মুসোলিনি ও এমআই-৫
১৯২২ সালের অক্টোবর মাসে রোম অভিমুখে যাত্রা করেছিল হাজার হাজার ফ্যাসিস্ট স্বেচ্ছাসেবক, উদ্দেশ্য সরকার গঠন করে চূড়ান্ত ক্ষমতায় আসীন হওয়া।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Duce
তৎকালীন রাজা ভিক্টর ইমানুয়েল সেনাবাহিনীকে আদেশ দেন বিদ্রোহ দমনের। কিন্তু সেনাবাহিনী সেসময় আদেশ অমান্য করে।
https://www.thetimes.co.uk/article/britain-secretly-backed-mussolinis-march-on-rome-pzsr2hpb8
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Victor_Emmanuel_III_of_Italy
মুসোলিনি ১৮৮৩ সালের ২৯ জুলাই ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেন। কিছুদিন শিক্ষকতার পর পাড়ি জমান সুইজারল্যান্ডে, যোগ দেন বাম ধারার রাজনীতিতে।
https://iskrathespark.blogspot.com/2023/09/blog-post_18.html?m=1
১৯০৪ সালে ফিরে এসে শুরু করেন সাংবাদিকতা, পরে হন ‘অ্যাভান্তি’ নামে পত্রিকার সম্পাদক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে, যুদ্ধে আহত হয়ে ফিরে আসেন মিলান। হতাশ মুসোলিনি পুরোপুরি ডানপন্থীতে পরিণত হন। কর্সিকা, স্যাভয়, নিস প্রভৃতি অঞ্চল লাভের আশায় ইতালি বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিলেও না পাওয়ায় ইতালীবাসী গণতন্ত্রের প্রতি আশা হারায়। দেখা দেয় খাদ্যাভাব, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব যা মুসোলিনিকে তার ফ্যাসিস্ট দলের প্রচারণায় সাহায্য করে। যুবকরা যোগ দিতে থাকে সমাজতান্ত্রিক দলে। সমাজতান্ত্রিক দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তাদের ফ্যাসিস্ট দলে যোগ দিতে উৎসাহিত করে। ইতালিতে গণতান্ত্রিকভাবে গঠিত মন্ত্রীসভায় ব্যর্থতা মানুষকে ফ্যাসিস্ট দলে যোগদানে ইন্ধন যোগায়। মুসোলিনি যেসব যুবকদের সংঘটিত করতেন সশস্ত্র স্কোয়াডে, তারা পরিচিত ছিল ব্ল্যাক শার্ট নামে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Blackshirts
১৯২২ সালের অক্টোবর মাসে মুসোলিনির নেতৃত্বে ব্ল্যাক শার্ট যাত্রা করে রোম অভিমুখে। রাজা ভিক্টর ইমানুয়েল মুসোলিনিকে আমন্ত্রণ জানান সরকার গঠনে। মুসোলিনি ক্ষমতায় গিয়ে ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেন। ব্রিটিশদের গোপন সহায়তায় শুরু করেন ইহুদিনিধন, আক্রমণ করেন আবিসিনিয়া, সখ্য গড়ে তোলেন হিটলারের সাথে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সেই ব্রিটিশ সরকারের বিপক্ষে গিয়ে যোগ দেন অক্ষশক্তিতে। ১৯৪৩ সালে মিত্রশক্তি আক্রমণ করে ইতালিতে, মুসোলিনিকে করা হয় ক্ষমতাচ্যুত। পরবর্তীতে পালিয়ে সুইজারল্যান্ডে যাওয়ার সময় উপপত্নী ক্লারা পিটাচির সাথে ইতালীয় পক্ষপাতীদের হাতে নিহত হন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Clara_Petacci
ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৫ এর এজেন্ট হয়ে ১৯১৭ সালে মুসোলিনি রাজনীতি শুরু করেন।এমআই-৫ সেসময় তাকে সপ্তাহে ১০০ পাউন্ড দিত বেতন হিসেবে। তৎকালীন ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রধান ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্যার স্যামুয়েল হোয়ার, পরবর্তীতে যিনি সংসদ সদস্য ও ব্রিটিশ ফরেইন সেক্রেটারি হন। ১৯১৭ সালের দিকে তিনি ইতালিতে এমআই-৫ এর দেখাশোনা করেন এবং তার নেতৃত্বে তখন ১০০ ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স অফিসার ইতালিতে ছিলেন। স্যামুয়েল হোয়ার মুসোলিনিকে প্রতি সপ্তাহে নিজের হাতে বেতনের অর্থ দিতেন।
https://www.theguardian.com/world/2009/oct/13/benito-mussolini-recruited-mi5-italy
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Samuel_Hoare,_1st_Viscount_Templewood
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ পিটার মার্টল্যান্ড বলেছিলেন-
"বিপ্লবী রাশিয়ার যুদ্ধ থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের পর যুদ্ধে ব্রিটেনের সবচেয়ে কম নির্ভরযোগ্য মিত্র ছিল ইতালি। মুসোলিনিকে ১৯১৭ সালের শরৎ মাস থেকে সপ্তাহে ১০০ পাউন্ড দেয়া হয়েছিল অন্তত এক বছর পর্যন্ত প্রো-ওয়ার ক্যাম্পেইনের জন্য।"
