দালালরা যেভাবে নিজেদের ভাগ্য নিজেরা বদলায় (পর্ব-এক)

 


২০০৪ সালে ইউক্রেনে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইয়ানুকোভিচ বিজয়ী হলেও ইয়ুশ্চেঙ্কোকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করলে ফলে ইয়ুশ্চেঙ্কো ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। ইয়ুশ্চেঙ্কো পশ্চিমাপন্থী ও রুশবিরোধী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করলেও রাজনৈতিক মিত্র ইউলিয়া তিমোশেঙ্কোর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।
২০১০ সালের জানুয়ারিতে ইউক্রেনের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রথম দফায় ইয়ানুকোভিচ ৩৫.৩২% ও তিমোশেঙ্কো ২৫.০৫% ভোট লাভ করেন এবং ইয়ুশ্চেঙ্কো মাত্র ৫.৪৫% ভোট লাভ করেন।

https://www.google.com/amp/s/amp.theguardian.com/commentisfree/2014/apr/30/russia-ukraine-war-kiev-conflict

কোনো প্রার্থী ৫০% বা তার বেশি ভোট না পাওয়ায় ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইয়ানুকোভিচ ৪৮.৯৫% এবং তিমোশেঙ্কো ৪৫.৪৭% ভোট লাভ করেন।

https://www.kyivpost.com/article/content/ukraine-politics/euromaidan-rallies-in-ukraine-monday-dec16-live-updates-333739.html

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইয়ানুকোভিচ ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। ইয়ানুকোভিচ সরকারের পররাষ্ট্রনীতি পুরোপুরি রুশঘেঁষা ছিল না।

https://www.google.com/amp/s/www.bbc.com/news/world-europe-25162563.amp

এসময় ইউক্রেন ঘোষণা করে তারা ন্যাটো বা অন্য কোনো সামরিক জোটে যোগদান করবে না। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ইয়ানুকোভিচের সরকার ইউক্রেনের প্রদেশগুলোকে নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা বেছে নেয়ার সুযোগ প্রদান করে এবং পূর্ব ও পশ্চিম ইউক্রেনের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের পর প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোর অধিকাংশ 'স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের কমনওয়েলথ' গঠন করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Commonwealth_of_Independent_States

১৯৯৯ সালে রাশিয়া ও বেলারুশ 'ইউনিয়ন রাষ্ট্র' নামক একটি একক রাষ্ট্র গঠনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেও এখন পর্যন্ত এটি একটি শিথিল কনফেডারেশন রূপে বিরাজ করছে

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Union_State

https://www.unian.net/politics/863492-v-razgone-maydana-30-noyabrya-uchastvovali-290-boytsov-berkuta-pshonka.html

২০০০ সালে রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তান 'ইউরেশীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায়' নামক একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংগঠন সৃষ্টি করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Eurasian_Economic_Community

২০১০ সালে সংগঠনটির ৩টি সদস্যের (রাশিয়া, বেলারুশ ও কাজাখস্তান) সমন্বয়ে 'ইউরেশীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ভিত্তিক কাস্টমস ইউনিয়ন' নামক একটি কাস্টমস ইউনিয়ন গঠিত হয়।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Eurasian_Customs_Union

২০১২ সালে 'ইউরেশীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায়' এর অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলো একটি 'একক অর্থনৈতিক অঞ্চল' গঠন করে। রাশিয়া এই অর্থনৈতিক সংগঠনকে ক্রমান্বয়ে একটি 'ইউরেশীয় ইউনিয়নে' রূপান্তরিত করতে এবং প্রাক্তন সোভিয়েত ভূখণ্ডের সম্পূর্ণ অংশ বা বৃহদাংশকে এই ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একে সোভিয়েত ইউনিয়ন পুন:প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের স্বার্থের প্রতিকূল হিসেবে বিবেচনা করে।

