পশ্চিমারা কি আসলেই শ্রেষ্ঠ? (পর্ব-দুই)
'দ্য ডায়মন্ড সূত্রা' বইটি সংস্কৃত ভাষায় ছাপা হয়েছিল 'বজ্রচ্ছেদিকা প্রজ্ঞাপারমিতা' নামে। সংস্কৃত থেকে চীনা ভাষায় এর অনুবাদ করেছিলেন জাতিগতভাবে আধা ভারতীয়, আধা তুর্কি এক পন্ডিত।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Kum%C4%81raj%C4%ABva
এর মুখবন্ধে লেখা ছিল 'বিনামূল্যে সর্বজনীন বিতরণের জন্যে'। বহিরাগত আর্য হিন্দুরা জাতপাতের দোহাই দিয়ে ধর্মগ্রন্থ নিচু জাতের মানুষদের স্পর্শ করতে দিতো না, আব্রাহামিক তিন ধর্ম নারীদের পিরিয়ডের সময় এই আধুনিক যুগেও ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করতে দেয় না, পশ্চিমারা তাদের পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রে কথিত 'সবার জন্য শিক্ষা'র কনসেপ্ট ঢুকিয়েছে অতি সম্প্রতি। এমনকি প্রাচীন গ্রিসেও দাস আর নারীদের জন্য শিক্ষা সংক্রান্ত প্রায় সবকিছু নিষিদ্ধ ছিল। দূর প্রাচ্যের দেশগুলোতে মুদ্রণের প্রথমদিকে সমস্ত চেষ্টা প্রাচীন বৌদ্ধ প্রযুক্তিবিদদের কীর্তি যা পশ্চিমাদের মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কারের বহু আগে থেকে শুরু হয়। প্রাচীন গ্রিসের বহু আগে অবিভক্ত উপমহাদেশের বৌদ্ধ পরিষদগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ মীমাংসার জন্য সর্বসাধারণের সভা ডাকা হতো। সেখানে বিরোধী মতাবলম্বীরা যুক্তির মাধ্যমে মতপার্থক্যের মীমাংসা করতেন। সম্রাট অশোক বৃহত্তম বৌদ্ধ পরিষদের আয়োজন করেন এবং গণ আলোচনার রীতিগুলো বিধিবদ্ধ আকারে চালুর উদ্যোগ নেন। জাপানের রাজকুমার শোতোকু সম্রাজ্ঞী সুইকো'র প্রতিনিধিত্ব করার সময় ৬০৬ সালে প্রণীত 'সপ্তদশ ধারার সংবিধান' এ উল্লেখিত এই ধারাটি সবসময় মেনে চলতেন-
'গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এককভাবে একজন ব্যক্তির নেয়া উচিত নয়। বহুজনের সঙ্গে বিষয়গুলো আলোচনা করা শ্রেয়।' এটি পশ্চিমাদের ম্যাগনাকার্টা স্বাক্ষর হওয়ার আরো ৬০০ বছর আগের ঘটনা। জাপানের এই সংবিধানে আরো লেখা ছিল 'অন্যরা যখন ভিন্নমত পোষণ করে আমরা যেন বিরূপ না হই। প্রত্যেক ব্যক্তির হৃদয় আছে এবং প্রত্যেক হৃদয়ের নিজস্ব প্রবণতা আছে। তাদের ঠিক আমাদের ভুল এবং আমাদের ঠিক তাদের ভুল।'
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Seventeen-article_constitution
আজ পশ্চিমারা বলে বেড়ায় তারাই নাকি এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকাকে গণতন্ত্র শেখাবে!
খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৫ সালের দিকে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট অবিভক্ত উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে একদল জৈন দার্শনিকদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন তারা কেন সম্রাটের প্রতি নিস্পৃহতা প্রদর্শন করছে। তাকে শুনতে হয়েছিল নিচের কথাগুলো-
"মহারাজ আলেকজান্ডার, যতটুকু জমির উপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি প্রত্যেক ব্যক্তি শুধু সেটুকু জমিই পেতে পারে। আপনি আমাদের সকলের মতোই মানুষ মাত্র; তফাৎ এই, আপনি সব সময়ে শশব্যস্ত; বাড়ি থেকে বহু যোজন দূরে ঘুরে ঘুরে নানা বাজে কাজ করতে উন্মুখ। নিজের কাছে এবং অন্যের কাছে আপনি একটি উৎপাত। আপনি শীঘ্রই মারা যাবেন, আর তখন আপনাকে কবর দিতে পৃথিবীর যতটুকু জমি লাগবে ততটুকুই আপনার অধিকার।"মিশরের কায়রো, ইরাকের বাগদাদ, তুরস্কের ইস্তানবুল, ইরানের ইস্পাহান, ভারতের মুসলমান রাজ্যগুলোতে জনপরিসরে আলোচনার বহু প্রবক্তা ছিলেন। যেমন- দশম শতাব্দীতে কর্ডোভার তৃতীয় খলিফা আব্দ আল রাহমান, সম্রাট আকবর প্রভৃতি।
ম্যান্ডেলার 'লং ওয়াক টু ফ্রিডম' বইটিতে লেখা আছে নিচের কথাগুলো-
"যারা কথা বলতে চাইতেন তারা প্রত্যেকে কথা বলতেন। সেটা ছিল গণতন্ত্রের বিশুদ্ধতম রূপ। বক্তাদের মধ্যে হয়তো একটা পদমর্যাদার ক্রম থাকতো; কিন্তু প্রধান ও প্রজা, যোদ্ধা ও ওঝা, দোকানদার ও চাষি, জমিদার ও শ্রমিক প্রত্যেকের বক্তব্যই শোনা হতো।"
এক ঠ্যাং পশ্চিমে রাখা পাবলিকরা যারা কিনা বিশ্বাস করেন পশ্চিমারা জেনেটিক্যালি প্রাচ্যের অধিবাসীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ তাদের জানা উচিত কিদো তাকাইয়োসি কি বলে গেছেন-
"আমাদের দেশের মানুষের আজকের মার্কিন বা ইউরোপীয় মানুষদের সঙ্গে বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই; সবটাই শিক্ষা অথবা শিক্ষাহীনতার ব্যাপার।"
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Kido_Takayoshi
"একদিন আমি অনুমতি নিয়ে ইওয়ালতানের কাজীর ঘরে ঢুকি; দেখি তিনি একটি অপূর্ব সুন্দরী যুবতীর সঙ্গে রয়েছেন। আমি তাকে দেখে কুণ্ঠিত হয়ে ফিরে যেতে চাই, কিন্তু নারীটি আমাকে ঠাট্টা করে হেসে ওঠেন; তিনি লজ্জা পাচ্ছেন এমন কোনও ভাব প্রকাশিত হয় না। কাজী আমাকে বলেন, আপনি ফিরে যাচ্ছেন কেন? উনি তো আমার বন্ধু। তাদের ব্যবহারে আমি হতভম্ব হয়ে যাই।"
আবু মুহাম্মদ ইয়ান্দাকান আল মুসুফি-ও ইবনে বতুতার নিন্দাভাজন হয়েছেন। ইবনে বতুতা আল মুসুফির বাড়ি গেলে তিনি দেখেন কৌচে আসীন এক পুরুষের সঙ্গে এক নারী কথাবার্তা বলছেন। ইবনে বতুতা লিখেন-
আমি তাকে বললাম, "ইনি কে?"
তিনি বললেন, "আমার স্ত্রী।"
আমি বললাম, "পুরুষটির সঙ্গে ওর কী সম্পর্ক?"
তিনি উত্তর দিলেন, "উনি ওর বন্ধু।"
আমি তাকে বললাম, "আমাদের দেশে বাস করে শরিয়া বিধির সঙ্গে পরিচিত হয়ে আপনি কি এটা মেনে নেন?"
