তথাকথিত সমাজতন্ত্রের আড়ালে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ (পর্ব-তিন)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উপনিবেশগুলোকে ছেড়ে দিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয়। উপনিবেশ নিজেদের আয়ত্তে থাকার সময় সম্পত্তি পাচারের মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক ভিত্তি তারা পেয়ে গিয়েছিল, তাতে বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় তারা। অন্যদিকে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়া দেশগুলো কাগজে-কলমে স্বাধীনতা পেলেও অর্থনৈতিক অবকাঠামো বলতে কিছু পায়নি। অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপের উপর নির্ভর করতে হয় তাদের।
https://www.aljazeera.com/amp/opinions/2019/7/1/a-new-cold-war-in-africa/
নিওলিবারেলিজম অর্থনীতি গ্রহণ করার পর প্রতিটি দেশের বাজার উন্মুক্ত করে দিতে হয়। তাদের আর্থিক পশ্চাৎপদতারকে কাজে লাগিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠান এসে বাজার দখল করে নেয়। দেশগুলোর রাজনীতিতে বাইরের দেশের হস্তক্ষেপ বাড়তে থাকে। বিশৃঙ্খলার সুযোগে বিদেশি শক্তি নিজেদের স্বার্থের প্রতি অনুগত থাকা পুতুল নেতাকে প্রোপাগাণ্ডা কিংবা সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে গদিতে বসিয়ে দেয়। পর্দার আড়ালে চলতে থাকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণ। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দেশের দেয়া অনুদানের উপর আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনীতিকে অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়।
https://www.dailysabah.com/opinion/op-ed/us-china-rivalry-in-africa-and-the-djibouti-issue/amp
আফ্রিকা মহাদেশ যেহেতু আগে পুঁজিবাদী দেশগুলোর উপনিবেশ হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে অবস্থান করতো, তাই স্নায়ুযুদ্ধের সময় তাদের পক্ষে আমেরিকার বলয়ের বাইরে যাওয়ার সাহস হয়নি। আমেরিকা তখন নিজেদের বলয়ে থাকা দেশগুলোকে বড় অংকের সাহায্য দিয়ে আসছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের পর আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে আফ্রিকার ব্যবসা-বাণিজ্য ফুলে-ফেঁপে উঠে। ১৯৯৯ সালে চীন সরকার হাতে নেয় 'গো আউট নীতি'। এই নীতির মাধ্যমে চীনের বিনিয়োগকারীরা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সরিয়ে চীন হয়ে ওঠে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। ২০১২ সালে যেখানে আমেরিকার সাথে আফ্রিকার ব্যবসা হতো ১২০ বিলিয়ন ডলারের, সেখানে বর্তমানে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারে।
https://www.thesun.co.uk/news/9670087/us-china-cold-war-africa-battle/amp/
অন্যদিকে গত দুই যুগে চীনের সাথে আফ্রিকার ব্যবসার পরিমাণ বেড়েছে ৪০ গুণ! চীন আফ্রিকার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেও দেদারসে অর্থ ঢেলে চলেছে। অন্যান্য দেশের চেয়ে চীনের কোম্পানিগুলো কম দামে সেবা দিতে পারে, এজন্য চীনের কোম্পানিগুলোর গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। সব দিক থেকে বিশ্বশক্তি হতে গেলে নিজেদের পণ্যের বাজার ঠিক রাখাটা জরুরি।
https://www.lowyinstitute.org/the-interpreter/africa-us-plays-catch-china
আর সামরিক খাতে ব্যয় করতে হলে অর্থনৈতিকভাবে আগে শক্ত অবস্থানে থাকতে হয়। এজন্য আফ্রিকাকে হাতে রাখাটা চীনের জন্য এতো জরুরি। আফ্রিকায় আগে থেকেই আমেরিকার সেনা ঘাঁটি ছিল। চীন জিবুতিতে যে সেনা ঘাঁটি তৈরি করেছে, তা আমেরিকার বিব্রত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। জিবুতিতে আমেরিকার স্থায়ী সৈন্যঘাঁটি রয়েছে। চীনা সেনা ঘাঁটি তৈরি করার জন্য এরপর নামিবিয়াকে বেছে নিয়েছেস্নায়ুযুদ্ধের সময়। চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়েছে।

Comments