ক্যাস্ট্রোবাদ

 

ফিদেল ক্যাস্ট্রো চে গুয়েভারাকে সাথে নিয়ে অল্প লোকবল সহকারে তিনি বাতিস্তার স্বৈরাচারী সরকারকে ১ জানুয়ারি ১৯৫৯ সালে উৎখাত করে বিপ্লবের ঘোষণা দেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Fulgencio_Batista

ফ্রান্সের কূটনীতিক রেজিস দেব্রে ক্যাস্ট্রো ও চে'র সাথে মিলে ফোকো মতবাদের উদ্ভাবন করেন। এই মতবাদে ফোকাস থাকে ছোট একটি গেরিলা ইউনিট দ্বারা অতর্কিত ক্ষমতা করায়ত্ব করার দিকে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Foco#:~:text=Foco%20theory%20was%20originally%20based,war%20in%20the%20Sierra%20Maestra.

এখানে সর্বহারার অগ্রগামী পার্টির কোনো প্রয়োজন নেই, গেরিলাবাদী সামরিক সংগঠন থাকলেই হবে। এটা সমরবাদী মতবাদ, এটি রাজনীতির ঊর্ধ্বে যুদ্ধকে স্থান দিয়ে থাকে। এই মতানুসারে আধা উপনিবেশিক ও আধা সামন্ততান্ত্রিক সমাজ গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তর ছাড়াই সমাজতন্ত্রে প্রবেশ করতে পারবে। এটা ট্রটস্কীবাদী লাইনের সাথে মিলে। সিরাজ সিকদার অব্যাহতভাবে আন্দোলনে বিদ্যমান সংশোধনবাদ, নয়া সংশোধনবাদের পাশাপাশি ট্রটস্কীবাদ-চে'বাদকে সমালোচনা করেন।

[রেজিস দেব্রে একসময় চে গুয়েভারার অনুগামী হলেও পরে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত সচিব হয়ে আরামে দিন কাটিয়েছেন এবং মার্কিন মুল্লুকের গুণমুগ্ধে পরিণত হয়েছেন, অথচ চে বেঁচে থাকার সময় আমেরিকাকে 'পঞ্চম রাইখ' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি!]

ক্ষমতা দখলের পর ফিদেলের নেতৃত্বে ফোকোবাদীরা কিউবাকে সোভিয়েত সাম্রাজ্যবাদের উপনিবেশে পরিণত করে, আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বের দাবার ঘুঁটিতে পরিণত হয়ে দেশকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘাঁটিতে পরিণত করে, দেশে সমরবাদী রাষ্ট্রযন্ত্র গড়ে তোলে। কিউবা আফ্রিকার এঙ্গোলায় রুশপন্থী পপুলার আন্দোলনের সমর্থনে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ সৈন্য পাঠিয়েছে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/MPLA

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Cuban_intervention_in_Angola

আলজেরিয়ায় সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের অস্ত্র সরবরাহের মধ্যস্থতা করে কিউবা

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Foreign_interventions_by_Cuba

কঙ্গো, জায়ারে, গিনি বিসাও, বেনিনে অস্ত্র ও বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছে; ইথিওপিয়ায় কিউবান সৈন্যরা হস্তক্ষেপ করেছে, নিকারাগুয়ায় সান্দানিস্তা গেরিলা আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sandinista_National_Liberation_Front

লাতিন আমেরিকায় নিকারাগুয়া, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া ইত্যাদি দেশসহ তারা একটি পপুলিস্ট বলয় তৈরি করে। এটা মূলত উগ্র ল্যাটিন জাতীয়তাবাদী বলয়। এটা পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের মধ্যকার প্রতিযোগিতামূলক গ্রুপিং ছাড়া আর কিছু নয়। এরা এক সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার নামে আরেক সাম্রাজ্যবাদের সেবায় নিয়োজিত হয়েছিল। অনেক তথাকথিত মাওবাদী সংগঠন ফিদেলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছিল। যেমনঃ ইতালির মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি, ফিলিপাইনের কমিউনিস্ট পার্টি, মনিপুরের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি ইত্যাদি। ইতালিয় পার্টির বক্তব্য ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী কর্তৃক খন্ডিত হয়। যে পিসিএম ইতালি বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন (রিম) এর সদস্য ছিল সেই রিমের ঘোষণায় ১৯৮৪ সালে ফোকোবাদকে বাম সংশোধনবাদী মতবাদ হিসেবে কঠোরভাবে সমালোচনা করা হয়েছে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Revolutionary_Internationalist_Movement

