লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্রের সামাজিক ভিত্তি সম্পর্কে - ইয়াও ওয়েনইউয়ান
[মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লববে মাও এর প্রধান চার সহযোগীর একজন ইয়াও ওয়েনইউয়ান কর্তৃক রচিত এই দলিলটি প্রথম প্রকাশ করে পিকিং রিভিউ, ১০ মার্চ ১৯৭৫ সালে]
বুর্জোয়াদের ওপর একনায়কত্ব পরিচালনার প্রশ্নে একটা পরিষ্কার উপলব্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে সভাপতি মাও সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন “লিন পিয়াওয়ের মতো লোকেরা যদি ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে তাদের পক্ষে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রবর্তন করা খুবই সহজ হবে। তাই আমাদের কিছু মার্কসবাদী-লেনিনবাদী রচনা অধ্যয়ন করা উচিত।” এটা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এক প্রশ্ন জন্ম দেয় লিন পিয়াওয়ের মতো লোকেদের শ্রেণী প্রকৃতি কী? কোন শ্রেণী ভিত্তি লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র জন্ম দিয়েছে? নিঃসন্দেহে এই প্রশ্নে পরিষ্কার উপলব্ধি প্রয়োজন সর্বহারা একনায়কত্বকে সুসংহত করতে, পুঁজিবাদী পুন:প্রতিষ্ঠাকে প্রতিরোধ করতে, সমাজতন্ত্রের ঐতিহাসিক পর্যায়কাল জুড়ে পার্টির মৌলিক লাইন দৃঢ়ভাবে প্রয়োগ করতে আর ধাপে ধাপে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে যাতে বুর্জোয়াদের অস্তিত্বমান হওয়া বা নতুন বুর্জোয়াদের আবির্ভাব অসম্ভব হয়। সকল সংশোধনবাদীদের আর সংশোধনবাদী চিন্তাধারার ক্ষেত্রে যা ঘটে, সেই একইভাবে লিন পিয়াও ও তার সংশোধনবাদী লাইন আকস্মিক কোনো ব্যাপার নয়। লিন পিয়াও ও তার চক্র সমগ্র পার্টি, সমগ্র সৈন্য বাহিনী ও সমগ্র দেশের জনগণ থেকে অতি বিচ্ছিন্ন ছিল; কিন্তু সমাজে এক গভীর শিকড়যুক্ত শ্রেণীভিত্তি আছে যা এই অতি বিচ্ছিন্ন লোকদের দঙ্গলকে উৎপাদন করেছে যারা নিজেদের বর্ণনা করেছে 'আকাশে উড়ন্ত মুক্ত একাকী স্বর্গীয় অশ্বাবলী হিসেবে'। এটা খুব ভালভাবেই পরিষ্কার যে লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র উচ্ছেদ হওয়া ভুস্বামী ও পুঁজিবাদী শ্রেণীসমূহের স্বার্থ ও উচ্ছেদ হওয়া প্রতিক্রিয়াশীলদের কর্তৃক সর্বহারা একনায়কত্বকে উচ্ছেদ করে বুর্জোয়া একনায়ত্বকে পুন:প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খার প্রতিনিধিত্ব করতো। লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে বিরোধিতা করে আর আমাদের দেশে সর্বহারা একনায়ত্বধীনে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি ঘৃণা পোষণ করতো, একে 'সামন্ত স্বৈরাচার' বলে এর চরিত্রে কলংক লেপন করতো আর একে অভিশাপ দিতো 'সমকালের চিন শিহ হুয়াং' বলে। তারা চাইতো ভূস্বামী, ধনী কৃষক, প্রতিবিপ্লবী, খারাপ উপাদান আর দক্ষিণপন্থীরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রকৃত মুক্তি পাক, অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে তারা সর্বহারা একনায়কত্বকে ভুস্বামী ও মুৎসুদ্দি পুঁজিপতি শ্রেণীসমূহের একনায়কত্ব আর সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করতে চেয়েছে। পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য কঠিন পরিশ্রমের সাথে পার্টির ভেতরে বুর্জোয়াদের এজেন্ট হিসেবে লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র পার্টি ও সর্বহারা একনায়কত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণে বন্য ছিল, এতটাই ছিল যে তারা গোপন এজেন্টদের এক সংগঠন গড়ে তোলে আর এক প্রতিবিপ্লবী সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করে। এই উন্মত্ততা হচ্ছে এই বাস্তবতার প্রতিফলন যে প্রতিক্রিয়াশীলরা যারা রাজনৈতিক ক্ষমতা ও উৎপাদনের উপায় হারিয়েছে তারা অনিবার্যভাবে শোষক শ্রেণীসমূহের হারানো অবস্থাকে পুনরুদ্ধারে সর্ববিধ প্রচেষ্টা চালাবে। আমরা দেখেছি কিভাবে লিন পিয়াও, তার রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক দেউলিয়াত্বের পর এক দানে বাজি ধরে সর্বহারা শ্রেণীকে গিলে খেতে চেয়েছে পাঁকা জুয়ারীর মতো, আর শেষে দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে শত্রুর আশ্রয়ে পালিয়ে গেছে; সভাপতি মাও ও পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির ধৈর্যশীল শিক্ষাদান, অপেক্ষা আর তাকে বাঁচানোর চেষ্টা সত্ত্বেও তার প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র একটুও কমেনি। এসবই সর্বহারা আর বুর্জোয়া শ্রেণীর মধ্যকার জীবন মরণ সংগ্রামকে প্রতিফলিত করে, দুই প্রধান বৈরি শ্রেণীর মধ্যে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বাধীন যে সংগ্রাম এক দীর্ঘ সময়কাল ব্যাপী চলবে। যতদিন উচ্ছেদকৃত প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণী অস্তিত্বমান থাকবে, পার্টিতে (ও সমাজের মধ্যে) এই সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকে যে বুর্জোয়াদের প্রতিনিধিরা পুন:প্রতিষ্ঠার আশাকে পুনপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় রূপান্তর ঘটাবে। তাই আমাদের অতি অবশ্যই সতর্কতাকে উচ্চতর করতে হবে আর দেশে বিদেশে প্রতিক্রিয়াশীলদের যে কোনো নীল নকশার বিরুদ্ধে পাহাড়া দিতে হবে, ধ্বংস করতে হবে আর কোনোভাবেই আমরা আমাদের সতর্কতায় ঢিলে দিতে পারিনা। এই উপলব্ধি বিষয়টির সব দিককে স্পর্শ করেনা। লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র উচ্ছেদকৃত ভুস্বামী আর পুঁজিপতি শ্রেণীসমূহের পুন:প্রতিষ্ঠার আশাকেই শুধু প্রতিনিধিত্ব করেনি, বরং সমাজতান্ত্রিক সমাজের ভেতরে জন্ম নেয়া নতুন বুর্জোয়া উপাদানগুলোর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার আশাকেও। এই চক্রের সদস্যদের কিছু বৈশিষ্ট ছিল নতুন জন্ম নেয়া বুর্জোয়া উপাদানের, আর বস্তুত তাদের অনেকেই ছিল এমন উপাদান। তাদের কিছু শ্লোগান সেই সব বুর্জোয়া উপাদান ও তাদের চাহিদাকে পুরণ ও প্রতিফলিত করেছে যারা পুঁজিবাদের পথ গ্রহণ করতে চায় পুঁজিবাদ বিকাশের লক্ষ্যে। এই শেষের দিকটি মূর্তভাবে আমাদের আরো বিশ্লেষণের দাবী করে। সভাপতি মাও ব্যাখ্যা করেন-
“লেনিন বলেন, 'ক্ষুদে উৎপাদন অবিরত, প্রতি দিন, প্রতি ঘন্টায়, স্বত:স্ফূর্তভাবে আর ব্যাপকভাবে পুঁজিবাদ ও বুর্জোয়ার জন্ম দেয়'। এটা শ্রমিকদের একটি অংশের মধ্য আর পার্টি সদস্যদের একটি অংশের মধ্যেও ঘটে। উভয়ত সর্বহারা শ্রেণীর সারিতে আর রাষ্ট্রের অঙ্গগুলোর মধ্যে এমন লোক আছে যারা বুর্জোয়া স্টাইলের জীবন যাপন করেন।”
লিন পিয়াও পার্টি-বিরোধী চক্রের কেউ কেউ ছিলেন এমন নতুন জন্ম নেয়া বুর্জোয়া ও পুঁজিবাদের প্রতিনিধি। তাদের মধ্যে লিন লি কুও [লিন পিয়াওয়ের পুত্র] আর তার ক্ষুদ্র 'যুদ্ধ জাহাজ' [তাদের গোপন সংগঠনের কোড নাম] ছিল হাড়ে মজ্জায় সমাজতন্ত্র বিরোধি বুর্জোয়া উপাদান এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজে জন্ম নেয়া প্রতিবিপ্লবী। নতুন বুর্জোয়া উপাদানসমূহের রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক উৎস ছিল বুর্জোয়া প্রভাবের অস্তিত্ব এবং আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ ও সংশোধনবাদের প্রভাবের অস্তিত্ব, যেখানে তাদের অস্তিত্বের পরম অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রদত্ত হয় বুর্জোয়া অধিকারের অস্তিত্ব দ্বারা। লেনিন ব্যাখ্যা করেন-
“কমিউনিস্ট সমাজের প্রথম পর্বে (সাধারণত যাকে সমাজতন্ত্র বলা হয়ে থাকে) এ বুর্জোয়া অধিকারকে তার সমগ্রতায় বিলোপ করা হয় না; বরং অংশত, কেবল যতটুকু অর্থনৈতিক বিপ্লব এ পর্যন্ত অর্জিত হয় তার সমানুপাতে অর্থাৎ উৎপাদনের উপায়ের দিক থেকে। যাহোক, এর অন্য অংশগুলোর কথা বলতে গেলে এটা অব্যাহতভাবে অস্তিত্বশীল হয়; উৎপন্নের বন্টন আর সমাজের সদস্যদের মধ্যে শ্রমের বন্টনের সঞ্চালক ক্ষমতায় (নির্ধারক উপাদান) এটা অব্যাহতভাবে অস্তিত্বশীল থাকে। ‘যে কাজ করেনা সে খেতে পায়না’ এই সমাজতান্ত্রিক নীতি ইতিমধ্যেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে; অন্য সমাজতান্ত্রিক নীতি ‘শ্রম অনুযায়ী উৎপন্ন'ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু এটা এখনও কমিউনিজম নয় আর তা এখনও বুর্জোয়া অধিকার বিলোপ করে না যা অসম পরিমাণ শ্রম (সত্যিই যা অসম) এর বিনিময়ে সম পরিমাণ উৎপন্ন অসম ব্যক্তিকে দেয়।”
চেয়ারম্যান মাও ব্যাখ্যা করেন-
“চীন একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ। মুক্তির আগে সে মোটামুটি একটা পুঁজিবাদের মতো ছিল। এমনকি এখনও সে আট গ্রেড মজুরি প্রথা, কাজ অনুযায়ী বন্টন আর টাকার মাধ্যমে বিনিময় অনুশীলন করে যা পুরোনো সমাজের থেকে খুব বেশী পৃথক নয়। পার্থক্য হলো এই যে মালিকানা ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। আমাদের দেশ বর্তমানে একটা পণ্য প্রথা অনুশীলন করে আর মজুরী প্রথাও অসম, আট গ্রেড মজুরী প্রথা আছে। এসব সর্বহারা একনায়ত্বের অধীনে কেবল মাত্র বিধি নিষেধে আটকানো যায়।”
সমাজতান্ত্রিক সমাজে তখনো দুই ধরণের সমাজতান্ত্রিক মালিকানা বিরাজ করে, যথা- সমগ্র সামাজিক জনগনের মালিকানা আর যৌথ মালিকানা। এটা নির্ধারণ করে যে চীন বর্তমানে একটা পণ্য প্রথা অনুশীলন করছে। লেনিন ও সভাপতি মাও কৃত বিশ্লেষণ আমাদের বলে যে বুর্জোয়া অধিকার যা সমাজতান্ত্রিক প্রথার অধীনে বন্টন ও বিনিময়ের দিক থেকে অস্তিত্বমান হয়, তার উপর সর্বহারা একনায়ত্বাধীনে বিধি নিষেধ আরোপ করতে হবে যাতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় তিন বৃহৎ পার্থক্য যথা শ্রমিক ও কৃষকের মধ্যে, শহর ও গ্রামের মধ্যে এবং কায়িক ও মানসিক শ্রমের মধ্যে পার্থক্য ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা যায়; বিভিন্ন গ্রেডের মধ্যকার বৈষম্যকে কমিয়ে আনা হবে আর এমন পার্থক্যসমূহ দূর করার বস্তুগত ও মতাদর্শিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে সৃষ্টি করা হবে। আমরা যদি এই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বরং বুর্জোয়া অধিকারের সংহতকরণ, সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ করি আর সে যেসব বৈষম্য দাবী করে তার ফল হবে মেরুকরণ, অর্থাৎ বন্টনের প্রক্রিয়ায় অল্প কিছু লোক বর্ধিষ্ণু পণ্য ও টাকা অধিকার করবে কিছু বৈধ ও অনেক অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে; এমন বৈষয়িক প্রণোদনা দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে ধন সম্পদ অর্জনের পুঁজিবাদী ভাবধারা ও ব্যক্তিগত নাম আর অর্জনের জন্য লালায়িত হওয়া অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়বে; গণ মালিকানাকে ব্যক্তিগত মালিকানায় রূপান্তরের মতো ঘটনা, গুজব, আত্মসাৎ ও দুর্নীতি, চৌর্যবৃত্তি ও ঘুষ বাড়বে; পণ্য বিনিময়ের পুঁজিবাদী নীতি রাজনৈতিক জীবন ও পার্টি জীবনে ঢুকে পড়বে, সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পিত অর্থনীতিকে খাটো করবে আর পন্য ও টাকার পুঁজিতে রূপান্তর এবং শ্রম শক্তির পণ্যে রূপান্তরের মত পুঁজিবাদী শোষণের কর্মকান্ডের জন্ম দেবে; কিছু কিছু বিভাগ ও ইউনিট যেগুলো সংশোধনবাদী লাইন অনুসরণ করছে সেখানে মালিকানা ব্যবস্থার চরিত্রের মধ্যে পরিবর্তন হবে; শ্রমজীবী জনগণের উপর