শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জাতিক সমিতির উদ্বোধনী ভাষণ - মার্ক্স
শ্রমজীবী মানুষেরা,
একটি বিরাট সত্য হলো এই যে, ১৮৪৮ থেকে ১৮৬৪ সালের মধ্যে শ্রমজীবী জনসমষ্টির দুর্দশার কোনো লাঘব হয়নি, তবুও এই সময়টাই শিল্প-বিকাশ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির দিক থেকে অতুলনীয়। ১৮৫০ সালে ব্রিটিশ মধ্য শ্রেণির একটি নরমপন্থী ওয়াকিবহাল মুখপত্র এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, ইংল্যান্ডের রপ্তানি ও আমদানি যদি শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পায় তাহলে ইংরেজদের দারিদ্র্য একেবারে শূন্যের কোটায় নেমে যাবে। কিন্তু হায়! ১৮৬৪ সালের ৭ এপ্রিল অর্থসচিব পার্লামেন্টে তার শ্রোতাদের এই বিবৃতি দিয়ে আনন্দ দান করলেন যে, ইংল্যান্ডের মোট আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য ১৮৬৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪,৩৯,৫৫,০০০ পাউন্ডে উঠেছে। এই আশ্চর্য সংখ্যাটা ১৮৪৩ এর অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক যুগের বাণিজ্যের প্রায় তিনগুণ! এই সব বলেও তিনি দারিদ্র্য সম্বন্ধে মুখর হয়ে ওঠেন। তিনি বলে ওঠেন, সেই সব লোকের কথা ভাবুন, যারা এই এলাকার সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে, ভাবুন সেই সব মজুরির কথা যা বৃদ্ধি পায়নি, সেই মানব জীবন যা প্রতি দশ জনের মধ্যে নয় জনের ক্ষেত্রেই শুধু বেঁচে থাকার জন্য একটি সংগ্রাম মাত্র! তিনি আয়ারল্যান্ডের লোকেদের কথা বলেননি, সেখানে উত্তরে ধীরে ধীরে মানুষের জায়গা দখল করছে যন্ত্র আর দক্ষিণে মেষ চারণ, যদিও ভাগ্যাহত সেই দেশটিতে এমন কি মেষের সংখ্যাও কমে আসছে, অবশ্য মানুষের মতো অত দ্রুত নয়। এর ঠিক আগেই একটা আকস্মিক আতঙ্কের ঝোঁকে ঊর্ধ্বতন দশ হাজারের উচ্চতম প্রতিনিধিরা যা ফাঁস করে বসেছিল, তার পুনরাবৃত্তি তিনি করেননি। যখন লন্ডনে গ্যারোট আতঙ্ক খানিকটা জোরালো হয়ে ওঠে, তখন লর্ড সভা নির্বাসন দন্ড ও কয়েদ খাটুনি সম্বন্ধে একটা তদন্ত ও রিপোর্ট প্রকাশের ব্যবস্থা করে। বিরাট আকারের ব্লু বুকে এক ভয়াবহ সত্য ফাঁস হয়ে গেলো, সরকারি তথ্য ও সংখ্যা দিয়ে প্রমাণিত হলো যে দন্ডপ্রাপ্ত জঘন্যতম অপরাধীরা, ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের কয়েদী গোলামরাও ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের কৃষি শ্রমিকদের চেয়ে কম খাটে ও ভালোভাবে থাকে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। যখন আমেরিকার গৃহযুদ্ধের ফলে ল্যাঙ্কাশায়ার ও চেশায়ারের শ্রমিকরা বেকার হয়ে পথে দাঁড়ালো, তখন সেই একই লর্ড সভা থেকে শিল্পাঞ্চলে একজন চিকিৎসককে পাঠানো হলো এই দায়িত্ব দিয়ে যে, তিনি অনুসন্ধান করবেন গড়পড়তা হিসাবে স্বল্পতম ব্যয়ে ও সহজতম রূপে কত কম পরিমাণ কার্বন ও নাইট্রোজেন ব্যবহার করেই ‘অনাহারজনিত রোগ এড়ানো যায়’। মেডিকেল ডেপুটি ডা: স্মিথ নির্ধারণ করলেন যে, অনাহারজনিত রোগের ঠিক উপরের স্তরে থাকতে হলে একজন সাধারণ প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির