নয়া খলিফা সমাচার
রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানকে মুসলমানদের নেতা মনে করে বাংলাদেশের অনেক মানুষ। সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর এরদোয়ান ২১ হাজারের বেশি শিক্ষককে বরখাস্ত করেছিল। চাকরিচ্যুত করেছিল প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তাকে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫০০ ডিনকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশ সফর নিষিদ্ধ করেছিল। ৮ হাজার পুলিশ অফিসারকে গ্রেপ্তার ও চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। ৬ হাজার সৈন্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ৪ হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল ৩ হাজার বিচারককে। এরদোয়ান শুধু অভ্যূত্থানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের উপর নির্যাতন চালায় এবং এই নির্যাতন চালানোটা বাংলাদেশের অনেক মানুষ সমর্থন করে! এরদোয়ানের বিরোধী দল এবং গণমাধ্যম নিপীড়ন সারা বিশ্বের আলোচিত বিষয়। তুরস্ক বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর জেল-জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে বহু বছর ধরে। নিরপেক্ষ সম্পাদক-সিনিয়র সাংবাদিকদের নামে একাধিক মামলা আছে, তাদের কমপক্ষে সপ্তাহে একবার আদালতে যেতে হয়। রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের ভয় তো আছেই। ২০০৪ সাল থেকে তুরস্কে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় এরদোয়ান প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়। মৃত্যুদণ্ড মানবাধিকার পরিপন্থি - এই যুক্তি দিয়ে এরদোয়ান বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের তীব্র বিরোধিতা করে। অথচ এরদোয়ান ব্যর্থ অভ্যুত্থানকারী হাজার হাজার মানুষের ফাঁসি দেয়ার জন্যে তুরস্কে মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। আর মৃত্যুদণ্ডবিরোধী এই বাংলাদেশের এরদোয়ানের মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনার নীতি সমর্থন করে! মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। ধর্ষিত হয়েছে ২ লাখ নারী (প্রকৃত হিসাবে দ্বিগুণ)। সেই যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড নাকি মানবাধিকার পরিপন্থি! যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মন্ত্রী থাকাকালে তুরস্ক সফর করেছিল। নিজামীর ফাঁসির পর এরদোয়ান বাংলাদেশ থেকে তুর্কি রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে।
https://www.bbc.com/bengali/news/2016/05/160512_turkey_withdraws_bangladesh_ambassador_after_execution_of_matiur_rahman_nizami
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়-
"তারা জেনে দুঃখিত যে, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং প্রধান অর্থদাতা মীর কাসেম আলীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে বাংলাদেশ।"
এ প্রক্রিয়ায় অতীতের ক্ষত নিবারণ হয় না বলেও মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে!
যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর এরদোয়ান বলেছিল-
"মৃত্যুদণ্ড হওয়ার মতো পার্থিব কোনো পাপ নিজামীর নেই বলে তিনি বিশ্বাস করেন।"
হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের জন্য পাকিস্তানিদের সৃষ্টি করা আল-বদর বাহিনী ছাড়াও নিজামী ছিল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র সংঘের প্রধান। পরে আল-বদর বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে এই আল-বদর বাহিনী, ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে এই বাহিনী। