ইউক্রেন ও সিআইএ
সিনথিয়া চুং 'সাবস্ট্যাক' তার সদ্য প্রকাশিত বই 'দ্য এম্পায়ার অন হুইচ দ্য ব্ল্যাক সান নেভার সেট: দ্য বার্থ অফ ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাসিজম অ্যান্ড অ্যাংলো-আমেরিকান ফরেন পলিসি' থেকে অধ্যায় নাম্বার ৫ প্রকাশ করেছেন।
https://cynthiachung.substack.com/p/how-the-ukrainian-nationalist-movement-f4f
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) দ্বারা কীভাবে কেনা এবং অর্থ প্রদান করা হয়েছিল এই অধ্যায়ে তার বিশদ বিবরণ রয়েছে। তিনি ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদের ঐতিহাসিক শিকড় খোঁজা দিয়ে তার লেখাটি শুরু করেন। Kievan Rus থেকে এর শুরু, ৯ম শতাব্দীর শেষ থেকে ১৩শ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত যা ছিল উত্তর-পূর্ব ইউরোপের একটি ফেডারেশন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Kievan_Rus%27
বেলারুশ, রাশিয়া এবং ইউক্রেন সকলেই কিয়েভান রুশের লোকদের তাদের সাংস্কৃতিক পূর্বপুরুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তিনি ১৯২৯ সালে 'অর্গানাইজেশন অফ ইউক্রেনিয়ান ন্যাশনালিস্টস' এর প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের রূপরেখা দেখিয়েছেন যা সেসময় পোল্যান্ডে অবস্থিত ছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Organization_of_Ukrainian_Nationalists
এরা ১৯৩৪ সালে পোলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ব্রনিস্ল পিয়েরাকিকে হত্যা করে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bronis%C5%82aw_Pieracki
পিয়েরাকির হত্যার জন্য ১৯৩৬ সালে যাদের বিচার করা হয়েছিল এবং দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন OUN এর স্টেফান বান্দেরা এবং মিকোলা লেবেড।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Stepan_Bandera
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mykola_Lebed
১৯৩৯ সালে জার্মানরা পোল্যান্ড আক্রমণ করলে উভয়েই পালিয়ে যায়। ১৯৩৯ সালের আগস্টে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং নাৎসি জার্মানি পোল্যান্ডকে বিভক্ত করে অ-আগ্রাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ১৯৪০ সালে OUN আন্দ্রি মেলনিকের নেতৃত্বে OUN-M এবং স্টেফান বান্দেরার নেতৃত্বে OUN-B তে বিভক্ত হয়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Andriy_Melnyk_(Ukrainian_military_leader)
১৯৪১ সালের জুনে যখন নাৎসি জার্মানি পশ্চিম ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল, তখন অনেক পশ্চিম ইউক্রেনীয় আক্রমণকারী নাৎসিদের তাদের 'মুক্তিদাতা' হিসাবে স্বাগত জানিয়েছিল। OUN-M এবং OUN-B উভয়েই জার্মানদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করতে যুদ্ধের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতো। সোভিয়েত ইউনিয়নে জার্মানির আক্রমণের আট দিন পর ৩০শে জুন, ১৯৪১ সালে OUN-B লভিভ শহরে বান্দেরার নামে ইউক্রেনীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় এবং হিটলারের প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। জবাবে OUN-B এর নেতা এবং সহযোগীদের গেস্টাপো দ্বারা গ্রেফতার করা হয় এবং কারারুদ্ধ করা হয় বা সরাসরি হত্যা করা হয়। স্টেফান বান্দেরা এবং তার নিকটতম ডেপুটি ইয়ারোস্লাভ স্টেটস্কোকে প্রথমে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল এবং তারপরে সাচসেনহাউসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Yaroslav_Stetsko
