ট্রটস্কিবাদ


ট্রটস্কির মৃত্যুর বহু বছর পরও রিভিশনিস্ট চক্রের কাছে জনপ্রিয় তিনি।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Revisionism_(Marxism)

তার তত্ত্ব নিয়ে ডজন খানেক দল-উপদল গড়ে উঠেছে, যারা নিজেদের ট্রটস্কিপন্থী বলে দাবী করে। ট্রটস্কি প্রচলিত পুঁজিবাদি-সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক হয়ে উঠেন, তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামরিক কায়দার অনুসারী ছিলেন। ট্রটস্কির তত্ত্ব ছিল মূলত 'অসম এবং সম্মিলিত উন্নয়ন'তিনি এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা লিখেছেন তার রিভিশনিস্ট ধারার পুস্তক 'নিরন্তর বিপ্লব' নামক বইতে-

“আমরা যদি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উদাহরণ হিসাবে ভারত ও ব্রিটেনের হিসাব করি, তবে দেখতে পাবো আন্তর্জাতিক জাতীয়তার প্রশ্নে দুই দেশের শ্রমিকগণ একই অবস্থায় দিনাতিপাত করছে না, তাদের কাজ ও কর্ম পদ্বতিও এক নয়, তারা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। ভারতীয়দের স্বাধিকার আন্দোলনের সফলতা এবং ব্রিটেনে ও অপরাপর দেশসমূহে বিপ্লবের সম্ভাবনা ছিলো। এখন ভারতে বা ব্রিটেনে কি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করে সমাজ গঠন করা সম্ভব? তারা সকলেই এখন এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত হয়েছে। তারা এই অবস্থায় মার্ক্সীয়ান আন্তর্জাতিক জাতিয়তাবাদ গঠন করতে এগিয়ে আসবে না।"