পক্ষে সাপ্তাহিক প্রয়োজন হলো ২৮,০০০ গ্রেন কার্বন ও ১,৩৩০ গ্রেন নাইট্রোজেন। তিনি এটাও নির্ধারণ করলেন যে, প্রচন্ড দারিদ্র্যের চাপে সুতো কলের কর্মীদের পথ্য কমে গিয়ে যেখানে দাঁড়িয়েছে, এ পরিমাণটা প্রায় তার সমান। কিন্তু তারপর দেখুন! সেই একই বিজ্ঞ চিকিৎসককে প্রিভি কাউন্সিলের মেডিকেল অফিসার পরে আর একবার পাঠিয়েছিলেন দরিদ্রতর শ্রমজীবী শ্রেণিগুলির পুষ্টি সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে। সেই অনুসন্ধানের ফল লিপিবদ্ধ আছে জনস্বাস্থ্য সম্বন্ধে ষষ্ঠ রিপোর্টে, যা এই বছরে পার্লামেন্টের আদেশানুসারে প্রকাশিত হয়েছে। কী আবিষ্কার করলেন ডাক্তার? যারা রেশম বোনে, যেসব মেয়েরা সুচের কাজ করে, যারা চামড়ার দস্তানা বানায়, মোজা তৈরি করে ইত্যাদি, তাদের গড়পড়তা যে আয় তা সুতাকল কর্মীদের দুর্দশাকালীন রুজিটুকুর চেয়েও কম, অনাহারজনিত রোগ এড়ানোর জন্য ঠিক যতটুকু কার্বন ও নাইট্রোজেন দরকার সেটুকুও নয়। এই রিপোর্ট থেকেই উদ্ধৃত করছি:
‘তাছাড়া কৃষক জনসাধারণের মধ্য থেকে যে সমস্ত পরিবারকে পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের সম্বন্ধে এটাই দেখা গেলো যে, তাদের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশির ক্ষেত্রে কার্বনঘটিত খাদ্য জুটছে প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে কম; নাইট্রোজেনঘটিত খাদ্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে কম জুটছে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ক্ষেত্রে এবং তিনটি জেলাতে (বার্কশায়ার, অক্সফোর্ডশায়ার এবং সামারসেটশায়ার) লোকের গড়পড়তা স্থানীয় আহার্যেই নাইট্রোজেনঘটিত খাদ্য প্রয়োজনের চেয়ে কম।'
সরকারি রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে:
‘এ কথা মনে রাখা উচিত যে, নিতান্ত নিরুপায় হলেই তবে লোকেরা খাদ্যের অনটন স্বীকার করে এবং তাই সাধারণত অন্যান্য ব্যাপারে চরম কৃচ্ছ্রতার পরই তবে খাদ্যের কৃচ্ছ্রতা আসে।'
এমনকি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাটাও এদের কাছে ব্যয় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার আত্মসম্মানী প্রচেষ্টা এখনও চোখে পড়লেও প্রতি ক্ষেত্রেই সে চেষ্টা মানে অধিকতর ক্ষুধার জ্বালা। এ ভাবনা বেদনাদায়ক, বিশেষ করে যদি এ কথা মনে রাখি যে উপরোক্ত দারিদ্র্য অলসতার সঙ্গত দারিদ্র্য নয়, সে দারিদ্র্য সব ক্ষেত্রেই শ্রমজীবী মানুষেরই দারিদ্র্য। বস্তুতপক্ষে যে কাজ করে এই সামান্য ভিক্ষান্ন মিলছে, সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অত্যধিক দীর্ঘ। রিপোর্টে এই অদ্ভুত ও অপ্রকাশিত সত্যও উদঘাটিত হয়েছে যে, ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড - ইউনাইটেড কিংডমের এই বিভাগগুলির মধ্যে যে বিভাগ সবচেয়ে অবস্থাপন্ন সেই ইংল্যান্ডের কৃষিজীবী জনসাধারণই সবচেয়ে কম খাদ্য খেয়ে থাকছে। কিন্তু এমনকি বার্কশায়ার, অক্সফোর্ডশায়ার ও সামারসেটশায়ারের কৃষি শ্রমিকরাও পূর্ব লন্ডনের দক্ষ গৃহ কারিগরদের অনেকের চেয়ে ভালো অবস্থায় থাকে। এই হচ্ছে সরকারি বিবৃতি যা ১৮৬৪ সালে