ভারতের তথাকথিত মিডিয়া স্বাধীনতা

 


১) আসিফ সুলতান, আ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, দ্য কাশ্মীর

ন্যারেটর। “The rise of Burhan” লেখার জন্য ২০১৮ সাল থেকে ইউএপিএ, সিডিশন, পিএসএ আইনে জেলে বন্দী।

২) অভিনাশ ঝা, রিপোর্টার, BNN News. ভুয়ো ক্লিনিকের
বিরুদ্ধে খবর লেখার জন্য বিহারে খুন হন।

৩) সিদ্দিকী কাপ্পান, কন্ট্রিবিউটর, আজহিমুখাম। উত্তরপ্রদেশে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের অত্যাচার এবং হাথরাসের দলিত বালিকার গণধর্ষণ ও খুন প্রকাশ্যে নিয়ে আসার জন্য ইউএপিএ, সেডিশন আইনে জেলে বন্দী।

৪) রামান কাশ্যপ, রিপোর্টার, Sadhna TV Plus. লাখিমপুর খেরি কৃষক হত্যার খবর প্রকাশ্যে আনার জন্য জেলে বন্দী।

৫) সাজাদ গুল, জার্নালিজমের ছাত্র (ট্রেনি রিপোর্টার)। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের একটি ভিডিও ট্যুইট করবার জন্য ইউএপিএ-তে জেলে বন্দী।

৬) চেন্নাকেসভালু, রিপোর্টার, EV 5। অন্ধ্রপ্রদেশে সরকার বিরোধী খবর রিপোর্ট করবার জন্য খুন হন।

৭) ফাহাদ শাহ, এডিটর, দ্যা কাশ্মীরি ওয়ালা। কাশ্মীরিদের উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর অত্যাচার নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য ইউএপিএ, পিএসএ চার্জে জেলে বন্দী।

৮) মনিশ সিংহ, রিপোর্টার, Sudharshan TV. বিহার সরকারের দুর্নীতি সামনে নিয়ে আসার জন্য বিহারের চম্পারণে খুন হন।

৯) মনিশ ডার, ফটোজার্নালিস্ট। সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে খুন হন। কিছুদিন পর তার ভাই হানান ভার সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে এনআইএ'র হাতে গ্রেফতার হন।

১০) সুলভ শ্রীবাস্তব, রিপোর্টার, ABP News. উত্তরপ্রদেশে খুন হন মাফিয়াদের হাতে।

১১) মহম্মদ জুবেইর, Co-founder, Alt News. বিজেপির
মুখপাত্র নুপুর শর্মার কেস প্রকাশ্যে আনবার জন্যে জেলে
বন্দী।

১২) রূপেশ কুমার সিং, পিপল'স রিপোর্টার, জনজোয়ার
মিডিয়া। সংখ্যালঘু দলিত-আদিবাসীদের উপর রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের অত্যাচার এবং পুঁজিপতিদের মুনাফার স্বার্থে উন্নয়নের নামে সমাজ-প্রকৃতি, কৃষক-শ্রমিকের বিনাশের খবর তৃণমূল স্তরে গিয়ে মানুষের সামনে তুলে ধরবার জন্যে ঝাড়খন্ডের জেলে বন্দী।

এছাড়া-

(ক) ২০২১ সালে ৬ জন সাংবাদিক খুন, ১৩টি মিডিয়া হাউজসহ ১০৮ জন সাংবাদিক সরকারের নজরে।

(খ) ২০২১ সালে ২৪ জন সাংবাদিক রাষ্ট্রের হাতে আক্রান্ত। ৪৪ জনের নামে এফআইআর সরকার পক্ষের।

(গ) ১৯৯২-২০১৩ পর্যন্ত ভারতে খুন মোট ৪২ জন সাংবাদিক। গত আট বছরে খুন ১৮ জন সাংবাদিক।