https://www.marxists.org/archive/trotsky/1931/tpr/pr-index.htm

ট্রটস্কি সাম্রাজ্যবাদি চক্রের শোষণমূলক সম্পর্কের কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন সাম্রাজ্যবাদী শোষক জাতি এবং উপনিবেশিক শোষিত ও নিপীড়িত জাতির কথা। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাদের কিভাবে বিবেচনায় নিতে হবে এ সম্পর্কে ট্রটস্কি বলেছেন এরা একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। একে অন্যকে শোষণ করছে। অন্যান্য শোধনপন্থীরা তা স্বীকার না করলেও ট্রটস্কি তা স্বীকার করেছেন। তবে অনেকের মত তিনি বিপরীত অবস্থানে থাকা জাতিসমূহকে ও তাদের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্বের কথা এড়িয়ে গেছেন। ট্রটস্কির তত্ত্ব গড়ে উঠেছে নিরন্তর বিপ্লবের নামে আর প্রচলিত ও সম্মিলিত উন্নয়ন কৌশলের উপর ভিত্তি করে। এই ধারাটি হলো সংশোধন পন্থার ধারা, জাত্যাভিমানের ধারা। সাম্রাজ্যবাদিরা এই ধারার বিকাশের জন্যই বুর্জোয়াদের মধ্যে কাজ করে। ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের পর অগ্রসর জাতির মধ্যে বিপ্লবের বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে অনগ্রসর জাতিসমূহের মধ্যে প্রাথমিকভাবে বিপ্লবের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সামাজিক জাত্যাভিমানী তত্ত্বের ধারকগণ মনে করে যে, অগ্রসর সাম্রাজ্যবাদী জাতিসমূহের মাঝে প্রথমে বিপ্লব সংগঠিত হলে দ্রুত অন্যান্য দেশে বিপ্লব ছড়িয়ে পড়বে। আর সমাজতন্ত্র থেকে সাম্যবাদে দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে নতুন সমাজ গড়ে উঠবে। ট্রটস্কিবাদীরা মনে করে প্রথম বিশ্বের ধনিক শ্রেনী ও নয়া উপনিবেশিক শক্তির সহায়তা ছাড়া তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশসমূহ নয়া ক্ষমতা কাঠামো গড়ে তুলতে পারবে না। অন্যদিকে মাওবাদের শিক্ষা হচ্ছে দুনিয়ার প্রলেতারিয়েত (তৃতীয় বিশ্বের) নয়া ক্ষমতা কাঠামো গড়ে তুলবে। নয়া ক্ষমতা কাঠামো তাদের শক্তি তৃণমূলে বিস্তার করবে নয়া রাষ্ট্র মডেল তৈরী করবে। এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকায় সাধারণ মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও শক্তির উন্মেষ ঘটিয়ে পুরাতন ব্যবস্থার বিনাশ করে নতুন সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসবে। আত্মবিশ্বাস ও স্বীয় সিদ্বান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরীতে ভূমিকা রাখবে এবং গণ মানুষের লড়াইয়ে শক্তি যোগাবে। এই শক্তি একে অন্যকে আরো ক্ষমতায়ন করবে। তা একসময় গণ জোয়ার সৃজন করে সারা দুনিয়ায় সর্বহারাদের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্র কায়েম করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রথম বিশ্বকে ঘেড়াও এবং পরাজিত করে প্রলেতারিয়েত বিপ্লব সাধন করা হবে। সংশোধনবাদীদের 'নিরন্তর বিপ্লব' ধারনাটি প্রধানত সেনা প্রশাসনের একটি চিত্র হাজির করে থাকে। ট্রটস্কির নেতৃত্ব প্রধানত রুশ গৃহযুদ্বের সময়কালে নতুন সোভিয়েত ব্যবস্থার সময় বহাল ছিলো। তিনি তার নেতৃত্ব কোনভাবেই কার্যকরী করতে পারতেন না যদি সেনা অফিসার, সৈনিক, লাল ফৌজ এবং জনতা সহায়তা না করতো। ট্রটস্কি সেনাদের মধ্য থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়োগের কথা বলেছেন। এতে জারের আমলের সাবেক আমলারা রাজনৈতিক কর্মের উপর ছড়ি ঘুরানোর সুযোগ পেয়ে যায়। এই ধরনের নীতিকে বলা হয় 'যুদ্ধকালীন সাম্যবাদ', যার দ্বারা কৃষকদের নিকট থেকে খাদ্যদ্রব্য রিকুইজিশনের মাধ্যমে সংগ্রহ করে শহুরে শ্রমিকদের জন্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হয়।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/War_communism#:~:text=War%20communism%20has%20often%20been,than%20any%20coherent%20political%20ideology.

১৯২১ সালে রাশিয়ার গৃহযুদ্বের সময় নানা জায়গায় বিদ্রোহ দেখা দেয়, এতে বহু বলশেভিক অংশগ্রহণ করে। এই পরিস্থিতি রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রের চিত্র তুলে ধরে। একে বলশেভিক নেতারা 'নয়া অর্থনৈতিক নীতি' বলে প্রচার করেন, যা প্রকৃত বিচারে ছিল রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/New_Economic_Policy

এই নীতির লক্ষ্য ছিল যুদ্ধকালীন সাম্যবাদকে মানুষের নিকট সহজ করে দেয়া। কিন্তু ট্রটস্কি বিদ্রোহকে নিমর্মভাবে দমন করার নীতি নিয়েছিলেন। নয়া নীতি জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য হলেও ট্রটস্কির পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য ছিলো না। ট্রটস্কি তার 'সাম্যবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ' বইয়ে লিখেন-

“আগের প্রতিটি সমাজই প্রধানত সংখ্যালঘিষ্ঠদের স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে; এবার রাষ্ট্র এমন সমাজ তৈরী করেছে যা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থ সুরক্ষা করবে, এটা আমরাই বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম করছি যার ফলে সমাজের সকল মানুষের সম কল্যাণ সাধিত হবে। তবে এই কর্ম সহজে হওয়ার নয়, তার জন্য নরম গরম সব রকম ব্যবস্থারই দরকার। রাষ্ট্রীয় উপাদান থেকে জবরদস্তির বিষয়টি এখনও বিযুক্ত হয়নি, এখনও তা কার্যকরী আছে, একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তা বজায় রাখতে হবে। বাধ্যতামূলকভাবে শ্রম সেবা আদায় করতে হলে সামরিক ব্যবস্থার আমল না করে তা বাস্তবায়ন অচিন্তনীয় ব্যাপার। আমরা কেন সামরিকীকরণের কথা বলছি? এখন পর্যন্ত এমন কোনো সংস্থা গড়ে উঠেনি যারা সাধারণ নাগরিকদের গ্রহণযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রণ বা বিশেষ ধারায় পরিচালিত করতে পারে, একটি রাষ্ট্রে প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব কায়েমের জন্য তাকে এই সামরিকীকরণের পথে হাঁটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেবল সেনবাহিনীই একটি জাতির জীবন-মৃত্যুর প্রশ্নে রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। আইন শৃংখলা বজায় রাখতে তাদের ভূমিকা সবিশেষ কার্যকরী।"