নিপীড়ন ও শোষণ চালানোর উদাহরণ পুনরায় ঘটবে। ফলে পার্টি সদস্য, শ্রমিক, স্বচ্ছল কৃষক আর রাষ্ট্রের অঙ্গগুলোর লোকেদের মধ্য থেকে জন্ম নেবে মুষ্টিমেয় সংখ্যক নতুন বুর্জোয়া উপাদান ও লুক্কায়িত যারা সর্বহারা শ্রেণী ও শ্রমজীবী জনগণের সাথে পুরোপুরি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমাদের শ্রমিক কমরেডরা একে সুন্দরভাবে বলেছেন “যদি বুর্জোয়া অধিকারকে বিধি নিষেধ দ্বারা আটকানো না হয়, সে সমাজতন্ত্রের বিকাশকে আটকাবে আর পুঁজিবাদের বৃদ্ধিতে সহযোগিতা দেবে।” যখন বুর্জোয়াদের অর্থনৈতিক সামর্থ একটা নির্দিষ্ট পরিমান বাড়ে, এর এজেন্টরা রাজনৈতিক শাসন দাবী করবে, সর্বহারা একনায়কত্ব ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উচ্ছেদের চেষ্টা করবে, সমাজতান্ত্রিক মালিকানাকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করবে আর প্রকাশ্যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পুন:প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ করবে। ক্ষমতায় আসামাত্র নতুন বুর্জোয়ারা প্রথমেই জনগণের উপর রক্তাক্ত নির্যাতন চালাবে আর মতাদর্শ ও সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রসমেত উপরিকাঠামোতে পুঁজিবাদ পুন:প্রতিষ্ঠা করবে; তারপর তারা প্রত্যেকের যে অনুপাতে পুঁজি ও ক্ষমতা আছে সেই অনুপাতে বন্টন চালাবে আর 'প্রত্যেককে শ্রম অনুযায়ী' এই নীতি স্রেফ একটা ফাঁকা কথায় পরিনত হবে; উৎপাদনের উপায়কে যে মুষ্টিমেয় নয়া বুর্জোয়ারা একচেটিয়াভাবে দখল করেছে তারা একইসাথে ভোগ্যপণ্য ও অন্যান্য উৎপন্ন বন্টনের ক্ষমতাকেও একচেটিয়াভাবে কুক্ষিগত করবে। এমনই হচ্ছে পুন:প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া যা ইতিমধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়নে সংঘটিত হয়েছে। বিশ্বাসঘাতক, নীতিহীন ও হীন কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়ার জন্য লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র যেভাবে ধন সম্পদ অর্জনের জন্য যেকোনো কিছুর প্রতি ঝুঁকেছে, লোভে উন্মত্ত হয়ে বুর্জোয়া রীতির জীবনের পিছনে ছুটেছে আর বুর্জোয়া অধিকারকে ব্যবহার করেছে তার অনেক উদাহারণের উপরই আলোকপাত করা হয়েছে আর সমালোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে তার প্রতিবিপ্লবী অভ্যুত্থানের কর্মসূচি 'প্রজেক্ট ৫৭১ এর পরিকল্পনা' থেকে সবচেয়ে বেশী পরিষ্কার হওয়া যায় যাতে লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র বিভিন্ন শ্রেণীর কিছু লোককে সর্বহারা একনায়কত্বকে বিরোধিতায় সাহায্য অথবা উৎসাহিত করতে নির্দিষ্টভাবে বুর্জোয়া ভাবধারাকে ব্যবহার করছে, অন্য কিছু নয়। অন্য কথায়, পুরোনো বুর্জোয়ার স্বার্থের সাথে আরো যে শ্রেণীর স্বার্থকে কর্মসূচি সেবা করে তা হচ্ছে বেশ কিছু নয়া বুর্জোয়া উপাদানসমূহ, আর অল্প কিছু লোক যারা বুর্জোয়া অধিকারকে পুঁজিবাদ বিকাশে ব্যবহার করতে চায়। এ থেকে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কেন কর্মসূচি সভাপতি মাও এর সর্বহারা বিপ্লবী লাইনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানায় আর আমাদের দেশে সর্বহারা একনায়ত্বাধীনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রক্রিয়ায় বুর্জোয়া অধিকারের উপর যে কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তার প্রতি নির্দিষ্ট তিক্ত ঘৃণা প্রকাশ করে। লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র দাপ্তরিক ক্যাডারদের ৭ মে ক্যাডার স্কুলে যাওয়াকে অপবাদ দিয়েছে 'ছদ্মবেশী বেকারত্ব' বলে; প্রশাসনের সরলীকরণ আর জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখাকে সে তুচ্ছ করে দেখায় ক্যাডারদের উপর আক্রমণ হিসেবে। সে মনে করে ক্যাডাররা হবে জনগণের পিঠে চেপে বসা রাজ রাজরা আর তাই তারা যখন যৌথ উৎপাদনশীল শ্রমে অংশ নেয় তারা হয় 'বেকার'। এর লক্ষ্য ছিল দাপ্তরিক শ্রমিকদের একটা অংশকে প্রলুব্ধ করা যারা বুর্জোয়া অধিকারকে সম্প্রসারিত করতে চায়, দাপ্তরিক পদ চায়, রাজা রাজরা হতে চায় আর যারা বুর্জোয়া রীতির জীবন রোগ দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত পার্টি লাইন ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিরোধিতা করতে। বুদ্ধিজীবিদের শ্রমিক ও কৃষকদের সাথে একাত্ব হওয়া আর গ্রামে যাওয়াকে লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র অপবাদ দিয়েছে 'ছদ্মবেশী জবরদস্তি শ্রমের মাধ্যমে সংস্কার' বলে। সজীবতা আর কমিউনিস্ট সচেতনতায় উচ্ছসিত তরুণ জনগণ গ্রুপের পর গ্রুপ গ্রামে গেছে। তিন প্রধান পার্থক্য কমিয়ে আনতে আর বুর্জোয়া অধিকারের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করতে এটা দুরগামী তাৎপর্যসম্পন্ন এক মহান উদ্যোগ। সকল বিপ্লবী জনগণ উদ্দিপনার সাথে একে প্রশংসা করেন যেখানে বুর্জোয়া মতাদর্শ দ্বারা কলুষিত যারা, নির্দিষ্টত যারা বুর্জোয়া ভাবধারার শেকল পড়েছে তারা একে বিরোধিতা করে। শ্রমিক ও কৃষকদের সাথে শিক্ষিত তরুণ জনগণের একাত্ম হওয়াকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হবে কি হবে না তা সাংহাই মেশিন টুল প্লান্টের পথ অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় বিপ্লব চালানো যায় কি না তার সাথে নির্ভরশীল সম্পর্কযুক্ত, উল্লেখিত পথটা হচ্ছে ছাত্রদের শ্রমিক কৃষকের অন্তর্ভুক্ত করা আর স্নাতকত্বের পর শ্রমিক কৃষকদের মধ্যে কাজ দেয়া। এর প্রতি লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র শ্রমজীবি জনগণের প্রতি তাদের ঘৃণাই শুধু প্রদর্শন করেনি