তথাকথিত বামপন্থী লেখক আহমদ ছফা (পর্ব-এক)
যারা আহমদ ছফাকে বামপন্থী লেখক হিসেবে প্রচার করেন এই পর্বে তাদের ভ্রান্ত ধারণাগুলো দেখানো হবে। উনি উনার ডায়েরিতে শামীম শিকদারের বড়ো ভাইয়ের বিপ্লবী রাজনীতির প্রতি সমালোচনা করেছেন। শুধু তাই নয়, উনি মাওবাদী রাজনীতি নিয়েও কটাক্ষ করেছেন। উনি 'অলাতচক্র' উপন্যাসে নক্সালদের ব্যাপারে কটাক্ষ করেছেন। উনি 'যদ্যপি আমার গুরু' বইটিতে অকপটে উনার ট্রটস্কি প্রীতির কথা স্বীকার করেছেন এবং উনার গুরু রাজ্জাক স্যারের মুসলিম লীগ ও জিন্নাহ প্রীতির উল্লেখ করেছেন। উনার ভাইয়ের ছেলে তার মৃত্যুর পর ব্যক্তিগত ডায়েরি প্রকাশের কারণেই জানা যায় উনার কাছে নারীরা ছিল নিছক যৌন সামগ্রী। ডায়েরিতে উনি হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর পিছে ফরহাদ মজহার ছাড়াও আরো কিছু বামকে দায়ী করে রাজনৈতিক আবরণ দেয়ার চেষ্টা করেন ঘটনাটাকে। উল্লেখ্য, হুমায়ুন আজাদ উগ্র সমাজতন্ত্র বিদ্বেষী ছিলেন এবং উনার বিভিন্ন লেখায়ও তা উঠে এসেছে। হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবালের যেসব স্মৃতিচারণমূলক লেখায় তাদের অতি প্রিয় আনিস সাবেত ভাইয়ের প্রশংসা এসেছে, তার সাথে ছফা সাহেব সিরাজ সিকদারের বোনকে নিয়ে অশ্লীল রসিকতা করতেন যা লিখে গেছেন ডায়েরিতে। শেখ মুজিব সংক্রান্ত প্রবন্ধে তিনি চারু মজুমদারকে সরাসরি ’সন্ত্রাসী’ বলেছেন। তিনি শেখ মুজিবের নানা কুকর্মের কথা স্বীকার করলেও সেগুলো ইনিয়ে বিনিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছেন। ১৯৯৬ সালে 'জনসমাজ' নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বুকলেট লিখে ছাপান। তিনি ধানমন্ডি এলাকা থেকে এই দলের ব্যানারে নির্বাচন করতে চাইলেও এসময় অসুস্থ হয়ে কয়েক বছর পর মারা যান।
আরো একটা তথ্য দেয়া যাক এই লেখায়। উপমহাদেশের অনেক বাম এখনো মাদক সম্রাট পাবলো এসকোবারকে বিপ্লবী মনে করে। গ্যাবিরেল গার্সিয়া মার্কেজ উনার 'নিউজ অব এ কিডন্যাপিং' বইটিতে অজানা সব তথ্য দিয়েছেন এই খুনির ব্যাপারে। এই লোক মার্কিনিদের তৈরী ডানপন্থী সরকারের কাছে দাবী করেছিল তাকে সংসদ সদস্য বানাতে হবে। তারা রাজি না হওয়ায় সে সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায় আর বামেরা তাকে বানিয়ে দেয় কথিত বিপ্লবী!