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশের প্রধান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে নিজামী নিজে। পাকিস্তানের সহযোগীদের বদৌলতে সৃষ্টি হয়েছিলো আল-বদর ছাড়াও আল-শামস ও রাজাকার বাহিনী; যাদের প্রত্যেকটিই ছিল সশস্ত্র এবং হত্যা, ধর্ষণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য নিয়োজিত। রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর টিক্কা খান। পাকিস্তান অনুগামী ইসলামী ছাত্র সঙ্ঘ, জামাত-ই-ইসলামি, মুসলিম লিগ, পাকিস্তানি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি কাউন্সিল, নিজাম-ই-ইসলামি রক্তের নদী বইয়ে দেয় বাংলাদেশে। ইসলামি ছাত্র সঙ্ঘ আল-বদর নামে আর বাকিরা আল-শামস নামে চিহ্নিত। উর্দূভাষীদের বলা হতো আল-মুজাহিদ। যুদ্ধের পর এই জামায়াত নেতারা পালিয়ে গিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তারা দেশে ফেরে। বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তাদের হাতে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর দেশের ক্ষমতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের হাতে চলে যায়। জিয়াউর রহমানের ইসলামপ্রীতি সুবিদিত। নিজামী ১৯৯১ সালে প্রথমবার তার নিজের এলাকা পাবনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। ২০০১ সালে একই এলাকা থেকে আবারও নির্বাচিত হয় সে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও জামায়াতের জোট সরকারের আমলে সে কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। একাত্তরের ২৩ এপ্রিল ‘দৈনিক পাকিস্তান’ এ দেয়া বিবৃতিতে সে বলে-
"আল-বদর একটি নাম, একটি বিস্ময়। আল-বদর একটি প্রতিজ্ঞা। যেখানে মুক্তিবাহিনী, সেখানেই আল-বদর। ভারতীয় চরদের কাছে আল-বদর সাক্ষাৎ আজরাইল।"
তুরস্কের হাজার বছরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী (১৯৫০-১৯৬০) আদনান মেন্ডারিসকে তুর্কিরা আদালতের রায়ে ফাঁসি দিয়েছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Adnan_Menderes
নৃশংস 'ইয়ং টার্ক' বাহিনী ১৯১৫-১৯১৮ সালের মধ্যে আর্মেনিয়ার নিরপরাধ ১৫ লক্ষ মানুষকে নির্মমভাবে খুন করেছিল, লক্ষ নারীদের ধর্ষণ করেছিল এই তুর্কিরা।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Young_Turks
তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে (২০১১) তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধ বিচার বন্ধের অনুরোধ করেছিল! প্রেসিডেন্ট আহমেত গুল বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের কাছে অনুরোধ করেছিল যেন গোলাম আযমের ফাঁসি না হয়! মীর কাসেম আলীর ফাঁসির পর তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল এই ফাঁসি ভুল চর্চা এবং সেজন্য তারা দুঃখিত! দিল্লিতে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ড. বুরাক আকচাপার বলেছিল "নিজামীর ফাঁসি এক বিরাট ভুল”! কাদের মোল্লার ফাঁসি ঠেকাতে শেষ চেষ্টার অংশ হিসেবে এরদোয়ান শেষ মুহূর্তেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে টেলিফোন করেছিল।
কাদের মোল্লার ফাঁসির পর দেশটির ইজমির প্রদেশে একটি সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে এরদোগান বলেছিল-
"কাদের মোল্লার ফাঁসি একটি বড় ভুল, যার জন্য ইতিহাস বাংলাদেশকে ক্ষমা করবে না।"
উপ-প্রধানমন্ত্রী বেকির বোজদাগ বলেছিল-
"বাংলাদেশে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও আইন ভুলুণ্ঠিত হয়েছে।"
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তুরস্ক সরকার এক বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়ে বলে-
"আন্তর্জাতিক সব মহলের উদ্বেগ ও পরামর্শ উপেক্ষা করে বাংলাদেশ সরকার এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। আমরা কঠোর ভাষায় এই মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছি। আল্লাহ কাদের মোল্লাকে ক্ষমা করবেন।"
ইজমিরের সমাবেশে এরদোগান বাংলাদেশে যারা এই ফাঁসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে তাদের প্রতি রাজনৈতিক এই লড়াই থামিয়ে না দেয়ার আহ্বান জানায়! ২০১২ সালের ডিসেম্বরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল জামায়াত নেতাদের যুদ্ধপরাধের বিচার তথা ফাঁসি থেকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠায়। এছাড়া তুরস্কের একটি বেসরকারি প্রতিনিধিদল সেসময় বাংলাদেশে সফর করে যুদ্ধপরাধীদের বিচার ট্রাইবুন্যালের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহ দেখায়। বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি না নিয়ে প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে আসে এবং এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়। বিষয়টি নিয়ে তখন ওঠে সমালোচনার ঝড়।