বরং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে বিরোধিতা করতে বুর্জোয়া অধিকারের ভাবধারা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত কিছু লোকেদের প্রলুব্ধ করতে বুর্জোয়া অধিকারকে ব্যবহার করার তাদের পরিকল্পনাও প্রদর্শন করেছে। তাদের কর্মসূচি নিশানাবদ্ধ ছিল শহর ও গ্রামের মধ্যে, কায়িক ও মানসিক শ্রমের মধ্যে পার্থক্যকে বাড়ানো আর শিক্ষিত তরুণ জনগণকে অভিজাতদের এক নয়া স্তরে রূপান্তরিত করা, যাতে তাদের সমর্থন জয় করা যায় যারা তাদের প্রতিবিপ্লবী অভ্যুত্থানের জন্য বুর্জোয়া অধিকারের ভাবধারার দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিল। সংশোধনবাদী বৈষয়িক প্রণোদনাকে সমালোচনা করায় শ্রমিক শ্রেণী যে কমিউনিস্ট ভাবমানস প্রদর্শন করেছে তাকে লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র ঘৃণা করেছে 'ছদ্মবেশী শোষণ' বলে। লিন পিয়াও ছিল বৈষয়িক প্রণোদনার অন্ধ প্রবক্তা। সে তার শয়তানি নোটবুকে এমন আবর্জনা লিখেছে যে “বৈষয়িক প্রণোদনা এখনো প্রয়োজন”, “বস্তুবাদ - বৈষয়িক প্রণোদনা”, “উৎসাহ প্রদান - অফিসিয়াল পদ, বেতন, পক্ষ”। লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্রের একজন প্রধান সদস্যও লেখে যে “কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক আর বৈষয়িক লাভ ছিল উৎপাদন বাড়ানোর নির্ধারক চালিকা শক্তি”। উপরিতলে তারা টাকা ব্যবহারের প্রবক্তা ছিল শ্রমিকদের উৎসাহিত করতে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা শ্রমিকদের মধ্যে গ্রেডের বৈষম্যকে সীমাহীনভাবে বাড়াতে চেয়েছে শ্রমিক শ্রেণীর এক ক্ষুদ্র অংশকে দলে টানতে আর কিনে ফেলতে যাতে তাদের একটা সুবিধাভোগী অংশে রূপান্তর করা যায় যারা সর্বহারা একনায়কত্বের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করবে আর শ্রমিক শ্রেণীর ঐক্যকে বিভাজিত করবে। তারা শ্রমিকদের বুর্জোয়া বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গী দ্বারা কলুষিত করতে চেয়েছে আর বুর্জোয়া অধিকারের ভাবধারা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত সেইসব মুষ্টিমেয় শ্রমিকদের ব্যবহার করতে চেয়েছে সর্বহারা একনায়ত্বের বিরুদ্ধে তাদের সমর্থক শক্তি হিসেবে। লিন পিয়াও কোং বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে তরুণ শ্রমিকদের প্রলুব্ধ করতে মজুরী ব্যবহারে আর তাদের “উৎসাহ প্রদান - দাপ্তরিক পদ, বেতন, পক্ষে আনা” ছিল একটা শয়তানি পরিকল্পনা। নেতিবাচক উদাহরণের মাধ্যমে এটা আমাদের দেখায় যে তরুন ও শ্রমিক বিশেষত যারা ক্যাডার হয়েছেন তাদের বুর্জোয়াদের বৈষয়িক উৎসাহ প্রদানকে আর বুর্জোয়া অধিকারের ভাবধারার দ্বারা বিভিন্ন আকৃতিতে প্রদত্ত তোষামোদকে সচেতনভাবে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাদের বজায় রাখতে হবে আর কার্যকর করতে হবে বীরত্বের সাথে লড়ার কমিউনিস্ট বিপ্লবী ভাবমানস সর্বহারা শ্রেণী ও মানবজাতির পূর্ণ মুক্তির জন্য আর মার্কসবাদী-লেনিনবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গী দ্বারা নিজেদের সজ্জিত করতে সচেষ্ট হতে হবে, তাদের কখনো অভিভূত ও হালকা মানসিকতাগ্রস্থ হওয়া যাবেনা পন্যের রঙীন দুনিয়া, টাকার দ্বারা বিনিময়, স্থুল তোষামোদী, খোশামোদি আর উপদলবাদ দ্বারা যাতে তারা লিন পিয়াওয়ের মতো রাজনৈতিক প্রতারক অথবা সমাজের ভুস্বামী ও বুর্জোয়া উপাদানসমূহের দ্বারা না ঠকেন। তাদের কথা ভাবার ছদ্মবেশে এই সব লোকেরা তরুণ শ্রমিকদের প্রকৃতপক্ষে প্রণোদনা দিচ্ছে তাদের পুঁজিবাদের পথে নিয়ে যেতে। তাই তাদের বলা যায় রাজনৈতিক দুষ্কর্মে সহায়তাকারী। নতুন জন্ম নেয়া বুর্জোয়া উপাদানেরা প্রকাশ্যে আইন ভাঙছে যেখানে দীর্ঘকালের ধূর্ত বুর্জোয়া উপাদানেরা পেছন থেকে তাদের পরিচালনা করছে, এটাই আজকের সমাজের শ্রেণী সংগ্রামে সাধারণ ঘটনা। অপরাধ করছে যেসব দুর্নীতিগ্রস্থ তরুণ জনগণ তাদের বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে আমরা পেছন থেকে সহায়তাকারীদের ওপর আক্রমণে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করি। আমাদের এই নীতির প্রতি অব্যাহতভাবে বিশ্বস্ত থাকতে হবে। বুর্জোয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে পরিষ্কার অবস্থান নিয়ে বেশ কিছু তরুণ শ্রমিক আজকের দিনের সংগ্রামের সামনের সারিতে এসে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের অতি অবশ্যই তাদের সমর্থন করতে হবে আর সংগ্রামে তাদের অভিজ্ঞতাকে সারসংকলন করতে হবে। এই যে লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র সমালোচনা করে যে “কৃষকদের খাদ্য ও কাপড়ের অভাব” ও এই যে সশস্ত্র বাহিনীতে ক্যাডারদের “জীবন মান” খারাপ হয়ে যাচ্ছে আর যে রেড গার্ডেরা চিন্তা করা, কথা বলা ও পথ উজ্জ্বল করার সাহসিকতার যে ভাবমানস দেখিয়েছে ও মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় বুর্জোয়াদের সমালোচনার কর্মকান্ড ও বিপ্লব করেছে তাদের “প্রতারিত করা হচ্ছে আর ব্যবহার করা হচ্ছে” এ সবেরই লক্ষ্য ছিল সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার নেতিকরণ করা আর পার্টির গণলাইনের নেতিকরণ করা, বুর্জোয়ার উপর সর্বহারা শ্রেণীর একনায়ত্বকে নেতিকরণ করা, বুর্জোয়া অধিকারকে সম্প্রসারণ করা আর পুঁজিবাদ পুন:প্রতিষ্ঠা করা। কৃষকদের “খাদ্য ও বস্ত্রের অভাব” এই অপবাদ লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র রটনা করে যাতে কৃষকরা “সবকিছু খেয়ে ফেলে আর সবকিছু বিভক্ত করে” যাতে সমাজতান্ত্রিক যৌথ অর্থনীতিকে খাটো ও বিলোপ করা যায়। যদি এই লাইনে সবকিছু