তিনি উত্তর দিলেন-
“নারী-পুরুষের মেলামেশা আমাদের ভালো লাগে এবং এটা ভদ্র ব্যবহারের অঙ্গ, তার সঙ্গে কোনও সন্দেহ যুক্ত হয় না। এরা আপনাদের দেশের মহিলাদের মতো নয়।”
আমি তার শিথিলতায় তাজ্জব হই। তাকে ছেড়ে চলে আসি এবং তারপর আর কখনও ফিরে যাইনি। তিনি আমাকে অনেকবার নিমন্ত্রণ করেন, কিন্তু আমি তা গ্রহণ করিনি।
হান্টিংটনের মতোই অসংখ্য নাকউঁচু পশ্চিমা পন্ডিত যুগে যুগে প্রাচ্য সম্পর্কে অনেক আপত্তিকর মন্তব্য করে গেছেন। নিচে কয়েকজনের উদাহরণ দেয়া হলো-
মেকলে বলেছিলেন-
"ইউরোপের যেকোনো ভালো গ্রন্থাগারের একটিমাত্র তাকে যা বই আছে তা সমগ্র আরব ও ভারতের সম্মিলিত রচনার সমতুল।"
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Thomas_Babington_Macaulay
জন স্টুয়ার্ট মিল এর ছেলে হচ্ছেন জেমস মিল। তিনি আর্যভট্টের ৪৯৯ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর আহ্নিক গতি সংক্রান্ত কাজটিকে বানানো গল্প বলে উড়িয়ে দেন! আর্যভট্ট সূর্য কর্তৃক পৃথিবীকে প্রদক্ষিণের তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত করেছিলেন। আর তিনি বলেছিলেন একটি অভিকর্ষজ শক্তি পৃথিবীর ঘূর্ণনকালে সেখানকার বস্তুসমূহের ছিটকে যাওয়াকে আটকে রাখে। অপরদিকে এই পশ্চিমা পন্ডিত দাবী করেন যে, এগুলো নাকি আগে থেকেই পশ্চিমাদের বইয়ে ছিল আর প্রাচ্যের লোকেরা তাদের বই দেখে এসব জেনেছে! এমনকি তিনি দূর প্রাচ্য, মধ্যপ্রাচ্য আর এশিয়ার অন্যান্য সভ্যতাগুলোকে পর্যন্ত নিচু স্তরের সভ্যতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/James_Mill
এমনকি এই ধরনের নাকউঁচু স্বভাব পশ্চিমা বাম ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও সমানভাবে দেখা যায়।
লুইস আলথুসার তার 'এসেজ ইন সেলফ ক্রিটিসিজম' এ লিখেছেন স্তালিনীয় বিচ্যুতি নাকি দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের মরণোত্তর প্রতিশোধ!
লুসিও কোলেত্তি তার 'মার্ক্সিজম এন্ড হেগেল' এ এঙ্গেলসকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন মার্ক্স এর কঠিন ভাষায় লেখাগুলোকে সাধারণের বোধগম্য সহজ ভাষায় লেখার অপরাধে!
পশ্চিমা তথাকথিত মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকরা স্তালিনের শাসনামলকে 'অপরিপক্ব বাইজান্টাইন রূপ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন!
পশ্চিমা বাম ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অন্যতম বার্ট্রান্ড রাসেল ১৯২০ সালের দিকে যখন 'দ্য প্র্যাকটিস এন্ড থিওরি অব বলশেভিজম' নামক সমালোচনামূলক বইটি লিখেছিলেন তখন কার্ল রাডেক লিখেন-
"যখন সোভিয়েত জনগণ ও তাদের নেতৃবৃন্দ সমস্ত অসুবিধাকে জয় করে কঠিন কাজ করে চলেছেন, তখন রাসেলের পক্ষে খুবই সহজ ও স্বাভাবিক দেশে ফিরে গিয়ে নিজের বাড়ির ঘরের মধ্যে চুল্লির উত্তাপের সামনে আরামে বসে হাতে তৈরী পানীয়ের পাত্র নিয়ে পাইপ টানতে টানতে বলশেভিকদের দুষ্কর্মের রোমন্থন করা।"
কথিত মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক জঁ এলেইনস্টাইন তার 'দ্য স্তালিন ফেনমেনন' বইটিতে লিখেছেন-
"মাও মার্ক্সবাদকে চীনের উপযোগী করে নিয়েছেন, ঠিক যেমন রাশিয়ার উপযোগী করে নিয়েছিলেন স্তালিন। এখন আমাদের কাছে থাকছে কেবল উন্নত পশ্চিমা পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভিত্তিতে সমাজতন্ত্র গড়ে তোলা।"
জর্জ লিখটাইম তার 'ফ্রম মার্ক্স টু হেগেল' বইটিতে লিখেছেন-
"সাম্যবাদ হলো একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন, এমনকি স্তালিন বা মাও এর বৈশিষ্ট্যহীনতাও তারই অঙ্গ। স্তালিনের মলদ্বার দিয়ে নির্গত পুঞ্জিত দুর্গন্ধ।"
এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ আক্রমণ করে তথাকথিত গণতন্ত্র বাস্তবায়নের কথা বলে বেড়ানো পশ্চিমাদের কিছু কুকীর্তির দিকে তাকানো যাক এবার-
জীবনে কখনো পাবলিক বাসে না চড়ার কথা গর্ব করে বলা ডিউক বংশের চার্চিল জেনারেল মন্টোগোমারিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বাজেয়াপ্ত করা জার্মান অস্ত্রশস্ত্র পশ্চিমাদের শিবিরে জড়ো করতে, যাতে সেগুলো আবার জার্মান সৈনিকদের সহজেই দেয়া যায়, যখন একসঙ্গে তাদের সাথে কাজ করতে হবে যদি সোভিয়েত ইউনিয়নের অগ্রগতি চলতে থাকে!
[সূত্র: চার্চিলের ব্যক্তিগত চিকিৎসক চার্লস উইলসনের ডায়েরি]
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Charles_Wilson,_1st_Baron_Moran
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bernard_Montgomery
সাংবাদিক রবার্ট পেরির 'করাপশন এজ এ প্রোপাগান্ডা উইপন' প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল 'গ্লোবাল রিসার্স' এর ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল সংখ্যায়। টরেন্টোভিত্তিক সংস্থাটির পরিচালক হচ্ছেন অধ্যাপক মিচেল চসুদোভস্কি। বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্যবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে।
https://www.globalresearch.ca/corruption-as-a-propaganda-weapon/5518663
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Michel_Chossudovsky
এই প্রবন্ধে পেরি জর্জিয়া, কিরগিজস্তান, ইউক্রেন প্রভৃতি দেশের তথাকথিত কালার রেভল্যুশন এবং আরব বসন্তে যুক্তরাষ্ট্রের যোগসূত্র চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র 'ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি' নামক প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সরকার পাল্টে দেয়।
https://www.ned.org/
ইউক্রেনে রুশপন্থী ইয়ানোকোভিচকে উৎখাতের পর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছিল অর্থনীতিতে গতি আনার অজুহাতে। এই অর্থ পশ্চিমা দালাল রাষ্ট্রপতি পোরোসেনকো আত্মসাৎ করে ফেলে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Petro_Poroshenko
তার নামেই এই অর্থ পাচার হয়েছিল এবং কুখ্যাত মোসাক ফনসেকা তাকে আইনি সহায়তা দিয়েছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mossack_Fonseca
পৃথিবীতে বেশ কিছু দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে যেখানে হাজার হাজার কোম্পানি রেজিস্ট্রি করে ঐ কোম্পানির নামে সেখানকার ব্যাংকে অর্থ রাখা যায়। যেমন- ভার্জিন আইল্যান্ড, কেম্যান আইল্যান্ড, সিসিলি, কুক আইল্যান্ড ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো এসব দ্বীপপুঞ্জে হাজার হাজার কোম্পানি রেজিস্ট্রি করে ঐ কোম্পানিগুলোর নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলে ব্যবসা করছে। যেমন- জার্মানির ডয়চে ব্যাংক, হংকং এর এইচএসবিসি ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংক, ফ্রান্সের সোসাইটি জেনারেল ব্যাংক ইত্যাদি। কেবল ডয়চে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে ৫০০ এর অধিক কোম্পানি! সোসাইটি জেনারেল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে ২৩০০ এর অধিক কোম্পানি! যে কেউ নাম গোপন করে এসব ব্যাংকের সহযোগিতা নিয়ে কোম্পানি খুলতে পারে। এখানে কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না। কোম্পানি রেজিস্ট্রি করে পৃথিবীর বড়ো বড়ো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখান থেকে সম্পদের পাহাড় জমাচ্ছে। নিজ দেশের ট্যাক্স ফাঁকি দিতেই এরা অফশোর কোম্পানিগুলোতে অর্থ পাচার করে। শি জিন পিং এর শ্যালক এই অর্থ পাচারের সাথে জড়িত।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Deng_Jiagui
মুহাম্মদ হাসান ওগলি আব্দুলহামিদ নামের এক আফগান জঙ্গিকে উজবেক সরকার ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল কয়েক বছর আগে পশ্চিমা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অব্যাহত চাপে! উজবেক সরকারের ক্রিমিনাল কোড এর ১৫৯ নাম্বার ধারায় এই জঙ্গিকে অভিযুক্ত করে জেলে রাখা হয়েছিল। তাকে বেকোবোদ শহরের প্রিজন নাম্বার ৬৪/২১ এ রাখা হয়েছিল। সে তোহির ইউলদাশেভ নামক জঙ্গি লিডারের অধীনে কাজ করতো। তাকে বেলারুশ সরকারের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদী কর্মকান্ডে ব্যবহার করা হয়েছিল গ্রেফতারের আগে। ২০১০ ও ২০১১ সালে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস এর প্রতিনিধিরা এই জঙ্গিকে দেখতে যায় জেলে! ২০১৬ সালের শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসেই প্রেসিডেন্ট শাভকাত মীরজিয়য়েভকে ৩০ জন তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী এবং এই ধরণের জঙ্গিদের ছেড়ে দিতে হয়েছে পশ্চিমাদের প্রবল চাপের কারণে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা এজন্য উজবেকিস্তান গেছে, যারা কিনা মার্কিনিদের সারা বিশ্বে খুলে রাখা টর্চার সেন্টার বন্ধ করতে পারেনা! এসব কুমিরের কান্না প্রদর্শনকারীদের কারণে ২০১৯ সালে যাসলিক জেল (সোভিয়েত আমলে মিলিটারি বেস ছিল) বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে উজবেক সরকার, যেখানে ১৯৯৯ সালে তাসখন্দ এর বোমা বিস্ফোরণের সাথে জড়িত জঙ্গিদের রাখা হয়েছিল। এমনকি উজবেক সরকার কিছু জঙ্গিবাদী ব্লগারকে গ্রেফতারের পরও পশ্চিমারা বাক স্বাধীনতার প্রশ্ন তুলেছিল! এই পশ্চিমারা বাংলাদেশে যখন রাজাকারদের ফাঁসি দেয়া হচ্ছিলো একে একে, তখনও মানবাধিকারের কথা সামনে এনে বলেছিলো ফাঁসি না দিতে! এরদোয়ান তুর্কি পার্লামেন্টে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বলেছিল পুরোনো কথা ভুলে যেতে!