পার্লামেন্টের আদেশেই প্রকাশিত হয়েছে অবাধ বাণিজ্যের স্বর্ণ যুগে যখন অর্থসচিব কমন্স সভার কাছে এই কথা জানান যে, ‘গড় হিসাবে ব্রিটিশ শ্রমিকের অবস্থার যে পরিমাণ উন্নতি হয়েছে তা যেকোনো দেশের বা যেকোনো যুগের ইতিহাসে অসাধারণ ও অতুলনীয় বলে আমাদের বিশ্বাস’। এই সরকারি অভিনন্দনের তাল কাটছে জনস্বাস্থ্য বিভাগের রিপোর্টের এই শুষ্ক মন্তব্যে: 'কোনো দেশের জনস্বাস্থ্য বলতে বোঝায় জনগণের স্বাস্থ্য এবং জনগণও ততক্ষণ স্বাস্থ্যবান হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না একেবারে তলার দিকে তারা অন্তত কিছুটা সমৃদ্ধ হয়।' জাতির প্রগতি সূচক পরিসংখ্যানগুলির নৃত্যে অর্থসচিবের চোখ ধাঁধিয়ে ওঠে, তিনি উদ্দাম আনন্দে চিৎকার করে ওঠেন, ১৮৪২ থেকে ১৮৫২ এর মধ্যে দেশের ট্যাক্সযোগ্য আয় শতকরা ৬ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছিল; আর ১৮৫৩ থেকে ১৮৬১ - এই আট বছরে আয় ১৮৫৩ সালের তুলনায় ২০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাপারটা এত আশ্চর্য যে অবিশ্বাস্য মনে হয়। মি: গ্লাডস্টোন যোগ করেন, ‘সম্পদ ও শক্তির এই চাঞ্চল্যকর বৃদ্ধি পুরোপুরি সম্পত্তিবান শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ!’ আপনারা যদি জানতে চান স্বাস্থ্যহানী, নৈতিক অধ:পাত ও মানসিক ধ্বংসের কোন অবস্থার মধ্যে শ্রমজীবী শ্রেণিগুলি পুরোপুরি সম্পত্তিবান শ্রেণিগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ সম্পদ ও শক্তির এই চাঞ্চল্যকর বৃদ্ধি ঘটিয়েছে এবং এখনও ঘটাচ্ছে, তাহলে ছাপাখানা ও দর্জিদের কর্মশালার ওপর বিগত জনস্বাস্থ্য রিপোর্টে প্রদত্ত ছবিটির দিকে তাকিয়ে দেখুন। ১৮৬৩ সালের শিশু নিয়োগ কমিশনের রিপোর্টের সঙ্গে তুলনা করে দেখুন। সেখানে দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা হয়েছে: শ্রেণি হিসাবে কুম্ভকাররা সকলেই, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে, শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই হলো এক অতি অধ:পতিত জনসংখ্যা; বলা হয়েছে যে, স্বাস্থ্যহীন শিশুরাই আবার স্বাস্থ্যহীন পিতা-মাতা হয়ে দাঁড়ায়; ক্রমান্বয়ে জাতির অবনতি এগিয়েই চলবে; আবার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে অনবরত লোক সংগ্রহ করা যদি না হতো এবং যদি অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যবান বংশে বিবাহাদি না চলতো, তাহলে স্ট্যাফোর্ডশায়ারের জনসংখ্যার অবনতি হতো আরও অনেক বেশি। ঠিকা রুটি কারিগরদের অভাব অভিযোগ সংক্রান্ত মি: স্টেমেনহিবের ব্লু বুকের দিকে নজর দিন। তাছাড়া কারখানাসমূহের ইন্সপেক্টরা যে আপাত বিরোধী বিবৃতি দিয়েছিল এবং যা রেজিস্ট্রার জেনারেল কর্তৃক প্রমাণিত হয়েছে, সে বিবৃতি পড়ে কে না শিউরে উঠেছে? সে বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, তুলার দুর্ভিক্ষে সাময়িকভাবে সুতাকল থেকে ছাড়া পাওয়ার ফলে বরাদ্দ দু:স্থ খাদ্য মাত্রায় ল্যাঙ্কাশায়ারের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যোন্নতিই হচ্ছিলো আর তাদের শিশু সন্তানদের মৃত্যুহার কমছিল। কারণ শিশুদের