https://ria.ru/20131201/980964224.html

যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের পর বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের যে আধিপত্য গড়ে উঠেছে, রাশিয়ার শক্তি বৃদ্ধি সেই আধিপত্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং এজন্য তারা রাশিয়াকে কোনো জোট গঠনের সুযোগ দিতে নারাজ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিতে, রাশিয়া ও মধ্য এশিয়া ব্যতীত প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের অবশিষ্টাংশে অবস্থিত রাষ্ট্রগুলো ইউরোপের অংশ এবং এজন্য তারা সেই রাষ্ট্রগুলোকে (যেগুলোর মধ্যে ইউক্রেন ছিল) ক্রমান্বয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করতে আগ্রহী।

https://www.newsru.com/world/22nov2013/ukr.html

২০১৩ সালের মে মাসে ইউক্রেন 'ইউরেশীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায়' এর কাস্টমস ইউনিয়নের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। আর সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনীয় মন্ত্রিপরিষদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে 'সম্পৃক্ততা চুক্তি'র খসড়া অনুমোদন করে। এসময় ইউক্রেনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল এবং রুশ গ্যাস কোম্পানি 'গাজপ্রম' এর কাছে ইউক্রেনের অন্তত ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া ছিল। ইউক্রেন আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে চাইলেও আইএমএফ ঋণ প্রদানের জন্য ইউক্রেনের ওপর কঠিন শর্তাবলি চাপিয়ে দিয়েছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে আশ্বাস দিয়েছিল যে, তারা ইউক্রেনকে সহজ শর্তে আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে! কিন্তু তারা এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। ২০১৩ সালের নভেম্বরের শেষদিকে ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে 'সম্পৃক্ততা চুক্তি'তে স্বাক্ষর করার কথা ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইউক্রেন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলার জন্য ইউক্রেনকে ৬০০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হবে। এর বিপরীতে রাশিয়া ইউক্রেনকে প্রস্তাব দেয় ইউক্রেন যদি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর না করে, সেক্ষেত্রে রাশিয়া ইউক্রেনকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা হিসেবে প্রদান করবে, ইউক্রেনের কাছে স্বল্প মূল্যে গ্যাস রপ্তানি করবে এবং ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি বৃহৎ অবকাঠামোগত প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/European_Union%E2%80%93Ukraine_Association_Agreement

২১ নভেম্বর ইউক্রেনীয় মন্ত্রিপরিষদ ঘোষণা দেয় তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে 'সম্পৃক্ততা চুক্তি'তে স্বাক্ষর করবে না। ইউক্রেনীয় সরকারের উক্ত সিদ্ধান্ত প্রচারিত হওয়ার পর ইউক্রেনীয় মধ্য ডানপন্থী দল 'উক্রায়নস্কি দেমোক্রাতিচনি আলইয়ান্স জা রেফর্মি'র নেতা ভিতালি ক্লিচকো (যার বাবা কট্টর স্তালিন বিরোধী নিকিতা ক্রুশ্চেভ এর আমলের বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ছিল এবং এই লোক মাফিয়া বস ভিক্তর রুবালকো'র হয়ে কাজ করতো) জানান তারা তদানীন্তন ইউক্রেনীয় প্রধানমন্ত্রী মিকোলা আজারভের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের আইন ভঙ্গের দায়ে মামলা দায়ের করবেন এবং তিনি ইউক্রেনীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য ২৪ নভেম্বর জনসাধারণকে বিক্ষোভে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/European_Union_Association_Agreement

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ukrainian_Democratic_Alliance_for_Reform

