দুগিন সমাচার

 



এই বছরের ২০ আগস্ট রাশিয়ার মস্কো প্রদেশের বলশিয়ে ভিয়াজিয়োমিতে আলেক্সান্দর দুগিনের মেয়ে দারিয়া দুগিনা গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়। আলেক্সান্দর গেলায়েভিচ দুগিন ১৯৬২ সালের ৭ জানুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কোয় জন্মগ্রহণ করে। তার বাবা লেফটেন্যান্ট জেনারেল গেলিই দুগিন ছিল সোভিয়েত সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা 'গ্রু'র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। দুগিন কমিউনিজমের বিরোধী ছিল এবং বিভিন্ন ডানপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। দুগিন মস্কো এভিয়েশন ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিল, কিন্তু তার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তাকে সেখান থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৮০ এর দশকের শেষদিকে দুগিন রুশ উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠন 'ন্যাশনাল প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট পামিয়াৎ' এর সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং ১৯৯০ এর দশকের প্রথমদিকে 'কমিউনিস্ট পার্টি অফ দ্য রাশান ফেডারেশন' এর রাজনৈতিক ইশতেহার রচনায় সহায়তা করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Pamyat

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Communist_Party_of_the_Russian_Federation

এই লোক বিভিন্ন সময়ে 'ন্যাশনাল বলশেভিক পার্টি' এবং 'ইউরেশিয়া পার্টি'র সঙ্গে যুক্ত ছিল।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/National_Bolshevik_Party

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Eurasia_Party

২০০৩ সাল থেকে এই লোক মস্কোকেন্দ্রিক 'ইন্টারন্যাশনাল ইউরেশিয়ান মুভমেন্ট' এর নেতা পদে অধিষ্ঠিত এবং বিশ্বের ২৯টি রাষ্ট্রে সংগঠনটির শাখা রয়েছে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Eurasia_Movement

রাজনৈতিক কার্যক্রমের বাইরে দুগিন বিভিন্ন সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, প্রকাশনা সংস্থা, রেডিও প্রোগ্রাম, টেলিভিশন চ্যানেল এবং বেসরকারি সংগঠনে কাজ করেছে। তার লেখা বিখ্যাত বইগুলো হচ্ছে 'The Foundations of Geopolitics', 'The Fourth Political Theory', 'Last War of the World-Island' প্রভৃতি। দুগিন তার রাজনৈতিক মতাদর্শকে 'চতুর্থ রাজনৈতিক তত্ত্ব' হিসেবে আখ্যায়িত করে পুঁজিবাদভিত্তিক উদার গণতন্ত্র, কমিউনিজম ও ফ্যাসিবাদ তিনটি মতাদর্শকেই প্রত্যাখ্যান করেছে। 



দুগিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের বিপরীতে ইউরেশিয়ায় অবস্থিত রাষ্ট্রগুলোকে একত্রিত করার মাধ্যমে একটি 'ইউরেশীয় ইউনিয়ন' গঠনের পক্ষপাতী। দুগিন ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত নিম্নকক্ষ 'রাষ্ট্রীয় দুমা'র সভাপতি গেন্নাদি সেলেজনিয়োভের একজন উপদেষ্টা এবং ২০১০ এর দশকে রাষ্ট্রীয় দুমার সভাপতি সের্গেই নারিশকিনের অধীনস্থ বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য ছিল। এর বাইরে রুশ সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে দুগিনের কোনো সংশ্রব ছিল না। দুগিন কখনোই রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না। অথচ পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম বহু আগে থেকে দুগিনকে 'পুতিনের মস্তিষ্ক', 'পুতিনের আধ্যাত্মিক গুরু', 'পুতিনের রাসপুতিন' প্রভৃতি অভিধায় অভিষিক্ত করে আসছে। দুগিন তুরস্ক, ইরান, সার্বিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্র সফর করে বিভিন্ন রাষ্ট্রের পণ্ডিতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। 

https://www.google.com/amp/s/amp.theguardian.com/world/2022/aug/21/alexander-dugin-who-putin-ally-apparent-car-bombing-target

রাশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক, ইরান, সার্বিয়া, জার্মানি প্রভৃতি নানাবিধ রাষ্ট্রে দুগিনের রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুরাগী রয়েছে। কিন্তু পুতিন আর দুগিনের কখনো মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছে, এরকম কোনো প্রমাণ নেই। 

https://www.academia.edu/34356528/Edited_Eurasianism_and_European_Far_Right_Reshaping_the_Europe_Russia_Relationship_Lanham_MD_Lexington_2015

পুতিন কখনো কোনো বক্তব্যে দুগিনের রাজনৈতিক আদর্শ 'চতুর্থ রাজনৈতিক তত্ত্বে'র প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি। 

https://twitter.com/powerfultakes/status/1561132883405901824?t=ByS-Dd5j5PwmssAWAiwpXQ&s=19

দুগিন ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ছিল, কিন্তু ২০১৪ সালে দুগিনকে তার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে এই পদ থেকে অপসারিত করা হয়। 

https://www.google.com/amp/s/www.aljazeera.com/amp/news/2022/8/23/who-is-russian-ultranationalist-alexander-dugin

দুগিন যদি সত্যিই পুতিনের রাজনৈতিক গুরু হতো, সেক্ষেত্রে অবশ্যই রুশ সরকার তার পৃষ্ঠপোষকতা করতো এবং দুগিনকে এই পদ থেকে অপসারণ করা সম্ভব হতো না। 

https://www.google.com/amp/s/www.trtworld.com/magazine/who-is-aleksandr-dugin-whose-daughter-was-killed-in-a-car-bomb-60016/amp

তাছাড়া দুগিন বা তার মেয়েকে রুশ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনোরকম নিরাপত্তা দেয়া হয়নি। দুগিন সত্যিই পুতিনের 'মস্তিষ্ক' হলে সে ও তার পরিবার এরকম অরক্ষিত থাকতো না।
















Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]