https://www.marxists.org/subject/anarchism/index.htm

ট্রটস্কির 'শ্রমের সামরিকীকরণ' প্রক্রিয়া চীনের গণ মুক্তি ফৌজের সাথে সংগতিপূর্ণ ছিলো না। চীনের গণ মুক্তি ফৌজের মূল বাণী ছিলো “জনগণের সেবা করুন”। তা জনতার উপর চাপিয়ে দেয়ার বিষয় ছিলো না। পিএলএ এর সদস্যরা মাও এর বাণী “সমুদ্রে যেমন মাছ বিচরণ করে, গেরিলারাও জনগণের মাঝে সেইভাবে বিচরণ করবেন” যথাযথভাবে মেনে চলতেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/People's_Liberation_Army

তারা নিজেদের সেনাবাহিনীকে জনগণের অংশ মনে করতেন। গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় সাম্যবাদী সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বিষয়ে জনমত গঠনের জন্য জনতার মাঝে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালানো হয় চীনে। পক্ষান্তরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ট্রটস্কির নেতৃত্বে এক ব্যাক্তির ব্যবস্থাপনা এবং লাল ফৌজের সহায়তায় শ্রমের সামরিকীকরণ করা হয়। সত্যিকার অর্থে ট্রটস্কির লাইনে সমাজতন্ত্র কায়েমের কোনো পথ নির্দেশনা ছিলো না। এটা অনেকটা প্রথম বিশ্ববাদী ধারার শ্রমিক বিপ্লবের পন্থা ছাড়া আর কিছু নয়। ট্রটস্কি প্রথা, অভ্যাস এবং পুজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদের রীতিনীতি অনুসরণ করেন। তিনি সাম্যবাদী পন্থার বাস্তবায়ন না করে ঐতিহ্যের নামে পুঁজিবাদের পথে হাঁটেন। ট্রটস্কি প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদি ধারার অনুসারী ছিলেন। তার অনুসরণকারীরা উদারতাবাদি ধারার বাস্তবায়নে উৎসাহিত ছিল। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার আওতায় পর্নগ্রাফীর আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন তারা। তিনি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার আওতায় যৌন কর্মে স্থায়ী চাকুরী প্রদানের ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। সাম্যবাদীগণ দেহ ব্যবসার প্রশ্রয় দিবে না। দেহকে পণ্য হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হবে না এই ব্যবস্থায়। সেখানে নারী ও শিশুদের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা ও মুক্তির গ্যারান্টি নিশ্চিত করা হবে। মানুষের সাথে শ্রমের সম্পর্ক বিষয়ে ট্রটস্কির ভাষ্য হলো-

“সাধারণ মানুষ কাজ করতে চায় না। কাজকে ভালোবাসা নিয়ে মানুষ জন্মায় না, এটা তার চরিত্র নয় এটায় তারা আর্থিক প্রয়োজনে এবং সামাজিক শিক্ষার কারণে অভ্যস্থ হয়ে উঠে। বলা যায়, মানুষ হলো একটি অলস প্রাণী। এই গুণাবলী ও যোগ্যতাকে লালন করলে মানব প্রগতি থেমে যাবে; কারণ মানুষ যদি কাজ না করে তবে আর্থিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রকৌশলগতভাবে এগিয়ে যাওয়ার কোনো পথ থাকবে না। কেউ কেউ হয়তো আবার একে প্রগতিশীলতাও বলতে পারেন এই কারণে যে এরা অনেক সৃজনশীল কাজও করে থাকে।"

