নৈরাজ্যবাদ ও সমাজতন্ত্র - স্তালিন [পর্ব-এক]
আমরা সেই ধরনের লোক নই, যারা নৈরাজ্যবাদ শব্দটার উল্লেখ হলেই অবজ্ঞাভরে মুখ ফিরিয়ে এবং উন্নাসিকভাবে হাত নেড়ে বলে, ‘ও সম্পর্কে সময় নষ্ট করে কি হবে? ওটা তো আলোচনারই যোগ্য নয়!’ আমরা মনে করি এ রকম সস্তা সমালোচনা মর্যাদাহানিকর ও নিরর্থক। আমরা আবার সে ধরনের লোকও নই, যারা এই চিন্তা করে নিজেদের সান্তনা দেই যে নৈরাজ্যবাদীদের ‘পেছনে কোনো ব্যাপক জনসাধারণ নেই এবং সেজন্য তারা ততটা বিপজ্জনক নয়।’ আজ কার কত বেশি বা কম গণসমর্থন আছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো মতবাদের সারবস্তু। যদি নৈরাজ্যবাদীদের মতবাদ সত্য প্রকাশ করে, তাহলে বলা নিষ্প্রোয়জন যে, তা নিশ্চয়ই নিজের পথ নিজেই কেটে নেবে এবং তার চারপাশে জনগণকে সমবেত করবে। কিন্তু যদি তা অযৌক্তিক ও মিথ্যা ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে তা বেশিদিন স্থায়ী হবে না এবং শূন্যে ঝুলতে থাকবে। কিন্তু নৈরাজ্যবাদের অযৌক্তিতা অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, নৈরাজ্যবাদীরা মার্কসবাদের প্রকৃত শত্রু। তদনুযায়ী আমরা এই মত পোষণ করি যে, প্রকৃত শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রকৃত সংগ্রাম অবশ্যই চালাতে হবে। সুতরাং গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত নৈরাজ্যবাদীদের মতবাদ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা এবং সমস্ত দিক থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তার মূল্য নির্ণয় করা প্রয়োজন। কিন্তু নৈরাজ্যবাদকে সমালোচনা করা ছাড়াও নিজেদের অবস্থান আমাদের অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে এবং এইভাবে মার্কস ও এঙ্গেলসের মতবাদের সাধারণ রূপরেখা সংক্ষেপে উপস্থিত করতে হবে। এটা আরও বেশি প্রয়োজন এই জন্য যে, কিছু কিছু নৈরাজ্যবাদী মার্কসবাদ সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করছে এবং পাঠকদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তাহলে এখন আলোচ্য বিষয় নিয়ে অগ্রসর হওয়া যাক।
“বিশ্বে সবকিছুই গতিশীল, জীবন বদলে যায়, উৎপাদনশীল শক্তিসমূহ বৃদ্ধি পায়, পুরানো সম্পর্কসমূহ ধসে পড়ে। চিরন্তন গতিশীলতা, চিরন্তন ধ্বংস এবং সৃষ্টি- এটাই হলো জীবনের মর্ম।”
- কার্ল মার্কস [দর্শনের দৈন্য]
মার্কসবাদ শুধু সমাজতন্ত্রের তত্ত্ব নয়, মার্কসবাদ একটি অখণ্ড বিশ্ববীক্ষা, একটি দার্শনিক প্রণালী, যা থেকে মার্কসের সর্বহারার সমাজতন্ত্র যুক্তিসঙ্গতভাবেই এসে পড়ে। এই দার্শনিক প্রণালীকে বলা হয় দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ। সুতরাং মার্কসবাদকে ব্যাখ্যা করার অর্থ হলো দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদকে ব্যাখ্যা করা। এই দার্শনিক প্রণালীকে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বলে কেন? বলে এই জন্য যে, এর পদ্ধতি হলো দ্বন্দ্বমূলক এবং তত্ত্ব হলো বস্তুবাদী। দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতিটি কি? বস্তুবাদী তত্ত্বটি কি? বলা হয় নিরন্তর জন্ম, বৃদ্ধি ও বিকাশের ধারাই জীবন। এটা সত্য, সামাজিক জীবন অবশ্যই