ঘটতো, মুষ্টিমেয় কিছু লোক নয়া বুর্জোয়ায় পরিণত হতো আর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পুঁজিবাদী শোষণ ভোগ করতো। তাহলে পরিস্থিতি তেমন হতো যেমনটা পুঁজিবাদের পথ গ্রহনকারী গ্রামের ভুস্বামী, ধনী কৃষক আর স্বচ্ছল মাঝারি কৃষকদের একটা অংশ চেয়ে আসছে। এ পর্যন্ত আমরা দেখি লিন পিয়াও 'প্রকৃত সমাজতন্ত্র নির্মাণ' বলতে কী বুঝিয়েছে। এর অর্থ ছিল সমাজতন্ত্রের সাইনবোর্ডের অধীনে বুর্জোয়া অধিকারের সম্প্রসারণ যাতে পুঁজিবাদের পথ গ্রহণে আগ্রহী নয়া বুর্জোয়া উপাদানসমূহ, কতিপয় উপদল আর গ্রুপিং তা পায়, উচ্ছেদকৃত ভুস্বামী আর পুঁজিবাদী শ্রেণীসমূহের সাথে ঘোঁট পাকিয়ে সবকিছু তাদের কমান্ডের অধীন আর শাসনের অধীন নিতে পারে, সর্বহারা একনায়ত্ব উচ্ছেদ করতে পারে আর পুঁজিবাদ পুন:প্রতিষ্ঠা করতে পারে। লিন পিয়াও আর তার মতো লোকেরা ছিল এদের রাজনৈতিক প্রতিনিধি। লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্রের 'প্রজেক্ট ৫৭১ এর পরিকল্পনা' না আকাশ থেকে পড়েছে, না তা ছিল স্বঘোষিত সুপার প্রতিভাদের সহজাত; বরং তা ছিল সামাজিক অস্তিত্বের প্রতিফলন। মূর্তভাবে বলতে গেলে এই যে চক্র যারা তাদের প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া অবস্থান থেকে প্রতিফলিত করে অসংস্কারকৃত ভুস্বামী, ধনী কৃষক, প্রতিবিপ্লবী, খারাপ উপাদান ও দক্ষিণপন্থীদের দাবির - যারা জনগণের স্রেফ কয়েক শতকরা আর মুষ্টিমেয় সংখ্যক নয়া বুর্জোয়া উপাদানসমূহের দাবি আর তাদের দাবি যারা নয়া বুর্জোয়া উপাদান হতে বুর্জোয়া অধিকার দাবি করে। অন্যদিকে জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগ বিপ্লবী জনগণের সমাজতান্ত্রিক পথের প্রতি বিশ্বস্ততার দাবিকে এটা বিরোধিতা করে। এই চক্রের সদস্যরা প্রতিফলনের বস্তুবাদী তত্ত্বকে বিরোধিতা করতে ভাববাদী পদ্ধতি ব্যবহার করে; যাহোক, প্রতিফলনের বস্তুবাদী তত্ত্বকে ব্যবহার করতে হবে প্রতিবিপ্লবী ভাবধারার জন্ম কিভাবে হলো তা ব্যাখ্যা করতে। লিন পিয়াওয়ের মতো লোকেরা যদি ক্ষমতায় আসতে পারে, কেন তাদের পক্ষে সহজ হবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা চালু করতে? এর কারণ হচ্ছে আমাদের সমাজতান্ত্রিক সমাজে এখনো শ্রেণী বিরাজমান, এখনও পুঁজিবাদ জন্ম দেয়ার মাটি ও পরিস্থিতি বিরাজমান। ক্রমান্বয়ে এই মাটি ও শর্তসমূহ হ্রাস করতে আর চূড়ান্তত তাদের সকলকে একসাথে বিলোপ করতে আমাদের সর্বহারা একনায়কত্বধীনে বিপ্লব অব্যাহত রাখতে হবে। এটা সেই কর্তব্য যা সর্বহারার অগ্রপথিকেরা সভাপতি মাওয়ের বিপ্লবী লাইনের দ্বারা পরিচালিত হয়ে সম্পাদন করতে পারেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কেবল দৃঢ় ও অদম্য প্রচেষ্টার দ্বারা। তাই আমাদেরক পার্টির মৌলিক লাইনের প্রতি অনুগত থাকতে হবে, শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে হবে, শ্রমিক-কৃষক জোট সংহত করতে হবে, যাদের ঐক্যবদ্ধ করা যায় এমন সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, ব্যাপক বিপ্লবী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে আর তাদের নেতৃত্ব দিতে হবে যাতে তারা শ্রেণী শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রামে আর শ্রেণী সংগ্রাম, উৎপাদন সংগ্রাম আর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার তিন মহান সংগ্রামে সচেতনভাবে নিজেদের পুনর্গঠন করতে পারেন। তাই আমাদের অবশ্যই সমগ্র জনগণের সমাজতান্ত্রিক মালিকানা এবং শ্রমজীবি জনগণের সমাজতান্ত্রিক যৌথ মালিকানাকে সংহত ও বিকশিত করতে হবে, বুর্জোয়া অধিকারের পুন:প্রতিষ্ঠা প্রতিরোধ করতে হবে যা মালিকানা ব্যবস্থার দিক থেকে ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়েছে আর মালিকানার রূপান্তরের করণীয়'র যে অংশটা এখনো অসম্পাদিত রয়েছে তা সম্পাদন করতে পারি ক্রমে ক্রমে আর একটা দীর্ঘ সময়কাল জুরে; আর উৎপাদন সম্পর্কের অন্য দু'টো দিক যথা মানুষে মানুষে সম্পর্ক আর বন্টন সম্পর্কে বুর্জোয়া অধিকারের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করতে পারি, বুর্জোয়া অধিকারকে সমালোচনা করতে পারি আর সেই ভিত্তিকে অব্যাহতভাবে দুর্বল করতে পারি যা পুঁজিবাদ জন্ম দেয়। সুতরাং আমাদের উপরিকাঠামোয় বিপ্লবে লেগে থাকতে হবে, সংশোধনবাদী আর বুর্জোয়াদের উপর আমাদের সমালোচনাকে গভীর করতে হবে আর বুর্জোয়াদের উপর সর্বহারা শ্রেণীর সার্বিক একনায়কত্ব অর্জন করতে হবে। আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এ দেশের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের সময় বক্তৃতায় সভাপতি মাও বলেন-
“আমরা পঞ্চাশ বছর ধরে আন্তর্জাতিক গাইছি, আর দশবার এমন ঘটনা ঘটেছে যে কেউ না কেউ আমাদের পার্টিতে ভাঙনের জন্য কাজ করেছে। আমি মনে করি এরকম আরো দশ, বিশ বা ত্রিশবার এমন ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি কি বিশ্বাস করেন? আচ্ছা, আপনি বিশ্বাস না করলেও আমি তা করি। কমিউনিজম কায়েম হওয়ার পর কি কোন সংগ্রাম হবে না? আমি মনে করি হবে। তারপরও সংগ্রাম হবে, যদিও তা হবে নতুন ও পুরাতনের মধ্যে, সঠিক ও ভুলের মধ্যে। এমনকি এখন থেকে লক্ষ লক্ষ বছর পরও ভুল কোন কাজে লাগবেনা আর তা পরাজিত হবে।”
লেনিন বলেন-
“হ্যাঁ, ভুস্বামী আর বুর্জোয়াদের উচ্ছেদ করে আমরা পথ পরিষ্কার করেছি কিন্তু আমরা সমাজতন্ত্রের কাঠামো নির্মাণ করিনি। বুর্জোয়াদের একটা প্রজন্মকে আমরা জমি থেকে সরিয়েছি, কিন্তু নতুন প্রজন্ম ইতিহাসে অব্যাহতভাবে আবির্ভুত হয়, যতক্ষণ জমি তাদের জন্ম দেয়, যেকোনো সংখ্যায় তা বুর্জোয়াদের জন্ম দেয়। যেমন যারা পুঁজিবাদের উপর বিজয়কে ক্ষুদে মালিকের দৃষ্টিতে দেখে "তারা এটা দখল করেছে, আমাকেও করতে দাও" সত্যি এরা সবাই হচ্ছে বুর্জোয়াদের নতুন প্রজন্মের উৎস।”