কিয়েভের জেলা প্রশাসনিক আদালত ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কিয়েভ শহরে বিক্ষোভের সময় তাঁবু বা অন্যান্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ নিষিদ্ধ করে। সেদিন রাত ১০টায় বিক্ষোভকারীরা কিয়েভের 'স্বাধীনতা সরণি'তে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। ক্লিচকো, উগ্র জাতীয়তাবাদী দল 'ভসেউক্রায়নস্কে ওবেদনান্নায়া (সভোবোদা)'র নেতা ওলেহ তিয়াহনিবোক এবং মধ্য ডানপন্থী দল 'ভসেউক্রায়নস্কে ওবেদনান্নায়া (বাৎকিভশ্চিনা)'র নেতা আরসেনি ইয়াৎসেনিউক (যার বিরুদ্ধে ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে এবং ২০০০ সালে চেচনিয়াতে রুশ কর্মকর্তাদের উপর হামলার অভিযোগ আছে) এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Svoboda_(political_party)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Batkivshchyna

বিক্ষোভকারীরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কিয়েভের 'মাইদান নিজালেঝনোস্তি'তে (স্বাধীনতা সরণি) তাঁবু স্থাপন করতে শুরু করে। ইউক্রেনীয় ভাষায় 'মাইদান' শব্দের অর্থ 'সরণি' বা 'সড়ক'। বিক্ষোভ শুরুর পর ইউক্রেনীয় সরকারবিরোধীরা এই আন্দোলন সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'এভ্রোমাইদান' বা 'ইউরোমাইদান' নামে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার শুরু করে। ইউক্রেনীয় ভাষায় শব্দটির অর্থ 'ইউরোপীয় সরণি'। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এক অংশের বিশ্বাস ছিল, ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে 'সম্পৃক্ততা চুক্তি'তে স্বাক্ষর করলে ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের পথ ত্বরান্বিত হবে এবং তারা মুক্তভাবে কাজের খোঁজে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের সুযোগ পাবে। বিক্ষোভকারীদের অপর দলটি ছিল প্রধানত উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং এদের সিংহভাগ ছিল ঐতিহাসিকভাবে রুশবিরোধী পশ্চিম ইউক্রেন থেকে আগত। ২৪ নভেম্বর কিয়েভে উক্রায়নস্কি দেমোক্রাতিচনি আলইয়ান্স জা রেফর্মি, সভোবোদা ও বাৎকিভশ্চিনা 'ইউরোপীয় ইউক্রেনের জন্য' শিরোনামে সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের পর বিক্ষোভকারীদের একাংশ (প্রধানত 'সভোবোদা' দলের সমর্থকরা) ইউক্রেনীয় মন্ত্রিপরিষদের কার্যালয় দখল করে নেয়ার চেষ্টা করে। ২৯ নভেম্বর ইউক্রেন কর্তৃক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে 'সম্পৃক্ততা চুক্তি' স্বাক্ষরের সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। সেদিন কিয়েভে সন্ধ্যায় বিরোধী দলগুলো তাদের সমাবেশের আয়োজন করে। ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর মাইদান নিজালেঝনোস্তিতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং ইউক্রেনীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বাহিনী 'বেরকুৎ' মাইদান নিজালেঝনোস্তি থেকে বিক্ষোভকারীদের উচ্ছেদ করতে শুরু করে। বেরকুৎ সদস্যদের আগমনের পর সিংহভাগ বিক্ষোভকারী মাইদান ছেড়ে চলে গেলেও উগ্র জাতীয়তাবাদী বিক্ষোভকারীরা বেরকুৎ সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই ঘটনাকে ব্যবহার করে সরকারবিরোধীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী প্রচারণা চালাতে শুরু করে। তারা নিরাপত্তারক্ষীদের দ্বারা বিক্ষোভকারীদের উচ্ছেদ করার ঘটনাকে একটি 'রক্তাক্ত' পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং নিরাপত্তারক্ষীরা ইউক্রেনীয় জনসাধারণের 'সন্তানদের মেরেছে' এই মর্মে প্রচারণা চালাতে থাকে। ইউক্রেনীয় প্রচারমাধ্যমের সিংহভাগ ছিল নব্য অভিজাত শ্রেণির (oligarch) নিয়ন্ত্রণাধীন এবং তারা নিরাপত্তারক্ষীদের দ্বারা বিক্ষোভকারীদের বলপূর্বক ছত্রভঙ্গ করার দৃশ্য বারবার প্রচার করতে থাকে। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী বিক্ষোভকারীরা যে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালিয়ে সংঘর্ষের সূচনা করেছিল, সেই চিত্রটি প্রচারমাধ্যম থেকে সযত্নে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। বিরোধী দলগুলো বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য হাজার হাজার মানুষকে পশ্চিম ইউক্রেন থেকে কিয়েভে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে। একই দিনে একদল উগ্র জাতীয়তাবাদী কিয়েভে ভ্লাদিমির লেনিনের স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করলেও বেরকুৎ সদস্যরা তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী উগ্র জাতীয়তাবাদী দলগুলোর সশস্ত্র সদস্যরা কিয়েভের বিভিন্ন সরকারি ভবন দখল করে এবং ৩০০ গাড়ির একটি বহর নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের ওপর আক্রমণ করার প্রচেষ্টা চালায়। ২ ডিসেম্বর বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র 'আত্মরক্ষা ইউনিট' গঠন করতে শুরু করে এবং কিয়েভ নগর কর্তৃপক্ষের দখলকৃত সরকারি ভবনগুলো ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ৩ ডিসেম্বর ইউক্রেনীয় আইনসভার অধিবেশনে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী দলগুলো ইউক্রেনীয় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনয়ন করলেও সিংহভাগ আইনসভা সদস্য তাদের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ৪ ডিসেম্বর বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিপরিষদের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় এবং আইনসভা অবরোধ করে। বিরোধী দলগুলো ঘোষণা করে ইউক্রেনীয় সরকারের পদত্যাগের আগপর্যন্ত তারা আইনসভা অবরুদ্ধ করে রাখবে। ৫ ডিসেম্বর বিক্ষোভকারীরা কিয়েভে বেরকুৎ ও ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ঘাঁটি অবরোধ করে এবং বিরোধী দলগুলো বেরকুৎ বাহিনীকে নিষিদ্ধ করে বাহিনীর সদস্যদের সমস্ত পদমর্যাদা কেড়ে নেয়ার দাবি জানায়। ৬ ডিসেম্বর ক্লিচকো, তিয়াহনিবোক ও ইয়াৎসেনিউক ইউক্রেনের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান এবং ক্লিচকো ঘোষণা করেন ইউক্রেনীয় মন্ত্রিপরিষদের পদত্যাগের আগপর্যন্ত তারা কোনো রকমের সংলাপে বসতে আগ্রহী নন। ৭ ডিসেম্বর তারা দাবি করেন ইউক্রেনীয় সরকারকে পদত্যাগ করে নতুন একটি সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, যারা অবিলম্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে 'সম্পৃক্ততা চুক্তি'তে স্বাক্ষর করবে এবং আইএমএফের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা শুরু করবে! একই দিনে বিক্ষোভকারীরা ইউক্রেনের ৫টি টেলিভিশন চ্যানেলের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে। ৮ ডিসেম্বর 'সভোবোদা' দলের সদস্যরা লেনিন স্মৃতিসৌধ গুঁড়িয়ে দেয় এবং কিয়েভের সরকারি কোয়ার্টার দখল করে নেয়। ৯ ডিসেম্বর বেরকুৎ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের কিয়েভের সরকারি কোয়ার্টার থেকে বিতাড়িত করে। ১৩ ডিসেম্বর বিক্ষোভকারীরা ইউক্রেনীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আপিল আদালত এবং ইউক্রেনীয় জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের সচিব আন্দ্রি ক্লুয়েভের বাসভবন ভাঙচুর করে। ২০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিয়েভে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে এবং বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে ভাঙচুর চালায়। 