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sachsenhausen_concentration_camp
মিকোলা লেবেড জার্মান পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং OUN-B নেতৃত্বের অঘোষিত নেতা হয়ে ওঠে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Banderite
পরের বছর লেবেড গোপন সন্ত্রাসী শাখা 'ইউক্রেনীয় বিদ্রোহী সেনাবাহিনীর নেতা হয়ে উঠে, যেটি ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ukrainian_Insurgent_Army
১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্তর ইউক্রেনের জার্মান সেনা কর্মকর্তারা 'ফরেন আর্মিস ইস্ট' এ তাদের ঊর্ধ্বতনদের জানায় যে ইউপিএ "জার্মানির খাঁটি মিত্র" এবং "জার্মান হাই কমান্ডের জন্য একটি মূল্যবান সাহায্য" এবং হিমলার নিজেই ইউপিএ-র সাথে যোগাযোগের অনুমোদন দেয়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Foreign_Armies_East
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Heinrich_Himmler
এছাড়া ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বরে জার্মানরা সাচসেনহাউসেন থেকে বান্দেরা এবং স্টেটস্কোকে মুক্তি দেয়।
"[লেবেড] একজন সুপরিচিত নিপীড়ক এবং জার্মানদের সহযোগী"।
- মার্কিন সেনাবাহিনীর কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কপস এর ১৯৪৭ সালের রিপোর্ট
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Counterintelligence_Corps
১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে মিকোলা লেবেড 'ইউক্রেনীয়
সুপ্রিম লিবারেশন কাউন্সিল' গঠনে সহায়তা করেছিল, যা ইউক্রেনীয় জাতির প্রতিনিধিত্ব করার দাবি করবে এবং সোভিয়েত ইউক্রেনের বিরোধিতা করে কার্পেথিয়ান পর্বতমালায় একটি গোপন সরকার হিসাবে কাজ করবে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ukrainian_Supreme_Liberation_Council
ইউএইচভিআর এর প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ছিল বান্দেরা গ্রুপ এবং ইউপিএ, যেটি তখন থেকে ইউএইচভিআর এর সেনাবাহিনী হিসাবে কাজ করতো এবং ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল। ১৯৪৭ সালে বান্দেরা এবং স্টেটস্কোর মধ্যে বান্দেরার নেতৃত্বে একটি একক দলের অধীনে একটি স্বাধীন ইউক্রেনের জন্য বিরোধ শুরু হয়। লেবেড এবং ফাদার ইভান রিনিওচ (ইউএইচভিআরএর রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান) বান্দেরার রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার বিপক্ষে ছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ivan_Hrynokh
OUN বিদেশী বিভাগের ১৯৪৮ সালের কংগ্রেসে আগস্ট
বান্দেরা (যে তখনও UHVR এর ৮০% নিয়ন্ত্রণ করতো) রিনিওচ-লেবেড গ্রুপকে বহিষ্কার করে। সে ইউক্রেনের জাতীয় আন্দোলনের উপর একচেটিয়া কর্তৃত্ব দাবি করে, পশ্চিম ইউরোপে বান্দেরা বিরোধী ইউক্রেনীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রাখে এবং ইউক্রেনীয় অভিবাসী সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলী হয়। লেবেড সেসময় আমেরিকানদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল, তাকে রিনিওচ এর সাথে বিদেশে অফিসিয়াল UHVR প্রতিনিধিত্ব হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় লেবেড রেইনহার্ড গেলেনের মতো একই কৌশল গ্রহণ করে। সে ১৯৪৫ সালে পশ্চিম ইউক্রেনে এবং জার্মানিতে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ক্যাম্পে অবস্থিত সোভিয়েত-বিরোধীদের নাম এবং পরিচিতিগুলো সহ রোম থেকে পালানোর পর মিত্রশক্তির সাথে যোগাযোগ করেছিল। এই কাজ তাকে মার্কিন সেনাবাহিনীর কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কপস এর কাছে ১৯৪৭ সালের প্রতিবেদনে তাদের উপরোক্ত স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে লেবেড যাকে রোমে সোভিয়েতরা হত্যা করবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তার নিরাপত্তার জন্য ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে সিআইসি জার্মানির মিউনিখে তার পরিবারসহ সরিয়ে নেয়। নরমান জে۔ ডব্লিউ۔ গোডা লিখেছেন-
"১৯৪৭ সালের শেষের দিকে লেবেড আমেরিকানদের ব্যবহারের জন্য তার প্রাক-যুদ্ধ এবং যুদ্ধকালীন ক্রিয়াকলাপগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাফ করে ফেলেছিল। তার নিজের বর্ণনায় সে পোল, সোভিয়েত এবং জার্মানদের শিকার হয়েছিল - সে তার নাৎসি বিরোধীতা প্রমাণ করার জন্য সারাজীবন গেস্টাপোর 'ওয়ান্টেড' পোস্টার প্রমাণপত্রাদি হিসেবে বহন করেছে... সে একটি ১২৬ পৃষ্ঠার পুস্তিকাও প্রকাশ করেছিল ইউপিএ-র উপর; যেখানে নাৎসি এবং বলশেভিক উভয়ের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামকে বর্ণনা করে একটি স্বাধীন, বৃহত্তর ইউক্রেনের আহ্বান জানানো হয়েছে যা বাকস্বাধীনতা এবং স্বাধীন বিশ্বাসের মানবিক আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করবে। পুস্তিকা অনুসারে ইউপিএ কখনও নাৎসিদের সাথে সহযোগিতা করেনি কিংবা বইটিতে গ্যালিসিয়ান ইহুদি বা পোলদের হত্যার কোনো উল্লেখ নেই। সিআইসি পুস্তিকাটিকে 'বিষয়টির সম্পূর্ণ পটভূমি' হিসাবে বিবেচনা করেছিল। সিআইসি এই সত্যটিকে উপেক্ষা করেছিল যে ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত একটি OUN কংগ্রেস তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণে বিভক্ত হয়েছিল, OUN-এর ক্রমাগত গণতন্ত্রীকরণের জন্য লেবেডের সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ। এটি সিআইএ দ্বারা উপেক্ষা করা হয়েছিল যা ১৯৪৮ সালে ব্যাপকভাবে লেবেডকে ব্যবহার করার মাধ্যমে শুরু হয়। ১৯৪৯ সালের জুনে সিআইএ তাকে [লেবেড] যুক্তরাষ্ট্রে তার স্ত্রী ও কন্যার সাথে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি আইনের আইনি আবরণে সরিয়ে নিয়ে যায়।"
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাচারালাইজেশন সার্ভিস লেবেডের তদন্ত শুরু করে এবং ১৯৫০ সালের মার্চ মাসে ওয়াশিংটনকে জানায় যে অসংখ্য ইউক্রেনীয় তথ্যদাতা বান্দেরা গ্রূপের সন্ত্রাসীদের মধ্যে লেবেডের প্রধান ভূমিকার কথা বলেছিল এবং যুদ্ধের সময় ব্যান্ডারাইটরা গেস্টাপো দ্বারা প্রশিক্ষিত ও সশস্ত্র ছিল আর ইউক্রেনীয়, পোল এবং ইহুদিদের পাইকারি হত্যায় লেবেড ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একজন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Immigration_and_Naturalization_Service
