সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও স্তালিনের ভ্রান্তি [পর্ব-দুই]

 

সিপিসি-র ৮ম জাতীয় কংগ্রেসের কয়েক মাস আগে মাও ‘দশটি প্রধান সম্পর্ক’ এ লিখলেন-

"স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা কীভাবে কিছুটা বাড়ানো যায়, তাদের আরো স্বাধীনতা দেয়া যায়, তাদের আরও কাজ করতে দেয়া যায়, এসবের ওপর এখন আমাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করতে হবে - এগুলো করতে হবে এই কারণে যাতে কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বের ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বকে আরো জোরদার করা যায়। আমাদের এলাকা এতো বিস্তৃত, আমাদের জনসংখ্যা এতো বিপুল এবং অবস্থা এতো জটিলতাপূর্ণ যে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়, এর একটির বদলে দু'দিকের কর্তৃত্ব থেকেই উদ্যোগ আসা অনেক ভালো হবে। সবকিছু কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বের হাতে জড়ো করা, যাতে স্থানীয় কর্তৃত্ব শিথিল হয় এবং তাদের স্বাধীন উদ্যোগ নেয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া যায় - সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুসরণে এরকমটা করা চলবে না।"

একই লেখায় তিনি আরও বলেন-

"কৃষি ও হাল্কা শিল্পকে অবহেলা করে ভারী শিল্পের ওপর তাদের (সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো) একপেশে জোর দেয়ার ফলে বাজারে জিনিসপত্রের অভাব দেখা দেয়, টাকার অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। আমরা এর বদলে কৃষি ও হাল্কা শিল্পের ওপর বেশি গুরুত্ব দিই।"

১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে কাজের প্রক্রিয়ার ওপর তার ৬০ দফা নির্দেশনামায় তিনি বলেন-

"এই প্রকৌশল বিপ্লবটি সবাইকে প্রকৌশল ও বিজ্ঞান শেখানোর জন্য। দক্ষিণপন্থীরা বলে, আমরা ছোট বুদ্ধির লোক বড় বুদ্ধির লোকদের নেতৃত্ব দিতে পারবো না। ইতিহাস আমাদের যে প্রকৌশল বিপ্লব (সম্পন্ন) করতে দিয়েছে প্রকৌশল শিখে সেই বিপ্লবটি সম্পন্ন করার শক্তি সঞ্চয় করতে হবে আমাদের।"

উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য রাজনীতির বদলে বিশেষজ্ঞ গড়ার ওপর স্তালিন যেভাবে জোর দিয়েছিলেন মাও তার বিরোধিতা করে ‘৬০ দফা কাজের প্রক্রিয়া’য় আরও লেখেন-

"লাল ও বিশেষজ্ঞ, রাজনীতি ও বাণিজ্য এদের মধ্যকার সম্পর্ক হলো বিপরীতের ঐক্য। আমাদের অরাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করতে হবে। একদিকে ফাঁকা মাথার ‘রাজনীতিক’ আর অন্যদিকে অভিমুখহীন ‘প্রয়োগকারী’ - দুয়েরই বিরোধিতা করতে হবে (আমাদের)।"