 'আত্মরক্ষা ইউনিট' এর উগ্রপন্থীরা

অন্যদিকে ডিসেম্বর জুড়ে পূর্ব ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে ইউরোমাইদানের বিপক্ষে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিম ইউক্রেনে অনেকে ইউরোমাইদানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করলেও সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন ইউরোমাইদানের বিপক্ষে বিক্ষোভ করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে! ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি কিয়েভে উগ্র জাতীয়তাবাদী বিক্ষোভকারীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা ও অক্ষশক্তির সহযোগী স্তেপান বান্দেরার জন্মদিন উপলক্ষে মিছিলের আয়োজন করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Stepan_Bandera

১৫ জানুয়ারি নাগাদ আবার বিরোধী দলগুলো পশ্চিম ইউক্রেন থেকে কিয়েভে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে এবং তাদের গঠিত সশস্ত্র 'আত্মরক্ষা ইউনিট'গুলো দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। কিয়েভে উক্ত আত্মরক্ষা ইউনিটগুলোর সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। ১৯ জানুয়ারি কিয়েভে উগ্র জাতীয়তাবাদী বিক্ষোভকারীরা পুলিস ও অন্যান্য নিরাপত্তারক্ষীদের আক্রমণ করে। তারা বেরকুৎ এর ৪টি বাস, ২টি ট্রাক ও দিনামো স্টেডিয়ামের টিকেট কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে এবং নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর পাথর ও মলোটভ ককটেল নিক্ষেপ করে। ২০ জানুয়ারি ইউরোমাইদানের অন্যতম নেতা ক্লিচকো ইউক্রেনীয় নিরাপত্তারক্ষীদের সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন তারা সরকারের পক্ষ ত্যাগ করলে সরকারের পতনের পর তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না!

উগ্রপন্থীরা মলোতভ ককটেল নিক্ষেপ করছে

২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি ইউরোমাইদান কর্মীরা পশ্চিম ইউক্রেনের লভিভ, রিভনে, তেরনোপিল ও খেমেলনিৎস্কি প্রদেশের আঞ্চলিক প্রশাসনিক ভবনগুলো দখল করে নেয় এবং পশ্চিম ইউক্রেনের ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক ও মধ্য ইউক্রেনের পলতাভা ও ঝিতোমির প্রদেশের আঞ্চলিক প্রশাসনিক ভবনগুলো দখলে নেয়ার প্রচেষ্টা চালায়।

https://vesti.ua/lvov/38666-vo-lvove-pri-pozhare-v-kazarme-berkuta-pogibli-dvoe

২৪ জানুয়ারি ইউরোমাইদান কর্মীরা কিয়েভে অবস্থিত কৃষিনীতি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় ভবন দখল করে নেয় এবং নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে নতুন করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তারা গাড়ির টায়ার পুড়িয়ে, আতশবাজি ফুটিয়ে ও মলোতভ ককটেল নিক্ষেপ করে নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর আক্রমণ চালায়। 'ইউরোমাইদান রক্ষী' নামক সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৩ জন নিরাপত্তারক্ষীকে বন্দি করে। একই দিনে ইউরোমাইদান কর্মীরা পশ্চিম ইউক্রেনের ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক ও ভোলিন প্রদেশের আঞ্চলিক প্রশাসনিক ভবনগুলো দখল করে নেয়, মধ্য ইউক্রেনে সুমি প্রদেশের আঞ্চলিক প্রশাসন ইউরোমাইদানের পক্ষে যোগদান করে এবং চেরকাসি প্রদেশে ইউরোমাইদান কর্মীরা স্থানীয় পুলিস সদর দপ্তরে আক্রমণ চালায়।

https://politics.segodnya.ua/politics/mirnoe-nastuplenie-pervye-itogi-496463.html