১৯৫১ সালে শীর্ষস্থানীয় আইএনএস কর্মকর্তারা সিআইএ-কে তাদের ফলাফলে জানিয়েছেন যে লেবেড সম্ভবত বিতাড়নের মুখোমুখি হবে। সিআইএ ১৯৫১ সালের ৩ অক্টোবর প্রতিক্রিয়া জানায় যে সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ছিল এবং লেবেডের গেস্টাপো 'ওয়ান্টেড' পোস্টারটি প্রমাণ করে যে সে নাৎসি এবং বলশেভিকদের বিরুদ্ধে সমান উদ্যোগের সাথে লড়াই করেছিল! আইএনএস কর্মকর্তারা ফলস্বরূপ লেবেডের তদন্ত স্থগিত করে। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিআইএ লেবেডকে পুনরায় প্রবেশের কাগজপত্র দেয়ার জন্য আইএনএস-কে চাপ দেয় যাতে সে ইচ্ছামতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যেতে এবং পুনরায় প্রবেশ করতে পারে। আইএনএস এর তৎকালীন কমিশনার আর্গিল ম্যাকি কাজটি করতে অস্বীকার করেন। ১৯৫২ সালের ৫ মে অ্যালেন ডুলেস সিআইএ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক ম্যাকিকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন-
"সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভবিষ্যতে এজেন্সির ক্রিয়াকলাপগুলোর সাথে সংযুক্ত, এটি জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় যে সাবজেক্টকে [লেবেড] পশ্চিম ইউরোপে ভ্রমণ করতে সক্ষম হতে হবে। [সে] এই ধরনের ভ্রমণ করার আগে, যাইহোক, এই সংস্থাটিকে অবশ্যই তদন্ত বা অঘটন ছাড়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার পুন:প্রবেশের নিশ্চয়তা দিতে হবে যা তার কার্যকলাপের প্রতি অযথা মনোযোগ আকর্ষণ করবে।"
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Allen_Dulles
https://strategic-culture.org/news/2021/03/07/return-of-leviathan-fascist-roots-of-cia-and-true-origin-cold-war/
নাৎসীদের ওয়েহরমাখ্ট ফরেন আর্মিজ ইস্ট মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের প্রাক্তন প্রধান জেনারেল রেইনহার্ড গেহলেনকে তার গেহলেন অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠার জন্য পশ্চিম জার্মানিতে পুনরায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল যা পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে বুন্দেসনাক্রিচটেনডিয়েনস্ট (পশ্চিম জার্মানির ফেডারেল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস) এ রূপান্তরিত হয়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Reinhard_Gehlen
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Gehlen_Organization
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Wehrmacht
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Foreign_Armies_East
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Federal_Intelligence_Service
ডুলেস আরও চেয়েছিলেন যে লেবেডের আইনি মর্যাদা ১৯৪৯ সালের সিআইএ অ্যাক্টের ৮ নাম্বার ধারার অধীনে 'স্থায়ী বাসিন্দা'তে পরিবর্তিত হোক। ডুলেসের চিঠির পরে এবং লেবেড মার্চ ১৯৫৭ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করার পরে আইএনএস আর কখনও তদন্ত করেনি। যুদ্ধের পরে বান্দেরা তার পরিবারের সাথে পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করতো, যেখানে সে OUN-B এর নেতা ছিল এবং বেশ কয়েকটি কমিউনিস্ট বিরোধী সংগঠনের পাশাপাশি ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সাথে কাজ করেছিল। ঐ মুহুর্তে বান্দেরা অনেক বেশি দায়বদ্ধ হয়ে পড়েছিল এবং ১৯৫৩ সালে আমেরিকান ও ব্রিটিশ উভয়ের দ্বারাই বান্দেরাকে পদত্যাগ করতে এবং লেবেডকে সমগ্র ইউক্রেনীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একাধিক প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। বান্দেরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহী হয়ে গেলো। বলা হয়ে থাকে বান্দেরাকে ১৯৫৯ সালে মিউনিখে এক কেজিবি এজেন্ট দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনা পশ্চিমাদের জন্য শাপে বর হয়েছিল। ডিক্লাসিফাইড রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে হুভারের এফবিআই রেকর্ড যার কাছে ১৯৪৩ এবং ১৯৪৪ সালের জার্মান জেনারেল স্টাফ নথিপত্রের একটি ছোট ভাণ্ডার ছিল, যেখানে লেবেডের নাম উল্লেখ করার সময় ইউপিএ-র কাজের প্রতি জার্মানদের প্রশংসা আছে। লেবেডের তদন্তের সময় আইএনএস এর অনুরোধ সত্ত্বেও সিআইএ ছাড়া অন্য কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সাথে এটি শেয়ার করা হয়নি।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/J._Edgar_Hoover
গোদা লিখেছেন-
'পররাষ্ট্রমন্ত্রী' [ইউএইচভিআর] হিসাবে তার [লেবেডের] কার্যকলাপের সম্পূর্ণটা হয়তো কখনোই জানা যাবে না, তবে তার উপর এফবিআই এর নজরদারি কিছুটা ধারণা দেয়। আংশিকভাবে, লেবেড ইউক্রেনে সোভিয়েত সরকার দ্বারা ব্যবহৃত জৈবিক যুদ্ধের মতো বিষয়গুলোর উপর ইয়েলের মতো মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়েছে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Norman_J._W._Goda
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Richard_Breitman
ব্রেটম্যান এবং গোডা লিখেছেন-
"১৯৪৭ সাল নাগাদ প্রায় ২,৫০,০০০ ইউক্রেনীয় বাস করছিল জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং ইতালিতে, তাদের মধ্যে অনেকেই OUN এর কর্মী বা সহানুভূতিশীল। ১৯৪৭ সালের পর ইউপিএ যোদ্ধারা চেকোস্লোভাকিয়ার মধ্য দিয়ে পায়ে হেঁটে সীমান্তে পৌঁছে মার্কিন অঞ্চলে প্রবেশ করতে শুরু করে।"
তা সত্ত্বেও লেবেড শুধুমাত্র ইউরোপের জরুরী ছিল না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও জন্যও প্রয়োজন ছিল। একদা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লেবেডকে সিআইএ এর অ্যারোডাইনামিক এর জন্য প্রধান মাধ্যম/উপদেষ্টা হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
ব্রেটম্যান এবং গোডা আরও লিখেছেন-
"অ্যারোডাইনামিক এর প্রথম পর্যায়ে ইউক্রেনে অনুপ্রবেশ এবং তারপর সিআইএ প্রশিক্ষিত ইউক্রেনীয় এজেন্টদের বের করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৫০ সালের জানুয়ারীর মধ্যে গোপন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য সিআইএ এর শাখা (অফিস অফ স্পেশাল অপারেশন, ওএসও) এবং গোপন অপারেশনের জন্য এর শাখা (অফিস অফ পলিসি কোঅর্ডিনেশন, ওপিসি) অংশগ্রহণ করে [সিআইএ এর অ্যালেন ডুলেস এর দুর্বৃত্ত দল]। ওয়াশিংটন বিশেষ করে ইউক্রেনে উচ্চ স্তরের ইউপিএ প্রশিক্ষণ এবং আরও গেরিলা অ্যাকশনের সম্ভাবনায় সন্তুষ্ট ছিল এবং অসাধারণ এই খবরটিতে যে সোভিয়েত শাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ প্রাক্তন পোলিশ, গ্রীক ক্যাথলিক প্রদেশগুলোর বাইরে ক্রমশ পূর্বদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। [কিন্তু] ১৯৫৪ সাল নাগাদ লেবেডের গ্রুপ UHVR এর সাথে সমস্ত যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। ততক্ষণে সোভিয়েতরা UHVR এবং UPA উভয়কেই পরাস্ত করে এবং সিআইএ অ্যারোডাইনামিক এর আগ্রাসী পর্বের অবসান ঘটায়। ১৯৫৩ সালের শুরু থেকে অ্যারোডাইনামিক সিআইএ এর পৃষ্ঠপোষকতায় নিউইয়র্কে লেবেডের নেতৃত্বে একটি ইউক্রেনীয় স্টাডি গ্রুপের মাধ্যমে কাজ শুরু করে যেটি ইউক্রেনীয় সাহিত্য ও ইতিহাস সংগ্রহ করে এবং ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্র, বুলেটিন, রেডিও