‘সোভিয়েত অর্থনীতির একটি সমালোচনা’ গ্রন্থে তিনি বলেন-

"মালিকানার প্রশ্নটির সমাধান হওয়ার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো প্রশাসনের প্রশ্ন - সমস্ত জনগণের বা যৌথ (খামারের) মালিকানাধীন উদ্যোগগুলোর প্রশাসন কীভাবে চালানো যায়। প্রশ্নটি কোনো একটি বিশেষ মালিকানা ব্যবস্থার জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের প্রশ্নের সমান। এ নিয়ে বহু লেখা চলে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালিকানা পরিবর্তনের একটা সীমা আছে। কিন্তু উৎপাদক শ্রমে নিযুক্ত জনগণের মধ্যকার সম্পর্কে অসীম পরিবর্তন ঘটতে পারে। সমস্ত জনগণের মালিকানাধীন উদ্যোগের প্রশাসনের ক্ষেত্রে আমরা ঘনীভূত নেতৃত্ব ও গণআন্দোলনের জোট; পার্টি নেতৃবৃন্দ, শ্রমজীবী জনগণ ও প্রকৌশলীদের জোট; উৎপাদনে অংশগ্রহণকারী ক্যাডারবৃন্দ; প্রশাসনে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকবৃন্দ - এরকম নানান কর্মকৌশল অবলম্বন করেছি। অযৌক্তিক নিয়মকানুন ও প্রতিষ্ঠানে চলে আসা বিধিপদ্ধতি অব্যাহতভাবে পরিবর্তন করে গিয়েছি।"

মাও এটা স্পষ্ট বুঝেছিলেন যে পার্টি যদি সর্বহারা ও বুর্জোয়াদের মধ্যকার সম্পর্ককে ঠিকমতো মোকাবিলা না করে (তার জন্য সমাজতান্ত্রিক সমাজে চলমান শ্রেণী সংগ্রামকে স্বীকার করতে হবে), যদি না রাজনীতিকে কর্তৃত্বের ভূমিকায় রাখে, যদি না ভিত্তির ওপর উপরিকাঠামোর আধিপত্যকারী ভূমিকা রাখতে পারে, তবে উৎপাদিকা শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সঠিক সমাধান করা যাবে না। মাও লিখেছেন-

‘‘স্তালিন শুধু অর্থনৈতিক কথা বলেছেন, রাজনীতির কথা নয়। স্তালিনের বইয়ে (‘সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক সমস্যাবলী’) প্রথম থেকে শেষ অবধি উপরিকাঠামোর কথা কিছুই বলা হয়নি। জনগণ নিয়ে চিন্তা করা হয়নি। বস্তু নিয়ে বলা হয়েছে, মানুষ নিয়ে নয়।’’

স্তালিনের মৃত্যুর পর স্তালিনের করা ভুলগুলোর সুযোগ নিয়ে সোভিয়েত পার্টিতে ক্রুশ্চেভরা নির্লজ্জভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লো পুঁজিবাদের প্রত্যাবর্তনে। সমাজতান্ত্রিক সমাজে (ব্যাপক অর্থে) পুঁজিবাদী উপাদান বেশ জোরালোভাবেই থেকে যায়। ব্যক্তিমালিকানা তখনো থেকে যায়, সর্বহারারা কখনোই এক লাফে সমস্ত পুঁজিবাদী উদ্যোগ দখল করে নিতে পারে না। ক্ষুদ্র উৎপাদন, যা পুঁজিবাদের উৎস, থেকে যায়। পুঁজিবাদী আয় ও বন্টনের পুঁজিবাদী চরিত্রের প্রধান দিকগুলো থেকে যায়। মাও বলেছেন-

"চীন একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ। মুক্তির আগে পুঁজিবাদী দেশ হিসাবে সে অনেকটা একরকমই ছিল। এখনো এদেশে আট-স্তর মজুরি; কাজ অনুসারে বণ্টন ও অর্থের মাধ্যমে বিনিময় চালু। এসব দিক দিয়ে পুরনো সমাজের সঙ্গে এর ফারাক প্রায় নেই। তফাত এই যে মালিকানা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সর্বহারা একনায়কত্বে এগুলোকে কেবলমাত্র সীমিত করা সম্ভব।’’