তথাকথিত এই বামপন্থী বুদ্ধিজীবীর আরো কিছু অজানা দিক তার ডায়েরি থেকে দেখানো যাক। তিনি জাপানের রেড আর্মির গেরিলাদের সরাসরি 'দস্যু' হিসেবে সম্বোধন করেছেন। গাদ্দাফির মতো নারীলোভী, যে কিনা দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদগুলো ইচ্ছামতো পশ্চিমাদের কাছে পাচার করেছে, আহমদ ছফা তার প্রশংসায় গদগদ ছিলেন। তিনি মাওবাদকে 'ভ্রান্ত আদর্শ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন বিপ্লবীদের নাকি এই আদর্শের কারণে জীবন বরবাদ হয়! তিনি জাসদের নেতৃবৃন্দের সাথে কথিত ইসলামী পন্ডিতদের সংযোগ সাধনে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। 'পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ' বইটিতে তিনি স্বীকার করেছেন বস্তির বাচ্চাদের স্কুল তৈরির টাকাটা (দশ হাজার) তিনি নিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে আর সেজন্য তাকে ’ইসলামের দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধ’ কনসেপ্ট এর উপর বিশাল প্রবন্ধ লিখে দিতে হয়। তিনি মেজর জলিলের মতো হাফেজ্জী হুজুরের মুরিদ ছিলেন। এজন্য মেজর জলিলের মতোই তিনি মত প্রকাশ করেছেন ইসলামকে বাদ দিয়ে নাকি সমাজতন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব না! এছাড়া তিনি নার্সিসিজমে প্রবলভাবে আক্রান্ত ছিলেন যা পদে পদে প্রকাশ পেয়েছে তার বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক লেখায়। আহমদ শরীফ স্যারের মতামতকে শ্রদ্ধা না করে তার সঙ্গে তর্কের প্রসঙ্গ এসেছে, তার সামনে ইচ্ছা করে সিগারেট খাওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে ডায়েরিতে। যেই নারীর সঙ্গেই তার সাক্ষাৎ হোক না কেন, সবার আগে তিনি ঐ নারীর শরীর পর্যবেক্ষণ করতেন এবং সেক্স এর প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির কথাও তিনি স্বীকার করেছেন। এজন্য কোনো নারীর সাথে সেক্স করার সুযোগ না থাকলে তিনি হস্তমৈথুন করতেন অতিরিক্ত পরিমাণে। কোরানের স্টাইলে তিনি সাধারণ মানুষকে 'জন্মান্ধ' হিসেবে কটাক্ষ করে নিজের বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করার অনুপযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সাজ্জাদ শরিফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের সরকারকে ভারতীয় পুঁজিবাদের পরিবর্তে বিশ্ব পুঁজিবাদকে গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। এতে নাকি দেশের অর্থনীতির উন্নতি ঘটবে এবং কর্মসংস্থানও নাকি বৃদ্ধি পাবে! বিপ্লব রহমানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আহমদ ছফা বলেছেন শ্রেণী বৈষম্য ও শ্রেণী সংগ্রামের তত্ত্ব নাকি একদম বাজে! তিনি আরও বলেছেন, কমিউনিজম নাকি মানুষকে নতুনভাবে দাসত্ব করতে শেখায়! তিনি একই সাক্ষাৎকারে বলেছেন "স্তালিন ছিলেন বিপ্লবের সবচেয়ে অজ্ঞ, সবচেয়ে নিষ্ঠুর, সবচেয়ে ফ্যাসিস্ট۔۔۔۔"! তিনি পদে পদে আপত্তিকর 'উপজাতি' শব্দের উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের পাহাড়ি জাতিগুলোর প্রসঙ্গে বিভিন্ন লেখায়। বদরুদ্দীন উমর, ফরহাদ মজহার এর মতো বামেরা তার পাশে ছিল। 'আধুনিক আরবি-ফার্সি এবং আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষা' প্রবন্ধে তিনি মাদ্রাসা ব্যবস্থার গুণগান গেয়ে কেবল সামান্য সংস্কারের প্রস্তাব করেছেন। 'সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস' প্রবন্ধে টিপু সুলতান ও আজিমুল্লাহ'র প্রশংসা করলেও পুরো বিদ্রোহকে তিনি দেখেছেন হিন্দু রাজাদের রাজ্য ফিরে পেতে সৈনিকদের ব্যবহার করা হিসেবে। 'মহান প্রতিশোধ', 'প্রতিবেশী', 'অপূর্ব বিচার' শিরোনামে ছোটগল্পগুলোতে তিনি বায়েজিদ বোস্তামি, ইমাম আবু হানিফা, খলিফা হারুন অর রশীদ, নবী সোলায়মানের গুণগান গেয়ে কাল্পনিক কাহিনী বানিয়েছেন।
ব্রাত্য রাইসুকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিরোধিতা করেছেন ’গণতান্ত্রিক অধিকার’ এর অংশ হিসেবে! এছাড়া নাসির আলী মামুনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন-
”কমিউনিজমে আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না। কারণ কমিউনিজম, কমিউনিজম হচ্ছে ভাত খাও, ঘুরো-ফিরো, কিন্তু কথা বলতে পারবা না। এইগুলো আমি বিশ্বাস করতে চাই না।...........”
Comments