মিত্র বাহিনীর পশ্চিমা সৈন্যরা জার্মান নারীদের উপর যেই বর্বরতা দেখিয়ে লাল ফৌজের নামে চালিয়ে দিয়ে তাদের নোংরা প্রোপাগান্ডার অংশ বানিয়ে ফেলেছিলো তাদের কুকর্মের ফিরিস্তি পাওয়া যায় মারিও পুজোর 'The Dark Arena', 'Six Graves to Munich' প্রভৃতি বইগুলোতে। এক বইয়ে দেখা যায় নায়ক দুই ঘন্টা লাইনে অপেক্ষা করেছিল এক জার্মান নারীকে ধর্ষণের জন্য! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন এয়ারফোর্সে কাজ করার কারণে নিজের চোখে এই লেখক দেখেছিলেন মিত্র বাহিনীর পশ্চিমা সৈন্যদের বর্বরতা। মিত্র বাহিনীর পশ্চিমা সৈন্যদের তান্ডব কিভাবে জার্মান নারীদের যুদ্ধের পর পতিতায় পরিণত করেছিল সেই ব্যাপারেও জানা যাবে বইগুলো থেকে।
পশ্চিমারা প্রাচ্যকে কতটা নিকৃষ্ট চোখে দেখে সেটা কেবল 'ইন্ডিয়ানা জোনস' ফিল্মের পর্বগুলো দেখলেই টের পাওয়া যায়। আমেরিকার দেবত্ব ও হিংস্রতা, প্রাচ্যবিমুখতা, ঘৃণা, তুচ্ছতা ও আতঙ্কের চোখে প্রাচ্যকে দেখা ইত্যাদি গুণ স্টিভেন স্পিলবার্গের মধ্যে পুরাপুরি বিদ্যমান। রেইডার্স অব দি লস্ট আর্কে আমরা দেখতে পাই নেপাল আর মিশরকে। স্বল্প সময়ে যে নেপালকে দেখানো হয় তা হচ্ছে রেস্তোরাঁয় ও বারের ভেতর ঝগড়া করা জনগণ, গুপ্তধনের জন্য হত্যামুখী চায়নিজ-নেপালি যে কিনা লোভ করতে গিয়ে প্রায় আগুনে পুড়তে বসেছিল তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে। ভয়ংকর অস্ত্র হাতে থাকা সত্ত্বেও মাত্র একটা চাকু দিয়ে ইন্ডি বধ করে ডজন দুয়েক চায়নিজ-নেপালিকে! ছবির বাকি অর্ধেকজুড়ে মিশরকে দেখা যায়। আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের আরব বা প্রাচ্য বিরোধিতার পুরাপুরি প্রমাণ পাওয়া যায় ছবির এই অংশে। তিনি মিশরীয় আরবদের উপস্থিত করেন ভয়াবহভাবে। তারা লম্বা দাড়ি রাখে। ভয়ংকর জোব্বা পরে। জাত অপরাধী আর বগলে ছুরি নিয়ে ঘোরে। খাবারে বিষ মেশায়। বিদেশি নারী দেখলেই ধর্ষণ করতে চায়। বানরের মতো একটা নিরীহ প্রাণীকে স্পাই হিসেবে ব্যবহার করে কাজ হাসিল করে। মিশরীয়রা খুব খারাপ। তারা ক্রীতদাসদের দিয়ে মাটি খনন করায়। ক্রীতদাসদের বেত্রাঘাত করে। যেন আমেরিকানরা কোনোদিন ক্রীতদাস দেখেনি! ছবিটিতে স্পিলবার্গের অবচেতনে উঠে আসে আমেরিকানদের আগ্রাসী চেহারা। এতগুলো দুর্বৃত্ত, এত ষড়যন্ত্র ইন্ডি একাই প্রতিহত করে বীরত্বের সাথে! যেন সে কোনও অবতার এই কালো, স্বাস্থ্যহীন মানুষগুলোর ভেতর! কালো মানুষগুলোর হাতে আছে ছুরি আর তলোয়ার, একসঙ্গে অনেকেই ইন্ডিকে আক্রমণ করে, কিন্তু হঠাৎ ইন্ডি বন্দুক বার করে এক গুলিতেই সব নিকেষ করে! ‘টেম্পল অব দি ডুম’ পর্বে দেখানো হয় চীন আর ভারতকে। এ পর্বে আরও ভয়াবহভাবে উপস্থাপন করা হয় এশিয়ানদের। ইন্ডি তখন সাংহাই। পৃথিবীর সবচাইতে বড় হীরা উদ্ধারের মিশনে। ক্রুর ষড়যন্ত্রকারী হত্যালোলুপ লোভী চীনাদের হাত থেকে সে হীরা এবং সাদা নারী দু'টিকেই হলিউডি কৌশলে উদ্ধার করে বিমানে উড়াল দেয়। কিন্তু চীনাদের নিষ্ঠুরতার এখানেই শেষ নয়। যেই মারামারিতে পরিশ্রান্ত ইন্ডি ঘুমিয়ে পড়েছে, বিমানের চায়নিজ ক্রু ও পাইলট তাদের বিমানে ঘুমন্ত অবস্থায় ফেলেই প্যারাসুট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ইন্ডিও ঝাঁপিয়ে পড়ে বিমান থেকে। তারা বরফের পর্বতের ওপর পড়ে পিছলে যায়। এই বরফের রাস্তা তাদের নিয়ে আসে ভারতে। ভারতে ইন্ডির যে অভিজ্ঞতা হয় তা যে কোনও ভয়ংকর কল্পনাকেও হার মানায়। ভারতে এসেই ইন্ডি দেখতে পায় হাড় জিরজিরে গরিব লোকদের, যারা একজন অবতারের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের দিয়ে স্পিলবার্গ বলালো যে ইন্ডিই সেই অবতার। ইন্ডির সিনা ফুলে উঠে। প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াত খেতে গিয়ে ইন্ডি দেখে খাবার প্লেটে এতবড় বাচ্চা পেটের অজগর! ভারতীয়রা তো জীবন্ত অজগর খেতে খুব পছন্দ করে! এই রাজকীয় ভোজে ভারতের উজির-নাজিররা খুব মজা করে অজগরের পেট কেটে কিলবিল করা কালো মসৃণ অজগরের বাচ্চা দুই হাতে ধরে কামড়ে খাচ্ছে! ইন্ডির চক্ষু ছানাবড়া হলেও সে অবাক হওয়ার বা ভয় পাবার লোক নয়। কেবল ইন্ডির সঙ্গিনী শ্বেতাঙ্গিনীটার মাথা ঘুরছে সাপ দেখে। তাই সে একটু সামান্য সুপ চায় পরিবেশকদের কাছে। ধুমায়িত বাটিতে চামচ দিয়ে দেখে ভারতীয়রা মরা মানুষের চোখের সুপ খায়! এবার সত্যি সত্যি মহিলা মূর্ছা যায়। ভারতীয়রা এরপর খেতে থাকে একে একে তেলাপোকা ভাজি, বড় বড় মাকড়শা ইত্যাদি। তবে স্পিলবার্গের খাদ্যচিন্তা চমৎকার বলতেই হয়! খাদ্য শেষে ভারতীয়রা খায় সদ্য কাটা বানরের মাথার গরম গরম মগজ। এই নিষ্পাপ আমেরিকান ইন্ডিরা এই সব সভ্যতাবিরোধী কাজকর্ম দেখে অবাক। শুধু ইন্ডি নয়, দর্শকরা যারা ছবিটা দেখে তাদেরও ভারতীয়দের প্রতি ঘৃণায় কুঁচকে যায় কপাল। আর ইন্ডির মতো নিষ্পাপ ‘শুভ’র প্রতিনিধির জন্য মমতায় ভরে উঠে মন। না, এখনও শুরুই হয়নি অসভ্য ভারতীয়দের হিংস্রতা। ভারতীয় বাজারি ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা অমরেশপুরী এক ভয়ংকর দৈত্য (বলরাম) যার মাথায় সবসময় ষাড়ের শিং এর ট্রুপ। আর মুখে দেবী কালীর নাম। যে কিনা জীবন্ত মানুষের বুকের ভেতর হাত ঢুকিয়ে হাতের মুঠোয় কলিজা নিয়ে খুশিতে চিৎকার করে বলে ‘আব ইসকি জান মেরি মুট্টি মে হ্যায়, মা কালী...’