এরকম একটি সমাজে ধীরে ধীরে সমাজতন্ত্রের সংহত হওয়া আর ধীরে ধীরে পুঁজিবাদে প্রত্যাবর্তন দু'টিই সম্ভব। সমাজ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া সমাজের শ্রমিকশ্রেণী দীর্ঘকাল বিশ্বাস করে তাদের পার্টির মাধ্যমে তারা ক্ষমতা প্রয়োগ করে। কোনো বুর্জোয়াদের তারা শ্রেণী হিসাবে ক্ষমতা দখল করে নিতে দেবে না। অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর নিয়ন্ত্রণ থাকে পার্টি নেতাদের হাতে। সমাজের ভবিষ্যৎ পথ স্থির করেন পার্টি নেতারা। নেতৃত্বের যদি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে, সমাজতন্ত্র গড়ার রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকে, তারা ঐ বিশেষ সমাজে ‘সাম্যবাদের উপাদান’ বিকশিত করবে। আর নেতৃত্ব যদি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনকে একচেটিয়া অধিকার করে রাখে, কায়িক শ্রম ও মানসিক শ্রমের মধ্যকার ফারাক ধীরে ধীরে কমিয়ে না আনে, মজুরির ফারাক কমিয়ে আনার বদলে বাড়ানো হতে থাকে, মুনাফাকে দিশা বানানো হয় তাহলে পার্টি নেতৃত্ব ও শ্রমিক এবং অন্যান্য শ্রমজীবী জনতার মধ্যকার উৎপাদন সম্পর্ক ধীরে ধীরে পুঁজিবাদী সম্পর্কে পরিণত হয়। একটা পর্যায় পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের মধ্যে পুঁজিবাদে প্রত্যাবর্তন ঘটতে থাকে। কিন্তু এমন একটা সময় আসে যখন পুঁজিতন্ত্রকে আরো এগিয়ে যাওয়ার পথে এই ধাঁচ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন এটিকে ভেঙে ফেলা হয়, পুঁজির ও শ্রমের বাজার সহ সাবেকি ধরনের পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ফিরে আসে (সোভিয়েত ইউনিয়নে যেমন হয়েছে)। এভাবে পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা ও তার উপরিকাঠামোর কর্তৃত্ব হাতে থাকার কারণে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব সমাজতান্ত্রিক দেশে পুঁজিবাদ নিয়ে আসে। এই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য উপরিকাঠামোর পরিবর্তন করা সবচেয়ে জরুরি। তাই একটি কমিউনিস্ট পার্টির মার্কসবাদী-লেনিনবাদী অংশটি যদি সমাজতন্ত্রের পথে অটল থাকতে চায়, তাদের উপরিকাঠামোর ক্রমাগত বিপ্লবীকরণ করে যেতে হবে। কখনো কখনো এই সংগ্রামে সম্পূর্ণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমাজ বিপ্লব ঘটাতে হয় এবং বড় একটা সময় জুড়ে তার তীব্রতা বজায় রাখতে হয়। মাও এরকম বিপ্লবী পর্বের নাম দিয়েছিলেন ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’। মাও বলেছেন-

"বাস্তবত সমাজতন্ত্র থেকে সাম্যবাদে উত্তরণের জন্য এমন একটা সমাজ বিপ্লবের দরকার হয় যাতে একটা শ্রেণীর বদলে আর একটা শ্রেণী আসবে, (দরকার) একটা সমাজ বিপ্লব যাতে পুরানো উৎপাদন সম্পর্কের ও সামাজিক সম্পর্কের জায়গায় আসে নতুন উৎপাদন সম্পর্ক ও সামাজিক সম্পর্ক।"

এভাবে মাও শুধু সর্বহারার একনায়কত্বে শ্রেণী সংগ্রাম চলতে থাকার প্রশ্নটাকেই সামনে আনেন না, কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে বুর্জোয়ারা কীভাবে কাজ করে তাও আবিষ্কার করেন, দেখিয়ে দেন। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে মাও বলেছিলেন- 

‘‘(বুর্জোয়ারা) রয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেই - ক্ষমতায় থেকে যারা পুুঁজিবাদী পথ নিচ্ছে। পুঁজিবাদী পথযাত্রীরা এখনও পুঁজিবাদী পথেই।’’