মুসোলিনি যুদ্ধের পক্ষে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়াতেন এবং ব্ল্যাক শার্টের যুবকদের পাঠিয়ে শান্তি মিছিলে হামলা চালাতেন যাতে তারা ঘরে বসে থাকে। ব্রিটিশ সরকার ভূমধ্যসাগরে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ইতালিতে মুসোলিনির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করে। সেরেগিনো এবং ফাসানেলা তাদের ‘Nero di Londra’ বইটিতে বলেছিলেন-
"ব্রিটিশ রাজপরিবারের মিশনের উদ্দেশ্য ছিল কেন্দ্রীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে ইতালিকে প্রস্থানে বাধা দেয়া, একটি গোপন সিস্টেমের ভিত্তি স্থাপন করা যারা উইন্ডসর ক্রাউনের প্রতি অনুগত এবং এভাবে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ও নিকট প্রাচ্যে ব্রিটিশ স্বার্থ সংরক্ষণ করা।"
স্যার হোয়ার একটি রাজনৈতিক ও আধাসামরিক বাহিনীর প্রোটোটাইপ তৈরি করেন যা মুসোলিনির নেতৃত্বে ইতালিকে ফ্যাসিবাদী যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। তিনি মডেল হিসেবে ‘স্ট্র্যাটেজি অব টেনশন’ ব্যবহার করেন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Strategy_of_tension#:~:text=A%20strategy%20of%20tension%20(Italian,security%20in%20a%20strong%20government.
সিক্রেট সার্ভিসের অর্থায়নে ১৯১৮ সালের শুরু থেকে ‘দ্য কাউন্ট‘ কোড নামে মুসোলিনি ১৯২২ সালের অক্টোবরে ক্ষমতা দখল করেন। নির্বাচনী জালিয়াতি এবং ব্ল্যাক শার্টের সহিংসতার সাহায্যে ১৯২২ সালে ক্ষমতায় আরোহণের পর ১৯২০ এর দশকের মাঝামাঝিতে ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
https://www.italianpost.news/100-years-after-the-march-on-rome-nero-di-londra-by-cereghino-and-fasanella-unveils-the-declassified-english-files-on-mussolini-and-fascism/
জর্জ অরওয়েল ‘Tribune’ এ প্রকাশিত তার ‘Who are the War Criminals?’ প্রবন্ধে লেখেন-
"মুসোলিনির উত্থানের পেছনে ব্রিটিশশক্তির হাত ছিল এবং ব্রিটিশ নেতারাই মুসোলিনির প্রশংসা করতেন।"
অরওয়েলের ভাষায়-
"যদি মুসোলিনি অপরাধী হয়, তাহলে ইতালীয় নাগরিকরা তাকে শাস্তি বা বিচার করবে। ব্রিটিশরা কেন তার বিচার করবে?"
তার মতে-
"যারা মুসোলিনির উত্থানের পেছনে রয়েছে, তারাই অর্থাৎ ব্রিটিশ সিক্রেট এজেন্সি ও কনজারভেটিভ পার্টিই প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী।"
রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তখন ইউরোপের অন্যান্য দেশে খুব সহজে ছড়াতে পারতো। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে দেখা দিচ্ছিল খাদ্যাভাব, মন্দা, বেকারত্ব ইত্যাদি যা যুবকদের সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর দিকে আকৃষ্ট করছিল। যদি এভাবে সমাজতন্ত্রের বিকাশ লাভ করে, তাহলে ভূমধ্যসাগর ও আশেপাশের এলাকা ব্রিটিশশক্তির হাতছাড়া হয়ে যেতে পারতো। তাই মুসোলিনিকে বেতনের বিনিময়ে ব্রিটিশ সিক্রেট এজেন্সি সমাজতন্ত্রের জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে কাজে লাগায়। ১৯২৭ সালে চার্চিল তার এক বক্তব্যে বলেন-
"If I had been an Italian I am sure I should have been whole heartedly with you in your triumphant struggle against the bestial appetites and passions of Leninism. Italy has provided the necessary antidote to the Russian poison. Hereafter no great nation will be unprovided with an ultimate means of protection against the cancerous growth of Bolshevism."
আজও তার ব্যাপারে গোপন নথিগুলো নেভাল ইন্টেলিজেন্ট ডিভিশন, ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ও ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট এ গোপনে সংরক্ষিত রয়েছে, যা লেখক ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের গবেষণায় ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Naval_Intelligence_Division_(United_Kingdom)
https://en.m.wikipedia.org/wiki/United_States_Department_of_State
Comments