্রশ্নটি হচ্ছে এই দুর্ভিক্ষ কি আসলেই ৩০ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছিল? এটি প্রকৃতপক্ষে ঘটলে সত্যিই নজিরবিহীন হতো। যদিও আমরা "আফ্রিকান দুর্ভিক্ষে কোটি কোটি মানুষ অনাহারের মুখোমুখি" এর মতো সংবাদপত্রের শিরোনাম পড়তে অভ্যস্ত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ লোকের মৃত্যু হয়না। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৪-৭৫ সালের বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষকে ইতিহাসে একটি গভীর দুঃখজনক ঘটনা হিসেবে স্মরণ করা হয়। বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের আনুষ্ঠানিকভাবে মৃতের সংখ্যা ছিল ৩০,০০০; যদিও অনানুষ্ঠানিক সূত্রে মৃতের সংখ্যা ১,০০,০০০ ছিল।
https://drive.google.com/file/d/1D1u3YHeGNTS_JF3WEFkYYk7AujqtMO5A/view?usp=sharing
এর সাথে গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড এর সময়ের চীনের প্রায় ৬৬০-৬৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ৩০ মিলিয়ন কথিত মৃত্যুর সংখ্যার তুলনা করুন। আনুপাতিকভাবে বলতে গেলে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে মৃতের সংখ্যা বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের জন্য উচ্চতর অনুমানকৃত মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে প্রায় ৩৫ গুণ বেশি! এটা দাবী করা বরং বিভ্রান্তিকর যে সব "লব্ধ প্রমাণ" ব্যাপক মৃত্যুর তত্ত্বের বৈধতা প্রদর্শন করে। আসল সত্যটি হলো গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড এর সময়ের লক্ষ লক্ষ কথিত মৃত্যুর সমস্ত অনুমান ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিকে মৃত্যুর হারের পরিসংখ্যানের উপর নির্ভর করে। সমস্যা হলো বেশিরভাগ চীনা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্যের মতো ১৯৪০-৮২ সময়ের মৃত্যুর হারের পরিসংখ্যান ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে চীন সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। কেবল ১৯৮২ সালে ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকের মৃত্যুর হারের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছিল। নিচের টেবিল যথার্থভাবে দেখায় যে ১৯৫৭ সালে মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১০.৮ থেকে বেড়ে ১৯৬০ সালে ২৫.৪ পৌঁছে, ১৯৬১ সালে নেমে যায় প্রতি হাজারে ১৪.২ এবং ১৯৬২ সালে প্রতি হাজারে ১০ জনে নেমে আসে।
https://drive.google.com/file/d/1N0Zq5ikFUvFnipYmlyRMWugXiwIOOA8y/view?usp=sharing
এই পরিসংখ্যানগুলো ১৯৫৮-১৯৬১ সালের মধ্যে দুর্ভিক্ষের কারণে প্রায় ১৫ মিলিয়ন অতিরিক্ত মৃত্যু দেখায়। দুর্ভিক্ষের মৃত্যুর চীনা তথ্য মার্কিন জনসংখ্যাতাত্ত্বিকদের একটি গ্রূপ এই বিষয়ের উপর তাদের নিজস্ব গবেষণায় ব্যবহার করে। এই জনসংখ্যাতাত্ত্বিকরা ছিলেন আনসলে কোয়েল, জন এয়ার্ড এবং জুডিথ ব্যানিস্টার। এই তিনজন সর্বপ্রথম পশ্চিমে "ব্যাপক মৃত্যুর সংখ্যা" তত্ত্বকে জনপ্রিয় করেছিল। আনসলে কোয়েল আমেরিকান জনসংখ্যাতত্ত্বে অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Ansley_J._Coale
তিনি জনসংখ্যা গবেষণা অফিস দ্বারা নিযুক্ত ছিলেন যা ১৯৮০ এর দশকে রকফেলার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত হতো, অর্থাৎ যেসময় তিনি চীন বিষয়ক তার কাজ প্রকাশ করছিলেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Rockefeller_Foundation
জন এয়ার্ড ছিলেন ইউএস ব্যুরো অফ দ্য সেন্সাস-এ চীন বিষয়ক গবেষণায় বিশেষজ্ঞ। ১৯৯০ সালে তিনি আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট দ্বারা প্রকাশিত একটি বই লিখেছিলেন, সংস্থাটি নব্যউদারবাদপন্থী নীতির প্রচার করে।
https://en.wikipedia.org/wiki/American_Enterprise_Institute
বইটির নাম ছিল ”স্লটার অফ দ্য ইনোসেন্টস” এবং এটির মাধ্যমে তিনি চীনের এক সন্তান জন্ম নিয়ন্ত্রণ নীতির সমালোচনা করেছেন।
https://drive.google.com/drive/folders/161U7ST8Wokjt9L6b3PlRQ_fEWq276L5W?usp=sharing