অব্যয় এবং স্থানু একটা কিছু নয়, জীবন কখনও একই স্তরে থাকে না। শাশ্বত গতিশীলতায়, ধ্বংস ও সৃষ্টির এক শাশ্বত প্রক্রিয়ায় জীবনের প্রবাহ। সঙ্গত কারণেই মার্কস বলেছিলেন যে, চিরন্তন গতিশীলতা এবং চিরন্তন ধ্বংস ও সৃষ্টিই হলো জীবনের ধর্ম। সুতরাং জীবনের মধ্যে সব সময়ে রয়েছে নতুন এবং পুরাতন, জায়মান ও ক্ষীয়মান, বিপ্লব এবং প্রতিক্রিয়া- এর মধ্যে প্রতিনিয়ত একটা কিছু মারা যাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে সব সময়েই একটা কিছু জন্মাচ্ছে। দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি আমাদের বলে যে, জীবন বাস্তবিকপক্ষে যা জীবনকে সেই মতোই বিবেচনা করতে হবে। জীবন অবিরাম গতিশীল এবং সেজন্য জীবনকে অবশ্যই তার গতিশীলতা, তার ধ্বংস ও সৃষ্টির মধ্যেই বিবেচনা করতে হবে। জীবন কোথায় যাচ্ছে, জীবন কী লয়প্রাপ্ত হচ্ছে এবং কী-ই বা জন্মলাভ করছে, কী ধ্বংস হচ্ছে এবং কী-ই বা সৃষ্টি হচ্ছে? সর্বপ্রথম এই প্রশ্নগুলিরই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা উচিত। দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির এই হলো প্রথম সিদ্ধান্ত। জীবনে যা জন্মাচ্ছে এবং দিনের পর দিন বেড়ে উঠছে তা অজেয়, তার অগ্রগতি প্রতিহত হতে পারে না, তার বিজয়লাভ অবশ্যম্ভাবী। অর্থাৎ উদাহরণস্বরূপ, শ্রমিক শ্রেণি যদি জন্মগ্রহণ করে, দিনের পর দিন বাড়তে থাকে, তাহলে তারা আজ দুর্বল এবং সংখ্যায় যত কমই হোক না কেন তাতে কিছু এসে যায় না, পরিণামে তারা নিশ্চয়ই বিজয়ী হবে। পক্ষান্তরে, জীবনে যা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে এবং কবরের দিকে এগিয়ে চলেছে, তা অবশ্যম্ভাবীরূপে পরাজয় বরণ করবে। অর্থাৎ উদাহরণস্বরূপ, আজ যদি বুর্জোয়াদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে এবং তারা প্রতিদিন পিছন থেকে আরও পিছনে যেতে থাকে, তাহলে তারা আজ যতই সবল এবং সংখ্যায় যত বেশিই হোক না কেন পরিণামে তারা অবশ্যই পরাজয় বরণ করবে এবং কবরে যাবে। এ থেকেই সুবিদিত দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির উদ্ভব: যা কিছু বাস্তবক্ষেত্রে বিদ্যমান, অর্থাৎ যা কিছু দিনের পর দিন বেড়ে উঠছে তা যুক্তিসিদ্ধ। দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির এই হলো দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত। গত শতাব্দীর আশির দশকে রাশিয়ার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এক বিরাট বিতর্ক উঠেছিল। নারদনিকেরা ঘোষণা করলো- প্রধান যে শক্তি রাশিয়াকে মুক্ত করার দায়িত্ব নিতে পারে, তারা হলো গরিব কৃষকেরা। কেন?- মার্কসবাদীরা তাদের জিজ্ঞাসা করলো। নারদনিকরা জবাব দিলো, এর কারণ কৃষক সমাজ সংখ্যায় সর্বাধিক এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা রাশিয়ার সমাজের দরিদ্রতম অংশ। এর জবাবে মার্কসবাদীরা বললো- একথা সত্য যে কৃষক সমাজ আজ সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তারা অত্যন্ত গরিব, কিন্তু এটাই কী প্রশ্ন? কৃষক সমাজ তো বহুদিন ধরেই সংখ্যাগরিষ্ঠ রয়েছে, কিন্তু এ পর্যন্ত শ্রমিক শ্রেণির সাহায্য ব্যতীত তারা মুক্তির সংগ্রামে কোনো উদ্যোগ দেখায়নি। কেন? কারণ কৃষক সমাজ শ্রেণি হিসাবে দিনের পর দিন টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে এবং ভেঙে গিয়ে বুর্জোয়ায় ও শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে শ্রমিক শ্রেণি, শ্রেণি হিসাবে দিনের পর দিন বাড়ছে এবং শক্তিলাভ করছে। এখানে দারিদ্র্যেরও চূড়ান্ত গুরুত্ব নেই: ভবঘুরেরা কৃষকদের তুলনায় অধিকতর গরিব, কিন্তু কেউ বলবে না যে তারা রাশিয়াকে মুক্ত করার দায়িত্ব নিতে পারে। একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জীবনে কারা বেড়ে উঠছে এবং কারা ক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে। যেহেতু শ্রমিক শ্রেণি হলো একমাত্র শ্রেণি যা নিশ্চিত গতিতে বেড়ে উঠছে এবং শক্তি অর্জন করছে, আমাদের কর্তব্য হলো এদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো এবং রাশিয়ার বিপ্লবে একে প্রধান শক্তি হিসাবে স্বীকার করে নেয়া- মার্কসবাদীরা এভাবেই জবাব দিয়েছিল। তাহলে আপনারা দেখছেন, মার্কসবাদীরা প্রশ্নটি দেখেছিল দ্বন্দ্বমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে, পক্ষান্তরে নারদনিকরা তাকে দেখেছিল অধিবিদ্যক দৃষ্টিকোণ থেকে; কেননা তারা জীবনকে গণ্য করতো এমন একটা কিছু বলে যা অনড়, অব্যয় এবং চিরকালের মতো নির্দিষ্ট (এফ এঙ্গেলসের ‘ফিলসফি, পলিটিক্যাল ইকনোমিক সোস্যালিজম' দেখুন)। এইভাবেই দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি সমাজজীবনের আন্দোলনকে দেখে থাকে। কিন্তু আন্দোলন আছে নানা রকমের। ডিসেম্বরের দিনগুলিতে সামাজিক আন্দোলন ঘটেছিল, যখন শ্রমিক শ্রেণি শিরদাঁড়া সোজা করে অস্ত্রশস্ত্রের ডিপো প্রচণ্ড বেগে আক্রমণ করলো এবং প্রতিক্রিয়ার ওপর আক্রমণ চালালো। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলির আন্দোলনে যখন শ্রমিক শ্রেণি শান্তিপূর্ণ বিকাশের অবস্থাতে বিচ্ছিন্ন ধর্মঘটে এবং ছোট ছোট ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছিল, তাকেও সামাজিক আন্দোলনই বলতে হবে। স্পষ্টতই আন্দোলন বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। এই জন্যই দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি বলে আন্দোলনের দু'টি রূপ আছেঃ বিকাশমূলক রূপ ও বিপ্লবমূলক। যখন অগ্রগতিশীল অংশসমূহ তাদের প্রাত্যহিক কার্যকলাপ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চালিয়ে যেতে থাকে এবং পুরাতন ব্যবস্থার গৌণ, মাত্রাগত পরিবর্তন ঘটায় তখন সে আন্দোলন হলো বিকাশমূলক। আন্দোলন বিপ্লবী হয় যখন সেই একই অংশসমূহ ঐক্যবদ্ধ হয়, একটিমাত্র ধারণায় পরিপূর্ণভাবে অনুপ্রাণিত হয় এবং পুরানো ব্যবস্থা ও তার গুণগত বৈশিষ্ট্যগুলি সমূলে উৎপাটিত করার জন্য এবং একটি নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য শত্রু শিবিরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে; বিপ্লব বিকাশের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণতা দান করে এবং তার পরবর্তী কর্মকান্ড সহজ করে। প্রকৃতিতেও অনুরূপ প্রক্রিয়া ঘটে থাকে। বিজ্ঞানের ইতিহাস দেখিয়ে দেয় যে দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি একটি খাঁটি পদ্ধতি: জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে সমাজবিজ্ঞান প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা এই ধারণারই অনুমোদন পাই যে, এই বিশ্বে কিছুই শাশ্বত নয়, প্রকৃতিতে প্রতিটি বস্তুই পরিবর্তিত হয়, প্রতিটি বস্তুই বিকশিত হয়। এজন্য প্রকৃতিতে প্রতিটি বস্তুকেই গতি এবং বিকাশের দৃষ্টিকোন থেকেই বিবেচনা করতে হবে এবং এর অর্থ এই যে, দ্বন্দ্ববাদের মূলনীতি আজকের দিনেও সমস্ত বিজ্ঞানেই পরিব্যাপ্ত রয়েছে। গতির বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে দ্বন্দ্ববাদী তত্ত্বের যে সিদ্ধান্ত- ছোট ছোট মাত্রাগত পরিবর্তন, শীঘ্রই হোক আর বিলম্বেই হোক, বড় বড় গুণগত পরিবর্তনে পরিণতি লাভ করে- এই সিদ্ধান্ত, এই নিয়ম সমানভাবে প্রকৃতির ইতিহাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মেনডিলিয়েভে উপাদানসমূহের পর্যাবৃত্ত প্রণালী সুস্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, প্রকৃতির ইতিহাসে মাত্রাগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তনের উদ্ভব কত গুরুত্বপূর্ণ। জীববিদ্যায় নয়া ল্যামার্কবাদী তত্ত্ব এই একই জিনিস দেখিয়েছে। এই তত্ত্বের কাছে নয়া ডারউইনবাদ নতি স্বীকার করেছে। অন্যান্য ঘটনা সম্পর্কে আমরা কিছুই বলবো না; এফ এঙ্গেলস তার এ্যান্টি ডুরিং এ তাদের ওপর পর্যাপ্ত আলোচনা করেছেন। তাহলে আমরা এখন দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির সাথে পরিচিত। আমরা জানি যে এই পদ্ধতি অনুযায়ী বিশ্বজগৎ চিরন্তন গতিশীল, ধ্বংস এবং সৃষ্টির চিরন্তন প্রক্রিয়ায় চলমান এবং সেজন্য প্রকৃতি ও সমাজের প্রতিটি ঘটনাই দেখতে হবে গতিময়তার দিক থেকে, দেখতে হবে ধ্বংস ও সৃষ্টির প্রক্রিয়ার দিক থেকে, নিশ্চল এবং গতিহীন কিছু বলে একে বিবেচনা করা চলবে না। আমরা আরও জানি এই গতির দু'টি রূপ আছে: বিকাশমূলক রূপ এবং বিপ্লবী রূপ। প্রত্যেকেই জানে, হেগেল দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির স্রষ্টা ছিলেন। মার্কস কেবল এই পদ্ধতিকে পরিশোধিত করে উন্নত করেছিলেন। নৈরাজ্যবাদীরা তা জানে; তারা এও জানে যে হেগেল ছিলেন রক্ষণশীল এবং এই জন্য তারা তার সুযোগ নিয়ে তাকে প্রতিক্রিয়াশীল বলে পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রবক্তা বলে গালিগালাজ করে; তার দিকে কাদা ছোড়ে এবং চরম উৎসাহ নিয়ে প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যে, হেগেল হলেন পুনঃপ্রতিষ্ঠার দার্শনিক; প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যে, হেগেল আমলাতান্ত্রিক নিয়মতান্ত্রিকতার চরম রূপের স্তুতিকার, তার ইতিহাসের দর্শন এর সাধারণ ভাবধারা হলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার কালের দার্শনিক প্রবণতার বশবর্তী এবং তাকেই তা সাহায্য করে ইত্যাদি ইত্যাদি (ভি۔ চেরকেজিশভিলির প্রবন্ধ দেখুন)। সত্য বটে, এই প্রশ্নে তারা যা বলে, কেউ তার প্রতিবাদ করে না এবং প্রত্যেকেই স্বীকার করে যে, হেগেল বিপ্লবী ছিলেন না। তিনি ছিলেন রাজতন্ত্রের একজন সমর্থক। এ সত্ত্বেও নৈরাজ্যবাদীরা প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং অবিরাম এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে যে, হেগেল পুন:প্রতিষ্ঠার প্রবক্তা ছিলেন। কেন তারা তা করে? সম্ভবত এসবের দ্বারা তারা হেগেলকে অপদস্ত করতে চায়, পাঠককে বোঝাতে চায় প্রতিক্রিয়াশীল হেগেলের পদ্ধতিটি অগ্রহণীয় ও অবৈজ্ঞানিক। তাই যদি হয়, যদি নৈরাজ্যবাদীরা মনে করেন যে তারা এইভাবে দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতিকে অপ্রমাণ করতে সক্ষম, তাহলে আমি বলবো যে, এইভাবে তারা তাদের অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই স্বপ্রমাণ করতে পারেন না। প্যাসকেল ও লাইবনিৎস বিপ্লবী ছিলেন না, কিন্তু যে গাণিতিক পদ্ধতি তারা আবিষ্কার করেছিলেন তা আজ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসাবে স্বীকৃত; মেয়ার ও হেলমহোলৎসও বিপ্লবী ছিলেন না, কিন্তু পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে তাদের আবিষ্কার বিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করেছিল। ল্যামার্ক ও ডারউইন বিপ্লবী ছিলেন না; কিন্তু তাদের বিবর্তনমূলক পদ্ধতি জীববিজ্ঞানকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। হ্যাঁ, এইভাবে নৈরাজ্যবাদী মশাইরা তাদের অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই প্রমাণ করতে পারছেন না। আরও এগোনো যাক। নৈরাজ্যবাদীদের মতে দ্বন্দ্ববাদ হলো অধিবিদ্যা এবং যেহেতু তারা বিজ্ঞানকে অধিবিদ্যা থেকে এবং দর্শনকে ঈশ্বরতত্ত্ব থেকে মুক্ত করতে চায়, সেজন্য তারা দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতিকে অস্বীকার করে। হায়, এই নৈরাজ্যবাদীরা! কথায় বলে নিজের পাপ অন্যের ঘাঁড়ে চাপিয়ে দাও। অধিবিদ্যার বিরুদ্ধে সংগ্রামের ভিতর দিয়েই দ্বন্দ্ববাদ পূর্ণতা প্রাপ্ত হলো এবং প্রতিষ্ঠা অর্জন করলো; কিন্তু নৈরাজ্যবাদীদের মতে সেই দ্বন্দ্ববাদই হলো অধিবিদ্যা। নৈরাজ্যবাদীদের জনক প্রুঁধো বিশ্বাস করতেন যে, জগতে চিরকালের জন্য নির্ধারিত অপরিবর্তনীয় ন্যায় বিদ্যমান রয়েছে এবং এরই প্রেক্ষিতে প্রুঁধোকে বলা হয়েছে অধিবিদ্যাবিদ। মার্কস দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির সাহায্যে প্রুঁধোর সাথে সংগ্রাম করেছিলেন এবং প্রমাণ করেছিলেন, ‘যেহেতু পৃথিবীতে প্রতিটি বস্তুই বদলায়, ন্যায় অবশ্যই বদলাবে এবং সেজন্য অপরিবর্তনীয় ন্যায় হলো অধিবিদ্যার অর্থহীন বুলি।’ [মার্কসের দর্শনের দারিদ্র্য]। কিন্তু তবুও অধিবিদ্যক প্রুঁধোর জর্জিয়ান শিষ্যরা প্রমাণ করার চেষ্টায় লেগে যায় যে, বস্তুবাদ হলো অধিবিদ্যা এবং অধিবিদ্যা অজ্ঞেয় ও স্বয়ংসিদ্ধ সত্তা স্বীকার করে এবং পরিণামে নীরস ঈশ্বর তত্ত্বে পর্যবসিত হয়। প্রুঁধো এবং স্পেনসারের বিরুদ্ধে এঙ্গেলস দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির সাহায্যে অধিবিদ্যা ও ঈশ্বরতত্ত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। [লুডউইগ ফয়েরবাগ এবং এ্যান্টি ড্যুরিং দেখুন]। তিনি প্রমাণ করেছিলেন তারা কেমন হাস্যকরভাবে ধোঁয়াটে ছিলেন। কিন্তু আমাদের নৈরাজ্যবাদীরা প্রমাণ করতে সচেষ্ট যে প্রুঁধো এবং স্পেন্সার ছিলেন বৈজ্ঞানিক। পক্ষান্তরে মার্কস ও এঙ্গেলস ছিলেন অধিবিদ্যাবিদ। দু'টি জিনিসের