একই দিনে লভিভ প্রদেশের 'বেরকুৎ' বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য পদত্যাগ করে ইউরোমাইদানের পক্ষে যোগদান করে। পূর্ব ইউক্রেনের দনেৎস্ক, লুহানস্ক, দনিপ্রোপেত্রোভস্ক ও খেরসন প্রদেশের আঞ্চলিক প্রশাসনগুলো তীব্রভাবে ইউরোমাইদান কর্মীদের কার্যক্রমের নিন্দা জানায় এবং ক্রিমিয়ায় ইউরোমাইদানের বিরুদ্ধে 'আত্মরক্ষা ইউনিট' গঠনের প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়।

https://m.censor.net/ru/news/271549/v_ivanofrankovske_vosstavshie_zahvatili_tri_pulemeta_268_pistoletov_i_90_granat_sbu

২৫ জানুয়ারি ইউরোমাইদান কর্মীরা কিয়েভের জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও 'উক্রায়নস্কি দিম' এবং মধ্য ইউক্রেনের ভিন্নিৎসিয়া, পলতাভা ও চের্নিহিভ প্রদেশের আঞ্চলিক প্রশাসনিক ভবনগুলো দখল করে নেয়। ২৬ জানুয়ারি ইউরোমাইদান কর্মীরা ওদেসায় ইউরোমাইদানের পক্ষে বিক্ষোভ করলেও দদনিপ্রোপেত্রোভস্ক ও জাপোরোঝিয়া প্রদেশের আঞ্চলিক প্রশাসনিক ভবনগুলো দখল ও সেভাস্তোপোলে বিক্ষোভ আয়োজনের জন্য তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

https://www.unian.net/politics/877811-v-ivano-frankovske-tseloe-podrazdelenie-alfa-pereshlo-na-storonu-naroda.html

২৭ জানুয়ারি ইউরোমাইদান কর্মীরা কিয়েভে আইন মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন দখল করে, মধ্য ইউক্রেনের কিরোভোহরাদ প্রদেশে একটি মিছিলের আয়োজন করে এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন প্রদেশে ৩ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করে, যাদের মধ্যে একজন পরবর্তীতে মারা যায়। সেদিন দনেৎস্ক, ওদেসা ও ক্রিমিয়ায় ইউরোমাইদানবিরোধীরা তাদের 'আত্মরক্ষা ইউনিট' নির্মাণ করতে শুরু করে। ২৮ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ইয়ানুকোভিচের দল 'পার্তিয়া রেহিওনিভ' এর একটি সভায় ইউক্রেনীয় নব্য অভিজাত (oligarch) রিনাত আখমেতভ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ৪০ জন আইনপ্রণেতা এবং সের্হি তিহিপকো কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ৩৮ জন আইনপ্রণেতা ইউক্রেনে জরুরি অবস্থা জারির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

https://tyzhden.ua/News/102592

একই দিনে ইভানো ফ্রাঙ্কিভস্ক প্রদেশের 'আলফা' বিশেষ বাহিনীর পুরো ইউনিট পদত্যাগ করে ইউরোমাইদানের পক্ষে যোগদান করে। ২৯ জানুয়ারি গ্রেপ্তারকৃত ইউরোমাইদান কর্মীদের মুক্তির বিনিময়ে ইউরোমাইদান কর্মীরা কিয়েভে কৃষিনীতি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিলেও এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ইউরোমাইদানের অপেক্ষাকৃত কম উগ্রপন্থী অংশের সঙ্গে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের সংঘর্ষ হয়। ইউক্রেনীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় 'বাৎকিভশ্চিনা' দলের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে যেসব নথিপত্র জব্দ করে সেগুলো থেকে এটি স্পষ্ট যে ইউরোমাইদান স্বতঃস্ফূর্তভাবে গণআন্দোলন হিসেবে শুরু হয়নি, বরং এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ৯ ফেব্রুয়ারি কিয়েভে অনুষ্ঠিত একটি সমাবেশে ইউরোমাইদানের নেতারা ইউরোমাইদানের 'আত্মরক্ষা ইউনিট'গুলোতে যোগদান ও পূর্ব ইউক্রেনে ইউরোমাইদানকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ইউক্রেনীয় জনসাধারণকে আহ্বান জানান! ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউরোমাইদানে অংশগ্রহণকারী ইউক্রেনীয় উগ্র জাতীয়তাবাদী জোট 'প্রাভিই সেক্তর' নিজেদের একটি 'রাজনৈতিক পরিষদ' গঠন করে এবং দাবি জানায় যে, ইউক্রেনীয় আইনসভায় উপস্থিত বিরোধী দলগুলো যেন তাদের সঙ্গে আলোচনায় লিপ্ত হয়।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Right_Sector