জুডিথ ব্যানিস্টার ছিলেন ইউএস ব্যুরো অফ দ্য সেন্সাস এর আরেকজন কর্মী। তাকে তার চাকরি থেকে ছুটি দেয়া হয়েছিল একটি বই লেখার জন্য যাতে গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড মৃত্যু নিয়ে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল। জন এয়ার্ড তার বইটি প্রকাশের পূর্বে পড়ে তাকে নানা রকম পরামর্শ দিয়েছিলেন। জুডিথ ব্যানিস্টার এমন পরিসংখ্যান তৈরি করেন যা গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে ৩০ মিলিয়ন অতিরিক্ত মৃত্যু দেখায়। এটি চীনের সরকারী পরিসংখ্যান দ্বারা নির্দেশিত ফিগারের প্রায় দ্বিগুণ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সরকারী পরিসংখ্যানগুলো মোট মৃত্যুর হার কম দেখিয়েছে। ব্যানিস্টার ১৯৫৩ এবং ১৯৬৪ সালের দু’টি আদমশুমারির মধ্যে জন্মগ্রহণকারীদের মোট সংখ্যা গণনা করে এই সময়ের মধ্যে রিপোর্টে কম দেখানো মৃত্যুর সংখ্যা গণনা করেন। তিনি আদমশুমারি থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং ১৯৮২ সালে পরিচালিত একটি পূর্ববর্তী জরিপের তথ্য ব্যবহার করে কাজটি করেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৯৪০ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে তাদের জন্ম দেয়া শিশুর সংখ্যা বর্ণনা করতে বলা হয়েছিল। একবার ১৯৫৩ এবং ১৯৬৪ সালের জনসংখ্যা জানা গেলে এবং এই দুই বছরের মধ্যকার মোট জন্মের সংখ্যা জানা গেলে এই সময়ের মধ্যে যে সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে তার হিসাব করা সম্ভব। তিনি এই তথ্যটি ব্যবহার করে এগারো বছরের মোট মৃত্যুর সংখ্যা গণনা করেন যা সরকারি মৃত্যুর হারের তুলনায় অনেক বেশি। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে এই মৃত্যুর সংখ্যা কত তা অনুমান করার জন্য ব্যানিস্টার চীনা মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানে ফিরে আসেন। তিনি অনুমান করেন যে এই পরিসংখ্যানগুলো ঐসময়ের মধ্যে চীনে মৃত্যুর প্রকৃত প্রবণতা নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি অনুমান করেন ১৯৬০ সালে প্রতি হাজারে ২৫ জনের আনুষ্ঠানিক মৃত্যুর হার প্রকৃতপক্ষে ইঙ্গিত দেয় যে ১৯৬০ সালে মৃত্যুর হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। অধিকন্তু, তিনি ১৯৫৩-১৯৬৪ সালের মধ্যে তার অনুমানের ঐ মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখানোর রিপোর্টের সাথে এটিকে একত্রিত করে ১৯৬০ সালে প্রতি হাজারে 45 জন মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে আসেন। যে বছরগুলোতে কোন দুর্ভিক্ষের অস্তিত্ব পর্যন্ত ছিল না, এই পদ্ধতিতে সেসব বছরেও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়! উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫৭ সালে তিনি মৃত্যুর হারকে প্রতি হাজারে ১০.৮ এর সরকারী পরিসংখ্যান থেকে প্রতি হাজারে ১৮ এ উন্নীত করেন। ব্যানিস্টার তারপর ভালো বছরগুলোতে সংশোধিত মৃত্যুর হারকে কথিত দুর্ভিক্ষের বছরে সংশোধিত মৃত্যুর হারের সাথে তুলনা করেন। ব্যানিস্টার তখন গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের সময় ৩০ মিলিয়ন অতিরন্জিত মৃত্যুর অনুমান নিয়ে সামনে আসেন। এই ধারণাটিকে সমর্থন করার জন্য বিভিন্ন ধরণের চীনা পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করা হয়েছে যে একটি বিশাল দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। যে পরিসংখ্যানগুলো দেখায় যে মাও এর জন্য দায়ী ছিলেন তা-ও উদ্ধৃত করা হয়েছে। তারা গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে বর্ধিত মৃত্যুর হারের প্রাদেশিক পরিসংখ্যানগুলো অন্তর্ভুক্ত করে, যেগুলো গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের সময় শস্য উৎপাদনের হার ব্যাপক মাত্রায় কম দেখায় এবং এমন পরিসংখ্যান যা স্পষ্টতই দেখায় যে খারাপ আবহাওয়া দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী নয়। এই পরিসংখ্যানগুলো ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে দে এর সংস্কারের সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু এই পরিসংখ্যান কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
https://drive.google.com/file/d/1rUFQe7weiWeq05EQgmPsCZZVQQo7OdmS/view?usp=sharing
