তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক চীন সম্পর্কে ফিলিপাইনের কমিউনিস্টদের মূল্যায়ন (১লা জুলাই, ২০২১)

 

একদা মহান ও সঠিক চিনের কমিউনিস্ট পার্টির জন্মশতবর্ষ পালন করছে চিনা সর্বহারা ও চীনা জনগণ। ফিলিপিনো সর্বহারা শ্রেণিও তাতে সামিল। তারা চীনা পার্টিকে স্মরণ করছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের প্রতি তাদের আনুগত্যকে আরও একবার জোরেসোরে ঘোষণা করে এবং সমস্ত রকম শোষণ ও অত্যাচারকে চিরতরে নিকেশ করার জন্য সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব চালিয়ে যাওয়া ও চীনের আধুনিক সংশোধনবাদ এবং পুঁজিবাদের পুনরুজ্জীবনকে প্রত্যাখ্যান করার মধ্য দিয়ে। সিপিসির শতবর্ষে আমরা ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মাও সে তুঙের নেতৃত্বে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নয়া গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের বিজয়কে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। পাশাপাশি চীনা পার্টির নেতৃত্ব আধুনিক সংশোধনবাদীরা দখল করে তাকে বৃহৎ বুর্জোয়া ও রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া পুঁজিপতিদের পার্টিতে পরিণত করার পর সে দেশের শ্রমিক-কৃষকরা যে অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন, সে কথাও স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছি। ১০০ বছরের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসকে মূলত দু'টি ভাগে ভাগ করা যায়। ১৯২১ সালে এর জন্ম থেকে ১৯৭৬ এবং ১৯৭৬ সালের পরবর্তী সময়কাল। তার প্রথম ৫৫ বছরে সিপিসি নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সঠিক পথ ধরে এগিয়েছে, শ্রমিক শ্রেণিকে নেতৃত্ব দিয়েছে, শ্রমিক-কৃষক জোট গঠন করেছে এবং চীনা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধ চালিয়েছে এবং ১৯৪৯ সালে বিজয় অর্জনের পথে চীনা জনগণকে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে। ঐ বিজয়ের মধ্যে দিয়ে চীন সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য থেকে মুক্তি অর্জন করেছে এবং বৃহৎ সামন্তপ্রভু ও বৃহৎ মুৎসুদ্দি বুর্জোয়াদের আধা ঔপনিবেশিক আধা সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। সঠিক পথে চলা সিপিসি সর্বহারার নেতৃত্বে জনগণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে, পাঁচ বছরের মধ্যে ভূমি সংস্কার সম্পূর্ণ করেছে। যৌথ উৎপাদন চালু, কমিউন তৈরি, তার অধীনে জমিকে নিয়ে এসে তাতে যৌথ মালিকানা প্রতিষ্ঠা ও উদ্বৃত্ত সম্পদকে যৌথ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে এমন আর্থিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পে বিনিয়োগ করা যাতে জনগণের সামাজিক প্রয়োজনগুলো মেটে- এই কাজগুলোর মধ্যে দিয়ে ধাপে ধাপে চীনা পার্টি কৃষিতে সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটিয়েছে। ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিক থেকে সিপিসি অর্থনীতির বুনিয়াদি সামাজিকীকরণ থেকে শুরু করে দেশের শিল্পের ভিত্তিকে শক্তিশালী করা ও বেকারত্ব নির্মূল করার পথে চীনা জনগণকে নেতৃত্ব দেয়। মহান উল্লম্ফন পর্বে ভারী শিল্প গড়ার ব্যাপারে রাষ্ট্র কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব দেয়, অন্যদিকে লঘু শিল্প উৎপাদন চলে আঞ্চলিক রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও কমিউনগুলোর বিকেন্দ্রীকৃত উদ্যোগের মাধ্যমে। লক্ষ লক্ষ কৃষক জনতা যৌথভাবে এক বিশাল যন্ত্রের মতো কাজ করে চীনের গ্রাম জীবনের চেহারা বদলে দেয়, যৌথ শ্রমের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনের মিশেলে উৎপাদনকে বাড়িয়ে তোলে। রাষ্ট্র স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক ও আর্থিক পরিষেবা বিস্তৃত করে অসুখ, অপুষ্টি ও নিরক্ষরতাকে জয় করে। এর ফলে জনগণের জীবনযাপনের মান বৃদ্ধি পায়। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত শিল্প ও উৎপাদনে চীনের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়, যন্ত্র ও অন্যান্য উৎপাদনের পাশাপাশি জনগণের ভোগ্যপণ্য উৎপাদনেও ব্যাপক গতি আসে।সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্যের পুরো সময়কাল জুড়ে শ্রমিকদের শ্রেণি সচেতনতা বৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের প্রসারের জন্য সিপিসি সমাজতান্ত্রিক শিক্ষার বিস্তারে প্রয়াসী হয় এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু করে। এর লক্ষ্য ছিল উৎপাদন সম্পর্কের রূপান্তর, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ছিল উপরিকাঠামোর বিপ্লবী রূপান্তর। পার্টি কর্মী, গণ সংগঠন ও টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি বিপ্লবী কমিটির মাধ্যমে কারখানার কাজের বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে যৌথভাবে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য শ্রমিকদের সমাবেশিত করা হয়। শ্রমিকদের সমাজতান্ত্রিক দৃঢ়তা ও নজরদারি বাড়িয়ে এবং তাদের রাষ্ট্রের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত করে, আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি নির্মূল করার কাজে পার্টি নেতৃত্ব দেয়। কৃষির সঙ্গে শিল্পকে যুক্ত করা, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা চালু করার ফলে গবেষণা ও উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটে, উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। জনগণের বীরত্বকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে এক নয়া বিপ্লবী সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো হয় এবং তাকে উৎসাহিত করা হয়। চেয়ারম্যান মাওয়ের নেতৃত্বে সিপিসি ও চীনা জনগণ সর্বহারার একনায়কত্বকে শক্তিশালী ও দৃঢ় করে তোলেন, পাশাপাশি আধুনিক সংশোধনবাদ এবং সর্বহারা ও জনগণের বিজয়ের চাকাকে উল্টোদিকে ঘোরানোর যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালান। সিপিসি সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদকে উৎসাহিত করে এবং দুনিয়া জুড়ে চলা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামগুলোকে সমর্থন জানায়। ১৯৬৬ সালে থেকে টানা ১০ বছর চীনা সর্বহারা ও জনগণ মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব চালিয়ে নিয়ে যান। সিপিসির নেতৃত্ব দখল করা ও সমাজতান্ত্রিক মহান অর্জনগুলোকে উল্টে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করা আধুনিক সংশোধনবাদীদের সঙ্গে সে ছিল এক তীব্র সংগ্রাম। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আধুনিক সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো, সমাজতন্ত্রের অগ্রগতিকে সংহত করা এবং পুঁজিবাদের পুনরুত্থানকে প্রতিহত করার ঘটনা মাওয়ের সর্বহারার একনায়কত্বের অধীনে নিরন্তর বিপ্লব চালিয়ে যাওয়ার তত্ত্বকেই প্রমাণ করে। দেং জিয়াওপিং এর নেতৃত্বে আধুনিক সংশোধনবাদীরা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাগুলোর সুযোগ নেয়। তারা বামপন্থীদের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়ে এবং মধ্যপন্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১৯৭৬ সালে মাওয়ের মৃত্যুর পর একটি প্রতিবিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটায়। মাওবাদ ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মূল স্তম্ভদের তারা গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে অথবা হত্যা করে। আধুনিক সংশোধনবাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি লি শাওচির পুনর্বাসন হয় এবং তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসানো হয়। ১৯৭৬ এর পর থেকে সিপিসি অধ:পতিত হয় এবং সম্পূর্ণ রূপান্তরিত হয়ে রাষ্ট্রীয় পুঁজিপতি ও তাদের সঙ্গী ব্যক্তি পুঁজিপতিদের অধীনে চলে যায়। ‘চীনা চরিত্রের সমাজতন্ত্র’ গঠন করার নামে আধুনিক সংশোধনবাদীরা কমিউন ও কৃষিক্ষেত্রের যৌথ মালিকানার সংগঠনগুলো ভেঙে দেয়, বেশিরভাগ কৃষককে তাদের নিজেদের ছোটো জমির ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে বাধ্য করে। এদের জমি কমে যায়, ব্যাপক