মায়েরা এতদিনে গডফ্রের আরকের (Godfrey’s cordial) বদলে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর অবকাশ পাচ্ছিলো। আরেকবার উল্টো দিকটা দেখুন। ১৮৬৪ সালের ২০ জুলাই কমন্স সভার সামনে যে আয় ও সম্পত্তিগত ট্যাক্সের বিবরণ দাখিল করা হয় তা থেকে আমরা এই কথাই জানতে পারি যে, তহসিলদারদের হিসাব অনুযায়ি যেসব লোকের বাৎসরিক আয় ৫০ হাজার পাউন্ড বা তদুর্ধ্ব তাদের দলে ১৮৬২ সালের ৫ই এপ্রিল থেকে ১৮৬৩-র ৫ই এপ্রিলের মধ্যে আরও তেরো জন যোগ দিয়েছে। অর্থাৎ এই এক বছরে তাদের সংখ্যা ৬৭ থেকে ৮০ তে পৌঁছেছে। সেই একই বিবরণ থেকে এ কথাও প্রকাশ হয়ে পড়ে যে, প্রায় দুই লক্ষ ৫০ হাজার পাউন্ড পরিমাণ বাৎসরিক আয় ভাগাভাগি হয়ে যায় তিন হাজার লোকের মধ্যে, অর্থাৎ ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে সমগ্র কৃষি শ্রমিকদের আয় হিসাবে যে মুষ্টিভিক্ষা লাভ করে তার মোট পরিমাণ থেকেও এ আয় কিছুটা বেশি। ১৮৬১ সালের লোকগণনার হিসাবটি খুলে ধরলে জানতে পারবেন যে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ভূমি সম্পত্তির পুরুষ মালিকদের সংখ্যা ১৮৫১ তে যেখানে ছিল ১৬ হাজার ৯৩৪ জন, সেখানে তা ১৮৬১ তে কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৬ জন।অর্থাৎ দশ বছরে ভূসম্পত্তির কেন্দ্রীভবন বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ১১ ভাগ। এই হারে যদি অল্প কয়েকজনের হাতে দেশের জমির কেন্দ্রীভবন এগিয়ে যায়, তাহলে ভূমি সমস্যাটি অত্যন্ত সরল হয়ে যাবে যেমন হয়েছিল রোম সাম্রাজ্যে; যখন অর্ধেক আফ্রিকা প্রদেশটির মালিক হয়েছে ছয়জন ভদ্রলোক এ কথা শুনে হেসেছিলেন নিরো। এত আশ্চর্য যে প্রায় অবিশ্বাস্য তথ্য নিয়ে আমরা এত বেশি আলোচনা করলাম তার কারণ এই যে, শিল্প বাণিজ্যে ইউরোপের শীর্ষে রয়েছে ইংল্যান্ড। একথা স্মরণ করা যেতে পারে যে, কয়েক মাস পূর্বে লুই ফিলিপের এক উদ্বাস্তু পুত্র প্রকাশ্যে ইংরেজ কৃষি শ্রমিকদের এই বলে অভিনন্দিত করেন যে, চ্যানেলের অপর পারে এদের অল্পতর সঙ্গতিসম্পন্ন সাথীদের তুলনায় এদের ভাগ্য ভালো। বাস্তবিকই স্থানীয় রং বদলে ও কিছুটা সঙ্কুচিত আকারে ইংল্যান্ডের তথ্যগুলি ইউরোপের সমস্ত শিল্পোন্নত ও প্রগতিশীল দেশেই পুনরুদিত। এই সমস্ত দেশেই ১৮৪৮ সাল থেকে এক অশ্রুতপূর্ব শিল্প বিকাশ ও আমদানি রপ্তানির অকল্পনীয় প্রসার ঘটেছে। এই সমস্ত দেশেই পুরোপুরি সম্পত্তিবান শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ সম্পদ ও শক্তির বৃদ্ধি সত্যই চাঞ্চল্যকর। ইংল্যান্ডের মতো এসব দেশে শ্রমিক শ্রেণির অল্প একাংশের আসল মজুরির কিছু পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর্থিক মজুরির সামান্য কিছু বৃদ্ধি সুখ সুবিধার যেটুকু আসল লাভ বোঝায় তা দৃষ্টান্তস্বরূপ প্রাথমিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির খরচ ১৮৫২ সালে সাত পাউন্ড সাত শিলিং চার পেন্সের জায়গায় ১৮৬১ তে নয় পাউন্ড ১৫ শিলিং আট পেন্সে উঠে যাওয়াতে শহরের দু:স্থ আবাস বা অনাথালয়ের বাসিন্দাদের যেটুকু উপকার সম্ভব তার বেশি কিছু নয়। প্রত্যেক জায়গাতেই শ্রমজীবী জনগণের