। তারপর সেই লোকটিকে আগুনের ভেতর আস্তে আস্তে নামিয়ে দেয়া হয়। এমন ভয়ানক দৃশ্য কে দেখেছে আগে। এই ছবির শেষ দৃশ্যে ইন্ডি ভারতের আপামর জনতাকে অমরেশপুরীর হাত থেকে রক্ষা করার মিশনে নামে। কালীর মণিমুক্তা নিয়ে পালানোর পথে আবার দলবলসহ অমরেশপুরী ঝাঁপিয়ে পড়ে ইন্ডির ওপর। একটা সেতুর দুই দিক থেকেই ভারতীয়রা আক্রমণ করে ইন্ডিকে। এই সেতু এমন এক নদীর ওপর যার নিচে কিলবিল করছে ভয়ংকর কুমির। ইন্ডির এই বিপদ দেখে ভারত শাসনরত ব্রিটিশ সৈন্যরা ইন্ডির পক্ষ হয়ে যুদ্ধ শুরু করে। একদিকে তীর-ধনুক নিয়ে হাস্যকর ভারতীয় সৈনিক, অন্যদিকে বন্দুক হাতে ব্রিটিশ সৈন্য। শেষমেষ ইন্ডিই জিতবে এটা তো চলচ্চিত্রের আইন। আর 'দ্য কিংডম অব দ্য ক্রিস্টাল স্কাল' এ সোভিয়েত লাল ফৌজকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা থেকে স্পষ্টতই প্রমাণিত পরিচালক একজন খাঁটি পশ্চিমা! একজন ইন্ডি বা স্পিলবার্গের মনের ভেতর লুকানো জিনিসটাকেই বলে সাম্রাজ্যবাদীদের বাসনা বা সাম্রাজ্যবাদীদের মন। রেইডার্স অব দি লস্ট আর্ক ও টেম্পল অব ডুম ছবি দু'টিতে ইন্ডির চরিত্রটা বিশ্লেষণ করলেই পুরো সাম্রাজ্যর মনটাকে বুঝতে পারা যায়। ইন্ডি একজন আর্কিওলজিস্ট। যে কোনও দুর্লভ সংগ্রহের জন্য সে এক পায়ে খাড়া। প্রথম ছবিতে বাদশাহ সোলেমানের জাদুর বাক্সটা, যেটার ভেতর নাকি অমর হওয়ার আলো লুকায়িত আছে। এর জন্য স্বয়ং হিটলার পাগল। নাৎসিরা দুনিয়াটা চষে ফেলছে বস্তুটির জন্য। তা শেষ পর্যন্ত ইন্ডিই বগলদাবা করে। অবশেষে সেটা যখন আবার নাৎসিরা দখল করে তখন দেখা যায় সে জাদুর বাক্স এর ভেতর থেকে বের হওয়া রশ্মিতে নাৎসিরাই পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। স্পিলবার্গ ইহুদির সন্তান। নাৎসি বিরোধীতা তার রক্তে। কিন্তু এই চলচ্চিত্রে সু আর কু-র যুদ্ধে ইন্ডি হচ্ছে সু আর শক্তির অধিকারী, বাকি সব কু আর অশুভ শক্তির প্রতিনিধি। এই ছবিতে দেখানো এশিয়া আর আফ্রিকার মানুষদের নাৎসিদের একই লাইনে এসে শেষতক এমন এক সিদ্ধান্তে দর্শক আসে যে, নাৎসি আর এশিয়া-আফ্রিকানদের তথা প্রাচ্যবাসীদের মধ্যে কোনও তফাৎ নাই। তারা সবাই ইন্ডি বা আমেরিকানদের মতো সহজ-সরল মানুষদের হত্যা করতে চায়। ভারতীয়দের যে খাদ্য তালিকা টেম্পল অব ডুমে দেখানো হয় তা-ও প্রাচ্যবাসীদের রাক্ষসের সমকক্ষ করে। স্পিলবার্গের মতো জনপ্রিয় একজন পরিচালক, যার ছবি হাজার হাজার ইউরোপ-আমেরিকার শিশুদের প্রিয়, তারা কী ভাবছে এই সব ছবি দেখে সে কথা তিনি যে জানতেন না তা তো নয়। বরং তিনি উল্লসিত ছিলেন এবং খুব সূক্ষ্মভাবে এই কাজ তিনি করেছেন। তার মতো ডিটেলে কাজ করে এরকম পরিচালক জগতে খুব কম। এই ডিটেলস নিয়ে চিন্তা করার সময় প্রত্যেকটা সিকোয়েন্সের, প্রত্যেকটা ফ্রেমের, গতির প্রতিক্রিয়ার কথা তিনি ভেবেছেন। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্পিলবার্গকে বলা হয় নীতিবাদী পরিচালক। তার প্রায় ছবিতে অভিনেতা বা মুটিভ অমানবিক এক শক্তির কাছে নিজের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, আবার নিজের চেষ্টায় তা ফিরে পায়। কিন্তু পৃথিবীতে সব সময় দুই শ্রেণীর মানুষের নীতি দুই রকম। একজন আমেরিকান হিসেবে স্পিলবার্গের যে নীতি, তা প্রাচ্যের একজন চলচ্চিত্রকারের একই নীতি নয় নি:সন্দেহে। আর তাই ইন্ডিয়ানা জোন্সের নীতি আর চীন-ভারত-মিশর তথা প্রাচ্যের নীতি একরকম নয়। প্রাচ্যের চোখে ইন্ডি একজন লোলুপ কিডন্যাপার ছাড়া কিছু নয়। এবং স্পিলবার্গও বুঝেছেন যে এটাই সত্য। আর তাই তাকে মিশরীয় বা ভারতীয়দের খারাপ বানাতে হয় তার মুভি ম্যাজিকের মাধ্যমে যেন যারা প্রাচ্য সম্পর্কে জানে না তারা প্রাচ্যের খারাপ দিক সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন তুলতে না পারে। এটাই সাম্রাজ্যবাদীদের সাংস্কৃতিক রাজনীতি বা নৈতিকতা।
আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে এডমন্ড বার্কের তথাকথিত সমর্থনের প্রতি ম্যারি ওলস্টোনক্রাফট কটাক্ষ করেছেন এভাবে-
"বার্ক এর যুক্তির মূল সুর দাসপ্রথাকে চিরকালীন স্থায়িত্ব প্রদান করা। প্রাচীনতার প্রতি তার বশ্যতা ও আনুগত্যের কথা ধরলে, ব্যক্তিস্বার্থের প্রতি তার সজাগ দৃষ্টির কথা ভাবলে, দাস ব্যবসাকে কখনওই উচ্ছেদ করা উচিত বলে মনে হবে না। আর মানুষের সহজাত মর্যাদা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল না থাকায় আমাদের অজ্ঞানী পূর্বপুরুষরা এমন একটা অবৈধ লেনদেন অনুমোদন করেছিলেন, যা যৌক্তিকতা বা ধর্মের ভাবনার চূড়ান্ত অবমাননা করে। এই অমানবিক প্রথা আমাদের মেনে নিতে হবে, মনুষ্যত্বের নিষ্ঠুর অপমানকে দেশপ্রেম বলে বর্ণনা করতে হবে, আর তাকেই সম্পত্তি সুরক্ষার আইনের প্রতি সমীচীন আনুগত্য বলে ধরে নিতে হবে!"