আমরা দেখেছি যে ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড এবং পিপলস কমিউনের তীব্র সমালোচনার সময় সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছিল। দেং এর অধীনে চীন ছিল একটি স্বৈরতান্ত্রিক দেশ যা কঠোরভাবে জনগণের কাছে তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিল। এটা ধরে নেয়া যুক্তিসঙ্গত হবে যে একটি সরকার যা গণমাধ্যমের দ্বারা জনসাধারণের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতিবেদনে ক্রমাগত হস্তক্ষেপ করে, তারা পরিসংখ্যান তৈরিতেও হস্তক্ষেপ করবে। জন এয়ারড ১৯৮২ সালের একটি লেখায় বলেন যে চীনা উৎসগুলোতে খুব কম পরিমাণে জাতীয় জনসংখ্যার তথ্য উপস্থিত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে কেন্দ্রীয় সেন্সরশিপ। রাষ্ট্রীয় পরিষদের পূর্বানুমতি ছাড়া জাতীয় জনসংখ্যার কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করা যাবে না।
https://en.wikipedia.org/wiki/State_Council_of_the_People%27s_Republic_of_China
এমনকি এনএসবি (রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো) এর কর্মকর্তারা এই ধরনের পরিসংখ্যান ব্যবহার করতে পারবেন না যতক্ষণ না তারা উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারেন৷
http://www.stats.gov.cn/english/
https://drive.google.com/file/d/188eBH3onZFHk_Lc3L9w8Rj8NRqzQ7iKG/view?usp=sharing
বিশেষ কৌতুহলের বিষয় হলো রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো কোন পরিস্থিতিতে মৃত্যুর হারের এই পরিসংখ্যানে পৌঁছেছে সেই প্রশ্নটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনা শিক্ষাবিদরা গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় মোট মৃত্যুর জন্য যে পরিসংখ্যান দিয়েছে তার সবই নির্ভর করে প্রশ্নবিদ্ধ বছরের জন্য মৃত্যুর হারের মূল পরিসংখ্যানের উপর। যদি বিস্তারিতভাবে জানা যেত কিভাবে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় মৃত্যুর হার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, তাহলে আরও নিশ্চিত হওয়া যেত যে এটি সঠিক। সমস্যা হলো এই বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় না। আমাদের কেবল চীনা সরকারের কথাই মেনে নিতে হয় যে তাদের পরিসংখ্যান সত্য। অধিকন্তু এয়ারড এবং ব্যানিস্টার দ্বারা প্রদত্ত বিবৃতিগুলো ইঙ্গিত দেয় যে তারা বিশ্বাস করে মৃত্যুর হারের পরিসংখ্যান অনুমানভিত্তিক ছিল এবং রিপোর্টকৃত মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যার উপর ভিত্তি করে নয়।
এয়ারড বলেছেন-
"সংকটের বছরের [গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড] সরকারি অত্যাবশ্যক হার [জন্ম এবং মৃত্যুর হার] অবশ্যই মূল্যায়ন করা উচিত, তবে তাদের ভিত্তি জানা নেই।"
ব্যানিস্টার লিখেছেন যে চীন ১৯৫৪ সালে গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধন শুরু করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এটি অনেক অসম্পূর্ণ ছিল।
তিনি লেখেন-
“যদি ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত আনুমানিক মৃত্যুর হারের যেকোন একটি ভিত্তি হিসাবে মৃত্যু নিবন্ধন ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়, তবে হারগুলো শুধুমাত্র সেইসব এলাকা থেকে উদ্ভূত হত যেখানে সিস্টেমটি স্থাপন করা হয়েছিল, যেগুলো আরও উন্নত বা আরো শহুরে অবস্থানে থাকার কথা।"
ব্যানিস্টার বলেন দেন যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় বা পরে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। তিনি লিখেন যে ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে এবং সবচেয়ে কাছাকাছি বছরগুলোতে স্থায়ী জনসংখ্যা নিবন্ধন ও রিপোর্টিং ব্যবস্থা এতটাই অসম্পূর্ণ এবং অসম ছিল যে জাতীয় বা প্রাদেশিক পরিসংখ্যান কর্মীদের সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক অংশ অনুমান করতে হয়েছিল। বিশেষ করে ১৯৫০ এর দশকে স্থায়ী জনসংখ্যা নিবন্ধন এবং রিপোর্টিং ব্যবস্থা কেবলমাত্র শুরু করা শুরু হয়েছিল এবং প্রথমে এটি সমগ্র জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করেনি। আদমশুমারির মোট সংখ্যা ব্যতীত ১৯৫০ এর দশকের সমস্ত জাতীয় জনসংখ্যার মোট সংখ্যা সম্ভবত অসম্পূর্ণ স্থানীয় প্রতিবেদনের অনুমানের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
তিনি আরও লিখেছেন যে-
“১৯৭৩-৭৫ সালের আগের সমস্ত বছরগুলোতে অপরিণত মৃত্যুর হার, শিশুমৃত্যুর হার, জন্মের সময় জীবিত প্রাণের প্রত্যাশা এবং মৃত্যুর কারণগুলোর উপর পিআরসি এর তথ্য ছিল অস্তিত্বহীন, অকেজো কিংবা সর্বোপরি প্রকৃত মৃত্যুর হারকে অবমূল্যায়ন করা।”