১৯১৯-১৯২১ সাল পর্যন্ত ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করে তুর্কিরা। যার বিচার এখনো হয়নি। ১৮৯৫ সালে তুর্কিরা হত্যা করে তিন লাখ আর্মেনীয়কে। ১৯০৯ সালে এক দিনে নিহত হয় ৩০ হাজার আর্মেনীয়। আর্মেনীয়দের মধ্য থেকে ২৫০ জন বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়েছিলো। ১৯৩৭-৩৮ সালে তুরস্ক সরকার ৭০ হাজার কুর্দিকে হত্যা করেছে। ১৯৯৯ সালে তুরস্ক আন্তর্জাতিক মত উপেক্ষা করে ফাঁসি কার্যকর করে কুর্দি নেতা আবদুল্লাহ ওকালানের।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Abdullah_%C3%96calan
কুর্দিদের দমনে তুরস্কের হামলা এখনো নৈমিত্তিক বিষয়। তুরস্কে এরদোয়ানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি আসলে বাংলাদেশের জামায়াতের আদলে গঠিত একটি দল। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইসরায়েল। সেই ইসরায়েলের সঙ্গে মুসলমানদের নেতা (!) ৩০ পারা কোরান মুখস্থ এরদোয়ান চুক্তি করে। ২০১০ সালে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ত্রাণ পাঠানোকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় তুরস্কের। চুক্তির পর এরদোয়ান বলার চেষ্টা করে এতে নাকি মুসলমানদের বিশাল উপকার হবে! তুরস্ক গাজা উপত্যকায় ত্রাণ পাঠাতে পারবে এবং তা ইসরায়েলি বন্দরের মাধ্যমে। ইসরায়েল তা পরীক্ষা করে পাঠাতে পারে, নাও পারে। গাজায় ২০০ শয্যার একটি হাসপাতাল করে দেবে তুরস্ক। একটি পানি শোধনাগার নির্মাণ করবে। ফিলিস্তিনিদের ওপর থেকে ইসরায়েল নৌ অবরোধ তুলে নেবে- এমন কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হবে না।
অন্যদিকে চুক্তির বিনিময়ে ইজরায়েল পাইপলাইনের মাধ্যমে তুরস্কের ওপর দিয়ে ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি করতে পারবে। এই গ্যাস ক্ষেত্রগুলো ইসরায়েল দখল করে নিয়েছে ফিলিস্তিনিদের থেকে। ফিলিস্তিনিদের থেকে দখল করে নেয়া শত শত কোটি ডলারের সম্পদ রপ্তানি করবে ইউরোপে তুরস্কের ওপর দিয়ে! তুরস্কে সর্বশেষ সফল সেনা অভ্যুত্থান হয়েছিল ১৯৯৭ সালে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/1997_Turkish_military_memorandum
তখন অনেক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ধর্ম-নিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন করা হয়। ২০০২ সালে এরদোয়ানের পার্টি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষা ফিরিয়ে আনার নীতি নেয়ার চেষ্টায় থাকে। দেশের ভেতরে এর তীব্র বিরোধিতা হয়। এ কারণে এরদোয়ান শিক্ষক-শিক্ষা কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের এই সুযোগে তাদের বিরুদ্ধে নজীরবিহীন ব্যবস্থা নেয়ার নীতি নেয় এরদোয়ান। আইএস তৈরি করেছে আমেরিকা-ইসরায়েল যৌথভাবে। মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এরদোয়ানকে। সৌদি আরব অর্থ দিয়েছে, অস্ত্র ও ট্রেনিং দিয়েছে আমেরিকা-ইসরায়েল। অর্থ-অস্ত্র সবই দেয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তুরস্ককে। আমেরিকা-ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আইএসের পৃষ্ঠপোষকতা করছে তুরস্ক। সৌদি আরবসহ আরও কিছু মুসলিম দেশের থেকে পাওয়া অর্থ আইএসকে দিচ্ছে, তুরস্ক নিজেও লাভবান হচ্ছে। আইএসের থেকে তেল কিনছে কম দামে। আইএসে যোগ দেয়ার প্রধান রুট তুরস্ক। সিরিয়া-ইরাক-লিবিয়ায় আগ্রাসন চালানোর ক্ষেত্রেও আমেরিকার প্রধান মিত্র তুরস্ক।
