বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি

 

তামিলনাড়ুর তিরুপুর শহরে তিন দশক আগে কয়েকটা কটন মিল নিয়ে এখানে শুরু হয়েছিল ফেব্রিক তৈরি আর কাপড় এক্সপোর্টের ব্যবসা। বর্তমান তিরুপুর শহরে প্রায় ৪ লাখ শ্রমিক কোনো না কোনো ভাবে এই শিল্পের সাথে যুক্ত। এই তিরুপুর থেকে গত বছর ফেব্রিক আর রেডিমেড কাপড় বেচে মিল মালিকরা ২৫ হাজার কোটি টাকা আয় করে। মিল মালিকদের সৌজন্যে বাকি আরও যারা ততোধিক টাকা আয় করে সেই লিস্টে আছে নাইকি, এইচ অ্যান্ড এম, অ্যাডিডাস, প্রাইমার্ক, ফিলা, টমি হিলফিগার, জারা, ওয়ালমার্ট এর মত বড় বড় বিদেশী বহুজাতিক থেকে শুরু করে রেমন্ড, রিলায়েন্স, প্যান্টালুন্স, ফ্যাব ইন্ডিয়ার মত দেশি ব্যবসাদার। সারা ভারতে রেডিমেড বস্ত্র উৎপাদনে তামিলনাড়ু প্রথম। তামিলনাড়ুতে বস্ত্রশিল্পকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করা শ্রমিকদের সংখ্যা সর্বোচ্চ (১৭ লাখের বেশি, যার মধ্যে ফ্যাক্টরি ওয়ার্কারের সংখ্যা ৩৩ হাজারের অধিক)। শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী। তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্রামগুলো থেকে কাজ খুঁজতে আসা এই নারী শ্রমিকদের খুব কম অংশ ( ৩-৪%) বাদে প্রায় সবাই নিরক্ষর অথবা প্রাইমারি স্কুল অবধি পড়েছে। যাদের জমি নেই, সঞ্চয় নেই, শিক্ষা নেই সেসব হতভাগ্য দলিত ঘরের মেয়েরা যাদের পরিবার যৌতুকের টাকা জোগাড় করতে পারেনি বলে বিয়ে দিতে পারেনি; গত তিন দশক ধরে চড়কি ঘুড়িয়ে যাচ্ছে, মিলে শিফটের পর শিফট কাজ করে যাচ্ছে, বাবুদের কাপড় রঙ করছে, বোতাম লাগাচ্ছে, কাপড় ব্লিচ করছে। তামিলনাড়ুর বস্ত্রশ্রমিকদের বেশিরভাগই নারী শ্রমিক এবং যার প্রায় ৬০% এর বেশি দলিত। সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ না করলে পরের সপ্তাহে এদের মজুরী আসে না। শিফটে দু'বারের বেশি কারোর শৌচাগারে যেতে বারণ। তা-ও যদি ২০০ শ্রমিকের জন্য একটি টয়লেটে কারোর সেই সুযোগ আদৌ আসে! বছরে ৪-৫ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে বেতন কাটা যাবে, হারাতে হতে  পারে কাজও। ২০০৫ সালে তামিলনাড়ুর বস্ত্রশ্রমিকদের গড় মজুরী ছিল প্রতিমাসে ৪৫০০ টাকা; অনেক লড়াইয়ের পর ২০১৭ সালে তা বাড়িয়ে প্রতিমাসে ৬৫০০ টাকা করতে বাধ্য হয়েছে জোঁকেরা। বস্ত্রশিল্পের বেশিরভাগ শ্রমিক ১৫-৩৫ বর্ষীয় নারী হওয়ার কারণে তাদের ঋতুকালীন সময়েও ১০ ঘণ্টার শিফটে কাজ করতে হয়। তামিলনাড়ুর নানান বস্ত্র কারখানায় বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে ঋতুকালীন সময়ে মহিলা শ্রমিকদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে নাম ও লেবেলবিহীন এক ওষুধ এবং প্রত্যেককে সেই ওষুধ সুপারভাইজারের সামনেই গিলতে হবে।

https://www.indiatoday.in/india/story/tamil-nadu-factories-found-giving-illegal-pills-to-women-workers-to-make-them-work-through-period-pain-1548717-2019-06-14

এক একটা মিলে কেবল এই বেনামী ওষুধ খাওয়াতেই একজন সুপারভাইজার নিযুক্ত করা হয়। এই বেনামী ওষুধ নিতে বাধ্য করা শ্রমিকদের নানান শারীরিক অসুবিধে দেখা দিলো এক বছরেই। শরীরে হরমোনাল অসাম্য থেকে জরায়ুর ইনফেকশান অবধি। অনেককে কাজ ছেড়ে দিতে হলো। এক সংবাদ সংস্থা সেই বেনামী ওষুধ পরীক্ষা করে জানালো সেসব আসলে হাই ডোজের পেইনকিলার। উনিশ শতকের শুরুতেই ম্যাসাচুসেটসের লয়েলে বড় বড় কটন মিল তৈরি হয় আর সেগুলোতে কাজ করতে আনা হয় নিউ ইংল্যান্ডের গ্রাম্য এলাকার নারীদের। তাদের অবস্থা ছিল তৎকালীন আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে দুর্ভাগা চাষি কিংবা রুশ সার্ফদের মতো যারা সূর্য ওঠা থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া অবধি কাজ করতো।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Great_Famine_(Ireland)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Serfdom_in_Russia#:~:text=The%20term%20serf%2C%20in%20the,which%20they%20were%20%22attached%22.

১৩ ঘন্টা দৈনিক খাটুনি মানতে পারেনি তারা। ১৮৩৬ সালে লয়েলের সমস্ত নারী শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামে ন্যায্য মজুরী আর সীমিত কর্মঘন্টার দাবিতে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Lowell_mill_girls

লয়েলের এই লড়াই ছিল শ্রমজীবী নারীদের প্রথম ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের একটি। সেদিন লয়েলের সবকটা স্পিন্নিং মিল বন্ধ ছিল। কারখানা থেকে বেড়িয়ে এসে রাস্তায় সোচ্চার হয় সমস্ত লয়েলের নারী শ্রমিকরা। মুখে মুখে ঘোরে তাদের স্লোগান-

"না, আমরা ভিক্ষুক হতে চাইনা"

"না, আমরা সারাজীবন সুতো ঘুড়িয়ে মরতে চাইনা"

"না, এই দাসত্ব মানা সম্ভব নয়"

"এই যে আমাদের মিছিল, এই মিছিল লড়ছে পুরুষদের জন্যও। তারা তো সেই এক নারীর শিশু, জেনো আমরা আর এভাবে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি ভুগবো না, জেনো পেটে শুধু ক্ষুধা নেই, আছে মনেও অশান্তি এবারে শুধু দুটো রুটি নয় আর, একটি গোলাপও থাক বরাদ্দ।"

বম্বে টেক্সটাইল মিলের শ্রমিকরা ১৯২৯ সালে টানা ৫ মাস হরতাল করে আদায় করেছিল নিজেদের ন্যায্য দাবি।

https://www.marxists.org/history/international/comintern/sections/britain/periodicals/labour_monthly/1929/06/india.htm

ডোগরা পুলিশের গুলিতে মারা দিয়েছিল কাশ্মীরের ২৮ জন শাল শ্রমিক

https://kashmirlife.net/april-29-1865-when-dogra-forces-killed-28-shawl-weavers-77863/

মনে পড়ে ল্যাঙ্কাশায়ারের বস্ত্র শ্রমিকদের কথা?

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Luddite

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Lancashire_Cotton_Famine


Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]