পাঠক এয়ারড, কোয়েল এবং ব্যানিস্টারের কাজ অনুসন্ধান করে কিছু ইঙ্গিতের জন্য যে কেন তারা এত আত্মবিশ্বাসের সাথে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সরকারী মৃত্যুর হারের পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে কয়েক মিলিয়ন মৃত্যুর পরিসংখ্যান জাহির করে। অথচ এই লেখকরা জানেন না যে এই পরিসংখ্যানগুলো কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং বিশেষত ব্যানিস্টারের ক্ষেত্রে তারা সেগুলোর উপর খুব কমই বিশ্বাস করেছেন। কিছু জনসংখ্যাবিদ "বিশাল মৃত্যুর সংখ্যা" অনুমানের প্রমাণ প্রদানের জন্য শিশু মৃত্যুর হার গণনা করার চেষ্টা করেছেন। যদিও তারা যে প্রমাণগুলো দেখায় তা মৃত্যুর হারের প্রমাণ দেয়ার পরিবর্তে তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নোংরামি সামনে নিয়ে আসে। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুর সংখ্যার একটি গণনা ১৯৮৪ সালের "Famine in China" নিবন্ধে দেখানো হয়।
https://drive.google.com/file/d/16JJQXtUcBxJJvnORu_sSZz3oFjg38eXx/view?usp=sharing
এই নিবন্ধটি এয়ারড, কোয়েল এবং ব্যানিস্টারের আগের কাজ পর্যালোচনা করেছে। এটি এই লেখকদের বিতর্ককে স্বীকার করেছে যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় সামগ্রিকভাবে বিশাল পরিমাণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তা সত্তেও লেখকগণ এই সময়ের মধ্যে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যুর জন্য পৃথক পরিসংখ্যান গণনা করার চেষ্টা করেন। এই পরবর্তী নিবন্ধটি যে প্রমাণগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছে তা প্রায়শই ঐ সময়ের ব্যাপারে লেখাগুলো দ্বারা উদ্ধৃত করা হয়। "Famine in China" এর লেখকরা ১৯৮২ সালের আগের জন্মদানের সক্ষমতাকে ব্যবহার করে শিশু মৃত্যুর হিসাব করেছেন। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের প্রতিটি বছরে জন্মের সংখ্যা গণনা করতে তারা এই সমীক্ষাটি ব্যবহার করে। একবার যদি গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের প্রতিটি বছরের জন্মের সংখ্যা বের করতে পারা যায়, তাহলে ১৯৫৮-১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে কতজন ১৯৬৪ সালের আদমশুমারিতে গণনা করার জন্য বেঁচে ছিল তা বের করা সম্ভব। কোন দুর্ভিক্ষের অভিযোগ নেই এমন বছরগুলোতে জন্ম নেয়া শিশুদের বেঁচে থাকার হারের সাথে এটি তুলনা করা যেতে পারে। প্রতিটি দুর্ভিক্ষ বছরে আদমশুমারির আগে কত শিশু মারা যায় তা গণনা করতে তারা মডেল লাইফ টেবিল ব্যবহার করে। তারপর তারা এই পরিসংখ্যানটিকে দুর্ভিক্ষের প্রতিটি বছরে দশ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুর সংখ্যায় রূপান্তর করে। জীবন সারণী এবং নির্দিষ্ট সময়কালে মৃত্যুর মাত্রা ব্যবহার করে এই চূড়ান্ত পরিসংখ্যানটি পাওয়া যায়। এই নিবন্ধের লেখকরা যুক্তি দেন যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছিল ১৯৫৮-৫৯ সালে। তারা গণনা করে যে এই সময়ের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সীদের ৪২,৬৮,০০০ অতিরিক্ত মৃত্যু ঘটেছে যা এই বয়সের জন্য মৃত্যুর হারের দ্বিগুণ সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে। একই সময়ে ১০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য শুধুমাত্র ২,১৬,০০০ এর অতিরিক্ত মৃত্যুর পরিসংখ্যান ছিল। ব্যাখ্যাটি হচ্ছে কার্যকর রেশনের অভাবে এই সময়ের মধ্যে শিশুরা অনাহারে পড়েছিল। দুর্ভিক্ষে ঐতিহ্যগতভাবে খুব অল্পবয়সী এবং বৃদ্ধ উভয়েই ভুগলেও ঐ বছরে শুধু তরুণরাই ভোগে। তারপর ১৯৬০-১৯৬১ সালে ১০ বছরের কম বয়সীদের জন্য অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৫,৫৩,০০০ এ কমে যায়, যেখানে ১০ বছরের এর বেশি বয়সীদের মৃত্যুর সংখ্যা ৯ মিলিয়ন পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এমনকি আরও অদ্ভুতভাবে ১৯৬১-৬২ সালের জন্য ৪৪,২৪,০০০ অতিরিক্ত শিশু মৃত্যুর হিসাব করা হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ১০ বছরের বেশি বয়সীদের কোন অতিরিক্ত মৃত্যু গণনা করা হয়নি।