ক্ষুধা ও দারিদ্র্য ছড়িয়ে পড়ে। দক্ষতার নামে শ্রমিকদের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয় এবং তাদের মজুরি দাসত্বে পিছিয়ে দিয়ে পুঁজিবাদী যন্ত্রের নাটবল্টুতে পরিণত করা হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কারখানাগুলোর পরিচালন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের একচ্ছত্র ক্ষমতা তুলে দেয়া হয় ‘ক্যাডার’ ও ম্যানেজারদের হাতে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা উৎপাদন করে সেই শ্রমিকদের অধিকার, কাজের কোটা ও বোনাসের ব্যাপারে তারাই সিদ্ধান্ত নিতো। কারখানার কড়া শৃঙ্খলার মধ্যে চীনা শ্রমিকরা পরিশ্রম করতে বাধ্য হতো, সেখানে তাদের সত্যিকারের ইউনিয়ন সংগঠিত করার অধিকার দেয়া হতো না, নিষিদ্ধ ছিল ধর্মঘট। সর্বহারার একনায়কত্বকে নষ্ট করে তৈরি করা হলো রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া পুঁজির একনায়কত্ব। রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্র এবং সিপিসির উঁচু স্তরের নেতা, দুই ধরনের রাষ্ট্রীয় পুঁজিপতিরা সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্যের সময় সৃষ্ট সামাজিক সম্পদের দখল নিলো এবং তাকে ব্যক্তিগত পুঁজি সঞ্চয়নের পুঁজি হিসেবে কাজে লাগালো। বিশেষ রফতানি অঞ্চলগুলোর অ্যাসেম্বলি লাইন কারখানাগুলোতে, বৃহৎ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পুঁজিবাদী কর্পোরেশনে, পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিস্তারে, প্রযুক্তি এবং উৎপাদনের উপকরণের বিকাশে চীনা শ্রমিকদের ব্যাপক শোষণ এবং অতিরিক্ত কম মজুরিতে কাজ করানোর জন্য তারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী এবং অন্যান্য বিদেশি একচেটিয়া পুঁজিপতিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। এর ফলে পুঁজিবাদী অতি উৎপাদনের ফলে সৃষ্ট দুনিয়া জোড়া সংকট তীব্রতর হয়। ১৯৭৬ সালে দেংপন্থী প্রতিবিপ্লবী অভ্যুত্থানের পর যেসব ক্যাডার ও সদস্যরা মহান সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও কমরেড মাওয়ের সর্বহারা-সমাজতান্ত্রিক লাইনকে সমর্থন করেছিলেন, তাদের সকলকে সিপিসি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সবচেয়ে বড়ো সংশোধনবাদী ও পুঁজিবাদী পথের পথিক লিউ ও দেং এর সমর্থকরা প্রতিটি স্তরের নেতৃত্ব দখল করে। ১৯৭৮ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি পুঁজিপতিদের সিপিসি-র ক্যাডার ও সদস্য হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। এইভাবে এটা কেবল সময়ের অপেক্ষা যে চীনের একচেটিয়া বুর্জোয়ারা কমিউনিস্ট পতাকাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে এবং সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিস্ট ভড়ং একদিন সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করবে। বিশেষত প্রকৃত কমিউনিস্টরা যখন যথাযথ নেতৃত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে এবং সর্বহারা ও জনগণের সমর্থন পাবে, তখন মুখোশ খুলে ফেলতে তাদের এক মুহূর্তও লাগবে না। বিদেশি বৃহৎ পুঁজিপতিদের সঙ্গে মিলিতভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কর্পোরেশনগুলোর শীর্ষে থাকা একচেটিয়া পুঁজিপতিরা এবং নেতাদের পছন্দের ব্যক্তি পুঁজির কর্পোরেশনগুলো আরও বেশি বেশি সম্পদ সঞ্চয়ন করে চলেছে। চীনা বিলিওনেয়ারের সংখ্যা গত বছর ছিল ৩৮৮, এ বছর তা ৬২৬। তাদের মোট সম্পদ ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। তারা আমেরিকাকে (৭২৪ জন বিলিওনেয়ার) ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। দুনিয়ার সবচেয়ে বড়়ো ২০০০টি কর্পোরেশনের মধ্যে ২৯১টি চীনের, তারা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা (৫৯১), অর্থাৎ চীন জাপানের থেকেও এগিয়ে। চীনের সবচেয়ে বড়ো ব্যাঙ্কগুলো (দ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমারশিয়াল ব্যাঙ্ক অফ চায়না, দ্য চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাঙ্ক, দ্য এগ্রিকালচারাল ব্যাঙ্ক অফ চায়না এবং ব্যাঙ্ক অফ চায়না) সম্পদের