(ঘ) বর্তমানে ৮ জন সাংবাদিক বিচারাধীন অবস্থায় বন্দী, তার মধ্যে ৪ জন বন্দী ইউএপিএ কেসে। 'ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইন্ডেক্স'-এ ভারত ২০২১ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪২ নম্বরে অবস্থান করছিল এবং ২০২২ সালে সেটা ১৫০ নম্বর স্থানে। এরা প্রত্যেকে নিপীড়িত জাতি ও খেটে খাওয়া মানুষের সত্য ঘটনা তুলে ধরবার কারণে খুন, গ্রেফতার হয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতের সরকার এদের গ্রেফতারের আগে ও পরে তাদের সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়া এবং মেইন স্ট্রিম খবরের চ্যানেল জুড়ে কুৎসা প্রচার করেছে। এদের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন নতুন কিছু খবরের পোর্টাল চালু করা হয়েছে। যাদের খবরের কনটেন্ট মূলত দেশ বিদেশের ধর্মের, হিন্দু-মুসলমান জাগরণের। যারা আরএসএস-বিজেপি বিরোধিতায় কেবল হিন্দু ধর্মের কুৎসা ও মুসলিম ধর্মের মাহাত্ম্য দেখিয়ে চলেছে। যা দিয়ে ভারতের শাসকশ্রেণী সংখ্যাগুরু শ্রমজীবী মানুষের মন তাদের শ্রেণীগত দিক থেকে সরিয়ে ধর্ম-জাতের পরিচয়ে বেঁধে দিতে চাইছে। বাস্তবিক সমস্যার শ্রেণীগত যুদ্ধ উপেক্ষা করিয়ে ধর্ম-জাতের রাজনৈতিক যুদ্ধকে সমাজে পুরো দমে স্বীকৃতি দিতে চাইছে। সাম্রাজ্যবাদের চাপে দেশের সমগ্র সম্পদ লুঠ করতে 'মাওবাদী' দমনের নামে পুরো ভারত জুড়ে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে, যা 'অপারেশন সমাধান - প্রহার' এর মতো গালভরা নাম সামনে রেখে কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকার মিলিতভাবে চালাচ্ছে। অপরদিকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের জঙ্গল-জমি লুট করতে, আদিবাসী মুখ হিসেবে হিন্দু 'আদিবাসী' রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে দেশের প্রধান নাগরিকের মর্যাদা দিয়েছে, যার রাজ্যপাল থাকাকালীন সময় থেকেই ঝাড়খন্ডে আদিবাসীদের প্রতি অত্যাচার সব থেকে বেশি পরিমাণে বেড়েছে। ঝাড়খন্ডের হেমন্ত সোরেন এর সরকার সাংবাদিক রূপেশ কুমার সিংহকে মাওবাদী সন্দেহে ইউএপিএ কালা আইনে জেলে ভরেছে, মাওবাদী নেতা প্রশান্ত বোসের (কিষান দা) আট মাস আগের কেসে নাম জুড়ে। রূপেশ এর কিছুদিন আগে গিরিডির কয়লা উত্তোলনের অঞ্চল নিয়ে রিপোর্ট পেশ করেন। যে রিপোর্টে তিনি তুলে ধরেছিলন, সরকার দেশি বিদেশি বৃহৎ পুঁজিপতিদের তুষ্ট করতে সেখানকার আদিবাসী মানুষ ও সমাজ-প্রকৃতির ক্ষতি করছে। সরকার যে উন্নয়নের কথা বলছে, তা শুধুমাত্র বৃহৎ পুঁজিপতিদের স্বার্থ সিদ্ধিতে ও সমাজ বিকাশের চালিকা শক্তি শ্রমিক-কৃষকের ক্ষতি সাধনে হচ্ছেএর ফলে শিল্পের নামে অত্যাধিক পরিমানে পরিবেশ দূষণ ঘটছে। এর আগে ২০১৯ সালে পেগাসাস স্পাইওয়ার দিয়ে কেন্দ্র সরকার তার ও তার পরিবারকে নজরবন্দী করেছিল। আদিবাসীদের উপর রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর অত্যাচার এবং মাওবাদী সাজিয়ে ফেক এনকাউন্টার (মতিলাল বাস্কে), মিথ্যে মামলায় বন্দী আদিবাসীদের নিয়ে খবর করবার জেরে রূপেশকে ইউএপিএ কালা আইনে ছয়মাস হাজতবাস করতে হয়েছিল ২০১৯ সালে। গতবছর ৪০০০ জেলবন্দী নিরীহ আদিবাসীর নাম প্রকাশ করবার অপরাধে জেল বন্দী ৮৩ বছর বয়স্ক ফাদার স্ট্যানস্বামীর মৃত্যু হয়স্বাভাবিকভাবেই হিমাংশু কুমার, আলোক শুক্লার মত সমাজকর্মীরা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের টার্গেটে আছেন। বর্তমানে ছত্তিসগড়, ঝাড়খণ্ড, অসম, কেরালা, অন্ধ্র, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা থেকে মাওবাদী সন্দেহে প্রায় শতাধিকের বেশি সাধারণ গরীব পরিবারের লোকেদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে কৃষক-শ্রমিকদের মধ্যে কাজ করা জয়িতা, হাসিবুর, প্রতীকসহ আরো বহুজনকে মাওবাদী সন্দেহে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে সারা পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৭৮ জনের বেশি 'মাওবাদী' বন্দী রয়েছেন।







Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]