এখানে স্পষ্টতই একটি স্ববিরোধিতা আছে। চীনাদের দেয়া মৃত্যুর হার অনুসারে ১৯৬০ ছিল দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে খারাপ বছর। দুর্ভিক্ষের আগে মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১০.৮ থেকে বেড়ে ১৯৬০ সালে প্রতি হাজারে ২৫.৪ হয় যা দুর্ভিক্ষের মৃত্যুর সর্বোচ্চ বছর ছিল। যদি এটি সত্য হয়, তাহলে আমরা আশা করবো ১৯৫৯-৬০ এবং ১৯৬০-৬১ শিশু মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অর্থবছর হবে। অথচ লেখকদের মতে এই অর্থবছরে মাত্র ২৪.৬% অতিরিক্ত শিশুমৃত্যু ঘটেছে, দশ বা তার বেশি বয়সীদের ৯৮.৭৫% অতিরিক্ত মৃত্যুর বিপরীতে! ১৯৫৮-৫৯ সালে কেন এত বড় শিশুমৃত্যুর হার ছিল তা বোঝা কঠিন। সবাই একমত যে ১৯৫৮ সাল একটি বাম্পার ফসলের বছর ছিল, যদিও শস্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান অতিরঞ্জিত ছিল। ১৯৪৬ সালের শরৎকালে চীনা ফসলের সিংহভাগ কাটা হয়। তাই ১৯৫৮ সালের শেষের দিকে কেন ব্যাপক মৃত্যু শুরু হয়েছিল কিংবা কেন ১৯৫৯ সালের প্রথম তিন মাসে এতগুলো মৃত্যু ঘটে তা বিশ্বাস করা কঠিন। যেমনটি আমরা দেখেছি, হ্যান ডংপিং যিনি ওয়ারেন উইলসন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক, শানডং এবং হেনানের কৃষকদের প্রশ্ন করেছিলেন যেখানে ১৯৫৯-১৯৬১ সময়কালে সবচেয়ে খারাপ প্রভাব অনুভূত হয়েছিল। তারা বলেছে যে ১৯৫৮ সালের বাম্পার ফলনের পর তারা এতটা ভালো করে কখনও খায়নি।
https://drive.google.com/file/d/1--88tT3TOzFyYLBBPI1OeAjU-citUdwK/view?usp=sharing
সরকারী মৃত্যুর হার ১৯৫৭ সালে প্রতি হাজারে ১০.৮ থেকে ১৯৫৮ সালে ১২ তে বৃদ্ধি পাওয়া দেখায়। কেন শিশুমৃত্যু ১৯৫৮-৫৯ আর্থিক বছরে এত খারাপ ছিল জনসংখ্যাবিদদের দ্বারা উপস্থাপিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী? কথিত দুর্ভিক্ষের বছরে পরিস্থিতির উন্নতি হলো কেন? "Famine in China" এর লেখকদের দ্বারা দাবি করা হয়েছে যে একটি রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল যা কর্মক্ষম এবং তার চেয়ে কম বয়সী সকলকে সহায়তা করেছিল, কিন্তু বৃদ্ধদের মৃত্যু হাতে ছেড়ে দিয়েছিল। অবশ্যই এমন কিছু প্রমাণ রয়েছে যে কর্মক্ষম বয়সের যুবকরা বৃদ্ধদের তুলনায় বেশি রেশন পেয়েছে, কারণ তরুণরা কায়িক শ্রম করছিল৷ তা সত্তেও ১৯৬১-৬২ সালে লেখকরা অভিযোগ করেন যে দুর্ভিক্ষ তখনও ঘটছে, সেসময় ১০ বছরের চেয়ে কম বয়সীদের মৃত্যুর হার ৪৪,২৪,০০০ পর্যন্ত এবং ১০ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের মৃত্যুর হার শূন্যে নেমে আসে। এই সময়ের মধ্যে রেশনিং শিথিল করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে যাতে যুবকরা মারা যায়। এই সময়কালে কেন কোন বৃদ্ধ মানুষ মারা যায়নি তা ব্যাখ্যা করা হয়নি। লেখকরা কি দাবি করছেন যে দুর্ভিক্ষে চীনা পরিবারগুলো তাদের বাচ্চাদের মরতে দিতো, কিন্তু বৃদ্ধদের নয়? লেখকরা তাদের বিশ্লেষণের এই প্রশ্নের বিপক্ষে কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। তারা ১৯৫৩ এবং ১৯৬৪ সালের দু’টি আদমশুমারির মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যা হ্রাস দেখানোর দাবি করে এমন পরিসংখ্যান দিয়ে তাদের মনগড়া তত্ত্বকে প্রমাণের চেষ্টা করে। যুক্তিসঙ্গত সত্যটা হলো একটি দেশে যা সুষ্ঠু উপায়ে উন্নয়নশীল হচ্ছিল সেখানে বৃদ্ধদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পরিবর্তে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। তারা যুক্তি দেয় যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় রেশন প্রত্যাহান করার কারণে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে যা এই সময়ের চীনের পরিসংখ্যানগুলো দেখায় না। কিন্তু তারা যে পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করেছে তা একটি নির্দিষ্ট বয়সের বেশি মানুষের জন্য রেশনের ঘাটতির কারণে ঘটা গণ মৃত্যুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। লেখকরা বলেছেন যে দু’টি আদমশুমারির মধ্যকার সময়ে বয়স বৃদ্ধির হার ৪৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে হ্রাস পায়। কোন ধরনের রেশনিং ব্যবস্থা এমন বৈষম্যের দিকে পরিচালিত করবে? যেটি ৪৫-৬৫ বছর বয়সী মহিলাদের ভরণপোষণ দেয়, কিন্তু একই বয়সের পুরুষদের নয়? এছাড়া ৬৫ বছর বয়সের পরের মহিলাদের জন্য পরিসংখ্যান সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উপস্থাপিত পরিসংখ্যানে ৭৫-৭৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা ০.৫১% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিসংখ্যানটি ৬৫ বছরের কম বয়সীদের বৃদ্ধির হারের সাথে ভালোভাবে খাপ খেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০-২৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ০.৫৭% এবং ৪৫-৪৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা ০.৫৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। মহিলাদের জন্য পরিসংখ্যান রেশনিং সিস্টেমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো প্যাটার্ন দেখায় না যা বৃদ্ধদের প্রতি বৈষম্যমূলক। ত্রূটিপূর্ণ উৎসের পরিসংখ্যানগুলো বরং রেশনিং সম্পর্কে লেখকদের বানানো বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যানগুলোর চেয়ে অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দেয়।