কার্ল মার্ক্স মানুষের সাথে কাজের সম্পর্ক বিষয়ে যা বলেছেন-

“মানুষ একটি প্রাণী হিসাবে পৃথিবীকে কাজের ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করে, ইতিমধ্যে সে নিজেকে একটি কাজ পাগল প্রজাতি হিসাবে প্রমাণ করেছে। তার উৎপাদনই বলে দিচ্ছে সে একটি সক্রিয় প্রাণী। তার উৎপাদন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে প্রকৃতিকে পরিবর্তন করছে। মানুষ কাজ করে তার বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে নয়া পরিস্থিতির সৃজন করে। প্রকৃতিকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। সে উৎপাদনকারী প্রাণী হিসাবে অন্যান্য প্রাণীকেও কাজে লাগায়মানুষ তার শ্রম দিয়ে প্রকৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যবস্থার উন্মেষ ঘটায়। সে সামাজিক, শারিরিক ও মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়ন সাধন করে থাকে।"

মার্ক্স বলেছেন যখন কোনো মানুষ কাজ করে উপযুক্ত মূল্য পায় না তখনই তার মাঝে দেখা দেয় বিচ্ছিন্নতাবোধ। অন্যদিকে ট্রটস্কি এই এলিনেশনকে মানুষের প্রকৃতি হিসাবে দেখার প্রয়াস পেয়েছেন। তিনি মূলত মার্ক্সবাদের মুল সূত্র থেকে দূরে সরে গেছেন। ট্রটস্কি মানুষের শ্রম দানের ইচ্ছাকে বাতিল করেছেন এই মর্মে যে, জন্মগতভাবে মানুষ কাজ করতে পছন্দ করে না তিনি বলতে চেয়েছেন মানুষ জাতিটাই অলস। তিনি রাজনৈতিকভাবে গণ সংগ্রামের পথ গ্রহণ করেও রাজনীতিকে কমান্ড হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছেন। তিনি শ্রম শক্তিকে সামরিকীকরণের পথে নিয়ে গেছেন। এসব ভূয়া সাম্যবাদীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজস্ব স্বার্থে জনগণকে কাজে লাগানো। “মার্ক্সের দিকে ফিরে আসুন” - সংস্কারপন্থীদের এই আহ্বানে ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছু নেই। ট্রটস্কির মতো অনেক ভূয়া মার্ক্সবাদী “মূলের দিকে ফিরুন” - এই আহবান করে থাকে। মার্ক্সের শ্রম তত্ত্ব বা মৌলিক শিক্ষার দিকে এদের কোনো নজর নেই। এরা প্রধানত মার্কসের বিচ্ছিনতাবোধ তত্ত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এরা একুশ শতকের সামাজিক শ্রেনী বিন্যাসের ব্যাপারে কোনো চিন্তা করে না। “মার্কসবাদে ফিরে আসুন” তত্ত্বের অন্ধ ভক্তদের মতো সাম্যবাদীগণ কাজ করে না, বরং মার্ক্সীয় সমাজবিজ্ঞানের পথ ধরে এগিয়ে চলে। সাম্যবাদীরা প্রচলিত ধারার সমাজ বিশ্লেষণের চেয়ে ভিন্নভাবে উৎপাদন মাধ্যমকে দেখে থাকেন। চলমান দুনিয়ায় সমভাবে সম্পদ বন্টনের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রলেতারিয়েত শ্রেণী সত্যিকার অর্থে কেমন আছে এবং মার্ক্সের তত্ত্ব ‘বিচ্ছিন্নতাবোধ’ একুশ শতকের আগে শ্রমিক শ্রেণীর মাঝে শিল্পভিত্তিক সমাজে কেমন প্রভাব ফেলতো তা বিবেচনায় নিয়ে লড়াই সংগ্রামের পথ রচনা করে। ট্রটস্কিবাদ যে ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থার তত্ত্বকে সামনে তুলে ধরতে চাইছে সেখানে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ- মাওবাদ সহ সকলে মিলেও তাদের মোকাবেলা করতে পারবে না! লেনিনবাদী ধারার অনুসারীরাও পুরাতন ধারার চিন্তা ভাবনা থেকে মুক্ত নন। প্রলেতারিয়েতের ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে এক ব্যক্তির ব্যবস্থাপনা তত্ত্বকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন তারা। মাও এর শাসনামলে চীন তাদের আদর্শিক চেতনার ফলে ট্রটস্কি পন্থা খন্ডন করেমৌলিকভাবে উৎপাদনবাদ হলো একটি সংস্কারবাদ। এতে বুঝানো হয় যে যা হচ্ছে তা সঠিকই হচ্ছে, “গাড়ী তার দুই চাকায় ভর দিয়েই চলছে” কথার সাথে সমাজতন্ত্রের কথা বলা হয়। উৎপাদনের কথা শুনানো হয়। কিন্তু প্রথম বিশ্বকে এরা ধরতে পারবে না। প্রথম বিশ্ব যে লুন্ঠন করে তা সমাজতান্ত্রিক দুনিয়া করে না। তৃতীয় বিশ্ব কেবল তখনই প্রথম বিশ্বকে ধরতে পারবে যখন তারা প্রথম বিশ্বকে ঘেরাও করে পরাজিত করতে সক্ষম হবে! উৎপাদনবাদ কোনোভাবেই সমাধান নয়। ১৯৭০ সাল থেকে মাওবাদী রাজনৈতিক ধারা ট্রটস্কিবাদের বিরোধিতা করে আসছে। বর্তমানে কিছু চীনা তাত্ত্বিক ট্রটস্কিবাদের ধারা বিবেচনায় এনে প্রথম বিশ্বের সাথে পাল্লা দেয়ার জন্য কাজ করছেন। ১৯৭১ সালে চীনের সাম্যবাদী বিপ্লবের অনুশীলন ছিলো উৎপাদন শক্তি অতিক্রমের একটি প্রচেষ্টা। এই সামগ্রিক প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য ছিলো সকল অনুশীলনের ত্রুটিসমূহ সংশোধন করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। লিন বিয়াও এর সাম্যবাদ ছিলো কিছুটা 'ব্যারাক সমাজতন্ত্র', অন্যদিকে ট্রটস্কির সমাজতন্ত্র ছিলো সামরিকতন্ত্র দিয়ে প্রভাবিত।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Lin_Biao

