হাঙ্গেরিতে কমিউনিস্ট নিধন


হাঙ্গেরি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রো-হাঙ্গেরি ও ইউরোপের আরও কিছু অঞ্চল নিয়ে গঠিত হ্যাবসবার্গ সাম্রাজ্য অক্ষশক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিল। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Habsburg_monarchy

হাঙ্গেরি হ্যাবসবার্গ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হওয়ায় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এটি চুক্তির শর্তানুযায়ী প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভূখন্ড হারিয়ে ফেলে। এই ভূখণ্ড যুক্ত হয় সার্বিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া ও রোমানিয়ার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রাজতন্ত্রের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত হয় হাঙ্গেরিতে। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের পর হাঙ্গেরির ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকা আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থ হওয়ায় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে আসে। ইউরোপের অনেক দেশ যুদ্ধের কারণে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়, তাই মানুষ গতানুগতিক রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের উপর আর ভরসা করতে পারছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ভঙ্গুর আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে অনেক দেশের বাম ঘরানার দলগুলো জনমত গঠনের কাজে সফলতা লাভ করে। পুস্তিকা প্রকাশ, লিফলেট বিলি ও পত্রিকায় লেখালেখিগুলো হাঙ্গেরির সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণীর কাছে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে।

https://drive.google.com/drive/folders/1-0Fm8A8WGeN_pxlFN-j_auTDYRXuCCPs

একসময় কমিউনিস্টরা হাঙ্গেরিতে 'হাঙ্গেরিয়ান সোভিয়েত রিপাবলিক' প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়। রাজতন্ত্রের সমর্থকরা জানতো, একবার যদি কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসে তবে রাজতন্ত্র সমূলে উৎপাটন করা হবে। এজন্য প্রয়োজনে সন্ত্রাসবাদের ব্যাপক প্রয়োগের মাধ্যমে হলেও কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখল থেকে দূরে রাখার কৌশল অবলম্বন করে তারা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর চুক্তি অনুযায়ী হাঙ্গেরি যেসব অঞ্চলের উপর অধিকার ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, সেগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য হাঙ্গেরিয়ান সোভিয়েত রিপাবলিক প্রয়োজনীয় সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। স্লোভাকিয়া ও ট্রানসিলভানিয়ার সাথে সংযুক্ত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিলে রোমানিয়ার সরকার পাল্টা সামরিক শক্তি প্রয়োগের ঘোষণা দেয়। যুদ্ধে রোমানিয়ার সৈন্যরা বুদাপেস্ট দখল করে। বেলা কুন দেশ ত্যাগ করেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/B%C3%A9la_Kun

বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফেরত আসা জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ সৈন্যদের নিয়ে সাবেক হ্যাবসবার্গ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল মিক্লোস হর্থি একত্রিত হন। তারা হাঙ্গেরির দক্ষিণে বিদ্রোহী সরকার গঠন করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল পুরো হাঙ্গেরির শাসনক্ষমতা দখল করে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mikl%C3%B3s_Horthy

অ্যাডমিরাল মিক্লোস হর্থি সেনাবাহিনীর নাম দেন 'ন্যাশনাল আর্মি' এবং এর প্রতিটি ইউনিটকে 'হোয়াইট গার্ড' বলা হতো।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/White_Terror_(Hungary)

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফেরত আসা হাঙ্গেরীয় সৈন্যরা হর্থির সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। ন্যাশনাল আর্মি ১৯১৯ সালের নভেম্বর মাসে বুদাপেস্টে প্রবেশ করে। চার মাস পর অ্যাডমিরাল হর্থি হাঙ্গেরির সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে আইনসভার সমর্থন লাভ করেন। পরবর্তী দুই বছর হাঙ্গেরিতে কমিউনিস্ট নেতাকর্মী ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষদের জীবনকে নরক বানিয়ে ফেলা হয়। ন্যাশনাল আর্মির সদস্যরা কমিউনিস্টদের গ্রেফতার করার পর সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতো। কমিউনিস্ট নেতাদের জনসমক্ষে ফাঁসিতে ঝোলানো হতো যাতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ন্যাশনাল আর্মির সদস্যরা গ্রেফতার করেছিল, যাদের মধ্যে প্রায় এক হাজার জন মানুষকে হত্যা করা হয়। হোয়াইট গার্ডের সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই কমিউনিস্টদের সাথে সংযুক্ত ছিল

https://hungarianspectrum.org/tag/white-terror/

এই সামরিক অভিযানে ন্যাশনাল আর্মির হাতে গ্রেফতার হওয়া অনেকে ছিল ইহুদি পরিবার থেকে আগত। তখনকার সমাজে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় প্রত্যেক ইহুদি কোনো না কোনোভাবে কমিউনিস্টদের সাথে সংশ্লিষ্ট। ন্যাশনাল আর্মি ক্ষমতা দখলের পর ক্ষমতা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে অ্যাডমিরাল মিক্লোস হর্থির সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে রেষারেষি শুরু হয়ে সেটি সহিংসতায় রূপ নেয়। হোয়াইট গার্ডের সদস্যরা অর্থের জন্য অনেক সময় জোরপূর্বক অপহরণ করতো। 

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]