লেনিন যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন তা হচ্ছে সমাজের শ্রেণীসংগ্রামের দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতি; সভাপতি মাও যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তা হচ্ছে পার্টির মধ্যে সমাজের শ্রেণীসংগ্রামের প্রতিফলন হিসেবে দুই লাইনের সংগ্রামের দীর্ঘস্থায়ী চরিত্র। আমাদের অবশ্যই এমন শ্রেণীসংগ্রাম ও দুই লাইনের সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে আর অব্যাহতভাবে পরাজিত করতে হবে বুর্জোয়াদের আর সংশোধনবাদ, বিভক্তি, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জন্য কর্মরত তার এজেন্টদের। কেবল এভাবেই আমরা ক্রমান্বয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারি যাতে বুর্জোয়াদের পক্ষে অস্তিত্ব লাভ করা অসম্ভব হয় অথবা নতুন বুর্জোয়াদের উদ্ভব অসম্ভব হয় আর আমরা চূড়ান্তত শ্রেণী বিলোপ করতে পারি। সর্বহারা একনায়ত্বের সমগ্র ঐতিহাসিক পর্ব জুড়ে এমনই মহান লক্ষ্য সম্পাদিত করতে হবে। বুর্জোয়া ভাবধারার ধ্বংসের মাধ্যমে আর বুর্জোয়া অধিকারের অস্তিত্বের মাধ্যমে যে নতুন বুর্জোয়া উপাদানসমূহ আবির্ভূত হয় তাদের রয়েছে সাধারণত দু'মখো ও ঘাপটি মেরে থাকাদের রাজনৈতিক চরিত্র। সর্বহারা একনায়কত্বের অধীনে পুঁজিবাদী তৎপরতা পরিচালনার উদ্দেশ্যে তারা সর্বদাই একটা নির্দিষ্ট সমাজতান্ত্রিক সাইনবোর্ড তুলে ধরে; যেহেতু তাদের পুন:প্রতিষ্ঠাবাদী তৎপরতার উদ্দেশ্য এমন নয় যে তারা সম্পদের মালিক ছিল তা পুনরুদ্ধার করতে হবে বরং উৎপাদনের উপায় দখল করা যার মালিক তারা ছিল না, তাই সমগ্র জনগণের মালিকানাধীন অথবা যৌথ মালিকানাধীন সম্পদকে এক গ্রাসে গিলে ফেলার জন্য ও তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত মালিকানাধীনে স্থাপন করতে তারা বিশেষভাবে লোভী ও তাড়িত। লিন পিয়াও পার্টিবিরোধী চক্রের এমন বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমনটা প্রাচীন কিংবদন্তীতে চুংশান নেকড়ের মতো “তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করবে তখন যখন তোমার পথ তৈরি হয়েছে।” “লাল কামড়ার স্বপ্ন” এর এই দুই লাইন ব্যাখ্যা করে কীভাবে এক ধাবমান পশু সুন শাওসু সবকিছুর প্রতি ঝুঁকে পড়ে নিজেকে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে। এটা লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্রের প্রতি চমৎকারভাবে প্রযোজ্য হয়। নিজের পথ প্রাপ্তির আগের অবস্থায় অর্থাৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার অংশ প্রাপ্তির আগে সে পার্টি ও জনগণকে প্রতারিত করতে প্রতিবিপ্লবী দু'মুখো কৌশল নেয় আর গণআন্দোলনের শক্তিকে ব্যবহার করে তার নিজ স্বার্থকে সেবা করতে; এটা করতে সে দ্বিধা করেনি বিপ্লবী সাইন বোর্ড তুলে ধরতে অথবা বিপ্লবী শ্লোগান দিতে একইসাথে এগুলো বিকৃত করে। মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রথম দিকে সভাপতি মাও এক চিঠিতে লিন পিয়াও ও তার গ্যাঙের অন্তরের অন্তস্থলের অনুভূতির বিশ্লেষণ দেন “আমার মনে হয় তাদের সত্যিকার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভুতেদের লড়তে চুং কুয়েইকে ব্যবহার করা।” [চুং কুয়েই ভুতেদের বিতাড়িত করতে ক্ষমতা অর্জনে এক রূপকথার চরিত্র]। এটা ঘটনাকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে। এটা দরজাকে ধাক্কা দিয়ে ভাঙতে ইট ব্যবহার করার মতো, যখন কাজ শেষ হবে ইটের দরকার হবে না, তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হবে। প্রতিবিপ্লবী দু'মুখো হিসেবে কাজ করে এরা লাল পতাকাকে লাল পতাকা দিয়ে বিরোধিতা করে মুখের উপর মিষ্টি ভাষায় কথা বলে পিঠে ছুরিকাঘাত করে অথবা যেমনটা লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র নিজেরা স্বীকার করেছে “সভাপতি মাওয়ের পতাকা উড়ানো সভাপতি মাওয়ের শক্তির উপর আঘাত হানতে” এগুলো হচ্ছে এক ও একই উদ্দেশ্য সাধনে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রকাশ করা। যে মুহুর্তে লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র চিন্তা করেছে, তাদের ভাষায় “কয়েক বছরের প্রস্তুতির পর মতাদর্শিক, সাংগঠনিক ও সামরিক স্তরকে বিবেচনাযোগ্যভাবে গড়ে তোলা হয়েছে আর কিছু মাত্রায় মতাদর্শিক ও বস্তুগত ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে” তারা তাদের নিজেদের পথ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের অধীন বিভাগগুলোতে তারা সমাজতান্ত্রিক গণ মালিকানাকে লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্রের ব্যক্তিগত মালিকানায় রূপান্তর করে। যত বেশি বেশি তারা নিজেদের পথ গ্রহণ করার অবস্থায় আছে তারা তত বেশি বেশি তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্যকে উন্মোচন করতে থাকে যেগুলো সেই অনুপাতে আরো বেড়ে উঠতে বাধ্য ছিলো, যেমন পুঁজির সঞ্চয়ে বুর্জোয়াদের ক্ষুধা সীমাহীনভাবে বাড়তে থাকে। বুর্জোয়াদের বিশ্লেষণে মার্কস বলেছেন “পুঁজিবাদী হিসেবে সে কেবল ব্যক্তিতে রূপায়িত পুঁজি। তার আত্মা হচ্ছে পুঁজির আত্মা।” পার্টির ভেতর এক বুর্জোয়া এজেন্ট লিন পিয়াও এর আত্মা হচ্ছে পুরনো বুর্জোয়ার আত্মা ভিন্ন অন্য কিছু নয় যে উচ্ছেদ হওয়ার পরও ফিরে আসার স্বপ্ন দেখে আর এক নয়া বুর্জোয়ার আত্মা যে জন্ম নিচ্ছে আর শাসন করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা নিচ্ছে। এক শ্রেণী বিশ্লেষণ পরিষ্কার করে দেয় যে লিন পিয়াও ও তার গং এর বিকৃত ও প্রতিবিপ্লবী তৎপরতার মূল কারণ হচ্ছে কনফুসিয়াস ও মেনসিয়াসের মতবাদের বুলি আওড়ানো, পার্টি ও চীনা জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকরা করা আর সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের কাছে যাওয়া, কনফুসিয়াসকে পুজা করেছে ও দেশের সাথে বেঈমানী করেছে যে চীনা মুৎসুদ্দি-বুর্জোয়া তার মত তারাও একই নোংরা খেলায় লিপ্ত ছিল, এখানে যে প্রতিবিপ্লবী অভ্যুত্থানের তারা পরিকল্পনা করেছে তা ছিল পৃথিবীর অনেক দেশে বুর্জোয়ারা বহুবার যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে এবং আজকেও করছে তার কার্বন কপি।