ইরানকে কোণঠাসা করে রাখার জন্যেও আমেরিকা-ইসরায়েল ব্যবহার করছে তুরস্ককে। এরদোয়ানের এই নীতির বিরোধিতা করছে তুরস্কের অনেক মানুষ। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর ভেতরে আইএসবিরোধী মনোভাব ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা, পুলিশ অফিসার- সর্বোপরি বিচারকরা এরদোয়ানের আইএস নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছিলেন। আমেরিকা-ইসরায়েল সুপরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীর ছোট্ট একটি অংশকে দিয়ে অভ্যুত্থান নাটক করিয়েছে। এরদোয়ান নিজে এই ব্যর্থ অভ্যূত্থানকে বলেছে 'আল্লার দান'। এর মধ্য দিয়ে আমেরিকা-ইসরায়েল-আইএসবিরোধী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পথ তৈরি করা হয়েছে। এরদোয়ান এখন ঢালাও ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরদোয়ানের একেপি ২০০২ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর ক্ষমতায়। অভ্যুত্থানকালে রাস্তায় যে তার পক্ষে এত মানুষ নেমে এলো, তার কয়েকটি কারণ আছে -
#মানুষ রাস্তায় নামানোর পরিকল্পনা আমেরিকা-ইসরায়েলের আগে থেকেই ছিল।
#এরদোয়ানের সমর্থকরা রাস্তায় নেমেছিল।
#এরদোয়ান সমর্থক নন, কিন্তু সেনা অভ্যুত্থান বা সেনা শাসনবিরোধী মানুষ রাস্তায় নেমেছিল।
এসব কারণে মুসলিমদের বিশ্বাস করানো গেছে যে, এরদোয়ান খুব জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক! এখন ইসরায়েল তার কর্মপরিকল্পনা আরও সুচতুরভাবে সম্পন্ন করতে পারবে। অসচেতন অধিকাংশ মুসলমানরা তা উপলব্ধি করতে অক্ষম।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এন্ড্রোমিডা নামক একটি জাহাজ গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গ্রীক কোস্টগার্ডরা সন্দেহবশত এটি আটক করে।
https://www.reuters.com/article/us-greece-libya-ship/greece-seizes-libya-bound-ship-carrying-explosive-materials-idUSKBN1EZ27B
তল্লাশীতে জাহাজটিতে ২৯টি কন্টেইনার বোঝাই বিভিন্ন বিস্ফোরক নির্মাণ সামগ্রী এবং ১১টি খালি এলপিজি গ্যাস ট্যাংক পাওয়া যায়।
http://www.xinhuanet.com/english/2018-01/11/c_136886131.htm
জাহাজটি তাঞ্জানিয়ার পতাকা বহন করলেও এতে থাকা কাগজপত্র থেকে দেখা যায় কন্টেইনারগুলো বোঝাই করা হয়েছিল তুরস্কের মার্সিন বন্দর থেকে, আর এলপিজি ট্যাংকগুলো বোঝাই করা হয়েছিল তুরস্কের ইস্কেনদেরুম বন্দর থেকে।
https://m.dw.com/en/greece-seizes-freighter-carrying-explosives-to-libya/a-42103825
কাগজপত্র অনুযায়ী কন্টেইনারগুলো খালাস করার কথা ছিল জিবুতীতে, আর এলপিজি ট্যাংকগুলো খালাস করার কথা ছিল ওমানে। কিন্তু কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, জিবুতী বা ওমানের কোনো সামুদ্রিক মানচিত্র জাহাজে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহাজটির ক্যাপ্টেন স্বীকার করে যে, তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল মালগুলো লিবিয়ার মিসরাতা বন্দরে পৌঁছে দেয়ার জন্য।
https://www.libyaherald.com/2018/01/12/greek-authorities-confirm-ship-from-turkey-transporting-potential-explosive-making-material-to-misrata/
২০১১ সাল থেকে জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে লিবিয়াতে অস্ত্র সরবরাহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।
https://www.reuters.com/article/us-libya-security-turkey/libyan-pm-says-turkey-supplying-weapons-to-rival-tripoli-group-idUSKBN0LV1S120150227
তা সত্ত্বেও লিবিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের দুই পক্ষ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে অস্ত্র সাহায্য পেয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মিকে অস্ত্র দেয়ার ব্যাপারে মিসর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।অন্যদিকে ইসলামপন্থী মিলিশিয়া গ্রুপগুলোকে অস্ত্র দেয়ার ব্যাপারে তুরস্ক এবং কাতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।
https://www.libyaherald.com/2017/06/22/lnas-mismari-accuses-sudan-qatar-and-iran-of-backing-terrorism-in-libya/
এর আগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তুরস্ক থেকে ৫,০০০ শটগান এবং পাঁচ লাখ বুলেট নিয়ে লিবিয়ার যাওয়ার সময় গ্রীক কর্তৃপক্ষের হাতে একটি জাহাজ আটক হয়েছিল।
https://www.independent.co.uk/news/world/middle-east/video-huge-shipment-arms-ammo-libyan-islamists-seized-10488719.html
Comments