১৯৪৫ সালের আগস্টে মাও যখন চুংকিংয়ে এলেন চিয়াং কাইশেকের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করতে, লিউ শাউ চি তখন তার হয়ে কাজ করেছেন বেশ কয়েক মাস ধরে। ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৫, এই দশ বছর ধরে লিউ ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারিয়েটের সাধারণ সম্পাদক। দলের প্রশাসনের দিকটা তিনি দেখতেন। ১৯৫৬-র সেপ্টেম্বরে অষ্টম পার্টি কংগ্রেসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক রিপোর্ট পেশ করেন তিনি। ১৯৫৯ সালের ২০ এপ্রিল দ্বিতীয় জাতীয় গণ কংগ্রেসে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ছাড়াও ‘‘কর্তৃত্বের পদে থাকা লোকজন’’ এর মধ্যে ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেং জিয়াও পিং, সামরিক বাহিনীর প্রধান জুইচিং, তার পরে সেই পদে আসা ইয়াং চেঙ য়ু, মার্শাল হো লাঙ, প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা লু তেংই; প্রচার বিভাগের সহ অধিকর্তা চোন ইয়াং, উপ প্রধানমন্ত্রীদ্বয় তান চেন-লেন ও পো ই-পো। এই লম্বা তালিকার সঙ্গে আরো যোগ হবে পিকিং, সাংহাই, তিয়েনসিন, যুহান ও ক্যান্টনের মেয়ররা, পিকিং ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট লু পিঙ।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Liu_Shaoqi

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Deng_Xiaoping

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Luo_Ruiqing

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Chen_Yi_(marshal)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/He_Long

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Chen_Yun

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Tan_Zhenlin

‘চীন - একটি অসমাপ্ত বিপ্লব’ গ্রন্থে উইলিয়াম হিন্টন পার্টি কাঠামোয় পুঁজিবাদী পথযাত্রীদের অংশ নিয়ে একটা হিসাব দিয়েছেন যা সিআইএ এর করা। হিন্টন জোর দিয়ে বলেছেন সিআইএ যেহেতু সবচেয়ে বেশি খবর রাখে, ওদের করা হিসেবটাই অন্যগুলোর চেয়ে বেশি ঠিক। ঐ হিসাব অনুযায়ী, পুঁজিবাদী পথযাত্রীরা ছিল চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ, আর কেন্দ্রীয় কমিটির অর্ধেক। সমস্ত আঞ্চলিক ব্যুরো, রাজ্য প্রশাসনগুলোর তিন-চতুর্থাংশ ও রাজ্য পার্টি কমিটিগুলোর তিন চতুর্থাংশ ছিল তাদের দখলে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/William_H._Hinton