১৫ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনীয় সরকার ইতিপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত সকল ইউরোমাইদান কর্মীকে গৃহবন্দি থাকার শর্তে মুক্তি প্রদান করে। একই দিনে আবার কিয়েভে ইউরোমাইদান কর্মীদের তৈরি ব্যারিকেডগুলো অপসারণের চেষ্টা করা হলে ইউরোমাইদান কর্মীরা তাদের আক্রমণ করে। ১৮ ফেব্রুয়ারি ইউরোমাইদানের নেতারা ইউক্রেনীয় আইনসভার ওপর আক্রমণ পরিচালনার উদ্দেশ্যে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে নিয়ে আইনসভার দিকে রওনা হন। আইনসভার কাছাকাছি আসার পর ইউরোমাইদান কর্মীরা পুলিশের অবরোধের সম্মুখীন হয়। এসময় তারা পুলিশের ওপর পাথর ছুড়তে শুরু করে এবং পুলিশ যে ট্রাকগুলো দিয়ে রাস্তা রুদ্ধ করে রেখেছিল সেগুলোর ওপরে মলোতভ ককটেল নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতারা আইনসভার ট্রিবিউন ও প্রেসিডিয়াম অবরোধ করেন। এমতাবস্থায় ক্ষমতাসীন দল 'পার্তিয়া রেহিওনিভ' এর আইনপ্রণেতারা আইনসভা ত্যাগ করেন। কমিউনিস্ট দলীয় আইনপ্রণেতারা আইনসভা ত্যাগ করতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু বিরোধী দলীয় আইনপ্রণেতারা তাদের বহির্গমনের পথ রুদ্ধ করে দেন। শহরের অন্যান্য অংশে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোমাইদান কর্মীরা নিরাপত্তারক্ষী ও সরকারপন্থী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ইউরোমাইদান কর্মীরা বেশ কয়েকজন বেরকুৎ সদস্যকে বন্দি করে, টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারা পার্তিয়া রিহিওনিভের কার্যালয়ে আক্রমণ চালিয়ে সেটিকে বিধ্বস্ত করে এবং সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যার ফলে কার্যালয়টির একজন কর্মী নিহত হয়। ইউরোমাইদান কর্মীদের নিক্ষিপ্ত গুলির আঘাতে অন্তত ৫ জন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়। পশ্চিম ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার 'স্বেচ্ছাসেবক'কে ইউরোমাইদানের পক্ষে লড়াই করার জন্য কিয়েভে প্রেরণ করা আরম্ভ হয়। ইউরোমাইদান কর্মীরা কিয়েভে ডাক বিভাগের প্রধান কার্যালয় এবং টেলিভিশন ও রেডিও সম্প্রচার বিষয়ক রাষ্ট্রীয় কমিটির কার্যালয় দখল করে নেয়। ইতোমধ্যে লভিভ প্রদেশে ইউরোমাইদান কর্মীরা সেখানকার প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবন দখল করে নেয়, কার্যালয়গুলোর সরঞ্জামাদি ও নথিপত্র ধ্বংস করে এবং অন্তত ১,১৭০টি আগ্নেয়াস্ত্র তাদের হস্তগত হয়। ইভানো ফ্রাঙ্কিভস্ক প্রদেশে ইউরোমাইদান কর্মীরা স্থানীয় এসবিইউ সদর দপ্তর দখল করে নেয় এবং অন্তত ২৭১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৯০টি গ্রেনেড হস্তগত করে। ভোলিন প্রদেশে ইউরোমাইদান কর্মীরা স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবনগুলো দখল করে নেয় এবং প্রদেশটির গভর্নরকে মারপিট করে। খেমেলনিৎস্কি প্রদেশে ইউরোমাইদান কর্মীরা