অধিকাংশ নিচে নেমে যাচ্ছে, অন্তত সেই হারেই যে হারে তাদের উপরতলার লোকদের সামাজিক জীবনে উন্নতি হচ্ছে। যন্ত্রের উন্নতি, উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, নতুন উপনিবেশ সৃষ্টি, দেশান্তর গমন, নতুন বাজার প্রতিষ্ঠা, অবাধ বাণিজ্য - এসব কোনো কিছুই এমনকি সব কিছু একত্র করে মেহনতি জনগণের দুর্দশা যে দূর হবে না, বরং বর্তমানের মিথ্যা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে শ্রমের উৎপাদন শক্তির প্রতিটি নতুন বিকাশের প্রবণতাই যে সামাজিক বৈষম্য গভীরতর করার ও সামাজিক বৈরীভাব তীক্ষ্ণতর করার দিকে - এই সত্যই আজ ইউরোপের সকল দেশের প্রত্যেকটি সংস্কারমুক্ত লোকের কাছে প্রমাণিত হয়ে উঠেছে, এই সত্যকে অস্বীকার করে শুধু তারাই যারা অপরকে মুর্খের স্বর্গে ঠেলে দিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজধানীতে আর্থিক প্রগতির এই চাঞ্চল্যকর যুগে অনাহারজনিত মৃত্যু প্রায় একটা প্রথার পর্যায়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এই যুগ শিল্প ও বাণিজ্যের সঙ্কটরূপ সামাজিক মহামারীর আরও ঘন ঘন পুনরাগমন, অধিকতর বিস্তার এবং ক্রমবর্ধমান মারাত্মক ফলাফলের দ্বারা চিহ্নিত। ১৮৪৮ সালের বিপ্লবগুলো ব্যর্থ হওয়ার পর ইউরোপীয় ভূখন্ডে শ্রমিক শ্রেণির যত পার্টি সংগঠন ও পার্টি পত্রিকা ছিল সব কিছুই শক্তির লৌহ হস্তে নিষ্পেষিত করা হলো, শ্রমিক শ্রেণির সবচেয়ে অগ্রণী সন্তানরা হতাশ হয়ে আশ্রয় নিলেন আটলান্টিকের অপর পারের প্রজাতন্ত্রে আর শিল্পোন্মাদনা, নৈতিক অবক্ষয় ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার এক যুগের সামনে মিলিয়ে গেলো মুক্তির স্বল্পস্থায়ী স্বপ্ন। ইউরোপ খন্ডের শ্রমিক শ্রেণির পরাজয়ের জন্য অংশত দায়ী ছিল ইংরেজ সরকারের কূটনীতি; এখনকার মতোই তখনও ইংরেজ সরকার সেন্ট পিটার্সবুর্গের মন্ত্রিসভার সঙ্গে ভ্রাতৃত্বসুলভ সৌহার্দ্য রেখে কাজ করছিল। এই পরাজয়ের সংক্রামক ফলাফল শীঘ্রই চ্যানেলের এপারেও পৌঁছালো। ইউরোপ খন্ডের ভাইদের বিপর্যয়ে একদিকে যেমন ইংল্যান্ডের শ্রমিক শ্রেণির মনোবল কমে গেলো ও নিজ আদর্শের সম্বন্ধে তাদের বিশ্বাস ভেঙে পড়লো, তেমনি অপরদিকে এর ফলে ভূমিপতি ও ধনপতিদের কিছুটা বিচলিত আত্মপ্রত্যয় আবার ফিরে এলো। যেসব সুবিধা দেয়ার কথা তারা আগেই বিজ্ঞাপিত করেছিল, ঔদ্ধত্যভরে সেসব তারা প্রত্যাহার করে নিলো। নতুন নতুন স্বর্ণ অঞ্চল আবিষ্কৃত হওয়ায় দলে দলে লোক দেশত্যাগ করতে লাগলো এবং তার ফলে ব্রিটিশ প্রলেতারীয়দের মধ্যে সৃষ্টি হলো এক অপূরণীয় ফাঁক। তাদের আগেকার দিনের সক্রিয় অন্যান্য কর্মীরা বেশি কাজ ও বেশি মজুরির সাময়িক ঘুষের মায়ায় রাজনৈতিক দালালে পরিণত হলো। চার্টিস্ট আন্দোলনকে জীবিত রাখার বা পুনর্গঠিত করার সমস্ত প্রচেষ্টা একেবারে ব্যর্থ হলো, শ্রমিক শ্রেণির মুখপত্র কাগজগুলি জনসাধারণের উদাসীনতায় একে একে বিলুপ্ত হয়ে গেলো এবং সত্য কথা বলতে গেলে এমন এক রাজনৈতিক অবলুপ্তির অবস্থার সঙ্গে ইংল্যান্ডের শ্রমিক শ্রেণি পরিপূর্ণ মাত্রায় নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে বলে মনে হলো যা পূর্বে কখনও দেখা