এমনকি বার্ক তার 'রিফ্লেকশন অন দ্য রেভোল্যুশন ইন ফ্রান্স' বইটিতে ফরাসি বিপ্লবের বিরোধিতা করেন।
যেসব পশ্চিমাপ্রেমী আন্দাজে প্রচার করে বেড়ায় যে বার্ক ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের জানা থাকা উচিত তার অভিযোগ ছিল কোম্পানি ভারতের সনাতন সামাজিক কাঠামো ও তার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করছে!
ম্যাককার্থিজম এর উন্মাদনার সময়ে আমেরিকার এক শহরে একবার ৭৫ জন তথাকথিত 'কমিউনিস্ট'কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে ফাঁস হয়ে যায় এরা প্রত্যেকেই এফবিআই থেকে প্রতি মাসে মোটা অংকের অর্থ পেতো। এফবিআই ছাড়াও জোঁকেদের রক্ষাকারী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করে সারা পৃথিবীতেই এভাবে গৃহপালিত বামপন্থী সংগঠনগুলো তৈরী করে রেখেছে। এই ৭৫ জন ব্যক্তি কেউ কাউকে চিনতো না। এফবিআই এর কাজ ছিল মাঝে মাঝে এসব দালালদের লোক দেখানো গ্রেফতার করে সস্তা বাহবা কুড়ানো এবং আমজনতার মধ্যে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/McCarthyism১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিপর্যস্ত ইউরোপ। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের আধিপত্য ভাঙতে হাজির হিটলার। ব্রিটেনের সামনে একটাই রাস্তা খোলা আছে, অর্থাৎ আমেরিকাকে তাদের পাশে পাওয়ার চেষ্টা। সেই আশায় চার্চিল স্মরণ করলেন রুজভেল্টকে। কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড ঘেঁষে ভাসছিল ব্রিটেনের রণতরী ‘প্রিন্সেস অফ ওয়েলস’।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/HMS_Prince_of_Wales_(R09)
সেখানে তিনদিন আলাপ করলেন তারা। রুজভেল্ট চার্চিলকে জানালেন তার প্রস্তাব। আমেরিকা সব কিছু দিয়ে ব্রিটেনকে বাঁচাবে, কিন্তু যুদ্ধ শেষ হলে সারা পৃথিবীতে ব্রিটিশদের অধীনে যত ভূখণ্ড আছে সেখানে স্বাধিকার দিতে হবে। রুজভেল্টের কথা না শুনলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য চলে যাবে জার্মানির হাতে। মিত্রপক্ষের অংশ হিসেবে ব্রিটেন যুদ্ধে জিতলেও তিনি পরের নির্বাচনে হেরে গেলেন। স্বাক্ষর হলো আটলান্টিক সনদ।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Atlantic_Charter
এটাই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। এতে নিশ্চিত হলো যুদ্ধ শেষে ইউরোপীয় দেশগুলো একে একে হারাবে তাদের সকল উপনিবেশ। হারাবে বিনা পয়সায় পাওয়া কাঁচামালের মনোপলি মার্কেট। যে সাগরপথ তারা আটকে রেখেছে, সেগুলো খুলে দিতে হবে। অনেক নতুন স্বাধীন দেশ তৈরি হবে। সেখানে সস্তায় পাওয়া যাবে অনেক কাঁচামাল। যে বাজারগুলো উপনিবেশের বাঁধনে দখল করে রেখেছে ইউরোপীয়রা, সেগুলো হবে উন্মুক্ত। যুদ্ধ শেষে একমাত্র বড় শক্তি হবে আমেরিকা। এজন্য এসব আসবে আমেরিকার হাতে। আগে ইউরোপিয়ানরা সরাসরি দস্যু পাঠিয়ে লুট করে আনতো। জোর করে শুধু তাদের বানানো জিনিস চড়া দামে বিক্রি করতো উপনিবেশগুলোতে। এখন সেটা হবে না। আবার শুরু হলো আলোচনা নিউ হ্যাম্পসায়ারের ব্রেটন উডস এর মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে, ১৯৪৪ সালে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bretton_Woods_system
২২ দিন আলাপ চললো ব্রেটন উডসে। এই আলাপ থেকে জন্ম হলো বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ এবং ডব্লিউটিও এর। এই নতুন মহাজনী কারবারে জোঁকেরা অর্থ দেয়। সেই অর্থে ফান্ড হয় আর সেই ফান্ড থেকে ঋণ দেয়ার সূচনা হয় অনুন্নত দেশগুলোকে। যুদ্ধ শেষে পৃথিবীজুড়ে স্বাধীন হতে থাকলো ইউরোপীয় উপনিবেশগুলো। এই নতুন দেশগুলোর প্রায় সবগুলো ছিল গরীব। এই সুযোগে আমেরিকার নেতৃত্বে এগিয়ে এলো বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফ। বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন প্রেসক্রিপশন সব দেশের জন্য মোটামুটি একই রকম। তারা গরীব দেশগুলোকে বললো সরকার হলো দেশের জন্য বোঝা, তাই সব জায়গা থেকে সরকারের হাত ছেঁটে দিতে হবে। সবকিছু হবে প্রাইভেট। সেটা স্মার্টফোনই হোক বা আন্ডারওয়্যার, হাসপাতালই হোক বা কবরস্থান, ফাইভ স্টার হোটেলই হোক বা পাবলিক টয়লেট। খাতক দেশগুলোতে বড় বড় প্রাইভেট কোম্পানির অনুপস্থিতিতে ধনী দেশগুলোর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি সেই শূন্যস্থান পূরণ করলো। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়ে বিশাল বিশাল অফিস তৈরী করে সেসব দেশের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পদগুলো লুট করা হতে থাকলো। তারা শর্ত দিলো এমনভাবে দেশগুলোতে আইন করতে হবে যেন এসব মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি যদি কোনো অপরাধ করে, তাদের বিচার করবে কেবল পশ্চিমারা। শুধু তাই নয়, তাদের কিছু লোককে এসব দেশে কনসালটেন্ট হিসেবে রাখতে হবে। এই পরামর্শদাতাদের মোটা অংকের বেতন, বোনাস, রিস্ক ভাতা দেশগুলোকে বহন করতে হবে। এসব পরামর্শদাতাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হোটেলে স্থায়ীভাবে জায়গা দিয়ে দিতে হবে। আরো একটা শর্ত হচ্ছে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বন্ধ করতে হবে। জোঁকেদের মারপ্যাঁচ যখন দেশগুলো বুঝতে পারে, ততদিনে তাদের সব কাঁচামাল চলে গেছে বিদেশী কোম্পানির হাতে। ছোট ছোট শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে। বাজার ভরে গেছে বড় বড় কোম্পানির বিদেশী পণ্যে। ঋণ শোধ হওয়ার পরিবর্তে উল্টো বেড়েছে। এই জোঁকেদের রয়েছে জগতজুড়ে মহাজনী সিন্ডিকেট। এরা খুশী না হলে অন্য কেউ ঋণ দেবে না। তাদের সার্টিফিকেট ব্যতীত কোনো বড় কোম্পানি পাশে দাঁড়াবে না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দু’পক্ষ মিলিয়ে ৭০-৮০ হাজার থেকে শুরু করে ২ লক্ষ পর্যন্ত সৈন্য ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দু’পক্ষের সামরিক বাহিনী ব্যাপকভাবে নাগরিক পরিকাঠামোর ওপর আক্রমণ করেছে। বহু ইউক্রেনীয় জনগণকে নিজেদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ডনবাস অঞ্চলের লুগানস্ক ও ডোনেৎস্ক সরকার রুশ সামরিক শক্তির সাহায্যে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করা ও এলাকায় নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের পর সেখানে মার্কিন/ন্যাটো বাহিনীর সাহায্যে ইউক্রেন বোমা-গুলিবর্ষণ করে চলেছে। ইউক্রেনের শ্রমজীবী জনগণ দুর্ভোগ পোহালেও সেখানকার পুঁজিপতি, অস্ত্র নির্মাতা ও ফটকাবাজরা বিপুল মুনাফা করছে। লগ্নি পুঁজিপতি ও সংস্থাগুলো ইউক্রেন যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে তেল ও শস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বাজারে ফটকাবাজি করে চলেছে। ইউরোপে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় জ্বালানির সমস্যায় সেখানকার সাধারণ মানুষ গোটা শীত জুড়ে ভুগেছে। মার্কিন অস্ত্র নির্মাতারা ইউক্রেনের দীর্ঘ যুদ্ধ থেকে সবচেয়ে বেশি ফায়দা লুটছে। বাইডেন সরকার একাই ইউক্রেনে ৭৬৮০ কোটি ডলার ঢেলেছে, যার মধ্যে ৬১% জেলেনস্কি সরকার ও আজভ ব্যাটেলিয়নকে দেয়া হয়েছে অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত সামগ্রীর জন্য ঋণ হিসেবে। ন্যাটোতে থাকা জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন ইউক্রেনে ট্যাঙ্ক, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে। এর একমাত্র লক্ষ্য ইউক্রেনের যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী করে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মুনাফার