আরএসএস


সাধারণত আরএসএস এর শাখাগুলোতে লাঠি খেলা, ছোরা খেলা, মার্শাল আর্টসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু গত পঁচাশি বছর ধরে একটি মিলিটারি কলেজ চালাচ্ছে এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটি। ‘ভোঁসলে মিলিটারি স্কুল’ নামে মহারাষ্ট্রের নাসিকে কলেজটি তৈরি করেছিলেন আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের আদর্শগত গুরু বালকৃষ্ণ মুঞ্জে। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/K._B._Hedgewar

https://en.m.wikipedia.org/wiki/B._S._Moonje

মুসোলিনির অনুপ্রেরণায় মুঞ্জে ১৯৩৭ সালে মিলিটারি কলেজটি তৈরি করেন। 

https://frontline.thehindu.com/cover-story/moonje-amp-mussolini/article6756630.ece

কলেজটি পরিচালনা করে আরএসএস প্রভাবিত সংস্থা সেন্ট্রাল হিন্দু মিলিটারি এডুকেশন সোসাইটি। ভোঁসলে মিলিটারি স্কুলের ঘোষিত উদ্দেশ্য হলো ভারতের সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত করে ছাত্রদের শিক্ষা দেয়া; সেনাবাহিনী ছাড়াও আইএএস, আইপিএস সহ অন্যান্য সরকারি চাকরি এবং বিশেষ করে আইটি সেক্টরে চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত করে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া। কলেজের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় প্রথাগত বিজ্ঞান ও অন্যান্য শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি এখানে বিশেষভাবে যুদ্ধবিদ্যা শেখানো হয়! ছোটো ও বড়ো আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে শেখানোর পাশাপাশি এখানে শেখানো হয় লাঠি, তরবারি ও আগ্নেয়াস্ত্র সহ মিলিটারি ড্রিল প্রভৃতি! কলেজের অধ্যক্ষ হলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এম এম মাসুর।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bhonsala_Military_School

https://bms.bhonsala.in/

ভোঁসলে মিলিটারি স্কুল স্থাপন করার আসল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছিলেন মুঞ্জে নিজেই। তিনি বলেছিলেন- 

“গণহত্যার খেলা সফলভাবে খেলবার জন্য আমাদের ছেলেদের তৈরি করতে হবে যাতে শত্রুপক্ষ যত বেশি সম্ভব আহত এবং নিহত হয়” (মুঞ্জে পেপারস)। 

কলেজটি মহারাষ্ট্র সরকারের শিক্ষা দফতর দ্বারা স্বীকৃত! ১৯৯৫ সালে ইন্ডিয়ান পাবলিক স্কুল কনফারেন্স কলেজটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে! কংগ্রেস কিংবা বিজেপি, কোনও দলের শাসনকালেই আরএসএস প্রভাবিত কলেজটির কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা হয়নি। ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণে যুক্ত থাকার অভিযোগে নয় বছর জেলে থাকা এবং অধুনা মুক্তিপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল শ্রীকান্ত পুরোহিত কিছুদিন এই কলেজে শিক্ষকতা করেছিলেন। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/29_September_2008_western_India_bombings

গত ৮৫ বছরে কলেজটি থেকে অসংখ্য ছাত্র সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে এবং এর ফলে ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে আরএসএস এর প্রভাব অনেক মজবুত হয়েছে; আইএএস, আইপিএস প্রভৃতি সরকারি প্রশাসনের উচ্চতম স্তরে মিলিটারি ট্রেনিং প্রাপ্ত আরএসএস প্রভাবিত অগণিত অফিসার তৈরি হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান ভি কে সিং চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর যেভাবে বিজেপি সরকারের মন্ত্রীর পদ পেয়েছিলেন, তা থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে আরএসএস এর প্রভাব বিস্তারের খানিকটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/V._K._Singh

ভোঁসলে মিলিটারি স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন পদ্মভূষণ প্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম এল চিব্বার সহ একাধিক লেফটেন্যান্ট জেনারেল, এয়ার মার্শাল অজিত ভোঁসলে, আইপিএস অফিসার আর সেঠিয়াসুন্দরম, চিন্ময় পন্ডিত, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন কংগ্রেস মন্ত্রী ভারত বোন্দ্রে এবং শ্রীকান্ত জিচকার। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Manohar_Lal_Chibber

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Shrikant_Jichkar

১৯৯৯ সালে নাগপুরে কলেজটির আরও একটি শাখা খোলা হয়।

https://www.bmsnagpur.in/

এই দু'টি কলেজ ছাড়াও উত্তরপ্রদেশের শিকারপুরে আরও একটি মিলিটারি কলেজ তৈরি করার কাজ শুরু করেছে আরএসএস। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কেবল মাত্র অফিসার পদে যোগ দেয়ার উপযুক্ত করে এখানে ছাত্রদের ট্রেনিং দেয়া হবে। তাছাড়া সেন্ট্রাল হিন্দু মিলিটারি এডুকেশন সোসাইটির বদলে নতুন এই কলেজটি চালাবে আরএসএস এর সংগঠন বিদ্যা ভারতী।

https://bhonsala.in/

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Central_Hindu_Military_Education_Society