চীনে গত শতাব্দীর ষাটের দশক পর্যন্ত সাবেকি জাতীয় বুর্জোয়ারা টিকে ছিল। অনেক বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবী ছিলেন যাদের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল পুঁজিবাদী। সামন্ততন্ত্র বিরোধী সংগ্রামে এই বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ নেয়, কিন্তু ১৯৪৯ সালে মুক্তির পর তারাও পুঁজিবাদকে জাপটে ধরে। চীনে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ - অনেক সময় সামাজিক পরিবর্তন আনার জন্য, আবার অনেক সময় তাদের নিজস্ব শ্রেণীস্বার্থ রক্ষার জন্য। চীনের বিস্তৃত গ্রামাঞ্চলে লক্ষ লক্ষ কৃষক ছিলেন উৎপাদিকা সম্পত্তির ক্ষুদ্র মালিক। এগুলো ছিল পুঁজিবাদী মতাদর্শের মৃগয়াক্ষেত্র। এসব সামাজিক শক্তি ও তাদের মতাদর্শের প্রভাব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব পর্বেও থেকে গিয়েছিল।
এসবের ফলে, এমনকি বিপ্লব জাত অনেকে যারা ছিলেন চীনের সমাজের নতুন প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপকদের অংশ, বিপ্লব জাত সুবিধা ভোগ করছিলেন। পার্টি সদস্যদের একটা অংশ যারা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরে লড়াই করেছেন, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সামনে তারা পিছু হটতে লাগলেন। আবার অনেকে ছিলেন যারা ‘সমাজতন্ত্র’ কাকে বলে সেটাই বুঝতেন না। বিংশ শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এমন পাতি বুর্জোয়া বিপ্লবী অনেক ছিলেন। জমিদারদের একটা অংশ থেকে গিয়েছিল যারা সমাজে লুকিয়ে ছিল। কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শগত প্রভাব তারা বিস্তার করতো শুধু জনগণের মধ্যে নয়, পার্টির লোকেদের মধ্যেও। উইলিয়াম হিন্টনের মত অনুসারে, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনায় এদের সংখ্যা ছিল ২ কোটি। পুরানো জমিদাররা সাধারণ কৃষকের জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছিল। বিদেশি শক্তির দালালরা, বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত সংশোধনবাদী শাসকরা চীনে তাদের নিজেদের অনুরূপ ব্যক্তিও গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত সহায়তা দিচ্ছিল। চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে দুই লাইনের এই সংগ্রামের পুরো সময় জুড়ে লিউ শাওচি ছিলেন তাদের অবিসংবাদী নেতা। ১৯৬৭ সালে রেড ফ্ল্যাগ ও পিপলস ডেইলি পত্রিকায় একটি লেখা প্রকাশিত হয়, ‘সমাজতান্ত্রিক পথে, না পুঁজিবাদী পথে?’ শিরোনামে। এতে লিউ শাও চি-র রাজনৈতিক জীবনের সম্পূর্ণ ইতিহাস দেয়া হয়। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকের গোড়ায় তিনি চেন তু শিউ'র সঙ্গে ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক সর্বহারা’র হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের বিরোধিতা করেছেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Chen_Duxiu

১৯২৭ সালে এপ্রিলে চিয়াং কাইশেকের প্রতিবিপ্লবী অভ্যুত্থানের পর চেন তু শিউ'র অনুগামী হয়ে তিনি হাজার হাজার রাইফেল কুয়োমিন্টাংকে দিয়েছেন। মাও সে তুং ‘নয়াগণতন্ত্র’ প্রকাশ করার পর তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান-

‘‘আমরা এটা বলছি না কেন যে অন্য কিছু সূত্রায়ন করার বদলে আমরা জনগণের তিন নীতি মেনে চলছি?’’

জাপানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় লিউ যুদ্ধ পরিহার করার জন্য চিয়াং এর সঙ্গে সমঝোতা করতে চেয়েছিলেন। আর মাও চেয়েছিলেন ‘বন্দুক’ আর এলাকা রক্ষা করতে। অস্ত্র সমর্পণের বিনিময়ে লিউ চেয়েছিলেন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ এবং মোর্চা সরকারের কয়েকটি পদ। সেসময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে বিবেচনা করতে হয়েছিল সার্বিক ভূমি সংস্কার করার প্রশ্নটি। তাতে লিউ অতি বাম লাইন নেন, যাতে ভূমি সংস্কার বানচাল হয়ে যায়। গৃহযুদ্ধে কৃষক জনতাকে সাথে পাওয়ার জন্য এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। লিউ এর গরিব কৃষক ও কৃষি মজুর লাইন ছিল অতি-সাম্যের লাইন, তাতে প্রতিটি কৃষককে তার চেয়ে ভালো অবস্থার সবার কাছ থেকে সম্পত্তি দখল করতে উৎসাহিত করা হতো, যাতে সবাই মধ্য কৃষক হতে পারে। কিন্তু গ্রামে এতো সম্পদ ছিল না। লিউ এর এই লাইন গ্রামাঞ্চলে ভূমি সংস্কারের সময় গণ্ডগোল বাধিয়ে দেয়। মাও এর হস্তক্ষেপে ১৯৪৮ সালে এই লাইন সংশোধন করা হয়। মাও ঘোষণা করলেন গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লব সমাধান হলো, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর্ব শুরু হলো। আর লিউ শ্লোগান তুললেন, ‘নয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সংহত করার’। তিনি বললেন-