একটা হয় নৈরাজ্যবাদী মশাইরা নিজেদের প্রতারিত করছে, না হয় অধিবিদ্যা কী তারা তা বোঝে না। সে যাই হোক কোনোটার জন্যই দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতিকে দোষ দেয়া যায় না। নৈরাজ্যবাদী মশাইরা দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির বিরুদ্ধে আর কী কী অভিযোগ আনেন? তারা বলেন দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি হলো সূক্ষ্ম কথার জাল বোনা, কুতর্কের কৌশল, তর্কশাস্ত্রের মানসিক ডিগবাজি। যার সাহায্যে সত্য এবং মিথ্যা দুই-ই সমান স্বাচ্ছন্দে প্রমাণ করা যায়। প্রথম দৃষ্টিতে মনে হবে যে, নৈরাজ্যবাদীদের উত্থাপিত অভিযোগের কিছু ভিত্তি আছে। অধিবিদ্যক পদ্ধতির অনুসরণকারীদের সম্পর্কে এঙ্গেলস কি বলেন মনোযোগ দিয়ে শুনুন: “…. তার বাণী হলো হ্যাঁ নিশ্চয়-ই হ্যাঁ, না নিশ্চয়ই না, কারণ যা কিছু এই দুইয়ের অতিরিক্ত তা-ই অশুদ্ধ থেকে আগত। তার পক্ষে একটা জিনিস হয় বিদ্যমান, নয় বিদ্যমান নয়। তেমনি কোনো বস্তুর পক্ষে একই সময়ে সেই বস্তু এবং অন্য কোনো বস্তু হওয়া অসম্ভব। ইতি এবং নেতি চূড়ান্তভাবে পরস্পরের ব্যতিরেকী।” [এ্যান্টি ড্যুরিং এর ভূমিকা]। সে কি রকম? নৈরাজ্যবাদীরা চিৎকার করে বলে কোনো বস্তুর পক্ষে একই সময়ে ভালো এবং মন্দ হওয়া কি সম্ভব? এটা হলো কুতর্ক, কথার মারপ্যাচ, এটা দেখাচ্ছে যে, তুমি সত্য ও মিথ্যাকে সমান আয়েশে প্রমাণ করতে চাও। আচ্ছা বিষয়টির মর্মে যাওয়া যাক। আজ আমরা গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র দাবি করছি। কিন্তু গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র বুর্জোয়া ধনসম্পত্তিকে শক্তিশালী করে। আমরা কি বলতে পারি যে, গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র সর্বদা এবং সর্বক্ষেত্রে ভালো! না আমরা পারি না! কেন? যেহেতু আমরা যখন সামন্ততান্ত্রিক সম্পত্তিকে বিনষ্ট করছি সেই আজকের জন্য গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র ভালো, কিন্তু আগামীকাল যখন আমরা বুর্জোয়াদের সম্পত্তি বিনষ্ট করতে এগুবো, এগুবো সমাজতান্ত্রিক সম্পত্তি প্রতিষ্ঠা করতে তখন গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র আর ভালো থাকবে না। পক্ষান্তরে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে এবং তাকে আমরা চূর্ণ করে ফেলে দেবো। কিন্তু যেহেতু জীবন শাশ্বত গতিশীল এবং যেহেতু অতীতকে বর্তমান থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না এবং সেহেতু আমরা যুগপৎ সামন্ততান্ত্রিক শাসন এবং বুর্জোয়াদের সঙ্গে লড়াই করছি, সেহেতু আমরা বলি একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র যেখানে সামন্ততান্ত্রিক সম্পত্তিকে ধ্বংস করে, সেখানে তা ভালো এবং আমরা তাকে সমর্থন করি; কিন্তু যেখানে তা বুর্জোয়া সম্পত্তিকে শক্তিশালী করে সেখানে তা খারাপ এবং সেখানে আমরা তাকে সমালোচনা করি। এ থেকে আসে যে, গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র একই সময়ে ভালো এবং উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব হতে পারে হ্যাঁ এবং না দু'টোই। দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির সঠিকতা প্রমাণে উক্ত কথাগুলো বলার সময়ে এই ধরনের বিষয়গুলিই এঙ্গেলসের মনে ছিল। কিন্তু নৈরাজ্যবাদীরা তা বুঝতে পারে না এবং তাদের কাছে এটা কুতর্ক মনে হয়। অবশ্য প্রকৃত বিষয়গুলি গ্রহণ করার বা প্রত্যাখ্যান করার স্বাধীনতা নৈরাজ্যবাদীদের আছে, তা করবার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা তাদের আছে। কিন্তু তারা দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতিকে টেনে আনছে কেন? দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি নৈরাজ্যবাদের মতো নয়; তা চোখ বন্ধ করে জীবনের দিকে তাকানো নয়; জীবনের স্পন্দনের ওপর তার আঙ্গুল রয়েছে এবং তা খোলাখুলিভাবে বলে, যেহেতু জীবন পরিবর্তনশীল ও গতিময় সেজন্য জীবনের প্রতিটি ব্যাপারে দু'টি ঝোঁক আছে; একটি ইতিবাচক, অন্যটি নেতিবাচক; প্রথমটিকে আমরা অবশ্যই রক্ষা করবো, দ্বিতীয়টিকে আমরা অবশ্যই বর্জন করবো। কী আজব লোক এই নৈরাজ্যবাদীরাঃ তারা প্রতিনিয়ত ন্যায় সম্বন্ধে বাণী দিচ্ছে, কিন্তু দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির ওপর পুরো অন্যায় চালিয়ে যাচ্ছে। আরও এগোনো যাক। আমাদের নৈরাজ্যবাদীদের মতে দ্বন্দ্বমূলক বিকাশ হলো প্রলয়মূলক বিকাশ; যার দ্বারা প্রথমে অতীতকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয় এবং তারপর ভবিষ্যৎকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। কুভিয়ারের প্রলয় ঘটেছিল অজানা কারণে, মার্কস এবং এঙ্গেলসের প্রলয়ের কারণ দ্বন্দ্ববাদ। অন্য এক জায়গায় একই লেখক লিখেছেন, মার্কসবাদ ডারউইনের ওপর নির্ভর করে এবং বিনা সমালোচনায় তাকে গ্রহণ করে। পাঠক এই কথায় মনোযোগ দিন! কুভিয়ার ডারউইনের ক্রমবিকাশ তত্ত্ব বাতিল করেন। তিনি কেবলমাত্র প্রলয়কেই স্বীকার করেন এবং প্রলয় হলো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়, যার কারণ অজ্ঞাত। নৈরাজ্যবাদীরা বলে মার্কসবাদীরা ডারউইনের ওপর নির্ভর করে এবং বিনা সমালোচনায় তাকে গ্রহণ করে। অর্থাৎ মার্কসবাদ কুভিয়ারের প্রলয়কে স্বীকার করে না। ইচ্ছা হলে একে নৈরাজ্যবাদ বলতে পারেন! কথায় বলে সার্জেন্টের স্ত্রী নিজেই নিজেকে বেত মেরেছিল। স্পষ্টতই ৬ নং নোভাতিতে এস এইস জি. কী বলেছিলেন ৮নং নোভাতিতে তিনি তা ভুলে বসে আছেন। কোনটা সঠিক? ৮নং না ৬নং? অথবা দু'টিতেই মিথ্যা উক্তি করা হয়েছে? প্রকৃত ঘটনার দিকে তাকানো যাক। মার্কস বলেন, বিকাশের একটা স্তরে সমাজের বস্তুগত উৎপাদিকা শক্তিগুলি তৎকালীন উৎপাদন সম্পর্ক সমূহের সঙ্গে অথবা আইনের ভাষায় বলতে গেলে সম্পত্তিগত সম্পর্কসমূহের সঙ্গে সংঘর্ষে আসে- তখন শুরু হয় সামাজিক বিপ্লবের একটা যুগ। কিন্তু সমস্ত উৎপাদন শক্তিগুলির যতদূর সম্ভব বিকশিত হওয়ার সুযোগ আছে। ততদূর অবধি বিকশিত হওয়ার আগে কোনো সমাজব্যবস্থা কখনো ধ্বংস হয় না। (কার্ল মার্কস- এ কনট্রিবিউশন টু দি ক্রিটিক অব পলিটিক্যাল ইকনমির ভূমিকা)। মার্কসের এই ধারণা যদি সমসাময়িক সামাজিক জীবনে প্রযুক্ত হয়, তাহলে আমরা দেখবো যে, একদিকে আজকের দিনের উৎপাদিকা শক্তিগুলিতে যার চরিত্র হলো সামাজিক এবং অন্যদিকে উৎপাদিত বস্তুর আত্মসাতের রূপ যার চরিত্র হলো ব্যক্তিগত এই দুইয়ের