আমাদের কর্তব্য হচ্ছে একদিকে যে মাটি থেকে বুর্জোয়া ও পুঁজিবাদের জন্ম হয় তা খুড়ে ফেলে দেয়া, আর অন্যদিকে ঠিক সময়মত বিষয়টি জানার সক্ষমতা অর্জন করা যে লিন পিয়াওয়ের মতো নতুন বুর্জোয়ারা আবির্ভূত হচ্ছে। একারণে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সে তুঙ চিন্তাধারা অধ্যয়ন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি মার্কসবাদের পরিচালনা থেকে সরে যাই, আমরা উপরোক্ত দুই কর্তব্য সম্পাদন করতে পারিনা। অধিকন্তু যখন একটি সংশোধনবাদী ধারার চিন্তাধারা উপরিতলে আবির্ভুত হয়, কেউ এতে সামিল হতে পারে অথবা অন্ধভাবে এই গ্যাংস্টারদের নৌকায় যাত্রী হতে পারেন তার নিজের মনে বুর্জোয়া অধিকারের ভাবধারা অথবা একে চিনতে না পারার কারণে। তাই যদি না হবে তাহলে কিছু লোককে কেন দেখা যাবে একটি সংশোধনবাদী লাইন আবির্ভূত হলে তাকে অনুসরণ করতে? কেন পার্টির নবম কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে লিন পিয়াও এন্ড কোং ভাববাদ অবলম্বন করে ও এক হুল্লোড় তৈরী করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারলো? পার্টিকে বিভক্ত করা ও সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্বকে উচ্ছেদের লক্ষ্যযুক্ত লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্রের নগ্ন বাক্যগুলো কেন অল্প কিছু ক্যাডারদের মধ্যে বাজার পেলো? কেন ছোট বড় 'যুদ্ধ জাহাজ'গুলো খোলামেলাভাবে এমন পদ্ধতি ব্যবহার করলো যথা ভোজন করানো, উপহার দেয়া, বিশেষ দাপ্তরিক পদ নিবেদন ও অন্যান্য আনুকুল্য প্রদান করা একটা চক্র তৈরি করতে জনগণকে প্রলুব্ধ করতে, উপদলীয় কর্মকান্ড আর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে? কেন তারা তাদের শয়তানি নোটবুকে এমন আবর্জনা লেখে যে “রাজনীতিকে ঢেকে রাখতে দক্ষতাকে ব্যবহার করা” আর একে ব্যবহার করে প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা চালাতে তাদের রণকৌশল হিসেবে? এখানে এক গভীর শিক্ষা রয়েছে। ১৯৫৯ সালে পেং তেহ হুয়েই পার্টি বিরোধী চক্রকে বিরোধিতা করায় চেয়ারম্যান মাও ব্যাখ্যা করেন যে “বর্তমানে অভিজ্ঞতাবাদের মধ্যে প্রধান বিপদ নিহিত”। তাই আমাদের পড়তে হবে ও অধ্যয়ন করতে হবে অধ্যবসায় সহকারে। বিগত দশকে অথবা তার চেয়ে বেশী সময় ধরে সভাপতি মাও বহুবার এই মত তুলে ধরেছেন। তিনি জোর দেন উচ্চ পদস্থ ও মাঝারি পার্টি ক্যাডারগণ, প্রথমত পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্যকে “অধ্যবসায় সহকারে পড়তে হবে আর অধ্যয়ন করতে হবে যার যার স্তর অনুযায়ী আর মার্কসবাদের ভাল উপলব্ধি অর্জন করতে হবে।” তিনি এটাও জোর দিয়েছেন “সামনের কয় বছর মার্কসবাদ-লেনিনবাদের প্রচারে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে”। লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্রের ধ্বংসের পর সভাপতি মাও পুনরায় বলেন “আমি আনুষ্ঠানিকভাবে কমরেডদের উপদেশ দেই কিছু পড়ার জন্য।” আর সম্প্রতি সর্বহারা একনায়কত্ব নিয়ে কথা বলার সময় তিনি আবারো এতে জোর দিয়েছেন। কত হৃদয়স্পর্শী এই গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ শিক্ষা! পার্টির সকল কমরেডগণ, বিশেষত উচ্চ পদস্থ ক্যাডারগণকে অধ্যবসায় সহকারে অধ্যয়ন ও পড়া আঁকড়ে ধরতে হবে সর্বহারা একনায়কত্বকে সংহত করতে মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যাপার হিসেবে। সর্বাগ্রে তাদের নিজেদের ভালভাবে অধ্যয়ন করতে হবে আর গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন, স্তালিন আর সভাপতি মাও এর প্রতিপাদ্যগুলোকে; তাদের সর্বহারা একনায়কত্বের উপর প্রধান প্রধান রচনাগুলোকে, তত্ত্ব ও অনুশীলনকে সমন্বিত করে তাদের প্রশ্নটিকে ব্যখ্যা করতে হবে আর উভয়ত মতাদর্শিকভাবে ও কর্মকান্ডে নিজেদের মুক্ত করতে হবে বুর্জোয়া ভাবধারা ও কাজের রীতি থেকে যা হচ্ছে জনগণবিচ্ছিন্ন - যাতে জনগণের একজন হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করা যায়, উদীয়মান নতুন সমাজতান্ত্রিক জিনিসের ধারক বাহক সত্যিই হওয়া যায় আর পুঁজিবাদ কৃত ধ্বংসযজ্ঞকে সমালোচনায় ভালো হওয়া যায় আর একে সাহসের সাথে প্রতিরোধ করা যায়। বিগত কয়েক দশক ধরে বিকাশমান সহজ সরল জীবন আর কঠিন সংগ্রামের আমাদের পার্টির গৌরবোজ্জ্বল ট্রাডিশনকে আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করতে হবে আর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের পরিস্থিতির এক পরিষ্কার উপলব্ধি থাকতে হবে আর অর্থনৈতিক কর্মনীতিসহ কর্মনীতির অধ্যয়ন করতে হবে। বিপ্লব আঁকড়ে ধরা ও উৎপাদন বাড়ানোর নীতির প্রতি আমাদের বিশ্বস্ত থাকা উচিত, অন্যান্য কাজ ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি থাকতে হবে - একটা নীতি যা অনুশীলনে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। দুই ধরণের দ্বন্দ্বকে বোঝাপড়ায় ও অল্প কিছু খারাপ উপাদানের উপর নিখুঁত ও প্রচণ্ড