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Maoism%E2%80%93Third_Worldism

ফ্রেইরী ফায়ার লিখেন-

“আমি লিন বিয়াও এর উত্থান চাই। আমি স্বীকার করি তিনি 'ব্যারাক সাম্যবাদ' কায়েমের চেষ্টা করেন। আমি এর পরও লিনের অনুশীলনকে প্রশংসা করি। তার সাংস্কৃতিক বিপ্লব সামাজিক পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমি মাওবাদী লাল বাহিনীর সাক্ষাৎকার শুনেছি। তাদের কথায় বোঝা যায় যে ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৬ সালে চীনের তরুণ সমাজ ব্যাপকভাবে জেগে উঠেছিলো। চৌ এন লাই নিজেও তাদের সমর্থক ছিলেন। এরা সঠিক পন্থায় এগোতে পারলে সাম্যবাদের ফলাফল আরো ভালো হতো।… হ্যা সেই উত্থান এক নতুন শক্তির বিকাশ ঘটায় এবং জনগণের স্বাধীন বাহিনী গড়ে উঠে, পুলিশ সেখানে নানাভাবে বাঁধা হয়ে উঠে, তারা নানাভাবে ভুল বার্তা প্রচার করে। সত্যিকার নেতৃত্বের অভাবে সেই উত্থানের কাজটি যথাযথভাবে সম্পাদিত হতে পারেনি। ফলে কিছু নির্মম ঘটনাও ঘটে যায়। মাওবাদীরা কাঠামোগতভাবে পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করে, প্রতি বিপ্লবের প্রতিরোধ করতে এগিয়ে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারে নাই। কেননা তারা নতুন চিন্তার বদলে পুরাতন পন্থার অনুসরণ করছিলেন। ফলে দুনিয়ার মানুষের আশায় ছাই পড়ে যায়। ব্যর্থ হয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব।"

http://marxistphilosophy.org/BernLiu.pdf

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]