এটা সত্য যে প্রবন্ধের লেখকরা যে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন তার সমর্থনে কিছুটা যুক্তি দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮২ সালের ফার্টিলিটি আদমশুমারি দ্বারা প্রদত্ত জন্মের সংখ্যা এবং ১৯৫৩-১৯৬৪ সালে কথিত জন্মহারের পরিসংখ্যানের মধ্যে একটি যুক্তিসঙ্গত সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া ১৯৬৪ সালের আদমশুমারিতে দুর্ভিক্ষের সময় জন্ম নেয়াদের এবং ১৯৮২ সালের আদমশুমারি পর্যন্ত তাদের বেঁচে থাকার মধ্যে যুক্তিসঙ্গত সম্পর্ক রয়েছে। একদিকে লেখকদের এই প্রমাণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে, অন্যদিকে কথিত দুর্ভিক্ষের বছরগুলোতে শিশুমৃত্যু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যুর মধ্যে বিশাল অমিল রয়েছে। তবে মাও এর মৃত্যুর পর চীনা সরকার কর্তৃক প্রকাশিত জনসংখ্যা সংক্রান্ত পরিসংখ্যানের বৈধতা নিয়ে বিদ্যমান সন্দেহগুলো আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে। এই অনিশ্চয়তার আলোকে জন্মহারের পরিসংখ্যান এবং ফার্টিলিটি সমীক্ষার পরিসংখ্যানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক একেবারেই চূড়ান্ত নয়। চীনা জনসংখ্যার পরিসংখ্যানের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক জনসংখ্যাবিদদের দ্বারা বিবেচিত হয়েছে। ব্যানিস্টার চীনা জনসংখ্যা সংক্রান্ত সমীক্ষার "পারস্পরিক আন্ত:নির্ভরতার" সম্ভাবনার আরেকটি সংযোগের কথা বলেছেন যা একে অপর থেকে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন যে ১৯৮২ সালের আদমশুমারির পরিসংখ্যান এবং ১৯৮২ সালে গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধন থেকে প্রাপ্ত জনসংখ্যার পরিসংখ্যান আলাদাভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল। তা সত্তেও দু’টি পরিসংখ্যানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। ফার্টিলিটি সমীক্ষার পরিসংখ্যান এবং জন্মহারের পরিসংখ্যানের মধ্যে এই ধরনের "পারস্পরিক আন্ত:নির্ভরতার" সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া উচিত নয়। উপরন্তু এটা অবশ্যই বলা উচিত যে “Famine in China” এর লেখকরা গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় জন্ম নেয়া শিশুদের বেঁচে থাকার একটি মাত্র হিসাব উপস্থাপন করেছেন। একই বছর অ্যানসলে কোয়েলের প্রকাশিত নিবন্ধটি “Famine in China” তে দেখানো ১৯৫৮-৫৯ থেকে ১৯৮২ সালের আদমশুমারি পর্যন্ত বেঁচে থাকার হারের পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক কম পরিমাণ দেখায়।
https://www.amazon.com/Rapid-Population-Change-China-1952-1982/dp/0309078571
এটি প্রশ্নবিদ্ধ বছরগুলোতে অনেক কম "অতিরিক্ত" শিশুমৃত্যু নির্দেশ করবে। এছাড়া “Famine in China” এ উপস্থাপিত পরিসংখ্যানের বিপরীতে কোয়েলের পরিসংখ্যান দেখায় যে ১৯৬১-৬২ থেকে ১৯৮২ সালের আদমশুমারির মধ্যে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের বেঁচে থাকার হারে কোন ঘাটতি দেখা যায়নি। মৃত্যুর হারের প্রমাণ সম্বন্ধে সন্দেহের সাথে বেঁচে থাকার প্রমাণ সম্বন্ধে সন্দেহকে তুলনা করলে তা গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসকে ব্যাপকভাবে দুর্বল করে দেয়। সামগ্রিকভাবে, এসব পর্যালোচনা এটাই সামনে নিয়ে আসে যে একটি বিশাল মৃত্যুর সংখ্যার অনুমান কোন বাস্তব যুক্তি ছাড়াই পরম নিশ্চয়তায় সত্যে রূপান্তর করা হয়েছে। "বিশাল মৃত্যুর সংখ্যা" তত্ত্বের জন্য একটি চূড়ান্ত প্রমাণ দেখানো হয় আদমশুমারির তথ্য থেকে। আমরা ১৯৫৯-১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণকারী এবং পরবর্তী আদমশুমারিগুলো পর্যন্ত টিকে থাকা মানুষের সংখ্যার সাথে আশেপাশের বছরগুলোর তুলনা করতে পারি যখন কোনও দুর্ভিক্ষের অভিযোগ নেই। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের পর থেকে নেয়া বিভিন্ন আদমশুমারি থেকে আমরা এই প্রমাণ পেতে পারি। এগুলো প্রকৃতপক্ষে অন্যান্য বছরের তুলনায় দুর্ভিক্ষের বছরগুলোতে জন্মগ্রহণকারীদের পরিমাণে বড় ঘাটতি দেখায়। এমনকি যদি এটি ধরে নেয়া হয় যে এই ধরনের ঘাটতিগুলো ঘটেছে, তা বিপুল সংখ্যক মৃত্যুর ইঙ্গিত দেয় না। দেং জিয়াওপিং সরকারের দ্বারা প্রকাশিত জন্মহারের পরিসংখ্যান গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময় ফার্টিলিটির ব্যাপক হ্রাস দেখায়। দেং জিয়াওপিং ও অন্যান্য পশ্চিমা ক্রিমিনালদের মনগড়া লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর তত্ত্বকে একপাশে সরিয়ে এটা অনুমান করা সম্ভব যে জন্মের হারের ক্ষেত্রে একটি বড় ঘাটতি ছিল। অবশ্যই ফার্টিলিটি এত দ্রুত কমে যাওয়ার কিছু কারণ থাকতে হবে, যদি সত্যিই এটি ঘটে থাকে। স্পষ্টতই ক্ষুধা এতে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। খাবারের প্রাপ্যতা আরও বৃদ্ধি না পাওয়া পর্যন্ত খাওয়ানোর জন্য নতুন মুখ তৈরির বিষয়ে উদ্বেগের কারণে লোকেরা সন্তান ধারণ স্থগিত করতো। স্পষ্টতই মানুষ যদি এই ধরনের উদ্বেগের মধ্যে থাকতো তবে এটি অপুষ্টি বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিতো, যা শিশুমৃত্যুর হার কিছুটা বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করতো। তা সত্তেও এটি কোনভাবেই প্রমাণ করে না যে "বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ" মাও এ র অধীনে হয়েছিল। ১৯৪৪-১৯৪৫ সালের ওলন্দাজ দুর্ভিক্ষের ফলে ফার্টিলিটি ৫০% হ্রাস পায়।
https://en.wikipedia.org/wiki/Dutch_famine_of_1944%E2%80%931945
১৯৭৪-১৯৭৫ সালের বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষও জন্মহার প্রায় ৫০% হ্রাসের দিকে পরিচালিত করেছিল।
এটি গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডে ফার্টিলিটি হ্রাসের জন্য দেং জিয়াওপিং যুগে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের অনুরূপ। যদিও বাংলাদেশ এবং ওলন্দাজ দুর্ভিক্ষ উভয়ই মর্মান্তিক ছিল, কিন্ত তারা এই ব্যাপারে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের রেফারেন্সে যে ধরনের ভয়াবহ মৃত্যুর পরিসংখ্যান তৈরি করেছে সেরূপ উত্থাপন করেনি। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে লক্ষাধিক নয়, হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। তবে আমাদের ধরে নেয়া উচিত নয় যে একটি মাত্র বছরের বয়স বন্টন থেকে পাওয়া প্রমাণগুলো সঠিক। ১৯৫৩ এবং ১৯৬৪ সালের আদমশুমারি থেকে একটি মাত্র বছরের বয়স বন্টন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের সমস্ত প্রচেষ্টার মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা রয়েছে। এই পরিসংখ্যানগুলো শুধুমাত্র 1980 এর দশকের প্রথম দিকে প্রদর্শিত হয়েছিল যখন লক্ষ লক্ষ হত্যার জন্য মাওকে দায়ী করা অন্যান্য সমস্ত পরিসংখ্যান আবির্ভূত হয়েছিল। পরের আদমশুমারিগুলোও (যেমন- ১৯৮২, ১৯৯০ ইত্যাদি) এই ঘাটতি দেখাতে থাকে। ব্যানিস্টার ১৯৫৩, ১৯৬৪ এবং ১৯৮২ সালের তিনটি আদমশুমারির মধ্যে বয়স-লিঙ্গের কাঠামোর মধ্যে সামঞ্জস্যের কথা বলেছেন যেখানে প্রত্যেকটি আদমশুমারির জন্য প্রতিটি বয়সের গ্রূপের বেঁচে থাকার নিদর্শন রয়েছে।
তিনি লিখেছেন-
"এটা আশ্চর্যজনক যে চীনের তিনটি আদমশুমারি প্রায় সমানভাবে সম্পন্ন বলে মনে হচ্ছে। কেউ আশা করতে পারেন যে প্রথম দু’টি গণনা অনেক লোককে বাদ দিয়েছে, কারণ সেগুলো প্রকৃত পরিস্থিতির চেয়ে কম পরিমাণে পরিচালিত হয়েছিল। ১৯৫৩ সালের গণনাটি ছিল চীনের প্রথম আধুনিক আদমশুমারি যা রাষ্ট্র পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই মাত্র ছয় মাসের প্রস্তুতি নিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। ১৯৬৪ সালের আদমশুমারি অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে সম্পন্ন হয়েছিল এবং জনগণের শ্রেণিগত উৎসের বিষয়ে একটি প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা হয়তো কিছু সংখ্যকের গণনা এড়িয়ে যেতে উৎসাহিত করেছিল।”
ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়ার পিং-টি হো লিখেছেন যে ১৯৫৩ সালের আদমশুমারি জনসংখ্যা গণনার ভিত্তিতে ছিল না এবং সঠিক কারিগরি পদ্ধতিতেও পরিচালিত হয়নি।
https://www.amazon.com/Studies-Population-China-1368-1953-Harvard/dp/0674852451