হিসেবে দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো কর্পোরেশন। রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া বুর্জোয়ারা চীনা অর্থনীতির এতটাই বিস্তার ঘটিয়েছে যে শ্রমিক ও কৃষকদের অবস্থা চূড়ান্ত খারাপ জায়গায় পৌঁছেছে। শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্ব ব্যাপক এবং গ্রামাঞ্চলে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে উচ্ছেদ হয়ে চলেছেন। শহরে প্রচুর বস্তি বেড়ে গিয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিষেবাগুলোর ক্রমাগত বেসরকারিকরণ হয়ে চলেছে। সিপিসি সর্বহারার আন্তর্জাতিকতার ভাবনা সম্পূর্ণ ত্যাগ করেছে। তার বদলে তারা এখন পুঁজি রফতানি করছে, দুনিয়া জুড়ে সুদের কারবার করে অনুন্নত দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে ফেলছে এবং পৃথিবী জুড়ে বিনিয়োগ ও প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে, অন্য দেশে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করছে এবং নিজের এলাকার বাইরে গিয়ে সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। তারা লগ্নি পুঁজিকে কাজে লাগিয়ে ছোটো দেশগুলোতে প্রভাব বাড়াচ্ছে, তাদের আর্থিক নীতিকে পরিচালনা করছে এবং সেই দেশগুলোর সম্পদকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ১৯৫০ এর দশকে মাও সোভিয়েত ইউনিয়নকে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী বলেছিলেন, অর্থাৎ মুখে সমাজতান্ত্রিক কাজে সাম্রাজ্যবাদী; সেই একই কথা এখন চীন ও সিপিসি সম্পর্কেও বলা যায়। ‘সমাজতন্ত্রে’র বুলি বলতে বলতে চীন একটি নির্লজ্জ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হয়েছে, তারা ছোটো এবং দুর্বল দেশগুলোর ওপর তাদের অতি জাতীয়তাবাদী লক্ষ্যগুলোকে চাপিয়ে দিতে চায়, সস্তা শ্রমিকদের শোষণ করতে চায়, নিজেদের বিশাল যন্ত্রগুলোকে চালু রাখার জন্য ঐ দেশগুলোর কাঁচামাল লুঠ করতে চায় এবং তার মধ্য দিয়ে বিশাল পরিমাণ মুনাফা করতে চায়। পৃথিবীর বাজারকে নিজের স্বার্থ অনুযায়ী ভাগ করে নেয়ার জন্য চীন আমেরিকার সঙ্গে প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে। বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সমাধানের অযোগ্য সংকটের মধ্যে দুনিয়া জুড়ে শ্রমিক ও জনগণ নানা ধরনের সংগ্রাম চালাচ্ছেন। সমাজতান্ত্রিক ও নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের দুনিয়া জোড়া পুনরুজ্জীবনের নতুন যুগ আসন্ন। তাতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য সর্বহারা বিপ্লবী শক্তিগুলো সর্বহারার অগ্রবর্তী বাহিনী হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টিগুলোকে গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দুনিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের মতোই চীনের পরিস্থিতিও চিনের শ্রমিক-কৃষকের জেগে ওঠার এবং বিপ্লবী সংগ্রাম চালানোর অনুকূল। চীনের সর্বহারা বিপ্লবীরা অবশ্যই নতুন কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তুলবেন বা পুন:প্রতিষ্ঠা করবেন। যার বুনিয়াদ হবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ এবং তারা চীনের শ্রমিক শ্রেণি ও শ্রমজীবী জনতাকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদের পথে ফিরিয়ে আনবেন।

একদা মহান চিনের কমিউনিস্ট পার্টির জন্মশতবর্ষ স্মরণ করুন!

সিপিসির বিপ্লবী কাজগুলোকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরুন এবং তার আধুনিক সংশোধনবাদে অধঃপতন ও পুঁজিবাদের পুন:প্রতিষ্ঠার নিন্দা করুন!

কমিউনিস্ট পার্টিগুলোকে শক্তিশালী করুন এবং সমাজতান্ত্রিক ও নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পুনরুত্থান ঘটান!

সর্বহারা ও নিপীড়িত জনগণ দীর্ঘজীবী হোক!

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ দীর্ঘজীবী হোক‍!

সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক!

সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদ দীর্ঘজীবী হোক!

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]