প্রোগ্রামিং ও ইউক্রেনে বিতরণের জন্য বই তৈরি করে। ১৯৫৬ সালে এই গ্রুপটি আনুষ্ঠানিকভাবে অলাভজনক প্রোলগ রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিশিং অ্যাসোসিয়েশন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এটি সিআইএ'কে করযোগ্য নিশানা ছাড়াই দৃশ্যমান ব্যক্তিগত দান হিসাবে তহবিল পরিচালনা করার অনুমতি দেয়। নিউইয়র্ক রাজ্যের নাকউঁচু কর্তৃপক্ষকে এড়াতে সিআইএ প্রোলগকে প্রোলগ রিসার্চ কর্পোরেশন নামে একটি লাভজনক উদ্যোগে পরিণত করে, যেটি স্পষ্টতই ব্যক্তিগত চুক্তি পেতো। Hrinioch [Hrynioch] এর অধীনে, প্রোলগ মিউনিখে একটি অফিস রক্ষণাবেক্ষণ করতো যার নাম ছিল উক্রাইনিশ্চে গেসেলসচাফ্ট ফুর অস্ল্যান্ডস্টুডেইন, ইভি। বেশিরভাগ প্রকাশনা এখানে তৈরি করা হয়েছিল। প্রোলগ ইউক্রেনীয় অভিবাসী লেখকদের নিয়োগ এবং অর্থ প্রদান করতো যারা সাধারণত অসচেতন ছিল যে তারা সিআইএ নিয়ন্ত্রিত অপারেশনে কাজ করছে। শুধুমাত্র ZP/UHVR এর ছয়জন শীর্ষ সদস্যই বুদ্ধিমান এজেন্ট ছিল। ১৯৫৫ সালের শুরুতে লিফলেটগুলো ইউক্রেনের উপর আকাশপথে ফেলে দেয়া হতো এবং নোভা ইউক্রেনা শিরোনামের রেডিও সম্প্রচারগুলো ইউক্রেনীয়দের মগজ ধোলাইয়ের জন্য এথেন্সে প্রচারিত হতো। এই কার্যক্রমগুলো পোল্যান্ডে ইউক্রেনীয় যোগাযোগের মাধ্যমে এবং আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, স্পেন, সুইডেন ও অন্যত্র অভিবাসীদের মাধ্যমে ইউক্রেনে পদ্ধতিগত অপ্রত্যক্ষভাবে প্রচারাভিযানের পথ করে দিয়েছিল। সংবাদপত্র সুচসনা ইউক্রেনিয়া (ইউক্রেন টুডে), তথ্য বুলেটিন, বুদ্ধিজীবীদের জন্য একটি ইউক্রেনীয় ভাষার জার্নাল যাকে বলা হয় সুচাসনিস্ট (দ্য প্রেজেন্ট) এবং অন্যান্য প্রকাশনাগুলো ইউক্রেনের গ্রন্থাগার, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক অফিস এবং গোপন ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এই কার্যকলাপগুলো ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদকে উৎসাহিত করে।"
https://cryptome.org/2016/01/cia-ua-aerodynamic.pdf
সিআইএ ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে 'লেবেড' নামক ব্র্যান্ড তৈরী করে। OUN/UPA এর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কসাইদের একজনকে ইউক্রেনীয় জনগণের মাঝে জাতীয়তাবাদী উগ্রতা ছড়িয়ে দিতে নায়ক হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়, যা ছিল OUN দ্বারা সংজ্ঞায়িত পরিচয়। তারা ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক বিকৃত ব্যাখ্যাও ছড়িয়ে দেয়; যেমন- ভলোদিমির দ্য গ্রেটের মহান ইউক্রেনীয় জাতির ধারণাকে আরও রোমান্টিক করা, জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের বোধকে উৎসাহিত করা, ইউক্রেনিয়ানদের সাথে বেলারুশিয়ান এবং রাশিয়ানদের আরও বিভাজন তৈরী করা ইত্যাদি।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Vladimir_the_Great
একজন সিআইএ বিশ্লেষক ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেন এভাবে-
"কিছু জাতীয়তাবাদী অনুভূতি [ইউক্রেনে] বিদ্যমান রয়েছে এবং এটি ঠান্ডা যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে সমর্থন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।"
ব্রেটম্যান এবং গোডা বলেন-