‘‘চীনে পুঁজিবাদ বেশি নয়, কম। পুঁজিবাদী শোষণ বিকশিত করা প্রয়োজন, কারণ এই ধরনের শোষণ প্রগতিশীল।’’

পুঁজিবাদকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মাও এর তত্ত্বের বিরোধিতা করে তিনি বললেন-

‘‘সাত বা আট বছর কোনও নিয়ন্ত্রণ চলবে না। রাষ্ট্রের জন্য, শ্রমিকদের জন্য ও উৎপাদনের জন্য সেটাই ভালো হবে।’’

লিউ শাও চি-র মত অনুসারে, মিশ্র অর্থনীতি সহ নয়া গণতন্ত্র হবে একটা দীর্ঘ পর্যায়, এতে ভূমি সংস্কারে ধনী কৃষক অর্থনীতিকে মদত দেবে। এই চিন্তাধারা নিয়ে লিউ চারটি ‘স্বাধীনতা’র ডাক দিলেন - জমি কেনা বেচার স্বাধীনতা, শ্রম ভাড়া করার স্বাধীনতা, সুদে টাকা ধার করার স্বাধীনতা ও মুনাফার জন্য ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার স্বাধীনতা। যৌথকরণের সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি শিল্পায়ন হওয়া পর্যন্ত এটি বাতিল করে দেন। আধুনিক কারখানা যখন ট্রাক্টর, পাম্প, সার ও আরও আধুনিক কৃষির অন্যান্য উপকরণ উৎপাদন করার ক্ষমতা অর্জন করবে তখনই সবার জমি একত্র করে চাষ করার মানে হবে। তিনি বলেন-

‘‘কৃষকদের ৭০ শতাংশ যখন ধনী চাষি হবে, তখন যৌথকরণের কথা বলা যাবে।’’

লিউ এর লাইন পরাজিত হয় এবং শ্রেণীর ভিত্তিতে কৃষিতে যৌথকরণ করতে সক্ষম হন মাও। লিউ ও মাও এর মধ্যকার সংগ্রামের পুরো সময় জুড়ে লিউ জোর দিয়ে এসেছেন অর্থনৈতিক স্বাচ্ছল্যের ওপর (ব্যক্তিগত স্তরে), উৎপাদিকা শক্তির ওপর, ভিত্তির ওপর। মাও এর মতে, বিপ্লবী রাজনীতি থাকবে কর্তৃত্বের অবস্থানে। সমবায় আন্দোলন হবে লক্ষ লক্ষ উৎপাদকের সচেতন ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে, আর তাকে বিকশিত করতে পারা যাবে শুধুমাত্র পার্টি নেতৃত্বের সচেতনতার ওপর দাঁড়িয়ে। এই পুরো পর্যায়টি উৎপাদিকা শক্তির তত্ত্ব আর শ্রেণী সংগ্রামের তত্ত্বের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ধ্রুপদী উদাহরণ। শ্রেণী সংগ্রামের তত্ত্বে সমাজতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভিত্তির ওপর উপরিকাঠামোর অর্থাৎ চেতনা, রাজনীতি ও মতাদর্শের ভূমিকা হলো নির্ধারক।

অথচ ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ৮ম কংগ্রেসের প্রস্তাবে বলা হলো-