যায়নি। সুতরাং ব্রিটেন ও ইউরোপের শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে সংগ্রামের সাযুজ্য না থাকলেও অন্তত পরাজয়ের সাযুজ্য ঘটলো। তা সত্ত্বেও ১৮৪৮ এর পরবর্তী যুগটা ক্ষতিপূরণের চিহ্ন বর্জিত নয়। এখানে আমরা শুধু দু'টি বিরাট ঘটনার উল্লেখ করবো। ত্রিশ বৎসর ধরে প্রশংসনীয় ধৈর্যের সঙ্গে লড়াই করার পর ইংল্যান্ডের শ্রমিক শ্রেণি ভূমিপতি ও ধনপতিদের মধ্যে এক সাময়িক ভাঙন কাজে লাগিয়ে দশ ঘণ্টার আইনটি পাশ করাতে সক্ষম হয়। এর ফলে কারখানার শ্রমিকদের প্রভূত শারীরিক, নৈতিক ও মানসিক যে উপকারের কথা কারখানা পরিদর্শকদের অর্ধ বাৎসরিক রিপোর্টে লিপিবদ্ধ হয় তা এখন সর্বত্রই স্বীকৃত। ইউরোপে অধিকাংশ সরকারকেই ইংল্যান্ডের ফ্যাক্টরি আইন কম বেশি সংশোধিত রূপে গ্রহণ করতে হয়েছে এবং ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টকেও প্রতিবছর এর কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত করতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যবহারিক সুবিধাটুকু ছাড়াও শ্রমজীবী মানুষের এই বিধানটির বিস্ময়কর সাফল্যকে গৌরবজনক মনে করার অন্য কারণও ছিল। ডা: ইউর, অধ্যাপক সিনিয়র ও এই জাতের অন্যান্য পন্ডিতদের মতো তাদের বিজ্ঞানের অতি কুখ্যাত মুখপাত্রদের মাধ্যমে মধ্য শ্রেণি এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল এবং প্রাণভরে প্রমাণ করেছিল যে, শ্রমের ঘণ্টা যদি আইনগতভাবে সীমাবদ্ধ হয়, তাহলে তাতে ব্রিটিশ শিল্পের মৃত্যু পরোয়ানাই জারি করা হবে; এ শিল্প বাঁচতে পারে কেবল পিশাচের মতো রক্ত চুষে, তদুপরি শিশুর রক্ত চুষেই। পুরাকালে শিশু হত্যা ছিল মোলখ পূজার্চনার এক রহস্যময় অনুষ্ঠান। কিন্তু সে অনুষ্ঠান পালন করা হতো শুধু অতি গাম্ভীর্যপূর্ণ উপলক্ষে, বৎসরে হয়তো বা একবার এবং তাছাড়া শুধুমাত্র গরিব শিশুদের ওপরই একমাত্র পক্ষপাত মোলখের ছিল না। শ্রমিকদের কাজের ঘণ্টা আইনত সীমাবদ্ধ রাখার এই সংগ্রাম আরও প্রচন্ড হয়ে ওঠে, এই কারণে সে আতঙ্কিত লালসার কথা ছাড়াও এর প্রভাব পড়েছিল এক বিরাট প্রতিদ্বন্দ্বিতার ওপর; একদিকে মধ্য শ্রেণির অর্থশাস্ত্রের যা ভিত্তি সেই চাহিদা ও সরবরাহের নিয়মের অন্ধ প্রভুত্বের সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণির যা অর্থশাস্ত্র সেই সামাজিক দূরদৃষ্টি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত সামাজিক উৎপাদনের দ্বন্দ্ব। সুতরাং দশ ঘণ্টার আইনটি যে শুধু এক বৃহৎ ব্যবহারিক সাফল্য তাই নয়, এ হলো একটা নীতিরও জয়; এই সর্বপ্রথম প্রকাশ্য দিবালোকে শ্রমিক শ্রেণির অর্থশাস্ত্রের কাছে মধ্য শ্রেণির অর্থশাস্ত্র পরাজিত হলো। কিন্তু সম্পত্তির অর্থশাস্ত্রের ওপর শ্রমের অর্থশাস্ত্রের আরও বড় একটি বিজয় বাকি ছিল। আমরা সমবায় আন্দোলনের কথা বলছি, বিশেষত কোনোরকম সহায়তা না পেয়েও কিছু সাহসী মজুরের চেষ্টায় যেসব সমবায়মূলক কারখানা প্রতিষ্ঠা হয়েছে তার কথা। এই ধরনের বিরাট সামাজিক পরীক্ষার মূল্য অসীম বিপুল। যুক্তিতর্কের বদলে কাজ দিয়েই এই সমবায় সমিতিগুলি দেখিয়ে দিয়েছে যে, শ্রমিক শ্রেণির নিয়োগকারী মালিক শ্রেণি না