সুযোগ করে দেয়া। বাইডেন তার ইউক্রেন সফরে জেলেনস্কি সরকারকে আরও সামরিক সাহায্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমেরিকা/ন্যাটো তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে পুতুল হিসেবে ব্যবহার করছে মূলত। মার্কিন সামরিক পরামর্শদাতারা দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, অন্যদিকে মার্কিন বাহিনী পোল্যান্ডে প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষা করছে। মার্কিন সামরিক কর্তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। জেলেনস্কি সরকার বারবার রাশিয়ার আলাপ-আলোচনা ও শান্তির আহবান প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে রাশিয়া আমেরিকার সঙ্গে তাদের অস্ত্র সংবরণ চুক্তি মাঝপথে ঝুলিয়ে দিয়েছে এবং তাদের অস্ত্র ব্যবস্থাকে যুদ্ধের সাজে সজ্জিত করে রেখেছে। রাশিয়ার সীমান্তের কাছে রুশভাষী অঞ্চলে ইউক্রেন ও আমেরিকার বোমাবর্ষণকে আটকে দিতে রাশিয়া সামরিক কার্যকলাপকে বাড়িয়েছে। তারা তাদের পারমাণবিক শক্তিকে চূড়ান্ত তৎপর থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকে তিন দশক ধরে পূর্ব ইউরোপে আমেরিকা যে সম্প্রসারণবাদ চালাচ্ছে, এই যুদ্ধ মূলত তার ফলাফল। ১৯৯০-৯১ সালের মিনস্ক চুক্তিতে আমেরিকা ও ন্যাটো ঘোষণা করেছিল, তারা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে হওয়া ওয়ারশ চুক্তিতে যুক্ত কোনো দেশকে ন্যাটোয় যুক্ত করবে না।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Minsk_agreements
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Warsaw_Pact
কিন্তু তা লঙ্ঘন করে আমেরিকা ন্যাটো সামরিক জোটকে জার্মানির পূর্ব সীমান্ত থেকে সম্প্রসারিত করে মধ্য ইউরোপে নিয়ে এসেছে। পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, হাঙ্গেরি, লিথুয়ানিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া এবং অন্যান্য ওয়ারশ চুক্তির দেশগুলোকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তের দিকে এগিয়ে চলেছে।
"সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো নিজেদের বিনিয়োগ ও আধিপত্যের এলাকা বাড়ানোর জন্য অবিরত দুনিয়াকে পুনর্বিভাজনের চেষ্টা করে।"
- লেনিন
ইউক্রেনে আমেরিকার ছায়াযুদ্ধ চালানোর পেছনে অন্যতম কারণ রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল ইউরোপীয় বাজার দখল করা এবং ডনবাস অঞ্চলের বিরল মৃত্তিকা মৌলের খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয়া। ইউক্রেনে কোটি কোটি ডলার ঢালার পাশাপাশি আমেরিকা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপিনস ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যা চিনের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধের নাটকের প্রস্তুতির অঙ্গ। অন্যদিকে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসন মূলত তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের প্রকাশ। নিজেদের বাজার ধরে রাখতে রুশ পুঁজিপতিরা ইউক্রেনের জনগণের উপর এই আক্রমণ চালিয়েছে।
তুরস্কের বিখ্যাত সাংবাদিক হ্রান্ট ডিংক ছিলেন জাতিগতভাবে আর্মেনিয়ান। গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার আগে তুরস্কের পেনাল কোডের কুখ্যাত ৩০১ নাম্বার আর্টিকেলের অধীনে তাকে তিনবার আটক করা হয়েছিল ওসমানীয়দের দ্বারা সংগঠিত আর্মেনীয় গণহত্যা নিয়ে রিপোর্ট করার কারণে। যেই খুনি সাদা রঙের ক্যাপ পড়েছিল খুনের সময়, তুরস্কের শিশুদের সেই রঙের ক্যাপ পড়িয়ে উগ্র তুর্কিরা মার্চ করিয়েছিলো খুনির প্রতি সংহতি প্রদর্শন করতে! এমনকি তুরস্কের পুলিশ আর আধা সামরিক বাহিনী তুরস্কের পতাকা সামনে রেখে খুনির দুই পাশে হাসি মুখে পোজ দিয়ে ফটো তুলেছিল যা সেসময় অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য, আমেরিকা এবং ইজরায়েল উভয় দেশই তুরস্ক সরকার কর্তৃক এই গণহত্যাকে অস্বীকার করার অবস্থানকে বছরের পর বছর ধরে সমর্থন জানিয়ে এসেছে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hrant_Dink
লাদেনের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে আর রাসায়নিক অস্ত্র আছে এই সন্দেহে বিল ক্লিনটন তার শাসনামলে সুদানের সবচেয়ে বড়ো ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানায় (আল-শেফা) আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিল। এই ঘটনার পর ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগে ওষুধের অভাবে হাজার হাজার সুদানবাসী মারা যায়। অথচ আজ পর্যন্ত আমেরিকা এর জন্য মাফ চায়নি।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Al-Shifa_pharmaceutical_factory
১৯৯০ এর দশকে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী আর আন্তর্জাতিক পুলিশ পূর্ব ইউরোপে নারী পাচার ও তাদের যৌনকর্মী হতে বাধ্য করতো। বসনিয়ায় সেসময় নারী পাচার চক্রের কাজকর্ম ফাঁস করেছিল যারা, জাতিসংঘ মিশনে এবং আন্তর্জাতিক পুলিশ টাস্ক ফোর্সে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়ে তাদের চাকরি হারাতে হয়। বসনিয়ায় গৃহযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অর্ধনগ্ন কয়েকজন নারীকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এদের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্নভাবে অপহরণ করা হয়েছিল। এসব মেয়েদের মধ্যে ১১ বছরের কিশোরী পর্যন্ত ছিল। আর এসব কাজ করা হতো আন্তর্জাতিক কর্মীদের নারী সঙ্গ যোগানোর জন্য! ১৯৯৫ সালের শান্তি চুক্তির পর বসনিয়ায় হাজার হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হয়, সেখানে ঘাঁটি গড়ে তোলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীরা। সেসময় বসনিয় ভাষা জানে না এমন মেয়েদের গণিকা হিসাবে কাজ করার দায়ে স্থানীয় বিচারকদের এজলাসে তোলা হতো। এদের কেউ কেউ যখন কিছু নারী সংগঠনকে তাদের কাহিনি বলতে শুরু করে, তখনই আসল সত্যটা জানাজানি হয়। পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশে গর্বাচেভ প্রণীত জগাখিচুড়ির সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা ছিল সেসময়। পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশের মানুষ এজন্য কাজের সন্ধানে যে কোন দেশে পাড়ি জমাতে তৈরি ছিল। তখন বিজ্ঞাপন দেয়া হতো হোটেলে কাজ করার জন্য বা চুল কাটার কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আরও নানা ধরনের কাজের বিজ্ঞাপন দিয়ে এসব মেয়েদের প্রতারিত করা হতো। বসনিয়ায় পৌঁছানোর পর প্রথমেই তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে ভুয়া পাসপোর্ট দেয়া হতো। এরপর তাদের ওপর চালানো হতো যৌন নির্যাতন, যাতে নির্যাতনের মুখে তারা ভেঙে পড়ে। যুদ্ধের পর মুসলিম ও সার্বদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন বজায় রাখতে বসনিয়ার ব্রাকোতে অ্যারিজোনা বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিল আমেরিকা। পরে এই বাজার ইউরোপের সবচেয়ে বড় কালোবাজারে পরিণত হয়। নারী কেনাবেচা হতো সেখানে। তারপর দু'তিনজন করে নারীদের বসনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় চালান করে দেয়া হতো। ঐসব ঘরে পুরুষরা মেয়েদের বন্দুকের পাহারায় রাখতো। পালিয়ে যাওয়া মেয়েদের আবার ধরে এনে পিটিয়ে মেরে ফেলা হতো। স্থানীয় মানুষ তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল না। ঐসব জায়গায় যাওয়া এবং যৌনকর্মীদের পেছনে খরচ করার সঙ্গতি তাদের ছিল না। একজন নারীর জন্য খরচ দিতে হতো ১০০ ইউরো। দিনে এক একজন মেয়েকে ১০-২০ বার যৌনকাজ করতে বাধ্য করা হতো। জাতিসংঘে কর্মরত এসব শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে কম দামে সার্বিয়ান মাফিয়াদের কাছে এসব অসহায় যৌনদাসীদের বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগও আছে। এমনকি গণিকালয়ের মালিকদের কাছ থেকে তারা ঘুষ পর্যন্ত নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যা জাতিসংঘের তদন্তে বের হয়ে এসেছে। বসনিয়ায় আন্তর্জাতিক পুলিশ টাস্ক ফোর্সের কোন কোন কর্মী নথিপত্র জাল করে সীমান্ত চৌকি দিয়ে নারী পাচারের কাজ করেছে এবং যৌন ক্লাবের মালিকদের হাতে এসব নারীদের খবর তুলে দিয়েছে।