…..প্রোলগ [এছাড়াও] পরবর্তী ইউক্রেনীয় প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছে...প্রোলগ সিআইএ এর একজন সিনিয়র কর্মকর্তার ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছিল, "ইউক্রেনীয় সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক এবং [তার] চল্লিশ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় নাগরিকের দিকে পরিচালিত সিআইএ এর অপারেশনের একমাত্র বাহন।"
লেবেড স্পষ্টভাবে নিজেকে এবং ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে তার ব্যান্ডারিস্ট দিনগুলোর মতো প্রকাশ্য ইহুদি বিদ্বেষ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদকে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সে প্রকাশ্যে ইহুদিদের বিরুদ্ধে 'উস্কানিমূলক কুৎসা' এবং 'অপবাদমূলক বক্তব্য' এর নিন্দা করেছিল। সে আরও যোগ করেছিল, "ইউক্রেনীয় জনগণ সকলের এবং অন্য লোকেদের প্রতি ঘৃণা প্রচারের বিরোধী।" প্রাক্তন ব্যান্ডারিস্টরা তখন সোভিয়েতদের আক্রমণ করে তথাকথিত ইহুদি বিদ্বেষের জন্য! লেবেড ১৯৭৫ সালে অবসর গ্রহণ করলেও প্রোলগ এবং ZP/UHVR এর একজন উপদেষ্টা এবং পরামর্শদাতা ছিল তখনো। ১৯৮০ এর দশকে AERODYNAMIC এর নাম পরিবর্তন করে QRDYNAMIC, এরপর PDDYNAMIC এবং পরে QRPLUMB রাখা হয়। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি কার্টারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জবিগনিউ ব্রজেজিনস্কি প্রোগ্রামটিকে প্রসারিত করতে সাহায্য করেছিলেন; তিনি এটিকে 'চিত্তাকর্ষক লভ্যাংশ' এবং 'লক্ষ্যক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দর্শকদের উপর প্রভাব বিস্তারকারী' হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Zbigniew_Brzezinski
১৯৮০ এর দশকে প্রোলগ অন্যান্য সোভিয়েত জাতিগুলোর কাছে পৌঁছানোর জন্য কার্যক্রমকে প্রসারিত করে এবং এদের মধ্যে ভিন্নমত পোষণকারী সোভিয়েত ইহুদিরা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভাঙ্গনের দ্বারপ্রান্তে, তখন ১.৭৫ মিলিয়ন ডলার চূড়ান্ত অর্থ প্রদানের মাধ্যমে QRPLUMB সমাপ্ত হয়। ১৯৮৫ সালের জুনে জেনারেল অ্যাকাউন্টিং অফিস মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসতি স্থাপনকারী নাৎসি এবং তাদের সহযোগীদের উপর একটি পাবলিক রিপোর্টে লেবেডের নাম উল্লেখ করে। বিচার বিভাগের অফিস অফ স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন সেই বছরই লেবেডের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। সিআইএ উদ্বিগ্ন ছিল এই ব্যাপারে যে জনগণ লেবেডের QRPLUMB সংক্রান্ত অবদানকে (!) বিবেচনা করবে এবং লেবেডকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে ইউক্রেনীয় অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে। তারা লেবেড এবং নাৎসিদের মধ্যে কোনও সংযোগ থাকার কথা অস্বীকার করে এবং যুক্তি দেয় সে একজন ইউক্রেনীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী! সত্যটা অবশ্যই আরো জটিল ছিল। ১৯৯১ সালের শেষের দিকে সিআইএ OUN এর সাথে জড়িত যুদ্ধ সম্পর্কিত রেকর্ডের জন্য জার্মান, পোলিশ এবং সোভিয়েত সরকারের কাছে যেতে ওএসআই-কে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করে। ওএসআই শেষ পর্যন্ত মামলাটি ছেড়ে দেয় লেবেডের বিষয়ে পর্যাপ্ত নথি সংগ্রহ করতে না পারার কারণে। লেবেড ১৯৯৮ সালে ৮৯ বছর বয়সে নিউ জার্সিতে সিআইএ'র সুরক্ষায় থাকা অবস্থায় মারা যায়। তার কাগজপত্র হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউক্রেনীয় গবেষণা ইনস্টিটিউটে আছে এখনো।
Comments