থাকলেও বৃহৎ আকারে এবং আধুনিক বিজ্ঞানের নির্দেশনা অনুযায়ী উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া যায়; দেখিয়ে দিয়েছে যে, সার্থক হতে হলে শ্রমজীবীর ওপর আধিপত্য ও তাকে লুণ্ঠিত করার মাধ্যম রূপে শ্রমের উপায়কে একচেটিয়াধীন করার প্রয়োজন পড়ে না; দেখিয়ে দিয়েছে যে, ঠিকা শ্রম হচ্ছে দাসশ্রম ও ভূমিদাস শ্রমের মতোই শ্রমের এক নিকৃষ্ট ও স্বল্পস্থায়ী রূপমাত্র; উৎসুক হাতে প্রস্তুত, মনে প্রফুল্ল চিত্তে চালানো সংঘবদ্ধ শ্রমের সামনে যা অদৃশ্য হতে বাধ্য। ইংল্যান্ডে রবার্ট ওয়েন সমবায় পদ্ধতির বীজ বপন করেন, ইউরোপ খন্ডে শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে যে সবপরীক্ষা করা হয়, প্রকৃতপক্ষে তা উদ্ভাবিত নয়; ১৮৪৮ সালে সরবে ঘোষিত তত্ত্বাদির ব্যবহারিক পরিণতি। সেই সঙ্গে ১৮৪৮ থেকে ১৮৬৪ পর্যন্ত সময়কালের অভিজ্ঞতা থেকে এটাও নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হলো যে, নীতির দিক থেকে যতই উৎকৃষ্ট ও ব্যবহারের দিক থেকে যতই উপযোগী হোক না কেন, সমবায় শ্রমকে ব্যক্তিগত শ্রমিকদের অনিয়মিত প্রচেষ্টার সঙ্কীর্ণ গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখলে একচেটিয়া মালিকানার জ্যামিতিক হারের ক্রমবৃদ্ধিকে বাধা দেয়া বা জনসাধারণকে মুক্ত করা অথবা তাদের দুর্দশার বোঝাটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লাঘব করাও কখনও সম্ভব হবে না। বোধহয় ঠিক এই কারণেই মধুভাষী সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকেরা, মধ্য শ্রেণীর মানব হিতৈষী বাক্যবাগীশরা এবং এমনকি উৎসাহী অর্থ তাত্ত্বিকেরা পর্যন্ত সকলেই হঠাৎ এই সমবায় শ্রম পদ্ধতির ঘিনঘিনে প্রশংসায় মুখর হয়ে উঠেছেন, যদিও ঠিক এই পদ্ধতিকেই তারা স্বপ্নচারীর ইউটোপিয়া বলে উপহাস অথবা সমাজবাদীর অনাচার বলে নিন্দিত করে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। মেহনতি জনসাধারণকে উদ্ধার করতে হলে সমবায় শ্রমকে দেশজোড়া আয়তনে সম্প্রসারিত করতে হবে এবং কাজেই তাকে সারা জাতির সম্পদ দিয়ে পরিপোষণ করতে হবে। কিন্তু ভূমিপতি ও পুঁজিপতিরা তাদের অর্থনৈতিক একচেটিয়া রক্ষা ও চিরস্থায়ী করার জন্য নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা সর্বদাই ব্যবহার করবে। সুতরাং শ্রমের মুক্তির পথে সাহায্য করা দূরে থাক, সে পথে সর্বপ্রকার বাধা সৃষ্টির কাজই তারা করে যাবে। মনে করে দেখুন, গত অধিবেশনে লর্ড পামারস্টোন আইরিশ প্রজাস্বত্ব বিলের প্রবক্তাদের অপদস্থ করার জন্য কী রকম বিদ্রুপ করেছিলেন। তিনি বলে দিলেন, কমন্স সভা হচ্ছে ভূস্বামীদের সভা। অতএব রাজনৈতিক ক্ষমতা জয় করা শ্রমিক শ্রেণির পক্ষে এক মহান কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা তারা উপলব্ধি করেছে বলেই মনে হয়; কেননা ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি এবং ফ্রান্সে একই সঙ্গে নবজাগরণ শুরু হয়েছে এবং সর্বত্র একসঙ্গেই শ্রমিক শ্রেণির পার্টির রাজনৈতিক পুনর্গঠনের চেষ্টাও চলছে। সাফল্যের একটা উপাদান শ্রমিক শ্রেণির আছে - সংখ্যা; কিন্তু সঙ্ঘের দ্বারা ঐক্যবদ্ধ এবং