‘‘এই সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরে নির্ধারক জয় অর্জিত হয়েছে। এর অর্থ এই যে সর্বহারা ও বুর্জোয়াদের মধ্যে দ্বন্দ্বের মূলত সমাধান হয়েছে। আমাদের দেশে কয়েক হাজার বছর ধরে যে শ্রেণী শোষণ চলে এসেছে, তার মোটামুটি অবসান ঘটানো হয়েছে। আর চীনে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু প্রধান দ্বন্দ্ব হলো অগ্রণী সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সমাজের পিছিয়ে থাকা উৎপাদিকা শক্তির মধ্যে।’’

১৯৫২ সালে মাও পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন-

"শ্রমিক শ্রেণী ও বুর্জোয়াদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হলো চীনে প্রধান দ্বন্দ্ব।"

অথচ 'দশটি প্রধান সম্পর্ক’ প্রকাশের (এপ্রিল, ১৯৫৬) কয়েক মাসের মধ্যে পার্টি এরকম প্রস্তাব নিতে নিলোরডরিক মাকফারকার তার গবেষণায় (‘সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উৎস’) দেখিয়েছেন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় তার স্বীকারোক্তিতে লিউ বলেছেন যে মাও কয়েকটি বাক্য (ওপরে উদ্ধৃত) নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। রডরিক জানিয়েছেন লিউ বলেছেন-


‘‘তখন সংশোধনের সময় ছিল না, ঐ অবস্থায়ই ওটা পাশ করা হয়।’’

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Roderick_MacFarquhar

আরেকটি ব্যাখ্যা হচ্ছে প্রস্তাবটির খসড়া করেন মাও এর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা চেন পোতা। মাও তাই সবার মধ্যে বন্টনের আগে সেটি দেখে নেননি। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Chen_Boda

ম্যাকফারকার ধরে নিয়েছেন মস্কো ফেরত চেন এমনটা দেখাতে বাধ্যবাধকতা অনুভব করছিলেন যে চীন সোভিয়েতের পথই অনুসরণ করছে। খানিকটা বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা এইরকম: পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি যেরকম শক্তি ভারসাম্য ছিল তাতে লিউ মাওকে সুকৌশলে হারিয়ে দিয়েছিলেন। বেশ কয়েকবার এটা ঘটেছে। উল্লেখ্য, মাও এর নেতৃত্বে চীনের গ্রামাঞ্চলে সফল আন্দোলন চলাকালীন লিউ ২ লক্ষ কৃষি সমবায় ভেঙে দেয়ার মতো ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিংশতি কংগ্রেসে দক্ষিণপন্থীদের সম্পূর্ণ বিজয় ও হাঙ্গেরির ঘটনা যাতে ‘‘আমাদের দেশের কিছু লোক দারুণ খুশি হয়’’ - এই দু'টি আন্তর্জাতিক ঘটনা লিউ ও তার ‘কমরেড’দের শক্তিশালী করে। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭ সালে সুপ্রিম স্টেট কনফারেন্সের একাদশ (বর্ধিত) সভায় প্রদত্ত বক্তৃতায় মাও বৈরিতামূলক ও অবৈরিতামূলক দ্বন্দ্বকে এবং সঠিক ও বেঠিককে গুলিয়ে ফেলার দক্ষিণপন্থী প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করার ও জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্ব সঠিকভাবে নিরসন করার সঠিক দিশা দেন। এই বক্তৃতায় তিনি শ্লোগান তোলেন-

‘‘শতফুল বিকশিত হোক, সব চিন্তা প্রতিযোগিতায় নামুক’’।

এর উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন চিন্তার প্রতিযোগিতায় যাতে সত্য বেরিয়ে আসে আর দক্ষিণপন্থীরা যাতে তাদের অবদমিত চিন্তার প্রকাশ ঘটাতে পারে। ১৯৫৭ সালের শুদ্ধিকরণ আন্দোলনের সূচনা ঘটায় বক্তৃতাটি। ১৯৫৭ সালের মে মাসে দলীয় সদস্যদের মধ্যে বন্টিত হওয়ার জন্য লিখিত ‘পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে’ লেখাটিতে মাও শুদ্ধিকরণ আন্দোলনের উদ্দেশ্য বলেন। এই আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য ছিল দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ। তিনি বলেন-