স্থানীয় এসবিইউ সদর দপ্তর দখলের চেষ্টা করে এবং সংঘর্ষের ফলে ১ জন নিহত ও ২ জন গুরুতরভাবে আহত হয়। ঝিতোমির প্রদেশে ইউরোমাইদান কর্মীরা আঞ্চলিক প্রশাসনিক ভবনগুলো দখল করে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় বিভাগের ওপর মলোতভ ককটেল নিক্ষেপ করে। জাকারপাত্তিয়া প্রদেশে ইউরোমাইদান কর্মীরা আঞ্চলিক প্রশাসনিক ভবনগুলো দখল করে এবং ভিন্নিৎসা প্রদেশে তারা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়।সেদিনই অন্তত ১,৫০০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং অন্তত ১ লক্ষ রাউন্ড গুলি ইউরোমাইদান কর্মীদের হস্তগত হয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি কিয়েভে ইউরোমাইদান কর্মীরা আবার আক্রমণ শুরু করে। ইউরোমাইদান কর্মীদের অনেকের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল এবং অন্তত কয়েক ডজন নিরস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এমতাবস্থায় নিকটবর্তী ভবনগুলো থেকে অজ্ঞাত (!) কিছু স্নাইপার ইউরোমাইদান কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে শুরু করে এবং এর ফলে অন্তত কয়েক ডজন ইউরোমাইদান কর্মী নিহত ও শত শত জন আহত হয়। ইউরোমাইদান কর্মীরা ইউক্রেনীয় সরকারকে বহির্বিশ্বের কাছে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য নিজেরাই এটির আয়োজন করেছিল। সেদিন দুপুরে কিয়েভে প্রায় ৭০ জন নিরাপত্তারক্ষী ইউরোমাইদান কর্মীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন পার্তিয়া রেহিওনিভ থেকে পদত্যাগের হিড়িক শুরু হয় এবং কিয়েভের নগর প্রশাসনের প্রধান ভলোদিমির মাকেয়েঙ্কোসহ দলটির বহু সংখ্যক আইনপ্রণেতা, আঞ্চলিক সংগঠনের প্রধান, আঞ্চলিক আইনসভা সদস্য ও মেয়র দল থেকে পদত্যাগ করেন। সুমি প্রদেশে 'প্রাভিই সেক্তর' দল আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের 'যুদ্ধবিরতি'র অবসান ঘটায়; ঝিতোমির প্রদেশে ইউরোমাইদান কর্মীরা ভ্লাদিমির লেনিনের একটি স্মৃতিসৌধ ধ্বংস করে; ইভানো ফ্রাঙ্কিভস্ক প্রদেশের আঞ্চলিক পরিষদের সদস্যরা রাষ্ট্রপতি ইয়ানুকোভিচকে 'অবৈধ রাষ্ট্রপ্রধান' হিসেবে আখ্যায়িত করে; ভোলিন প্রদেশে অবস্থিত ইউক্রেনীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এসবিইউ ও প্রোসিকিউটরের কার্যালয় ভোলিনের আঞ্চলিক পরিষদকে প্রদেশটির স্বশাসিত কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং লভিভ প্রদেশে বেরকুৎ এর একটি ঘাঁটিতে অগ্নিসংযোগের ফলে ২ জন নিহত হয়। ইউক্রেনীয় আইনসভা কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন অনুসায়ী, ২০১৪ সালের ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারিতে ইউরোমাইদান কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৯৬ জন ইউক্রেনীয় নিরাপত্তারক্ষী গুলিবিদ্ধ হয় এবং এদের মধ্যে অন্তত ১৭ জন প্রাণ হারায়। 

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]