জ্ঞানের দ্বারা পরিচালিত হতে পারলে তবেই সংখ্যায় পাল্লা ভারি হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে, ভ্রাতৃত্বের যে বন্ধন বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের মধ্যে থাকা উচিত ও তাদের মুক্তি সংগ্রামে পরস্পরের জন্য একযোগে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করা উচিত সেই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের প্রতি অবহেলা তাদের বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টাগুলিকে কী রকম সাধারণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে ফেলে। এই চিন্তাই ১৮৬৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সেন্ট মার্টিন হলে এক সভায় সমবেত বিভিন্ন দেশের শ্রমজীবী মানুষকে তাদের আন্তর্জাতিক সমিতি প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর একটি প্রত্যয়ও এই সভাকে প্রভাবান্বিত করেছে। শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির জন্য যদি তাদের ভ্রাতৃত্বসুলভ ঐক্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে অপরাধমূলক মতলব হাসিল করার জন্য অনুসৃত যে পররাষ্ট্র নীতি জাতিগত কুসংস্কার ব্যবহার করছে, দস্যু যুদ্ধে জনগণের রক্ত ও সম্পদ অপচয় করছে, সেই নীতি বজায় রাখলে এই মহান ব্রতটি কী করে পূর্ণ করা যাবে? আটলান্টিকের অপর পারে দাসত্বকে কায়েম রাখার ও প্রচারিত করার কলঙ্কময় জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে পশ্চিম ইউরোপকে বাঁচিয়েছিল শাসক শ্রেণির বিজ্ঞ মনোভাব নয়, বাঁচিয়েছিল সেই অপরাধমূলক মূর্খামির বিরুদ্ধে ইংরেজ শ্রমিক শ্রেণিরই বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ। ককেশাসের পার্বত্য দুর্গটি যখন রাশিয়ার শিকারে পরিণত হচ্ছিলো এবং বীর পোল্যান্ডকে রাশিয়া যখন হত্যা করছিল তখন ইউরোপের উচ্চ শ্রেণির লোকেরা যে নির্লজ্জ সমর্থন, ভন্ড সহানুভূতি বা আহাম্মকসুলভ উদাসীনতা দেখিয়েছিল, যে বর্বর শক্তির মাথা রয়েছে সেন্ট পিটার্সবুর্গে এবং যার হাত রয়েছে ইউরোপের প্রত্যেকটি মন্ত্রিসভায়, সেই রাশিয়ার যে ব্যাপক ও অপ্রতিহত অনধিকার হস্তক্ষেপ ঘটছে তা থেকে শ্রমিক শ্রেণি শিখেছে যে, তার কর্তব্য হলো আন্তর্জাতিক রাজনীতির রহস্য আয়ত্ত করা; নিজ নিজ সরকারের কূটনৈতিক কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা; প্রয়োজন হলে তাদের সর্বশক্তি দিয়ে সে কার্যকলাপের প্রতিরোধ করা, তাকে ব্যর্থ করতে অক্ষম হলে অন্তত সকলে একসঙ্গে তার প্রকাশ্য নিন্দা করা এবং নীতি ও ন্যায়ের সেসব সহজ নিয়ম দিয়ে ব্যক্তি মানুষের সম্পর্ক শাসিত হওয়া উচিত, তাদেরই প্রতিষ্ঠা করা জাতিসমূহের মধ্যকার যোগাযোগের সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ম হিসাবে। এই রকমের পররাষ্ট্র নীতি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম হলো শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির জন্য সাধারণ সংগ্রামের একাংশ।
দুনিয়ার মজদুর এক হও!
[১৮৬৪ সালের ২৮ অক্টোবর লন্ডনের লং একর এ সেন্ট মার্টিন হলে অনুষ্ঠিত জনসভায়]
Comments