‘‘তারা বেশি বিপজ্জনক, কারণ তাদের চিন্তা পার্টির মধ্যে বুর্জোয়া মতাদর্শের প্রকাশ আর তারা বুর্জোয়া (ধরনের) মুক্তি চায়, সবকিছুকে অগ্রাহ্য করে এবং একশো রকমভাবে তারা পার্টির বাইরের বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে যুক্তএখন সময় এসেছে সংশোধনবাদের সমালোচনায় আমাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করার।’’

কোন কোন ক্ষেত্রে সংশোধনবাদীরা প্রকৃত কমিউনিস্ট সেজে প্রভাব বিস্তার করছে সে কথাও বলেন মাও-

‘‘গণতান্ত্রিক পার্টিগুলোতে, শিক্ষাক্ষেত্রে ও শিল্প ক্ষেত্রে, সংবাদপত্র জগতে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অথবা শিল্প এবং বাণিজ্য জগতে।’’

মাও স্বীকার করেন-

‘‘ওরা জানে যে এসব ক্ষেত্রগুলোতে কমিউনিস্টরা ওদের মতো শক্তিশালী নয়, আর সত্যিই তাই।’’

১৯৫৮ সাল ছিল তিন লাল পতাকার - সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্য, সামনের দিকে বিরাট উল্লম্ফন ও জনগণের কমিউন এর বছর।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Three_Red_Banners

এর সাধারণ লাইনের নির্যাস ছিল ‘‘পুরোপুরি ঝাঁপিয়ে পড়া, লক্ষ্য ওপরের দিকে রাখা; আরো বেশি, দ্রুততর, বেশি ভালো ও কম খরচে ফল লাভ করা।’’ প্রথম দুই শ্লোগানের মাধ্যমে মাও চেতনার গুরুত্বের ওপর জোর দেন; অর্থাৎ লিউয়ের ‘উৎপাদিকা শক্তি’র লাইনের বদলে সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্যে মতাদর্শ ও রাজনীতির ভূমিকা। শেষ শ্লোগানটি দেয়া হয়েছিল উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে নীচ থেকে জনগণের উদ্যোগের দ্বার অবারিত করার উদ্দেশ্যে। ১৯৫৮ সালের মে মাসে অষ্টম জাতীয় কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘সামনের দিকে বিরাট উল্লম্ফন’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবং ১৯৫৮-র বসন্তে জনগণের কমিউন ঘোষণা ও সেই বছরের ৩০ আগস্ট তা কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন পাওয়ার মধ্য দিয়ে এই সাধারণ লাইনটিকে কাজে প্রয়োগ করা হয়। সামনের দিকে উল্লম্ফনের উদ্দেশ্য ছিল বিশাল মানব সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ঝড়ের গতিতে ব্যবহার করা, জনগণের উদ্যোগ ও তাদের সৃজনশীলতার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করা। এই প্রক্রিয়ায় হুনানের কৃষকরা বড় প্রকল্পের জন্য শ্রমশক্তি জড়ো করার উদ্দেশ্যে নিজেরা কমিউন তৈরি করেন।

‘‘তিনি (মাও) ওগুলোকে দেখেন মানুষের সুপ্ত শক্তিকে বাইরে আনার একটা পদ্ধতি হিসাবে এবং তার মাধ্যমে বিপ্লব চালিয়ে যাওয়া হিসেবে। নতুন, অ-আমলাতান্ত্রিক, নিজ নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান যাতে শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য, শিক্ষা ও সামরিক বিষয় সব একটি স্থানীয় ইউনিটে এক জায়গায় করা হয়েছে - এর মধ্য দিয়ে কৃষকরা প্রথাগত রাষ্ট্রশক্তিকে সম্পূরণ করার জন্য এক ধাপ এগিয়ে এসেছেন।’’















Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]