মধ্যে একটি মৌলিক সংঘাত রয়েছে। যা অবশ্যই পরিণতি লাভ করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে। (এঙ্গেলসের এ্যান্টি ড্যুরিং দেখুন, তৃতীয় অংশ, তৃতীয় অধ্যায়)। তাহলে আপনারা দেখছেন মার্কস ও এঙ্গেলসের মতে বিপ্লব (প্রলয়) কুভিয়ারের অজ্ঞাত কারণের জন্য সংঘটিত হয় না। সংঘটিত হয় অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কারণে, যাকে বলা হয় উৎপাদিকা শক্তিসমূহের বিকাশ। আপনারা দেখছেন মার্কস এঙ্গেলসের মতে বিপ্লব শুধু তখনই আসে যখন উৎপাদিকা শক্তিগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়, অপ্রত্যাশিতভাবে নয় যেমন কুভিয়ার ভাবছেন। স্পষ্টতই কুভিয়ারের প্রলয় এবং দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির মধ্যে কোনো মিল নেই। পক্ষান্তরে ডারউইনবাদ শুধু কুভিয়ারের প্রলয়কেই অস্বীকার করে না, দ্বন্দ্বমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে বিকাশ- যার মধ্যে বিপ্লবও অন্তর্ভুক্ত তাকেও অস্বীকার করে। অন্যদিকে দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিবর্তন ও বিপ্লব, পরিমাণগত ও গুণগত পরিবর্তন একই গতির দু'টি আবশ্যিক রূপ। এটা বলাও ভুল যে মার্কসবাদ ডারউইনবাদকে বিনা সমালোচনায় গ্রহণ করে। তাহলে এর থেকে বোঝা যায় যে যেমন ৬ নম্বরে তেমনি ৮ নম্বরেও, উভয় ক্ষেত্রেই নোভাতি সঠিক। এইসঙ্গে এইসব মিথ্যাবাদী সমালোচকরা আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে বার বার বলতে থাকেঃ তোমরা পছন্দ করো আর নাই করো, আমাদের মিথ্যাগুলি তোমাদের সত্যের চেয়ে উৎকৃষ্টতম। সম্ভবত তাদেরও বিশ্বাস তারা যা-ই বলুক বা করুক না কেন সব কিছুই ক্ষমার্হ। আর একটি বিষয় আছে যার জন্য নৈরাজ্যবাদী মশাইরা দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতিকে ক্ষমা করতে পারে না: দ্বন্দ্ববাদ নিজের থেকে বেরিয়ে বা লাফিয়ে যাওয়া অথবা লাফ দিয়ে নিজেকে টপকে যাওয়ার কোনো সুযোগ দেয় না। নৈরাজ্যবাদী মশাইরা এখানে আপনারা চূড়ান্তভাবে সঠিক, দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতিতে সত্যই এ রকমের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কেন নেই? নিজের থেকে বেরিয়ে বা লাফিয়ে যাওয়া কিংবা লাফ দিয়ে নিজেকে টপকে যাওয়া হলো বুনো ছাগলের কসরৎ, কিন্তু দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি তো সৃষ্টি হয়েছে মানুষের জন্য। এই হলো গোপন তত্ত্ব! সাধারণভাবে দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতির প্রশ্নে নৈরাজ্যবাদীদের মত হচ্ছে এই। স্পষ্টতই নৈরাজ্যবাদীরা মার্কস-এঙ্গেলসের দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি অনুধাবন করতে অক্ষম, তারা তাদের নিজস্ব দ্বন্দ্ববাদ সৃষ্টি করেছে এবং তার বিরুদ্ধে তারা এতো নির্মমভাবে লড়াই করে চলেছে। এই দৃশ্য দেখে আমরা শুধু হাসতেই পারি, কারণ কেউ যখন দেখে যে একজন তার নিজেরই কল্পনার সঙ্গে লড়াই করে চলেছে; নিজের আবিষ্কারকে চূর্ণ করছে আর সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে জোর দিয়ে বলছে যে, সে তার প্রতিপক্ষকেই চূর্ণ করছে তখন কেউ না হেসে থাকতে পারে না।
Comments