পেরুতে গনসালো মাওবাদ বিরোধী মতবাদ ক্যাস্ট্রোবাদ ও চে'বাদকে চমৎকার বিশ্লেষণ সহকারে খণ্ডন করেছেন, যদিও চে'বাদ স্বেচ্ছাসেবার জন্য ক্যাস্ট্রোবাদের তুলনায় ছিল দ্ব্যার্থতাবোধক।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Abimael_Guzm%C3%A1n

পিসিএম ইতালী'র বক্তব্য পুরোপুরি সংশোধনবাদী, ফিলিপাইনের কমিউনিস্ট পার্টির বিভ্রান্তি নতুন নয়, মনিপুরের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয়তাবাদী ভাবধারা থেকে আগত নতুন পার্টি। বাংলাদেশের পুরোনো সংশোধনবাদী, যারা দেশের প্রতিটা প্রতিক্রিয়াশীল সরকারকে সমর্থন দিয়েছে তারা তো আছেই; মাওবাদ সিম্প্যাথাইজার বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন ও বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন ক্যাস্ট্রোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে তার মৃত্যুর পর। চীন, ভিয়েতনামের পথ অনুসরণ করে কিউবা যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি সংস্কারের নামে বিকৃতির পথে হেঁটেছে তারা সেটার নাম দিয়েছে Lineamientos. এই ব্যবস্থায় যা যা পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলোর একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা নিচে দেয়া হলো-

#সরকারের কাছে যেসব অব্যবহৃত জমি রয়েছে সেগুলো লিজ দেয়া হয়েছে। যে বা যারা লিজ নেয় ১০, বছর পর তারা সেসব জমির মালিক হবে নতুন আইন অনুযায়ী।

#ট্যুরিজম, হোটেল ব্যবসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত খাত উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে এবং ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

#হাভানা, মায়ালেক, আর্টেমিমা প্রভৃতি প্রদেশের ৭০% কৃষি জমি বাজার দর অনুযায়ী বিক্রি করা হয়েছে। ২০১৪ সালে কৃষি পণ্যের জন্য হোলসেল মার্কেট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কৃষকদের কাছে এসব জমি বিক্রি করার কথা বলা হলেও গবেষণায় উঠে এসেছে ক্রেতাদের মধ্যে ৭৭% এর কৃষিকাজে কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।

#সামাজিক খাতে জাতীয় বাজেট থেকে বরাদ্দ কমিয়ে আনা হয়েছে ৫১% এ, যা আগে ছিল ৫৫%।

#প্রতি মাসের নির্দিষ্ট দিনে কিউবার সাধারণ মানুষদের জন্য যে রেশনের ব্যবস্থা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে।

#কেউ ২০ বছর একটি বাড়িতে বসবাস করলে নতুন আইন অনুযায়ী বাড়িটি ঐ ব্যক্তির মালিকানায় চলে যাবে।

#বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো যাবে এবং ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে।

#বিদেশী বিনিয়োগকারীরা নতুন আইনে ৮ বছর ট্যাক্স সুবিধা পাবে। কর্মীদের এক্ষেত্রে বেতন দেবে কিউবা সরকার কিউবান পেসোর মাধ্যমে এবং বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে হার্ড কারেন্সিতে মজুরি গ্রহণ করবে। দেশটির অর্থ ব্যবস্থা দুই ধরনের- ন্যাশনাল পেসো এবং কনভার্টেবল পেসো। কনভার্টেবল পেসোর মান ইচ্ছা করে কমিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ আছে, যদিও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুই ধরনের মুদ্রার মান সমান। ২৫ ন্যাশনাল পেসোর বিনিময়ে ১ কনভার্টেবল পেসো পাওয়া যায়।



Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]