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Vidya_Bharati

ভোঁসলে মিলিটারি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বালকৃষ্ণ মুঞ্জে ১৯২৭ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন। মুঞ্জের পর হিন্দু মহাসভার সভাপতি হন বিনায়ক দামোদর সাভারকার। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Vinayak_Damodar_Savarkar

মুঞ্জে, সাভারকার এবং কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার - এই তিনজনেরই ঘোষিত লক্ষ্য ছিল হিন্দু যুবকদের সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা যাতে ভারতে বসবাসকারী অহিন্দু, বিশেষত মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষদের পদানত করে রাখা যায়। এই তিনজনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং চিঠিপত্র থেকে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় তাদের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ বাড়িয়ে তুলে ভারতের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে পথভ্রষ্ট করা এবং হিন্দু, অহিন্দু নির্বিশেষে আমজনতাকে ব্রিটিশদের পদানত করে রাখা। সেই উদ্দেশ্যে মুসোলিনির ব্ল্যাক শার্ট আর হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর অনুকরণে একটি আধাসামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তারা।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Blackshirts

মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে দেশে ‘জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগের বৃদ্ধি’ এবং সেই সঙ্গে ‘বেকারি বৃদ্ধির’ কথা মাথায় রেখে তারা যুব সম্প্রদায়কে তিন বছরের জন্য চাকরি দিতে চায়। সেই সঙ্গে তারা আরও জানিয়েছে বাহিনীতে স্থায়ী চাকরির বদলে তিন বছরের মেয়াদে চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে অবসরকালীন ভাতা, বেতন বৃদ্ধি প্রভৃতির ব্যবস্থা করতে হবে না। ২০১৮ সালে নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন ন্যাশনাল ইয়ুথ এম্পাওয়ারমেন্ট স্কিম অনুযায়ী দেশের দশ লক্ষ যুবককে সামরিক শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করবে কেন্দ্রীয় সরকার।

.......................................................................

১৯৯৯ সালে উগ্র হিন্দুত্ববাদী 'বজরং দল' গ্রাহাম স্টেইনস ও তার দুই শিশু পুত্রকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলেছিল।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Graham_Staines

নিচে আরও কয়েকটা ঘটনার লিংক দেয়া হলো-

https://en.m.wikipedia.org/wiki/2007_Christmas_violence_in_Kandhamal

https://www.aljazeera.com/news/2021/12/2/india-christians-church-hindu-groups-bjp-conversion

https://en.m.wikipedia.org/wiki/1998_attacks_on_Christians_in_southeastern_Gujarat

https://en.m.wikipedia.org/wiki/1999_Ranalai_violence

https://en.m.wikipedia.org/wiki/2008_Kandhamal_violence

https://en.m.wikipedia.org/wiki/2008_attacks_on_Christians_in_southern_Karnataka

......................................................................

সুনীতি চট্টোপাধ্যায় হিন্দু মহাসভার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি বলেছিলেন "রাম উপন্যাসের নায়ক"। এই কথা বলার অপরাধে উগ্র হিন্দুরা তার পুত্রকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল।

সুকুমার সেন বলেছেন 'রাম' শব্দটির অর্থ 'পূর্ণতা' এবং শব্দটি এসেছে ইরান থেকে।

'রামরাজ্য' শব্দটি গান্ধী নিয়েছিলেন তলস্তয়ের 'Kingdom of God' এর ভারতীয় ভার্সন হিসেবে।

...........................................................................

১৯৭৪ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন জগজীবন রাম (হরিজন সম্প্রদায়ের) একটি মন্দির উদ্বোধন করেছিলেন। উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা এজন্য গঙ্গাজলে ধুয়ে তারপর মন্দিরে ঢুকেছিল!

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Jagjivan_Ram

.............................................................................

২০০১ সালে গুজরাটের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর রাজ্যটির ভুজ এলাকায় 'বিশ্ব হিন্দু পরিষদ' ১৭টি হিন্দু বর্ণের ক্ষতিগ্রস্ত লোকেদের ১৭ রকমের তাবু বিতরণ করেছিল! 

সূত্র: দ্য শেপ অব দ্য বিস্ট, অরুন্ধতী রায়

মুসলিম কমিউনিটি আর অন্যান্য ধর্মের কমিউনিটি এদের ত্রাণ পায়নি। হিন্দুরা পেলেও সেখানে পর্যন্ত এরা নিজেদের মৌলবাদী রূপ প্রদর্শন করেছে যার যার বর্ণ অনুযায়ী তাবু বিতরণ করে। দেশটির কিছু স্কুলে বর্ণ অনুযায়ী কব্জিতে ব্যান্ড পড়তে হয় ছাত্র ছাত্রীদের!

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]