আঘাত হানায় মনোযোগ প্রদান করতে হবে; জনগণের মধ্যে বুর্জোয়া প্রভাবের ব্যাপারে বলা যায়, একে দূর করতে হবে “ঐক্য-সমালোচনা-ঐক্য” সূত্র প্রয়োগ করে প্রধানত অধ্যয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধির মত পদ্ধতি দ্বারা, অগ্রসর জিনিসকে সমর্থন করে যা পুঁজিবাদের দৃঢ় বিরোধী, অতীত দুঃখ-দুর্দশাকে স্মরণ করা, আজকের সুখের বিপরীতে তাকে তুলনা করা, জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও শিক্ষিত করা আর সমালোচনা ও আত্ম-সমালোচনা করা, এসবই ৯৫ ভাগ ক্যাডার ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে। পুঁজিবাদী প্রবণতাগুলোকে সমালোচনায় জনমত সৃষ্টি করা দরকার, সংখ্যাগরিষ্ঠকে জয় করা, সচেতনতা জাগানো আর সক্রিয় পথ প্রদর্শন করা। মুষ্টিমেয় যারা পুঁজিবাদে মোহগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ধারালোভাবে বলতে হবে “কমরেডগণ, এখনই তোমাদের পথ পরিবর্তন কর!” যেমনটা এই প্রবন্ধের শুরুতে আমরা ব্যাখ্যা করেছি, লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র সমগ্র দেশের জনগণ থেকে অতি বিচ্ছিন্ন ছিল। শ্রেণীগত উৎসের দিক থেকে এর উদ্ভব সন্ধান করে আমরা সেই মাটি ও শর্তসমূহের দিকে নির্দেশ করি যা লিন পিয়াও পার্টিবিরোধী চক্রকে সৃষ্টি করেছে। বস্তুত এই দিকটির কথা বলার পর আমাদের অবশ্যই এটাও দেখাতে হবে যে লিন পিয়াও পার্টি বিরোধী চক্র হচ্ছে দুর্বল, সারবস্তুতে সকল প্রতিক্রিয়াশীলদের মতই এটা কাগুজে বাঘ। এই চক্রের সকল প্রতিবিপ্লবী তৎপরতাই তৈরি করেছে পরাজয় আর কানাগলির রেকর্ড, জয়ের নয়। সমাজতান্ত্রিক সমাজ পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করবেই, আর কমিউনিজম সারা দুনিয়া জুড়ে জয়লাভ করবেই; এটা মানুষের ইচ্ছানিরপেক্ষ বস্তুগত নিয়ম। যেহেতু সমাজতান্ত্রিক সমাজ পুরোনো সমাজ থেকে জন্ম নিয়েছে, সে তাই প্রতিটি দিক থকে - অর্থনৈতিক, নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তি পুরোনো সমাজের জন্ম চিহ্ন বহন করছে এখনও, যার গর্ভ থেকে সে জন্ম নিয়েছে। এটা আশ্চর্যের কিছু নয়। বিগত ২৫ বছরের ইতিহাস আমাদের বলে যে যতক্ষণ আমরা সর্বহারা একনায়কত্বকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরি, সভাপতি মাওয়ের সর্বহারা একনায়কত্বাধীনে বিপ্লব অব্যাহত রাখার তত্ত্বের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য সভাপতি মাও আমাদের যে লাইন, নীতি ও কর্মনীতি প্রদান করেছেন তা বজায় রাখবো, আমরা শ্রেণীশত্রুর প্রতিরোধ ভাঙতে, ধাপে ধাপে এই জন্মচিহ্ন মুছে ফেলতে এবং অব্যাহতভাবে পরিষ্কার বিজয় অর্জন করতে সক্ষম। বর্তমান চমৎকার পরিস্থিতি আমাদের সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের উন্নতি থেকে অধিকতর উন্নতি দ্বারা চিহ্নিত যা সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের তীব্র বিপরীত - যারা আভ্যন্তরীণভাবে ভেঙে যাচ্ছে আর দেশে বিদেশে প্রতিকূলতা মোকাবেলা করছে। তত্ত্বের প্রশ্নে সভাপতি মাওয়ের সর্বশেষ নির্দেশনা সর্বহারা একনায়কত্বের ঐতিহাসিক কর্তব্যকে আর তা সম্পাদনের উপায় তত্ত্বে ও অনুশীলনে অধিকর পুর্ণতায় উপলব্ধি করতে আমাদের সক্ষম করে তুলবে। সর্বহারা একনায়কত্বকে সংহত করতে, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে গভীর করতে, সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের বিকাশকে আর দেশব্যাপী স্থিতিশীলতা ও ঐক্যকে এগিয়ে নিতে বিরাটাকারে সাহায্য করবে। চীনের কমিউনিস্টরা আস্থায় ভরপুর। আস্থায় ভরপুর সমগ্র দেশের সর্বহারা শ্রেণী ও বিপ্লবী জনগণও। একক হিসেবে একতাবদ্ধ ও উচ্চ উদ্যমে ভরপুর, তারা পার্টির নেতৃত্বের অধীনে সংগ্রাম পরিচালনা করছেন সংশোধনবাদকে মোকাবেলা ও এর উদ্ভবকে প্রতিরোধ করতে। চীনা বিপ্লবের ইতিহাস হচ্ছে আঁকাবাঁকা পথে বিপ্লবী জনগণের এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস আর বারংবার শক্তি প্রদর্শনের পর প্রতিক্রিয়াশীলদের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। যেমনটা সভাপতি মাও সারসংকলন করেন-
“চীনে ১৯১১ সালে সম্রাট উচ্ছেদ হওয়ার পর কোন প্রতিক্রিয়াশীলই বেশী দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। সবচেয়ে দীর্ঘতম ছিল কেবল কুড়ি বছর (চিয়াং কাই শেক), কিন্তু জনগন যখন বিদ্রোহে জেগে উঠে তখন সে-ও উৎখাত হয়। সান ইয়াত সেনের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে হোয়াম্পা একাডেমী পরিচালনা করে আর নিজের চারপাশে একগাদা প্রতিক্রিয়াশীল সমাবেশিত করে চিয়াং কাই শেক ক্ষমতায় আরোহন করেছিল। সে যখন কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে দাঁড়ালো তখন বাস্তবে সমগ্র ভুস্বামী শ্রেণী ও বুর্জোয়ারা তাকে সমর্থন করলো। অধিকন্তু কমিউনিস্ট পার্টি সেসময় অনভিজ্ঞ ছিল। তাই পরমানন্দে সে অস্থায়ী শাসন পায়। উক্ত কুড়ি বছরে অবশ্য সে কখনোই একীভূতকরণ অর্জন করতে পারেনি। যুদ্ধ হয়েছে কুওমিন্তাং আর কমিউনিস্টদের মধ্যে, কুওমিন্তাং আর বহুবিধ যুদ্ধবাজ চক্রের মধ্যে, চিন-জাপান যুদ্ধ আর চুড়ান্তত চার বছরের ব্যাপক গৃহযুদ্ধ যা তাকে কয়েকটি দ্বীপমালায় নিক্ষেপ করেছে। যদি দক্ষিণপন্থীরা চীনে কমিউনিস্টবিরোধী অভ্যুত্থান ঘটাতো, আমি নিশ্চিত তারাও শান্তি পেতো না, খুব সম্ভব তারা বেশী দিন থাকতে পারতো না, শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী বিপ্লবীরা এটা কখনোই সহ্য করবে না।”
উপসংহার হচ্ছে এখনও দু'টি বারংবার পুনরাবৃত্ত বাক্য "ভবিষ্যত উজ্জ্বল; পথটা আঁকাবাঁকা।” আসুন সভাপতি মাও নির্দেশিত পথে সাহসের সাথে এগিয়ে চলি!
Comments