তবুও বয়স ভিত্তিক এই আদমশুমারির কাঠামো পরবর্তী সমস্ত আদমশুমারির সাথে অত্যন্ত ভালোভাবে সম্পর্কযুক্ত। জন এয়ারড ১৯৫৩ সালের আদমশুমারিতে বয়স-লিঙ্গ বণ্টন সম্পর্কে প্রমাণ পেয়েছিলেন ১৯৬ ০ এর দশকে চীনা আনঅফিসিয়াল একাডেমিক উৎস থেকে। তিনি পরিসংখ্যানগুলোকে অবিশ্বস্ত বলে মনে করেছেন, আর উল্লেখ করেছেন যে ৫-২৪ বছর বয়সীদের জন্য সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়ে কম এবং ৭৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য পরিসংখ্যান অনেক বেশি। তিনি একাডেমিক বিতর্কের উদ্দেশ্যে এই পরিসংখ্যানগুলোর পরিবর্তে একটি অনুমানভিত্তিক বয়স-লিঙ্গ কাঠামো প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করেছিলেন।
https://drive.google.com/file/d/1zn3FN7_Df2GXhPzH_EWCD6ITMfHIGZdR/view?usp=sharing
এই ধরনের সন্দেহের পরিপ্রেক্ষিতে এটি অবশ্যই সম্ভব যে ধারাবাহিক কাঠামোর মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ বয়স-লিঙ্গের কাঠামো রেকর্ডগুলোর মধ্যকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ "পারস্পরিক আন্ত:নির্ভরতা" দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত, ঐতিহাসিকভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন কোনো কিছু কখনই "একাডেমিক গবেষণা" বা "অফিসিয়াল পরিসংখ্যান" থেকে নেয়া উচিত নয়। রাজনীতি সর্বদা পরিসংখ্যানের উপস্থাপনাকে প্রভাবিত করে এবং যেকোনো সময়ের ইতিহাস ক্ষমতাবানদের দ্বারাই লেখা হয়। চীনের ক্ষেত্রে মাওয়ের সমাজতান্ত্রিক নীতির প্রশংসকাররা ক্ষমতাবানদের মধ্যে ছিলেন না। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের ব্যাপারে আধুনিক লেখকদের দৃষ্টিভঙ্গি অযৌক্তিকভাবে একতরফা। তারা এর ব্যর্থতা এবং সাফল্যের মধ্যে সম্পর্ক উপলব্ধি করতে অক্ষম। তারা কেবল বুঝে যে ১৯৫৯-১৯৬১ সালে গুরুতর সমস্যা হয়েছিল। তারা বুঝতে পারে না যে এই বছরগুলোতে যে কাজ করা হয়েছিল তা জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতিতে চীনা সমাজতন্ত্রের অব্যাহত সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। তারা এমন প্রমাণগুলোকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয় যা নির্দেশ করে যে গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে বেশিরভাগ মৃত্যু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হয়েছে, নীতিগত ত্রুটির কারণে নয়। এছাড়া গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডে যে মৃত্যুগুলো ঘটেছে তা মাও এর আমলে আরও অনেক মৃত্যু প্রতিরোধে চীনা জনগণের সাফল্যের বিপরীতে ব্যর্থতা হিসেবে দেখানো হয়। আয়ুষ্কালের উন্নতি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে মাও এর শাসনামলে। আমাদের অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে যদি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্কের অবনতির সময় যদি স্বনির্ভরতার নীতি গ্রহণ না করা হতো তবে কী ঘটতো। সোভিয়েতরা সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে চীনের তার কৃষি ও শিল্প বিকাশকে স্থবির হতে দেয়ার সামর্থ ছিল না। হয়তো ভালো পরিকল্পনা, কম অতিরিক্ত আশাবাদ এবং অধিক যত্নের মাধ্যমে কিছু মৃত্যু এড়ানো যেতো। এটি একটি কঠিন প্রশ্ন। অনেক বছর আগে কঠিন পরিস্থিতিতে অন্যরা কী করেছিল তা বিচার করা কঠিন। অবশ্যই এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে তা এড়াতে চাই। আমাদের লক্ষ্য করা উচিত যে মাও এই সময়ের মধ্যে করা ত্রুটির জন্য নিজেকে সমালোচনা করেছেন। কিন্তু এই আত্ম-সমালোচনাকে কোনোভাবেই এই সময়ে মারা যাওয়া মানুষের জন্য মনগড়া হাস্যকর পরিসংখ্যানের সত্যতা প্রমাণের উদ্দেশ্যে বুর্জোয়াদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়া উচিত নয়। ১৯৪৯ এর পর যদি ভারতের আয়ুষ্কালের উন্নতির হার চীনের মতোই বড় হতো, তাহলে লক্ষ লক্ষ মৃত্যু রোধ করা যেতো। এমনকি মাওয়ের সমালোচকরাও এটা স্বীকার করেন। এর অর্থ এই যে নেহেরু এবং তার পরে যারা এসেছেন তাদের বিরুদ্ধে মাও বিরোধী নীতি গ্রহণের জন্য তাদের "হিটলারের চেয়েও খারাপ" বলে অভিযুক্ত করা উচিত যা "লক্ষ লোকের মৃত্যুর কারণ" হয়েছিল। অথবা এটি ভারতের স্বাধীনতা-উত্তর ইতিহাসের মূল্যায়নের একটি শিশুসুলভ এবং বানোয়াট উপায় হবে। বছরের পর বছর ধরে মাওয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তার মতোই বোকামি।
Comments