লাইবেরিয়া লোহা, সোনা ইত্যাদি বিদেশে বিক্রি করে কিছু অর্থ পেতো। ১৯৭০ এর দশকে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব জিনিসের দাম হঠাৎ কমে যায়। এজন্য লাইবেরিয়ারতে ডলারের পরিমাণ কমে গেলো। বিদেশের সাথে বাণিজ্য ডলার ছাড়া হবে না। তাই একমাত্র উপায় হিসেবে লাইবেরিয়ার নেতারা গেলো আইএমএফ এর কাছে। ১৯৭৯ সালে আইএমএফ এলো লাইবেরিয়ায় ২ জন কনসালটেন্ট নিয়ে। তারা লাইবেরিয়ার অর্থ মন্ত্রনালয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসেই আদেশ করলো ধানের উপর ভর্তুকি বন্ধ করে দিতে এবং বিদেশ থেকে কম দামে চাল কিনতে। লাইবেরিয়ার নেতারা তখন আইএমএফ এর অর্থে ফুর্তিতে ব্যস্ত। এজন্য কৃষিতে ভর্তুকি বন্ধ হলেও বিদেশ থেকে সময়মত চাল আসেনি। অভুক্ত মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। আইএমএফ সেখানে যাবার তিন মাসের মাথায় রাজধানী জুড়ে খাবারের জন্য লেগে গেলো ভয়াবহ দাঙ্গা। সামরিক বাহিনীও ক্ষেপে উঠলো সরকারের উপর। এক বছরের মাথায় সেখানে ক্যু হয়ে সামরিক বাহিনীর একাংশ দখল করলো ক্ষমতা। শুরু হলো গৃহযুদ্ধ, যা চললো একটানা ২৬ বছর। আর এই ২৬ বছরে জোঁকেরা সমর্থন করে গেছে সামরিক শাসকদের। নতুন নতুন ঋণ দিয়েছে। সেই টাকায় সামরিক নেতারা অস্ত্র কিনেছে ধনী দেশগুলো থেকেই। সেই অস্ত্রে মারা হয়েছে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ। কিন্তু জোঁকেদের ঋণের টাকা শোধ করতে হয়েছে সাধারণ মানুষকেই।
কঙ্গো প্যাট্রিক লুমুম্বার নেতৃত্বে স্বাধীন হয়। লুমুম্বা দেখলেন জোঁকেদের কাজ শুধু ধনীদের স্বার্থে। সারাজীবন শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে রাজনীতি করেছেন লুমুম্বা। তিনি সরে গেলেন বিশ্বব্যাংকের বলয় থেকে। এর কিছুদিন পরই আততায়ীদের হাতে নিহত হলেন লুমুম্বা। এরপর জোঁকেরা ক্ষমতায় বসায় মোবুতুকে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mobutu_Sese_Seko
তিনি ৪০ বছর ধরে কঙ্গোর সাধারণ মানুষের রক্ত শুষে গেছেন পশ্চিমাদের পূর্ণ সমর্থন নিয়েই।
বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশসহ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বহু অনুন্নত দেশ উন্নত ধনতান্ত্রিক বিশ্বের সাহায্যে নিজ নিজ দেশে ধনতান্ত্রিক বিকাশের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকলেও তাদের এই প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এবং তাদের সঙ্কট বাড়ছে। তারা আপাদমস্তক সাম্রাজ্যবাদীদের দেয়া ঋণে নিমজ্জিত। আসল তো দূরের কথা, তারা ঋণের সুদ পর্যন্ত শোধ করতে পারে না। উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর সাহায্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দেয়া হয় না। এই সাহায্য হলো ব্যবসা। এই সাহায্য হলো পরোক্ষ শোষণ। সাহায্যের শর্তাবলী অধীনতামূলক হয় এবং এতে সাহায্য গ্রহণকারী দেশকে অর্থনৈতিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো আড়াল থেকে ঋণগ্রহীতা দেশের শিল্প, বাণিজ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। এসব দেশের শাসকরা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের প্রভুত্ব মেনে নেয়। উন্নয়নের নামে প্রদত্ত সাহায্যে এসব দেশে লুটেরা বুর্জোয়া শ্রেণীর জন্ম হয়। নানান দুর্নীতিপূর্ণ পন্থায় তারা অকল্পনীয় সম্পদের মালিক হয়ে বিলাসী জীবনযাপন করে। এই ধরনের শোষণের ফলে এসব দেশের জনগণের সিংহভাগ দারিদ্রসীমার নীচে চলে গেছে। বেকারত্ব, গৃহহীনতা, ভয়াবহ অপুষ্টি নারকীয় দুর্দশার সৃষ্টি করেছে এবং দেশ ভিক্ষুকে ছেয়ে গেছে। এসব উন্নয়ন পরিকল্পনায় সাম্রাজ্যবাদীদের অনুমোদন নিতে হয়। এসব দেশ এই কথিত উন্নয়ন পরিকল্পনার ৮৫% অর্থের জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের উপর নির্ভরশীল। একটি উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশ কখনো একটি অনুন্নত আধা-পুঁজিবাদী, আধা-সামন্ততান্ত্রিক দেশকে স্বাধীন ধনতান্ত্রিক দেশে পরিণত করতে পারে না। এসব দেশের জনগণকে শোষণ করেই তারা উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে। তাদের স্বাধীন ধনতান্ত্রিক বিকাশে সাহায্য করার অর্থ হবে সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণ থেকে এসব দেশের মুক্ত হওয়া। আর সেটা হবে সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য আত্মহত্যার সামিল। ভারী ও মৌল শিল্প স্থাপন স্বাধীন ধনতান্ত্রিক বিকাশের পূর্ব ও মূল শর্ত, যেটা তারা এসব দেশকে দিতে নারাজ। কারণ দেশগুলো যদি নিজেদের দেশেই স্বাধীন ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করে তাহলে তাদের খুচরা যন্ত্রপাতি ও শিল্প দ্রব্যের বাজার হারাতে হবে। এতে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট ও বেকারত্ব বেড়ে যাবে। কেবল জাপানে শিল্পের দ্রুত বিকাশের ফলে পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জাপানে উৎপাদিত শিল্পদ্রব্যের দাম সস্তা হওয়ার কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর বাজারে সেগুলোর অনুপ্রবেশ ঘটে এসব দেশে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এজন্য অনুন্নত দেশের ধনতন্ত্রের পথ ধরে উন্নত হওয়ার পথে সবার আগে ধনতান্ত্রিক দেশগুলোই বাধার সৃষ্টি করবে। অনুন্নত দেশগুলোতে যে পুঁজিবাদী বিকাশ হয়েছে, সেজন্যই তা বিকলাঙ্ক। শোষণের স্বার্থে উন্নত দেশসমূহ এসব দেশকে চিরকাল বিকলাঙ্ক অবস্থাতেই রাখবে। এক্ষেত্রে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সংশোধনবাদী নীতির উদাহরণ টেনে আনা হাস্যকর। বর্তমানের আধা পুঁজিবাদী চীনের মাও সে তুং পরবর্তী নেতারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বিরোধিতায় জানপ্রাণ লাগিয়ে দিলেও এই বিপ্লবের ধারা নীতিগতভাবে সঠিক ছিল। এ ধরনের বিপ্লব পূর্বে আর কোনো সমাজতান্ত্রিক দেশে সংঘঠিত হয়নি বিধায় মাও এর কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই কৌশলগত কিছু ত্রুটি অবশ্যই ছিল। ১৯৪৯ সাল থেকে পুঁজিবাদী পথে যাত্রাকারীরাই চীনে ক্ষমতায় আসছে বরাবরের মতো। এদেরকে ‘ক্যাপিটালিস্ট রোডার’ বলে ডাকা হতো। দেং জিয়াও পিং বলেছিলেন “বেড়াল কালো বা সাদা হোক তাতে কিছু আসে যায় না। ইঁদুর ধরতে পারলেই হলো”। তিনি আরও বলেছিলেন “মাও এর কর্মকান্ড ৭০ ভাগ সঠিক ছিল। ৩০ ভাগ ভুল ছিল।” দেং ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এটাও প্রচার করে যে, মার্কসবাদ সেকেলে হয়ে গেছে! তারা মনে করে যে, সমাজতন্ত্র কায়েম হয়ে যাওয়ার পর শ্রেণী সংগ্রামের আর কোনো প্রয়োজন থাকে না। এরপর কাজ শুধু উৎপাদন বাড়াতে থাকা! অথচ কমিউনিজম প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণী সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার কথা লেনিন ও মাও বলে গেছেন। দেং জিয়াও পিং এর সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলোর ফলস্বরূপ বেড়েছে শ্রেণীবৈষম্য, দুর্নীতি, কালোবাজারি, পতিতাবৃত্তি, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং নৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়। দেং লাখের উপর চীনা ছাত্রকে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের মন্ত্রে প্রশিক্ষিত হওয়ার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিলেন! ডলারের গন্ধ পেয়ে তাদের একাংশ দেশে ফিরে আসেনি। আর একাংশ দেশে ফিরে তিয়েনআনমেন চত্বরে গণতন্ত্রবাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। এদের প্রতি দমনমূলক নীতি গ্রহণ করায় আমেরিকা, বৃটেন, কানাডা, বিশ্বব্যাংক থেকে চীনকে সাহায্য প্রদান স্থগিত করা হয়। লেনিন ও মাও বলেছিলেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরও একটি দেশে পুঁজিবাদ ফিরে আসার ক্ষেত্র বিরাজ করে। সমাজতন্ত্র কায়েমের পরও পেটিবুর্জোয়া ও সুবিধাভোগী শ্রেণী থেকে যায়। এর ফলে থেকে যায় পুঁজিবাদী ভাবধারা, সুযোগ পেলেই যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। অনুন্নত দেশগুলোকে দারিদ্র্য ও পশ্চাৎপদতা থেকে মুক্ত করতে হলে সমাজতন্ত্র ছাড়া গতি নেই। অনেকে কুযুক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার ধনতান্ত্রিক বিকাশের কথা তুলেন। কিন্তু সিঙ্গাপুর কোনো আধা-সামন্তবাদী দেশ নয়, এটি একটি বন্দর নগরী। অপরদিকে মার্কিনীদের দালাল চিয়াং কাই শেক চীনের কমিউনিস্টদের হাতে পরাজিত হয়ে তাইওয়ানে পালিয়ে যায়। মার্কিনীরা তাইওয়ানকে সমাজতান্ত্রিক চীনের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এর ধনতান্ত্রিক বিকাশ ঘটায়। আবার দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিনীদের তাদের সৈন্য মোতায়েন করে রপ্তানীভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলতে হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে পুঁজি হচ্ছে মার্কিনীদের এবং মুনাফার সিংহভাগ তাদের ভান্ডারে গিয়ে জমা হয়। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সোভিয়েত ইউনিয়ন সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো দিয়ে ঘেরাও থাকা অবস্থায়ও স্তালিনের নেতৃত্বে তারা বিশ্বকে ফ্যাসিবাদের কবল থেকে রক্ষা করেছিল। চীনের সাথে ভারতের মতো দেশগুলোর উন্নতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে সমাজতন্ত্রের শ্রেষ্ঠত্ব সহজেই প্রমাণিত হয়। মাও সে তুং এর সময় চীন এটম ও হাইড্রোজেন বোমা বানায়। এক টুকরো লোহাও অন্য দেশ থেকে না এনে সাড়ে তিন মাইল দীর্ঘ ইয়াংসি সেতু নির্মাণ করে। অপরদিকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের দাবীকারী ভারত কৃষি ও শিল্পে চীনের বহু পেছনে। এই একুশ শতকে এসেও ভারতের মতো দেশগুলো অস্পৃশ্যতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতি থেকে মুক্ত হয়নি। এসব দেশে কোটি কোটি মানুষ বেকার এবং নিরক্ষর। বর্তমানে চীন ও প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোতে যেসব সঙ্কট ও অরাজকতা চলছে তা মোটেই সমাজতন্ত্রপ্রসূত নয়। বরং সমাজতন্ত্র থেকে বিচ্যুত হয়ে পুঁজিবাদের পথ গ্রহণের ফলে এসব দেশে বিভিন্ন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো এবং তাদের দালালরা বুর্জোয়া গণতন্ত্রের প্রশংসা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। অথচ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কৃষিপ্রধান, অনুন্নত, নয়া উপনিবেশিক দেশসমূহে বুর্জোয়া গণতন্ত্র একেবারেই অচল। কারণ বুর্জোয়া অর্থনীতি, ব্যাপক গণশিক্ষা, সকল নাগরিকের রাজনৈতিক দলভুক্ততা প্রভৃতি বুর্জোয়া গণতন্ত্রের পূর্বশর্তসমূহ এসব দেশে অনুপস্থিত।
সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে পশ্চিমাদের পা চাটতে যাওয়া দেশগুলোর আমজনতার অবস্থার দিকে একটু তাকানো যাক।
গণভোটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্পেন জোর করে কাতালোনিয়ার প্রাদেশিক সরকারকে বরখাস্ত করে কেন্দ্রের শাসন জারি করেছিল। এছাড়া বাস্কদের স্বায়ত্তশাসন পেতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Catalan_independence_movement
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Basque_Country_(autonomous_community)
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Basque_National_Liberation_Movement
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Basque_conflict
ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চল ইস্ত্রিয়ার স্বায়ত্তশাসনের দাবীকে দমন করে ক্রোয়েশিয়া।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Istria_County
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Istrian_Democratic_Assembly
চেক প্রজাতন্ত্র মোরাভিয়া ও চেক সিলেসিয়ার স্বায়ত্তশাসনের দাবীকে দমন করে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Moravia
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Czech_Silesia
আপার সিলেসিয়ার এক অংশ পোল্যান্ডে ও আরেক অংশ জার্মানিতে পড়েছে। উভয় দেশই সিলেসিয়ান জাতির স্বায়ত্তশাসনের দাবী দমন করেছে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Upper_Silesia
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Silesian_Autonomy_Movement
রুমানিয়ার সেজকেলি ল্যান্ড এর হাঙ্গেরিয়ানদের স্বায়ত্তশাসনের দাবী দেশটি মেনে নেয়নি।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sz%C3%A9kely_Land
ডেনমার্কের বর্নহোল্ম দ্বীপের স্বায়ত্তশাসনের দাবী দেশটি মেনে নেয়নি।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bornholm
ডেনমার্কের ফারোও দ্বীপপুঞ্জের স্বায়ত্তশাসনের দাবী দেশটি মেনে নেয়নি বহু বছর পর্যন্ত।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Faroe_Islands
ইতালির লমবারদি অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসনের দাবী দেশটি মেনে নেয়নি।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Lombardy
এছাড়া ইতালির ভেনেতো অঞ্চলের ও দক্ষিণ তিরলের দাবীও দেশটি মেনে নেয়নি। দক্ষিণ তিরল ও সিসিলিকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেতে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Veneto
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sicily
https://en.m.wikipedia.org/wiki/South_Tyrol
ফ্রান্স করসিকা দ্বীপের স্বায়ত্তশাসনের দাবী মেনে নেয়নি।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Corsica
https://en.m.wikipedia.org/wiki/P%C3%A8_a_Corsica
বেলজিয়াম ফ্লান্ডার্স ও ওয়ালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসনের দাবী মেনে নেয়নি।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Flanders
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Wallonia
জার্মানি বেভারিয়ার স্বায়ত্তশাসনের দাবী মেনে নেয়নি।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bavaria
উত্তর আয়ারল্যান্ডের অধিবাসীদের উপর ইংরেজদের বর্বরতার কথা সর্বজনবিদিত। এছাড়া স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস এর স্বায়ত্তশাসনের দাবী মেনে নেয়নি যুক্তরাজ্য সরকার।
Comments